“No Excuses!: The Power of Self-Discipline” একটি বেস্ট সেলিং সেল্ফ-হেল্প বই। এই বইটিতে লেখক ব্রায়ান ট্রেসি দেখিয়েছেন, কিভাবে একজন মানুষ নিজের সমস্ত দুর্বলতা কাটিয়ে উঠে, নিজেকে কঠোর নিয়মের মাঝে বেঁধে যে কোনও লক্ষ্য পূরণ করতে পারে। ইংরেজী ভাষায় লেখা বইটির ব্যাপ্তি ৩০৪ পৃষ্ঠা। বইটি পড়ে হাজার হাজার মানুষ উপকৃত হয়েছেন। এই বইয়ের পরামর্শ অনুসরণ করে তাঁদের জীবন বদলে গেছে । বইটিতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে, কিভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় কাজ ও বিনোদন থেকে বিরত থেকে, জীবনের মূল লক্ষ্য পূরণ করা যায়, সেই বিষয়ে।
আজ আমরা এই বইয়ের মূল পরামর্শগুলো আপনার সামনে তুলে ধরব, যাতে আপনিও সেগুলো নিজের জীবনে কাজে লাগিয়ে, আরও দ্রুত সফল হতে পারেন।
লেখক ব্রায়ান ট্রেসির কথা:
বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে নামকরা লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকারদের মাঝে ব্রায়ান ট্রেসি অন্যতম। বর্তমানে তিনি দারুন সফল একজন মানুষ হলেও, তাঁকে অনেক খারাপ অবস্থা পার করে আসতে হয়েছে। তাঁর সবচেয়ে বড় গুণ হলো, অবস্থা যত খারাপই হোক না কেন, তিনি কখনো আশা ছাড়েন না। ছোটবেলায় তাঁর পরিবারের অবস্থা এতই খারাপ ছিলো যে, বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল – ইত্যাদিও তাঁর বাবা-মা সব সময়ে পরিশোধ করতে পারতেন না। কিন্তু এইসব সমস্যাকে তিনি কখনও দুর্বলতা হিসেবে দেখেননি, এগুলোকে তিনি প্রেরণা হিসেবে নিয়েছেন। কঠোর পরিশ্রম ও বুদ্ধির জোরে আজ তিনি একজন মাল্টি মিলিয়নেয়ার এবং বিখ্যাত মানুষ।
বর্তমানে তিনি ৩টি মাল্টিমিলিয়ন ডলার কোম্পানীর সিইও। তিনি ৪টি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারেন, এবং এখন পর্যন্ত ৮০ টি দেশ ভ্রমণ করেছেন। তিনি সব সময়েই নতুন নতুন বিষয় শিখতে চান। তাঁর মতে, আপনি যত নতুন জিনিস শিখবেন, আপনার সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা ততই বেড়ে যাবে। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “একজন মানুষ যদি একটি লক্ষ্য ঠিক করে, এবং সেই লক্ষ্যের সাথে জড়িত সবগুলো বিষয় শিখে তা কাজে লাগায়, তবে সে যে কোনও সমস্যা সমাধান করতে পারবে। কোনও বাধাই তার সফল হওয়া ঠেকাতে পারবে না”
বিশ্বের অন্যতম সেলফ্ ডেভেলপমেন্ট কোচ ব্রায়ান ট্রেসি এখন পর্যন্ত ৪০টির বেশি বই লিখেছেন, ৩০০টি ভিডিও তৈরী করেছেন। তাঁর অডিও লার্নিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে ২,৫০,০০০ মানুষকে সাফল্য বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছেন।
