ইগো নিয়ে উক্তি গুলো দেখার আগে, ইগো সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা দেয়া দরকার।
ইগো আসলে নিজের প্রতি অতি মাত্রায় উঁচু ধারণা। আত্মবিশ্বাস, আত্মসম্মান হল, নিজের সত্যিকার যোগ্যতার প্রতি বিশ্বাস। কিন্তু ইগো হল, নিজে যা নন – নিজেকে তাই মনে করা। একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষ কোনওকিছু না জানলে বা না পারলে – তা স্বীকার করবে, এবং বিশ্বাস করবে যে, সে চেষ্টা করলে বিষয়টি জানতে বা শিখতে পারবে।
অন্যদিকে একজন ইগো প্রবলেম সম্পন্ন মানুষ কোনওকিছু না জানলে বা না পারলে তা স্বীকার তো করবেই না, শেখারও চেষ্টা করবে না। তার ধারণা সে সবই বোঝে এবং সবই পারে। সে কোনও ভুল করলে মরে গেলেও তা স্বীকার না করে অন্যের ঘাড়ে বা পরিস্থিতির ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করবে।
যার মাঝে ইগো আছে, সে বড় হওয়ার আগেই নিজেকে বড় কিছু ভাবতে শুরু করে। এই ভাবনার কারণেই কোনওদিন সত্যিকার বড় হতে পারে না। কারনটা খুব স্বাভাবিক, আপনি যদি আগেই ভেবে বসে থাকেন আপনি ইতোমধ্যেই অনেক বড় কিছু হয়ে গেছেন, তখন আর সত্যিকার বড় হওয়ার কষ্ট করতে ইচ্ছা করবে না।
ইগো মানুষকে চোখ থাকতেও অন্ধ করে দেয়। নিজের কমতি ও দোষগুলো চোখে না পড়ায় সে সেগুলো দূর করতে পারে না, তাই জীবনে সামনে এগুতে পারে না।
আজ আমরা আপনার সামনে ইগো নিয়ে ৩০টি উক্তি নিয়ে এসেছি, যেগুলো আপনাকে ইগো থেকে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা দেবে – এবং পাশাপাশি ইগোর ক্ষতিকর দিকগুলো আরও একটু ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে।
০১. “ইগো যদি কারও বাহন হয়, তবে সে কোথাও পৌঁছতে পারবে না”
– রবার্ট হ্যাল্ফ (আমেরিকান উদ্যোক্তা)
০২. “ইগো হল বোকাদের বোকা হওয়ার যন্ত্রণা লুকানোর উপায়”
– ড. হারবার্ট স্কোফিল্ড (১৯ শতকের ইংলিশ স্কলার ও শিক্ষক)
০৩. “তুমি যখন তোমার ইগোকে চিনতে পারবে, তখন বুঝবে এটা আসলে তোমার মনের ভেতরে সৃষ্টি হওয়া কিছু অর্থহীন কথা”
– ইকহার্ট টলি (কানাডিয়ান বেস্ট সেলিং লেখক)
০৪. “ইগো মানুষকে অচেতন করে রাখে। চেতনা আর ইগো কখনও একসাথে থাকতে পারে না”
– ইকহার্ড টলি
০৫. “ইগো মানুষের নিজেকে নিজে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাকে নি:শব্দে নষ্ট করে ফেলে”
– কলিন হাইটাওয়ার (আমেরিকান লেখক)
০৬. “ইগো মানুষের সুবুদ্ধির পথে অন্যতম বাধা”
– মারিয়ান মুর (আমেরিকান কবি)
০৭. “সত্যিকার বড় হতে চাইলে ইগোকে বন্দী করে রাখো…”
– মেরি রবার্টস রিনহার্ট (বিখ্যাত লেখিকা)
০৮. “ইগোইস্ট মানে এমন একজন মানুষ যে অন্য সবাইকে ছোট করে দেখে”
– জোসেফ ফোর্ট নিউটন (ধর্মীয় নেতা ও লেখক)
০৯. “একজন মানুষের ইগো ভাঙার মূহুর্তের চেয়ে ভালো মূহুর্ত আর একটিও নেই”
– ববি ফিশার (সর্বকালের সেরা দাবা খেলোয়াড়)
১০. “ইগোর মৃত্যু মানে আত্মার জাগরণ”
– মহাত্মা গান্ধী
১১. “ইগো হলো চোখে জমে থাকা ধুলোর মত। চোখের ধুলো পরিস্কার না হলে যেমন কিছু দেখা যায় না; তেমনি ইগো দূর না হলে সত্যিকার জগতকে দেখা যায় না”
– সংগৃহীত
১২. “ইগো সত্যিকার জ্ঞানী হওয়ার পথে একটি প্রধান বাধা”
– ড্যানিয়েল লা-পোর্ত (কানাডিয়ান বেস্ট সেলিং লেখিকা)
১৩. “যাদের ইগো বড়, তাদের জানার ক্ষমতা ছোট”
– রবার্ট স্কুলার (আমেরিকান ধর্মীয় বক্তা ও লেখক)
১৪. “বড় চিন্তা সব সময়ে হৃদয় থেকে আসে, ইগো থেকে এটা আসা সম্ভব নয়”
– সংগৃহীত
১৫. “তোমার ইগো কখনওই সত্যিকার তোমাকে ধারণ করে না। এটা একটা মুখোশ, একটা অভিনয়। এটা সব সময়ে অন্যের প্রশংসার ওপর নির্ভর করে। এটা সব নিজেকে শক্তিশালী ভাবতে চায় – কারণ সে সব সময়ে পরাজয়ের ভয় করে”
– রাম দাস (ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ও লেখক)
১৬. “ইগোহীন আত্মবিশ্বাসই সত্যিকার আত্মবিশ্বাস। আত্মবিশ্বাসের সাথে ইগো মিশে থাকলে, তা কখনওই খাঁটি আত্মবিশ্বাস নয়”
– সংগৃহীত
১৭. “অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা ইগোর সবচেয়ে বড় একটি অস্ত্র। এটা না হলে সে নিজেকে শক্তিশালী করতে পারে না”
– ইকহার্ট টলি (কানাডিয়ান লেখক)
১৮. “যার জ্ঞান যত বেশি, তার ইগো তত কম। জ্ঞান কম, মানে ইগো বেশি”
– আলবার্ট আইনস্টাইন
১৯. “প্রতিভাকে খুন করা হল ইগোর সবচেয়ে বড় শক্তি”
– সংগৃহীত
২০. “যে কোনও বড় অর্জনের পথে ইগো হল সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা”
– রিচার্ড রোস (কবি ও দার্শনিক)
২১. “পৃথিবীর যাবতীয় বিবাদ, যুদ্ধ আর ব্যর্থতার জন্য যদি মাত্র একটি জিনিসকে দায়ী করা হয় – তা হবে মানুষের ইগো”
– সংগৃহীত
২২. “ভালোবাসা অন্যকে কিছু দিতে পেরে সুখী হয়। ইগো ছিনিয়ে নিয়ে সুখী হয়”
– রাজনীশ (ভারতীয় দার্শনিক)
২৩. “ওপরে ওঠার সময়ে ইগো মানুষকে কুকুরের মত অনুসরন করে”
– ফ্রেডরিচ নিডসে (জার্মান দার্শনিক )
২৪. “ভুল বোঝাবুঝি দূর করার প্রথম শর্ত হল ইগোকে হত্যা করা”
– সংগৃহীত
২৫. “নিজের শুণ্যতাকে ঢাকার সবচেয়ে বাজে ও অকার্যকর ঢাল হল ইগো”
– সংগৃহীত
২৬. “কেউ তোমার ভুল ধরিয়ে দিলে যদি তুমি অপমান বোধ কর, তোমার মাঝে ইগো সমস্যা আছে”
– নোমান আলী খান (আমেরিকান ইসলামিক স্কলার)
২৭. “ইগো অন্যের কাছে বড় হওয়ার নিরন্তর চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়”
– অ্যালান ওয়াটস্ (বৃটিশ দার্শনিক)
২৮. “ইগো তোমার সবচেয়ে বড় শত্রু। সে সব সময়ে তোমাকে থামিয়ে রাখতে চাইবে”
– ফ্র্যাঙ্ক কার্লটন (আমেরিকান গায়ক ও লেখক)
২৯. “তুমি যখন বিচক্ষণ হতে থাকবে, তখন ইগোও জানালা দিয়ে পালাতে শুরু করবে”
– বিলি ওশান (ত্রিনিদাদিয়ান শিল্পী)
৩০. “যারা ভাবে যে তারা সবার চেয়ে বেশি জানে, তারা সত্যিকার জ্ঞানীদের কাছে বিরক্তিকর”
– আইজ্যাক আসিমভ্ (বিশ্বখ্যাত লেখক)
ইগো নিয়ে উক্তিগুলো যদি ইগো সম্পর্কে আপনার ধারণাকে আরও সমৃদ্ধ করে এবং ইগো থেকে বাঁচতে উৎসাহীত করে, তাহলেই আমাদের প্রচেষ্টা সফল হবে।
ইগো এর ব্যাপারে আরও বিস্তারিত জানতে আমাদের “ইগো কি – এবং ইগো থেকে বাঁচার উপায় কি” – লেখাটি পড়ুন।
তবে তার আগে, এই লেখাটির বিষয়ে আপনার যে কোনও মতামত আমাদের কমেন্ট করে জানান। আপনার সব মতামতই আমাদের কাছে মূল্যবান।
আর যদি মনে হয় এই লেখাটি পড়ে অন্যরাও উপকৃত হবেন – তবে শেয়ার করে, বা এই উক্তিগুলো থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ইগো নিয়ে স্ট্যাটাস এর মাধ্যমে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন।
এই ধরনের আরও লেখা ও উক্তির জন্য নিয়মিত আমাদের সাথে থাকুন। সাফল্যের পথে, সব সময়ে, লড়াকু আপনার সাথে আছে।
আরও পড়ুন: