ডেভিড এ্যলেন এর “গেটিং থিংস্ ডান” – বুক রিভিউ


ডেভিড এ্যলেন এর “গেটিং থিংস্ ডান” – বুক রিভিউ

না আমাকে দিয়ে হচ্ছেনা, আমি পারবোনা, আমার মুক্তি দরকার ইত্যাদি ইত্যাদি ভাবছেন যারা তাদেরকে বোলছি। আপনাকে দিয়েই হবে এবং অন্যদের থেকে  অনেক বেশি হবে, আপনার শুধু প্রয়োজন সঠিক দিক নির্দেশনা। প্রতিটি মানুষের ভেতরেই অনেক ধরনের প্রতিভা সুপ্ত অবস্থায় থাকে, প্রয়োজন শুধু সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে বের করে আনা। কিভাবে একজন মানুষকে সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে মেধাকে বিকশিত করা সম্ভব? হ্যাঁ, ডেভিড এ্যলেন এর “গেটিং থিংস্ ডান” বইটিতে এই বিষয়গুলিই চমৎকার ভাবে লেখা রয়েছে। কিভাবে বা কোন পদ্ধতি অবলম্বন করে কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই আপনি আপনার প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারেন

“গেটিং থিংকস ডান” বইতে কিভাবে শুধুমাত্র সাপ্তাহিক কর্মতালিকা এবং রিমাইন্ডার ব্যবহার করে নির্দিষ্ট কাজের উপর সম্পূর্ন মনোযোগ স্থাপন করা যায় তা থেকে সর্বোচ্চ ফলাফল বের করে আনা যায় সেই উপায় সম্পর্কে দেয়া হয়েছে।

“গেটিং থিংস্ ডান” এর বিস্তারিত বুক রিভিউ:

২০০১ সালে প্রকাশ পাওয়া বইটির চাহিদা এখনও কমেনি। বইটি থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। আমি বইটি পড়েছি, এবং অনেক কিছু শিখেছি। আপনাদের জন্য বইটি থেকে সবথেকে গরুত্বপূর্ন তিনটি বিষয় তুলে ধরেছি, এই তিনটি বিষয় সঠিক ভাবে অনুশিলন করতে পারলে, আপনার জীবনে অবশ্যই ভাল এবং ব্যাতিক্রমি কিছু করতে পারবেন। 

নোট বই ব্যাবাহার করুন

”গেটিং থিংকস ডান” বইটিতে সর্ব প্রথম একটি নোটবই ব্যাবহার করার উপদেশ দিয়েছে। যে নোট বইতে সপ্তাহে কি কি কাজ করতে হবে এবং কখন কোথায় করতে হবে তার বিস্তারিত লেখা থাকবে। এতে আপনার মাথায় খুব বেশি চাপ সৃষ্টি হবে না, এবং আপনি তালিকা এবং গুরুত্ব অনুযায়ী একে একে কাজগুলো শেষ কতে পরবেন।

সোজা কথা, সপ্তাহে এমন অনেক কাজ থাকে যা আপনাকে করতেই হবে, সেই কাজ গুলো অবশ্যই নোট বইতে লিখে রাখুন। নোট বই যে শুধু কাগজেরই হতে হবে এমন কোন কথা নেই। হতে পারে আপনার কম্পিউটারে বা আপনার মোবাইলে, এগুলো পরিবর্তে আপনি আপনার স্মৃতিতেও রেখে দিতে পারেন। এখন আপনার কাজ হবে সাপ্তাহিক কর্মতালিকা থেকে গুরুত্বপূর্ন কাজগুলো পূর্ন মনোযোগ ‍দিয়ে শেষ করা।

আমারা সাবাই মনে করি, আমারা প্রত্যেকটি কাজ খুব ভালভাবে মনে রাখতে পারি, এটা সম্পূর্ণ সত্য। কিন্ত এটাও সত্য যে একই সময়ে শুধু একটি বিষয়ের উপর মনোযোগ দেয়া সম্ভব, একাধিক নয়। কি বিশ্বাস হচ্ছে না, তাহলে একই সাথে ভাবুনতো রাস্তায় গরু হাটছে এবং আপনার বাসায় ফ্রিজে আইসক্রিম আছে। কি সম্ভব হচ্ছে? আপনি যে কোন একটি বিষয় নিয়ে ভাবতে পারবে না, যদি না অন্য বিষয় থেকে মনযোগ সরিয়ে আনেন (যে কোন একটি বিষয়ের উপর মোনযোগ (ফোকাস) পরিবর্তন না করে) । অর্থৎ আপনার মনোযোগ একবার গরু থেকে আইসক্রিম এ যাচ্ছে আবার আইসক্রিম থেকে গরুতে আসছে।

আপনি যখন কোন বিষয় স্মৃতিতে মনে রাখতে চাইবেন, সেটা করার জন্য আপনাকে অনেক বেশি মেনোযোগ এবং শ্রম ব্যয় করতে হবে। এতে আপনার সব থেকে গুরুত্বপূর্ন কাজ  থেকে বিচ্যুতি বা মনোযোগ সরে যেতে পারে। ধরুন আপনার মা আপনাকে বললো বাড়িতে ফেরার সময় ডিম আর দুধ নিয়ে যেতে। ঠিক তার কিছুক্ষন পরে আপানার সহকর্মী ফোন করে প্রেজেন্টেশনের সারমর্ম জানতে চাইলো, যেটা তিনি আপনাকে করতে দিয়েছিল। এবং তার পর একজন গড়ি ব্যবসায়ী জানালো আপনি যে গাড়িটি খুঁজছিলেন সেটি তিনি পেয়েছেন। আপনি সবার কথা শুনলেন এবং কাজগুলোকে মেনটাল নোট করলেন কোনটা কখন কিভাবে করবেন, এ কাজ করে থাকলে আপনি মারাত্নক ভুল করছে। প্রত্যেকটি কাজ করার সময় নির্ধরন করে নোটবইতে লিখে ফেলা উচিৎ, এবং নোট বইতে পূর্বনির্ধারিত কাজগুর সাথে এই কাজ গুলো সঠিক সময়ে শেষ করুন। এই নিয়মে চললে প্রতিটি দিন আপনার পরিপূর্ন এবং কার্যকরী দিনে রুপান্তর হবে।

যখন্ নোট বই তৈরী করবেন তখন অবশ্যই কাজগুলোকে দুটি ভাগে ভাগে করবেন। ০১. গুরুত্বপূর্ন এবং জরুরী ০২. অ-গুরুত্বপূর্ন এবং অ-জরুরী । গুরুত্বপূর্ন এবং জরুরী ভাগে সেই সমস্ত কাজগুলোই নোট করুন যে গুলো গুরুত্বপূর্ন এবং জরুরী এবং নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে শেষ করতে হবে। ধুরুন আজকের বাড়ি ফেরার সময় আপনাকে ডিম কিনে বাসায যেতে হবে। আবার প্রেজেন্টেশন এর সারমর্ম তৈরী কারাটাও খুবই গুরুত্বপূর্ন বিষয়, যা আপনি আগামি কাল সম্পূর্ন করবেন, তাহলে কাজ দুটিকে আপনি গুরুত্বপূর্ন এবং জরুরী বিভাগে লিখে রাখবেন।

দ্বিতীয় বিভাগে গাড়ি দেখতে যাওয়ার বিষয়টি লিখে রাখবেন, যদি কোন কারনে যেতে সময়  করতে না পারেন তাহলে আপনার খুববেশি ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আর জটিলতা এড়ানোর জন্য শেষ হয়ে যাওয়া কাজগুলো হয় কেটে দিন অথবা মুছে (ডিলিট) দিন।

প্রথম বিভাগের কর্মতালিকা প্রতিদিন অফিস ত্যাগের আগে চেক করুন, যদি কোন কাজ করা বাকি থেকে যায় তাহলে অবশ্যই কাজগুলো সম্পূর্ন করুন এবং লিষ্ট থেকে তা কেটে দিন। যদি কোন মহা-গুরুত্বপূর্ন কাজের জন্য কাজটি আজকে কারা সম্ভব না হয়, তহালে পরবর্তী কোনদিন এবং কখন  কাজটি সম্পূর্ণ করবেন সেই বিভাগে নোট করে রাখুন। সাফল্য অর্জন করতে হলে প্রতিটি মূহুর্ত কাজে লাগানো উচিৎ। এবং কাজের গুরুত্ব অনুযায়ী শেষ করা উচিৎ। আর প্রথম বিভাগে নতুন কোন কাজ সংযুক্ত করা উচিৎ নয়। এবং দ্বিতীয় বিভাগেও একই নিয়ম অনুসরণ করা উচিৎ, কিন্তু সেটি প্রতি সপ্তাহে একবার করে।

পরবর্তি কর্মতালিকা তৈরী করুন

এই বইতে আপনাকে কর্ম তালিকা করতে বলা হয়েছে, কিন্তু এমন কর্মতালিকা করতে বলা হয়েনি যা শেষ করতে আপনাকে হিমসিম খেতে হয়। আপনি আপনার দৈনন্দিন কর্মতালিকার সাথে আলাদ একটি বিভাগ “পরবর্তি কর্মতালিকা” তৈরী করতে বলা হয়েছে।

পরবর্তি কর্মতালিকার প্রথম বিভাগে আপনি অবশ্যই পেশাগত কাজগুলো সাজাবেন, অবশ্যই আপনার দৈনিক কাজের ঘন্টার ভেতরে। আর দ্বিতীয় বিভাগে রাখবেন আপনার ব্যাক্তিগত কাজগুলো। যেমন কবে লন্ডিতে আপনার কাপড় গুলো দিবেন। কবে আপনি নতুন কফি মেশিন কিনবেন। কবে আপনার খালার জন্মদিনের উপহার কিনবেন।

এই বিভাগকে আপনি আবার উপ-বিভাগে ভাগ করতে পারেন, যেটা আপনার কাজের ধরনের উপর নির্ভর করছে। ধরুন আপনি একটি উপ বিভগ তৈরী করলে ভ্রমন নামে, যখন আপনি বাস,ট্রেইন,ক্যাব বা বিমানে ভ্রমান করবেন তখন কি করবেন তা এই বিভাগে লিখে রাখবেন। হতে পারে কোন ইমেইল এর উত্তর লিখবেন বা আপনার বই এরা কিছু পৃষ্ঠা লিখবেন, অথাবা কোন বই পড়বেন যে কোন কিছু যা আপনার সেই সময়টাতে করতে ভাল লাগবে। এরকম ভাবে আরও উপবিভগ তৈরী করতে পারেন। যেমন টেলিফোন, ল্যাপটপ, মিটিং ইত্যদি নামে। আসলে এগুলো নির্ভর করবে কাজের ধরনের উপর। এই রকম ভাবে আপনি কার্যকরী পদক্ষেপ দক্ষতার সাথে গ্রহন করতে পারবেন ।

যখন্ আপনি এভাবে আপনার পেশাগত এবং ব্যাক্তিগত কাজ গুলো বিভিন্ন বিভাগ এবং উপ-বিভাগে সাজিয়ে ফেলবেন, এবং কর্মপরিকল্পনা মেনে কাজগুলো শেষ করবেন। খেয়াল করবেন কাজগুলো শেষ করতে কোন রকম বেগ পেতে হয়নি। এভাবে সবসময় কর্মপরিকল্পনা করে কাজ করার অভ্যাস তৈরী করতে পারেন, তাহলে দেখবেন যেকোন কাজ খুব সহজেই করতে পরবেন, নিজে অনেকটা গোছালো হয়ে গিয়েছেন।

কাজের সাপ্তাহিক পর্যালোচনা তৈরী করুন

গেটিং থিংস্ ডান বই থেকে প্রাপ্ত নিয়মগুলোর ভেতরে এটি সবথেকে কম গুরুত্বপূর্ন। উপরের কর্মপরিকল্পনা দুটিকে কার্যকর এবং তার থেকে সুফল পেতে হলে, সপ্তাহের যে কোন একদিন পুরো সপ্তাহের কাজের পর্যালোচানা করতে হবে এবং নতুন সংযোজন বিযোজন ঘটাতে হবে। অবশ্যই প্রতিটি বিভাগ ভাল মতো ক্ষতিয়ে দেখতে হবে। কর্মপরিকল্পানার ভেতের কোন অপ্রযোজনীয় কাজ আছে কিনা? সেরকম থাকলে অবশ্যই তা সঙ্গে সঙ্গে মুছে ফেলতে হবে। 

একটি বিষয় এর উপর লক্ষ রাখতে হবে, এমন কোন গুরুত্বপূর্ন কাজ যা গত সপ্তাহে করার কথা ছিল, কিন্ত এখনও করা হয়নি, যদি এরকম কাজ থেকে থাকে তাহলে কাজটিকে মাহা গুরুত্বপূর্ন তালিকায় নিয়ে আসুন। এভাবে গুরুত্বপূর্ন কাজ সংযোজন এবং অ-গুরুত্বপূর্ন কাজ বিয়োজনের মাধ্যমে কর্ম পরিকল্পনাকেটিকে সর্বোচ্চ কার্যকর করে তুলে সাফল্য অর্জন করা সম্ভব।

উপসংহার

ডেভিড এ্যলেন তার গেটিং থিংস্ ডান” বইতে যে বিষয়গুলো নিয়ে লিখেছেন তা এতক্ষনে আপনার জানা হয়ে গিয়েছে। এ্যালেন এর দেখানো নিয়মগুলো কেউ সঠিক ভাবে অনুসরণ করতে পারে, চোখ বুজে বলে দেয়া যায় তিনি বদলে যাবেন মাত্র ছয় মাসের ভেতের। তবে হ্যা কাজগুলো নিয়মিত কতে হবে। নিয়মিত না করলে এই উপায় গুলো থেকে কোনপ্র কারে সু-ফল পাওয়া যাবে না।

পোস্টটি শেয়ার করুন !