ব্যবসা বানিজ্য নিয়ে বইয়ের কোনও অভাব নেই। হাজার হাজার বই বাজার আর লাইব্রেরিতে উপচে পড়ছে। বড় বড় ব্যবসায়ী, গবেষক, অর্থনীতিবিদ, চার্টার্ড এ্যাকাউন্টেন্ট, মার্কেটিং গুরু – সবাই বই লিখে চলেছেন। আর সেইসব বই পড়ে মানুষ উপকারও পাচ্ছে। কিন্তু এই সব বইগুলিতেই কিছু কথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বারবার বলা হয়েছে, যেগুলো আসলে ব্যবসার মূল কথা। পার্সোনাল এমবিএ বইতে লেখক সেগুলোই তুলে এনেছেন, যা আমরা এই লেখায় সংক্ষেপে আপনার সামনে তুলে ধরব।
ছোটবেলায় আশপাশের মানুষজনের থেকে আমরা পড়তে বসার কথা যতবার শুনেছি, শুধুমাত্র খাওয়া আর ঘুমাতে যাওয়ার কথাই তার সাথে রেসে নামতে পারবে। ‘বাবু পড়তে বসো’, ‘সোনা, পড়তে বসো’ – এই গেল বাবা-মায়ের মেজাজ ভাল থাকা অবস্থায় বলা। তাঁদের মেজাজ খারাপ হলে ‘বাবু’ বা ‘সোনা’র জায়গায় আরও অনেক কিছু জায়গা করে নিত।
ছোটবেলার পরে একটা সময়ে এসে আমরা নিজেরাই নিজেদের ঠেলে পড়তে বসিয়েছি। পড়তে পড়তে অনেকের মাথার চুল সব পড়ে গেছে। যারা ভালমত পড়াশুনা করেছেন তারা অনেকেই তাদের মনের চাহিদামত কাজ ও অর্থ অর্জন করতে পেরেছেন, অনেকে হয়তো পারেননি। এই পড়াশুনা করতে গিয়ে কত কোটি কোটি শব্দ মুখস্থ করতে হয়েছে, কত বিদঘুটে ফর্মূলা আর থিওরি – এর কোনও গোনাবাছা নেই। – কিন্তু ‘শিক্ষিত’ হওয়ার জন্য এতকিছু পড়া ও মুখস্থ করা কি আমাদের দরকার ছিল?
বিজনেস আইকন এবং বেস্ট সেলার লেখক জশ কম্ফম্যান তাঁর একাডেমিক পড়াশুনা শেষ করেন প্রযুক্তি বিষয়ে। পড়াশুনায় তিনি খুবই ভাল ছিলেন এবং পাশ করে বের হওয়ার সাথে সাথে তাঁর চাকুরী হয় বিশ্বখ্যাত কোম্পানী “Procter and Gamble” এ। সেখানে কাজ করার সময়ে তিনি দেখলেন তাঁর কলিগদের মধ্যে যারা কোম্পানীর সবথেকে বড় পর্যায়গুলোতে আছেন, তাদের প্রায় সবাই বড় বড় কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করা। তিনি আরও একটি বিষয় বুঝতে পারলেন যে তাঁকে যদি কখনও নিজের কোনও ব্যবসা দাঁড় করাতে হয়, তবে অবশ্যই তাঁর মার্কেটিং এবং ব্যবসার ওপর খুব ভাল জ্ঞান থাকতে হবে।
তাঁর মাথার মধ্যে এই চিন্তা ঘুরপাক খেতে থাকল যে তাঁকে যেভাবেই হোক এই বিষয়গুলোর ওপর দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
তিনি প্রথমে ভাবলেন তাঁর সহকর্মীদের মত তিনিও একটি ভাল প্রতিষ্ঠান থেকে এমবিএ ডিগ্রী নেবেন। কিন্তু কিছু খোঁজ খবর ও গবেষণা করার পর তিনি বুঝতে পারলেন কলেজ গুলোতে আসলে তেমন কিছু শেখানো হয় না। সেখানে মানুষ শুধুই একটি ডিগ্রী নেয়ার জন্য বেশিরভাগ মানুষ পড়তে যায়। তাই তাঁর হিসেবে মনেহল কলেজে এমবিএ করতে যাওয়াটা শুধুই সময় এবং টাকার অপচয় হবে।
কাজেই তিনি কলেজে ভর্তি হওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে তাঁর বাসার কাছের এক লাইব্রেরিতে গিয়ে সেখানে ব্যবসার ওপর যত বই আছে সব পড়তে শুরু করলেন।
একটি, দুইটি করে একসময়ে তিনি দেখলেন তিনি একশ’র ওপরে ব্যবসায়িক বই পড়ে ফেলেছেন। এর ফলে একটা সময়ে এমন হল যে ব্যবসার বিষয়ে তাঁর জ্ঞান তাঁর বড় বড় ডিগ্রী ওয়ালা সহকর্মীদের থেকে তো অনেক বেশি হয়ে গেলই, এমনকি তাদের প্রফেসরদের থেকেও তাঁর জ্ঞান বেড়ে গেল।
কিন্তু তার থেকেও বড় যে আবিষ্কারটি তিনি করলেন তা হল, এইসব বইয়ের মাঝে এমন কিছু কথা আর তথ্য আছে যা প্রায় প্রতিটি বইতেই ঘুরে ফিরে বিভিন্ন ভাবে বলা আছে। তাঁর কাছে এই ব্যাপারটি স্পষ্ট হয়ে উঠল যে, যেসব কথা আর তথ্য বারবার তাঁর সামনে পড়ছে – এগুলোই আসলে ব্যবসার সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। ৮০/২০ তত্ত্বের ভিত্তিতে বিচার করে তিনি সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন যে ব্যবসা করতে গেলে এই ২০% জ্ঞানই ৮০% সাফল্য আনার জন্য যথেষ্ঠ। তাই তিনি সেই বারবার পূনুরাবৃত্তি হওয়া তথ্য ও থিওরিগুলো এক জায়গায় করে “The Personal MBA” নামে একটি বই লিখলেন। এখানে সেই বইয়ের মূল বিষয়গুলোই আপনাদের সামনে আমরা তুলে ধরব।
The Personal MBA:
আপনি হয়তো জশ কফম্যানের আরও একটি বিখ্যাত বইয়ের কথা শুনেছেন যার নাম “The First 20 Hours” – এই বইতে তিনি লিখেছেন যে কিভাবে আপনি যা-ই শিখতে চান না কেন আপনার জীবনের মাত্র ২০ ঘন্টা ব্যয় করে আপনি তা শিখতে পারবেন। তা সে গীটার শেখাই হোক, আর সাঁতার। তাঁর এই বইটির পরামর্শ কাজে লাগিয়ে অনেকেই ২০ ঘন্টায় অনেক কিছু শিখে গেছেন। ইন্টারনেট জুড়ে অসংখ্য রিভিউ আপনি খুঁজলেই পাবেন।
Personal MBA ও সেরকমই একটি বই। এই বই থেকে শিখে অনেকেই বিজনেসের ছাত্র না হয়েও ব্যবসায় নেমে সফল হয়েছেন। সে কারনেই অল্পদিনেই বইটি বিশ্বজোড়া এতটা খ্যাতি পেয়েছে। চলুন জেনে নিই এই বইতে কি আছে আর কিভাবে তা আপনার ব্যবসার জ্ঞানকে বাড়াতে পারে।
শত শত বই পড়ে কফম্যান যেসব বিশেষ জ্ঞান পেয়েছিলেন, সেগুলোকে তিনি পাঁচটি ফ্রেমওয়ার্কে ভাগ করেছেন।
০১. এমন কোনও পন্য বা সেবা সৃষ্টি করা যা মানুষের কাজে লাগে (Value Creation)
০২.প্রচার (Marketing)
০৩. বিক্রয়
০৪. কথা ও কাজে মিল (value delivery)
০৫. অর্থ (Finance)
জশের মতে কোনও ব্যবসায় যদি এই পাঁচটি থেকে একটিও বাদ পড়ে তবে তা কোনও ব্যবসাই নয়। কারন আপনি যদি এমন কোনও কিছু তৈরীই করতে না পারেন যা অন্যের কাজে লাগে, তাহলে তা পন্য বা সেবা না হয়ে আপনার ব্যক্তিগত শখ হিসেবে বিবেচিত হবে। যে ব্যবসার মার্কেটিং ঠিক নেই তা একটি ফ্লপ ব্যবসা হবে। যে ব্যবসার পন্য বা সেবা বিক্রী হয়না, তাতে কোনও লাভও হয় না। আপনি যে ধরনের পন্য বা সেবা দেয়ার কথা বলছেন, আপনার ক্রেতারা যদি তা না পায়, তবে তা প্রতারণা। আর যে ব্যবসায় আপনার অর্থ আসবে না, তা অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে।
তাহলে বুঝতেই পারছেন এই পাঁচটি ফ্রেমওয়ার্কই একটি ব্যবসার মূল।
চলুন তাহলে এই পাঁচটি ফ্রেমওয়ার্ককে আমরা আরও একটু বিস্তারিত ভাবে জেনে নিই, যাতে করে এগুলো কাজে লাগিয়ে আপনি আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে একটি লাভজনক ও সফল প্রতিষ্ঠানের রূপ দিতে পারেন।
০১. এমন কোনও পন্য বা সেবা সৃষ্টি করা যা মানুষের কাজে লাগে (Value Creation):
এই পর্যায়ে আপনার নিজেকে প্রথমে যে প্রশ্নটি করতে হবে তা হল – “আমি যে পন্য বা সেবা মানুষকে দিতে চাচ্ছি তা কি আসলেই কারও কোনও কাজে আসবে?” – কারন কোনও ব্যবসাকে সফল হতে হলে তার সবথেকে প্রথমে যা দরকার তা হল, আপনার পন্য বা সেবার মাধ্যমে মানুষ যত উপকৃত হবে, তারা ততই আপনাকে আপনার পন্য বা সেবার পেছনে টাকা খরচ করতে উৎসাহিত হবে, যার অর্থ আপনার ব্যবসা সফল হবে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আপনি একটি ছোট জুসের দোকান খুলে কখনওই বিল গেটস এর মত ধনী হতে পারবেন না। কারন একটি জুসের দোকান থেকে কয়েকশ থেকে হাজার খানেক লোক বড়জোর উপকার পাবে, কিন্তু গেটস সাহেব এমন কিছু করেছেন যার ফলে কম্পিউটার শুধু বড় বড় সব সরকারি প্রতিষ্ঠান ও ইন্ডাস্ট্রির কাছে থাকার বদলে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে।
কোটি কোটি মানুষ তাঁর ব্যবসায়ের পন্য এবং সেবা থেকে উপকার পাচ্ছে আর সেই কারনেই তিনি একাধিক বার পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধনীর তালিকায় এক নম্বরে উঠতে পেরেছেন। তিনি এটা সম্ভব করতে পেরেছেন কারন তিনি বেশি সংখ্যক মানুষের কাজে লাগে এমন পন্য ও সেবা সৃষ্টি করতে পেরেছেন। তো, এক কথায়, আপনি যত বেশি মানুষের জীবনকে সহজতর ও উপভোগ্য করতে পারবেন আপনার ব্যবসার মাধ্যমে, আপনার ব্যবসা ততই সফল হবে।
০২. প্রচার (Marketing):
আপনি হয়তো এই তথ্যটি জানেন যে প্রতি বছর সারা পৃথিবীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো মিলে শুধুমাত্র শুধুমাত্র শিশুদের জন্য বানানো পন্যের প্রচারের পেছনে প্রায় ১৫০০ কোটি মার্কিন ডলার অর্থাৎ ১২ লক্ষ কোটি টাকা খরচ করে! তাহলে বুঝতেই পারছেন ব্যবসার জন্য প্রচার কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্বখ্যাত অনলাইন অর্থ লেনদেনকারী কোম্পানী পে-পাল এর সহ প্রতিষ্ঠাতা পিটার থেইল তাঁর “Zero to One” বইতে লিখেছেন “একটি খারাপ পন্যও ভাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে প্রাথমিক ভাবে বেশ ভাল বিক্রী হতে পারে, কিন্তু একটি ভাল পন্যও খারাপ মার্কেটিং এর কারনে বিক্রী না হয়ে পড়ে থাকতে পারে” – এর কারনটা খুবই সহজ। কারন আপনি যদি একটি খুব ভাল পন্য বানিয়েও সেটিকে ঘরে ফেলে রাখেন তাহলে তার ব্যাপারে কেউ কিছু জানবে না, এবং যদি কেউ না-ই জানে তাহলে তারা কিভাবে তা কিনবে?
এই কারনেই আপনার পন্য বা সেবাকে মানুষের সামনে নিয়ে আসাটা খুবই জরুরী।
ব্যবসার প্রচারের সময়ে আপনাকে আরও একটি জরুরী ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে, আর তা হল আপনার পন্য বা সেবাটি আপনি সঠিক মানুষদের কাছে প্রচার করছেন – এটি নিশ্চিত করা। ভেবে দেখুন যার বাড়িতে কোনও বাচ্চা নেই তার কাছে আপনি আপনার কোম্পানীর বানানো সেরা ফিডারটির প্রচার করে কি লাভ পাবেন?
০৩. বিক্রয় (Sales):
পন্য বা সেবা তৈরী ও তার প্রচার করার পর যে ব্যাপারটি সবথেকে জরুরী তা হল বিক্রয়।
মানুষ ততক্ষন আপনার পন্য বা সেবা গ্রহণ করবে না যতক্ষণ না এর ওপরে তারা আস্থা (Trust) পাচ্ছে।
ধরুন আপনি কলম্বিয়া বা উগান্ডার মত একটি দেশে বেড়াতে গেছেন। যেখানে অপরাধের মাত্রা প্রবল। ঘুরতে ঘুরতে আপনার মারাত্মক ক্ষুধা পেয়ে গেল এবং আপনি আপনার সামনে দু’টি রেস্টুরেন্ট দেখতে পেলেন। একটির সাইনবোর্ডে স্থানীয় ভাষায় কিছু হিজিবিজি লেখা যার মাথামুন্ডু কিছুই আপনি বুঝতে পারছেন না, শুধু খাবারের ছবি আর কাঁচের ভেতর দিয়ে ভেতরের পরিবেশ দেখে বুঝতে পারছেন সেটি একটি রেস্টুরেন্ট। অন্যটিতে আপনি লেখা দেখলেন “ম্যাকডোনাল্ডস” – আপনি কোনটিতে ঢুকবেন? বেশিরভাগ মানুষই ম্যাকডোনাল্ডস এ ঢুকবে, কারন তারা বছরের পর বছর ধরে মানুষের মাঝে একটি বিশ্বাসের জায়গা বানিয়ে নিতে পেরেছে। খুব সম্ভবত আপনি ধরে নেবেন ম্যাকডোনাল্ডসেই আপনি সেরা ও নিরাপদ খাবারটি পাবেন, যদিও বাস্তবে এমনও হতে পারে যে পাশের ঐ হিজিবিজি রেস্টুরেন্টটি ম্যাকডোনাল্ডস এর থেকেও হাজার গুনে ভাল ও নিরাপদ খাবার বিক্রী করছে।
এই কারনে আপনার পন্য, সেবা ও ব্র্যান্ডের ওপর আপনার ক্রেতাদের বিশ্বাস ও আস্থা জন্মানোটা খুবই জরুরী। মানুষ আপনাকে যত বেশি বিশ্বাস করবে, আপনার ব্যবসা তত বেশি সফল হবে। অন্যান্যদের থেকে আপনার পন্যের মূল্য বেশি হলেও মানুষ আপনার পন্যই কিনবে বা আপনার সেবাই গ্রহণ করবে, কারন তারা আপনার পন্য বা সেবার ওপর আস্থা রাখে।
০৪. কথা ও কাজে মিল (value delivery):
প্রচারের কথা বলতে গিয়ে পিটার থেইলের বইয়ের উদাহরণ টেনেছিলাম, মনে আছে? সেখানে কিন্তু একটি কথা বলা আছে যে ভাল প্রচার দিয়ে আপনি ‘প্রাথমিক ভাবে’ হয়তো একটি খারাপ পন্যেরও ভাল বিক্রয় করতে পারেন। এই ‘প্রাথমিক ভাবে’ কথাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার কারন আপনার দারুন মার্কেটিং এর কারনে মানুষ প্রথমবার পন্যটি কেনার পর যখন দেখবে যে আপনি যা বলেছেন – আপনার পন্য বা সেবাটি আসলে সেরকম নয় – তাহলে কিন্তু তারা দ্বিতীয় বার আপনার পন্যটি কিনবে না, তার উপর তাদের কাছের মানুষদের আপনার পন্য বা সেবার ব্যাপারে সতর্কও করে দেবে।
এই ব্যাপারটি অবশ্যই আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে আপনার পন্য বা সেবা যারা গ্রহণ করছেন তাঁরা যেন তাঁদের আশার থেকে বেশি যদি না-ও পারেন, কমপক্ষে আপনি আপনার প্রচারে যা বলেছেন, সেই আশাটা যেন পূরণ হয়। না হলে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আপনার ক্রেতারা আপনার প্রতিষ্ঠানের ওপরে আস্থা হারিয়ে ফেলবে।
ধরুন আপনি একটি অনলাইন শপে একটি পন্যের অর্ডার দিয়েছেন, যেখানে আপনাকে জানানো হয়েছে যে পন্যটি আপনার কাছে পৌঁছতে ছয় দিন সময় লাগবে। কিন্তু যখন আপনার কাছে দুই দিনের মধ্যেই পন্যটি পৌঁছে যাবে তখন কিন্তু আপনি অনেক বেশি খুশি হয়ে যাবেন। অন্যদিকে পন্যটি যদি আপনার কাছে পৌঁছতে আট-দশদিন সময় লাগিয়ে ফেলে – তাহলে কিন্তু আপনার মনোভাব সেই শপের ওপর স্বাভাবিক ভাবেই খারাপ হয়ে যাবে। আপনি যদি এমন একটি অনলাইন শপ চালান তাহলে সময়ের আগে না হোক, অন্তত যে সময়ের কথা ক্রেতাকে বলা হয়েছে, সেই সময় শেষ হওয়ার আগেই যেন পন্যটি ডেলিভারি পায় তা নিশ্চিত করতে হবে।
০৫. অর্থ (Finance):
Value Delivery করার পর আপনাকে যে বিষয়টি খেয়াল করতে হবে তা হল পন্য বা সেবা বিক্রী করে আপনার যথেষ্ঠ অর্থ আয় হচ্ছে কি না। অর্থাৎ আপনার খরচের থেকে বেশি টাকা আপনার আসছে কি না।
প্রথম চারটি ফ্রেমওয়ার্ক আপনি যত ভাল ভাবেই পূরণ করুন না কেন, দিনশেষে যদি আপনার আর্থিক লাভ না আসে, তাহলে জলদিই আপনার ব্যবসাটি বন্ধ হয়ে যাবে।
লেখক আপনার আর্থিক লাভ বাড়ানোর জন্য দু’টি পরামর্শ দিয়েছেন। হয় আপনি প্রথম চারটি ফ্রেমওয়ার্কের কিছু কিছু খরচ কমিয়ে ফেলুন, অথবা আপনি আপনার পন্যের মান আরও বাড়ান এবং সেই অনুযায়ী প্রচার করে সেগুলোকে বিক্রী করুন, পন্যের বা সেবার মান এতটাই ভাল পর্যায়ে নিয়ে যান যেন আপনার ক্রেতারা আপনার পন্যের দাম একই ধরনের অন্য পন্যের দামের তুলনায় একটু বেশি হলেও আপনার পন্যকেই বেছে নেয়।
পরিশিষ্ট:
এই পাঁচটি ফ্রেমওয়ার্ককে মাথায় রেখে লেখক ব্যবসার একটি সহজ সংজ্ঞা দিয়েছেন : “ব্যবসা হলো এমন একটি জিনিস যার মাধ্যমে আপনি মানুষের সত্যিকার কাজে লাগে এমন কোনও পন্য বা সেবা প্রস্তুত করেন, সেই পন্যের সেই প্রয়োজন এতটাই যে তার জন্য মানুষ আপনাকে টাকা দেয়ার জন্য তৈরী থাকে, টাকা দিয়ে কেনার পর ক্রেতারা তাদের আশা অনুযায়ী পন্য বা সেবা পেয়ে খুশি থাকেন, এবং এসব করার ফলে আপনি আর্থিক ভাবে লাভবান হন। যার ফলে আপনার ব্যবসা ভালভাবে চালিয়ে নিতে পারবেন।
লেখকের মত এই কয়েকটি সাধারন বিষয়ের ওপর খেয়াল রাখলে যে কোনও ব্যবসাতেই সফল হওয়া সম্ভব। এটা ঠিক যে প্রতিটি ব্যবসারই নিজস্ব ধরন আছে, যার জন্য আলাদা আলাদা কৌশল ও জ্ঞানের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই ফ্রেমওয়ার্কটি সব ধরনের ব্যবসাতেই খাটে।
এই ফ্রেমওয়ার্ক আপনাকে হয়তো সব ব্যবসার বিষয়ে সব প্রশ্নের উত্তর দেবে না, কিন্তু এই কৌশল মেনে চলে আপনি সব সময়ে আপনার ব্যবসার জন্য সঠিক প্রশ্নগুলো নিজেকে করতে পারবেন, এবং সেগুলোর উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই আপনি নিজের ব্যবসাকে সাফল্যের পথে নিয়ে যাবেন।
লেখাটি কেমন লেগেছে তা আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন। যদি আপনার মনে হয় লেখাটির ফলে নতুন উদ্যোক্তারা উপকৃত হবেন, তাহলে শেয়ার করে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিন। আপনার প্রতিটি মতামত আমাদের কাছে অমূল্য পাথেয়। লড়াকুতে কি ধরনের লেখা আরও বেশি বেশি দেখতে চান, সেই ব্যাপারে পরামর্শ দিন। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব। সাফল্যের পথে প্রতিটি মূহুর্তে লড়াকু আপনার সাথে আছে, কারন আপনার সাফল্যেই আমাদের স্বার্থকতা।