একজন মানুষ ধনী না গরিব হবে, সেটা তার অভ্যাস আর লাইফস্টাইল দেখলেই বোঝা যায়। এটা খুবই সাধারণ ব্যাপার যে সফল আর ধনী ব্যক্তিদের অভ্যাস আর লাইফস্টাইল সাধারণ মানুষের চেয়ে বেশ আলাদা হবে। তাঁদের গাড়ি, বাড়ি, জনপ্রিয়তা, চলাফেরা – সবই সাধারণ মানুষের চেয়ে আলাদা।
কিন্তু মজার ব্যাপারটা হচ্ছে ধনীরা ধনী হওয়ার আগেই কিংবা সফলরা সফল হওয়ার আগেই কিছু অভ্যাসের চর্চা করেন যা সাধারণ মানুষের চেয়ে আলাদা । আর এই অভ্যাস আর বা লাইফস্টাইলই তাঁদের ধনী বা সফল হতে সাহায্য করে।
আমরা অনেকে বুঝতে পারি না যে খুব সাধারণ কিছু অভ্যাস আমাদের সফল হওয়ার পথে প্রধান বাধা। আর এইসব অভ্যাস ধনী ও সফল মানুষেরা একদম শুরু থেকেই এড়িয়ে চলেন। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ বুঝতেই পারে না যে এই কাজ আর অভ্যাসগুলোর কারণেই তাঁরা সফল বা ধনী হতে পারছে না।
চলুন জেনে নিই সেই ১৫ টি “বদ” অভ্যাস যার কারণে আপনি ধনী হতে পারছেন না:
০১. প্রচুর টিভি দেখা:
![](https://i0.wp.com/images.pexels.com/photos/8158/night-television-tv-theme-machines.jpg?w=640&ssl=1)
সময় নষ্ট করার জন্য টিভি দেখার চেয়ে বড় কোনও মাধ্যম নেই (সারাদিন ইউটিউব/ফেসবুকে পড়ে থাকাও সময় নষ্টের একটি প্রধান মাধ্যম। )
আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, বাইরে থেকে ফিরেই প্রথমে টিভি খুলে বসেন। একের পর এক চ্যানেল ঘোরাতে থাকেন, এরপর কোনও প্রোগ্রাম ভালো লাগলে বসে বসে তা দেখেন, আর সময় নষ্ট করেন।
যদি কোনও প্রোগ্রামের এক এপিসোড মিস হলেই আপনার রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়, তাহলে বলতে হবে আপনি প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি টিভি দেখেন। হয়তো এই কারণেই যোগ্যতা থাকার পরও আপনি সাফল্য পাচ্ছেন না।
ব্যাপারটা একটু ব্যাখ্যা করা যাক। টিভি সিরিয়ালে বা রিয়েলিটি শো তে কার কি হল, তাতে সত্যিকার অর্থে আপনার কিছু যায় আসে না। এতে শুধু টেলিভিশন চ্যানেল আর সেই প্রোগ্রামের লোকজনের লাভ হয়। আর্টের একটি মজার দিক হচ্ছে, এটা মানুষকে একটি ঘোরের মধ্যে নিয়ে যায়। আমাদের অবচেতন মন কল্পনা আর বাস্তবের মধ্যে পার্থক্য ধরতে পারে না। দুই ক্ষেত্রেই সে একই প্রতিক্রিয়া দেখায়। আর এই কারণেই টিভি প্রোগ্রামের ঘটনাগুলো কাল্পনিক – এটা জানার পরও আমাদের মধ্যে অনুভূতির জন্ম হয়। প্রিয় কোনও চরিত্র মারা গেলে আমাদের খারাপ লাগে, যদিও আমরা জানি সে আসলে মরেনি, এটা শুধুই অভিনয়। মানুষের এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়েই আসলে ডিরেক্টর, প্রডিউসর, অভিনেতা-অভিনেত্রীরা করে খাচ্ছেন।
সাধারণ মানুষ যখন কাল্পনিক চরিত্র নিয়ে ব্যস্ত, তখন একজন সফল হতে চাওয়া মানুষের লক্ষ থাকে তাকে নিয়ে টিভিতে প্রোগ্রাম হবে, সে নিজে টিভির পেছনে সময় নষ্ট করবে না।
এখানে আপনি হয়তো খবর দেখার কথা বলতে পারেন। আপনি হয়তো ভাবছেন: খবর দেখা তো ভালো। খবর দেখা ভালো, কিন্তু অতিরিক্ত খবর দেখা এক ধরনের নেশা। অনেকেই আছেন বিভিন্ন চ্যানেলে একই খবর বার বার দেখতে থাকেন। অনেকে বলেন, তাঁরা বর্তমান পরিস্থিতি সবকিছু জানতে চান। কিন্তু সেটা একবার জানাই তো যথেষ্ঠ, বার বার একই খবর দেখার দরকার নেই।
আর বেশিরভাগ টিভি চ্যানেলই কিন্তু কারও না কারও পক্ষে থাকে। কাজেই, খবরে যা দেখছেন, তা পুরোপুরি সত্যি না-ও হতে পারে। বেশিরভাগ খবরই আসলে সত্যির সাথে মিথ্যা মিশিয়ে প্রস্তুত করা হয়। খবর যারা প্রচার করেন, তাঁদের উদ্দেশ্য আপনাকে সত্যিটা জানানো নয়। তাঁরা নিজেদের মতামত আপনার মাথায় ঢুকিয়ে দিতে।চায়।
অনেকের মতে আশপাশের সমস্যা আর চাপ থেকে মুক্ত থাকতেই তাঁরা টিভি দেখে মন ভালো করেন। কিন্তু আসল সমস্যাটা সেখানেই। আপনি যখন আপনার মন ভালো করার জন্য টিভির জগতে হারিয়ে যান, তখন আপনার অজান্তে মূল্যবান কাজের সময়ও হারিয়ে যায়। আর সমস্যার কথা ভুলে থাকলে কিন্তু তার সমাধানও হবে না। সফল মানুষেরা এড়িয়ে যান না, তাঁরা সেগুলোর সমাধান করতে চান।
০২. সাধারণ মানুষ খাওয়া কন্ট্রোল করে না :
![](https://i0.wp.com/images.pexels.com/photos/70497/pexels-photo-70497.jpeg?w=640&ssl=1)
“স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল” – এই কথাটা সবাই শুনেছি। এবং বেশিরভাগই এই কথাটা বিশ্বাস করি। তবে, এটাও সত্যি যে, স্বাস্থ্য সাফল্যেরও মূল। পরিশ্রম ছাড়া সফল হওয়া যায় না। আর পরিশ্রম করার জন্য সুস্থ থাকা খুবই জরুরী। সুস্থ থাকার জন্য ভালো স্বাস্থ্যের কোনও বিকল্প নেই।
সফল মানুষেরা পরিশ্রম করার পাশাপাশি নিজের স্বাস্থ্যের দিকেও খেয়াল রাখেন। তাঁদের খাবারের অভ্যাসও পরিকল্পিত। একজন দুর্নীতিবাজ যতই সম্পদ অর্জন করুক, তাকে আমরা সফল হিসেবে ধরছি না – কাজেই ঘুষখোরের পেট নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। আমরা এখানে এমন মানুষদের কথা বলছি, যাঁরা নিজের চেষ্টায় কষ্ট করে সফল ও ধনী হয়েছেন।
তাঁরা হয়তো একটি পর্যায়ে গিয়ে জীবনকে দারুন ভাবে উপভোগ করেন, কিন্তু সফল বা ধনী হয়ে ওঠার আগে তাঁরা নিজেদের কঠোর ভাবে শাসন করেন। আর এই শাসনের একটি বড় অংশ হলো খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করা। সাধারণ মানুষেরা পকেটে কিছু টাকা এলে, অথবা কোনও উপলক্ষ আসলেই চলে যান বড় কোনও রেস্টুরেন্টে, যেখানে হাই ফ্যাট আর হাই সুগার সমৃদ্ধ খাবার পাওয়া যায়।
পৃথিবীর এমন অনেক বড় বড় বিলিওনেয়ার আছেন যারা মাংস বা চর্বি ছুঁয়েও দেখেন না। ধনী হওয়ার পরও তাঁরা অনেকদিনের অভ্যাসটি ধরে রাখেন, কারণ এর উপকার সম্পর্কে তাঁদের ভালো করে জানা আছে। বিল গেটস, ইলন মাস্ক, জ্যাক মা, স্টিভ জবস, মার্ক জুকারবার্গ – কেউই কিন্তু মোটা নন।
সফল ও ধনী ব্যক্তিরা খুব সতর্ক ভাবে তাঁদের খাবার নির্বাচন করেন যা তাঁদের স্বাস্থ্য ঠিক রাখে, এবং শরীরকে সুস্থ রাখে। শরীরে বেশি চর্বি জমলে খুব দ্রুতই শরীর ক্লান্ত হয়, ফলে বেশি কাজ করাটা কঠিন হয়ে যায়। কাজের মানুষেরা সব সময়ে খেয়াল রাখেন কোন খাবারটি তাঁদের জন্য উপযোগী।
চর্বি ও চিনি মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কাজে বাধা দেয় এবং এর ফলে চিন্তা করতে গিয়েও মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সমস্যার সমাধানের প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়। সাধারণ মানুষ তাঁদের মুখের রুচির ওপর নির্ভর করে খাবার নির্বাচন করে, অন্যদিকে সফল ও ধনী মানুষেরা খাবারের পুষ্টিগুণ বিচার করেন।
০৩. সাধারণ মানুষ সস্তায় পেলে অপ্রয়োজনীয় জিনিসও কিনে ফেলে:
![](https://i0.wp.com/images.pexels.com/photos/749353/pexels-photo-749353.jpeg?w=640&ssl=1)
মানুষ দুই কারণে কেনাকাটা করে: প্রয়োজনে, আর আবেগে। সাধারণ মানুষ আর ধনীদের মাঝে একটি প্রধান পার্থক্য হলো, ধনীরা কখনওই আবেগের বশে বেহিসেবী কেনাকাটা করে না। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ বেশিরভাগ সময়ে আবেগের বশেই কেনাকাটা করে থাকে।
আরও একটি ব্যাপার, সাধারণ মানুষ কম খরচে বেশি পাওয়ার চেষ্টা করে। অন্যদিকে ধনী ব্যক্তিরা সব সময়ে তাঁদের হাতে থাকা সম্পদকে কাজে লাগিয়ে সম্পদ আরও বাড়ানোর চেষ্টা করে।
কোনও পন্য ডিসকাউন্টে বিক্রি হলেই ধনীরা তা কেনার জন্য ব্যস্ত হয়ে যান না। আগেই বলা হয়েছে, ধনী হওয়ার আগেই তাঁরা এই প্রাকটিসটি করে থাকেন। ব্যাপারটা এমন নয় যে, তাঁরা অনেক টাকার মালিক বলে ছাড়ের পন্য কেনেন না।। অপ্রয়োজনীয় জিনিস যত সস্তাই হোক না কেন, একজন ধনী ব্যক্তি কখনওই সেই পন্য কিনবেন না।
ধনী ব্যক্তিরা তাঁদের অর্থ হিসেব করে খরচ করে। তাঁরা প্রতিটি পয়সার মূ্ল্য বুঝে তাকে সেভাবেই কাজে লাগায়। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ প্রয়োজন না হলেও, আবেগের বশে অনেক কিছু কেনে।
০৪. সাধারণ মানুষ তরুণ বয়সে ধনী ও সফলদের তুলনায় দেরিতে ঘুম থেকে ওঠে:
![](https://i0.wp.com/images.pexels.com/photos/280257/pexels-photo-280257.jpeg?w=640&ssl=1)
শুধুমাত্র সকালে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস দেখেই বলে দেয়া যায় একজন মানুষ ভবিষ্যতে সফল নাকি সাধারণ হবে। পৃথিবীর বড় বড় সফল আর ধনী মানুষদের জীবনী থেকে দেখা যায় তাঁরা প্রায় সবাই তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠতেন, এবং ওঠেন।
ধনী ব্যক্তিরা তাঁদের তরুণ বয়স থেকেই তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে কাজ শুরু করেন। এই শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে দিন শুরু করায় তাঁদের সারাটা দিনই গোছানো ভাবে কাটে। অন্যদিকে ব্যর্থ মানুষদের জীবন ঘাঁটলে দেখা যায় তাঁদের বেশিরভাগেরই রাত জাগা ও দেরি করে ঘুমানোর অভ্যাস ছিল।
অনেকেই হয়তো বলবেন ভিঞ্চির মত সফল জিনিয়াস তো রাত জেগে কাজ করতেন। অনেকেই জানেন না যে তিনি আসলে সন্ধ্যার পরপরই ঘুমিয়ে পড়তেন এবং গভীর রাতে উঠে তাঁর কাজ শুরু করতেন।
অসফল মানুষদের একটি প্রধান কাজই হল ঘুম থেকে দেরি করে ওঠা। এমনকি ঘুম থেকে ওঠার জন্য তাঁদের কোনও নির্দিষ্ট সময়ও থাকে না। দিনের শুরুটা অগোছালো হওয়ার কারণে তাঁদের সারাটা দিন অগোছালো ভাবেই কাটে । সাধারণ মানুষেরা যখন অযথা রাত জাগে, তখন ভবিষ্যৎ ধনী ও সফল মানুষেরা চুপচাপ ঘুমিয়ে তাঁদের মস্তিষ্ককে পরের দিনের জন্য রেডি করে নেন।
এটা সবাই মানে যে, যারা তরুণ বয়সে কঠোর পরিশ্রম না করলে, পরবর্তী জীবনে তা করতেই হয়। কিন্তু সেই পরিশ্রম কোনও বড় সাফল্য বয়ে আনে না। ভিঞ্চির কথা বাদ দিলেও বর্তমান যুগের বিল গেটস, ইলন মাস্ক বা ওয়ারেন বাফেট – সবারই তরুণ বয়সে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস ছিল। এবং তাঁরা এখনও সেই অভ্যাস ধরে রেখেছেন।
০৫. সাধারণ মানুষ খেলাধুলা নিয়ে বেশি মাতামাতি করে:
![](https://i0.wp.com/images.pexels.com/photos/270085/pexels-photo-270085.jpeg?w=640&ssl=1)
অনেকেই হয়তো এর সাথে একমত হবেন না। অনেকে হয়তো রেগেও যেতে পারেন। তবে বলে রাখা ভালো, আপনার লক্ষ্য যদি হয় পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে সফল হওয়া, তবে আপনার জন্য খেলা নিয়ে মেতে থাকাই সবচেয়ে ভালো। আবার নিজের দেশকে খেলায় সমর্থন দেয়াটাও দোষের কিছু নয়।
কিন্তু কিছু মানুষ আছেন, যারা নিজেরা খেলোয়াড় না হয়েও সারাদিন খেলার খবর, লাইভ খেলা, খেলার হাইলাইটস – এসব নিয়ে মেতে থাকেন। নিজের দেশের খেলা থাকলে অন্য কথা। কিন্তু এরা অন্য দেশের খেলা হলেও সবকিছু বাদ দিয়ে বসে বসে সেই খেলা দেখে।
এতে কিন্তু সত্যিকার কোনও লাভ নেই। মূল্যবান সময়ই শুধু নষ্ট হয়। অনেক সত্যিকার কাজের মানুষ, খেলা নিয়ে অন্যদের অতিরিক্ত মাতামাতি দেখে হাসেন।
রেগে যাওয়ার আগে ব্যাপারটি ভালো করে ভাবুন। রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, পাকিস্তান – এরা জিতলে বা হারলে আমাদের লাভ কি? আপনি হয়তো জানেন যে এইসব খেলার আয়োজন করা হয় পন্য বিক্রী আর প্রচারের জন্য। এখানে জাতিগত আবেগ বা দর্শকদের বিনোদন – কোনওটাই আসল উদ্দেশ্য নয়।
সাধারণ মানুষ এই ব্যাপারটা বোঝে না। অনেকে জেনেও এই মাতামাতিতে যোগ দেয়। যারা খেলছে (আপনার নিজের দেশের খেলোয়াড় বাদে) আপনার খেলা দেখা – না দেখায় তাঁদের কিছুই আসে যায় না। তাঁরা জিতলে বা হারলে আসলে আপনার কিছু যায় আসে না। কোনও বিশেষ খেলা বা দলের প্রতি দুর্বলতা থাকলে সফল মানুষরা মাঝে মাঝে হয়তো স্কোরটা দেখে নেন, অথবা খেলার শেষের অংশটা দেখেন ; কিন্তু সাধারণ মানুষের মত সারাদিন খেলা নিয়ে পড়ে থেকে সময় নষ্ট করেন না।
০৬. সাধারণ মানুষ ধনী বা সফল মানুষদের মত পরিচ্ছন্নতা সচেতন হয়না:
![](https://i0.wp.com/images.pexels.com/photos/161502/shower-shower-head-water-drop-of-water-161502.jpeg?w=640&ssl=1)
এক গবেষণায় দেখা যায় পরিচ্ছন্ন থাকার সাথে সাফল্যের একটি শক্তিশালী সম্পর্ক আছে।
একজন মানুষ যখন পরিচ্ছন্ন থাকে, তখন অন্যরা তার কাছাকাছি আসতে ও তার সাথে কথা বলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। মনে করুন আপনি কারও কাছে একটি নতুন পন্য বিক্রী করতে গিয়েছেন, আপনার পোশাক থেকে মৃদু, এবং মুখ থেকে বেশ জোরালো দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। – কি মনে হয়? পন্যটি বিক্রী করতে পারবেন?
পোশাকের দাম কোনও ব্যাপার না, পরিস্কার রাখাটাই ব্যাপার। আপনি কি সাবান ব্যবহার করছেন সেটাও কোনও ব্যাপার না। ব্যাপার হচ্ছে আপনি তা কিভাবে ব্যবহার করছেন। সফল মানুষেরা সব সময়েই নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করেন। অন্যদিকে অসফল মানুষেরা নিজের পরিচ্ছন্নতার দিকে খুব একটা নজর দেন না।
মানুষ যদি আপনার কাছাকাছি আসতে আগ্রহ না পায়, তাহলে আপনি কিভাবে তাঁদের সাথে সম্পর্ক করবেন?
০৭. বেশিরভাগ সাধারণ মানুষই খারাপ পরিস্থিতিতে পড়লে অন্যদের দোষ দেয়:
![](https://i0.wp.com/images.pexels.com/photos/34667/person-human-male-man.jpg?w=640&ssl=1)
বেশিরভাগ মানুষ যখন ভুল করে, তখন সেই দোষ এড়ানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে। তাঁরা অন্য মানুষ, পরিস্থিতি এমনকি ভাগ্যের ওপর দোষ চাপিয়ে দিয়ে নিজেকে বাঁচাতে চায়। নিজের ভুল কোনওভাবেই স্বীকার করতে চায় না।
অন্যদিকে সফল মানুষেরা ভুল করার পর আগে বুঝতে চেষ্টা করেন তার নিজের কোন জিনিসটার অভাব ছিল। কোন অযোগ্যতার কারণে তাকে ব্যর্থ হতে হল, এবং এর ফলে তার কি কি ক্ষতি হল – এগুলো নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তা করেন। কোথায় কোথায় ভুল হয়েছে সেগুলো ভেবে বের করে সেগুলো যাতে আর না হয়, সেই চেষ্টা করেন।
কোনও দোষ দূর করার জন্য সবার আগে দোষ স্বীকার করা জরুরী। ধনী ও সফল মানুষরা নিজেদের লক্ষ্য অর্জনের পথে কোনও ভুল হলে অন্যের ওপর দোষ চাপানোর বদলে, নিজেদের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নেন। তারপর সেগুলো সংশোধন করেন।
০৮. সাধারণ মানুষেরা তেমন একটা সঞ্চয় করে না:
![](https://i0.wp.com/images.pexels.com/photos/259027/pexels-photo-259027.jpeg?w=640&ssl=1)
সাধারণ মানুষ আর অর্থনৈতিক ভাবে সফল মানুষদের মধ্যে আরেকটি পার্থক্য হল টাকা জমানোর অভ্যাস। সাধারণ মানুষ বেশিরভাগ সময় যা হাতে পায় তার প্রায় পুরোটাই করে ফেলে। অন্যদিকে যত টাকা পয়সাই থাকুক না কেন, ধনীরা সব সময়েই একটি বাজেটের মধ্যে চলে। সেই সাথে, জমানো টাকা আলাদা করে রাখে।
ধনীদের এই অভ্যাস যে শুধু ধনী হওয়ার পরে হয়, তা কিন্তু নয়। সাধারণ থেকে ধনী হওয়ার পেছনেও তাঁদের এই অভ্যাসের বড় একটি অবদান থাকে। এমন মানুষকে হয়তো আপনিও চেনেন যে একটি ছোট দোকান থেকে ধীরে ধীরে বিশাল ব্যবসার মালিক হয়েছেন। অনেক সময়ই দেখা যায়, পাশাপাশি দু’টি দোকান একসাথে শুরু হয়। একটির মালিক কয়েক বছরের মধ্যে বিশাল ব্যবসায়ী হয়ে যায়, আর অন্য দোকানের মালিক সেই দোকান নিয়েই পড়ে থাকে।
এর প্রধান কারণ, প্রথম দোকানের মালিক তার ব্যবসার লাভ থেকে কিছু কিছু টাকা সব সময়েই আলাদা করে রাখতো, এবং একটি বড় অংকের টাকা জমলে সে তা অন্য ব্যবসায়ে খাটাতো। আর এভাবেই সে একদিন বড় ব্যবসায়ী হয়ে ওঠে, আর পাশেরজন যেখানে ছিল সেখানেই থেকে যায়।
আপনার যদি কিছু টাকা আলাদা করা থাকে, তাহলে হঠাৎ আসা কোনও বিপদ থেকে আপনি সহজেই উদ্ধার পাবেন। যদি না থাকে, তাহলে ধার-দেনা থেকে শুরু করে অন্য অনেক উপায়ে আপনাকে টাকা জোগাড় করতে হবে, যার ফলে মূল্যবান কাজের সময় ও মনের শান্তি নষ্ট হবে।
সেই দোকানদার দু’জনের কথাই ধরা যাক। যে দোকানদার কিছু কিছু টাকা সব সময়েই জমিয়ে রাখে, সে বিপদে পড়লেও তার দোকান চালিয়ে নিতে তেমন সমস্যা হবে না। আর যে দোকানদার দিনের টাকা দিনেই শেষ করে ফেলে, তাকে কিন্তু দোকান চালানোর টাকা থেকেই অন্য জায়গায় টাকা ভরতে হবে।
সঞ্চয়ী মানুষরা বিপদে পড়লেও সেই বিপদ থেকে অনেক সহজে উদ্ধার পায়। অন্যদিকে টাকা সঞ্চিত না থাকলে কোনওরকমে বিপদ কাটালেও, দৈনন্দিন জীবনে অনেক বাজে অবস্থায় পড়ে যেতে হয়।
আবার ধরুন দুইজন চাল ব্যবসায়ীর একজন যথেষ্ঠ টাকা আলাদা করে রাখে, আরেকজন রাখে না। কোনও এক সময়ে একটি চালের পাইকারী দাম অনেক কমে গেল। এখন যার হাতে টাকা আছে, সে সুযোগটি কাজে লাগাতে পারবে, নাকি যার নেই সে পারবে না।
০৯. সাধারণ মানুষেরা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ভোগ্যপন্য কেনে:
![](https://i0.wp.com/images.pexels.com/photos/259200/pexels-photo-259200.jpeg?w=640&ssl=1)
বর্তমানে প্রায় সবার হাতেই ক্রেডিট কার্ড আছে। একজন মানুষের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ কেমন হবে, তা কিন্তু তার ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা দেখেই বোঝা যায়।
আপনি আশপাশে তাকালে দেখতে পাবেন কোনও দামী শপে বা রেস্টুরেন্টে কর্পোরেট বা বড় সরকারী চাকরী করা মানুষ, বা অনেক ব্যবসায়ী বেশ মোটা অংকের টাকা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে পেমেন্ট করেন। তাঁরা বুঝতেও পারেন না, এটি আসলে একটি ফাঁদ। /strong> যারা মাসে হিসেব করা টাকা আয় করেন, তাঁদের ক্রেডিট কার্ডের বিল সেই টাকা থেকেই শোধ করতে হয়। এভাবে তাঁদের টাকায় ঘাটতি থেকেই যায়, এবং সেই ঘাটতি পূরণ করতে আবার ক্রেডিট কার্ডেরই সাহায্য নিতে হয়।
এই চক্র চলতে থাকে বছরজুড়ে, যা থেকে ক্রেডিটকার্ড ব্যবহারকারী সহজে বের হতে পারেন না। যারা কথায় কথায় ক্রেডিট কার্ড বের করে, তাঁরা আর যাই হোক, সত্যিকার ধনী হতে পারবে না।
অনেকেই বোঝে না যে, ক্রেডিট কার্ড একধরনের ঋণ। একজন বুদ্ধিমান মানুষ কখনওই ধারের টাকা দিয়ে এমন কিছু করবে না, যা আরও বেশি টাকা ফিরিয়ে আনবে না। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ হয়তো লেটেস্ট মডেলের একটি ফোন বা টিভি কেনার জন্য ধার করতে চাইবে। যে ভবিষ্যতে ধনী হবে, সে হয়তো তার কাজের জন্য একটি কম্পিউটার কেনার জন্য ধার করতে পারে, যার টাকা সে সেই কম্পিউটারের আয় দিয়েই শোধ করতে পারবে। কিন্তু সে কখনওই টিভি বা মোবাইল কেনার জন্য ধার করবে না।
সাধারণ মানুষ ভোগের জন্যও ধার করে। একজন ধনী সব সময়েই ধার করে বিনিয়োগের জন্য। তাঁর চিন্তুা থাকে লেটেস্ট আইফোনটি সে কিনবে তার আয় করা টাকা দিয়ে। এই ব্যাপারটি আরও বিস্তারিত ভাবে ১২ নম্বর পয়েন্টে বলা হবে।
১০. সাধারণ মানুষ তাড়াতাড়ি সন্তানের মুখ দেখতে চায়:
![](https://i0.wp.com/ummuhani.com/wp-content/uploads/2017/05/RSIA-Anak.jpg)
উপরের ছবিটি দেখতে পাচ্ছেন নিশ্চই? দেখলেই বুকের মধ্যে একটা ভালোলাগা সৃষ্টি হয় – তাই না? – মনে হয় এমন ফুটফুটে একটা বাচ্চা যদি আপনারও থাকতো, তাহলে কতই না ভালো হতো!
একজন সুস্থ মানুষের এই অনুভূতি হওয়াটাই স্বাভাবিক। সবারই এই অনুভূতি হয়। কিন্তু কিছু অসাধারণ মানুষ আছেন, যারা এই স্বপ্নকে পূরণ করার জন্য সঠিক সময়টি বেছে নেন। বেশিরভাগ সাধারণ মানুষই আয় করা শুরু করলে একটি সংসার গড়ার চিন্তা করেন। যার প্রথম ধাপ বিপরীত লিঙ্গের একজন সঙ্গীর সাথে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া, এবং পরবর্তীতে নতুন একটি মানুষকে পৃথিবীতে নিয়ে আসা।
যারা নিজের চেষ্টায় ধনী হতে চান – তাঁরা কখনওই নিজের আর্থিক লক্ষ্য পূরণ হওয়ার আগে সন্তানের মুখ দেখার ইচ্ছে পূরণের চেষ্টা করেন না।
সন্তান অবশ্যই মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। এই সম্পদ পেয়ে গেলে পৃথিবীর বাকি সব সম্পদই মূল্যহীন মনে হয়। বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন, অনেক সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তাই সন্তান জন্মের পর নিজের উচ্চাকাঙ্খা হারিয়ে ফেলেছেন। তবে ব্যতিক্রমও আছে, সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য অনেকেই পরিশ্রমের মাত্রা বাড়িয়ে দেন।
আবার সন্তান মানুষ করার খরচের বিষয়টাও আপনাকে মাথায় রাখতে হবে। বেশিরভাগ ধনী মানুষই তাঁদের লক্ষ্য পূরণ হওয়ার আগে সন্তান নেন না। এখানে বয়স নয়, সাফল্যটাই মূল ব্যাপার। আপনার যদি লক্ষ্য থাকে কোটিপতি হবেন, এবং ২৫ বছর বয়সেই তা হয়ে যান, তবে পৃথিবীতে একজন নতুন অতিথি নিয়ে আসুন। বড় বড় উদ্যোক্তাদের জীবনী ঘাঁটলে দেখা যায় তাঁরা তাঁদের ব্যবসা দাঁড় করানোর পরই বিয়ে করেছেন, বা সন্তান নিয়েছেন।
ধনী ব্যক্তিরা সন্তানদের তাঁদের সংগ্রামের অংশীদার করার বদলে, সৌভাগ্যের অংশীদার করতে বেশি আগ্রহী। সাধারণ মানুষ আবেগের কাছে নতি স্বীকার করে জলদিই সন্তানের স্পর্শ পেতে চায়, কিন্তু সন্তানকেও তাঁরা তাঁদের টানাপোড়েনের অংশীদার করে ফেলেন।
একজন সাফল্য প্রত্যাশী মানুষ প্রথমে তার লক্ষ্য পূরণ করে সফল হতে চায়। পরে সেই সাফল্যই তার সন্তানকে নিরাপদ রাখে। ধনী মানুষরা তাঁদের সন্তানের আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাঁদের পৃথিবীতে আমন্ত্রণ জানান।
১১. সাধারণ মানুষ নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে না:
![](https://i0.wp.com/images.pexels.com/photos/220723/pexels-photo-220723.jpeg?w=640&ssl=1)
ছোটবেলা থেকে বহুবার আমরা শুনেছি “স্বাস্থ্যই সম্পদ”। দুই শব্দের এই ছোট্ট বাক্যটা কিন্তু পৃথিবীর সবচেয়ে সত্যি কথাগুলোর একটি।
আপনার যদি কোনও পরিচিত ধনী ব্যক্তি থাকেন, তাহলে খেয়াল করে দেখবেন, তাঁর একজন পরিচিত ডাক্তার আছেন। এই ডাক্তারটির কাছে তিনি অসুখ না থাকলেও স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য যান । আপনি যদি নিজের চেষ্টায় ধনী হতে চান, তবে আপনাকে একটা সময় পর্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। আর এই পরিশ্রম করার জন্য সুস্থ থাকাটা খুবই জরুরী।
আমরা মানুষকে প্রায়ই বলতে শুনি যে ধনীরা যা আয় করে, তা ভোগ করতে পারে না। ডাক্তার এটা ওটা তাঁদের নিষেধ করে দেন, এবং তাঁদের তা মেনে চলতে হয়। ব্যাপারটা সব সময়ে ঠিক না। অনেক সময়ে তাঁরা নিজেরাই ডাক্তারকে দিয়ে রুটিন বানিয়ে নেন। এতে করে তাঁরা ফিট থেকে আরও ভালোভাবে নিজেদের কাজ করতে পারেন। নিয়মিত চেক আপ করালে যে কোনও রোগ বেশ আগে ধরা পড়ে, ফলে তার চিকিৎসা খরচও অনেকটা কমে আসে। বিলিওনিয়ার ওয়ারেন বাফেট এর ক্যান্সার ধরা পড়েছিলো এরকম একটি নিয়মিত চেক আপের সময়ে। সেই কারণেই দ্রুত চিকিৎসা নিয়ে তিন সুস্থ হতে পেরেছিলেন। এখন প্রায় ৯০ বছর বয়সেও তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন।
১২. সাধারণ মানুষ আয় করার আগেই খরচ করা শুরু করে:
![](https://i0.wp.com/images.pexels.com/photos/298864/pexels-photo-298864.jpeg?w=640&ssl=1)
৯ নম্বর পয়েন্টে ক্রেডিট কার্ড নিয়ে কিছু কথা বলেছিলাম। ভবিষ্যতে টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা দেখে, তা হাতে পাওয়ার আগেই ধার করে কেনাকাটা করা অনেকটা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার মতই বিপজ্জনক। এটা মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কিন্তু এই কাজটি সাধারণ মানুষ প্রায়ই করে থাকে।
টাকা পাওয়ার আগে খরচ করার অভ্যাস একবার হয়ে গেলে সেটা ধীরে ধীরে জীবনকে গ্রাস করে ফেলবে। আপনি সবসময়েই দু:শ্চিন্তার মধ্যে থাকবেন। আবার যদি, যে টাকা আসবে বলে আগেই টাকা ধার করেছেন, সেই টাকাটি হাতে আসতে দেরি হয়, বা একেবারেই না আসে – তাহলে মান-সম্মান নিয়েও টানাটানি লেগে যায়।
একজন মানুষের ধনী হওয়ার সবচেয়ে বড় একটি যোগ্যতা হচ্ছে, সে নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে জানে। যদি তার কোনওকিছু পছন্দ হয়, তবে সে তা কখনওই ধারের টাকা দিয়ে কিনবে না। বরং সে আরও কাজ করে সেই বাড়তি টাকাটি আয় করে, অথবা তার আয়ের থেকে কিছু কিছু বাঁচিয়ে তারপর তার পছন্দের জিনিসটি কেনে। তাঁরা একমাত্র ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করার সময়েই টাকা নিয়ে ঝুঁকি নেয়।
১৩. সাধারণ মানুষেরা নিজের আশেপাশে নিজের মত লোকদের রাখতে পছন্দ করে:
বেশিরভাগ অসফল মানুষের অসফল থেকে যাওয়ার একটি প্রধান কারণ হলো তাঁরা অন্য অসফল মানুষদের সাথে বেশি সময় কাটায়। এর মানে এই না যে, আপনাকে ধনী ব্যক্তিদের সাথে চলতে ফিরতে হবে। এমন মানুষের সাথে চলুন, যারা নিজেরা ধনী না হলেও, ধনী হতে চায়। ছোট চিন্তা করা মানুষদের এড়িয়ে যান। বড় চিন্তা করা মানুষদের সাথে চলুন।
এছাড়া একজন সফল মানুষ তাঁর নিজের চেয়ে বেশি জ্ঞানী ও মেধাবীদের সাথে থাকতে চান।
আপনি যদি নিজের সমান মেধার, বা নিজের চেয়ে কম মেধার মানুষের সাথে চলেন – তাহলে আপনার জ্ঞান আর মেধা বাড়বে না।
নিজের চেয়ে বেশি জ্ঞানী ও মেধাবী মানুষের সাথে চললে আপনার নিজেরও জ্ঞান আর মেধা বাড়বে। আপনি সব সময়েই তাঁদের কাছে কিছু না কিছু শিখবেন।
এছাড়াও আপনার আশপাশে যদি একজনও এমন মানুষ থাকেন, যিনি নিজের চেষ্টায় ধনী হয়েছেন, তাহলে যতটা সম্ভব তার কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করুন। তার কাজ ও কথায় সবসময়ে মনযোগ দিন। হয়তো তার কাছ থেকেই ধনী হওয়ার সেরা উপায়টি আপনি পেয়ে যাবেন।
১৪. সাধারণ মানুষ সাধারণত তাঁদের সত্যিকার দক্ষতা ও স্বপ্নের পেছনে নিজের পুরোটা দিয়ে ছোটে না:
![crying man](https://i0.wp.com/www.careleader.org/wp-content/uploads/2016/06/BurnedByGod.jpg?resize=640%2C426&ssl=1)
জন্ম কোথায় হবে, কার ঘরে হবে, কি অবস্থায় হবে, কোন দেশ বা সমাজে হবে – এসবের ওপর আপনার কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। কোনওকিছুই ওপরই আসলে আপনার নিয়ন্ত্রণ নেই, শুধু একটি জিনিস ছাড়া। যে কোনও পরিস্থিতিতে আপনার রিএ্যাকশন কি হবে – তার পুরোটাই আসলে আপনার ওপর নির্ভর করে।
আপনি চাইলে অন্য লোকদের চোখে যেটা ভালো, সেটা করতে পারেন। অথবা আপনি নিজে যা চান তা পাওয়ার জন্য নিজের মত কাজ করতে পারেন। অন্যদের চোখে ভালো থাকার জন্য নিজের ইচ্ছা বিসর্জন দেয়া উচিৎ নয়।
জন্মের পর থেকেই আমাদের অন্যের কথা মেনে চলতে বাধ্য করা হয়। কিন্তু একটা পর্যায়ে এসে আর না মানলেও চলে। আপনার স্বপ্ন আপনি পূরণ করবেন কিনা – সেটা পুরোটাই নির্ভর করে আপনার সাহস আর ইচ্ছাশক্তির ওপর।
একটা ব্যাপার চিন্তা করে দেখুন, পৃথিবীর প্রতিটি জীবিত মানুষ দিনে ২৪ ঘন্টা করেই পায়। এদের মাঝে অনেকেই অনেক বেশি সফল হন, কারণ তাঁরা তাঁদের প্রতিটি মূহুর্তকে নিজের স্বপ্ন পূরণের কাজে লাগান।
ধনী ও সফল মানুষেরা তাঁদের সময়ের বেশিরভাগটাই তাঁদের আগ্রহের বিষয়ে শেখেন ও সেই শিক্ষাকে কাজে লাগান। আপনিও যদি তাঁদের মত হতে পারেন, তবে আপনার স্বপ্ন পূরণ হওয়াও অসম্ভব কিছু নয়।
আপনি হয়তো জানেন, ১০টির মধ্যে ৯টি ব্যবসাই প্রথম দিকে ব্যর্থ হয়। কিন্তু আপনি কি জানেন যেসব ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে কাজই করা হয়না, তার কয়টা ব্যর্থ হয়? – ঠিক ধরেছেন! সবগুলোই।
কাজেই কাজ শুরু করার সাথে সাথেই ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা কমে আসে। বারবার চেষ্টা করতে থাকুন। একবার ব্যর্থ হলে আশপাশের মানুষের কথায় বা পরিস্থিতির চাপে দমে না গিয়ে ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে আবার শুরু করুন। আপনি যে বিষয়ে দক্ষ, এবং আপনি যা অর্জনের স্বপ্ন দেখেন, তার পেছনেই ছুটতে থাকুন – সৃষ্টিকর্তা আপনাকে বিমুখ করবেন না।
১৫. সাধারণ মানুষ সাফল্যের জন্য অন্যের সাহায্যের আশায় থাকে:
![](https://i0.wp.com/images.pexels.com/photos/220444/pexels-photo-220444.jpeg?w=640&ssl=1)
সত্যিকথা বলতে, আপনি যখন নতুন কিছু শুরু করবেন, তখন আপনাকে কেউ সাহায্য করতে চাইবে না। আমাদের আশপাশে যতই বন্ধু-পরিজন থাকুক, দিন শেষে আমরা সবাই একা। এবং আমাদের নিজেরটা নিজেকেই গড়ে নিতে হবে। একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ের দক্ষতা আর সাফল্য পেলে তখন অন্যরা নিজে থেকে এসেই সাহায্য করতে চাইবে। সব সময়ে মনে রাখবেন, নিজের স্বার্থ ছাড়া অন্যের উপকার করার মত মহামানবের সংখ্যা পৃথিবীতে খুবই কম।
যৌবনে বেশিরভাগ মানুষই ভাবে তাঁরা অনেক বড় সাফল্য অর্জন করবে। কিন্তু ১০০ জনে মাত্র ১জন তেমন সফল হতে পারে। এর একটা বড় কারণ বেশিরভাগ মানুষই সাফল্যের জন্য অন্যের সাহায্য চায়।
সফলেরা একদম শুরু থেকেই বুঝতে পারেন যে নিজের কিছু না থাকলে অন্যের সাহায্য পাওয়া যায় না। এখানে শুধু সম্পদের কথা বলা হচ্ছে না। যে কোনও বিষয়ে যদি কেউ অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করে, তবে তার সেই দক্ষতা কাজে লাগানোর জন্য অন্যরা আসবেই। আর সেই সিঁড়ি ধরেই ধাপে ধাপে একজন মানুষ চূড়ান্ত সাফল্য পেতে পারে।
সাধারণ মানুষ সারাটা জীবন অন্যের অপেক্ষায় থেকে ধীরে ধীরে তাঁদের কাজ করার আদর্শ সময়টা পার করে ফেলে। অন্যের সাহায্যের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে তাঁরা নিজেরা কোনও কিছুতেই অসাধারণ দক্ষ হয়ে উঠতে পারে না, আর তাই কেউ তাঁদের কাছে আসে না।
পৃথিবীর নিয়ম হচ্ছে দেয়া-নেয়ার নিয়ম। আপনার যদি দেয়ার কিছু না থাকে তবে আপনি কিছু নিতেও পারবেন না। সাধারণ মানুষ এই সত্যিটা মেনে নিতে না পারলেও ,সফল মানুষেরা এই ব্যাপারটি মাথায় রেখেই নিজেদের গড়ে তোলেন।
আপনার সমস্যা আপনাকেই সমাধান করতে হবে। কেউ নিজে থেকে এসে আপনাকে উদ্ধার করবে না। কাজেই নিজেকে এমন ভাবে গড়ে তুলুন, যেন আপনি নিজেই বড় কোনও সমস্যা সমাধান করতে পারেন। তখন দেখবেন, সেই সমস্যা সমাধানের জন্য মানুষ আপনার কাছে আসছে।
শেষ কথা:
এই লেখাটিতে অনেক কঠিন কঠিন কথা বলা হয়েছে। এর অনেক কথার সাথেই হয়তো একমত হবেন না। এমনও হতে পারে কিছু কথায় আপনি মনে আঘাতও পেয়েছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ যেসব বিষয় মেনে নিতে পারবে না, সেসব কঠিন বাস্তবতা মেনে নিয়ে যারা কাজ করতে পারেন, তাঁরাই দিন শেষে ধনী আর সফল হয়ে ওঠেন।
আমরা আশা করি সাফল্যের পথে লেখাটি কিছুটা হলেও আপনাকে সাহায্য করবে। লেখাটির ব্যাপারে আপনার যে কোনও মতামত কমেন্ট করে আমাদের জানান। যদি মনে হয় লেখাটি অন্যদের কাজে আসবে, তবে শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন। পরবর্তী লেখার জন্য আমাদের সাথে থাকুন। আপনার সাফল্য যাত্রায় লড়াকু সব সময়ে আপনার সাথে আছে।