অসাধারন সাফল্যের গোপন সূত্র: “অনিচ্ছায় কাজ করুন!!”


একনজরে লেখাটির বিষয়ে:

আমাদের অনেক সময়েই এমনটা হয় যে কোনও একটা কাজ করতে করতে একঘেয়েমিতে পেয়ে বসে। অথবা কোনও কোনও দিন এমন যায় যে কিছুই করতে ভাল লাগেনা। সাধারনত আমরা এমন পরিস্থিতিতে কাজে ঢিল দিয়ে দিই, অথবা একদমই কাজ বন্ধ করে দিই।  আর এটা খুবই সাধারন ব্যাপার। কিন্তু যদি আপনি জীবনে অসাধারন সাফল্য অর্জন করতে চান, তবে আপনাকে এই বাধাটিকে জয় করতে হবে।  কেন এই বাধাটিকে জয় করতে হবে, এবং তা কিভাবে করা যায় – সেই বিষয়েই আলোচনা করব এই লেখায়।


আপনি হয়তো ঠিক করেছেন, আগামী এক বছরে আপনার ব্যবসাটিকে, বা আপনার ক্যারিয়ারকে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে যাবেন। এবং এর জন্য প্রতিদিনের একটি পরিকল্পনাও আপনার আছে। কিন্তু আপনি যেহেতু একজন মানুষ, মেশিন নন, সেহেতু মাঝে মাঝে ক্লান্তি, অবসাদ, বা অতি সাধারন একঘেয়েমি আপনাকে পেয়ে বসতেই পারে। এতে করে কাজে একটু ঢিল পড়েই যায়। কাজ করতে ভাল না লাগলে কি আর কাজে মন বসে? – না করতে ভাল লাগে? কিন্তু আপনাকে যদি সাধারন মানুষের চেয়ে বেশি সাফল্য অর্জন করতে হয়, অথবা অসাধারন একজন মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হয় – তবে আপনাকে সাধারন মানুষের মত হলে চলবে না। একজন সাধারন মানুষ যখন ক্লান্তি বা একঘেয়েমির কারনে কাজ থেকে সাময়িক ভাবে দূরে চলে যাবে – আপনাকে তখন সেই কাজে আরও বেশি মনযোগ দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। মন না চাইলেও কাজ করে যেতে হবে।

hello-bcs-041223-1 (1)

৪৬ তম বিসিএস পরিপূর্ণ প্রস্তুতি

বর্তমানে অংশগ্রহণ করেছেন 620 জন

জয়েন করুন

মাঝে মাঝে এমন সময় আসবে যখন মনে হবে “এতসব করে লাভ কি?”

এই নেগেটিভ বা নেতিবাচক কথাটি সবার মাথাতেই আসে।  কাজ করতে করতে যখন একঘেয়েমি চরম সীমায় পৌঁছে যায়, তখন মস্তিষ্ক চায় কাজ থেকে একটু দূরে সরতে।  বিশেষ করে আপনি যখন কোনও লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশ্যে কেবল কাজ শুরু করেছেন, আপনাকে অনেক খাটনি করতে হচ্ছে, কিন্তু কোনও রকম ফলাফল দেখতে পাচ্ছেন না – তখনই আপনার মাথার ভেতরে এই কথাটি ঘুরপাক খেতে থাকে।

যে কোনও বড় লক্ষ্য পূরণের শুরুতে এমনটা হওয়া খুবই স্বাভাবিক। একটি কাজ শুরু করলে একটা সময় পর্যন্ত তেমন কোনও ফলাফল চোখে পড়বেনা – এটা সফল মানুষ মাত্রই জানেন। কারন তাঁদের প্রত্যেকেরই এই অভিজ্ঞতা আছে।  আর এই সময়টাতে কাজের আগ্রহ ও উদ্দীপনা একদম শূণ্যের কোঠায় নেমে আসে – আর মনে হতে থাকে যে কাজটি করে আসলে কোনও লাভ নেই। শুধুশুধুই এত কষ্ট করা হচ্ছে।  এই সময়টিতেই মানুষ হাল ছেড়ে দেয়। এই অনুভূতি বা মাথার ভেতরে চলতে থাকা কথার কারনে কত যে সম্ভাবনাময় উদ্যোগ অঙ্কুরেই ঝরে গেছে- তার কোনও হিসেব নেই।

আপনাকে মনে রাখতে হবে, এটি একটি ফাঁদ। এই ফাঁদে একবার আটকে গেলে একটি দিনের কাজ তো বটেই, পুরো একটি পরিকল্পনাও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কাজেই যখনই এমন কথা মনে হবে, জোর করে হলেও কাজ করে যান।  হয়তো মাথা ফ্রেশ করার জন্য কয়েক মিনিটের বিরতি নিতে পারেন, বা একটু বিনোদন করতে পারেন – তবে কাজ কোনওভাবেই বন্ধ করবেন না।  ইতিবাচক মানুষদের মনেও নেতিবাচক চিন্তা আসে। কিন্তু সাধারন মানুষের থেকে তাঁদের পার্থক্য হলো, তাঁরা এসব চিন্তাকে দূরে সরিয়ে নিজের লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে যান।

কাজের থেকে কাজের অভ্যাসটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ

মনে করুন আপনার লেখার হাত অসাধারন, অথবা আপনি খুব চম‌ৎকার প্রোগ্রামিং জানেন, বা মার্কেটিং এ আপনার দারুন জ্ঞান। এখন আপনার এই জ্ঞান ও প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে সাফল্য অর্জন করতে হলে আপনাকে নিয়মিত এগুলোর চর্চা করতে হবে, এবং এগুলোকে কাজে লাগিয়ে আপনার এমন কিছু বানাতে হবে যা মানুষের কাজে লাগে এবং আপনাকে সাফল্য এনে দেয়।

কিন্তু আপনি যদি মাসে একদিন বা দুইদিন একটু লেখালেখি করলেন, বা একটু প্রোগ্রামিং করলেন, বা অন্যকিছু করলেন- তাতে আপনার কোনও ধরনের সাফল্য আসবে না। এমনকি আপনি বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে প্রতিভাধর লেখক, শিল্পী, বিজ্ঞানী বা অন্য যা-ই হোন না কেন নিয়মিত কাজ না করলে আপনার প্রতিভা আপনাকে সাফল্য এনে দেবে না।  সফল হতে গেলে যে কোনও একটি বিষয়ে আপনাকে দক্ষ হতে হবে, এতে কোনও সন্দেহ নেই, কিন্তু দক্ষতার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ সেই দক্ষতার চর্চাকে একটি নিয়মিত অভ্যাসে পরিনত করা।

action, adult, agility

লক্ষ্য অর্জনের পথে অবিচল থাকাটাই এই প্রক্রিয়ার সবচেয়ে কঠিন কাজ।  আপনি যখন প্রতিদিন আপনার লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করবেন, তখন স্বাভাবিক ভাবেই কোনও কোনও দিন কাজ করতে ভাল লাগবে, কোনও কোনও দিন লাগবে না।  কোনও দিন আপনি দারুন কাজ করবেন, কোনওদিন কাজ একদমই ভাল হবে না।  এটা খুবই স্বাভাবিক যে প্রতিটি দিন এক রকম হবে না। কিন্তু কাজ যেমনই হোক, আপনাকে প্রতিদিন কাজটি করতে হবে।  আপনি হয়তো সব সময়ে কাজের ফলাফল নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। কিন্তু আপনি চাইলে প্রতিদিন আপনার দক্ষতাটিকে অনুশীলন করতে পারবেন। এই অভ্যাসই আসলে বড় বড় সাফল্য আনার পেছনের প্রধান একটি কারন।

আপনার সেরা কাজটি সবচেয়ে খারাপ দিনটিতে বের হয়ে আসতে পারে

আপনি কখনও বলতে পারবেন না, কোন দিনটিতে আপনি আপনার সেরা পারফর্মেন্সটি দিতে পারবেন।  আপনি যখন অভ্যাসের বশে প্রতিদিন একটি কাজ করার মানসিকতা বানিয়ে ফেলতে পারবেন। এবং যা-ই ঘটুক এবং কাজ যেমনই হোক – এই সব ব্যাপার মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে কাজটি করতে থাকবেন – তখনই আপনার সৃষ্টিশীলতা সবচেয়ে সেরা পর্যায়ে চলে যাবে।  অভ্যাস ও দক্ষতাটি আপনার নিজের একটি অংশ হয়ে যাবে।  আর এমনটি হলে, এমনকি যে দিনটিতে আপনার কাজ করতে ইচ্ছে করবে না, সেই দিনটিতেও আপনার সেরা কাজটি বের হয়ে আসতে পারে।

agriculture, backyard, blur

সব সময়ে খুব বেশি সিরিয়াস হয়ে কাজ করলে আপনার মাঝ থেকে সৃষ্টিশীলতা নেই হয়ে যেতে পারে। তাই মাঝে মাঝে শুধুমাত্র অভ্যাসের বশে কাজ করুন।  যদি মনেহয় আজ কাজ করলে কাজ ভাল হবে না, তবুও কাজ করুন। দেখা যাবে, হয়তো এই ‘খারাপ’ দিনটিতেই আপনার জীবনের সেরা কাজটি বের হয়ে এসেছে। আগের পয়েন্টের কথাটি আরও একবার বলছি: কাজের থেকেও কাজের অভ্যাসটি বেশি জরুরী।

পরিশিষ্ট:

পৃথিবীতে সাহিত্যিক, পদার্থবিদ, রসায়নবিদ, চিকি‌ৎসাবিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদের কোনও অভাব নেই।  আর এগুলো হতে গেলে নূন্যতম একটি পর্যায়ের জ্ঞান, প্রতিভা ও পড়াশুনার প্রয়োজন হয়। সাধারন বা গড়পড়তা মানুষ এগুলো হতে পারে না।  কিন্তু এঁদের মধ্যে থেকেও সবাই কিন্তু নোবেল পুরুস্কার পায় না।  অসাধারন অর্জনের জন্য একটু বাড়তি চেষ্টা, একটু বাড়তি মনযোগের প্রয়োজন হয়।  একজন নোবেল বিজয়ী গবেষকের সহকর্মীরা যখন বেড়াতে যান বা অন্য কোনও ভাবে সময় কাটান, তখন সেই গবেষকটি তখনও তাঁর ল্যাবে বা লাইব্রেরিতে সময় কাটান। হয়তোবা তাঁরও ইচ্ছে করে সহকর্মীদের মতো একটু বিলাসী সময় কাটাতে, কিন্তু তাঁর লক্ষ্যের প্রতি টান তাঁকে কাজে ধরে রাখে।  এই একটু বাড়তি চেষ্টা, মন না চাইলেও কাজ করার প্রয়াসই Good কে Great এ পরিনত করে।  

হ্যাঁ এই কাজটি মোটেও সহজ নয়।  নিজের মানসিক শক্তি, এবং কখনও কখনও শারীরিক শক্তির চরম পরীক্ষা দিতে হয় এই ক্ষেত্রে – কিন্তু দিনশেষে এটাই আপনাকে অন্যদের থেকে অনেক বেশি উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

যেই দিনটিতে আপনি সবচেয়ে বেশি কষ্ট করবেন, বুঝে নেবেন, সেইদিনটিতে আপনি আপনার নিজেকে ছাড়িয়ে গেলেন।  অসাধারন সাফল্য সাধারন মানুষের কর্মসীমার ঠিক অপর পাশেই অপেক্ষা করে। সাধারন মানুষ যেখানে থেমে যায়, অসাধারনের যাত্রা সেখান থেকে কেবল শুরু হয়। এভাবে কাজ করলে প্রতিবার আপনি নিজের সীমাবদ্ধতাকে একটু একটু করে ছাড়িয়ে যাবেন। অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিজের লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশ্য কাজ করে যাওয়া আপনাকে একজন সাধারন মানুষের থেকে অসাধারন মানুষে পরিনত করবে।


লেখাটি কেমন লাগলো, তা আমাদের কমেন্ট করে জানান। আপনার প্রতিটি মতামতই আমাদের জন্য অমূল্য। আর যদি মনে হয় লেখাটি সত্যিই মানুষের কাজে লাগবে, তাহলে শেয়ার করে অন্যদের দেখার সুযোগ করে দিন।  অনুপ্রেরণা ও আত্ম উন্নয়ন মূলক এমন আরও লেখা পেতে লড়াকুর সাথে থাকুন।  সাফল্যের পথে প্রতিটি পদক্ষেপে লড়াকু আপনার সাথে আছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন !