রাগ নিয়ন্ত্রণের উপায়: নিজের ও অন্যের ক্ষতি না করে রাগ প্রকাশ করুন!


আপনার কি কখনও এমন হয়েছে যে, কোনওভাবেই রাগ সামলাতে পারছেন না? মনে হচ্ছে রাগ না ঝাড়তে পারলে মাথাটাই খারাপ হয়ে যাবে? আর সেই রাগ প্রকাশ করতে গিয়ে এমন কিছু করে ফেলেছেন, যার ফলে আপনার নিজেরই ক্ষতি হয়ে গেছে, এবং আফসোস করতে হয়েছে?  এটা হয়েছে রাগ নিয়ন্ত্রণের উপায় না জানার কারণে। 

কখনও কখনও আবেগ আমাদের এমন ভাবে আচ্ছন্ন করে ফেলে, যে সেটা না প্রকাশ করতে পারলে আমাদের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়।  ইতিবাচক আবেগের ক্ষেত্রে তা প্রকাশ করায় কোনও সমস্যা নেই।  কিন্তু নেতিবাচক আবেগ, যেমন রাগ, ক্ষোভ, হিংসা, হতাশা – এগুলোর প্রকাশ হওয়া উচি‌ৎ নিয়ন্ত্রিত।  এগুলো যদি একদমই আপনাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে, এবং এটা প্রকাশ না করার ফলে আপনার মানসিক যন্ত্রণা হয় – তবে এগুলো প্রকাশ করুন।  তবে তা অবশ্যই নিয়ন্ত্রিত ভাবে।

নিয়ন্ত্রিত প্রকাশ বলতে বোঝানো হচ্ছে এমন ভাবে প্রকাশ করা যেন তাতে আপনার, আপনার কাজের ও আপনার আশপাশের মানুষের কোনও ক্ষতি না হয়। রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায় কোনও জাদুমন্ত্র নয়। একটু কৌশল করলেই এটা করা সম্ভব। 

উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, আপনি একটি প্রজেক্টের জন্য একজন ইঞ্জিনিয়ারকে নিয়োগ দিয়েছেন।কালকের মধ্যে প্রজেক্ট শেষ করতে হবে।  কাজেরও বেশি বাকি নেই।  এমন সময়ে কোনও কারণে ইঞ্জিনিয়ারের সাথে আপনার কোনও একটি মতবিরোধ হলো।  আপনি ভয়ানক রেগে গেলেন – আপনার ঘাড়ের কাছে একটা শিরশিরে জ্বলুনি, কান দু’টো গরম হয়ে উঠছে, এবং আপনার ইচ্ছে করছে এই লোককে এই মূহুর্তে চূড়ান্ত অপমান করে বের করে দেয়া উচি‌ৎ।  বুদ্ধিমান মানুষ হিসেবে কি সেটা করা উচি‌ৎ হবে? নিশ্চই না!

রাগ নিয়ন্ত্রণ

আপনি যদি রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না-ই পারেন, এবং রাগ প্রকাশ করা ছাড়া ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে না পারেন, তবে তক্ষুনি রুম থেকে বের হয়ে যান।  অবশ্যই রাগ দেখিয়ে নয়।  শান্ত ভাবে বলুন আপনার কিছুটা সময় দরকার, একটু পরে ফিরবেন।

এরপর একা একা বসে সেই লোককে যা বলতে চান, তা একটি কাগজে লিখে ফেলুন।  যা যা বলতে চান সব।  লেখা শেষে দেখবেন রাগ বেশ কিছুটা প্রশমিত হয়েছে।  হাতের কাছে একাধিক কলম বা পেন্সিল রাখুন – যাতে করে জোরে চাপ দিয়ে লেখার সময়ে একটি কলম বা পেন্সিলের শীষ ভেঙে গেলে হাতের কাছে আরেকটা পাওয়া যায়।  লেখা শেষ হয়ে গেলে প্রবল আক্রোশে সম্ভব হলে কাজগটি পুড়িয়ে ফেলুন, না হলে কুটি কুটি করে ছিঁড়ে টয়লেটে ফেলে দিন।

এরপর শান্ত হয়ে বসে চোখ বন্ধ করে বড় বড় করে কয়েকবার বুক ভরে শ্বাস নিন এবং ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন।  অবাক হয়ে লক্ষ্য করবেন – আপনার মাথা ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে আসছে এবং পরিস্কার ভাবে চিন্তা করতে পারছেন।  এবার চোখ বন্ধ করে চিন্তা করার চেষ্টা করুন, সেই লোককে বের করে দিলে আপনার কি কি ক্ষতি হবে।  এবং সেই সাথে সে ঠিক কোন দৃষ্টিভঙ্গী থেকে তার কথাগুলো বলেছে, এবং সেখানে আপনার ভূমিকা কি, সেটাও চিন্তা করে বের করার চেষ্টা করুন।  এই বিষয়গুলো পরিস্কার হয়ে উঠলে নিজেই বুঝবেন রাগ প্রকাশ করাটা সেই মূহুর্তে যতটা যুক্তিসঙ্গত মনে হচ্ছিল, এখন আর হচ্ছে না।  এরপর আপনি ফিরে গিয়ে ঠান্ডা মাথায় কাজে মনযোগ দিতে পারবেন। রাগ নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল গুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে কার্যকর একটি কৌশল।

এমন আরও কিছু নেতিবাচক আবেগ রয়েছে, যেগুলো আমাদের সাফল্যের পথে বাধা।  এগুলো নিয়ন্ত্রণের উপায় জানলে অনেক কিছুই আমাদের জন্য সহজ হয়ে যাবে।  নেতিবাচক আবেগ কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন, তা জানতে আমাদের নেতিবাচক আবেগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায়  লেখাটি পড়ুন।

আর এই লেখাটি যদি ভালো লেগে থাকে, এবং কাজের মনে হয়, তবে শেয়ার করে অন্যদের দেখার সুযোগ করে দিন।

রিলেটেড: নেতিবাচক আবেগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায় 

পোস্টটি শেয়ার করুন !