একনজরে লেখাটির বিষয়ে:
আপনি কি জানেন যে মিনিপ্যাক শ্যাম্পু সর্বপ্রথম ভারত আর বাংলাদেশে চালু হয়? শুধু এই একটি আইডিয়া থেকেই কোম্পানীগুলো কোটি কোটি টাকার ‘এক্সট্রা’ লাভ করেছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ হবার কারনে। একটি আইডিয়া বা পন্য তখনই ‘হিট’ হয়, যখন তা মানুষের কাজে লাগে, এবং মানুষ ব্যাপকহারে সেই পন্য বা সেবা নিতে থাকে। মিনিপ্যাক শ্যাম্পুর পর এখন তো গুঁড়ো সাবান থেকে শুরু করে মাথায় দেয়ার তেল পর্যন্ত মিনি প্যাক এ চলে এসেছে। – An idea can change your life! চলুন জেনে নিই এমন কিছু আইডিয়া যা ব্যবহার করে উন্নয়নশীল দেশে ধনী হওয়া সম্ভব।
আমাদের দেশের তরুণ উদ্যোক্তা, যারা নিজের চেষ্টায় ধনী হতে চায়, তাদের একটি কমন অভিযোগ তারা কোথাও থেকে সহযোগীতা পায় না। এর কিছুটা সত্যি, আবার কিছুটা সত্যি না। উন্নয়নশীল দেশে সহযোগীতা পাওয়াটা যেমন কঠিন, আবার অন্যদিকে এসব দেশে সমস্যা বেশি থাকার কারনে সুযোগও থাকে অজস্র। বুঝতে কষ্ট হচ্ছে? আস্তে আস্তে সবই ব্যাখ্যা করা হবে।
বেশিরভাগ মানুষ প্রতিটি বিষয় নিজের দিক থেকে চিন্তা করে। কিন্তু অন্য কাউকে যদি নিজের আইডিয়ার গুরুত্ব বোঝাতে হয়, তবে প্রথমেই যেটা করতে হয় যে সেই আইডিয়াটা তার কোন উপকারে আসবে – তা বোঝানো। আর বোঝানোর আগে জরুরী হল নিজে বোঝা। এটা যেমন বিনিয়োগকারী বা ইনভেস্টরদের ক্ষেত্রে খাটে, তেমনি খাটে সাধারন ক্রেতাদের বেলাতেও। প্রতিটি সমস্যাই আসলে ধনী হওয়ার এক একটি বড় সুযোগ, যেগুলো আশেপাশে তাকালেই চোখে পড়ে।
এ-তো গেল একটি দিক। এছাড়াও আরও কিছু ব্যাপার আছে যা আপনাকে ধনী হতে সাহায্য করবে। এগুলোই আমরা এই লেখায় আলোচনা করব।
তবে একটি বিষয় মাথায় রাখবেন, এই আর্টিকেলটি “সহজে ধনী হওয়ার উপায়” টাইপের কিছু নয়। আমরা আপনার সামনে কিছু বিষয় এখানে তুলে ধরব, যেগুলো মাথায় রাখলে আপনি আপনার আশপাশের পরিবেশ কাজে লাগিয়ে কিভাবে একটি আইডিয়া অথবা সুযোগ খুঁজে বের করতে পারবেন, এবং কিভাবে সেই সুযোগগুলো কাজে লাগিয়ে আপনি সম্পদশালী হওয়ার দিকে এগিয়ে যাবেন – সেসব বিষয়ে একটি পরিস্কার ধারনা পাবেন। আমরা আপনাকে অনেক অপ্রিয় সত্য বলব, যেগুলো মেনে নিতে আপনার হয়তো কষ্ট হবে। আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে বাস্তবমুখী দৃষ্টি দিয়ে ব্যাপারগুলোকে বিচার করার। বাস্তবমুখী হওয়াটা একজন উদ্যোক্তার সবথেকে বড় গুণগুলোর একটি। এই লেখাটি পড়া শেষ করে হয়তো আপনি বিদেশে গিয়ে টাকা ইনকাম করে পরে দেশে ইনভেস্ট করার আইডিয়া বাদও দিয়ে দিতে পারেন। চলুন তাহলে আমরা মূল আলোচনায় চলে যাই।
কয়েকটি অপ্রিয় সত্য ও উন্নয়নশীল দেশে সম্পদশালী হওয়ার উপায়:
প্রথম কথা হচ্ছে আপনাকে একটি ইতিবাচক মনোভাব নিজের মাঝে আনতে হবে। আমাদের আশপাশে – বিশেষ করে তরুণদের একটি কথা প্রায়ই বলতে শোনা যায় যে এই দেশে থেকে কিছু হবে না। এই দেশের তাকে কিছু দেয়ার নেই। কেউ যদি এটা মনে করে থাকে, তাহলে সে আসলেই কিছু করতে পারবে না। এই ধরনের মানুষেরা চারপাশে শুধু সমস্যাই দেখে। কিন্তু সমস্যার মাঝে যে সুযোগ লুকিয়ে থাকে, তা তারা দেখতে পায় না। আপনি যেখানে আছেন সেখানেই অজস্র সুযোগ পড়ে আছে – একটু চিন্তা করলেই সেগুলো আপনার চোখে ধরা দেবে।
সত্যি কথা বলতে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর বড় বড় ধনী ব্যবসায়ীরা সেইসব দেশের সবচেয়ে সুবিধা বঞ্চিত শ্রেণী ও এলাকা থেকে উঠে এসেছেন। সুবিধা বঞ্চিত হওয়ার সবথেকে বড় সুবিধা, এটি আপনাকে মানসিক ভাবে শক্তিশালী করে তুলবে। যদি আপনি আপনার চিন্তাধারা সেভাবে গড়ে তুলতে পারেন। ক্ষুধা ও দারিদ্রের চেয়ে বড় উদ্দীপক পৃথিবীতে আর কিছু নেই। উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশের মানুষ অল্প পারিশ্রমিকে যে পরিমান পরিশ্রম করে তা আপনি কখনওই একটি ধনী ও উন্নত দেশের নাগরিককে দিয়ে করাতে পারবেন না। আপনি কি জানেন এই সুযোগটিকেই প্রধানত কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে গার্মেন্টস শিল্পের সবচেয়ে উপরের স্থানটি দখল করে নিয়েছে। এরকম উদাহরন আরও অনেক আছে। আর্থসামাজিক অবস্থা, মানুষের অভ্যাস, তাদের চাওয়া, সুবিধা, অসুবিধা – সবকিছুই আপনাকে সম্পদশালী হতে সাহায্য করতে পারে।
উন্নত, অনুন্নত, উন্নয়নশীল – সব দেশের মানুষেরই খাদ্য, পোশাক, বাসস্থান, বিনোদন, নিরাপত্তা – ইত্যাদি দরকার হয়। আপনি বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে বসে যেহেতু এই আর্টিকেলটি পড়ছেন, তার মানে আপনি দেশের প্রায় ৭০ ভাগ জনগোষ্ঠীর থেকে বেশি তথ্য পাওয়ার ক্ষমতা রাখেন। আপনি সারা বিশ্বের কোথায় কোন ট্রেন্ড চলছে তার খবরাখবর চাইলেই পেতে পারেন। মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো উন্নত দেশে কিভাবে পূরণ করা হচ্ছে সেই তথ্য ঘাঁটতে থাকুন। তারপর তুলনা করুন আপনার দেশে সেগুলো কিভাবে পূরণ হচ্ছে। এরপর চেষ্টা করুন ছোট পরিসরে হলেও সেই উন্নত সেবা মানুষকে দেয়ার।
বলেছিলাম কিছু অপ্রিয় সত্য কথা আপনাকে বলা হবে। এগুলোর মাঝে একটি বড় অপ্রিয় সত্য হল আমাদের দেশের বেশিরভাগ ব্যবসায়ী অসৎ। যে যার যার যায়গা থেকে নিজের ফায়দা লোটার জন্য কাজ করছে। ন্যায় অন্যায়ের ধার না ধেরে তারা যেভাবে পারছে মুনাফা লোটার চেষ্টা করছে।
ধরুন একটি বাস সার্ভিস নতুন চালু হয়েছে। যাত্রীদের ভরসা অর্জন করার জন্য তারা প্রথম দিকে ঠিকমতই সার্ভিস দিতে থাকল। এরপর ধীরে ধীরে যখন বাসটির নাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল তখন আর তারা আগের সার্ভিসটি ধরে রাখল না। এতে করে বড় একটি ব্র্যান্ড হওয়ার ও আরও উন্নতি করার সুযোগ তারা নষ্ট করে ফেলল। এদেশের বেশিরভাগ ব্যবসাই এই ধরনের কাজ করার কারনে খুব বেশিদূর এগুতে পারে না। এই কারনে আজকাল আর মানুষ কোনও সার্ভিসকেই বিশ্বাস করে না।
কিন্তু আপনি যদি এই সুযোগটি গ্রহণ করে এমন একটি সার্ভিস দেন যেটি সব সময়ে সেবার একটি ভাল মান ধরে রাখে, তখন মানুষ বেশি টাকা দিয়ে হলেও আপনার সার্ভিস নেবে।
আজকাল সুপার শপ গুলোতে মাছ, শব্জী, মাংস – ইত্যাদি কাঁচা পণ্যের ব্যবসা বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে – এর কারন যাদেরই একটু টাকা পয়সা বা শিক্ষা আছে, তারাই আর বাজারে গিয়ে ঠকতে চায় না। আপনি বাজার থেকে গুরুর মাংস কিনলে চর্বি আর হাড় ছাড়া কিছু পাবেন না। মাঝে মাঝে গরুর জায়গায় মহিষের মাংসও দিয়ে দেয়া হয়। এই কারনে মানুষ আস্থা হারিয়ে টাকা একটু বেশি লাগলেও সুপারশপ গুলো থেকে বাজার করছে।
শুধু বাংলাদেশ নয়, বেশিরভাগ অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে এমন সেবা বা পন্য খুঁজে পাওয়া কঠিন যার ওপর মানুষ পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারে। একজন সাধারন ব্যবসায়ী যখন “সবাই করছে তাই আমিও করব” – এই নীতিতে বিশ্বাসী হয়ে পন্যে ভেজাল, সেবার মান কমিয়ে দেয়া সহ নানান ধররেনর “ধান্দাবাজি” শুরু করে, অথবা, “বাজার খারাপ” বলে মুষড়ে পড়ে; একজন স্মার্ট ব্যবসায়ী তখন সেই অবস্থাটিকেই সুযোগ হিসেবে দেখে এমন একটি ব্যবসা গড়ে তোলে, যার প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস গড়ে ওঠে। তো ব্যবসায়ী সমাজের অসততাকে কাজে লাগিয়ে যদি আপনি কাজ করতে পারেন, তাহলে ধীরে ধীরে সবার অলক্ষ্যেই আপনি একটি বড় ব্যবসা গড়ে তুলে একটা সময়ে গিয়ে সম্পদশালী হয়ে উঠতে পারবেন।
আপনি যদি মোটামুটি চারপাশের খোঁজ খবর রাখেন তবে উবার সম্পর্কে নিশ্চই আপনার ধারনা আছে। সিএনজি চালক, ট্যাক্সি চালকদের বাড়া ভাতে ছাই দিয়ে উবার শিক্ষিত ও মোটামুটি স্বচ্ছল জনগোষ্ঠী নিয়ে গড়া মার্কেটটির প্রায় পুরোটাই দখল করে নিয়েছে। সিএনজি, ট্যাক্সিতে ওঠার আগে ভাড়া নিয়ে ঝামেলা থেকে শুরু করে, গাড়ির পরিবেশ, গতি, ড্রাইভারের ব্যবহার, কোনওটাই আসলে খুশি হওয়ার মত কিছু ছিল না। তাই উবার আসার সাথে সাথেই সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ে এই সেবা নেয়ার জন্য। সিএনজি, ট্যাক্সি ওয়ালারা অনেক দেন দরবার করেও উবারকে থামাতে পারেনি ক্রেতাদের সমর্থনের কারনে। উবারের প্রতিটি ড্রাইভার ও যাত্রী রেজিস্টার করা। কে কোথায় কার সাথে যাচ্ছে – এর সবই ট্র্যাক করা হয়। ড্রাইভাররা একবার কল এক্সেপ্ট করলে তার আর না-করার উপায় নেই। ভাড়া নিয়েও কোনও ঝামেলা নেই। এ্যাপ্লিকেশনই ভাড়া নির্ধারন করে দেবে। কাজেই দুই পক্ষই খুশি। আর এইসব কারনেই উবার এতটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
এখন একটি ব্যাপার নিয়ে ভাবুন যে উবার কোম্পানী চালু হওয়ার বেশ কিছুদিন পরেই বাংলাদেশে এসেছে। সময় থাকতে বাংলাদেশের কেউ যদি উবারের আইডিয়াটি কাজে লাগিয়ে তারা এদেশে আসার আগেই একই ধরনের একটি সেবা দেয়া শুরু করত – তাহলে সেই কোম্পানীটি আজ কোথায় থাকত? বাংলাদেশে কেউ পারেনি, কিন্তু বেশ কয়েকটি উন্নয়নশীল দেশে উবার যাওয়ার আগে স্থানীয় ভাবে একই ধরনের সার্ভিস চালু করে অনেক কোম্পানীই লালে লাল হয়ে গেছে।
এভাবে যদি খোঁজ খবর রাখতে রাখতে আপনিও এমন কোনও সেবা খুঁজে পান যা কিনা এদেশে এখনও আসেনি, কিন্তু আসলে মানুষ সেটা নেয়ার অনেক বেশি সম্ভাবনা আছে – তাহলে তা নিয়ে কাজে নেমে পড়ুন। আপনার সম্পদশালী হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যাবে। বড় কোম্পানীটি আপনার দেশে হাজির হয়ে দেখবে আপনি নিজেই একটি বাজার তৈরী করে বসে আছেন। সত্যিকারের ভাল সেবা দিয়ে ক্রেতাদের আস্থা ধরে রাখতে পারলে তখন আপনার সাথে প্রতিযোগীতার বদলে বিরাট অঙ্কের পার্টনারশিপ দিয়ে আপনাকেও তাদের কোম্পানীতে নিয়ে নেবে। এমনটা খোদ উবারই বেশ কয়েকটি দেশে করেছে।
এবার আরও একটি অপ্রিয় সত্য কথা বলা যাক। উন্নয়নশীল দেশের মানুষ উন্নত দেশের লাইফস্টাইল কপি করতে পারলে নিজেদের ধন্য মনে করে। ফেব্রুয়ারী, মার্চ, ডিসেম্বর, পহেলা বৈশাখ ছাড়া আমরা নিজস্ব জাতিসত্ত্বার কথা পুরোপুরিই ভুলে বসে থাকি। ভারত, ইউরোপ, আমেরিকা – এদের কপি করতে করতে ভুলেই যাই “একদিন বাঙালী ছিলাম রে”। তবে এটুকু পড়ে দেশ রসাতলে গেল, কি হবে এই প্রজন্মের? – ইত্যাদি মহৎ চিন্তাকে একটু সরিয়ে রেখে মনযোগটি একটু অন্যদিকে দিন – অন্তত কিছুক্ষণের জন্য হলেও।
উন্নত দেশের মানুষেরা যখন নিজেদের নিজস্বতা প্রকাশে ব্যস্ত, তখন উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশের মানুষেরা সেইসব ধার করে নিজেদের ‘উন্নত’ ভাবতে ব্যস্ত। এবং মানুষের এই স্বভাকে যদি আপনি কাজে লাগাতে পারেন – তাহলে আর দেখতে হবে না।
আপনার কি মনেহয়, বার্গার, চিকেন ফ্রাই – ইত্যাদি খেতে মানুষ কেন রেস্টুরেন্টে যায়? – সুস্বাদ গ্রহণের জন্য? – সেটা একটা কারন, কিন্তু তার থেকেও বড় কারন, এসব খাবার খেয়ে নিজেদের মধ্যে একটা সন্তুষ্টির ভাব নিয়ে আসা। কখনও ভেবে দেখেছেন, অনেক দেশী পন্যে কেন বিদেশী মডেল দিয়ে বিলবোর্ড বানানো হয়? ব্যাপারটিতে “Luxury” আনার জন্য। কারন উন্নয়নশীল দেশগুলোর সাধারন মানুষের কাছে Luxury বা আভিজাত্যের মানে ওটাই। – তো আপনি কিভাবে এই মনোভাবকে কাজে লাগাতে পারেন?
বাইরে থেকে নতুন Trend আমদানী করুন। নতুন আইডিয়া আমদানী করুন। যে সেবা বাইরের মানুষ নিচ্ছে, কিন্তু আপনার দেশে এখনও তেমন একটা কেউ সেদিকে নজর দিচ্ছে না, সেই ট্রেন্ড আনার প্রথম পদক্ষেপটি আপনি নিন। অন্যরা আপনাকে অনুকরণ করে তাদের ব্যবসা দাঁড় করানোর বেশ আগেই আপনি একটি ব্র্যান্ড হয়ে যাবেন। সেটিকে ধীরে ধীরে বাড়াতে থাকুন। সেবার বা পন্যের মান ধরে রাখুন, দেখতে দেখতে এক সময়ে আপনি বড় ব্যবসায়ী হয়ে যাবেন।
উবারের থেকে এটি আলাদা কারন, উবার একটি সেবা। আর এখানে বলা হচ্ছে ট্রেন্ড এর কথা। মনে করুন ইউরোপ আমেরিকায় একটি বিশেষ ধরনের ডিজাইনের ব্যাগ খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠল। অথবা হিন্দী ছবিতে দেখা কোনও একটি ডিজাইনের ড্রেস দারুন জনপ্রিয়তা পেল। বাইরে থেকে এনে যারা বিক্রী করছে, তাদের কাছ থেকে কিনতে গেলে বেশিরভাগ মানুষেরই পকেটের অবস্থা সঙ্গীণ হয়ে পড়বে। সেক্ষেত্রে আপনি সুযোগটি কাজে লাগিয়ে সেই একই ধরনের পন্য কম মূল্যে তৈরী করতে পারেন। একবার মানুষের সামনে নিয়ে যেতে পারলে তার বিক্রীর জন্য আর আপনার গলা ফাটাতে হবে না। মানুষই হুড়মুড়িয়ে আপনার পন্য কেনার জন্য লাইন দেবে। উন্নয়নশীল দেশের একটি বড় সুবিধা এখানে কপিরাইট ঘরানার আইন খুব একটা কড়া নয়। আমেরিকায় এক কোম্পানীর ডিজাইন কপি করলে জেলও হতে পারে, কিন্তু উন্নয়নশীল দেশে খুব সম্ভবত আপনাকে কেউ দেখতেও আসবে না।
উন্নয়নশীল দেশে বসে বাইরের অর্থ আয় করা ধনী হওয়ার দারুন একটি সুযোগ। বর্তমানে বাংলাদেশে যারা আউটসোর্সিং এ কিছুটা হলেও ভাল করছে – তারাই নিজেদের ব্যাংক ব্যালেন্স ও লাইফস্টাইলে দারুন পরিবর্তন আনতে পেরেছে। আউটসোর্সিং থেকে আয় করা টাকা থেকে তারা এখন অন্যান্য ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করে রীতিমত বড় ব্যবসায়ী বনে যাচ্ছে।
কিন্তু এই আউটসোর্সাররা যদি বাংলাদেশে না থেকে এমন কোনও উন্নত দেশে থাকত যার মুদ্রার মান ডলারের সমান বা তার থেকে বেশি? (আউটসোর্সিং এর পেমেন্ট ডলারেই আসে বেশিরভাগ সময়ে) – তাহলে কিন্তু তারা নিজেদের লাইফস্টাইলে এতটা ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারত না। উন্নত দেশগুলোতে জীবনযাত্রার ব্যয়ও কিন্তু অনেক বেশি। আমেরিকায় এক হাজার ডলারে আপনি যা করতে পারবেন, বাংলাদেশে তার সমান আশি হাজার টাকায় অনেক বেশি কিছু করতে পারবেন। বিদেশীরা এই সুযোগটিই নেয়, তাদের দেশের কাউকে দিয়ে যে কাজ করাতে পাঁচশ ডলার লাগতো, উন্নয়নশীল দেশের মানুষকে দিয়ে তা করাতে গেলে হয়তো একশ, এমনকি পঞ্চাশ ডলারেও তা করানো সম্ভব। কিন্তু মজার ব্যাপার হল আমেরিকায় পাঁচশ ডলার দিয়ে যেভাবে চলা যায়, বাংলাদেশে আপনার পকেটে একশ ডলার দিয়েও অনেকটা সেভাবেই চলা সম্ভব।
আপনার যদি এমন দক্ষতা থাকে যাতে আপনি দেশে বসে বাইরের টাকা কামাতে পারবেন, তাহলে আর কোনও দিকে না তাকিয়ে কাজে নেমে পড়ুন। একটি ভাল আউটসোর্সিং সাইটে আপনার দক্ষতা ও পরিচয় তুলে ধরে একটি প্রোফাইল খুলে কাজের জন্য দাম দর করতে শুরু করে দিন। এক সময়ে না এক সময়ে কাজ আপনার হাতে আসবেই।
আর যদি তেমন কোনও দক্ষতা না থাকে, তবে খুঁজে দেখুন আপনি কোন কাজের জন্য সবচেয়ে তাড়াতাড়ি দক্ষ হয়ে উঠতে পারবেন। কাজ শিখতে শুরু করে দিন। একবার আউটসোর্সিং এ দক্ষ হয়ে উঠতে পারলে আপনাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। কিছুদিনের মধ্যেই আপনার হাতে ভাল অর্থ আসা শুরু হবে। আপনার দেশের অর্থের মান কম হওয়ার কারনে আপনার হাতে এই সুযোগটি ধরা দিয়েছে, কাজেই সেটিকে কাজে লাগান।
প্রতিটি ব্যবসাই তাদের খরচ বাঁচাতে সব সময়ে চেষ্টা করে। কম খরচে যদি তারা দক্ষ কাউকে পেয়ে যায় – তবে চোখ বন্ধ করে তাকে তারা লুফে নেবে। আর তাদের খরচ কমার সাথে সাথে আপনার খরচ করার ক্ষমতা বাড়তে থাকবে।
খরচের কথা উঠতে আরও যে একটি অপ্রিয় সত্য বলা প্রয়োজন তা হল, উন্নয়নশীল ও উন্নত, সব দেশের সাধারন মানুষই টাকা হাতে পেলে তা খরচ করার চিন্তা করতে শুরু করে। উন্নয়নশীল দেশে এই হার অনেক বেশি। একবারে কিছু টাকা হাতে আসলেই প্রথম কাজ হয় মার্কেটে চলে যাওয়া। প্রয়োজনীয় জিনিস তো কেনা হয়ই, অপ্রয়োজনীয় জিনিও কেনা হয় ভুরি ভুরি। কিন্তু সেই টাকাটি যদি কাজে লাগানো যায়, অর্থাৎ বিনিয়োগ করা যায় তাহলে কিন্তু ধীরে ধীরে অবস্থার পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব।
উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বেশ অল্প খরচেই লাভজনক ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব। আপনি যদি একটু বুদ্ধি করে প্রতি মাসে আপনার আয় থেকে অল্প কিছু করে টাকা সরিয়ে রাখেন, এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সেই টাকার কথা ভুলে থাকতে পারেন, তবে একটা সময়ে গিয়ে দেখবেন আপনার হাতে অনেকগুলো টাকা জমে গেছে। এছাড়া বোনাস ও অন্য কোনও উৎস থেকে হাতে একবারে বেশকিছু টাকা চলে এলে কিভাবে তা খরচ করা যায় – সেই চিন্তা বাদ দিয়ে যদি সেই টাকা কাজে লাগিয়ে কিভাবে আরও টাকা আয় করা যায় – সেই চিন্তা করেন, তাহলে দেখবেন ছোটখাট অনেক পথ বেরিয়ে গেছে। দেশের বাইরে পরিচিত কেউ থাকলে আপনি ছোটছোট ইলেক্ট্রনিক্স পন্য এনে শুধুমাত্র একটি ফেসবুক পেজের মাধ্যমে বেশ ভাল ব্যবসা জুড়ে বসতে পারেন। এমনটা করে অনেকেই কিন্তু ফুলেফেঁপে উঠছেন।
উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ইলেক্ট্রনিক্স পন্যের চাহিদা প্রচুর থাকলেও দেশগুলো শিল্পোন্নত না হওয়ায় এইসব পন্য বাইরে থেকেই আমদানী করতে হয়। আর এগুলো শো-রুম থেকে কিনতে গেলে দোকান ভাড়া ও আরও আনুষাঙ্গিক খরচ মিলে দাম বেড়ে যায় অনেকটা। আপনি যদি আপনার বাড়িতে বিভিন্ন ছোটখাট পন্য এনে স্টোর করতে থাকেন এবং ফেসবুক এর মাধ্যমে অর্ডার নিতে থাকেন – ঠিকমত করতে পারলে এমনও হতে পারে যে একটা সময়ে গিয়ে বেশ বড় একটি অনলাইন শপ দিয়ে বসে যাবেন আপনি। একটা তথ্য আপনাকে জানিয়ে রাখি, পৃথিবীর সর্বকালের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি জেফ বিজোস কিন্তু একটি অনলাইন শপ দিয়েই তাঁর ব্যবসা শুরু করেছিলেন। Amazon.com এর কথা নিশ্চই আপনাকে বুঝিয়ে বলতে হবে না। এই আমাজনের হাত ধরেই জেফ পৃথিবীর জানা ইতিহাসের সবচেয়ে সম্পদশালী মানুষে পরিনত হয়েছেন।
ইলেক্ট্রনিক্স পন্যটি শুধু উদাহরন দেয়ার জন্য উল্লেখ করলাম; এমন অনেক পন্যই আছে যা আমাদের দেশের মানুষ চায়, কিন্তু হাতের কাছে পায় না। চারিদিকে তাকিয়ে এমন একটি সমস্যা খুঁজে বের করুন, তারপর ছোট করে হলেও সমাধান করার চেষ্টা করুন। দেখবেন আপনাকে কারও কাছে যেতে হচ্ছে না, সবাই আপনার কাছেই আসছে।
“কিন্তু আমাদের দেশে তো কেউ ভাল আইডিয়ার দাম দেয় না!”
এই প্রশ্নের উত্তরে আরও একটি অপ্রিয় সত্য কথা বলা যাক। যেটির ইঙ্গিত আর্টিকেলের একদম শুরুর দিকে দেয়া হয়েছিল। ভাল একটি উদ্যোগ নিলে ইনভেস্টররা সেই ব্যাপারে আকৃষ্ট হতে চায় না – এই কথাটা পুরোপুরি ঠিক না। উন্নয়নশীল দেশগুলো উন্নত হতে না পারার পেছনে কিন্তু সেই দেশগুলোর মানুষের মানসিকতাও অনেকটা দায়ী। উন্নয়নশীল দেশের মানুষের সবথেকে বড় কমতিগুলোর একটি হল সহজে হাল ছেড়ে দেয়া। খুব কম মানুষই আছেন যাঁরা কিনা একটি প্রজেক্ট নিয়ে রাতের ঘুম দিনের আরাম হারাম করে দেন। সামান্য একটু মন খারাপ হলেই আর সেদিকে ঘেঁষেন না। মাত্র একদিনে বা এক বছরে কেউ কোটিপতি হতে পারে না। অবৈধ পথে আয়ের কথা ভিন্ন। কিন্তু কেউ যদি নিজের যোগ্যতায়, নিজের পরিশ্রমে বড় হতে চায়, তাকে অবশ্যই ধৈর্য ধরে কাজ করে যেতে হবে সাফল্য আসার আগ পর্যন্ত। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যারা ইনভেস্টর, তাদের আমেরিকার ইনভেস্টরদের সাথে মেলালে চলবে না।
উন্নত দেশগুলোতে ইনভেস্টররা যেমন একটি প্ল্যান দেখেই তার ভবিষ্যৎ বুঝে ফেলতে পারে, শুনতে খারাপ লাগলেও উন্নয়নশীল দেশের ইনভেস্টররা এতটা ‘স্মার্ট’ নয়। Analysis করা দূরের কথা, অনেকে এই শব্দটা উচ্চারণও করতে পারবে না। আরও একটি বড় সমস্যা, এসব দেশের মানুষ বেশিরভাগ সময়ে তথ্য উপাত্তের বদলে নিজের অনুভূতির ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেয়। কাজেই এই সত্যগুলো মেনে নিয়েই আপনাকে দেশী ইনভেস্টরের পেছনে দৌড়াতে হবে। তাদেরকে বোঝাতে হবে আপনার এই আইডিয়া তার কি কাজে লাগবে। সে নিজে কতটা লাভবান হতে পারবে। দেশ ও কমিউনিটির উন্নয়ন নিয়ে এসব দেশের ইনভেস্টররা বেশি একটা মাথা ঘামায় না।
মানলাম আপনার উদ্দেশ্য মহৎ, কিন্তু সেই উদ্দেশ্য পূরণ করতে গেলে আপনাকে আগে কিছু বাধা পেরুতেই হবে। আর সেইজন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করাটা জরুরী। ইনভেস্টরকে আপনার প্লান বলার সাথে সাথে, সে কি চায় তা বোঝার চেষ্টা করুন। এরপর আপনার প্লানে বিনিয়োগ করলে সেই উদ্দেশ্য কিভাবে পূরণ হবে – তা বোঝান। ঠিকমত বোঝাতে পারলে আপনার আইডিয়াতে সে অবশ্যই বিনিয়োগ করবে।
পরিশিষ্ট:
আপনার যদি সুযোগ খুঁজে নিয়ে সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বড় হওয়ার মত মানসিকতা থাকে, তবে আপনি যে কোনও জায়গাতে থেকেই বড় হতে পারবেন। অনেকেই পিছিয়ে পড়া দেশে জন্ম হওয়ায় ভাবেন এখানে কোনও সুযোগ নেই। কিন্তু কোনও কোনও ক্ষেত্রে অনেক উন্নত দেশের থেকে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশেই ধনী হওয়ার সুযোগ অনেক বেশি থাকে। আমাদের এই লেখার উদ্দেশ্য হল আপনার সামনে বাস্তবতাটি তুলে ধরা, যাতে করে সুযোগগুলোর দিকে তাকাতে আপনার সুবিধা হয়। আমরা বলছি না যে এসব আপনি চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করুন। তবে অনুরোধ করব আপনার চারপাশের পরিবেশের সাথে ব্যাপারগুলো মিলিয়ে দেখতে।
লেখাটি কেমন লাগলো তা আমাদের কমেন্ট করে জানান। ভাল লাগলে শেয়ার করে অন্যকে দেখার সুযোগ করে দিন।সাফল্যের পথে আপনার লড়াইয়ে লড়াকু আপনার পাশে আছে।