ভবিষ্যতে ধনী হওয়ার ৩টি চিহ্ন


একনজরে লেখাটির বিষয়ে:

পৃথিবীতে যত ধনী মানুষের জন্ম হয়েছে, তাঁদের সবার মাঝেই কিছু বিশেষ গুণ দেখা যায়।  ব্যাপারটা এমন নয় যে তাঁরা ধনী হওয়ার পর তাঁদের মাঝে এসব দেখা দিয়েছে, তাঁরা আগের থেকেই এমন। বলতে গেলে এই স্বভাবগুলোই তাঁদের এই সাফল্যের দিকে নিয়ে যায়।  আজ আমরা এমনই তিনটি গুণের কথা বলব যা আপনার মাঝে থাকলে প্রায় নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়, আপনিও তাঁদের একজন হয়ে উঠবেন।


কিছু মানুষের অভ্যাস, স্বভাব আর মনোভাব তাঁদের অন্য মানুষদের থেকে আলাদা করে দেয়।  পৃথিবীতে যত শিল্পী আছেন, তাঁদের সবার মাঝে কিছু কমন স্বভাব খুঁজে পাওয়া যায়, যত ভালো মানুষ আছেন তাঁদের সবার মাঝে কিছু কম স্বভাব আছে; এমনকি খারাপ মানুষদের মাঝেও কিছু কমন স্বভাব আছে যা দেখে বোঝা যায় যে তারা খারাপ মানুষ।  এমন করে পৃথিবীতে যাঁরা সফল হয়েছেন, তাঁদের সাথে সাধারণ মানুষদেরও কিছু পার্থক্য থাকে – অন্য কথায় কিছু স্বভাব ও মনোভাবের দিক দিয়ে তাঁরা সাধারন মানুষদের থেকে আলাদা হন।

আপনার যদি যথেষ্ঠ অভিজ্ঞতা থাকে, তবে আপনি কিছু স্বভাব, গুণ ও মনোভাব বিচার করে বলে দিতে পারবেন যে আপনি বা আপনার পরিচিত কেউ ভবিষ্যতে ধনী হতে পারবে কি পারবে না।  এখন যে তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব, তা আসলে তিনটি স্বভাব বা মনোভাবের প্রকাশ, যেগুলো একজন মানুষের মাঝে থাকলে আপনি সেগুলোকে তার ভবিষ্যতে ধনী হওয়ার আভাস বা চিহ্ন হিসেবে ধরে নিতে পারেন।  চলুন জেনে নিই  success insider এর গবেষণায় বেরিয়ে আসা এই তিনটি আভাস বা চিহ্নের কথা যেগুলো আপনার মাঝে থাকলে বুঝবেন যে আপনি ধনী হওয়ার পথে আছেন।

০১. জানাকে দ্রুত কাজে লাগানো

be active

প্রায় সব সফল ও ধনী মানুষদের মাঝে একটি স্বভাব সব সময়েই চোখে পড়ে, তাঁরা নতুন কিছু জানার সাথেসাথেই সেটিকে কাজে লাগিয়ে ফেলেন।  এটা তাঁরা এমন ভাবে করেন, যেন মনে হয় যে আগামীকাল বলতে আসলে কিছু নেই। Success Insider এর ট্রেইনার টিম হান এই ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, তাঁর একজন বিলিওনেয়ার বন্ধু ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়ে তাঁর কাছে কিছু পরামর্শ চেয়েছিলেন।  তিনি টুইটার প্রমোশন বিষয়ে তাঁকে কিছু পরামর্শ দেন। এক মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে সেই বিলিওনেয়ার তাঁকে মেসেজ পাঠান, হান যা বলেছেন, তা করা হয়ে গেছে – এখন কি করতে হবে? পরবর্তীতে তিনি আরও কয়েকজন সফল মানুষের ওপর এই পরীক্ষা চালান, এবং প্রত্যেকেই একই স্বভাবের পরিচয় দেন। তাঁদের মধ্যে কেউ একটি বই পড়ে নতুন কিছু জানতে পারলে সাথেসাথেই তা কাজে লাগিয়ে ফেলেন।  তাঁরা এটা করতে মোটেও সময় নেন না।

আক্ষরিক অর্থেই তাঁরা জানার পর মূহুর্তেই জ্ঞানটিকে কাজে লাগিয়ে ফেলেন।  কারন এতে করে এক – ব্যাপারটি কতটা কার্যকর তা খুব তাড়াতাড়ি দেখে ফেলা যায়। তাঁরা ফলাফল দেখতে চান, কাজ দেখতে চান।  তাঁরা জানেন পরের জন্য তুলে রাখতে হয়তো সেটা নিয়ে আর কাজ করা না-ও হতে পারে। এটা আসলে পরিশ্রম আর লক্ষ্য অর্জনের ক্ষুধার চিহ্ন।  

তাঁদের লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে, এমন কিছু জানতে পারলে তাঁরা সেটা বাজিয়ে দেখতে মোটেও দেরি করেন না।  এতে করে তাঁদের লক্ষ্য অর্জন দ্রুততর হয়। আর এই স্বভাবের মানুষেরা আলস্যকে ধারেকাছেও ঘেঁষতে দেন না। যারা কোনওকিছু জানার পর পরের জন্য তুলে রাখেন, এরা আসলে অলস প্রকৃতির মানুষ।  এদের নিজের চেষ্টায় সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

০২. অনিশ্চয়তা ও চাপের মাঝে কাজ করার ক্ষমতা

 

লিবার্টি ইউনিভার্সিটির একটি কনফারেন্সে ডোনাল্ড ট্রাম্প একবার বলেছিলেন “you can’t be successful, if you can’t handle pressure” – চাপ নিতে না পারলে আপনি সফল হতে পারবেন না।  ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরও একটি উক্তি: “আমি বেশকিছু মানুষকে চিনি যারা অত্যান্ত প্রতিভাবান এবং দক্ষ, কিন্তু তাঁরা খুব বড় ধনী বা সফল হতে পারেননি। হ্যাঁ – তাঁরা অনেক ভাল ভাল জায়গায় কাজ করছেন, ভাল বেতন পাচ্ছেন, সুখী জীবন কাটাচ্ছেন।  কিন্তু তাঁরা উদ্যোক্তা হতে পারেননি, কারণ সেই চাপ নেয়ার ক্ষমতা তাঁদের নেই”।

এই চাপটি আসে অনিশ্চয়তা থেকে।  অনেক উদ্যোক্তাই আছেন, প্রথম জীবনে তাঁরা তাঁদের গচ্ছিত পুরো অর্থ, হাতের পুরো সময় তাঁদের ব্যবসার পেছনে দিয়ে দিয়েছেন। লোভনীয় চাকরি ছেড়ে দিয়ে তাঁরা এক অনিশ্চিত স্বপ্ন পূরণের পথে নেমে যান।  আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা, বিশ্বের সর্বকালের সবথেকে ধনী ব্যক্তি, জেফ বিজোস  ওয়ালস্ট্রিটে তাঁর প্রায় লক্ষ ডলার বেতনের চাকরি ছেড়ে আমাজন ডট কম শুরু করেছিলেন।  আলিবাবা ডট কম এর জ্যাক মা ২০ হাজার ডলার ধার করে ব্যবসায়ে নেমেছিলেন। – পৃথিবীর প্রতিটি ধনী মানুষের মাঝেই চাপ নেয়ার এই অসাধারন ক্ষমতার দেখা পাওয়া যায়।  অনিশ্চিত জেনেও তাঁরা সফল হওয়ার বিশ্বাসে স্বপ্নের পথে পা বাড়ান।

তাঁরা যদি কোনও ব্যাপারে অনিশ্চিত থাকেন, তাঁদের মন তাঁদের থামানোর জন্য যুক্তি দেয়ার আগেই তাঁরা কাজটি করে ফেলেন।  একদম আনকোরা নতুন আইডিয়াতে বিশাল অঙ্কের অর্থ বা নিজের সবটুকু সময় ও মেধা দিয়ে দেন।

বিশ্বনন্দিত বিজনেস গুরু টনি রবিনস লিখেছিলেন “একজন মানুষের  সফলতা তার অনিশ্চয়তাকে সামাল দেয়ার পরিমানের ওপর নির্ভর করে”

সফল হওয়ার গুণ যাঁদের মাঝে আছে, তাঁরা নতুন কিছু পেলে কোনওরকম দ্বিধা না করে সাথে সাথে তা কাজে লাগিয়ে ফেলেন, যাতে করে তাঁরা বিষয়টির কার্যকারিতা সামনের ওপর দেখতে পারেন। যেন নতুন মডেলের একটি গাড়ি হাতে পেয়েই সাথে সাথে টেস্ট ড্রাইভে নেমে পড়া।  যদি দেখা যায় সেটা তাঁদের জন্য ভাল নয়, তাঁরা সেই শিক্ষাটি গ্রহণ করেন, এবং অন্যকিছু নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়েন।

তাঁরা সব সময়ে নিজেদের চাপমুক্ত রাখেন। অযথা দু:শ্চিন্তা করে তাঁরা সময় নষ্ট করেন না।  যদি মনে হয় কোনওকিছু কাজ করবে, তাঁরা সাথে সাথে সেটা বাস্তবে চেষ্টা করেন। অনিশ্চয়তাকে তাঁরা প্রশ্রয় দেন না, সেটা নিয়ে খুব বেশি শঙ্কায়ও থাকেন না, কারন সাধারন মানুষের থেকে তাঁরা অনেক বেশি চাপ নিতে পারেন। এবং চাপের মাঝেই তাঁরা নিজেদের কাজটি করে যেতে পারেন।  

০৩. প্রতিটি সেকেন্ড নিজের স্বপ্ন পূরণের কাজে লাগানো

ticking clock

তিন নম্বর চিহ্নটি ১০০% সফল মানুষের ক্ষেত্রেই দেখা যায়। তাঁরা তাঁদের হাতে থাকা প্রতিটি সেকেন্ড কাজে লাগান।  আপনি যদি তাঁদের এই স্বভাবটির অধিকারী হয়ে থাকেন, তবে বলা যায় যে আপনি একটি সেকেন্ডও অযথা নষ্ট করেন না, কারন আপনি জানেন সময় কতটা মূল্যবান।  এই স্বভাবটি আপনার মাঝে থাকলে এটি একটি চিহ্ন, যা দেখে বলা যায়, আজ অথবা কাল আপনি অসাধারন সাফল্য অর্জন করবেন।

পৃথিবীর প্রায় ১০০% সফল মানুষ, বিশেষ করে যাঁরা নিজের চেষ্টা ও যোগ্যতায় সফল হয়েছেন, তাঁদের সবাই সময়কে অত্যাধিক মূল্য দিয়েছেন।

যে মানুষটি ভবিষ্যতে অসাধারন সম্পদ ও সাফল্য অর্জন করবেন, তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর সময় নষ্ট করেন না (শুধুমাত্র যদি এটা তাঁর পেশার অংশ না হয়, যেমন একজন সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটার), তাঁরা ঘন্টার পর ঘন্টা টিভি সিরিজ দেখে কাটান না, বা রিমোট হাতে টিভির সামনে বসে থাকেন না, গেম খেলে সকাল থেকে রাত পার করে দেন না। তাঁরা কাজ করেন তাঁদের স্বপ্নকে বাস্তব করার জন্য।

এবং এসব মানুষ সব সময়েই কিছু না কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।  সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সবকিছুই তাঁদের নিজস্ব শিডিউলে বেঁধে রাখেন।  সাধারনত তাঁরা খুব তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যান, এবং খুব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে জাগেন।  দিনের ১৬ থেকে ১৮ ঘন্টা কাজের মাঝে কাটান, যতক্ষণনা তাঁরা তাঁদের স্বপ্নের জায়গায় পৌঁছাতে পারেন।

সাধারন মানুষের সাথে এঁদের তুলনা করলে পার্থক্যটি খুব সহজেই আপনার চোখে পড়বে।  সাধারন মানুষ সাধারনত দিনে ৮-১০ ঘন্টা কাজ করেন। সাধারনত তাঁরা অন্যের জন্য কাজ করেন। দিনশেষে বা মাস শেষে নিজের টিঁকে থাকা, বা স্বচ্ছল ভাবে বাঁচার অর্থটুকু নিয়ে খুশি থাকেন, বাকি সময়টা বিশ্রাম ও বিনোদনে কাটাতে চান।  কিন্তু যাঁরা ভবিষ্যতে অসাধারন সাফল্য অর্জন করতে চান তাঁরা বিশ্রাম ও বিনোদনকে, অন্তত একটা পর্যায় পর্যন্ত সময়ের অপচয় মনে করেন। যতটা সময় তাঁরা হাতে পান, নিজেদের অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য তা কাজে লাগান। সাধারন ভাবে বাঁচতে চাওয়াটা দোষের কিছু নয়। বেশিরভাগ মানুষই এটা চায়।  এটা নি:সন্দেহে যার যার নিজের মনোভাব, এবং তা করার স্বাধীনতা সবারই আছে। এখানে শুধু বলছি, ভবিষ্যতে যাঁরা সত্যিই ধনী ও অসাধারন সফল হবেন, তাঁরা একটা সময় পর্যন্ত নিজের ওপর অত্যাচার করে থাকেন। নিজেকে একটু দম ফেলার সময়ও তাঁরা দিতে চান না।

পরিশিষ্ট:

হয়তো আপনার মাঝে এই মূহুর্তে এই চিহ্নগুলো উপস্থিত, সেক্ষেত্রে আপনাকে অভিনন্দন। কিন্তু হয়তোবা আপনি এমন একজন মানুষ যিনি জীবনে সত্যিকার সাফল্য ও সম্পদ অর্জন করতে চান, কিন্তু আপনার মাঝে এই আভাসগুলো খুঁজে পাচ্ছেন না, সেক্ষেত্রে হতাশ হওয়ার কিছু নেই।  বিশ্বের সবথেকে ধনী ও সফল লেখিকা জে.জে রাওলিং তাঁর হ্যারি পটার সিরিজে লিখেছেন “আমরা এখন কি, তার থেকে আমরা কি হতে চাই – সেটাই আমাদের মূল পরিচয় বহন করে”।

আপনি যদি সত্যিই চান যে আপনি ভবিষ্যতে অসাধারন সাফল্য অর্জন করবেন, তাহলে নিরাশ হবেন না।  আমরা অনেকেই অনেক লক্ষ্য স্থির করি, কিন্তু সেদিকে এগুনোর পথ পেতে একটু দেরি হয়। এই আভাসগুলো শুধুমাত্র কয়েকটি অভ্যাস মাত্র। চর্চা দিয়ে অর্জন করা যায় না পৃথিবীতে এমন কোনও অভ্যাস নেই। আপনার মাঝে যদি এর কোনও একটি গুণ না থাকে, তো আজ থেকেই চর্চা শুরু করে দিন। নিজেকে চ্যালেঞ্জ করুন, এবং চ্যালেঞ্জ জয়ের পথে যত অনিশ্চয়তাই আসুক থেমে যাবেন না।  সময়ের কাজ সময়ে করুন। এখন কিছু জানতে পারলে বা শিখলে এখনই তা কাজে লাগান। মানুষের অভ্যাস আর স্বভাবই মানুষকে অন্যদের থেকে আলাদা করে। ধনী ও সফল মানুষদের অভ্যাস ও গুণগুলো রপ্ত করে আপনিও পারবেন সেই পথের একজন অগ্রপথিকে পরিনত হতে। লড়াকু চায় তার পাঠকদের মাঝে শক্তি আর বিশ্বাস সঞ্চার করতে। আপনার সাফল্যের পথে প্রতিটি পদক্ষেপে আমরা আপনার সাথে আছি। আপনিও আমাদের সাথে থেকে আমাদের সাহস যোগান। কমেন্ট করে জানান দিন আপনি আমাদের সাথে আছেন। লেখাটি ভাল লাগলে, বা যদি মনে হয় এটা সত্যিই কারও কাজে আসতে পারে, তবে লেখাটি শেয়ার করুন আপনার পাবলিক প্রোফাইলে। আপনার সাফল্যেই আমাদের স্বার্থকতা।

 

পোস্টটি শেয়ার করুন !