উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হওয়ার পর আপনার করনীয় কি? -জেনে নিন একজন সফল উদ্যোক্তার কাছ থেকে


বেশিরভাগ মানুষই জীবনে কোনও না কোনও দিক দিয়ে সফল হতে চায়। আর উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে তো এটা আরও বেশি সত্যি। একটি ব্যবসা শুরু করার সময়েই একজন উদ্যোক্তা কিছু লক্ষ্য ঠিক করেন, যেমন তাঁর ব্যবসা থেকে কত আয় হবে, মানুষের কাছে তাঁর ব্র্যান্ড কতটা পরিচিত হবে – ইত্যাদি।

লক্ষ্য ঠিক রেখে কাজ করে গেলে একটা সময়ে যে তিনি একজন সফল উদ্যোক্তায় পরিনত হবেন, এটা বলেই দেয়া যায়। কিন্তু লক্ষ্য অর্জন করার পর সফল উদ্যোক্তা হিসেবে কি করতে হবে?

মজার ব্যাপার হল, বেশিরভাগ উদ্যোক্তাই এতদূর চিন্তা করেন না। একজন উদ্যোক্তা হয়তো তাঁর ব্যবসার শুরুতে ঠিক করে রেখেছিলেন যে পাঁচ বছরের মাথায় তাঁর কোম্পানী পুরো এশিয়ার মধ্যে নামকরা একটি ব্র্যান্ড হবে, মাসিক আয় কোটি টাকা ছাড়াবে। যখন তাঁর এই লক্ষ্যটি পূরণ হয়ে গেল – এরপর আর তিনি বুঝে পান না সফল উদ্যোক্তা হিসেবে এখন তাঁর কি করা উচিৎ।

পল স্কলার্ডি, একজন আমেরিকান মিলিওনেয়ার যিনি এই সমস্যার দারুন কিছু সমাধান খুঁজে পেয়েছেন। নিজের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা আর পড়াশুনা কাজে লাগিয়ে তিনি এই সমাধান গুলো খুঁজে পেয়েছেন।

চার্টার্ড একাউন্টেন্ট পল ২০ বছর ধরে স্টক ব্যবসার সাথে জড়িত। এবং এই ব্যবসা থেকেই তিনি কোটিপতি হয়েছেন। বিপুল অর্থ আর সাফল্য পাওয়ার পর তিনি বর্তমানে তাঁর কোম্পানী “Super-Trades LLC” থেকে তরুণদের স্টক ব্যবসা শেখান।

বিজনেস ইনসাইডারকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “আমি আমার নিজের টাকা যে কৌশলে কাজে লাগিয়ে আজ মিলিওনেয়ার, সেই কৌশলই আমি শেখাই। আমার লক্ষ্য ছিল আর্থিক ভাবে সাবলম্বী হওয়া ও নিজেই নিজের বস হওয়া। আমি সেটা অর্জন করেছিলাম। তিন বছর আগে আমি বুঝেছিলাম যে আমি আমার লক্ষ্য পূরণ করে সফল হয়েছি।”

যে মূহুর্তে তিনি বুঝেছিলেন যে তিনি তাঁর লক্ষ্য পূরণ করে ফেলেছেন। তিনি নিজেকে বলেছিলেন, এখানেই থেমে যাওয়া যাবে না। তাই তিনি তাঁর স্টক এডুকেশন বিজনেস শুরু করেন।

তাঁর মতে, আপনি যদি আপনার সবচেয়ে বড় লক্ষ্য অর্জন করার পর থেমে যান, এবং কাজ করা বন্ধ করে দেন, তবে সামনে আর কোনও পথ দেখতে পাবেন না। যখনই বুঝবেন যে আপনি আপনার লক্ষ্য অর্জন করে ফেলেছেন, অন্য কথায়, ‘সফল হয়েছেন’ – তখন এই ৭ টি কাজ করুন:

০১. বিনয়ী থাকুন:

এটা খুবই স্বাভাবিক যে উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হওয়ার পর নিজের মাঝে একটা গর্ব অনুভব হয়বিল গেটস একবার বলেছিলেন, সাফল্যের কারনে অনেক সময়ে বুদ্ধিমান মানুষও ভাবে যে সে হারতে পারে না। সফল হওয়ার পর অনেকের আচরণেই দম্ভ আর অহঙ্কার প্রকাশ পায় – যা কোনও অবস্থাতেই ভালো নয়। পল স্কলার্ডি বলেন “প্রথমবার মিলিয়নেয়ার হওয়ার পর আমি এই অহঙ্কারের কারণেই সব হারিয়ে বসেছিলাম!”

Image result for bill gates lousy teacher success

সাফল্য পাওয়ার পর যদি আপনি অহঙ্কারী আচরণ করেন, তবে আপনি আপনার বন্ধু, শুভাকাঙ্খী এমনকি পরিবারের মানুষকেও দূরে ঠেলে দেবেন। আর একটা সময়ে আপনি দেখবেন সাফল্যের আনন্দ আপনার মন থেকে হারিয়ে গেছে। সেই সাথে সাফল্যও হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

কাজেই, যত বড় সাফল্যই আপনি অর্জন করেন না কেন – নিজের বিনয়ী স্বভাবকে নষ্ট হতে দেবেন না। এটাই সফল হওয়ার পর আপনার প্রথম ও প্রধান কাজ।

০২. আরও বড় লক্ষ্য ঠিক করুন:

সাফল্য পাওয়ার পর আপনার মনে যাতে অহঙ্কার বাসা না বাঁধে, এবং আপনি যেন থেমে না যান – তা নিশ্চিত করতে নিজের সামনে আরও বড় লক্ষ্য নির্ধারন করাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।

হ্যাঁ- একটি লক্ষ্য পূরণ হলে আপনি অবশ্যই তা উপভোগ করবেন। কিন্তু খেয়াল রাখুন, উপভোগের মাত্রা যেন বেশি না হয়ে যায়। তাতে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি।  একটি লক্ষ্য পূরণ হওয়ার পর ভেবে দেখুন, এই ক্ষেত্রে আপনি আরও কি অর্জন করতে পারেন, আপনার আর কি শেখার আছে?

উদাহরন হিসেবে ধরুন, আপনি একটি টি-শার্ট কোম্পানী দিয়ে আপনার উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেছিলেন। আপনার প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল আপনার কোম্পানী দেশের সেরা টি-শার্ট সাপ্লায়ার হবে। সেরা ডিজাইনের টি-শার্টের জন্য দেশের সব অঞ্চলের তরুণেরা আপনার পন্য খুঁজবে। এবং এখান থেকে আপনার মাসে ৫ লাখ টাকা আয় হবে।

aim higher than where you are, সফল উদ্যোক্তা হিসেবে করনীয়

এই লক্ষ্য পূরণ হওয়ার পর আপনি হয়তো থেমে গেছেন। আপনার ব্যবসা নিজের গতিতে চলছে, সেখানে এখন আর আপনাকে তেমন একটা সময় ও শ্রম দিতে হয় না। – এই সময়টিতে আপনি আপনার ব্যবসার পরিধি বাড়াতে পারেন। দেশের মার্কেট ছেড়ে আন্তর্জাতিক মার্কেটে পন্য রপ্তানির ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে পারেন। ৫ লাখ টাকার আয়কে ১০, ২০, ৫০ লাখে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারন করতে পারেন।  আপনার হয়তো দেশের মার্কেট সম্পর্কে ভালো আইডিয়া আছে, এবার আপনি আন্তর্জাতিক মার্কেট বোঝার জন্য পড়াশুনা ও রিসার্চ শুরু করতে পারেন।

কোনও একটি প্রজেক্ট সফল হওয়ার পর আপনার মাঝে যে আত্মবিশ্বাস ও দক্ষতা জন্ম নেবে, তা ফেলে রাখার বদলে আরও বড় লক্ষ্য অর্জনে কাজে লাগানোটাই ভালো নয় কি?

আপনি যখন একদম ছোট অবস্থা থেকে শুরু করে একবার একটি বড় লক্ষ্য অর্জন করতে পারবেন, তখন আরও বড় লক্ষ্য অর্জন করাও আপনার জন্য আগের চেয়ে অনেক সহজ মনে হবে।

০৩. আরও বেশি পরিশ্রমী হোন:

একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়া অনেক পরিশ্রমের কাজ। দিন রাত খেয়ে না খেয়ে অমানুষিক পরিশ্রম করে আপনি হয়তো একজন সফল উদ্যোক্তা হবেন। প্রথম দিকে হয়তো এই পরিশ্রম আপনার শরীরে সইতো না, মাঝে মাঝে ভেঙে পড়তেন, তারপর আবার উঠে দাঁড়াতেন। একটু একটু করে নিজের পরিশ্রম করার ক্ষমতাকে অনেক ওপরে নিয়ে এসেছেন আপনি।

অন্য সবকিছুর মত পরিশ্রম করতে পারাটাও একটি অভ্যাস। দীর্ঘদিন চর্চা করতে করতে ধীরে ধীরে এই ক্ষমতা বাড়ে। এই কঠোর পরিশ্রমের অভ্যাসের মধ্য দিয়ে আপনি আজ একজন সফল উদ্যোক্তা। অর্থ, খ্যাতি, সম্মান, ভালোবাসা – সবই আজ আপনি পেয়েছেন। আগে যারা আপনার সমালোচনা করত, তারা আজ আপনাকে দেখে উঠে দাঁড়ায়। আগে যেসব বস্তু চেয়েও পেতেন না – আজ তা হাত বাড়ালেই ধরা দেয়। – কি দারুন এক জীবন!

কিন্তু এই ‘দারুন জীবন’ উপভোগ করতে করতে আপনার পরিশ্রম করার ক্ষমতায় জং ধরে যাচ্ছে নাতো?

আগেই বলেছি পরিশ্রম একটি অভ্যাস। চর্চার মাধ্যমে যাকে ধারালো রাখতে হয়। এই পরিশ্রমের অভ্যাস আপনার অনেক সাধনার ফসল, যা আপনার আজকের সফল উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে বিরাট ভূমিকা রেখেছে।

এখন সফল উদ্যোক্তা হয়েছেন, যা অর্জন করতে চেয়েছিলেন পেয়েছেন। আপনি কি এই অর্জনকে হারিয়ে যেতে দিতে চাইবেন?  নিশ্চই না। এই পরিশ্রম করার ক্ষমতাও কিন্তু আপনার সফল হওয়ার পথে একটি অর্জন। এখন হয়তো আপনার অনেক কর্মী আছে যারা আপনার কাজ করে দেয়। আপনাকে আর আগের মত খাটতে হয় না – কিন্তু আপনি কি তাই বলে এখন পরিশ্রম করা বন্ধ করে দেবেন? তাহলে তো আপনার পরিশ্রমের ক্ষমতাটি নষ্ট হয়ে যাবে। এরচেয়ে কি খুঁজে বের করা ভালো নয়, যে এই ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে আপনি আর কি কি অর্জন করতে পারবেন?

michael jordan motivational quote

বিখ্যাত পারফর্মেন্স কোচ গ্রান্ড কার্ডন একবার বলেছিলেন “আপনার কি মনে হয়, কেন বড় বড় সফল মানুষেরা সাফল্য পাওয়ার পরও কাজ করে যান? – কারণ তাঁরা তাঁদের অবস্থান অনুযায়ী কাজ না করে, কাজ করার ক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করেন। অবস্থানের বদলে কর্মক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করুন, তাহলে আপনি দিন রাত আপনার সেরাটা দিয়ে যেতে পারবেন

আরও সামনে এগিয়ে যেতে হলে আপনাকেও তাই করতে হবে। জেফ বিজোস পৃথিবীর সেরা ধনী হওয়ার পর এখনও নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। বিল গেটস এখনও নিয়মিত কাজ করেন। এর কারণ তাঁরা তাঁদের অবস্থান নয়, তাঁদের দক্ষতা অনুযায়ী কাজ করেন।

আপনি যতই সফল হোন না কেন, সামনে এগিয়ে যেতে হলে আপনাকেও আপনার পুরো দক্ষতা অনুযায়ী কাজ করতে হবে। সাফল্যকে উপভোগ করবেন ঠিকই, কিন্তু নিজের জয়যাত্রাকে থামিয়ে দিয়ে নয়। তাই যদি সম্ভব হয়, পরিশ্রম আরও বাড়িয়ে দিন। এতে যেমন আপনার আরও উন্নতি হবে, তেমনি আপনার কাজ করার দক্ষতা আর ক্ষমতাও বাড়বে।

০৪. হিংসুকদের পাত্তা দেবেন না:

একটি জনপ্রিয় গল্প হয়তো আপনিও শুনেছেন একটি গরীব ছেলেকে তার প্রতিবেশী খুব হিংসা করতো। ছেলেটি যখন স্কুলে ভর্তি হয়, তখন প্রতিবেশী লোকটি বলে “ওর আবার পড়াশুনা কি? কয়দিন পর সব বন্ধ হয়ে যাবে।”, কিন্তু ছেলেটি স্কুলে পড়া চালিয়ে যেতে থাকল। তখন, লোকটি বলল, “পড়াশুনা করলেও পাশ করতে পারবে না।” – কিন্তু ছেলেটি দারুন রেজাল্ট করে পাশ করল। এরপর লোকটি বলল ছেলেটি স্কুল পাশ করলেও কলেজ পাশ করবে না। কিন্তু ছেলেটি কলেজও পাশ করল। এরপর লোকটি বলল, ছেলেটি চাকটি পাবে না। কিন্তু দেখা গেল ছেলেটি খুব ভালো একটি চাকরি পেয়েছে। এরপর লোকটি বলল, চাকরি পেলেও ছেলেটি বেতন পাবে না। এরপর ছেলেটি বেতনও পেল………. এভাবে ছেলেটি যতই ভালো করে, লোকটি অযথাই বাজে কথা বলতে থাকে।

সেই প্রতিবেশী লোকটির মত মানুষ আমাদের সবার জীবনেই আছে। আর যাঁরা নিজের স্বাধীন চিন্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে নিজের মত করে কিছু করতে চায়, তাঁদের পেছনে এমন হিংসুক লোক লেগেই থাকে।

ignore the haters

আর সফল মানুষদের হিংসা করার লোকের অভাব হয় না। আপনি যখন সাফল্য অর্জন করবেন, তখন বহু মানুষ হিংসায় জ্বলে যাবে। অপ্রিয় হলেও, এটাই সত্যি কথা। এরা হিংসা করে, কারণ এদের নিজেদের আপনার মত সফল হওয়ার যোগ্যতা নেই।

সফল হওয়ার পর হয়তো এমন বহু মানুষের কথা আপনার মনে পড়বে, যারা আপনাকে নিয়ে রীতিমত হাসিঠাট্টা করেছে। কখনওবা অপমানও করতে ছাড়েনি। অনেক সময়েই আপনার মনে হবে এসব মানুষের ওপর প্রতিশোধ নিতে পারলে ভালো হত।

কিন্তু ভেবে দেখুন, আপনি আসলে প্রতিশোধ নিয়ে ফেলেছেন। আপনার সাফল্য দেখে আর নিজেদের ভুল প্রমাণিত হতে দেখে অনেকেই জ্বলে পুড়ে মরবে। তাদের কথার তীর হয়তো আরও ধারালো হবে। ফ্রাঙ্ক সিনাত্রা একবার বলেছিলেন “অভাবনীয় সাফল্যই হল সবচেয়ে বড় প্রতিশোধ।”

এই কথাটি মনে রেখে, এসব মানুষের কথায় পাত্তা দেয়া বন্ধ করুন। তারা কোনওদিনই আপনার ধারেকাছে আসতে পারবে না। দূর থেকে বাজে কথা বলে মনের ঝাল মেটাবে।

যে কোনও বিষয়ে মনযোগ দিলে আমাদের এনার্জি খরচ হয়। পল বলেন, “হিংসুকরা চায়ই আপনার মনযোগ যেন তাদের ওপর পড়ে। আপনার এনার্জি নষ্ট করাই তাদের উদ্দেশ্য। এবং এই এনার্জি আপনার সাফল্যকে আরও বাড়ানোর কাজে লাগানোই ভাল হবে।”

হিংসুকদের পাত্তা দেয়া মানে আপনার এনার্জি ও সময়ের অপচয়। এসবের পেছনে খরচ করার পক্ষে আপনার সময় ও এনার্জি মোটেও উপযোগী নয়। আপনি এগুলোকে অনেক ভালো কাজে লাগাতে পারবেন।

০৫. তরুণদের সহায়তা করুন, শিষ্যত্ব দিন:

সফল উদ্যোক্তা হওয়ার পথে আপনাকে নানান ধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এর সাথে অনেক কিছু শিখতে পেরেছেন। আপনার এই শিক্ষাকে ছড়িয়ে দিন। সম্ভাবনাময়, সৎ ও উৎসাহী তরুণদের নিজের শিষ্য বা ছাত্র করে নিন। আপনার জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, ক্ষমতা – ইত্যাদি দিয়ে তাদের সফল হওয়ার পথ সুগম করুন।

great mentor

এর ফলে আপনার দু’টি লাভ হবে। আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ মানুষের সংখ্যা বাড়বে, সেই সাথে আপনি নিজের জন্য করার কিছু খুঁজে পাবেন – যা আপনাকে প্রশান্তি দেবে।

এরা যখন সফল হবে, তখন আপনি দেখবেন আপনার অধীনে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক সৃষ্টি হয়েছে। এই নেটওয়ার্ক যেমন আপনার প্রভাব ও ক্ষমতাকে বাড়াবে, তেমনি তরুণ সমাজের প্রতি আপনার দায়িত্বও পালন করা হবে।

০৬. দেখুন, শিখুন, জানুন:

উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হওয়ার পর আপনার হাতে বেশ অর্থ আর সময় থাকবে। আপনি চাইলে অন্যদের ওপর কিছু দায়িত্ব দিয়ে কিছুদিন নিজের মত করে কাটাতে পারবেন।

Related image

এই সুযোগকে কাজে লাগান। শুধু ভোজ, ভোগ আর বিলাসে অবসর সময় না কাটিয়ে পৃথিবী দেখতে বেরিয়ে পড়ুন। নতুন নতুন জ্ঞান অর্জন করে নিজেকে সমৃদ্ধ করুন। নতুন নতুন বিষয়ে বই পড়ুন। বিল গেটস এখনও বছর ৫০টি বই পড়ে শেষ করেন। আপনার দেখা ও জ্ঞান যত বাড়বে, আপনার দৃষ্টি ও দর্শন ততটাই বড় হয়ে উঠবে। মানুষ হিসেবে আপনি আরও বড় ও ভালো হয়ে উঠবেন।

০৭. কৃতজ্ঞতার সাথে প্রতিদান দিন:

আপনার সাফল্যের পেছনে অনেক মানুষের অবদান আছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে অনেকে আপনাকে সাহায্য করেছেন, আপনার জন্য প্রার্থনা করেছেন, আপনাকে সমর্থন দিয়েছেন। আর সবচেয়ে বড় কথা সৃষ্টিকর্তার করুণা ছাড়া কোনও সাফল্যই সম্ভব নয়।

সাফল্য পাওয়ার পর আপনার দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায় সেইসব উপকারের জন্য কৃতজ্ঞতা জানানো আর প্রতিদান দেয়া। আপনারও একটা সময়ে খারাপ দিন কেটেছে। আপনি হয়তো জানেন, অর্থ না থাকলে কতটা কষ্ট হয়। এখন আপনার হাতে অর্থ আছে- আপনার উচিৎ আপনার প্রয়োজন মিটিয়ে কিছু অর্থ এমন মানুষদের দান করা যাদের তা প্রয়োজন।

আপনার দু:সময়ে যারা পাশে দাঁড়িয়েছিল, এক মূহুর্তের জন্যও তাদের ভুলে যাবেন না। নিয়মিত তাদের খোঁজ রাখুন। তাদের অসুবিধায় ও বিপদে সাধ্যমত সাহায্য করুন।

হয়তো যখন শুরু করেছিলেন, তখন দারুন ব্যস্ত থাকতে হয়েছে আপনাকে। আপনার পরিবার হয়তো আপনাকে কাছে পায়নি। নিরবে বা সরবে আপনাকে সমর্থন দিয়ে গেছে। তাদের সময় দিন। তাদের কথা শুনুন। তাদের সাথে সময় কাটান। পারিবারিক ভাবে সুখী হতে না পারলে ব্যবসায়িক সাফল্যও আসে না। আমাজনের মালিক ও পৃথিবীর সর্বকালের সেরা ধনী জেফ বিজোস বলেছিলেন “আমি যদি অফিসে ভালো সময় কাটাই, তবে একজন ভালো স্বামী, ভালো বাবা হিসেবে ঘরে ফিরি। আবার যখন ঘর থেকে ভালো মন নিয়ে অফিসে যাই, তখন আমি একজন ভালো বস, একজন ভালো সহকর্মী হয়ে উঠি”।

islamic quote

পরিবারকে সময় দেয়ার পাশাপাশি অবশ্যেই সৃষ্টিকর্তার প্রতি আপনার সাফল্যের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। নিয়মিত প্রার্থনা করুন।  জনহিতকর কাজে আপনার সাধ্যমত সহায়তা করুন। এতে আপনার মনেও প্রশান্তি বজায়ে থাকবে। মনে রাখবেন, আপনার অর্জন শুধু আপনার একার নয়। আপনি যত বড় সফল উদ্যোক্তাই হন না কেন, দিন শেষে, আপনি আপনার পরিবার ও সৃষ্টিকর্তার কাছে কি – এটাই সবচেয়ে বড় বিষয়

পরিশিষ্ট:

সফল মানুষের জীবনে লক্ষ্য থাকবে এবং সেই লক্ষ্য পূরণ হবে – এটাই স্বাভাবিক। উদ্যোক্তার লক্ষ্য পূরণ হলেই তাকে আমরা ‘সফল উদ্যোক্তা’ বলতে পারি। কিন্তু জীবনের শেষ কথা এটাই নয়। জীবনের অর্থ আরও ব্যাপক। লক্ষ্য পূরণ হওয়া মানেই জীবন থেমে যাওয়া নয়। জীবন তার নিজস্ব গতিতে চলে, এবং একে আরও বড় অর্থ দিতে আপনাকেও তার গতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। আপনি হয়তো বর্তমানে একজন সফল উদ্যোক্তা, অথবা একজন ভবিষ্যৎ সফল উদ্যোক্তা। দু’টোর যে কোনও একটা হলেই আপনার জন্য এই কথাগুলো প্রযোজ্য।

একজন সফল বা একজন ভবিষ্যৎ উদ্যোক্তা হিসেবে এই লেখার বিষয়ে আপনার মতামত কি – তা আমাদের জানান। আপনার যদি মনে হয় এই লেখার সাথে আরও কিছু বিষয় যোগ করা যেত – তা আমাদের কমেন্ট করে জানান। আপনার কমেন্টের ফলে এই পেজটি আরও সমৃদ্ধ হবে। মানুষ আরও নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারবে। আর আপনার যদি মনে হয় এই লেখা থেকে উদ্যোক্তারা কিছু শিখতে ও কাজে লাগাতে পারবে – তবে শেয়ার করার মাধ্যমে তাদের দেখার সুযোগ করে দিন। আমাদের সাথে থাকুন। সফল হওয়ার পথে বা সাফল্যের পর – লড়াকু সব সময়ে আপনার সাথে আছে।

আপনার জন্য: সফল উদ্যোক্তা হতে ব্যবসা শুরুর আগেই এই ৮টি দক্ষতা অর্জন করুন

পোস্টটি শেয়ার করুন !