যে ৭টি কারণে আপনার অফিস ডেস্কে একটি ছোট গাছ রাখা উচি‌ৎ


আপনার কি কখনও এমন হয়েছে যে, দিনের একটা সময়ে কাজ করতে করতে আর ভালো লাগছে না? – অথবা একটু কাজ করেই আর মনোযোগী হতে পারছেন না? – অথবা অফিসের ডেস্কে একঘেয়ে কাজ করতে করতে কাজের ওপর বিরক্তি ধরে গেছে? – অথবা প্রতিদিনই কাজের একটা পর্যায়ে চোখ জ্বালাপোড়া, মাথা ধরা – এই ধরনের সমস্যা হয়?

এইসব সমস্যার একটা খুব সহজ সমাধান হতে পারে অফিসের ডেস্কে ছোট্ট একটি গাছ।  অনেক ইংরেজী সিনেমাতেই হয়তো দেখেছেন, কর্মীরা তাদের টেবিলের এক কোণায় ছোট একটি সবুজ গাছ রাখে।  সত্যি কথা বলতে, প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেই অনেক সময়ে কর্মীদের টেবিলে গাছ দেয়া হয়।  ছোট্ট একটি গাছ কাজের সময়ে ক্লান্তি দূর করা, মনোযোগ বৃদ্ধি করা ও কাজের মান বাড়িয়ে দিতে পারে।

মাইক্রোসফট  অফিস
মাইক্রোসফট অফিস

গুগল, মাইক্রোসফট সহ অনেক বড় বড় কোম্পানী তাদের ওয়ার্ক প্লেসকে প্রাকৃতিক চেহারা দেয়ার চেষ্টা করছে।  মাইক্রোসফট তো তাদের ক্রিয়েটিভ ও রিসার্চ টিমের জন্য জঙ্গলের মধ্যে কটেজ ও ট্রি হাউজ বানিয়ে – সেটাকে অফিস বলে ঘোষণা করেছে। 

গুগলের অফিসের পরিবেশ দেখলে মনে হয় সবুজে মোড়া কোনও পার্কে চলে এসেছি।

পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, জন্মগত ভাবেই মানুষ প্রকৃতির কাছে থাকতে চায়।  যখন বেশি সময়ের জন্য প্রকৃতির বাইরে থাকতে হয়, তখন মানুষ হাঁপিয়ে ওঠে।  কিছুই ভালো লাগে না।  অকারণেই বোরিং লাগতে শুরু করে।

২০১১ সালে আমেরিকান ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন (NCBI) এর একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ হয়।  বেশ কয়েকজন বিশ্বসেরা বিজ্ঞানী সেই গবেষণায় অংশ নেন।

গবেষণাপত্রের মূলকথা ছিল, কর্মক্ষেত্রে সামান্য একটু প্রাকৃতিক ছোঁয়া কর্মীদের কাজে আগ্রহ, এনার্জি বাড়ানোর সাথে সাথে মানসিক চাপ কমায়।

এনসিবিআই এর গবেষণা ছাড়াও, কর্মক্ষেত্রে প্রাকৃতিক পরিবেশের উপকারিতা নিয়ে আরও অনেক গবেষণা হয়েছে।

আজ আপনাকে অফিস ডেস্কে গাছ রাখার যে ৭টি উপকারিতা বলব – সবগুলোই আসলে বৈজ্ঞানিক ভাবে পরীক্ষিত।  সেইসাথে আমরা কিছু গাছের কথাও বলব যেগুলো বিশেষ ভাবে আপনার উপকার করবে।  চলুন তাহলে শুরু করা যাক।

গুগল  অফিস
গুগল অফিস

০১. মানসিক চাপ কমায়

২০১০ সালে সিডনির “নিউ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি” এর এক গবেষণায় দেখা যায় কর্মক্ষেত্রে সবুজ গাছ নিয়ে আসার ফলে কর্মীদের মধ্যে মানসিক চাপ জনিত সমস্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়।

গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, ডেস্কে ও অফিসের বিভিন্ন জায়গায় সবুজ গাছ রাখায় কর্মীদের দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগে থাকার রিপোর্ট ৩৭% কম এসেছে।  ডিপ্রেশন ও মন খারাপের মাত্রা ৫৮% কমে গেছে।  কর্মীদের মাঝে রাগ ও মেজাজ খারাপ হওয়ার মাত্রা ৪৪% কমেছে।  সেইসাথে, কাজের মাঝে ক্লান্তি আসা কমেছে ৩৮%!

যদিও গবেষণার সময়ে খুব বেশি প্রতিষ্ঠানে এই গবেষণা চালানো হয়নি, তবুও এই পরিসংখ্যানকে কাজে লাগিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠানই ভালো ফলাফল পেয়েছে।

গবেষণাপত্রের উপসংহার টানতে গিয়ে গবেষকরা লিখেছেন, “আমরা গবেষণায় দেখেছি, প্রতিটি ওয়ার্কস্পেসে মাত্র একটি গাছ থাকলে তা কর্মীদের প্রফুল্লতা বাড়ানোর পাশাপাশি, তাদের সুস্থতা ও পারফরমেন্সকে অনেক বাড়িয়ে দেয়”

কালার সাইকোলজিস্টদের মতে, সবুজ রঙ মানুষের মনকে শান্ত করার পাশাপাশি একটা নিরাপত্তার অনুভূতি দেয়।  অফিসে সবুজ গাছ থাকলে কর্মীদের ব্যবহার ও মানসিকতা অনেক শান্ত থাকে।

০২. প্রোডাক্টিভিটি বাড়াতে সাহায্য করে

২০১৪ সালে দি গার্ডিয়ান পত্রিকায় বৃটেনের ইউনিভার্সিটি অব এস্কিটারের একটি গবেষণা নিয়ে একটি আর্টিকেল প্রকাশিত হয়।  গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল, কর্মক্ষেত্রে সবুজ গাছ কর্মীদের প্রোডাক্টিভিটি বাড়াতে কতটা সাহায্য করে।

প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, ধীরগতিতে কাজ চলে, এমন কিছু অফিসে সবুজ গাছ রাখার ফলে কর্মীদের কাজের মান ও পরিমান ১৫% বৃদ্ধি পেয়েছে।

গবেষক ড. ক্রিস নাইট বলেন, “কর্মক্ষেত্রের প্রতি বর্গমিটারে মাত্র একটি গাছ থাকলে কর্মীদের স্মরণ করার ক্ষমতা ও বুদ্ধি খাটানোর ক্ষমতা বেড়ে যায়”

গার্ডিয়ান পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষা‌ৎকারে এই বিজ্ঞানী আরও বলেন, “প্রতিটি কর্মী যেন তার ডেস্ক থেকে একটি গাছ দেখতে পায় – এমন ব্যবস্থা রাখা ভালো।  কাজের জায়গায় যদি এমন কিছু থাকে যা আপনার মনোযোগ নষ্ট না করেই আপনাকে ভালো অনুভব করাবে – তাহলে আপনার কাজ আরও ভালো হতে বাধ্য”

০৩. কর্মীদের শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা, এবং অনুপস্থিতির হার কমায়

২০১৫ সালে “হিউম্যান স্পেসেস” ১৬টি দেশে ৭৬০০ অফিস কর্মীর ওপর একটি গবেষণা করে।  তারা দেখতে পায় মোট কর্মীদের ৩ ভাগের ২ ভাগের ওয়ার্ক স্পেসে কোনও জীবিত গাছ নেই।  গবেষণায় আরও দেখা যায়, বাকি ১ ভাগ, মানে যাদের কর্মক্ষেত্রে গাছের উপস্থিতি আছে, তারা অন্যদের চেয়ে ১৫% বেশি সুস্থ এবং তাদের প্রোডাক্টিভিটি স্কোর বাকি দুই ভাগ কর্মীর চেয়ে ৬% বেশি।

কিছু গবেষকের মতে, কর্মক্ষেত্রে জীবন্ত গাছ থাকলে কর্মীদের মাঝে “সিক বিল্ডিং সিনড্রোম” কম হয়।  সিক বিল্ডিং সিনড্রোম হল, কোনও নির্দিষ্ট জায়গা বা বিল্ডিং এর পরিবেশের কারণে সেখানকার বাসিন্দারা যেসব শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় পড়ে – সেগুলো।

কর্মক্ষেত্রে শব্দ দুষণ, আলো বাতাসের অভাব, অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা, হৈচৈ – ইত্যাদির কারণে সেখানকার কর্মীদের নানান রকমের সমস্যা হতে পারে।  কাজের মাঝে মাথা ধরা, ঘনঘন অসুস্থ হওয়া, চোখ জ্বালাপোড়া করা, খুব দ্রুত ক্লান্ত হয়ে যাওয়া, মেজাজ খিটখিটে থাকা – ইত্যাদি সমস্যা অনেক সময়ে কর্মক্ষেত্রের বিল্ডিং এর বিভিন্ন সমস্যার কারণে ঘটতে পারে।  এমনকি বিল্ডিং এর ডিজাইনও অনেক সময়ে কর্মীদের কাজে ও সুস্থতায় খারাপ প্রভাব ফেলে।  অনেক সময়ে কর্মীদের অফিসে না আসতে চাওয়ার পেছনে অফিসের ডিজাইন ও ভেন্টিলেশন অনেক বড় ভূমিকা রাখে।

বেশিরভাগ সময়েই কতৃপক্ষ বা কর্মীরা তাদের সমস্যার কারণ ধরতে পারে না।  আবার অফিস বিল্ডিং বদলানো মোটেও সহজ কিছু নয়।  – আপনার নিজের বা আপনার কর্মীদের মাঝে এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে আপনি পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা, শব্দদূষণ কমানোর পাশাপাশি নিজের ও কর্মীদের ডেস্কে, এবং অফিসের বিভিন্ন জায়গায় গাছের ব্যবস্থা করতে পারেন – এতেকরে, এই সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে। আর বার বার গাছের দিকে তাকালে চোখেরও অনেক উপকার হয়।

এছাড়া, ১৯৯০ এর দশকে এগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটি অব নরওয়ের এক গবেষণায় উঠে আসে, কর্মক্ষেত্রে গাছের উপস্থিতি থাকলে কর্মীদের অসুস্থ হওয়ার মাত্রা ২৫% পর্যন্ত কমে যায়।

০৪. আপনার অথবা আপনার কর্মীদের জন্য অফিস আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে

বেশিরভাগ কর্মীদের কাছে অফিস একটা ‘বোরিং’ জায়গা।  সময়মত অফিসে ঢুকে কোনওরকমে বের হতে পারলেই আমরা বাঁচি।  আপনারও যদি এমন হয়, তবে জেনে রাখুন, বোর হওয়া বা একঘেয়েমিতে পাওয়া পুরোপুরি আপনার দোষ নয়।  প্রকৃতিতে জন্ম নেয়া মানুষ কাঠখোট্টা পরিবেশে থাকতে থাকতে হাঁপিয়ে উঠবে – এটাই স্বাভাবিক।

আমরা যতই যান্ত্রিক জীবনে অভ্যস্ত হই না কেন, প্রকৃতি আমাদের যতটা শান্ত করে – তা আর কোনওকিছুই করতে পারে না।  এজন্যেই টানা অফিস করতে বেশিরভাগ মানুষেরই ভালো লাগে না।  সবাই কাজের দিনগুলো কোনওরকমে পার করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনটির জন্য মুখিয়ে থাকে।

এতে সমস্যা যেটা হয়, তা হল, আপনি কাজে পুরোপুরি পারফর্ম করতে পারেন না।  এবং এর কারণে আপনার ক্যারিয়ারের যতটা উন্নতি হওয়ার কথা – তা হয়না।

এই কারণগুলো এতই সূক্ষ্ণ যে সাধারণ ভাবে এগুলোর কথা মনেই আসে না।

অফিসকে আরও একটু ভালোলাগার জায়গা বানানোর জন্য ডেস্কে একটি গাছই যথেষ্ঠ।  আপনার নিজের অথবা আপনার কর্মীদের যদি অফিসের কাজে মনোযোগ না থাকে, তবে অফিসের ডেকোরেশনে গাছ যোগ করতে পারেন।  দেখবেন আপনি নিজে অথবা আপনার কর্মীরাও অফিসে বেশি সময় কাটাচ্ছে।  এটা যে সচেতন ভাবে হয় তা নয়, এর পেছনে গাছের সূক্ষ্ণ মনস্তাত্বিক প্রভাব কাজ করে।

অফিস ছুটির সময় হয়ে আসলে বা সাপ্তাহিক ছুটি কাছিয়ে আসলে মনের ভেতরে যে অস্থিরতা কাজ করে – তা অনেকটাই কমে যাবে।

এছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে, অফিসের ডেকোরেশনে গাছের ব্যবহার থাকলে, নতুন কর্মীরাও চাকরিতে যোগ দিতে বেশি আগ্রহী হয়।

ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টারের অর্গানাইজেশনাল সাইকোলজি এ্যান্ড হেলথ এর প্রফেসর এবং একই বিষয়ের লেখক, স্যার ক্যারি কুপার বলেন, “বায়োফিলিক বা প্রাকৃতিক ছোঁয়া সমৃদ্ধ ডিজাইনের উপকারিতা প্রতিষ্ঠানগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।  — বায়োফিলিক ডিজাইন আমাদের একটি প্রতিষ্ঠানে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্তকে যথেষ্ঠ প্রভাবিত করে”

০৫. বাতাসকে বিশুদ্ধ রাখে

এটা খুবই কমন একটি ব্যাপার।  গাছ পরিবেশ ও বাতাসকে বিশুদ্ধ রাখে।  কার্বন-ডাইঅক্সাইড শোষণ করে অক্সিজেন দেয়।  কিন্তু কার্বন ডাই অক্সাইডই একমাত্র ক্ষতিকর পদার্থ নয় – যা গাছ শোষণ করে।  এগুলো ছাড়াও গাছ এমন কিছু ক্ষতিকর রাসায়নিক বাতাস থেকে গায়েব করে – যেগুলো আমাদের স্বাভাবিক সুস্থতা ও কাজের ক্ষমতাকে নষ্ট করে।

১৯৮০ এর দশকে নাসার বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন, গাছ কার্বন-ডাইঅক্সাইডের পাশাপাশি বাতাস থেকে এই ৩টি উপাদান শোষণ করে –  বেনজিন (রংহীন দাহ্য এক প্রকার হাইড্রো কার্বন), ট্রাইক্লোরোলিথালিন (ময়লা পরিস্কারকারক লিকুইডে থাকা এক ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিক – অফিসে/কারখানায় এগুলো প্রায়ই ব্যবহার করা হয়), ফরমালিহাইড (রংহীন বিষাক্ত গ্যাস যা ক্যান্সার সৃষ্টি করে; পার্টিকেল বোর্ড, প্লাইউড, আঠা, প্রিন্টারের কালি – ইত্যাদি তৈরীতে ব্যবহার হয় )।

কাজেই, বুঝতেই পারছেন – অফিসের ডেস্কে কাছাকাছি একটি গাছ থাকা মানে, এইসব বিষ থেকে অনেকটাই নিরাপদ থাকা।

স্নেক প্ল্যান্ট

এছাড়া অফিসের ভেতরে গাছ থাকলে, তা অনেক বেশি অক্সিজেন আপনার জন্য বরাদ্দ করবে, এবং অনেক বেশি ক্ষতিকর পদার্থ শোষণ করবে।  ডেস্কে বা ডেস্কের কাছে একটি গাছ চিন্তা ও বুদ্ধির কাজ করা (মস্তিষ্কে বেশি বিশুদ্ধ অক্সিজেন পাঠিয়ে মস্তিষ্কের কাজের গতি বাড়ানো ও বাধাহীন করা) , কর্মক্ষমতা (স্ট্যামিনা) – এর মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি পরিমানে বৃদ্ধি করবে।

শরীর ও মস্তিষ্কে যত বেশি বিশুদ্ধ অক্সিজেন যাবে, আপনাকে ক্লান্ত ও অবসন্ন করা ততই কঠিন হয়ে যাবে।  অক্সিজেনের অভাবেই মূলত তাড়াতাড়ি ক্লান্তি আসে।  পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ অক্সিজেন মস্তিষ্কে না গেলে একটানা পরিস্কার ভাবে চিন্তা করা কঠিন হয়ে যায়।  মনে হয় মাথা কাজ করছে না।  একটি গাছ এই সমস্যা অনেক কমিয়ে দিতে পারে।

অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা যায়, অফিসের ভেতরে গাছ থাকলে তা বাতাসকে স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে ২৫% বেশি কার্বন-ডাইঅক্সাইড এবং বিষাক্ত কেমিকেল মুক্ত রাখে।

গবেষক দলের প্রধান, ড.ফ্রাশার ট্রপি বলেন, মাত্র ২০ সেন্টিমিটার উচ্চতার একটি গাছ একটি রুমে থাকলে সেই রুমের বাতাস থেকে এইসব ক্ষতিকর বস্তুর মাত্রা অনেক কমে যাবে।

৬. শব্দ দূষনের মাত্রা কমায়!

হ্যাঁ – ঠিকই পড়েছেন।  আপনি যদি ব্যস্ত শহরের মধ্যে একটি পার্কে যান – দেখবেন মানসিক প্রশান্তি পাওয়ার সাথে সাথে শব্দও যেন অনেকটা কম আসছে।  এর কারণ, গাছ শব্দ শোষণ করে!

১৯৯৫ সালে লন্ডন সাউথব্যাঙ্ক ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণা অনুযায়ী, গাছ বাতাসের ক্ষতিকর পদার্থের পাশাপাশি তরঙ্গকেও শোষণ করে।  আসলে গাছের গঠনের কারণে, শব্দ তরঙ্গ গাছের প্রতি আকর্ষিত হয় এবং গাছের গঠনগত প্যাটার্ণ এর মাঝে হারিয়ে যায়।  কোনও জায়গায় একটি গাছ থাকলে তা আশপাশ থেকে আসা শব্দ তরঙ্গকে মোলায়েম করে।  আপনার অফিস ডেস্কে একটি গাছ থাকলে, তা আশপাশ থেকে আসা বিরক্তিকর শব্দের মাত্রাকে অনেকটাই কমিয়ে দেবে।  গবেষকরা একটি রুমের কোণাগুলোতে মাঝারি আকারের গাছ রেখে দেখেছেন – তাতে রুমে হওয়া শব্দের তীক্ষ্ণতা অনেক কমে যায়।

আর শব্দ যদি কম বিরক্ত করে – তবে কাজে মন দেয়াটা আরও সহজ হয়ে যায়।  তাই নয় কি?

০৭. সৃষ্টিশীলতা বাড়ায়

মাইক্রোসফটের টিমগুলো যখন নতুন কিছু নিয়ে কাজ করে – বা কোনও প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট নিয়ে মিটিং করে – তখন তাদের জঙ্গলে পাঠিয়ে দেয়া হয়।  জঙ্গল মানে বনের মাঝে কাঠের কটেজ ও ট্রি হাউজ দিয়ে বানানো বিশেষ অফিস।  এই অফিস বানানোর উদ্দেশ্য, কর্মীরা যেন আরও ভালো করে সৃষ্টিশীল চিন্তা ভাবনা করতে পারে।

২০১৫ সালের “হিউম্যান স্পেসেস” এর রিপোর্টে আর একবার চোখ বুলানো যাক- সেখানে বলা হয়েছে, যেসব কর্মক্ষেত্রে প্রকৃতির ছোঁয়া আছে – সেখানকার কর্মীরা সৃষ্টিশীল কাজ ও নতুন চিন্তায় অন্যদের চেয়ে ১৫% বেশি এগিয়ে।

ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের সাইকোলজির অধ্যাপক স্টিফেন ক্যাপলান এর Attention restoration theory বা আর্ট থিওরির মতে, প্রকৃতির দিকে তাকানো, এমনকি প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবির দিকে দেখার সুযোগ পেলেও মানুষের মস্তিষ্কের কাজের ধরন ইতিবাচক ভাবে বদলে যায়।  কর্মীদের মনোযোগ বাড়ার সাথে সাথে কাজের চাপও অনেক কম অনুভূত হয়।  ফলে তারা নিজেদের মত করেই অনেক ভালো ও সৃষ্টিশীল কাজ উপহার দিতে পারে।

পরিশিষ্ট:

আপনি হয়তো ডেস্ক জব করেন, অথবা নিজেরই একটি প্রতিষ্ঠান আছে।  যেটাই হোক, নিজের ও কর্মীদের কাজের মান, ও কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়াতে কর্মক্ষেত্রে গাছের উপস্থিতি আনতে পারেন।  এতে আপনার নিজের পারফরমেন্স যেমন ভালো হবে – তেমনি আপনার সহকর্মী ও অধীনস্থদেরও কাজের মান ভালো হবে।

অনেক ছোট ছোট বিষয় যে আমাদের জীবনে কত বড় পরিবর্তন আনতে পারে – তা আমরা অনেক সময়ে ধারণাও করতে পারি না।

আপনি এই কাজ করতে গেলে অনেকে হয়তো বাঁকা চোখে তাকাবে; আপনাকে নিয়ে হাসাহাসিও করতে পারে – কিন্তু একটি গাছ যে উপকার করবে – সেই উপকার সেইসব মানুষ করতে পারবে না।  কাজেই, যদি মনে হয় এটা আপনার উপকার করবে – তবে মানুষের কথা ও আচরণে মন না দিয়ে ব্যাপারটা ঘটিয়ে ফেলুন।  একটা সময়ে সেই হাসাহাসি করা লোকেরাই হয়তো আপনাকে অনুসরন করবে।

কর্মক্ষেত্রে গাছের আইডিয়াটি আপনার কেমন লেগেছে – তা আমাদের কমেন্ট করে জানান।  আপনার সব মতামতই আমাদের কাছে অমূল্য।  আর যদি মনে হয় এই লেখা পড়ে অন্যরাও উপকৃত হবেন – তাহলে শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দেয়ার অনুরোধ থাকল।

পোস্টটি শেয়ার করুন !