জিনিয়াস হওয়ার উপায়: ৭টি ধাপে আপনিও হবেন ভিঞ্চির মতো জিনিয়াস – (বুক রিভিউ)


জিনিয়াস হওয়ার উপায় বলতে আসলেই কি কিছু আছে? একটা সময় পর্যন্ত ধারণা ছিল, জিনিয়াস হতে হলে সেভাবেই জন্ম নিতে হয়। কিন্তু এটা আসলে ভুল ধারণা। চেষ্টা করলে আপনিও হতে পারেন অনেক বড় জিনিয়াস। যে বই থেকে আজ আপনাকে জিনিয়াস হওয়ার উপায় বলব, সেই বইয়ের নাম “How to Think Like Da Vinci”; মাইকেল জে. গ্যাল্‌ব এর লেখা বইটি স্মৃতিশক্তি,বুদ্ধি, ও জ্ঞান বাড়ানোর জন্য অসাধারন একটি বই। অনেকের মতেই সবার একবার হলেও বইটি পড়া উচি‌ৎ।

লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি, আল বিরুনী, আলবার্ট আইন্সটাইন, থেকে শুরু করে আজকের ইলন মাস্ক – এঁরা সবাই এক একজন জিনিয়াস। থিংক লাইক দ্য ভিঞ্চি বইয়ে এমন কিছু উপায় বলা হয়েছে, যে উপায় গুলো ঠিকমত কাজে লাগালে আপনি নিজের চেষ্টায় জিনিয়াস হতে পারেন।


লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চিকে বলা হয় সর্বকালের সেরা জিনিয়াস। তিনি ছিলেন একজন শিল্পী, গনিতবিদ, আর্কিটেক্ট, বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী এবং লেখক। এখানেই শেষ নয়; চিকি‌ৎসা বিজ্ঞান, ভূগোল, জ্যোতির্বিদ্যা, শরীর-বিদ্যা, উদ্ভিদবিজ্ঞান, ইতিহাস এবং সাহিত্যে তাঁর ছিলো অসাধারন দখল।

hello-bcs-041223-1 (1)

৪৬ তম বিসিএস পরিপূর্ণ প্রস্তুতি

বর্তমানে অংশগ্রহণ করেছেন 620 জন

জয়েন করুন

এই অর্জন ভিঞ্চি এমন এক সময়ে করেছেন যখন, টিভি, পত্রিকা বা ইন্টারনেট আবিষ্কার হয়নি। তাঁকে বলা হয় আর্কিটেকচার ও আইকনোলজির জনক।

তাঁর আঁকা মোনালিসা পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত ও দামী চিত্রকর্ম। তাঁর আঁকা ‘দি লাস্ট সাপার’ পৃথিবীর সবচেয়ে বেশিবার প্রিন্ট হওয়া ছবি। তাঁর আবিষ্কারের মাঝে রয়েছে প্যারাশুট, হেলিকপ্টার, ট্যাঙ্ক ইত্যাদি। আর এসবের মাঝে তাঁর দুই হাতে একসাথে লিখতে পারার বিরল প্রতিভা, বা ‘Ambidextrous ability’ -কে একটি ছোট গুন হিসেবে ধরা হয়! এর বাইরেও তাঁর অনেক গুন ছিল, যার পুরোটা বলতে গেলে এই লেখার জায়গা শেষ হয়ে যাবে। তাঁর এতসব গুণের জন্য ইতিহাসবিদরা তাঁকে Universal Genius’ বলে ডাকেন।

লেখকের কথা:

আজকের আলোচ্য বইয়ের লেখক মাইকেল ছোটবেলায় দুইজন মানুষের দারুন ভক্ত ছিলেন, এক- সুপারম্যান, দুই- লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি। একটু বড় হয়ে তিনি জানতে পারলেন, সুপারম্যান আসলে কাল্পনিক; অন্যদিকে, লিওনার্দো সত্যিই ছিলেন, এবং তাঁকে নিয়ে যা বলা হয়, তার সবই সত্যি। এটা জানার পর তিনি সুপারম্যানকে পুরোপুরি ভুলে গিয়ে ভিঞ্চিকে নিয়ে মেতে উঠলেন। বড় হওয়ার পরও এই জিনিয়াসকে নিয়ে তাঁর আগ্রহ কমল না। তিনি বেশ কয়েক বছর লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির জীবনী নিয়ে প্রচুর পড়াশুনা আর গবেষণা করলেন। এর মধ্যে ছিল ভিঞ্চির প্রতিটি বই বারবার পড়া, এবং ফ্রান্স ও ইতালিতে ভিঞ্চির স্মৃতিবিজড়িত সবগুলো জায়গা ঘুরে দেখা।

এভাবে একটা সময়ে মাইকেল আবিষ্কার করলেন যে ভিঞ্চি তাঁর জীবনে ৭টি নির্দিষ্ট নীতি বা পদ্ধতি মেনে চলতেন। তিনি আরও আবিষ্কার করলেন যে এগুলো মেনে চললে যে কোনও মানুষের বুদ্ধি, স্মৃতিশক্তি আর দক্ষতা অনেকটাই বেড়ে যাবে। লেখকের মতে, এগুলো চর্চা করলে সবাই হয়তো ভিঞ্চির মত অতবড় জিনিয়াস হয়ে যাবে না, কিন্তু সাধারন মানুষের চেয়ে বেশি জ্ঞান, সৃষ্টিশীলতা ও দক্ষতা অর্জন করতে পারবে।

এখন আপনিও জিনিয়াস হওয়ার সেই ৭টি উপায় সম্পর্কে জানবেন। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।

 

জিনিয়াস হওয়ার ৭টি উপায়

 

০১. কৌতুহল

লেখকের মতে, দ্যা ভিঞ্চি পৃথিবীর সবচেয়ে কৌতুহলী একজন মানুষ ছিলেন। পৃথিবীর সব বিষয় সম্পর্কে তিনি জানতে চাইতেন। সামনে যা দেখতেন, তা-ই তিনি শিখতে চাইতেন। এই কৌতুহল আর শেখার আগ্রহের কারণেই তিনি এতকিছু করতে পেরেছিলেন।

একটা উদাহরন দেয়া যাক, ধরুন আজকের পৃথিবীর সেরা অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার তিনিই, যার মাঝে গাড়ি সম্পর্কে জানার আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। আর তাই তিনি জেনেছেনও সবার চেয়ে বেশি। তার মাঝে অটোমোবাইল নিয়ে যত প্রশ্ন জেগেছে, সবগুলোর উত্তর জানার ফলেই তার মাথায় নতুন নতুন আইডিয়া এসেছে, সেগুলোকে কাজে লাগিয়ে তিনি নিজের ক্ষেত্রে একজন জিনিয়াস হতে পেরেছেন।

কৌতুহল না থাকলে জানার আগ্রহ হয়না; আর আগ্রহ না থাকলে জানাও হয় না। একটি বিষয় নিয়ে আপনার মাঝে যত বেশি কৌতুহল থাকবে, সেই বিষয়ে আপনার জিনিয়াস হওয়ার সম্ভাবনা ততই বেড়ে যাবে।

লেখক বলেন, কোনও বিষয়ে আগ্রহ থাকলে সেই বিষয়ং নিয়ে প্রশ্ন করতে হবে। যত বেশি পারা যায় প্রশ্ন করতে হবে। প্রতিটি প্রশ্ন লিখে রাখতে হবে, এবং গুরুত্বের সাথে সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে হবে, উত্তর না থাকলে নতুন কিছু আবিষ্কারের চেষ্টা করতে হবে।

একটা ব্যাপার প্রায় সব জিনিয়াসের মধ্যেই কমন, তাঁরা সবাই জার্নাল বা ডায়েরী রাখতেন। সারাদিন তাঁদের মনে যত চিন্তা আসতো, সেগুলো তাঁরা সেই নোটবুকে লিখে রাখতেন। পরে তা নিয়ে নিয়ে চিন্তা করতেন। দ্যা ভিঞ্চিরও এমন বেশকিছু জার্নাল বা ডায়েরী ছিল। আপনিও চাইলে এমন একটি জার্নাল রাখতে পারেন।

আর আজকাল স্মার্টফোনের কারণে তো এটা আরও সহজ হয়ে গেছে। জার্নাল রাখার একটি দারুন উপকারিতা আছে। আমাদের সবার মনেই অনেক ভালো ভালো আইডিয়া আসে, কিন্তু একটু পরই আমরা সেগুলো ভুলে যাই। যার কারণে সেগুলো নিয়ে আর ভাবা হয় না। এমনকি চাইলেও মনে করা যায় না। কিন্তু আইডিয়াগুলো লিখে রাখলে সেগুলো ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। সেগুলো নিয়ে যে কোনও সময়ে কাজ করা যায়। জিনিয়াস মানেই একবার কোনওকিছু দেখেই মনে রাখতে পারবে – এমন না। ভিঞ্চিরও ফটোগ্রাফিক বা আইডেন্টিক মেমোরি ছিলো না। এই কারণেই তিনি আইডিয়াগুলো লিখে রাখতেন। জিনিয়াস হওয়ার জন্য আইডেন্টিক বা ফটোগ্রাফিক মেমোরির দরকার নেই। জিনিয়াস হতে গেলে ভালো ভালো আইডিয়াগুলো যেন হারিয়ে না যায় – সেই ব্যবস্থা করতে হবে। আর লিখে রাখার চেয়ে ভালো ব্যবস্থা আর হতে পারে না।

০২. বাস্তবায়ন

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি এর জীবনী ঘাঁটলে দেখা যায়, তিনি যখনই নতুন কিছু জানতেন, বা আইডিয়া পেতেন – সেগুলো শুধু লিখেই রাখতেন না, যত দ্রুত সম্ভব সেই আইডিয়া বা জ্ঞানকে তিনি কাজে লাগাতেন। সেগুলোর কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখতেন।

উদাহরন হিসেবে, আগের পয়েন্টে বলা জার্নাল বা ডায়েরীর কথা ধরা যাক। আপনার নিশ্চই মনে আছে যে জার্নাল আমাদের কি কাজে আসতে পারে। এটা আইডিয়া, প্রশ্ন ইত্যাদি যাতে ভুলে না যাই, সেই ব্যাপারে সাহায্য করে। এখন এটা জানার পর খুব কম মানুষই সত্যি সত্যি একটা জার্নাল লেখা শুরু করবে। বেশিরভাগ মানুষই এই ধরনের কথা মন দিয়ে শোনে, কিন্তু কাজে লাগায় না।

পড়া বা শোনা জ্ঞানের চেয়ে, বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া জ্ঞান বেশি কাজে লাগে। আপনি কোনওকিছু পড়লে বা শুনলে হয়তো ভুলে যাবেন, কিন্তু বাস্তবে যদি সেটা পরীক্ষা করেন তবে তা কখনওই পুরোপুরি ভুলবেন না।

ভিঞ্চির মত জিনিয়াস হওয়ার উপায়

ধরুন আপনি মানুষের সাথে সহজে আলাপ জমাতে পারেন না। অন্য কথায় আপনার Communication skill ভালো নয়। এবং আপনি সেটা ভালো করতে চান। সেইজন্য ভালো ভালো টিউটোরিয়াল ভিডিও দেখলেন, ভালো ভালো বই পড়লেন। কিন্তু সেসব থেকে পাওয়া শিক্ষা যদি বাস্তবে প্রয়োগ না করেন, এবং যদি ভুল না করেন এবং সেই ভুল সংশোধন না করেন- তবে কোনও উন্নতি হবে না।

এভাবে প্রতিটি বিষয়েই যখন নতুন কিছু জানবেন, বা নতুন কোনও আইডিয়া মাথায় আসবে, তখন সেগুলো বাস্তবে কাজে লাগান। তাহলে সেগুলো মাথায় থেকে যাবে, আর আপনি সেগুলোকে চর্চা করতে করতে একটা সময়ে সেই আইডিয়ার মাস্টার হয়ে যাবেন ।

০৩. ইন্দ্রিয়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার করা

মানুষের ইন্দ্রিয় ছয়টি। দেখার জন্য চোখ, ঘ্রাণের জন্য নাক, স্বাদের জন্য জিহ্বা, অনুভবের জন্য ত্বক, শোনার জন্য কান, আর চিন্তার জন্য মস্তিষ্ক অথবা মন।

দ্য ভিঞ্চি তাঁর প্রতিটি ইন্দ্রিয়ের সঠিক এবং সর্বোচ্চ ব্যবহার করে গেছেন। এই কারণেই তাঁর বোঝার ক্ষমতা অন্যদের চেয়ে বেশি ছিল।

বইয়ে লেখক ভিঞ্চির গাছ দেখার উদাহরন দিতে গিয়ে লিখেছেন, আমরা যেমন করে একটি গাছকে দেখি, ভিঞ্চি সেভাবে দেখতেন না। তিনি একটি গাছের সামনে গেলে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতেন, কিভাবে তার শেকড়গুলো ছড়িয়েছে, ডালপালাগুলো কেমন নকশায় নিজেদের মেলে ধরেছে, পাতাগুলো কিভাবে থরে থরে সাজানো আছে। সবুজ পাতার মাঝে কিভাবে অন্য রঙের মরা অথবা কচি পাতাগুলো রয়েছে। ফুলগুলো কেমন প্যাটার্ণ এ গাছে ধরেছে – ইত্যাদি।

অর্থা‌ৎ ভিঞ্চি যখন কিছু দেখতেন তখন একদম তার ছোট-বড় সবকিছুর দিকে নজর দিতেন। কোনওকিছু তাঁর নজর এড়াতো না। অতি তুচ্ছ জিনিসকেও চোখের পুরো ক্ষমতা দিয়ে দেখতেন।

এবং এটা শুধু দেখার ক্ষেত্রেই নয়, শোনা, অনুভব করা, চিন্তা করা – সব ক্ষেত্রেই তিনি পুরো মনযোগ দিতেন। যেটা করছেন, সেই সম্পর্কিত অঙ্গ বা ইন্দ্রিয়টিকে যতটা বেশি পারা যায়- ততটাই ব্যবহার করতেন। কোনওকিছু শোনার সময়ে তিনি খুব মন দিয়ে শুনতেন। কারও কথা শোনার সময়ে, প্রতিটি শব্দের গভীরতা বুঝতে চেষ্টা করতেন; মিউজিক শোনার সময়ে গভীর মনোযোগে তার সুর, তাল, লয় – এসব বোঝার চেষ্টা করতেন। আর এই কারণেই তিনি সবকিছু এত ভালোভাবে বুঝতে পারতেন।

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির জিনিয়াস উক্তি

আপনিও যদি এই জিনিয়াসের মত করে সবকিছু বুঝতে চান, তবে যখন যা-ই করছেন তা পুরো মনযোগের সাথে নিজের ক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার করে করুন। খাওয়ার সময়ে শুধু পেট ভরার জন্য খাওয়ার বদলে খাবারের স্বাদটি পরিপূর্ণ ভাবে বোঝার চেষ্টা করুন। কোনও গান শোনার সময়ে বা কারও কথা শোনার সময়ে শব্দের আলাদা আলাদা মাত্রা, তরঙ্গ ইত্যাদি বোঝার চেষ্টা করুন। কোনও কিছু স্পর্শ করলে তাকে ভালোভাবে অনুভব করার চেষ্টা করুন; একটি টাকার নোট হাতে থাকলে বোঝার চেষ্টা করুন সেটি কতটা মসৃণ বা খসখসে।

এভাবে একটা সময়ে দেখবেন আপনি আগের চেয়ে অনেক বেশি দেখতে পাচ্ছেন, শুনতে পাচ্ছেন, অনুভব করতে পারছেন, এবং বুঝতে পারছেন। বর্তমানে এই ব্যাপারটিকে বলা হয় ‘Mindfulness’ – এটার চর্চা করলে ফোকাস, বুদ্ধিমত্তা দারুন ভাবে বিকশিত হবে। কাজগুলো হবে জিনিয়াস এর মত।

০৪. সবদিক ভালোমত ভেবে সিদ্ধান্ত নেয়া

ধরুন আপনি একদিন রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে দুইজন লোকের কথপোকথন শুনতে পেলেন। এদের মাঝে একজন আপনার অল্প পরিচিত, ধরা যাক তার নাম সুমন। চলতে চলতে আপনি শুনলেন সুমন তার পাশের লোকটিকে বলছে “মারামারি করাটা খুব খারাপ”। শুনে আপনার ভালো লাগলো। সুমনের প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে গেল।

কিন্তু আরেকদিন হাঁটতে হাঁটতে আপনি শুনতে পেলেন সুমন অন্য একটি লোককে বলছে যে “এই লোকগুলোকে মেরে ফেলা উচি‌ৎ”। – এবার আপনার মনে খটকা লাগলো। যে লোক দুই জায়গায় দুই কথা বলে – সে ভালো লোক হতে পারে না। আপনি সুমনকে অপছন্দ করা শুরু করলেন।

একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আপনি এটাই করবেন। কিন্তু আপনার মানসিকতা যদি জিনিয়াসদের মত হয়, তবে আপনি এত তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নেবেন না। এর বদলে আগে চিন্তা করে বোঝার চেষ্টা করবেন সুমনের দুই জায়গায় দুই কথা বলার কারণ আসলে কি হতে পারে? নিজে চিন্তা করে বের করতে না পারলে, সুমনকে সরাসরি জিজ্ঞেস করতেন।

হয়তোবা প্রথম যে লোকটির সাথে সুমন কথা বলেছে, সে আসলে একজন বদরাগী মানুষ। তাকে সে বোঝাচ্ছিল যাতে সে কথায় কথায় মারামারি না করে। আর দ্বিতীয় লোকটির সাথে হয়তো মাদক ব্যবসায়ী বা এমন কোনও গুরুতর অপরাধী নিয়ে কথা হচ্ছিল, যার প্রেক্ষিতে এই ধরনের অপরাধীদের মেরে ফেলার কথা এসেছে।

Image result for leonardo da vinci quote about thinking

জিনিয়াসরা কোনওকিছু দেখে বা শুনেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন না। প্রতিটি সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে বিষয়গুলিকে তাঁরা বিভিন্ন দিক থেকে চিন্তা করেন, খোঁজ খবর নেন – এবং তারপর সিদ্ধান্ত নেন।

সাধারন মানুষ অনেক সময়ে চিন্তা ভাবনা না করেই আবেগের বশে অনেক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। কিন্তু আপনি যদি একজন জিনিয়াস হতে চান, তবে আবেগের বশে বা চিন্তা ভাবনা ছাড়া সিদ্ধান্ত না নিয়ে – প্রতিটি বিষয় বিভিন্ন দিক থেকে বিবেচনা করে তারপর সিদ্ধান্ত নিন। খালি চোখে সবকিছু যেমন দেখা যায়, বাস্তবে তা না-ও হতে পারে। ভিঞ্চির এই অভ্যাসের কারণেই তিনি বিভিন্ন সমস্যার সমাধান অন্যদের চেয়ে সঠিক ভাবে করতে পারতেন।

০৫. শিল্প আর বিজ্ঞানের মিশ্রণ

দ্য ভিঞ্চি বিজ্ঞানকে যতটা গুরুত্ব দিতেন, শিল্পকেও ঠিক ততটাই গুরুত্ব দিতেন। বিশেষ করে আমাদের দেশে পড়াশুনার ক্ষেত্রে সাইন্স ছাড়া যেন কোনও বিকল্প নেই। বিজ্ঞান না হলে ব্যবসায় শিক্ষা বা কমার্স। বেশিরভাগ অভিভাবকের মতে, মানবিক বা আর্টস কোনও কাজেরই না। কিছু কিছু স্কুল-কলেজে তো মানবিক বিভাগই উঠে গেছে। কিন্তু সত্যি কথা হচ্ছে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী যেমন প্রয়োজন আছে, তেমনি শিল্পী, লেখক, দার্শনিকও প্রয়োজন আছে। এই যে আমরা আজ ভিঞ্চির আবিষ্কার নিয়ে জানতে পারছি, তাঁর জীবন থেকে শিক্ষা নিতে পারছি – তার প্রধান কারণ ইতিহাসবিদরা তাঁর কর্মকান্ড রেকর্ড করেছিলেন। না হলে হয়তো তাঁর নামই আজ আমরা জানতাম না।

একজন সত্যিকার জিনিয়াস সবকিছুকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। ভিঞ্চি যেমন হেলিকপ্টার, ট্যাঙ্ক – ইত্যাদির আইডিয়া বের করেছেন, তেমনি মোনালিসা ও লাস্ট সাপার এর মত কালজয়ী শিল্পও সৃষ্টি করেছেন।

যদি একজন জিনিয়াস হতে চান, তবে আপনারও এই দু’টি বিষয়কেই সমান গুরুত্ব দেয়া।উচি‌ৎ। লেখকের মতে, যে কোনও ক্ষেত্রে সেরা হতে হলে আপনাকে সেই বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত বৈজ্ঞানিক এবং শৈল্পিক – দুই দিকেই সমান দক্ষ হতে হবে। একজন জিনিয়াস আর্কিটেক্ট হতে হলে আপনাকে ফিজিক্স, জ্যামিতি বোঝার পাশাপাশি শিল্প ও নান্দনিকতাও বুঝতে হবে।

একটি সহজ উদাহরন দেয়া যাক, আপনি ফোনে/কম্পিউটারে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে এই লেখাটি পড়ছেন – এর পেছনে যেমন বিজ্ঞানের অবদান আছে, তেমনি অবদান আছে শিল্পের।

science and art

কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ওয়েবসাইট যেমন বিজ্ঞানের সৃষ্টি। অন্যদিকে লেখালেখি, ডিজাইন – এসব শিল্পের অংশ। আবার ভিঞ্চির কথা ধরুন, তিনি হেলিকপ্টার, ট্যাঙ্ক – ইত্যাদি কিভাবে চলবে এই আইডিয়া যখন ভেবেছেন, তা ছিল বিজ্ঞান, আবার যখন তিনি এসবের ডিজাইন করেছেন – সেগুলো ছিল শিল্প।

একজন সিনেমা পরিচালককে তখনই জিনিয়াস বলা যায়, যখন তিনি সিনেমার শিল্পের দিক, যেমন, ফটোগ্রাফি, চিত্রনাট্য, অভিনয় এসব বোঝার পাশাপাশি টেকনিক্যাল ব্যাপারগুলোও ভালো বোঝেন। সুন্দর একটি ফ্রেমের জন্য যেমন ফটোগ্রাফিতে দারুন দক্ষতা দরকার, তেমনি সুন্দর লাইটের জন্য পদার্থ বিদ্যা জানা জরুরী। জেমস কামেরুন বা স্টিভেন স্পিলবার্গ এর মত পরিচালকদের আপনি কোনওদিক দিয়েই আটকাতে পারবেন না। এবং আপনাকে যদি কোনও ক্ষেত্রে জিনিয়াস হতে হয়, তবে আপনাকেও যেন (সেই বিষয়ে) কোনও দিক দিয়ে আটকানো না যায়।

০৬. মন ও শরীর – দু’টিকেই গুরুত্ব দেয়া

আজকালকার মিডিয়া বা সিনেমার কারণে একজন জিনিয়াসের কথা ভাবতে গেলেই আমাদের কল্পনায় দেখা দেয় উস্কোখুস্কো চুলের, ভাঙাচোরা স্বাস্থের, চশমা পরা একজন মানুষ। কিন্তু সত্যিকথা বলতে, পৃথিবীর ইতিহাসের অনেক বড় বড় জিনিয়াস দেখতে যেমন স্বাস্থ্যবান ও সুন্দর ছিলেন, শারীরীক ভাবেও শক্তিশালী ছিলেন

আজকের পৃথিবীর একজন বিখ্যাত জিনিয়াস, ইলন মাস্ক এর কথাই ভাবুন- হলিউডের কোনও নায়কের চেয়ে তিনি কোনও দিক দিয়েই কম যান না। লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি দেখতে ছিলেন রীতিমত সুপুরুষ; আর তাঁর গায়ের জোর এতই ছিল যে ঘোড়ার পায়ে পরানোর লোহার নাল তিনি খালি হাতে বাঁকা করে ফেলতেন!

তিনি ঘোড়সওয়ারী করতেন, নিয়মিত সাঁতরাতেন; সেই সাথে নিয়ম করে ব্যায়াম করতেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল শারীরীক ভাবে সবল ও সুস্থ না হলে মানসিক ভাবেও শক্তিশালী হওয়া সম্ভব নয়।
body and mind

মানব শরীর নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে তিনি জানতে পেরেছিলেন শরীর ও মন একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন মস্তিষ্ককে পুরোপুরি কাজে লাগাতে হলে শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখা জরুরী।

আপনিও যদি জিনিয়াস হওয়ার উপায় খোঁজেন, তবে শুধু বুদ্ধি বাড়ানোতে মন না দিয়ে শরীরের দিকেও বিশেষ নজর দিন।

০৭. আলাদা আলাদা বিষয়ের মাঝে সম্পর্ক খোঁজা

পৃথিবীতে আসলে নতুন বলতে কিছু নেই। যা থাকার, তা আগে থেকেই আছে। তাহলে নতুন নতুন আবিষ্কার গুলো কিভাবে হয়?
জিনিয়াসরা পৃথিবীতে থাকা আলাদা আলাদা বিষয় ও বস্তুর মাঝে সম্পর্ক খুঁজে বের করে সেগুলোকে কাজে লাগিয়ে এই আবিষ্কার গুলো করেন।

জিনিয়াস বিজ্ঞানী বা আবিষ্কারকরা প্রতিটি জিনিস খুব গভীর ভাবে দেখার ও জানার চেষ্টা করেন। এবং একটি বিষয়কে জেনেই তাঁরা থেমে যান না, তার সাথে অন্য বিষয়ের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেন।

আলাদা আলাদা বস্তু বা বিষয়কে এক করে তাঁরা নতুন কিছুর জন্ম দেন। এই নতুন কিছু যে শুধু বস্তু হতে হবে, এমন নয়। দুই বা দুইয়ের বেশি থিওরির সমন্বয়ে একজন জিনিয়াস নতুন থিওরি বা তত্ত্ব সৃষ্টি করেন। জিনিয়াসরা প্রতিটি জানা বিষয়ের মাঝে সম্পর্ক খুঁজে বের করেন। তাঁরা এমন কিছু দেখার চেষ্টা করেন, যা অন্যরা দেখতে পায়নি বা দেখার চেষ্টা করেনি।

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি বিশ্বাস করতেন, জগতের সবকিছুর সাথে সবকিছুর সম্পর্ক আছে। এই কারণেই তিনি বিভিন্ন বিষয়ের মাঝে সম্পর্ক গুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করতেন।

তিনি হেলিকপ্টারের ডিজাইন করেছিলেন ফড়িং থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। ট্যাংক এর ডিজাইন করেছিলেন গুবরে পোকা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। আপনিও যদি এমন নতুন কিছুর উদ্ভাবন করতে চান, তবে জিনিয়াসদের মত করেই আলাদা আলাগা বিষয় বা বস্তুর মাঝে সম্পর্কগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। বলা তো যায় না- একটা সময়ে হয়তো আপনিও পৃথিবীকে নতুন কিছু দিতে পারবেন।

পরিশিষ্ট:

সব জিনিয়াসই আসলে অন্যদের চেয়ে বেশি বুদ্ধি বা বেশি মেধা নিয়ে জন্মান না। সাধারণ মানুষের সাথে তাঁদের প্রধান পার্থক্য হলো চিন্তায়। তাঁরা যেভাবে দেখেন, যেভাবে চিন্তা করেন – সাধারণ মানুষ সেভাবে করে না। দার্শনিক দেকার্ত বলেছেন, মানুষ তার চিন্তার সমান বড়। আপনি যদি একজন জিনিয়াসের মত করে চিন্তা করতে পারেন, তবে আপনার পক্ষেও জিনিয়াস হওয়া সম্ভব। আসলে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই জিনিয়াস, কিন্তু সবাই জিনিয়াসদের মত চিন্তা করতে পারে না, অথবা কিভাবে তা করতে হয়, তা জানে না। এই লেখা থেকে আপনি সর্বকালের সেরা একজন জিনিয়াস লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির চিন্তা ও কাজের ধরন সম্পর্কে জানতে পারলেন। এখন আপনি যদি নিজের মেধা ও বুদ্ধির সেরা ব্যবহার করতে চান – তবে, এই পদ্ধতিগুলো আপনার কাজে আসবে।
জিনিয়াস হওয়ার উপায় বিষয়ে এই লেখা পড়ে আপনার হয়তো মনে হতে পারে যে এর সবই বাড়িয়ে বলা। কিন্তু Think Like Da Vinci এর লেখক বলেন, আপনি যদি বিশ্বাস করেন যে আপনি জিনিয়াস হতে পারবেন, তবে আপনার মস্তিষ্কও সেভাবেই কাজ করতে শুরু করবে। সত্যি কথা বলতে, এইসব বড় বড় জিনিয়াসরা কিন্তু আপনার আমার মতই মানুষ। যদি বড় চিন্তা করতে পারেন, তবে আপনার মাঝে বড় হওয়ার সম্ভাবনাও আছে। চেষ্টা করতে তো ক্ষতি নেই। হয়তো আপনি ভিঞ্চির মত জিনিয়াস হয়ে উঠবেন না, কিন্তু সাধারনের চেয়ে বড় নিশ্চই হয়ে উঠতে পারবেন।


লেখাটি কেমন লাগলো, কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানান। আপনার প্রতিটি মতামতই আমাদের কাছে মূল্যবান। আর আপনার যদি মনে হয় লেখাটি মানুষের কাজে লাগবে, তবে শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন। সাফল্যের পথে প্রতিটি পদক্ষেপে লড়াকু আপনার সাথে আছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন !