প্রত্যেকেই জীবনে সাফল্য চায়, কিন্তু সাবই তা অর্জন করতে পারেনা। তার প্রধান করণ সবাই জানেনা কিভাবে সাফল্য অর্জন করতে হয়। আমি নিজেও জানতাম না কিভাবে কর্মক্ষেত্রে এবং জীবনে সাফল্য অর্জন করতে হয়। আমি আমার আগের কর্মস্থলে সব সময় নিজর কাজের দক্ষতা প্রমানের চেষ্টা করতাম, যেন অফিসের সবাই আমার কাজের দক্ষতা দেখে আমার প্রশংসা করে। কিন্তু হিতে বিপরীত হয়েছিল সাবাই আমাকে অহংকারী মনে করতে শুরু করলো, এবং অফিসের সবাই আমাকে অপছন্দ করতে শুরু করলো। তখন আমার জন্য সেই জায়গায় কাজ করা সম্ভব হলোনা।
আমি চাকরী ছেড়ে দিয়ে যখন হতাশায় ভুগছি তখন আমার এক বন্ধু আমাকে ডেল কার্নেগীর হাউ টু উইন ফ্রেন্ডস এন্ড ইনফ্লুয়েন্স পিপল বই টি পড়তে দিল। আমি অনিহা নিয়ে বইটি পড়া শুরু করলেও কিছুদূর পড়ার পর আমি বুঝতে পারলোম আমি এতোদনি মানুষের সাথে যেমন আচারণ করেছি তা সম্পূর্ন ভুল। বইটি পড়ে আমি চারটি খুবই গুরুত্বপূর্ন বিষয় পেয়েছি যা পরবর্তিতে আমার জীবন বদলে দিয়েছে, আমি সেই চরটি পয়েন্ট আপনাদের সাথে শেয়ার করছি, যেন সবাই জীবনকে সুন্দর ভাবে সাজিয়ে নিতে পারে।
ডেল কার্নেগীর মতে কারও সাথে বন্ধুত্ব করতে হলে, সত্যিই তার উপর মন থেকে আগ্রহ বা টান অনুভব করতে হবে। মন থেকে আগ্রহ বা টান অনুভব হলে, মাত্র দুই মাসের ভেতরে আপনি অনেক বন্ধ তৈরী করতে পারবেন,কিন্তু আপনার উপর অন্যদের আগ্রহ সৃষ্টি করে সমপরিমান বন্ধু তৈরী করা দুই বছরেও সম্ভব নয়। হ্যাঁ এটাই সত্য, সব মানুষ তার নিজের সম্পর্কে শুনতে ভালবাসে। যদি আমি আমার সহকর্মিদের সাথে বোঝাপড়া বা সু-সম্পর্ক সৃষ্টি করতে চাই, তাহলে অবশ্যই তাদের আগ্রহের বিষয় নিয়ে কথা বলতে হবে। আমি যদি তাদের জীবনের বেদনা, হাতাসা,সফলতার গল্পগুলো শুনতে আগ্রহী হয়ে উঠতে পারতাম। তাহলে আমি তাদের সাথে আরও বেশি বন্ধত্বপূর্ন সম্পর্ক তৈরী করা সম্ভব হতো, যা আমার কর্মজীনকে আরও সহজ করে তুলতো।
দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ন বিষয়, অন্যদের সাথে আলাপচারিতার সময় অবশ্যই একজন ভাল শ্রোতা এবং সাথে উৎসাহদনকারী হওয়া খুবই জরুরি।
মনে রাখতে হবে যেহেতু আমাদের কথা বলার জন্য একটি মাত্র মুখ এবং শোনার জন্য দুটি কান আছে। সত্যি এটা একটি দ্বান্দ্বিক বিষয়, যদি আপনি একজন ভাল সদালাপী ব্যক্তি হতে চন তাহলে আপনাকে অবশ্যই একজন ভাল শ্রোতা হতে হবে। আপনাকে অবশ্যই বক্তাকে সম্পর্ন মনোযোগ উপহার দিতে হবে। আপনাকে অবশ্যই তার সাফল্য, মঙ্গলজনক বিষয় গুলো নিয়ে কাথা বলতে হবে এবং উৎসাহ দিতে হবে, মোট কাথা তিনি যে বিষয়গুলো উপভোগ করে তাকে সেই বিষয়গুলো নিয়ে উৎসাহ দিতে হবে। আপনাকে অবশ্যই শুনতে হবে।
মানুষ অন্য যে কোন কিছু থেকে নিজেকে নিয়ে কাথা বলতে শত গুন আগ্রহ অনুভব করে। তাই প্রথমে শুনতে হবে, তারপর তিনি যে বিষয় নিয়ে কথা বলতে আনন্দ অনুভব করছে সেই বিষয় নিয়ে কথা বলতে হবে। আপনি যদি ভাল শ্রোতা হয়ে উঠতে পারেন, তাহলে মানুষ আপনাকে একজন ভাল সদালাপী ব্যক্তি ভাবতে শুরু করবে। মজার এবং স্ববিরোধী বিষয় হচ্ছে আপনি যখন একজন সদালাপী ব্যক্তির কথা ভাবাবেন, তাখন আপনি এমন একজনের কথা ভাবনে যে প্রচুর কথা বলে। এটাই হচ্ছে দ্বন্দের জায়গা। কিন্তু আসল সদালাপী ব্যক্তি হচ্ছেন তিনি, যিনি প্রশ্ন করে অন্যকে বলার সুযোগ করে দেয়।
একজন ব্যক্তির কাছে প্রিয় এবং আস্থাভাজন হয়ে ওঠার তৃতীয় পদক্ষেপ বা উপায় হলো আপনার কোন আগ্রহের বিষয় নিয়ে কথা না বলে তার আগ্রহের বিষয় নিয়ে কথা বলুন। একজন মানুষের কাছাকাছি যাওয়ার এটাই সব থেকে সঠিক রাস্তা। অন্যদের সাথে তার সবথেকে প্রিয় বিষয় গুলো নিয়ে কথা বলেন, হতে পারে তার বাচ্চাদের নিয়ে, পরিবার নিয়ে, স্বাস্থ্য নিয়ে অথাবা তার সম্পর্ক নিয়ে সেটা যাই হোক মূল বিষয় তার পছন্দের এবং প্রিয় বিষয় নিয়ে কথা বলতে হবে। প্রশ্ন আসতে পারে কেন শুধু অন্যর আগ্রহের বিষয় নিয়ে কথা বলবেন? এতে আপনার লাভ কি। লাভ আছে প্রথমত তিনি আপনাকে পছন্দ করবে, দ্বিতীয় আপনি তার কাছ থেকে কিছু নতুন বিষয় শিখতে পারবেন। তৃতীয় আপনি তার দৃষ্টিকোন থেকে পৃথিবীটাকে দেখতে পারবেন। এবং সর্বশেষ তিনি জীবন থেকে যে শিক্ষা গ্রহন করেছে আপনি তার কাছ থেকে ঠিক সেই শিক্ষাটাই গ্রহন করতে পারবেন।
চতুর্থ এবং সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অন্যরে কাছে নিজেকে গুরুত্বপূর্ন করে তোলা। গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতে হবে, কিন্তু সেটা যে আরপিত না হয়ে যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সত্যকথা বলতে আমি আমার সর্বশেষ কর্মস্থলে বিষয়টি বেমালুম জানতাম না। আমি সেখানে সবসময় প্রমানের চেষ্টা করতাম আমি কতটুকু গুরুত্বপূর্ন, কতটুকু স্মার্ট, কতটুকু দক্ষ ইত্যাদি বিষয়। কিন্তু এটা আমার সস্পূর্ন ভুল ছিল।
উইলিয়াম জেমস বলেছেন.. প্রকৃতিগত ভাবে মানুষের গভীরতম বৈশিষ্ট, অন্যের কাছ থেকে যথাযথ ভাবে সমাদ্রিত হওয়া।
তারা মনে করে তারা প্রসংশা পাওয়ার যোগ্য। আপনি যখন এরকম মনবিত্তি নিয়ে মানুষের সাথে কথা বলেন, তাহলে মানুষের কাছে পছন্দের পাত্র হয়ে ওঠা সম্ভব না। মানুষ তখনই কেবল আপনাকে পছন্দ করবে উৎসাহ দিবে যখন তারা বুঝবে তিনি আপনার জীবনে গুরুত্বপূর্ন একজন ব্যাক্তি। যখন আপনি বোঝাতে সমর্থ হবেন তিনি আপনার জন্য একজন গুরুত্বপূর্ন ব্যাক্তি তখন তিনিও আপনাকে তার জন্য একজন গুরুত্বপূর্ন ব্যাক্তি ভাবতে শুরু করবে। এ ক্ষেত্রে মজার উদাহরন হতে পারেন ইংল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন ডিজ্রেইলি..
তিনি যখন ইংল্যান্ডে তার নির্বচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন তখন একজন ভদ্রমহিলা বেঞ্জামিন এর প্রতিদ্বন্দ্বী সাথে ডিনার করতে চাইলেন। এবং প্রচারনার স্বর্থে তার প্রতিদ্বন্দ্বী রাজি হয়ে গেলেন। ডিনার শেষে যখন গনমাধ্যম কর্মিরা ভদ্রমহিলার তার অনুভূতি জানতে চাইলো তখন তিনি বললেন: ডিনার শেষে আমি অনুভব করলাম আমি পৃথিবীর সবথেকে স্মার্ট মানুষটির সাথে রাতের আহার করলাম, তিনি সত্যিই খুবই যোগ্য এবং চমৎকার মানুষ, তিনি নিশ্চিন্তে ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রি হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। তার কিছুদিন পর তিনি আবার বেঞ্জামিন ডিজ্রেইলির সাথে রাতের আহার করলেন। বেঞ্জামিন এর সাথে রাতের আহার শেষে তিনি গনমাধ্যমকে বলেলেন, বেঞ্জামিন এর সাথে আহার করে আমার মনে হয়েছে আমি পৃথিবীর সবথেকে স্মার্ট মানুষ, তাই আমি বেঞ্জামিনকে ভোট করবো। হ্যা বেঞ্জামিন তাকে যথেষ্ঠে গুরুত্ব দিয়েছে এবং তিনি তাকে তার গুরুত্ব অনুভব করিয়েছেন, এবং ভদ্রমহিলা যখন বুঝতে পারছেন তিনি বেঞ্জামিন এর কাছে গুরুত্বপূর্ন তখন তিনিও বেঞ্জামিনকে গুরুত্ব দেওয়া শরু করেছেন।
এবার নিশ্চই আপনি জানেন কিভাবে নতুন বন্ধুত্ব করতে হয় এবং এবং কিভাবে মানুষের উপর প্রভাব বিস্তার করা যায়। এই চারটি দ্বান্দিক গুনের কারনে মানুষ আপনাকে পছন্দ করবে আবার অপছন্দ করবে। একটা জিনিষ মনে রাখবেন, যে আপনাকে পছন্দ করবে আপনিও তাকে অবশ্যই পছন্দ করবেন। এটাই স্বাভাবিক নিয়ম।