০১. আপনি কি খারাপ পরিস্থিতিতে পড়লে নিজের মানসিক শক্তিতে উঠে দাঁড়াতে পারেন?
০২. আজ পর্যন্ত কতটুকু জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছেন বলে মনে করেন?
০৩. নিজের ভুল স্বীকার করার মত সৎসাহস কি আপনার আছে
০৪. আপনি কি যে কোনও পরিস্থিতিতে পজিটিভ থাকতে পারেন?
০৫. লক্ষ্য অর্জনের জন্য আপনি কতটা পরিশ্রম করতে পারেন এবং কতটা মনোযোগ দিতে পারেন?
০৬. সমস্যায় পড়লে কি সব সময়ে নিজে সমাধানের চেষ্টা করেন?
০৭. পরিবর্তনের সাথে নিজেকে কতটা মানিয়ে নিতে পারেন?
০৮. নিজের সিদ্ধান্ত আপনি কি নিজে নিতে পারেন?
আপনার মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে যে, ৮টি প্রশ্ন দিয়ে শুরু করা হল?। এই ব্যাপারটিকে একটি self improving game হিসেবে ধরে নিন।
নিচে একে একে বিজয়ী ও পরাজিতদের মাঝে ৮টি পার্থক্য লিস্ট করা আছে। আমরা চাই আপনি এই আটটি পার্থক্যের বিষয়ে জানতে জানতে এই প্রশ্নগুলো নিয়েও চিন্তা করবেন। শেষে আপনার জন্য আরও কিছু প্রশ্ন আছে যা এই লিস্টটি পড়ার পর আপনি ভালোমত বুঝতে পারবেন।
তবে লিস্টে যাওয়ার আগে চলুন এই দুই ধরনের মানুষ সম্পর্কে আরও একটু জেনে নেয়া যাক, যাতে করে পার্থক্যগুলো বুঝতে আপনার সুবিধা হয়।
সত্যিকার বিজয়ী ও পরাজিত আসলে কারা?
Winner – মানে বিজয়ী এবং Loser – মানে পরাজিত, এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু বিজয়ী সম্পর্কে আমরা একটি স্পষ্ট ধারনা রাখলেও পরাজিত বিষয়ে ধারনাটা বোধহয় একটু ভালো করে পরিস্কার হওয়া দরকার।
আমরা কেউ কোনও কাজে ব্যর্থ হলেই অনেক সময়ে তার গায়ে পরাজিতের ট্যাগ লাগিয়ে দিই। কিন্তু সত্যি কথা হল, একজন মানুষ কোনও কাজে প্রথমে ব্যর্থ হলেই তাকে পরাজিত বলা যায় না। ব্যর্থতা আসলে বিজয়েরই একটি ধাপ। একবারে কেউ জীবনে বিজয়ী হয় না। ব্যর্থতার থেকে শিক্ষা নিতে নিতে একজন মানুষ বিজয়ী হতে শেখে।
ধরা যাক আপনি একজন মানুষকে ৩ হাজার ফুট উঁচু একটি পাহাড়ে ওঠার জন্য চ্যালেঞ্জ করলেন। প্রথমবারে সে ৫০০ ফুট উঠে আর উঠতে পারল না, অর্থাৎ সে ব্যর্থ হল। তারপর সে আবার চেষ্টা করতে লাগল। ট্রেইনিং নিতে লাগল, নিজের ফিটনেস বাড়াতে শুরু করল। এভাবে ৫০০ থেকে ১০০০; এক হাজার থেকে ২০০০; এরপর অবশেষে সে ৩০০০ ফুট উঠতে পারল।
এই মানুষটিকে অবশ্যই বিজয়ী বলতে হবে। কারণ বার বার ব্যর্থ হওয়ার পরও সে হাল ছাড়েনি। সে বার বার হেরেও চ্যালেঞ্জ জয় করার চেষ্টা করে গেছে । যদি প্রথমবার বা প্রথম কয়েকবার চেষ্টা করে পরাজয় মেনে নিত, তখনই তাকে পরাজিত বলা যেত। শত ব্যর্থতার পরও যখন একজন মানুষ পরাজয় না মেনে চেষ্টা করতে থাকে, তখন তাকে পরাজিত বলা যাবে না। সে আসলে বিজয়ের পথে আছে।
একজন বিজয়ী মানসিকতার মানুষ ব্যর্থ হওয়ার পরও চাইলে বিজয়ী হতে পারে। কিন্তু একজন পরাজিত মানসিকতার মানুষ তা পারে না। পরাজিত মানসিকতার মানুষ ব্যর্থতার ভয়ে কাজে নামতেই ভয় পায়।
পরাজিত মানসিকতার মানুষ অন্যরা তাকে নিয়ে কি ভাববে, তাকে নিয়ে কি বলবে – এইসব নিয়ে সব সময়েই ভয়ে থাকে। সে সব সময়ে অন্যের চোখ দিয়ে নিজেকে পরিমাপ করে। তার নিজের কোনও লক্ষ্য থাকে না, অন্যদের চোখে যেটা সাফল্য, তারা সেটাই অর্জন করতে চায়। পরাজিত মানসিকতার মানুষ কখনওই নতুন কিছু শিখতে পারে না, কারণ তার মন একটি নির্দিষ্ট গন্ডির মাঝে আটকে থাকে। সে বিশ্বাস করে যে, জীবনে বড় কিছু করতে চাইলে তা ভাগ্যে থাকতে হবে। এই কারণে তারা নিজেরা কিছু চেষ্টা করার বদলে ভাগ্য বদলানোর আশায় বসে থাকে । পরাজিত মানসিকতার মানুষের মতে, দারুন সাফল্যের জন্য অসাধারন প্রতিভা নিয়ে জন্মাতে। অর্থাৎ সফলেরা সফল হয়েই জন্ম নেয়। একজন পরাজিত মানসিকতার ছাত্র ভাবে, তার ক্লাসে ভালো রেজাল্ট করা ছাত্ররা আসলে অনেক মেধা নিয়ে জন্মেছে। সে নিজে যতই পড়াশুনা করুক, ওদের মত ভালো রেজাল্ট করতে পারবে না। এই ধারণার ফলে সে ভালো করার চেষ্টাও করে না। কিন্তু সত্যি কথা বলতে, সব সাফল্যই আসলে নিবিড় অনুশীলন আর আত্মবিশ্বাসের ফল। হঠাৎ করে কিছু পেয়ে গেলে, তাকে সাফল্য নয়, সৌভাগ্য বলে।
সত্যিকার বিজয়ীর লক্ষ্য যত বড়ই হোক, সে বিশ্বাস করে যে সে তা অর্জন করতে পারবে। তাই বার বার ব্যর্থ হয়েও চেষ্টা চালিয়ে যায়। অন্যদিকে পরাজিত মানসিকতার মানুষ বড় লক্ষ্যের কথা ভাবতেই ভয় পায়।
পৃথিবীর প্রায় সব সাফল্য-বিজয়ী মানুষ বহুবার ব্যর্থতার মুখে পড়েছেন, কিন্তু তাঁরা সেই ব্যর্থতার কাছে পরাজয় মেনে না নিয়ে নিজেদের কাজ করে গেছেন। তাঁরা কখনওই হাল ছেড়ে দেননি; ভুল করতে কখনও ভয় পাননি। অনেকেই জানেন না, টমাস আলভা এডিসনের আগেও অনেকে বৈদ্যুতিক বাতি নিয়ে গবেষণা করেছেন। কিন্তু কেউ সফল হতে পারেননি। টমাসও ১০ হাজার বার ব্যর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি বিশ্বাস করতেন যে তিনি পারবেন, তাই ১০ হাজার বার পরীক্ষা করে ব্যর্থ হবার পরও তিনি চেষ্টা করেছেন। সত্যিকার বিজয়ী আর পরাজিতের মাঝে এটাই সবচেয়ে বড় পার্থক্য। ব্যর্থ হলেও তাঁরা হাল ছাড়েন না।
কিন্তু এর বাইরেও আরও কিছু পার্থক্য আছে, যেগুলো সবার জানা প্রয়োজন।
নিচে এরকম ৮টি বড় পার্থক্য দেয়া হল। খুব খেয়াল করে পড়ুন এবং বুঝতে চেষ্টা করুন আপনি আসলে কোন দলে পড়েন:
১. সত্যিকার বিজয়ীরা নিজের ভেতর থেকেই অনুপ্রেরণা পায়
একজন সত্যিকার বিজয়ী জানে সে তার জীবন থেকে কি চায়, এবং সেই ব্যাপারে কখনওই আপোস করে না। সে খারাপ কোনও অবস্থায় পড়লে তা থেকে তাকে বের করতে বাইরের কারও মোটিভেশনের প্রয়োজন হয় না। তারা আরেকজনের মোটিভেশনের অপেক্ষায় বসে না থেকে নিজেই বিভিন্ন জায়গা থেকে মোটিভেশন খুঁজে নেয়। কোনওকিছু না জানলে নিজেই জানার চেষ্টা করে, পরামর্শের দরকার হলে নিজেই বিশেষজ্ঞের কাছে যায় অথবা পড়াশুনা করে।
