কিভাবে নিজের সীমাবদ্ধতাকে জয় করবেন?


একনজরে লেখাটির বিষয়ে:

আমরা অনেক সময়েই নিজের অজান্তেই নিজেদেরকে সীমাবদ্ধ করে ফেলি। কিছু বিষয় সব সময়েই আমাদের সামনে থাকে, যা আপাতদৃষ্টিতে স্বাভাবিক মনে হয়। কিন্তু আমরা বুঝতেও পারিনা এগুলো কিভাবে আমাদের উন্নতিকে বাধাগ্রস্থ করছে। কিছু বিষয়কে যদি আমরা শুধু একটু অন্য দৃষ্টিতে দেখতে পারি, তাহলেই জীবনটা অনেক সহজ হয়ে যায়। আবার কিছু বিষয়ের ব্যাখ্যা আমরা সারা জীবন ভুলভাবে বুঝে এসেছি, যেগুলো একটু অন্যভাবে বুঝলে জীবনটা অনেক সহজ ও ফলপ্রসূ হয়ে উঠতে পারে। আজ তেমনই তিনটি দর্শন নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলো সঠিকভাবে বুঝতে ও কাজে লাগাতে পারলে আপনার জীবনটা অন্যরকম হয়ে যেতে পারে। 


ইন্টারনেটে মাঝে মাঝে আমাদের একধরনের লেখা চোখে পড়ে যেগুলোতে বলা হয় আমরা বিশেষ বিশেষ কাজ এতদিন ভুলভাবে করেছি, বা বিশেষ বিশেষ জিনিস আমরা ভুলভাবে ব্যবহার করেছি।  এবং মজার ব্যাপার, এর কিছু কিছু আসলেই অনেক বাস্তব সম্মত। আপনি হয়তো এগুলোর কোনও একটা দেখে আসলেই অবাক হয়ে মনে মনে বলেছেন “আরে তাইতো! ব্যাপারটাতো এভাবে কোনওদিন ভেবে দেখিনি!”  

আজকে যে তিনটি দর্শন নিয়ে হাজির হয়েছি, এগুলোও অনেকটা তেমনই।  স্বনামধন্য পার্সোনাল ডেফেলপমেন্ট কোচ ম্যানডি বিগলো তাঁর দীর্ঘদিনের গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের ফলে এই তিনটি দর্শন সম্বন্ধে ধারনা পেয়েছেন। তাঁর প্রতিটি সেশনেই এগুলোর কিছু না কিছু ছোঁয়া থাকে।  আজ লড়াকু’র সেলফ ডেভেলপমেন্ট বিভাগ আপনার জন্য এই তিনটি জীবন বদলে দেয়া দর্শন তুলে ধরবে। এগুলো জানার পর হয়তো আপনি জীবনের প্রতি নতুন এক দৃষ্টি নিয়ে তাকাবেন, এমনকি নিজের দিকেও হয়তো নতুন দৃষ্টিতে তাকাতে পারবেন।  চলুন জেনে নিই বিগলোর তিন দর্শন।

০১. যদি আপনার ভাবনা, কথা, ও কাজের মাঝে মিল না থাকে, তাহলে তা আপনার আত্মবিশ্বাস ও গ্রহণযোগ্যতায় আঘাত করতে পারে।

faceless

মানুষের খুব সাধারন একটি স্বভাব যে সে নিজেকে যেভাবে দেখাতে চায়, শুধু সেটুকুই বাইরে প্রকাশ করে।  আমরা অনেক সময়েই অন্যের চোখে সব সময় ভাল থাকার জন্য নিজেদের কমতির বিষয়ে মিথ্যা বলি বা একটু ঘুরিয়ে বলি।  – মহাপুরুষ ছাড়া একাজ কমবেশি সবাইই করে। আমরা যদিও নিজেদের বলি যে অন্যের চোখে নিজেকে ভাল রাখার জন্য একটু আধটু এরকম করলে কোনও ক্ষতি নেই, কিন্তু সত্যি বলতে এটি বড় ধরনের অসততা। এবং এটা যে শুধু আমরা অন্যের সাথেই করে থাকি, তা নয়।  আমরা নিজের ভেতরের সত্যবাদী বিবেকটিকে চুপ করিয়ে রেখে, তাকেও ভুল বোঝাতে চেষ্টা করি। কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছেন, যে এই স্বভাবের পেছনে দায়ী থাকতে পারে আপনার নিজের প্রতি বিশ্বাসের অভাব?

পরিচিত গন্ডির ভেতরে একটি ভাবমূর্তি গড়ে তোলা অনেক চেষ্টা ও সাধনার ফলাফল। এই গন্ডির মাঝে আমাদের কাছের বন্ধু ও পরিবারের মানুষও রয়েছে।  কখনও কি ভেবে দেখেছেন যে এদের সবার কাছে আপনি অবিশ্বাসের পাত্র হয়ে যেতে পারেন, যদি তারা ঘুনাক্ষরেও জানতে পারে যে আপনি যেটা দেখান তার অনেকটাই আসলে আপনি নন।  আপনি যদি চান যে অন্যরা আপনার ওপর পুরোপুরি ভরসা করুক, তবে আপনি নিজেকে যেমনটা দেখাচ্ছেন, আপনাকে সত্যিকারে ঠিক তেমনটাই হতে হবে। আর না হলে মূহুর্তের ভুলে আপনাকে দিতে হতে পারে চরম মূল্য।

বিগলো’র মতে আপনাকে একজন খাঁটি ব্যক্তি হয়ে উঠতে গেলে প্রথমে যে কাজটি করতে হবে তা হলো প্রত্যেকবার নিজের সত্যিকার চরিত্রের থেকে বেশি বা কমকিছু মানুষের সামনে প্রকাশ হয়ে পড়লে সাথেসাথে সেটি মনে রাখা। এরপর আপনাকে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে হবে।  আপনি যেটা দেখাচ্ছেন সেটা বাস্তবে হয়ে ওঠা কি আপনার পক্ষে সম্ভব? বা আপনি কি সত্যিই তেমনটা হয়ে উঠতে চান?

তা এর কোনওটির উত্তর যদি ‘না’ হয় তবে আপনাকে এখনই সেটা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।  তা না হলে সময়ের সাথে মানুষের কাছে আপনার গ্রহণযোগ্যতা কমে আসার পাশাপাশি আপনার নিজের আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মান বোধও ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

নিজেকে পরিবর্তন করার কাজটা যে খুব সহজ হবে তা বলছি না। আপনাকে এর পেছনে প্রচুর সময় ও শ্রম দিতে হবে।  হ্যাঁ, আপনি যখন পরিপূর্ণ সততার সাথে নিজেকে তুলে ধরবেন, তখন হয়তো কিছু মানুষ আপনাকে অন্য দৃষ্টিতে দেখবে, অনেকের সাথে আপনার দূরত্ব বেড়ে যাবে।  কিন্তু সত্যিকথা বলতে এতে আপনি নিজের মাঝে অনেক বেশি প্রশান্তি অনুভব করতে পারবেন। আর যারা সত্যিকার আপনাকে পছন্দ করবে, তারাই আপনার সাথে থাকবে। মানসিক ভাবে চাপ মুক্ত থাকার পাশাপাশি ধীরে ধীরে আপনি আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবেন।

আরও একটি ব্যাপার, আপনি যদি নিজের প্রতি স‌ৎ হন, তাহলে আপনার জন্য নতুন নতুন বিষয় শেখার দরজা খুলে যাবে। একটু ব্যাখ্যা করা যাক : ধরুন আপনার ইচ্ছা মানুষ আপনাকে দারুন একজন গলফার হিসেবে প্রশংসা করুক। তাই আপনি আপনার গলফ খেলার য‌ৎসামান্য অভিজ্ঞতাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে অনেক বড় করে জাহির করেন।  এরপর আপনার কোনও গলফার বন্ধুর আমন্ত্রণে খেলতে গিয়ে যদি আপনার কমতি ধরা পড়ে যায় – তবে ব্যাপারটা কেমন হবে?

কিন্তু আপনি যদি একটু সময় নিয়ে নিজের সীমাবদ্ধতাকে স্বীকার করে নিয়ে সত্যিকারেই ভাল গলফার হওয়ার জন্য প্রাকটিস শুরু করেন, এবং সত্যি সত্যি একজন ভাল খেলোয়াড় বনে গিয়ে তারপর মানুষের কাছে নিজের খেলার দক্ষতার কথা বলেন – তাহলেই বা কেমন হবে?

মানসিকতার এই পরিবর্তন আসলে আপনাকে সত্যিসত্যিই নতুন কিছু করার জন্য অনুপ্রেরণা দেবে। তাই সাময়িক ভাবে নিজেকে একটু দমিয়ে রেখে, কিছুটা সময় কষ্ট করে নিজেকে সত্যিই সেই পর্যায়ে নিয়ে যাওয়াটাই সবচেয়ে ভাল পথ।  এভাবে একটু একটু করে আপনি নিজের সমস্ত সীমাবদ্ধতাকেই জয় করতে পারবেন বলে আশা করা যায়।

০২. আপনি নিজের ব্যাপারে যা বিশ্বাস করেন, তা যেমন আপনার কথায় প্রতিফলিত হয়, একই ভাবে আপনি যা বলেন তা আপনার নিজের প্রতি বিশ্বাসকে প্রতিফলিত করে।

মানুষ যেসব কারনে নিজের অজান্তেই নিজেকে সীমাবদ্ধতার মাঝে আটকে ফেলে, তার মধ্যে অন্যতম একটি তার নিজের মুখের কথা! অনেক মানুষের ক্ষেত্রেই তাদের মুখের কথা তাদের বিশ্বাসের প্রতিফলন, অনেকে হয়তো অন্যভাবে বলতে চান, কিন্তু নিজের অজান্তেই তাঁদের মুখ দিয়ে নিজের মনের গভীরের বিশ্বাসটি বের হয়ে আসে।  কিন্তু এর উল্টোটাও হওয়া সম্ভব। অর্থা‌ৎ মানুষ মুখে যা বলতে থাকে তা ধীরে ধীরে তার মাঝে বিশ্বাসের রূপ নেয়। আর বিগলোর মতে এই ব্যাপারটিকে কাজে লাগিয়ে আমরা আমাদের মনকে রি-প্রোগ্রাম করতে পারি।

মনে মনে যদি আপনি বলতে থাকেন যে আপনার কোনও একটি জিনিসের প্রয়োজন – যদিও তা এই মূহুর্তে প্রয়োজনীয় নয় – ধীরে ধীরে আপনি সত্যিই বিশ্বাস করতে শুরু করবেন যে আপনার তা আসলেই প্রয়োজন।  যদি আপনি ‘আমি অমুক জিনিসটা পারি না’, ‘অমুক জিনিসটি কখনওই আমার হবে না’, ‘আমার পক্ষে অমুক জিনিসটা সম্ভব নয়’ – এগুলো আপনাকে সীমাবদ্ধতার মাঝে আটকে ফেলে। যে বিশ্বাস করতে পারে সে অর্জন করতে পারে। আপনি যা-ই অর্জন করতে চান না কেন, আপনি যদি বারবার নিজের মাঝে সংশয়ের কথাগুলো আওড়াতে থাকেন, তবে আপনার নিজের প্রতি নিজের বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যাবে।  কিন্তু একটি অর্জন যত কঠিনই হোক না কেন, আপনি যদি বারবার নিজেকে বলতে থাকেন যে আপনার পক্ষে তা অর্জন করা সম্ভব – তাহলে একটা সময়ে দেখবেন, কথাটি দৃঢ় বিশ্বাসে রূপ নিয়েছে এবং আপনি আত্মবিশ্বাসের সাথে কাজে নামতে পারছেন। দ্বিধা আর সন্দেহ আমাদের কোনও কাজের প্রতি পুরোপুরি নিবেদিত হতে বাধা দেয়।

আবার ধরুন, আপনি যদি এখন কোনও বাজে পরিস্থিতির মাঝ দিয়ে যেতে থাকেন, আর নিজেকে বা অন্যকে বলতে থাকেন যে ‘আমার জীবনটা থেমে গেছে’, বা ‘আমি সামনে এগুনোর কোনও পথ দেখছি না’ – তাহলে আপনার মস্তিষ্ক সমস্যার সমাধান বের করার পথ খোঁজা বন্ধ করে দেবে।  কিন্তু আপনি যদি বলেন ‘এই মূহুর্তে আমার সময়টা ভাল যাচ্ছে না, কিন্তু আমার পক্ষে এটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব’, অথবা ‘এখন সময় খারাপ গেলেও, সামনে এমনটা থাকবে না’ – তাহলে ধীরে হলেও আপনার মাঝে একটি অদম্য আত্মবিশ্বাস জন্ম নেবে। আপনি যে সমস্যাতেই থাকেন না কেন এক সময়ে না এক সময়ে আপনি সমাধানের পথ দেখতে পাবেন।  যত খারাপ পরিস্থিতিতেই পড়েন না কেন, আপনাকে আশাবাদী থাকতে হবে – সব সময়ে বলতে হবে মানুষের দিন সব সময়ে এক রকম যায় না, ভবিষ্যতে নিশ্চই ভালকিছু অপেক্ষা করছে।

নেতিবাচক কথা আমাদের চিন্তাভাবনা ও বিশ্বাসকে সীমাবদ্ধ করে দেয়।  অন্যদিকে ইতিবাচক কথা বারবার বলতে থাকলে আমাদের চিন্তা ও বিশ্বাসও সেইদিকে ধাবিত হয়।  কাজেই আমাদের উচি‌ৎ নেতিবাচক চিন্তাগুলোকে কথায় রূপ না দিয়ে, ইতিবাচক কথাগুলোকে চিন্তা ও বিশ্বাসের রূপ দেয়া। প্রথমটায় হয়তো নিজের মুখের কথা আপনার নিজেরই বিশ্বাস হবে না, কিন্তু ধীরে ধীরে এই কথাগুলোই আপনার বদ্ধমূল বিশ্বাসে রূপ নেবে।  মানুষের মুখের কথা আর বিশ্বাসের মাঝে শুধু তার নিজের জীবন নয়, পুরো পৃথিবীকে বদলে দেয়ার অপার শক্তি রয়েছে। শুধু এগুলোকে সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে জানতে হবে।

০৩. আপনি কেমন বোধ করছেন, তা নিয়ন্ত্রণ করার কোনও প্রয়োজন নেই; আপনাকে শুধু অনুভূতির প্রেক্ষিতে করা কাজগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

আমরা অনেক জায়গাতেই পড়ে থাকি, বা অনেকের কাছেই শুনে থাকি, জীবনে সফল হতে হলে নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করাটা খুবই প্রয়োজন।  কিন্তু বিগলো বলেন, এই কথাটি বেশিরভাগ মানুষ ভুল ভাবে বোঝে। সত্যি বলতে আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করা, আর সমুদ্রের ঢেউকে নিয়ন্ত্রণ করা – একই ব্যাপার। আপনাকে যদি কেউ চড় মারে, আর আপনি যদি তাতে না রাগেন বা দু:খ না পান, তবে আপনার মানসিক সমস্যা আছে। আবেগী হওয়ার মত ঘটনা ঘটলে আবেগ অনুভব করবেন- এটাই স্বাভাবিক।

আমরা অনেক উপদেশ পড়ে বা শুনে জোর করে নিজেদের আবেগকে দমিয়ে রাখতে যাই।  কিন্তু বাস্তবে এটা এক প্রকার অসম্ভব। তাহলে কি আপনি এতদিন ভুল জেনেছেন? – না, আপনি আসলে ভুল জানেননি।  কিন্তু কথাটি আসলে একটু ব্যাখ্যার দাবী রাখে। এই ব্যাখ্যাটি যদি আপনি বুঝতে পারেন, তবে আপনি সহজেই এবং সত্যিকারেই আপনার ‘আবেগ নিয়ন্ত্রণ’ করতে পারবেন।

নিজের অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা আসলে আমাদের নেই, কিন্তু মানুষের মাঝে অন্য একটি অসাধারন ক্ষমতা রয়েছে। ক্ষমতাটি হলো নিজের ইচ্ছায় সিদ্ধান্ত নিতে পারা। ইংরেজীতে যাকে বলে “Free Will” ।  যদিও আমরা একটা পর্যায়ের আমাদের অনুভূতিগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না, কিন্তু সেই অনুভূতির প্রতিক্রিয়ায় আমরা কোন কাজটি করব, সেই সিদ্ধান্ত নেয়া এবং তা বাস্তবায়ন আমরা করতে পারি।

আপনি আপনার অনুভূতিগুলোকে দমিয়ে রাখার যতই চেষ্টা করবেন, ততই আপনার মনের ওপর চাপ পড়বে, আর ততই আপনি নিজের ওপর হতাশ হতে থাকবেন। এর বদলে আপনার উচি‌ৎ হবে এই অনুভূতিগুলোর ফলাফল হিসেবে আপনি কি কি করতে পারেন – তার দিকে নজর দেয়া।  অনুভূতিকে অনুভূতির জায়গায় থাকতে দিন, সেগুলো আসছে, এবং চলেও যাবে। কোনও অনুভূতিই চিরস্থায়ী নয়। নজর দিন সেই পরিস্থিতিতে আপনার কথা ও কাজের ওপর। আপনি হয়তো একজনের ওপর রেগে আছেন, মন চাইছে তাকে কয়েকটা কড়া কথা শুনিয়ে দিতে, এমকি গায়ে হাত তুলতে। কিন্তু ভেবে দেখুন তাতে কতটা লাভ আর ক্ষতি হবে।  আপনি কিন্তু চাইলেই স্বাভাবিক থাকতে পারেন। সবদিক বিবেচনা করে ‘Action’ নিন, অনুভূতির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে ‘Reaction’ করবেন না।

অনুভূতি এবং ক্রিয়ার মাঝে পার্থক্য না করতে পারাটা আপনাকে অনেক সমস্যায় ফেলতে পারে।  আপনার মাঝে যদি সত্যিকারের বিবেচনা বোধ ও সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা থাকে, তবে আপনার কাজ ও কথা আপনার অনুভূতির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না হয়ে আপনার বিবেচনা ও বুদ্ধি দিয়ে নেয়া সিদ্ধান্তের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে।  ‘ঠান্ডা মাথার মানুষ’ তারাই যাঁরা নিজের অনুভূতির বশবর্তী হয়ে কোনও কাজ করেন না। এঁদের মাঝেও রাগ, ক্ষোভ, ঘৃণা – ইত্যাদি বোধ রয়েছে, কিন্তু তাঁরা পরিস্থিতি ও ফলাফল বিবেচনা করে কি করবেন বা বলবেন – সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

নিজের আবেগ অনুভূতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়াটা একটা বড় ধরনের সীমাবদ্ধতা।  এই সীমাবদ্ধতা থেকে বের হতে হলে আপনাকে নিজের মনের ওপর এতটা চাপ প্রয়োগ করে অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন নেই, আপনি শুধু অনুভূতির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়াটাকে নিয়ন্ত্রণ করুন।  তাহলেই দেখবেন, আপনি যেটা চাচ্ছিলেন সেটা হয়ে যাচ্ছে। নিজের মনের ওপর চাপ প্রয়োগ না করেই আপনি সীমাবদ্ধতাটিকে জয় করছেন।

পরিশিষ্ট:

এই দর্শনগুলো আপনার জীবনে কিভাবে কাজে লাগাবেন? – যদি এই হয় আপনার ভাবনা – তাহলে বলব, সবার আগে নিজের প্রতি সতর্ক ও যত্নশীল হোনসব উন্নতির শুরু আসলে এখানেই। আপনি যদি আপনার নিজের দিকে সত্যিকার নজর দেন তবে আপনি আপনার কথা, ভাবনা, কাজগুলোকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে নিতে পারবেন। এতে করে অন্যদের সাথে তো বটেই, আপনার নিজের সাথে নিজের সম্পর্কেরও দারুন উন্নতি ঘটবে।  হয়তো প্রথম দিকে এই কাজগুলো আপনার কাছে বেশ কঠিন মনে হবে, কিন্তু ধীরে ধীরে এগুলো আপনার অভ্যাসে পরিনত হবে। আপনি পরিনত হবেন আপনার সেরা ভার্সনে।


লেখাটি কেমন লাগলো তা আমাদের কমেন্ট করে জানান। আমাদের জন্য আপনার কোনও পরামর্শ থাকলেও জানান। আপনার প্রতিটি মতামতই আমাদের জন্য অমূল্য পাথেয়। আর আপনার যদি মনে হয় লেখাটি পড়ে অন্য কেউ উপকৃত হতে পারে, তবে লেখাটি শেয়ার করে অন্যকেও দেখার সুযোগ করে দিন। আমাদের সাথে থাকুন। সাফল্যের পথে প্রতিটি পদক্ষেপে লড়াকু আপনার সাথে আছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন !