অন্যকে দিয়ে কাজ করানোর প্রয়োজনীয়তা:
একজন মানুষের পক্ষে একা একসাথে তিন-চারটি কাজ করা সম্ভব নয়। তিনি যতই প্রতিভাবান ও দক্ষ হোন না কেন, একজন মানুষ যদি একই সময়ে একাধিক কাজ করতে যান – তবে সেই কাজটি ভালো হবে না। কিন্তু অনেক সময়ে একসাথে বেশ কিছু কাজ করার প্রয়োজন হয়, এবং সেক্ষেত্রে অন্যের সাহায্য নেয়া ছাড়া উপায় থাকে না।
মনে করুন আপনি একটি কোম্পানীর সিইও। আপনাকে প্রোডাকশনও দেখতে হচ্ছে, মার্কেটিং এর ওপরও নজর রাখতে হচ্ছে, সেইসাথে বাইরের ক্লায়েন্ট এর সাথেও যোগাযোগ রাখতে হচ্ছে। আপনি এই কাজের দায়িত্বগুলো অনেকের মাঝে ভাগ করে দিলেও প্রতিটি কাজের ওপর আপনাকে নজর রাখতে হচ্ছে, যাতে কাজগুলো ঠিকমত হয়।
এখন ধরুন আপনার হাতে একটি জটিল প্লানিং এর কাজ আছে – কাজটি ভালোভাবে করতে হলে আপনার অন্য কোনওদিকে তাকালে চলবে না। কিন্তু অন্য কাজগুলো নিয়ে টেনশনের কারণে আপনি তা দিতে পারছেন না।
কিন্তু আপনি চাইলে একটি বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে এই কাজটি সুন্দর ভাবে করতে পারেন।
পাওয়ার অব চয়েস মোটিভেশন পদ্ধতি:
বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, একজন মানুষের যখন বেছে নেয়ার বা সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বাধীনতা থাকে তখন তার মোটিভেশন লেভেলও অনেক উপরে থাকে। একজন মানুষ যখন কোনও কাজ করতে গিয়ে দেখে যে সেই কাজে তার নিজের মত করে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না, তখন সেই কাজের প্রতি তার মটিভেশন বা উৎসাহও কমে যায়। কিন্তু সেই একই লোককে যখন কোনও সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয় – তখন তার উৎসাহ বা মটিভেশন দারুন ভাবে বেড়ে যায়।
চার্লস ডুহিগ তাঁর “স্মার্টার, ফাস্টার, বেটার” বইতে লিখেছেন, বিজ্ঞানীদের মতে মানুষকে যখন অনেক অপশনের মধ্যে একটি বেছে নেয়ার অধিকার দেয়া হয় তখন তার কাজের প্রতি আগ্রহ অনেক বেড়ে যায়।
একটি ছোট্ট উদাহরণ দেয়া যাক, একটি বাচ্চাকে যদি তার বাবা খেলনার দোকানে নিয়ে গিয়ে নিজেই একটি খেলনা বেছে দেবেন, তখন তার যেমন উৎসাহ থাকবে – বাচ্চাটিকে নিজের পছন্দমত খেলনা বেছে নেয়ার সুযোগ দিলে সে আরও বেশি খুশি হবে, এবং দারুন এনার্জির সাথে পুরো দোকানে ছুটে বেড়াবে।
এটা আসলে মানুষের জন্মগত স্বভাব। বড় হওয়ার পরও সে সিদ্ধান্ত নিতে ভালোবাসে।
আর এই স্বভাবকে কাজে লাগিয়েআপনি অন্যকে দিয়ে আপনার কাজ আরও ভালোভাবে করিয়ে নিতে পারবেন।
একটি কাজ করার দুই-তিনটি পদ্ধতি বের করুন এবং তার মধ্য থেকে অন্যদের বেছে নেয়ার স্বাধীনতা দিন।
ধরুন, এক ঘন্টার একটি কাজে দশ মিনিটের বিরতির সুযোগ রয়েছে। অন্যকে কাজটি বুঝিয়ে দেয়ার সময়ে তাকে বলুন যে, সে চাইলে যে কোনও সময়ে বিরতিটি নিতে পারে, বিরতি কখন নেবে – সেটা তার সিদ্ধান্ত। এতেকরে কাজের উৎসাহ বেড়ে যাবে।
এই পদ্ধতিটি আপনি আপনার ব্যক্তিগত জীবনেও কাজে লাগাতে পারবেন। মনে করুন আপনার সন্তান ঠিকমত পড়াশুনা করছে না। তাকে সকালেই পড়তে বসতে হবে, অথবা সন্ধ্যা হওয়ার সাথেই পড়তে বসতে হবে – এমন কোনও নিয়মের মাঝে না ফেলে – তাকে বলুন পড়ার জন্য সকাল ও সন্ধ্যা হল সেরা সময়; এবং এই দুই সময়ের মাঝে সে কোন সময়ে পড়তে চায়? তার সামনে যখন দু’টি অপশন দেয়া হবে, সে তখন ভাববে তার সিদ্ধান্তকে গূরুত্ব দেয়া হচ্ছ। এতেকরে সে দু’টোর মধ্যে থেকে একটিকে বেছে নেবে, এবং তার বেছে নেয়া সময়ে সে নিজের উৎসাহেই পড়তে বসবে।
অথবা এমন যদি হয় যে আপনি আপনার সন্তানকে দায়িত্বশীলতা শেখাতে চাচ্ছেন, তাহলে তাকে একটি নির্দিষ্ট কাজের আদেশ না করে তাকে হয়তো বলতে পারেন ঘর গোছানো এবং বাজার করার মাঝে যে কোনও একটি কাজ বেছে নিতে। এতেকরে সে নিজের সিদ্ধান্তেই আপনার উদ্দেশ্যটি পূরণ করে দেবে।
একই ভাবে ধরুন আপনার হাতে যদি ছুটির দিনে বেশি কাজ পড়ে যায় তবে আপনি আপনার কোনও কর্মচারীকে বলতে পারেন যে সে চাইলে আজ অফিসের পরে আপনাকে কাজে সাহায্য করতে পারে, অথবা চাইলে ছুটির দিনে একটু সময় বের করে আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
অতি চালাক না হলে সে ভাবতে যাবে না যে দু’টি অপশনই আপনার দেয়া। তাকে আপনি পাওয়ার অব চয়েস বা সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা দেয়ার কারণে, সে পূর্ণ উৎসাহে তার পছন্দমত সময়ে কাজটি করে দেবে।
পাওয়ার অব চয়েস মানুষের মাঝে কাজের উৎসাহ জাগানোর জন্য দারুন একটি মোটিভেশন। এই পদ্ধতিতে আপনি যদি কাউকে দিয়ে কাজ করান, তাহলে সেই মানুষটি নিজের কাজ মনে করেই আপনার কাজটি করবে, এর ফলে সেই সময়ে আপনি আপনার কাজটি নিশ্চিন্তে করতে পারবেন।
শেষ কথা:
এই পদ্ধতিটি চার্লস ডুহিগ এর বেস্ট সেলিং বই “Smarter, Faster, Better” থেকে বর্ণনা করা হয়েছে। পুরো বুক রিভিউটি দেখতে চাইলে নিচের লিংক থেকে দেখে নিতে পারেন। সেখানে এমন আরও বেশকিছু কার্যকর টিপস দেয়া হয়েছে।
যদি এই লেখাটি ভালো লেগে থাকে, তবে কমেন্ট করে আমাদের জানান, এবং শেয়ার করে অন্যদের দেখার সুযোগ দিন।
এই ধরনের আরও লেখার জন্য নিয়মিত আমাদের সাথে থাকুন। সাফল্যের পথে লড়াকু সব সময়ে আপনার সাথে আছে।