সেরা সফল উদ্যোক্তার ১০টি চারিত্রিক গুনাবলী


আপনার কি মনে হয় বিল গেটস, ইলন মাস্ক, স্টিভ জবস – এঁরা শুধু ভাগ্য আর প্রতিভার কারণেই এত বড় উদ্যোক্তা হয়েছেন?

তাঁরা আসলে বেশিরভাগ মানুষের তুলনায় ভিন্ন ভাবে জীবনযাপণ ও কাজ করেন।  আজকালকার দিনে চারিদিকে মানুষের নানান সমস্যা।  আর এইসব সমস্যার বেশিরভাগের সমাধানই করে থাকেন উদ্যোক্তারা।  সমস্যার সমাধান করেই তাঁরা তাঁদের সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন।  সেই সাথে তাঁদের মাঝে থাকে কিছু চারিত্রিক গুনাবলী, যেগুলো তাঁদের অন্যদের থেকে আলাদা ভাবে কাজ করায়।

চলুন জেনে নেয়া যাক এমন ১০টি চারিত্রিক বৈশিষ্টের কথা:

hello-bcs-041223-1 (1)

৪৬ তম বিসিএস পরিপূর্ণ প্রস্তুতি

বর্তমানে অংশগ্রহণ করেছেন 620 জন

জয়েন করুন

০১. উচ্চাকাঙ্খা

সাধারণত আমরা মনে করি প্রতিটি মানুষই জীবনে বড় কিছু চায়।  কিন্তু আপনি যদি বাস্তবে জরিপ চালান, তাহলে দেখবেন, বেশিরভাগ মানুষ আসলে একটি স্বচ্ছল ও শান্তিময় জীবন চায় । 

স্বচ্ছল ও শান্তিপূর্ণ জীবন চাওয়া আর উচ্চাকাঙ্খা থাকা কিন্তু এক কথা নয়। 

ambition of entrepreneur

বড় বড় সফল উদ্যোক্তা জীবনের একটি পর্যায়ে এসে চান যে তাঁরা বিরাট সাফল্য অর্জন করবেন।  তাঁদের প্রতিষ্ঠানের নাম সবাই জানবে, তাঁদের এত অর্থ থাকবে যে তাঁরা যা চান তাই কিনতে পারবেন, মানুষের জন্য কাজ করতে পারবেন।

একজন দারুন সফল উদ্যোক্তা হতে হলে আপনাকে অবশ্যই আগে লক্ষ্য ঠিক করতে হবে।  আর সেই লক্ষ্য স্বাভাবিক ভাবেই বড় হয়।  লক্ষ্য ঠিক না করলে অর্জনও করা যায় না।

০২. ঝুঁকি নিতে পারা

আগের পয়েন্টে স্বচ্ছল ও শান্তিপূর্ণ জীবনের কথা বলেছি।  বেশিরভাগ মানুষই এই ধরনের জীবন চায়।  যে জীবনে একটি নিরাপদ অর্থের উ‌ৎস থাকবে, সেই সাথে থাকবে পারিবারিক শান্তি।  অনেকেই একটা পর্যায়ের সাফল্য অর্জন করার পর আর সামনে এগুতে চায় না, কারণ তাতে তাদের বর্তমান অর্জনটি ঝুঁকির মাঝে পড়ে যায়।

risk taking entrepreneur

সফল উদ্যোক্তারা এমন মানুষ, যাঁরা একটি লক্ষ্য ঠিক করলে তা পূরণের জন্য যে কোনও অনিশ্চয়তায় ঝাঁপ দিতে পারেন।  তবে এখানে একটা কথা বলে রাখি, সবাই ঝুঁকি নিতে পারলেও সফল উদ্যোক্তা হতে পারে না।

তাহলে অন্য সব ঝুঁকি নেয়া মানুষদের থেকে সফল উদ্যোক্তাদের পার্থক্যটা কোথায়?

সফল উদ্যোক্তারা অনিশ্চয়তার দিকে পা বাড়ান ঠিকই, কিন্তু এর পেছনে তাঁদের নির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকে।ঝুঁকি নিয়ে সফল না হলে কি করবেন – সেটাও তাঁদের পরিকল্পনায় থাকে।  একে বলা হয় হিসেব করা ঝুঁকি (calculated risk)  

কোনও ঝুঁকি নেয়ার আগে একজন উদ্যোক্তা খুব ভালোমত ভেবে দেখেন যে এই ঝুঁকি নিয়ে তাঁর কি লাভ হবে? তাঁর সময়, অর্থ আর শ্রম কি এই ঝুঁকির পেছনে দেয়ার মত? এবং, এই কাজে সফল না হলে তিনি কি করবেন?

এই পরিকল্পিত ঝুঁকি নেয়াটাই তাঁদের অন্যদের থেকে আলাদা করে দেয়।

০৩. আত্মবিশ্বাস, পরিশ্রম ও শৃঙ্খলা

সফল উদ্যোক্তারা তাঁদের কাজকে উপভোগ করেন, সেকারণে তাঁরা অক্লান্ত ভাবে পরিশ্রম করে যেতে পারেন।  তাঁরা নিজেদের দক্ষতার ব্যাপারে সবসময়ে আত্মবিশ্বাসী থাকেন।

Image result for discipline hard work

নিজেদের কাজে পূর্ণ ফোকাস রাখার জন্য তাঁরা একটি শৃঙ্খলা তৈরী করে নেন যাতে করে তাঁদের মনযোগ সব সময়ে লক্ষ্যে স্থির থাকে।

০৪. সুযোগ খোঁজা ও কাজে লাগানো

একজন সফল উদ্যোক্তার সবচেয়ে অপরিহার্য গুণ গুলোর একটি হল সত্যিকারের সুযোগ খুঁজে বের করতে পারা।  সত্যি বলতে একজন উদ্যোক্তার প্রধান কাজই এটি: মানুষের এমন একটি সমস্যা খুঁজে বের করা, যা এখনও কেউ সমাধান করছে না; তারপর সেই সমস্যাকে সুযোগ হিসেবে দেখে তার সত্যিকার সমাধান খুঁজে বের করা এবং সেই সমাধান কাজে লাগিয়ে উপার্জন করা।

inspiring quote by jack ma

সফল উদ্যোক্তাদের সমাধান খুঁজে পাওয়ার দারুন একটি প্রতিভা থাকে।  তাঁরা সমস্যাকে সমস্যা হিসেবে না দেখে, সেটিকে সুযোগ হিসেবে দেখেন।

০৫. প্রয়োজনে পরিবর্তনের ক্ষমতা

নিজের কাজের প্রতি ফোকাস রাখা, এবং স্থির লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া অবশ্যই ভালো।

কিন্তু সেই সাথে প্রয়োজনে কৌশল ও কাজে একটু পরিবর্তন আনতে না পারলে আপনি ব্যর্থও হতে পারেন। 

মার্কেটের অবস্থার পরিবর্তনের ফলে কৌশলে পরিবর্তন আনা, আপনার পন্য বা সেবার ব্যাপারে ক্রেতা বা গ্রাহকদের মতামতের ভিত্তিতে সেখানে কিছু পরিবর্তন আনা – ইত্যাদি করার মত মানসিকতা একজন উদ্যোক্তার থাকতে হবে।  না হলে সময়ের সাথে ব্যবসা হারিয়ে যাবে।

০৬. অর্থ ব্যবস্থাপনা

একটি নতুন উদ্যোগ লাভের মুখ দেখতে বেশ কিছুটা সময় লাগে।  এই লাভ আসার আগ পর্যন্ত হাতে থাকা অর্থ সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে হবে।  সফল উদ্যোক্তারা এই ব্যাপারটির গুরুত্ব বুঝে সেই অনুযায়ী তাঁদের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সাজান।

হাতে থাকা অর্থ কিভাবে খরচ করবেন, বাড়তি মূলধন প্রয়োজন হলে তা কিভাবে জোগাড় করবেন – এইসব ব্যাপারে তাঁরা একটি রোডম্যাপ তৈরী করে সেই অনুযায়ী কাজ করেন।

এটা যে শুধু তাঁরা তাঁদের ব্যবসার টাকার ক্ষেত্রে করেন – তা কিন্তু নয়।  জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাঁরা প্রতিটি পয়সা হিসেব করে খরচ করেন।  তাঁরা অপ্রয়োজনে একটি টাকাও খরচ করেন না।  প্রতিটি খরচই তাঁদের একেকটি বিনিয়োগ।

কোন খরচের টাকা তাঁরা কিভাবে উঠাবেন – তা তাঁরা খরচ করার আগেই পরিকল্পনা করে রাখেন।

সঠিক অর্থ ব্যবস্থাপনার গুণ বা বৈশিষ্ট না থাকলে একজন মানুষ কখনওই বড় উদ্যোক্তা হতে পারবেন না।

০৭. ভুল হওয়া বা ব্যর্থ হওয়ার ভয়ে বসে না থাকা

একজন সফল উদ্যোক্তা জানেন যে কোনও কিছু গড়তে গেলে কিছু ভুল আর ব্যর্থতা সামনে আসবেই।  তাঁরা বোঝেন যে এটা সাফল্যের প্রক্রিয়ারই একটি অংশ।  তাঁরা প্রতিটি ভুল ও ব্যর্থতাকে নতুন কিছু শেখার সুযোগ হিসেবে দেখেন।

তাঁরা জানেন যে ভুল সবাই করে।  মূর্খরা একই ভুল বার বার করে; আর বুদ্ধিমানরা ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যায়।

mistake and failure quote

তাঁরা ভুল করার বা ব্যর্থ হওয়ার ভয়ে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকেন না।  এসবের ঝুঁকি নিয়েই তাঁরা নতুন নতুন কাজে হাত দেন।  তাঁদের মাথায় থাকে যে, একবার ভুল করলে বা ব্যর্থ হলে সব শেষ হয়ে যায় না।  সেখান থেকেই আবার নতুন করে শুরু করা যায়, এবং ভুল শুধরে কাজ করলে সাফল্য আসবেই।

০৮. যোগাযোগ দক্ষতা

একজন উদ্যোক্তার সবচেয়ে বড় সম্পদগুলোর মাঝে একটা হল তাঁর নেটওয়ার্ক।  ব্যবসার ব্যাপারে কাজে আসতে পারে, এমন কত মানুষের সাথে তিনি যোগাযোগ স্থাপন করতে পেরেছেন – তার ওপর একজন উদ্যোক্তার সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করে।

সাধারন মানুষ যখন বন্ধু বা পরিবারের সাথে অবসরে মজা করে কাটাতে বেশি পছন্দ করে, একজন সফল উদ্যোক্তা তখন তাঁর নিজের চেয়ে অভিজ্ঞ, জ্ঞানী ও ক্ষমতাবানদের সাথে সময় কাটাতে বেশি পছন্দ করেন।

ব্যবসায়িক পার্টনার, গুরু বা মেন্টর, অন্য ব্যবসায়ী, সম্ভাব্য বা বর্তমান ক্লায়েন্ট – এইসব মানুষদের সাথে ঠিকমত যোগাযোগ রাখতে পারাটা একজন সফল উদ্যোক্তার অন্যতম প্রধান একটি বৈশিষ্ট। সবকিছু থাকার পরও, শুধুমাত্র এই যোগাযোগ দক্ষতার অভাবেই অনেক উদ্যোক্তা সফল হতে পারেননি। 

০৯. নিজের সীমাবদ্ধতা জয় করার চেষ্টা করা

একজন মানুষ তখনই তার কাজে উন্নতি করতে পারে, যখন সে নিজেকে উন্নত করে।  একজন সফল উদ্যোক্তা সব সময়েই নিজের দক্ষতা ও জ্ঞানকে উন্নত করার চেষ্টা করেন। 

তাঁরা বোঝেন যে ব্যবসায়ে কখনও কখনও এমন পরিস্থিতি আসে যা তাঁদের বর্তমান দক্ষতা দিয়ে সমাধান করা সম্ভব নয়।  কিন্তু তাতে তাঁরা থেমে যান না।

Image result for overcome limits তাঁরা সেই পরিস্থিতি সামাল দিতে নিজেদের সীমাবদ্ধতাকে জয় করার চেষ্টা করেন।  নতুন জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করেন।

তাঁরা ভিন্ন ভিন্ন মানুষের কাছ থেকে নতুন জিনিস শেখেন।  নতুন নতুন বিষয় নিয়ে কাজ করে তাঁরা নিজেদের অভিজ্ঞতা বাড়ান।  কোনও ব্যাপারে না জানলে, তাঁরা অন্যের ওপর পুরোপুরি নির্ভর না করে নিজেই সাধ্যমত তা শেখার চেষ্টা করেন।

১০. নেতৃত্ব দিতে পারা

একজন সফল উদ্যোক্তার মাঝে অবশ্যই সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়ার গুণটি থাকতে হবে।

সফল উদ্যোক্তারা তাঁদের কাজ ও ব্যক্তিগত ব্যাপারে সবকিছুই খুব সুন্দর করে ম্যানেজ করতে পারেন।  বড় বড় সিদ্ধান্ত নেয়ার সাহস ও যোগ্যতা তাঁদের আছে – যা অন্য অনেকের মাঝেই নেই। যে কোনও কাজের একদম সামনে তাঁদের পাওয়া যায়। তাঁরা শুধু পেছন থেকে নির্দেশ দেন না।

boss vs leaderতাঁরা নিজেদের যেমন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, তেমনি অন্যদেরও সঠিক পথে চালিত করতে পারেন।  কাকে কি বললে সে ভাল ভাবে কাজ করবে – তা তাঁরা খুব সহজেই ধরতে পারেন, এবং সেই অনুযায়ী আচরণ করতে পারেন।  কর্মীদের ভেতর থেকে তাদের সেরাটা বের করে আনার সহজাত ক্ষমতা রয়েছে তাঁদের।

তাঁরা সব সময়ে অন্যদের প্রয়োজনের দিকে খেয়াল রাখেন।  টিম মেম্বার ও কর্মচারীদের ভাল মন্দের খোঁজ খবর রাখাটা তাঁদের রুটিনের মধ্যেই পড়ে।  এই কারণে অন্যরাও তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকেন, এবং তাঁদের কথামত কাজ করেন।

পরিশিষ্ট:

সফল উদ্যোক্তা হতে হলে ওপরে বলা গুনাবলী অবশ্যই আপনার মাঝে থাকতে হবে।  তবে এর কিছু গুণ যদি আপনার মাঝে না-ও থাকে, তাতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই।  এই প্রতিটি গুণই আসলে এক একটি অভ্যাস, যা চর্চার মাধ্যমে আপনিও রপ্ত করতে পারবেন।

কাজেই সফল উদ্যোক্তার গুনাবলী মনে রেখে নিজেকে সেই অনুযায়ী গড়ে তোলার চেষ্টা করুন।  আজ অথবা কাল আপনি ঠিকই এইসব বৈশিষ্টের অধিকারী হবেন।


লেখাটি কেমন লাগলো, তা আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন।  আপনার যে কোনও মতামত বা পরামর্শ আমাদের জন্য অমূল্য।  লেখাটি ভালো লাগলে শেয়ার করে অন্যদেরও দেখার সুযোগ করে দিন।  আমাদের সাথে থাকুন; সাফল্যের পথে সব সময়ে লড়াকু আপনার সাথে আছে।

আপনার জন্য:

পোস্টটি শেয়ার করুন !