ধনী হওয়ার সিকরেটঃ সিকরেট অব মিলিনিয়রস মাইন্ড – বুক রিভিউ


ধনী হওয়ার সিকরেট - বুক রিভিউ

বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ” টি. হ্যারাভ ইকার এর মতে টাকা হচ্ছে এমন একটি দৃশ্যমান বন্তু যা শুধু মাত্র সঠিক ভাবে জমা করা শিখতে হবে। “সিকরেট অব মিলিনিয়রস মাইন্ড” বইতে তিনি চমৎকার ভাবে ব্যখ্যা দিয়েছেন, কিভাবে আমারা অর্থের সাথে যোগাযোগ বা সম্পর্ক ঘটাবো এবং ভবিষ্যতে কি পরিমান সম্পদের মালিক হওয়ার সম্ভাবনা আছে তার একটি অর্থনৈতিক ছক নির্ধারণ করা।

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি লেখক এবং প্রকাশকের কাছে। যারা বইটি প্রকাশ করে জ্ঞান ছড়িয়ে দেয়ার জন্য কাজ করেেছন। তবে এই সারাংশের কোন সত্বাধিকার তারা দাবী করতে পারবে না, 

মানুষের দ্রুত ধনী হয়ে ওঠা দেখে কি কখনও বিষ্ময় জেগেছে। যেখানে অন্য মানুষ টানাটানি অর্থ ভাগ্য নিয়ে বেচে থাকার সংগ্রাম করছে। এই দুই শ্রেনীর ভেতরে পার্থক্য কি শিক্ষায়, বুদ্ধিমত্তায়, দক্ষতায়, ভাল সুযোগের, ভাগ্যের অথাবা ভাল চাকরীর, ভাল ব্যবসার নাকি পুজির।

চমকানোর মতো উত্তর হচ্ছে এগুলো কোনটাই নয়।

তার ধনী হয়ে ওঠার গোপন রহস্য, তার লাখপতি চিন্তা ভাবনা, সম্পদের অভ্যন্তরিন গোমরের উপর প্রভাব বিস্তার করা। টি. হ্যারাভ ইকার বলেন আমাকে পাঁচ মিনিট সময় দেন আমি আপনার বাকি জীবনে কি পরিমান সম্পদের মালিক হবেন, তা অনুমান করে দিচ্ছি। ইকার অনুমান করতে পারেন আপনার সাফল্য এবং সম্পদের সম্ভাবনা। অবচেতন মনে প্রত্যেকেরই সম্পদের প্রতিচিত্র রয়েছে। এটাই সেই প্রতিচিত্র যা অন্য যে কোন বিষয়ের থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ন, এবং এটাই জীবনের অর্থনৈতিক সাফল্য নির্ধারণ করবে। আপনি হয়তো খুবই দক্ষ    প্রচারনায়,কেনা-বেচায়, দামাদামিতে, পন্য মজুদ করতে সর্বপরি অর্থনৈতিক সমস্ত কাজে। কিন্তু এতেই কিন্তু আপনার সম্পদ অর্জনের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে না। হতে পারে আপনি যে কোন উপায়ে সম্পদ অর্জন করে ফেলেছেন, সম্ভবত আপনি সম্পদ ধরে রাখতে পরবেন না। কি হতাশ হচ্ছেন? হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আনন্দের বিষয় হচ্ছে আপনি ইচ্ছ করলেই সম্পদ অর্জনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করতে পারনে খুবই স্বভাবিক নিয়মে। কিভাবে করবেন তা এই সারাংশ পড়লেই বুঝবেন।

তার সময়ে ২০ শতকে টি. হার্ভ ইকার ছিলেন একজন প্রচন্ড সাফল্য প্রত্যাশী, তিনি আত্ন-অনুপ্রেরনা মূলক সমস্ত বই পড়েছিলেন এবং তিনি সবগুলো সেমিনারে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি কয়েকবার ব্যবসায় ব্যর্থ হয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন, তিনি হতাশ হয়ে আফসোস করে বলেছিলেন “আমি শুনেছিলাম ব্যবসায় লাভ নামে একটা বিষয় আছে, কিন্তু আমি তা কখনও চোখে দেখিনি”। কিন্তু তিনি যখন তার অর্থনৈতিক রুপরেখা পূন নির্ধারন করলেন, তখন খুব দ্রুতই উন্নতি করে ফেললেন।

তিনি হতাশ হয়ে, নিজেকে নিয়ে গভীর ভাবে বিশ্লেষণ এবং পর্যালোচনা করতে শুরু করেন। তিনি সমস্যটা খুজে পেলেন, বাস্তবতা হলো, তিনি নামে মাত্র ধনী হওয়ার চিন্তা করছেন এবং তার ভেতরে ব্যার্থতার ভয় আছে, তাহলে কি তিনি শুধুই একজন সংগ্রমী হয়েই বেছে থাকবেন।

তৃতীয় বারের মতো তিনি তার অভিবাবকের কাছে ফিরে গেলেন। তার বাবা এক বন্ধু তাকে ধনী হওয়ার কিছু পরামর্শ দিলেন, তিনি বলেছিলেন তিনিও অনেক ক্ষতির সমুক্ষিন হয়েছেন, যত দিন না তিনি বুঝতে পেরেছেন ধনী মানুষেরা সাধারণে মানুষের থেকে আলাদা চিন্তা করে। তিনি আরও বলেছেন: তারা কিভাবে চিন্তা করে সেটা বোঝার চেষ্টা করো, বুঝতে পারলে তুমিও ধনী হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে।

ইকার ”সাইকোলজি অব ওয়েলথ ক্রিয়েশন এন্ড সাকসেস” সম্পর্কে পড়তে থাকেন, একজন ধনী যেভাবে চিন্তা করেন ঠিক সেই ভাবেই নিজের চিন্তাকে পরিচালিত করতে থাকেন। তিনি বুঝতে পারলেন, তারা কখনও ভাল কিছুর কথা চিন্তা করে না, তারা সব সময় সেরাটার কথা চিন্তা করে। তরা কখনও হাল ছেড়ে দেয় না এবং সব ধরনে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে জয়ের জন্য কাজ করে যায়। এরপর তিনি যখন 2000 ডলার ধার করে শরীরচর্চার সরঞ্জাম নিয়ে একটা দোকান চালু করলেন, তখন মনে মনে পন করলেন 10 লক্ষ টাকার মালিক না হয়ে এই ব্যবসা ছড়াবেন না। মাত্র দেড় বছরের ভেতরে তিনি দোকানের আরও ১০টি শাখা চালু করেন। পরবর্তিতে বড় একটি কোম্পানির কাছে ৫০% মালিকানা বিক্রয় করেন যার মূল্য ছিল 1.6 মিলিয়ন।

মিলিওনেয়ার চিন্তাধারার মানুষ গুলো স্বভাবে বেপোরোয়া এবং চমকানো বিদুৎে এর মতো। না হলো তারা কখনও মিলিওনেয়ার চিন্তার সাথে যুক্ত হতে পারতো না এতো অর্থের মালিক হতে পারতো না।

তোমার আর্থিক পরিকল্পনার ছক কি?

পরবর্তিতে ইকার তার ক্রীড়া সরঞ্জাম এর ব্যবসা থেকে একজন ব্যবসায় প্রশিক্ষকে পরিনত হন। এর পর বিভিন্ন সেমিনারে গিয়ে ইকার মজার একটা বিষয় লক্ষ করেন, সেমিনারে অংশগ্রহকারী অর্ধেক মানুষ তার কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনে এবং তারা মনে করেন এটাই উন্নতির রাস্তা বা উপায়, আর অর্ধেক মানুষ মানে করে এতে খুব একটা কিছু হবে না। তিনি বিশ্বাস করতেন তিনি মানুষকে ব্যবসা করার যাবতীয় কার্যকরী কৌশল শেখাতে পারেন যতদিন না ব্যবসায় মুনাফা আসা শুরু হয়।

ইকারের মতে তরুন বয়স থেকেই আমাদের প্রত্যেকরই আর্থিক পরিকল্পনার ছক আছে, কি পরিমান অর্থ আমার পুরো জীবনে অর্জন করতে চাই। আমার অর্থ সম্পর্কে কি বলেছিলাম অথাব আমাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে যা শিখেছি, এসব দ্বারাই আমাদের অবচেতন মনে পর্যালোচনার মাধ্যমে মনসত্বাত্তিক মৌলিক অর্থনৈতিক বাস্তবতা তৈরী হয়। বেশির ভাগ মানুষই বিষয়টি বুঝতেই পারে না। তারা পূর্নবয়স্ক হয়ে আর্থেক পরিকল্পনার ছকে শাক্তিশালী এবং গভীর অনুভূতিতে হোচট খায়, এবং এর পর তারা বুঝতে পারে না তাদের কি করা উচিৎ।

ইকার এবং তর স্ত্রীর সম্পূর্ন আলাদ আর্থিক পরিকল্পনার ছক ছিল। এ কারণে তারা সব সময় অর্থ নিয়ে ঝগড়া করতো। নরীদের নিজেস্ব কোন অর্থ নেই, এটা বিশ্বাস করেই তিনি বেড়ে উঠেছিলেন। তিনি ভাবতেন হ্যাজবেন্ড তাকে টাকা দিবে, তিনি তা আনন্দের সাথে খরচ করবেন। তিনি ভাবতেন টাকা-পয়সা সুখ বিনিষ্টকারী। আর স্বামী ইকির ভাবতেন অন্য ভাবে, করণ তিনি অসচ্ছল ভাবে বড় হয়েছিলেন। তিনি ভাবতেন টাকা-পয়সা (অর্থ) হচ্ছে স্বাধীনাতা। যাত বেশি উপার্জন করতে এবং জমাতে পারবেন তত বেশি স্বাধীনতা ভোগ করতে পারবেন। তাহলে একবার ভেবে দেখুন তাদের দুজরেন অর্থনৈতিক ছকে কি পরিমান পার্থক্য বা অমিল ছিল। এখন যদি আপনি দুজনের চিন্তাধারা মেনে নিয়ে তাদেরকে এক করতে চান, সেটা কি সম্ভব? তবুও ইকার সম্পর্ক করলো এবং অবিশ্বাস্য কিছু ঘটলো।

কিছু মানুষ অবচেতন মনেই বিশ্বাস করে তারা প্রাচুর্য বা সম্পদ ধারণ কারার মতো যোগ্যতা রাখেন না। অর্থ বা সম্পদ মানুষের কিছু হৃদয়ঙ্গম ভূলের সাথে সম্পর্কিত অথবা তারা মনে করে তারা দ্ররিদ্র এটা একটি আধ্যাত্ববাদের বিষয়, এবং এটাই তাদের জন্য মঙ্গলজনক।

কিন্তু এগুলো শুধুই বানানো ভ্রান্ত ধারণ। যে এই পুরাতন ধারনা পরিবর্তন করে নতুর ধারনাকে বিশ্বাস করতে পারবে, যে আমি সম্পদ অর্জনের জন্য যোগ্য। চিন্তা করতে হবে যে কোন রকম ‍কিছু প্রমাণ করা ছাড়াই আমি সম্পদ অর্জন করেত পরবো। দরিদ্র মানুষেরা বিশ্বাস করে অতিরিক্ত সম্পদ পৃথিবীতে সবসময়ই সংঘাত সৃষ্টি করে আসছে, অল্প কিছু সম্পদ পৃথিবীতে আছে যার প্রত্যেকটি অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। আর ধনীরা প্রতিযোগীতায় বিশ্বাস করে, তারা ভাবে প্রতিনিয়ত নতুন সম্পদ অর্জন করতে হবে এবং এর জন্য প্রয়োজন অসীম টাকার উৎস। 

কিছু মানুষ তাদের অর্থনৈতিক ছক নির্ধারণ করে নির্দিষ্ট পরিমান সম্পদের বা অর্থর জন্য, সেটা হতে পারে 20,000 টাক, 50,000 টাক, 100,000 টাক অথাব 500,000 টাকা। এবং তার তা অর্জন করে। লক্ষ অর্জনের পর আবার তারা নতুন লক্ষ নির্ধারন করে এবং সেটা অর্জনের জন্য কাজ শুরু করে দেয় এবং তারা বিশ্বাস করে, সম্পদ অর্জনে তারা যোগ্য। নিজের সামর্থের উপর বিশ্বাস স্থাপন করেন এবং সেটার সুফল আপনার ব্যাংক এ্যাকাউন্ট দিকে তাকালেই বুঝতে পারবেন। নিজের উপর বিশ্বাসের কারনেই দেখবেন সম্পদ বা টাকা আপনার দিকে চম্বুকের মতো ছুটে আসতে থাকবে, আপনাকে শুধু সঠিক ভাবে গ্রহন করত হবে। ইকার বলেছেন: আপনার কাছে আসা যে কোন পরিমানের টাকার জন্য উৎযাপন করুন, পরিমানটা যত ছোটই হোক। তাহলেই পৃথিবী আপনাকে আরও অধিক সম্পদ এবং টাকা দিবে।

সম্পদ পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রন করে

ইকারের এক সেমিনারে কয়োজন প্রশ্ন করেন, টাকা খুববেশি গুরুত্বপূর্ন নয় সেটা কি আপনি বিশ্বাস করেন। সেমিনার শেষে অনেকেই আর্থিক পরিল্পনার ছক করার কথা মেনে নেয়। আবার অনেকেই তাচ্ছিল্য করে চলে আসে। ইকার বলেন: আপনি যদি মনে করেন টাকা খুব বেশি গুরুত্ব পূর্ন নয়, তাহলে টাকা আপনার কাছে কখনও আসবে না।

দরিদ্র বা মধ্যবিত্ত মানুষেরা অন্যান্য জিনিষের তুলনায় অর্থের গুরুত্বটা কমিয়ে আনার চেষ্টা করে। বিশেষ ভাবে ভালবাসার ক্ষেত্রে। ইকার এই ক্ষেত্রে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন, তার মতে পরিপূর্ন এবং সুখি জীবনযাপন করার জন্য টাকা এবং ভালবাসা দুটই প্রয়োজন। তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন: কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ন তোমার পা নাকি তোমর হাত? উত্তর তিনি দিয়েছেন এভাবে, সম্ভাবত দুটই সমান গুরুত্বপূর্ন। ধরী ব্যাক্তিরা অন্য সব মানুষের মতই ভালবাসার মূল্যয়ন করেন, এবং একই সাথে তারা সমাজে টাকা বা সম্পদকে গুরুত্বপূর্ন বলতে ভয় পায় না। 

ইকার যখন তার পরিবার নিয়ে বাসস্থান পরিবর্তন করে সান ডিযেগো শহরের অভিজাত এলকায় যাচ্ছিলেন তখন তিনি বেশ সঙ্কিত ছিলেন। তিনি চিন্তা করছিলেন নতুন প্রতিবেশিরা তাকে কিভাবে গ্রহন করবে। কিন্তু সত্য বলতে প্রতিবেশির সহানুভূতি এবং মহত্ব্যে তারা হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। ইকার লিখেছিলে: আমার পুরনো অভিজ্ঞতা বলে ধনী মানুষেরা প্রকৃত পক্ষে খুব লোভী এবং নাক উঁচা হয়ে থাকে। কিন্তু এখন তিনি বলেন স্মার্ট, সুহৃদয় এবং মহৎ ব্যক্তিরাই মূলত ধনী।

ইকারের পরামর্শ দিয়েছেন, যদি আপনি ধনী হতে চান, তাহলে ধনীদের হিংসা করা বন্ধ করুন। একটু অন্যভাবে চিন্তা করুন। কাঙ্খিত উন্নতি সাধন করার জন্য হুজান হুনা (নুতুন ভাবে চিন্তা শুরু করার পদ্ধতি) আয়ত্ব করুন। যদি কারও সুন্দর একটি বাড়ি দেখেন, ভাল গাড়ি দেখেন এবং ভাল একটি পরিবার দেখেন তবে অবশ্যই তাদেরকে আশীর্বাদ করুন। এবং যখন আপনি তাদেরকে সহজ ভাবে মেনে নিবেন, তখন আপনার জীবনেও সুন্দর বিষয় গুলো ঘটতে থাকবে।

কখনো অভিযোগ করবেন না

ইকারের দেয়া সবগুলো দিক নির্দেশনার ভেতরে সব থেকে গুরত্বপূর্ন হলো: জীবন এবং সম্পদ নিয়ে কখনও অভিযোগ করবেন না। যেটার উপর মন নিবেশ করবেন সেটা সবসময় বৃ্দ্ধি পেতে থাকবে। আপনি যদি আপনার সমস্যা নিয়ে হতাশ থাকেন তাহলে সেটা সুধু বেড়েই যাবে। তিনি আরও বলেছন অভিযোগ চম্বুকের মতো একটার পর একটা আসতেই থাকবে। তিনি তার শ্রোতাদের চ্যালেঞ্জ করে বলেছেন: শুধুমাত্র সাত দিনের জন্য অভিযোগ করার অভ্যাসটা পরিবর্তন করে দেখুন জীবন অনেক বদলে যাবে।

সম্পদ দিয়ে কি হবে? দরিদ্রদের সব কিছু নিয়ে অভিযোগ করার বদঅভ্যাস রয়েছে। তারা সবসময় বিভিন্ন বিষয়ের বিচার করতে চায় এবং অভিযোগ করে। সবসময় তাদের জীবন এবং অর্থনৈতিক সংকট থাকে। অন্য দিকে ধনী ব্যক্তিরা সবসময় ভাবে তার তাদের লক্ষের দিকে ঠিক ঠাক মতই এগুচ্ছে। তারা নিজেকে কখনও পরাজিত ভাবে না। যদি কিছু পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে নিজ দ্বায়িত্বে কাজ গুলো করে থাকেন।

আপনার কিছু অভ্যাস থাকতে পারে যা আপানাকে মধ্যবিত্তের সারিতে ধরে রাখবে। কিন্তু একটা বিষয় মনে রাখতে হবে সবসময় যদি আপনি অভিযোগ, বিচার অথবা অপবাদ দিতে থাকেন, তাহলে আপনি আপনার অর্থনৈতিক চিন্তাভাবনা থেকে দূরে চলে আসবেন। কেন চমৎকার ভাবে কথা বলা শিখতে পারবেন না। যা আনন্দদায়ক সেটার দিকে মনযোগ দেন।

ধনী হওয়ার জন্য বদ্ধপরিকর হোন

সম্পদ অর্জেনের রাস্তাটি পার্কে ঘুরে বাড়ানোর মতো আনন্দ দায়ক বা সহজ নয়। ইকার তার  বইতে লিখেছেন সম্পদ অর্জন করেত হলে অবশ্যই আপনকে সমস্যা সমাধান করতে শিখতে হবে। এবং অনেক বড় বড় সমস্যার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। সম্পদশালী মানুষেরা সমস্যা সামাধান করতে জানে। তারা বিশ্বাস করে সমস্যা থেকে তার শক্তি বেশি। কারন তারা জানে সমস্যা সামাধানে যোগ্যতাই তাদেরকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। যখন ইকার চূড়ান্ত ভাবে ব্যাবসয় সাফল্য অর্জন করলো তখন তিনি একটা বিষয় উপলব্ধি করলো: সাফল্যের জন্য বদ্ধপরিকর থাকুন সেটা যাই হোক। এই আত্নবিশ্বাস তাকে সমস্ত বাধা অতিক্রম করার সামর্থ যুগিয়েছে, যার অভাবে আগে একাধিক বার তিনি ব্যার্থ হয়েছেন। তিনি বিষয় উপলব্ধি করেছন দরিদ্র মানুষেরা সবসময় তাদের সমস্যগুলোর কাছে পরাজিত হয়। অপর দিকে সম্পদশালীরা যাবতিয় সমস্ত সমস্যা সমাধান করেত পারেন বলেই তারা সম্পদশালী।

দক্ষতার জন্য টাকা নেন, সময়ের জন্য নয়।

ধনী চিন্তার মানুষ উপার্জনের কোন সীমারেখা পছন্দ করেন না । তারা অর্থ উপার্জন করতে চায় তাদের কাজের দক্ষতার উপর, হোক সেটা কোন জায়গা থেকে প্রাপ্ত কমিশন বা সম্মানি অথবা নিজের ব্যাবসা থেকে।

দ্ররিদ্র মানুষেরা কাজের ফলাফল এর দিকে খুব একটা বেশি নজর দেয় না। তারা শুধু তাদের সময়ের বিনিমনেয় অর্থে পেতে চায়। এ ক্ষেত্রে  একমাত্র এবং প্রধান সমস্য হলো সময় সিমিত। এক ঘন্টার জন্য আপনি কত টাকা পাচ্ছেন সেটা কোন মূখ্য বিষয় নয়, কারন আপনি যতই পান না কেন, সময় কিন্তু আপনার মাত্র কয়েক ঘন্টা। ধনী ব্যক্তিরা মূলত একট উপায় বের করে যা দ্বারা তারা প্রতিনিয়ত টাকা উপার্জন করতে পারে, যেখানে সময়ের কোন বাধা ধরা নেই।  উপার্জন করার উপায় হতে পারে ব্যাবসা যেখানে অন্য ব্যক্তিরা চাকুরী করে। মূলধন বিনিয়োগ করে যেখান থেকে মুনাফা অর্জন করা সম্ভব।

ইকার আরও লক্ষ করেছেন, ধনী ব্যাক্তিরা সবসময় তাদের নীট লাভের হিসাব করে। আর দরিদ্র মানুষেরা কাজের বিনিময়ে অর্জিত অর্থের কথা চিন্তা করে। বর্তমান আধুনিকক বিশ্বে মানুষেরা স্কুল, কলেজে পড়ে, শুধুমাত্র একটি নিশ্চিন্ত চাকুরীর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে। তিনি পরামর্শ দিয়েছেন কোন ক্লাবে যেতে সেখানে গিয়ে আপনি এমন কাউকে খুজে পাবেন না যে শুধু মাত্র তার জীবনযাপনে টাকা নিয়ে চিন্তিত। তারা চিন্তা করে এবং কথা বলে নীট মুনাফা নিয়ে । ধরুন সুই তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠন বিক্রয় করে দিয়েছেন এখন তিনি ১২ মিলিয়ন টাকার মালিক। ক্রিস তার স্টক বিক্রয় করে ৫ মিলিয়ন টাকা পেয়েছেন ইত্যাদি। আপনি নীট মুনাফা নিয়ে চিন্তা করুন হতে পরে আপনার উপার্জনের কম বা বেশি। দেখুন আপনার সমস্ত  অর্থনৈতিক চিত্র বদলে যাবে।

প্রথমে ভাবুন আপনি কিছুই জানেন না, তারপর শিখুন

এই বইতে কিছু সাধারন এবং প্রায় সবাই জানে কিছু পরামর্শ দেয়া হয়েছে। দরিদ্র মানুষেরা অর্থ খরচের দিকে বেশি নজর দেন, অন্যদিকে ধনী ব্যক্তিরা অর্থ উপার্জন, ধরে রাখা এবং বিনিয়োগের দিকে নজর দেন। অন্য ভাবে চিন্তা করলে ধনী ব্যক্তিরা দরিদ্রদের থেকে খুব বেশি স্মার্ট নয়। তারা আসলে ভিন্ন চারিত্রিক বৈশিষ্টপূর্ন এবং অর্থের সাথে সতস্ফূর্ত। সম্প্রতি আপনি যদি ভাল অংকে টাকা ব্যবস্থাপনা না করে থাকেন তাহলে বুঝবেন আপনার পরিকল্পনার অভাব ছিল। ইকার লিখেছেন তিনি স্কুলে পড়ার সময়  অর্থ ব্যবস্থাপনা নিয়ে তেমন কোন চিন্তা করেননি। কিন্তু ১৮১২ সালের যুদ্ধের পর তিনি প্রতিটি দিন কাজে লগিয়েছেন। কিন্তু যখন তিনি অর্থ ব্যবস্থাপনা শিখলেন ঠিক তখনিই তিনি সম্পদশালী হয়ে উঠলেন।

অনেকেই তাকে অনুযোগের সুরে বলে আমার কাছে ব্যবস্থাপনা করার মতো কোনো টাকা নেই। হ্যা এটাই পৃথিবীর নিয়ম আপনি যদি ভাল ব্যবস্থাপনা করতে পারেন, যা আপনি করতে চান তাহলেই অর্থ আপনার কছে আসবে এবং অধিক পরিমানে আসবে। সম্পদশালী হওয়ার পথে সব থেকে বড় বাধা হচ্ছে মানুষ মনে করে তারা ইতিমধ্যেই টাকা সম্পর্কে জানে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে জন্মের পরেই কেউ অর্থ ব্যবস্থপনা শিখে আসে না, এ কারনেই ইকার বলেছেন একমাত্র মানুষের গোয়ার তুমি মানুষকে অর্থ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন !