নিজেকে সব সময়ে পজিটিভ রাখতে এই ৫টি কাজ প্রতিদিন করুন


এক নজরে লেখাটির বিষয়ে:

একটি ভাল ও ফলপ্রসূ দিন কাটাতে হলে সারাদিন পজিটিভ থাকার কোনও বিকল্প নেই। কিছু কৌশল অবলম্বন করলেই কিন্তু বেশ সহজেই সারাদিনের জন্য পজিটিভ থাকা যায়। চারপাশের পরিস্থিতি আর ঘটনা প্রবাহের ফলে মনের মাঝে নেতিবাচক বা nagetive চিন্তা আসবেই। কিন্তু এগুলো থেকে বেঁচেও থাকা যায়। যদি আপনি এই বিষয়গুলো মেনে চলেন: ১-শরীরের পাশাপাশি আত্মারও যত্ন নিন, ২- ইতিবাচক ভাবনা ও ঘটনাগুলো লিখে রাখুন, ৩- সকালে উঠেই খবর/সোশ্যাল মিডিয়ায় ডুব দেবেন না, ৪- নিজের আশপাশের পরিবেশে ইতিবাচকতা নিয়ে আসুন, ৫ – মনকে সচল রাখুন।


একটিসফল দিন কাটানোর জন্য সারাদিন মনে একটি ইতিবাচক বা পজিটিভ ভাব ধরে রাখাটা খুবই জরুরী।  আপনার মন যদি নেগেটিভ অবস্থায় থাকে তাহলে মানসিক চাপ, দু:খ, দ্বিধা, ভীতি – ইত্যাদির দ্বারা আক্রান্ত হবেন।  আর তাতে করে আপনার দিনের কাজেও তার প্রভাব পড়বে। দিনের পর দিন এভাবে কাটলে সপ্তাহ, বছর এমনকি সারাজীবনই আপনাকে হয়তো এই নেতিবাচকতার ফাঁদে বন্দী হয়ে অস্বস্তিকর ও অসফল অবস্থায় কাটাতে হবে।  তাই এর থেকে বের হয়ে এসে মনে সব সময়ে ইতিবাচক ভাব ধরে রাখার কোনও বিকল্প নেই।

একথা সত্যি যে আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে নেতিবাচকতা সব সময়েই ঘিরে রাখে।  প্রতিদিনই কোনও না কোনও প্রকারের নেতিবাচকতা আমাদের জাপটে ধরে, এবং বেশিরভাগ মানুষই তার কাছে নতিস্বীকার করে।  কিন্তু আমরা অনেক সময়েই ভুলে যাই, নেতিবাচকতা বা Negativity এর পাশাপাশি ইতিবাচকতা বা Positivity ও আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে থাকে।  কিন্তু বেশিরভাগ সময়ে আমরা প্রথমটিকে জিততে দেই, যার ফলে আমাদের দিনগুলো মনের মত করে কাটেনা।  আর এর থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় নেতিবাচকতার সাথে লড়াই করে নিজের মনকে সব সময়ে ইতিবাচকতার দিকে ঝুঁকিয়ে রাখা।

কিন্তু লড়াই তো আর খালি হাতে করা যায় না। সেইজন্য কিছু রসদ লাগে।  আজকে আপনাকে সেই রসদের সন্ধানই দেব। আপনার হাতে আজ তুলে দেব সেই অব্যর্থ অস্ত্র, যা ব্যবহার করে আপনি প্রতিদিনই যাবতীয় নেতিবাচকতাকে যুদ্ধে হারিয়ে দেবেন।  অস্ত্রগুলো আর কিছুই নয়, পাঁচটি কাজ যা প্রতিদিন করলে আপনি আপনার মনকে সারাদিনের জন্য পজিটিভ রাখতে পারবেন।

১. শরীরের পাশাপাশি আত্মারও যত্ন নিন

মন ভাল রাখার জন্য শরীরের যত্নের কোনও বিকল্প নেই।  সারাদিন মাথা ঠান্ডা ফ্রেশ রাখার জন্য সকাল থেকেই শরীরের জন্য যেটা ভাল, সেটা করুন।  রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমান ও সকালে তাড়াতাড়ি উঠুন। পুষ্টিকর ও ভাল নাস্তা করুন। অতিরিক্ত চিনি ও চর্বি সমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলুন।  এসব খাবার স্নায়ুকে উত্তেজিত করে, ফলে আপনার মন মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। হাল্কা ব্যায়ামের অভ্যাস করুন, এতে করে শরীরের পাশাপাশি মনও ভাল থাকে।

শরীরের পাশাপাশি আত্মার যত্ন নেয়াটাও জরুরী।  এখানে আত্মা বলতে আপনার মনের আধ্যাত্নিক অবস্থা ও অবচেতন মনকে বোঝানো হচ্ছে।  প্রতিদিন সকালে উঠেই প্রথমে প্রার্থনা, ইয়োগা অথবা মেডিটেশন করুন। এতে আপনার মনের অস্থিরতা দূর হয়ে যাবে, মন সারাদিন প্রশান্ত ও পজিটিভ থাকবে।  প্রথমেই আপনার এগুলো ৩০ মিনিট বা এক ঘন্টা করে না করলেও চলবে – পাঁচ/দশ মিনিট করে শুরু করুন। কিন্তু প্রতিদিনই করুন। প্রতিদিন সকালে প্রার্থনা, ধ্যান, ইয়োগা ইত্যাদি করলে আপনার মন থেকে রাগ, অস্থিরতা, দু:শ্চিন্তা অনেকটাই দূর হয়ে যাবে।

২. ইতিবাচক ভাবনা ও ঘটনাগুলো লিখে রাখুন

ইংরেজীতে একে বলা হয় “Blessing List”পৃথিবীর অনেক সফল মানুষই এই কাজটি করে থাকেন।  ভূমিকায় বলা হয়েছিল যে আপনার চারপাশে নেতিবাচকতার পাশাপাশি অনেক ইতিবাচকতাও ঘিরে থাকে।  প্রতিদিন সকালে মেডিটেশন/প্রার্থনার পর কাগজ-কলম নিয়ে বসে আপনার জীবনের পজিটিভ দিকগুলো লিখুন।  জীবনের কোন কোন ঘটনা ও বিষয়ের জন্য আপনি জীবন ও সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞ তা এই লিস্টে লিখতে থাকুন।  প্রতিদিন জীবনের নতুন নতুন ইতিবাচক দিকগুলো ভেবে বের করুন। এতে করে আপনি প্রতিদিনই নতু করে অনুপ্রেরণা ও এনার্জি পাবেন।  এছাড়াও যখনই আপনার কাজ বা অন্যান্য ক্ষেত্র থেকে চাপ আসবে, অল্প একটু সময় বের করে সেইসব ব্যাপারের ইতিবাচক দিকগুলো লিখুন। সবথেকে ভাল হয় এসব লেখার জন্য যদি আপনি একটি জার্নাল বা ডায়েরী রাখতে পারেন।  মাঝে মাঝেই এই লেখাগুলোতে চোখ বুলান। প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য এটা করলে আপনার ফোকাস জীবনের নেতিবাচক দিকগুলো থেকে সরে এসে ইতিবাচক দিকে সরে আসবে। আপনার সবধরনের চিন্তাভাবনাই ইতিবাচক দিকে পরিচালিত হতে থাকবে।

৩. সকালে উঠেই খবর/সোশ্যাল মিডিয়ায় ডুব দেবেন না

খবরের কাগজের প্রথম পাতাগুলো বেশিরভাগ সময়েই খারাপ খবর দিয়ে ভরা থাকে।  সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতেও মানুষ বেশিরভাগ সময়ে হতাশা, দু:খ, নির্মম বাস্তবতা – ইত্যাদি নেতিবাচক বিষয় শেয়ার করে।  বর্তমানে আমাদের মাঝে অনেকেরই সকাল শুরু হয় এই দু’টোর একটি দিয়ে। ব্যাপারটাকে স্বাভাবিক মনে হলেও এইসব নেতিবাচক খবর ও কনটেন্ট আপনার অবচেতন মনে একটি নেতিবাচক প্রবাহ সৃষ্টি করে – যার ফলে আপনি নিজের অজান্তেই মন খারাপ করে ফেলেন।  আর দিনটা মনখারাপ দিয়ে শুরু হলে সারা দিনই সেই প্রভাব নিয়ে কাটে। কাজেই সকালে উঠে প্রথমেই খবর, সোশ্যাল মিডিয়া – ইত্যাদি থেকে দূরে থাকুন। মেডিটেশন, ব্যায়াম ইত্যাদি সারার পর কোনও পজিটিভ, উ‌ৎসাহমূলক বই বা আর্টিকেল পড়ুন, মন ভাল হয় এমন কিছু একটার কাছে যান।  বাগানের ফুলে পানি দিন, পোষা প্রাণীর পরিচর্যা করুন, সন্তান বা প্রিয়জনের সাথে একটু ভাল সময় কাটান। এতেকরে আপনার সারাদিন সেই পজিটিভ ও খুশি খুশি ভাবটি বয়ে বেড়াতে পারবেন। নেতিবাচকতা আপনার ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারবেনা।

৪. নিজের আশপাশের পরিবেশে ইতিবাচকতা নিয়ে আসুন

মনেকরুন আপনার দুইজন বন্ধু আছে।  এদের একজন সব সময়ে তার জীবনের ছোট থেকে ছোট বিষয়গুলো নিয়েও সব সময়ে আফসোস করে।  পৃথিবীর সবকিছু নিয়ে তার নেতিবাচক ভাবনা ও মতামত। অন্যদিকে আরেকজন সব সময়ে হাসিখুশি থাকে।  প্রতিটি বিষয়ে তার একটি ইতিবাচক ভাবনা ও মতামত আছে। অবস্থা যত খারাপই হোক সে আশা করে যে এক সময়ে না এক সময়ে সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যাবে।  তার আশপাশের সবাইকে সে সবসময়ে ইতিবাচক কথা বলে। – এখন আপনিই বলুন, কার সাথে সময় কাটাতে আপনি বেশি পছন্দ করবেন? কাকে আশপাশে রাখলে আপনার মন প্রফুল্ল থাকার সম্ভাবনা বেশি?

আমরা অনেক সময়েই বুঝতে পারিনা আমাদের আশপাশের মানুষের আচরন কিভাবে আমাদের ওপর প্রভাব ফেলে।  একজনের অনুভূতি কিভাবে ছোঁয়াচে রোগের মত আরেকজনের ভেতরে ছড়িয়ে যায়। আপনি যদি নেগেটিভ মানুষদের সাথে বেশি সময় কাটাতে থাকেন, তাহলে দেখা যাবে একটা সময়ে তাদের সেই নেগেটিভ মনোভাব আপনার ওপরও প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।  অকারনেই আপনার মন মেজাজ খারাপ হয়ে থাকবে – যার ব্যাখ্যা আপনি নিজেও দিতে পারবেন না। কিন্তু সত্যি কথা হল, এতে আপনার কোনও দোষ থাকবেনা। শুধুমাত্র আপনার আশপাশের মানুষের মনোভাবের কারনে আপনিও তাদের মত হয়ে উঠবেন।

তাই সব সময়ে চেষ্টা করুন আপনার আশপাশে ইতিবাচক মানুষদের একটি চক্র গড়ে তুলতে।  নেতিবাচক মানুষদের থেকে যত দূরে থাকবেন ততই ভাল। আর এধরনের মানুষেরা বেশিরভাগ সময়েই স্বার্থপর ধরনের হয় – এই কারনেই তারা নিজেদের নিয়ে বেশি দু:শ্চিন্তা করে।  আপনার যদি মনেহয় যে আপনি তাদের থেকে দূরে সরে গিয়ে স্বার্থপরতা করছেন – তাহলে ভুল করবেন। আপনি স্বার্থপরদের শিকার হওয়া থেকে বাঁচার জন্যেই দূরে সরে যাচ্ছেন। নিজেদের স্বার্থে টান পড়লে এসব মানুষ এক মূহুর্তের জন্যও আপনার কথা ভাববে না।

নেতিবাচক মানুষের বাইরেও আরও কিছু পরিবেশগত ব্যাপার আপনার মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।  অতিরিক্ত ভায়োলেন্স পূর্ণ সিনেমা, পোস্টার, গল্প-উপন্যাস – ইত্যাদিও মানুষের অবচেতন মনে বিরূপ প্রভাব ফেলে – কাজেই ইতিবাচক পরিবেশের জন্য এগুলো থেকেও যথা সম্ভব দূরে থাকুন।

৫. মনকে সচল রাখুন

একটি মন যখন সচল থাকে তখন সেই মনে তেমন কোনও নেতিবাচক ভাবনা আসতে পারে না।  আপনার জীবনের একটি লক্ষ্য স্থির করুন, এবং প্রতিদিন সেই লক্ষ্যে কাজ করে যান।  সমস্যার জায়গায় সমাধানের দিকে ফোকাস করুন। সমাধানের পদ্ধতির দিকে ফোকাস করুন। সমস্যা নিয়ে চিন্তা করলে কোনও লাভ হয়না।  সমাধানের দিকে ফোকাস করে সেই অনুযায়ী কাজ করলে সমস্যা এমনিতেই মিটে যাবে। মনকে সব সময়ে পরিকল্পনা ও জ্ঞান অর্জনে ব্যস্ত রাখুন।  সব সময়ে নতুন কিছু শেখার জন্য মনকে খোলা রাখুন। যে বিষয়ে আপনি দক্ষ আছেন, বা হতে চান – সেই বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করুন অথবা টিউটোরিয়াল দেখুন।  – মোটকথা মনকে ভাল কাজে ব্যস্ত রাখুন, শেখায় ব্যস্ত রাখুন। নেতিবাচকতা আপনার ওপর প্রভাব ফেলার সময়ই পাবে না।

পরিশিষ্ট:

প্রতিদিন এই পাঁচটি কাজ করুন।  এগুলো শৃঙ্খলার সাথে করতে পারলে আপনার প্রতিটি দিন দারুন ইতিবাচকতার মধ্যদিয়ে কাটবে।  এরফলে আপনি আরও ভালভাবে আপনার কাজগুলো করতে পারবেন। জানাকে যদি মানায় রূপান্তর না করতে পারেন, তবে যতই জানুস, কোনও লাভ নেই।  প্রথম পদক্ষেপ না নিলে সামনে এগুনো শুরু করা যায় না। কাজেই আপনার যদি মনেহয় যে আপনার মনের নেতিবাচকতাগুলো আপনি প্রতিদিন দূরে সরিয়ে রাখতে চান – তাহলে পরখ করে দেখার জন্য হলেও এই পদক্ষেপগুলো প্রতিদিন অনুসরন করুন।


লেখাটি কেমন লাগলো তা আমাদের কমেন্টে জানান। ভাল লাগলে লাইক ও শেয়ারের মাধ্যমে আমাদের উ‌ৎসাহিত করুন। সাফল্যের পথে লড়াকু সব সময়ে আপনার সাথে আছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন !

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *