নতুন বছরের লক্ষ্য পূরণ করতে হলে অবশ্যই লক্ষ্যগুলো লিখে রাখুন: লক্ষ্য কেন লিখে রাখবেন?


নতুন বছরে নতুন করে সবকিছু শুরু করার চিন্তা করছেন? আগের সব ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলে নতুন করে জীবনকে গড়তে চাইছেন? – খুব ভালো কথা।  কিন্তু জানেন কি, মাত্র ৩% মানুষই তাদের নতুন বছরের লক্ষ্য পূরণ করতে পারে?

লক্ষ্য ঠিক করার চেয়ে, লক্ষ্য পূরণ করা কঠিন – এই কথা হয়তো অনেকবারই শুনেছেন, এবং নিজেও প্রমাণ পেয়েছেন।  কিন্তু সত্যি কথা বলতে – ব্যাপারটা এত কঠিনও নয়।  কিছু জিনিস চর্চা করলে আপনি নিজের অজান্তেই অনেক বড় লক্ষ্য পূরণের দিকে এগিয়ে যাবেন। যার মধ্যে প্রধান বিষয়টি হল, লক্ষ্যকে ঠিকমত লিখে রাখা।

চলুন নতুন বছরের শুরুতে নতুন লক্ষ্যগুলো সহজে পূরণের কিছু সিক্রেট জেনে নেয়া যাক।

hello-bcs-041223-1 (1)

৪৬ তম বিসিএস পরিপূর্ণ প্রস্তুতি

বর্তমানে অংশগ্রহণ করেছেন 620 জন

জয়েন করুন

লক্ষ্য পূরণের জন্য সবচেয়ে জরুরী বিষয়:

ব্রায়ান ট্রেসি তাঁর “নো এক্সকিউজেস: দি পাওয়ার অব সেলফ ডিসিপ্লিন” বইতে লিখেছেন, “নিজের জন্য পরিস্কার লক্ষ্য ঠিক করা এবং প্রতিদিন সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য নির্দিষ্ট কাজ করলে সাফল্য না আসার কোনও কারণই নেই।  অন্য যে কোনও পদ্ধতির চেয়ে এই পদ্ধতিতে সহজে সাফল্য আসে।  জীবনকে সার্থক ও অর্থপূর্ণ করার জন্য পরিস্কার লক্ষ্য বা ক্লিয়ার গোল এর কোনও বিকল্প নেই।  কথায় বলে, নিশানা স্পষ্ট দেখতে না পেলে তা ভেদ করা অসম্ভব। যদি না জানো যে তুমি কোথায় যাচ্ছ, তাহলে কোনও রাস্তাই তোমাকে সঠিক জায়গায় নিতে পারবে না।

একজন মানুষ যদি তার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কি চায় – তা সময় নিয়ে ঠিক করতে পারে, তবে তার জীবন বদলানো কোনও ব্যাপারই নয়।

 ৩% এর জাদু:

বেস্ট সেলিং লেখক ও বিশ্বের সেরা একজন সেলফ ডেভেলপমেন্ট কোচ ব্রায়ান ট্রেসির মতে ৩ একটি জাদুকরি সংখ্যা। জীবনের অনেক ক্ষেত্রেই এই সংখ্যাটির প্রভাবে আছে।  কেউ যদি তার আয়ের ৩% নিজের পেছনে ব্যয় করে, তবে তার সেক্টরের সেরা ২০% মানুষের একজন হওয়া সম্ভব।  এই বিষয়টি নিয়ে আমরা অন্য একটি লেখা প্রকাশ করেছি। 

এরকম আরও কিছু পরিসংখ্যান তিনি তাঁর বইয়ে দিয়েছেন।  তার মধ্যে একটি হল, ৩% মানুষ বাকি ৯৭% এর মিলিত আয়ের চেয়ে বেশি আয় করে!

আরও মজার ব্যাপার হল, পৃথিবীর মাত্র ৩% মানুষ তাদের ছোট ও বড় লক্ষ্যগুলো লিখে রাখে!

এটা হওয়ার কারণ হল, একজন মানুষের যদি পরিস্কার লক্ষ্য ঠিক করা থাকে, এবং সেই লক্ষ্য নিয়ে লিখিত পরিকল্পনা থাকে – তবে প্রতিদিন কোনওরকম বাধা বিঘ্ন ছাড়াই সে সেই লক্ষ্য পূরণে কাজ করতে পারে।

আপনি যদি জানেন যে আপনি কোথায় যেতে চান, এবং সেখানে যাওয়ার ম্যাপও যদি নিজের হাতে করে রাখেন – তবে সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেক সহজে আপনি সেখানে যেতে পারবেন।  অন্য কোনও বিষয় সামনে এসে আপনাকে আপনার লক্ষের কথা সহজে ভোলাতে পারবে না।  – এই কারণেই যেসব মানুষের সামনে পরিস্কার লক্ষ্য থাকে, তারা অন্যদের চেয়ে বেশি সাফল্য পায়।

ইচ্ছা আর লক্ষ্য:

দু:খের বিষয় হল, বেশিরভাগ মানুষ মনে করে যে তাদের একটি লক্ষ্য আছে ।  কিন্তু ব্রায়ান বলেন, সেগুলো আসলে লক্ষ্য নয়।  সেগুলো শুধু মনের ইচ্ছা মাত্র।  লক্ষ্য আরও অনেক শক্তিশালী বিষয়।

ইচ্ছা বা কিছু পাবার আশা লক্ষ্য নয়, কারণ এর পেছনে আসলে কোনও পরিকল্পনা থাকে না। ইচ্ছা তখনই সত্যিকার লক্ষ্যে পরিনত হয়, যখন একজন মানুষ বসে বসে ”ইচ্ছা পূরণ হলে কেমন হবে” – এটা ভাবা বাদ দিয়ে তা পূরণ করার জন্য সত্যিকার পরিকল্পনা করে এবং তার জন্য পরিশ্রম করে ও ত্যাগ স্বীকার করে।

বিশ্বখ্যাত পারফরমেন্স কোচের ভাষায়, “ইচ্ছা হলো দুর্বল ও শক্তিহীন লক্ষ্য” ।  একটি লক্ষ্য যতক্ষণ না লিখে রাখা হচ্ছে, এবং তার পেছনে একটি পরিকল্পনা করা হচ্ছে – ততক্ষণ সেটা সত্যিকার লক্ষ্য নয়।

লিখিত লক্ষ্যের শক্তি:

লেখক বলেন, যেসব লক্ষ্যকে কাগজে লেখা হয়না, এবং তার পেছনে কোনও পরিকল্পনা থাকে না – সেগুলো আসলে বারুদ ছাড়া গুলির মত। যেসব মানুষ অলিখিত লক্ষ্যের পেছনে ছোটে, তারা আসলে অকেজো গুলি ভরা বন্দুক নিয়ে টার্গেট প্রাকটিস করে।

যদিও তারা মনে করে যে তাদের লক্ষ্য আছে – তারা কখনওই সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য পরিশ্রম করার উৎসাহ পায় না। তারা বুঝতেই পারে না যে সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য তাদের আসলে কতটা পরিশ্রম করা দরকার বা কি কি দক্ষতা অর্জন করা দরকার।

২০০৬ সালে ইউ.এস.এ টুডে ম্যাগাজিনে একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়।

গবেষকরা বেশকিছু মানুষের ওপর গবেষণা চালায়, যারা নতুন বছরে নতুন লক্ষ্য ঠিক করেছে। এইসব নতুন লক্ষ্য ঠিক করা লোকদের তাঁরা দুই ভাগে ভাগ করেন।  এক ভাগ তাদের নতুন বছরের লক্ষ্য গুলো লিখে রাখে।  আরেক ভাগ তাদের লক্ষ্য কোথাও লেখেনি।

এক বছর পর খোঁজ নিয়ে গবেষকরা অবাক করা তথ্য পান।

যেসব লোক তাদের লক্ষ্য গুলো লেখেনি – তাদের মাত্র ৪% সত্যি সত্যি লক্ষ্য পূরণে কাজ করেছে।  আর যারা তাদের লক্ষ্য লিখে রেখেছিল – তাদের ৪৪% তাদের লক্ষ্য পূরণ করেছে!

দুই দলের মধ্যে তুলনা করলে, লক্ষ্য লিখে রাখা লোকদের সাফল্যের হার, লক্ষ্য না লেখা লোকদের চেয়ে ১১০০% এরও বেশি!

তার মানে, আপনি যদি আপনার লক্ষ্য লিখে রাখেন, এবং সেই লক্ষ্য পূরণে পরিকল্পনা করে কাজ করেন, তবে সাধারণ মানুষের চেয়ে আপনার সফল হওয়ার সম্ভাবনা ১০০০% এরও বেশি। অর্থাৎ ১০ গুণেরও বেশি!

এটা কেন কাজ করে?

বৈজ্ঞানিক ভাবে লেখালেখিকে বলা হয় “সাইকো-নিউরো-মোটর এ্যাক্টিভিটি” – সোজা কথায়, লিখতে গেলে আপনাকে অবশ্যই গভীর ভাবে চিন্তা করতে হবে, ও মনোযোগ দিতে হবে।

আপনি যখন আপনার লক্ষ্যের কথা লিখবেন, তখন না চাইলেও আপনি আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো লক্ষ্যটাই ঠিক করবেন।  সেইসাথে, আপনার অবচেতন মনে তা একটি “সত্যিকার লক্ষ্য” হিসেবে রেকর্ড হবে।  এবং দিনের ২৪ ঘন্টাই আপনি এই লক্ষ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পারবেন। আপনার এমনিতেই সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য প্ল্যান করতে ও কাজ করতে ইচ্ছে হবে।

আপনি হয়তো ভাবছেন, এত সহজে কিভাবে হয়? আসলে সাফল্যের কোনও গোপন সূত্র নেই, সবই সহজ – সহজ জিনিসগুলোই নিয়মিত করতে পারা কঠিন। আর সেটা যারা করতে পারে – তারাই সফল হয়।

আর্ল নাইটেঙ্গেলের ৩০-দিনের চ্যালেঞ্জ:

৭০ দশকে আর্ল নাইটেঙ্গেলকে বলা হতো পার্সোনাল ডেভেলপমেন্টের গুরু। তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় লিসন গুলোর একটি হলো তাঁর 30-day-challenge ; ৩০ মিনিটের দীর্ঘ টেপটিতে তিনি বর্ণনা করেছেন কিভাবে আমাদের মনকে নিয়ন্ত্রণ করে আমরা আমাদের জীবনে অভাবনীয় সব অর্জন করতে পারি।

ব্রায়ান ট্রেসির বইতে যদিও এই পদ্ধতির কথা বলা হয়নি।  কিন্তু লিখে রেখে লক্ষ্য পূরণের জন্য আপনি আর্ল নাইটেঙ্গেল সাহেবের পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।

ধরে নিন এটা লড়াকুর পক্ষ থেকে নতুন বছরের উপহার।

কি করবেন?

এই চ্যালেঞ্জটি পূরণের জন্য আপনার প্রয়োজন শুধু একটি কার্ড ও একটি কলম।

কার্ডের একপাশে আপনার এই বছরের সবচেয়ে বড় লক্ষ্যটি লিখুন।

এই বছরে আপনি কি অর্জন করতে চান? কি ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন নিজের জীবনে আনতে চান? – সুন্দর করে লিখুন।

এবার অপর পাশে লিখুন, “পরিকল্পনা আর পরিকল্পিত পরিশ্রমই সাফল্য আনে”

টানা ৩০ দিন আপনি ঘুম থেকে উঠে এবং ঘুমাতে যাওয়ার আগে কার্ডটিতে চোখ বুলাবেন।

আপনাকে এরচেয়ে বেশি কিছু আপাতত করতে হবে না।

আপনি দেখবেন, ৩০ দিন পার হওয়ার আগেই আপনি নিজে থেকেই সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য সুন্দর করে প্ল্যান করা শুরু করেছেন।  দিনে কয় ঘন্টা সেই প্ল্যানের পেছনে খাটবেন। কোন সপ্তাহে কি অর্জন করবেন, কোন মাসে লক্ষ্য পূরণের কোন পর্যায়ে থাকবেন – এসবই আপনি একে একে ছক করে ফেলতে পারবেন। 

কিন্তু এক দিনের জন্যও এই কার্ডটি দেখা বাদ দেবেন না।

যদি সত্যি সত্যি ৩০ দিন এটা করতে পারেন – তবে নিজের পরিবর্তন দেখে নিজেই অবাক হয়ে যাবেন।

শেষ কথা:

লড়াকুর মূল লক্ষ্যই হল, পাঠকদের জীবন সফল করার জন্য একটু হলেও সাহায্য করা। নতুন বছর যেন আপনার জন্য আরও সাফল্যমন্ডিত হয় – বছরের শেষ দিনে তাই এই ছোট্ট প্রচেষ্টা।

মাত্র ৩% মানুষ তাদের বছরের, মাসের, সপ্তাহের ও দিনের পরিকল্পনাগুলো লিখে রাখে।  এবং বাকি ৯৭% মানুষ সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করে।

এখন আপনার কাছে প্রশ্ন, আপনি কি ৩% এর একজন হবেন, নাকি ৯৭% এর দলেই থেকে যাবেন?

আমরাও চাই আপনি ৩% এর একজন হন। আর সেই পথে আমাদের এই লেখাটি যদি আপনাকে একটু হলেও সাহায্য করে – তবেই আমাদের চেষ্টা সফল।

লেখাটি কেমন লাগলো – তা আমাদের কমেন্ট করে জানান।

যদি মনে হয় এই লেখা পড়ে অন্যরাও উপকৃত হবেন – তাহলে শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন।

এই ধরনের আরও লেখার জন্য নিয়মিত আমাদের সাথে থাকুন। সাফল্যের পথে, সব সময়ে, লড়াকু আপনার সাথে আছে।

 

পোস্টটি শেয়ার করুন !