একজন বিজয়ী মানসিকতার মানুষের জীবনে যখনই খারাপ সময় আসে, সে নিজেই নিজেকে অনুপ্রাণিত করতে পারে। সময় খারাপ হলে একজন loser যখন হতাশ হয়ে পড়ে, একজন winner আরও বেশি উৎrসাহ ও প্রাণশক্তি নিয়ে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে। যে কোনও ভাবেই হোক, সে সমস্যার সমাধান বের করে। সে যা চায় তা অর্জন করার আগে একমাত্র মৃত্যু বাদে কোনওকিছুই তাকে থামাতে পারে না।
২. সত্যিকার বিজয়ীরা সব সময়ে শিক্ষা নেয়
একজন পরাজিত মানসিকতার মানুষ বিশ্বাস করে <strongযে, বেশি শেখার কোনও দরকার নেই। তার মতে সাফল্য অর্জনের জন্য ভাগ্যই আসলে সব। তার মতে, ভাগ্যে থাকলে সে সফল হবেই – এক্ষেত্রে জ্ঞান বা দক্ষতার কোনও দরকার নেই। এই ধরনের মানসিকতার কারণে সে নিজেকে আপডেট করতে পারে না। নিজে নিজের উন্নয়নের চেষ্টা না করে হাত গুটিয়ে বসে থাকে।
এই ধরনের মানসিকতার আরও একটি বড় সমস্যা হল, এরা যে কোনও বিষয়ে কিছুটা জেনেই মনে করে অনেক কিছু জেনে ফেলেছে। নিজে যেটুকু জেনেছে, সেটুকুকেই সেই ব্যাপারে সর্বোচ্চ জ্ঞান বলে মনে করে। কষ্ট করে আর সেই ব্যাপারে নতুন কোনও তথ্য খুঁজতে যায় না। কাজেই তার জ্ঞানও বাড়ে না।
অন্যদিকে একজন সত্যিকার বিজয়ী সব সময়েই নতুন নতুন বিষয় শিখতে চায়। সে বোঝে যে সে সব ব্যাপারে সবকিছু জানে না। জ্ঞানের শক্তি কতটুকু তা সে জানে, এবং সে কারণে তারা সব সময়ে পড়ার ও জানার চেষ্টা করে।
সত্যিকার বিজয়ী জানে যে, প্রতিটি বইয়ের পাতা থেকে, প্রতিটি মানুষের কাছ থেকেই কিছু না কিছু শেখার আছে। প্রতিটি মানুষই এমন কিছু জানে যা সে নিজে জানে না। সেই কারণে একজন সত্যিকার বিজয়ী কারও সামনেই অহঙ্কারী অথবা সবজান্তা ভাব করে না। তারা সবার কাছ থেকেই কিছু না কিছু শিখতে চায়। আর এভাবেই সে নিজেকে সাফল্যের পথে নিয়ে যায়।
৩. সত্যিকার বিজয়ীরা দায়িত্ব নিতে ভয় পায় না
একজন পরাজিত মানসিকতার মানুষের একটি প্রধান লক্ষণ হল সে নিজের দায়িত্ব নিজে নেয় না। কোনও একটি ভুল, দোষ, বা ব্যর্থতার জন্য সব সময়েই সে অন্য কাউকে বা পরিস্থিতিকে দায়ী করে। নিজের ভুলের দায়িত্ব স্বীকার করার মত সৎসাহস এদের থাকে না।
অন্যদিকে বিজয়ী মানসিকতার মানুষ তার সব কাজের ১০০ ভাগ দায়িত্ব নিজের কাঁধেই নেয়। একজন সত্যিকার বিজয়ী বিশ্বাস করে যে তার জীবনের সমস্ত ঘটনা তার নিজের চিন্তা ও কাজের ফলাফল। এই বিশ্বাসের কারণে কখনও কোনও ভুল হলে সে নিজের ব্যাপারে চিন্তা করে সেই ভুলের কারণ বের করতে পারে। এতে করে, সেই ভুল শুধরে নিজেকে ও নিজের পরিস্থিতি বদলাতে পারে। নিজের ভুল ধরতে পারার কারণে সে একই ভুল বারবার করে না। নিজের আবেগ ও কাজের ওপর সে সব সময়ে নিয়ন্ত্রণ রাখে এবং সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়ে নিজের তুলনায় বেশি অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিলেও, নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নেয়ার সাহস সে রাখে।
৪. সত্যিকার বিজয়ীরা সব সময়েই আশাবাদী
সত্যিকার বিজয়ীরা যে কোনও পরিস্থিতিতে ইতিবাচক বা পজিটিভ মনোভাব ধরে রাখতে পারে। একজন সত্যিকার বিজয়ী সব সময়েই পজিটিভ চিন্তাধারার মানুষ হয়। সব পরিস্থিতিতেই সে আশা করার মত কিছু না কিছু খুঁজে নেয়ার চেষ্টা করে। এমন মানুষ কখনওই বেশি সময় ধরে দু:শ্চিন্তা করে না।
বিপদে পড়লে মাথায় টেনশন বা নেগেটিভ চিন্তা আসবেই। কিন্তু একজন বিজয়ী মানসিকতার মানুষ সেই টেনশন বা দু:শ্চিন্তাকে খুব বেশি সময় পাত্তা দেয় না। সে জানে দু:শ্চিন্তা করে কখনও সমাধানে পৌঁছানো যায় না। যে কোনও পরিস্থিতিতে সে দু:শ্চিন্তাকে দূরে ঠেলে আশার আলো দেখার চেষ্টা করে। এই ইতিবাচক মনোভাবই তাকে সমাধানের পথে নিয়ে যায়। পরাজিত মনোভাবের মানুষেরা যখন বিরূপ সময়ে চোখের সামনে অন্ধকার দেখে, তখন বিজয়ীরা প্রতিটি সমস্যাকেই তারা নিজের অবস্থাকে উন্নত করার একটি সুযোগ মনে করে। তারা মনে করে সমস্যার সমাধান করার সুযোগ মানে নিজের ক্ষমতা ও দক্ষতা বাড়িয়ে নেয়ার একটি পাওয়া।
নিরাশ ও দু:শ্চিন্তাগ্রস্থ মানুষ খুব সহজেই ভেঙে পড়ে। নিজেদের ইমোশনের ওপর তাদের কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকে না। অন্যদিকে বিজয়ীরা খারাপ অবস্থায় প্রথমে একটু ধাক্কা খেলেও, তারা নিজেদের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে আবার উঠে দাঁড়াতে পারে। আর এই উঠে দাঁড়ানোর পেছনে সবচেয়ে বড় শক্তি হল তাদের আশাবাদী ।
৫. সত্যিকার বিজয়ীর তিনটি গুন: ফোকাস, কর্মমুখীতা, ও পরিশ্রম
পরাজিত মানসিকতার মানুষদের একটি বড় সমস্যা হল তারা খুব সহজেই লক্ষ্য থেকে দূরে সরে যায়। যেহেতু তারা নিজেদের জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে ততটা ভালো ধারনা রাখে না, কাজেই তারা কোনও কাজের প্রতিই খুব বেশি নিবেদিত হতে পারে না।
অন্যদিকে বিজয়ী মানসিকতার লোকেরা সব সময়ে তাদের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। লক্ষ্য থেকে কখনও তাদের ফোকাস সরে যায় না।
তারা জানে, তারা আগামীকাল নিজেকে কোথায় দেখতে চায়। সেইসাথে তারা এ-ও জানে যে দশ বছর পর তারা কোথায় থাকতে চায়, এবং কোন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করতে চায়।
এই চিন্তা হয়তো সবাই করে। কিন্তু সত্যিকার বিজয়ীরা সেই চিন্তাকে বাস্তব করার জন্য সব সময়ে কাজ করে। এই কর্মমূখীতার কারণেই তারা তাদের সেই ফোকাস বা চিন্তাকে বাস্তবে রূপ দিতে পারে।
তারা কথায় বিশ্বাস না করে কাজে আর পরিশ্রমে বিশ্বাস করে। অন্যরা যখন বিশ্রামের মাঝে সুখ খোঁজে, বিজয়ীরা কাজের খোঁজে থাকে। তারা জানে, বসে বসে চিন্তা করলে শুধু মূল্যবান সময়েরই অপচয় করা হয়। তারা সময় এবং কাজের হিসেব খুব ভালো মেলাতে পারে, সেই অনুযায়ী পরিশ্রমও করতে পারে। আর এই কারণেই তারা অন্যদের চেয়ে বেশি সফল হয়।
৬. সীমাবদ্ধতা জয়ের মানসিকতা
পরাজিত মানসিকতার মানুষেরা সব সময়ে একটি বলয়ের মাঝে নিজেদের আটকে রাখে। কোনও একটি সমস্যার ভেতরে আটকে পড়লে তারা একের পর এক অজুহাত দাঁড় করায়। নিজেদের দুর্ভাগ্যের জন্য যাকে পারে, যেভাবে পারে, দোষারোপ করতে থাকে। সামনে তালা ঝুলতে দেখলে তারা সেই তালার চাবি খোঁজার চেষ্টা করার বদলে বন্ধ দরজার সামনে বসে অভিযোগ করা শুরু করে।
তারা ভেবে দেখে না যে, একটি সমস্যার অনেক রকমের সমাধান হতে পারে। তারা কোনও কাজে একবার বাধা পেলে সেখান থেকে আর এক পা-ও সামনে বাড়াতে ভয় পায়। নিজের সীমাবদ্ধতাকে জয় করার মানসিকতা না থাকায় তারা নিজের যোগ্যতা বাড়ানোর কোনও চেষ্টা করে না।
অন্যদিকে সত্যিকার বিজয়ীরা জানে যে বাধা পেয়ে বসে থাকলে সেটা সময়ের অপচয়। তারা তাই সমাধান খুঁজতে থাকে। একটার পর একটা উপায় পরীক্ষা করে দেখতে থাকে। এবং এক সময়ে গিয়ে ঠিকই সমাধান খুঁজে বের করে ফেলে। এতে করে তারা নতুন কিছু শিখতে পারে এবং নিজের সীমাবদ্ধতাকেও তারা সব সময়ে এভাবেই জয় করে।
৭. পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে চলার ক্ষমতা
প্রকৃতিতে সেইসব প্রাণীই টিঁকে থাকতে পারে যারা পরিবর্তিত আবহাওয়া ও জলবায়ুর সাথে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে। পৃথিবীর আদি যুগ থেকে অনেক প্রাণীই বিলুপ্ত হয়ে গেছে শুধু এই মানিয়ে নিতে না পারার কারণে। জাদুঘরে থাকা হাজার বছর আগের বাঘের ফসিলের সামনে দাঁড়ালে বর্তমান যুগের বাঘের সাথে আপনি অনেক অমিল খুঁজে পাবেন। কারণ পৃথিবীর পরির্তিত আবহাওয়ার সাথে খাপ খাওয়াতে গিয়ে তাদের মাঝে বেশ বড় কিছু পরিবর্তন এসেছে।
এই উদাহরণটি দেয়া হল, যাতে আপনার কাছে মানিয়ে নেয়ার ব্যাপারটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এখন যদি এই ব্যাপারটিকে আমরা বিজয়ী এবং পরাজিত মানুষ এর ছকে ফেলি, তাহলে দেখা যাক কি ঘটে:
একজন বিজয়ী মানসিকতার মানুষ কখনও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিজের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ঘটাতে পিছপা হয় না। অন্যদিকে পরাজিত মানসিকতার মানুষেরা নিজেদের ভেতরে পরিবর্তন ঘটাতে ভয় পায়। বিজয়ীরা জানে যে পরিবর্তন জীবনের একটি অংশ। তারা পরিবর্তনকে মেনে নিয়ে নতুন পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের আরও দক্ষ ও উন্নত মানুষে পরিনত করে। যদি দেখে যে বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করার পক্ষে সে দুর্বল, তবে সে পিছিয়ে না গিয়ে নিজের শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করে।
কাজের ক্ষেত্রে যখন কম্পিউটারের ব্যবহার বেড়ে গেল, তখন অনেক কর্মীই এই নতুন পদ্ধতিটির ব্যবহার শিখে নিয়ে নিজেদের কাজে আরও পাকা হয়ে উঠেছিল। আবার কিছু মানুষ এই নতুন পদ্ধতিকে ভয় পাওয়ার কারণে তা শিখতেই পারেনি। তাদের অনেকেই আর কাজ করতে পারছিল না।
একসময়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মোবাইল ফোন কোম্পানী নোকিয়া শুধুমাত্র নতুন আসা এ্যান্ড্রয়েড প্রযুক্তিকে গ্রহণ না করে আজকের স্মার্টফোন দুনিয়ায় টিঁকে থাকতে পারছে না। সেই সময়কার অনেক ছোট ছোট ব্র্যান্ডও নতুন প্রযুক্তির সাথে মানিয়ে নিয়ে অনেক বড় কোম্পানী হয়ে গেছে।
এভাবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সব সময়েই নতুন নতুন পরিবর্তন আসছে। সত্যিকারের বিজয়ীরা এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানায়। তাদের কাছে এটি আশীর্বাদের মত, কারণ পরিবর্তন থেকে তারা নতু কিছু শিখতে পারছে। অন্যরা এই পরিবর্তন দেখে ভয় পেয়ে নিজেদের জিদ ধরে বসে থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে।
৮. সত্যিকার বিজয়ীরা স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয় না
অনেক মানুষ আছে যারা কিনা সব সময়ে অন্যরা যা করছে – তাই করে। একটি আইসক্রিমের দোকানে গেলে বেশিরভাগ মানুষ যেটা কিনছে, তারা সেটাই কেনে। নিজের পছন্দের আইসক্রিমটি তারা কেনে না। সব সময়ে এরা ট্রেন্ডকে ফলো করে।
একজন পরাজিত মানসিকতার মেধাবী ছাত্রের কথা ধরা যাক, যে কিনা পড়াশুনা করার সময়ে কোনও এক লেকচারে উৎতসাহিত হয়ে ঠিক করেছিল সে বড় ব্যবসায়ী হবে। কিন্তু পড়াশুনা শেষ করার পর যখন দেখল যে তার বেশিরভাগ সহপাঠী বিসিএস বা এরকম কিছুর জন্য চেষ্টা করছে, তখন সে-ও তাদের দেখাদেখি নিজের স্বপ্ন বাদ দিয়ে বিসিএস এর প্রস্তুতি নিতে শুরু করল। এখানে কি তাকে সত্যিকারের একজন বিজয়ী বলা যায়? – আবার আরেকজন যে কিনা সারাজীবন স্বপ্ন দেখেছে সরকারী কর্মকর্তা হওয়ার – অন্যদের দেখে যদি সেও উদ্যোক্তা হতে চায় – তাকেও বিজয়ী মানসিকতার মানুষ বলা যাবে না।
সত্যিকার বিজয়ী কখনওই স্রোতে গা-ভাসিয়ে দেয় না। সে শুরু থেকেই তার স্বপ্নের পেছনে ছোটে। নিজের যা আছে তাই নিয়েই সে শুরু করে, যেখানে আছে সেখান থেকেই শুরু করে। বিজয়ী মানসিকতার মানুষ ‘সঠিক সময়’ এর অপেক্ষায় বসে থাকে না। তার কাছে যখন কোনও ইউনিক আইডিয়া আসে, সে এটা দেখার অপেক্ষা করে না যে, অন্য কেউ সেই আইডিয়া বাজারে ছেড়ে সফল হচ্ছে কি না। নিজের আইডিয়ার পরীক্ষা নীরিক্ষা সে নিজেই করে।
অনেককেই দেখা যায় যে, অনেক ভালো ভালো আইডিয়া তাদের মাথায় আছে। কিন্তু অন্য কেউ সেই আইডিয়া নিয়ে কাজ করছেনা দেখে তারা পিছিয়ে যায়। তাদের সব সময়ে ‘ডেমো’ দেখার দরকার হয়। অন্য কেউ কোনও কাজ করে সফল হলে, তারা সেই কাজের পেছনে ছোটে। এবং এই কারণে প্রথমজনের থেকে তারা সব সময়েই পিছিয়ে থাকে।
মার্ক জুকারবার্গ ফেসবুক শুরু করার আগে যদি অন্য কেউ এই ধরনের একটি সাইট নিয়ে কতটা সফল হয় – তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতেন, তাহলে নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় আমরা ফেসবুকের বদলে অন্য কোনও সাইটে আজ স্ট্যাটাস দিতাম আর চ্যাট করতাম।
সত্যিকার বিজয়ীরা অন্যরা কি করে সফল হচ্ছে তা দেখার জন্য কখনও অপেক্ষা করে না। তারা তাদের পরিকল্পনামত তখনই কাজে নেমে যায়। তারা জানে, প্রথম শুরু করতে পারলে এমনিতেই এগিয়ে থাকা যায়। তারা তাদের ইউনিক আইডিয়াগুলো অন্যান্য আইডিয়ার সাথে তুলনা করে পরিকল্পনা বানায়। তারা সম্ভাবনা যাচাই করে নিজের বুদ্ধি আর গবেষণা দিয়ে। তারা হয়তো অন্যকে অনুসরণ করে তার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা থেকে শেখার জন্য, কিন্তু কখনওই অনুকরণ করে না। তারা জিরো টু ওয়ান বই এর ফর্মূলায় কাজ করে করে। শুন্য থেকে শুরু করে বিরাট কিছু করতে চায়।
আসুন, গেমটি শেষ করি:
সত্যিকার বিজয়ী ও পরাজিতদের মাঝে এই পার্থক্যগুলো পড়ে আপনার কি মনে হল তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন। তবে তারচেয়েও জরুরী বিষয় হচ্ছে আপনি একবার নিজের দিকে তাকিয়ে নিরপেক্ষ ভাবে বিচার করুন আপনি আসলে ১০০ ভাগ বিজয়ী মানসিকতার অধিকারী কি-না। একদম শুরুতে আপনাকে আটটি প্রশ্ন করা হয়েছিল। না- প্রশ্নগুলো দেখার জন্য আপনাকে আবার ওপরে উঠতে হবে না।
এখন যেহেতু প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজা এবং বিশ্লেষণ করার জন্য যথেষ্ঠ তথ্য আপনি জেনেছেন, আমরা নিচে প্রশ্নগুলোকে আরও একটু বিস্তারিত ভাবে সাজিয়েছি। সব সংশয়কে দূরে ঠেলে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ মন নিয়ে চিন্তা করুন। আমাদের ইগো সব সময়েই আমাদের সত্যের সামনে থেকে পালাতে বলে। তাই নিরপেক্ষ ভাবে নিজেকে বিচার করাটা একজন মানুষের জন্য চবচেয়ে কঠিন একটি কাজ। নিজের ‘কমফোর্ট জোন’ থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করুন। তারপর নিজেকে প্রশ্ন করুন:
১. আমি কি সত্যিই কোনও খারাপ পরিস্থিতিতে পড়লে সম্পূর্ণ নিজের মনবলে উঠে দাঁড়াতে সক্ষম? নাকি অনুপ্রেরণার জন্য আমাকে অন্যের ওপর ভরসা করতে হয়?
২. আমি কি সত্যিই মনে করি আমার এখনও অনেক কিছু শেখার বাকি? আমি কি সত্যিই প্রতিদিন কিছু না কিছু শিখছি?
৩. আমি কি সত্যিই আমার সমস্ত ভুল আর ব্যর্থতার দায় আমার নিজের কাঁধে নেয়ার সাহস রাখি? নিজেকে শোধরানোর সৎসাহস সত্যিই কি আমার আছে?
৪. আমি কি যে কোনও পরিস্থিতিতে সত্যিই আশাবাদী ও ইতিবাচক থাকতে পারি?
৫. আমার মাঝে কি ফোকাস, কর্মমুখীতা এবং কঠোর পরিশ্রমের গুণগুলো আছে? আমি কি আমার লক্ষ্যে স্থির? আমি কি সেই অনুযায়ী কাজ করছি? করলে আমি কি আমার ক্ষমতার পুরোটা সেই কাজে দিচ্ছি?
৬. আমি কি কোনও সমস্যার বলয়ে আটকে গেলে সত্যিই সমাধানের সবগুলো পথ খুঁজে দেখি? নাকি অন্যের সাহায্যের অপেক্ষায় বসে বসে দু:খ আর অভিযোগ করি? আমি কি সত্যিই সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে সমাধান নিয়ে চিন্তা করি?
৭. আমি কি যে কোনও পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিয়ে চলতে পারার ক্ষমতা রাখি?
৮. আমি কি সত্যিই আমার একান্ত লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে চলেছি, নাকি আশপাশের প্রভাবে শুধুই স্রোতে গা ভাসিয়ে চলছি? আমি কি নিজের মত করে বাঁচতে পারছি?
প্রিয় পাঠক, নিজের দিকে তাকিয়ে সততার সাথে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করুন। বার বার ভাবুন আপনার ভেতর থেকে আসা উত্তরগুলো কতটা সঠিক। নিজের ইগোর ফাঁদে পড়বেন না। এই প্রশ্নগুলো কোনও একটির উত্তরও যদি ‘না’ হয়, তবে নিজেকে ছোট ও দুর্বল ভাবার বদলে এটাকে নতুন করে নিজেকে আরও শক্তিশালী করার একটি সুযোগ বলে মনে করুন।
সুযোগটিকে কাজে লাগান, হয়ে উঠুন সত্যিকার বিজয়ীদের একজন। আপনার সাফল্য ও বিজয়ের পথে লড়াকু সব সময়ে আপনার সাথে আছে। আপনি যদি কোনও বিশেষ বিষয়ের ওপর আমাদের থেকে লেখা চান, কমেন্ট করে আমাদের জানান। লেখাটি ভালো লাগলে শেয়ার করে অন্যদের দেখার সুযোগ করে দিন। পাঠকদের সাফল্যের জন্যই আমাদের সব প্রচেষ্টা।