সাফল্য ও আত্ম উন্নয়ন বিষয়ে বর্তমানে তাঁরচেয়ে বড় স্কলার পৃথিবীতে আর কেউ নেই। আজকের আলোচ্য বইটি ছাড়াও তাঁর বেস্ট সেলিং বইয়ের তালিকায় রয়েছে: “Eat That Frog! : 21 Great Ways to Stop Procrastinating and Get More Done in Less Time”, “The 21 Success Secrets of Self-Made Millionaires”, “Create Your Own Future : How to Master the 12 Critical Factors of Unlimited Success”, “The 100 Absolutely Unbreakable Laws of Business Success” – এর মত বিখ্যাত বেস্ট সেলার সেলফ্ ডেভেলপমেন্ট বই।
বুক রিভিউ: “No Excuses!: The Power of Self-Discipline”
লেখক তাঁর জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, সফল হওয়ার জন্য আমাদের ধনীর ঘরে জন্মানোর দরকার নেই। সেই সাথে দরকার নেই কোনও ক্ষমতাবানের সাথে ভালো সম্পর্ক; এমনকি দারুন প্রতিভা নিয়ে জন্মানোরও দরকার নেই।
সফল হওয়ার জন্য একটি জিনিসই যথেষ্ঠ, আর তা হলো, যে কোনও অবস্থায় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা বা ‘Self-Discipline’;
লেখক বলেন, সাফল্যের প্রধান দুই শত্রু হলো, আলস্য, এবং কোনও কাজ করে অল্প সময়ে ফলাফল চাওয়ার অভ্যাস। লং টার্ম অর্জনের চেয়ে আমরা শর্ট টার্ম অর্জনকে বেশি মূল্য দেই। কিন্তু আজকে কিছু করে কালই বিশাল কিছু পাবার আশা করে বসে থাকলে কখনওই সফল হওয়া যাবে না। এই অভ্যাসের কারণে বেশিরভাগ মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে কোনও কাজেই লেগে থাকতে পারে না।
No Excuses! বইতে লেখক, আলস্য আর অল্প সময়ে বেশি পেতে চাওয়া – এই দু’টি দোষ থেকে মুক্ত হয়ে কিভাবে জীবনের তিনটি প্রধান ক্ষেত্রে সফল হওয়া যায় – তা দেখিয়েছেন।
লেখকের মতে, জীবনের ৩টি প্রধান ক্ষেত্র হলো:
১. ব্যক্তিগত লক্ষ্য
২. আর্থিক লক্ষ্য
৩. মানসিক ভাবে সুখী হওয়া
লেখক বলেন, এই বইটি সেইসব মানুষের জন্য লেখা হয়েছে, যারা জীবনে সত্যিকার সাফল্য পেতে চায়, যারা সাধারণ মানুষ হয়ে জীবন কাটাতে চায় না; এবং সেইসব মানুষের জন্য এই বইটি লেখা হয়েছে, যারা খারাপ অবস্থা থেকে নিজের চেষ্টায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায়।
লেখক Self-Discipline এর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে লিখেছেন, “ইচ্ছা না করলেও যে কাজ যখন করা উচিৎ, তখন করতে পারার ক্ষমতাকে বলে সেল্ফ ডিসিপ্লিন আত্ম শৃঙ্খলা”
নিজেকে কঠোর শৃঙ্খলায় বাঁধতে না পারলে, আপনি কোনও লক্ষ্যই পূরণ করতে পারবেন না। আর এই শৃঙ্খলার পথে বড় দুই বাধা, আলস্য ও কম সময়ে বেশি পাওয়ার আশা করা। এই দুটি সম্পর্কে একটু বিস্তারিত জানা যাক।
আলস্য:
আলস্য মানে সব ব্যাপারে সবচেয়ে সহজ পথটি বেছে নেয়া, অথবা যতটা পারা যায় – কম কাজ করা। অলস মানুষেরা সব ব্যাপারে শর্টকাট রাস্তা খোঁজে। অফিস যদি ৯টায় হয়, তারা পারলে একদম কাঁটায় কাঁটায় নয়টায় অফিসে ঢোকে, তারপর যত তাড়াতাড়ি পারা যায়, অফিস থেকে বের হওয়ার পথ খোঁজে। কাজের প্রতি এদের কোনও প্যাশন থাকে না। কোনওরকমে সময়টা পার করে মাস শেষে বেতন নেয়ার তালে থাকে।
এই ধরনের মানুষ জীবনে উন্নতি করতে চায়, কিন্তু সেজন্য কষ্ট করতে চায় না। তারা মনে করে কোনও একদিন, অলৌকিক ভাবে সে দারুন সফল হবে, অথবা তার হাতে অনেক টাকা চলে আসবে।
এরা ছাত্র জীবনে পড়ায় ফাঁকি দেয়, আর কর্ম জীবনে কাজে ফাঁকি দেয়। সব সময়ে সবচেয়ে সহজ রাস্তাটি বেছে নেয়। এভাবে চলতে চলতে শেষ পর্যন্ত তারা জীবনে কিছুই অর্জন করতে পারে না। সফল হওয়ার শর্টকাট খুঁজতে গিয়ে ব্যর্থ মানুষ হিসেবে তাদের জীবন শেষ হয়।
অল্প সময়ে বেশি পাওয়ার আশা:
এটাও অনেকটা আলস্যের মতই, কিন্তু এর প্রভাব আরও ব্যাপক।
অল্প সময়ে বা অল্প কষ্টে বেশি পাওয়ার আশা করা মানুষ সব সময়ে একটা উদ্ভট কল্পনার মধ্যে থাকে। তারা মনে মনে অনেক কিছু পেতে চায়, কিন্তু তার জন্য যে সময় দেয়া লাগে – এটা তারা মানতে চায় না। আলস্যের সাথে এই বিষয়টির পার্থক্য একটি উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যাক:
একজন অলস মানুষ যখন একটি চাকরি করে, তখন সে যতটা পারে কম কাজ করে বেতনটা নিতে চায়। অফিসে সে ৮ ঘন্টা বসে থাকে ঠিকই, কিন্তু কাজ করার বদলে যতটা পারে সময় নষ্ট করে অফিস থেকে বের হয়ে যেতে চায়।
আর যে লোকটি অল্প সময়ে বেশি পাওয়ার আশা করে, সে হয়তো ৮ ঘন্টার জায়গায় ৯ঘন্টা অফিসে থাকবে, এবং ১ মাসের মধ্যেই প্রমোশন অথবা বেতন বাড়ানোর দাবি করবে। অল্প একটু কাজ করেই এরা ভাবে, অনেক কিছু করা হয়ে গেছে। এবং তারা খুব দ্রুত পুরস্কার আশা করে।
তারা খুব বেশি দূরের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করতে চায় না। একটি কাজ ধীরে ধীরে করে তাকে সফল করা, এবং ধৈর্য ধরে বড় সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার মত মানসিক শক্তি এদের থাকে না।
লেখকের মতে এই দু’টি সমস্যা থাকলে একজন মানুষ সব সময়েই সোজা রাস্তা খুঁজবে। এরাই ‘কোটিপতি হওয়ার সহজ উপায়’, ‘তিন মাসে মিলিয়নেয়ার হোন’ – ইত্যাদি প্রতারণামূলক ফাঁদে জড়িয়ে পড়ে। লেখক বলেন, যার মাঝে আলস্য এবং অল্প সময়ে অনেক কিছু পেতে চাওয়ার সমস্যা আছে, সে সব সময়ে বিনোদন এবং অর্থহীন কাজে ব্যস্ত থাকে।
নিজের চাওয়া পূরণ করতে এরা পরিশ্রম করতে চায় না। সব সময়ে বিনোদন আর বিশ্রাম করার সুযোগ খোঁজে, আর আশা করে, সাফল্য নিজে নিজেই তাদের কাছে চলে আসবে। যেটা কখনোই সম্ভব নয়। সাফল্য পাওয়ার কোনও সহজ রাস্তা নেই। সফল হতে গেলে কষ্ট করতেই হবে।
কিভাবে আত্ম-শৃঙ্খলা বা Self-Discipline অর্জন করা যায়?
০১.নিজের মনকে শক্ত করুন:
লেখক বলেন আত্ম-শৃঙ্খলা বা Self-Discipline এর আরেক নাম, নিজের মনের ওপর প্রভুত্ব করতে পারা। পোষ মানা ঘোড়া যেমন, নিজের প্রভুর কথা ছাড়া এক পা-ও নড়ে না, তেমনি আপনার মনও যেন নিজের ইমোশন, অনুভূতি আর ইচ্ছার ওপর নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। মনকে এমন শক্ত বানাতে হবে, যাতে সে যে কোনও আবেগ ও অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কোনও কারণে যদি আপনার খুব রাগ হয়, এবং সেই রাগ প্রকাশ করলে যদি ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে – তবে আপনার মনের যেন সেই রাগ সামলানোর ক্ষমতা থাকে।
আপনি জানেন যে ফাস্টফুড শরীরের জন্য খারাপ। এবং এটা কোনওভাবেই আপনার খাওয়া উচিৎ নয়। কিন্তু তবুও চিকেন ফ্রাই এর ঘ্রাণ নাকে আসার পর যদি নিজেকে খাওয়া থেকে থামাতে না পারেন – তবে আপনার নিজের ওপর কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই।
লেখক আরও বলেন, আত্ম-শৃঙ্খলাকে আত্ম-নিয়ন্ত্রণও বলা যায়। তাঁর মতে, আত্ম নিয়ন্ত্রণ মানে পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা। অর্থাৎ, পরিস্থিতির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না হয়ে, পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করা।
ধরুন অনেক্ষণ কাজ করার পর আপনার আর কাজ করতে ইচ্ছা করছে না। আপনার শরীরে কোনও সমস্যা হয়নি, এমনিতেই বোরিং লাগছে। কিন্তু কাজটি এক ঘন্টার মাঝে শেষ করতে হবে। আপনার যদি নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে, তবে আপনি ইচ্ছা না করলেও কাজটি শেষ করবেন। আর যদি নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ না থাকে, তবে আপনি কাজ ফেলে ইউটিউব দেখা, বা অন্য কোনও বিনোদন করতে শুরু করে দেবেন। অর্থাৎ পরিস্থিতি আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করল, আপনি পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেন না।
লেখক বলেন, যারা নিজের ইচ্ছা আর আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তারা দুর্বল ধরনের মানুষ। এবং কোনও ব্যাপারেই এদের ওপর ভরসা করা উচিৎ নয়।
যাদের নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার শক্তি আছে, তাদের সব কাজেরই একটা উদ্দেশ্য থাকে। তারা এমন কোনও কাজ করে না, যা তাদের বড় লক্ষ্য পূরণের পথে বাধার সৃষ্টি করবে।
তারা এ্যাসাইনমেন্ট বা হিসাব করতে বসে গেম খেলে না, অথবা ফেসবুকে চ্যাট করে না। লক্ষ্য পূরণ করতে গেলে যে কাজটি করা সবচেয়ে জরুরী, সেই কাজটিই তারা আগে করে। একটি দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য ঠিক করে প্রতিটি মূহুর্ত সেই লক্ষ্য পূরণের কাজে লাগানোই আত্ম নিয়ন্ত্রণ।
০২. নিজেকে ‘না’ বলতে হবে:
লেখক বলেন, সেল্ফ ডিসিপ্লিন অর্জন করতে হলে নিজেকে ‘না’ বলা শিখতে হবে। এটা একজন মানুষের জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজ। যত কষ্টই হোক অপ্রয়োজনীয় কাজ থেকে বিরত থেকে, লক্ষ্য পূরণের কাজ করাই নিজেকে ‘না’ বলা।
আপনি যদি ভালো রেজাল্ট করতে চান, তবে পড়ার সময়ে ফেসবুক ব্যবহার করার ইচ্ছে, সিনেমা দেখার ইচ্ছে দমন করে জোর করে পড়ার টেবিলে বসে থাকতে হবে। আপনার যদি পড়ার সময়ে অন্য কিছু করার বদ অভ্যাস থেকে থাকে, তবে নিজের ওপর জোর খাটিয়ে নিজের মনোযোগ পড়ার দিকে ধরে রাখতে হবে। প্রথম দিকে হয়তো অনেক কষ্ট হবে – কিন্তু এক মাস এভাবে করে গেলে পরে আর কষ্ট হবে না।
অন্য যে কোনও বড় দক্ষতার মত নিজের ক্ষতিকর ইচ্ছাগুলোকে ‘না’ বলতে পারার দক্ষতা অর্জন করতেও অনেক দিন ধরে নিয়মিত চর্চা করতে হয়। একদিন চর্চা করেই, আপনি এই ব্যাপারে এক্সপার্ট হতে পারবেন না। দিনের পর দিন আপনাকে কষ্ট করতে হবে। অলসতা করলে বা নিজের ইচ্ছাকে প্রশ্রয় দিলে এটা সম্ভব হবে না। নিজের মনের সাথে লড়াই করে আপনাকে জিততে হবে।
০৩. দীর্ঘমেয়াদী চিন্তা করুন:
লেখক আরও বলেন, জীবনে বড় সাফল্য পেতে হলে আপনাকে বড় লক্ষ্য ঠিক করতে হবে; সেই সাথে এটাও মেনে নিতে হবে যে, বড় সাফল্য পেতে অনেক সময় ধরে লেগে থাকতে হয়। একদিন বা এক সপ্তাহ পড়াশুনা করে কেউ সেরা রেজাল্ট করতে পারে না। দিনের পর দিন রুটিন করে নিয়মিত পড়াশুনা করলেই শুধু সেরা রেজাল্ট করা যায়। যে কোনও বড় সাফল্য পেতে হলে এভাবেই কাজ করতে হয়। একটি বড় ব্যবসা দাঁড় করাতে বছরের পর বছর কাজ করতে হয়।
ব্রায়ান ট্রেসির মতে, বড় সাফল্য পাওয়ার সবচেয়ে বড় একটি যোগ্যতা হলো, ছোট ছোট সাফল্য বা ছোট ছোট ব্যর্থতাকে বড় করে না দেখা। আপনার নজর থাকতে হবে বড় লক্ষ্যটির দিকে। একটি ছোট প্ল্যান ব্যর্থ হলেই মূল লক্ষ্যকে বাতিল করে দেয়া যাবে না। কৌশল বদলে আবার কাজে নামতে হবে। কৌশল বদলাবে, কিন্তু লক্ষ্য বদলাবে না। শর্ট টার্ম সাফল্যকে গুরুত্ব দেয়ার বদলে লং টার্ম বা দীর্ঘমেয়াদী সাফল্যকে গুরুত্ব দিতে হবে।
আপনি যদি দিনের প্রতিটি সেকেন্ডকে আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় লক্ষ্যটি পূরণের কাজে লাগাতে পারেন, তাহলেই দেখবেন, ছোট ছোট সাময়িক ব্যর্থতা আর আপনাকে দুর্বল করতে পারছে না।
পৃথিবীর অল্প কিছু মানুষ অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি সাফল্য পায়। পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ ব্যবসায়ী আছেন, কিন্তু সবাই জেফ বেজোস, জ্যাক মা, ইলন মাস্ক বা ওয়ারেন বাফেট হতে পারেন না। লক্ষ লক্ষ শিল্পী আছেন, কিন্তু সবাই লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মত জিনিয়াস হতে পারে না। পৃথিবীতে এত রাজনীতিবিদ আছেন, কিন্তু সবাই নেলসন ম্যান্ডেলা, বারাক ওবামা বা ভ্লাদিমির পুতিন হতে পারেন না।
এর কারণ, সবাই আসলে তেমনটা হতে চায় না। মুখে হয়তো বলে বড় কিছু করতে চায়, কিন্তু তাদের লক্ষ্য থাকে ছোট, এবং স্বল্প মেয়াদী। যাঁরা ইতিহাস গড়েন, তাঁদের লক্ষ্যই থাকে নিজের ক্ষেত্রে ইতিহাস গড়ার। তাঁরা পাঁচ-দশ বছরের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেন না। তাঁরা এমন ভাবে কাজ করেন, যেন শত শত বছর ধরে তাঁদের নাম মানুষের মনে থাকে।
ব্যক্তিগত ও আর্থিক লক্ষ্য পূরণ, এবং মানসিক সুখ অর্জনে সেল্ফ ডিসিপ্লিন:
দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য যে কোনও ধরনের হতে পারে। সেটা হতে পারে ব্যক্তিগত অর্জন, বা আর্থিক সম্পদ অর্জন করা। কোটিপতি হওয়া, অথবা বড় কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ, বিজ্ঞানী বা শিল্পী হওয়া – এসবই দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য হতে পারে।
লক্ষ্য যেটাই হোক না কেন – আপনি যদি লক্ষ্যে অটল থেকে, দিনের প্রতিটি মূহুর্ত সেই লক্ষ্য পূরণের কাজে লাগাতে পারেন – তবে সেই লক্ষ্য পূরণ হবেই।
আপনি যখন অন্য সব অপ্রয়োজনীয় কাজ ও চিন্তা বাদ দিয়ে সাফল্যের বিষয়ের পেছনে সময় দেবেন – তখন যে কোনও সমস্যার সমাধান আপনার চোখে সহজেই ধরা দেবে। সফল হওয়ার পথ আপনি নিজেই খুঁজে বের করতে পারবেন।
লেখক বইয়ের শুরুতেই একটি কথা বলেছেন, সফল হওয়ার জন্য আপনার বড় ঘরে জন্মানোর দরকার নেই, বিরাট প্রতিভা নিয়ে জন্মানোরও দরকার নেই, শুধু লক্ষ্যের প্রতি অটল থেকে, অন্য সবকিছু বাদ দিয়ে কাজ করলে আপনি সফল হবেন।
মাইকেল জর্ডানকে সর্বকালের সেরা বাস্কেটবল খেলোয়াড় বলা হয়। আপনি কি জানেন, তিনি স্কুল টিমে ঢুকতেই পারেননি! স্কুল টিমে ঢুকতে না পেরেই তিনি জেদের বশে দিন রাত বাস্কেটবল চর্চা শুরু করেন, এরপর ধীরে ধীরে তিনি দক্ষ হয়ে ওঠেন। তাঁরচেয়ে অনেক বেশি প্রতিভা বা সুযোগ নিয়ে জন্মেও হয়তো অনেক খেলোয়াড় বিখ্যাত হতে পারেননি। কারণ, তাঁরা জর্ডানের মত অন্য সবকিছু বাদ দিয়ে দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য নিয়ে প্রাকটিস করেননি।
আপনি আর্থিক সাফল্য চান, অথবা অন্য কোনও দিক দিয়ে সফল হতে চান, আপনাকে দীর্ঘমেয়াদী একটি লক্ষ্য ঠিক করে কাজ করতে হবে।
এখানে কোনও অজুহাতের জায়গা নেই। “ভালো লাগছে না”, “এখন মুড নেই”, “এই হয়েছে”, “সেই হয়েছে” – এসব অজুহাত এক্ষেত্রে নিষিদ্ধ।
কাজের সময়ে যতই ফোন আসুক, টিভি সিরিজ চলুক, বন্ধুরা আড্ডা দিক – আপনাকে আপনার কাজ করে যেতে হবে। নিজেকে কঠোর শাসনে রাখতে হবে।
লক্ষ্য পূরণের আগে যদি কষ্ট করতে পারেন, তাহলে লক্ষ্য পূরণের পর আপনিই হবেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। কাজ নষ্ট করে সাময়িক সুখকে প্রাধান্য দেয়ার বদলে, সাময়িক সুখ নষ্ট করে যদি কাজকে প্রাধান্য দেন – তবেই সত্যিকার মানসিক সুখ ও প্রশান্তি পাবেন।
শেষ কথা:
পাঠকদেরকে লেখক খুব গভীর ভাবে ভাবতে বলেন, কোন লক্ষ্যটি পূরণ হলে সে সবচেয়ে বেশি সুখী হবে?
লক্ষ্যটি যা-ই হোক না কেন – বাকি সবকিছু ভুলে সেই লক্ষ্যের পেছনে ছুটতে হবে। দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় সেই লক্ষ্য পূরণে কাজ করতে হবে। যদি খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু না হয়, মানে, যদি কেউ মারা না যায়, অথবা কোনও বিপদগ্রস্থকে সাহায্য করার ব্যাপার না থাকে – তবে সেই নির্দিষ্ট সময়ে অন্য কিছুই করা যাবে না। কোনও অজুহাতই সেই ক্ষেত্রে খাটবে না।
আপনি যদি আসলেই সফল ও সুখী হতে চান, তবে সবার আগে নিজের ইচ্ছা আর অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করা শিখুন। আর সেই ক্ষেত্রে যদি আমাদের এই প্রচেষ্টা আপনাকে সামান্য একটু সাহায্যও করে থাকে – তাহলেই আমাদের প্রচেষ্টা সফল ধরে নেব।
বুক রিভিউটি পড়ে আপনার কেমন লাগলো – তা আমাদের কমেন্ট করে জানান। যে কোনও মতামত আর পরামর্শ কমেন্টে লিখুন। আপনার সব মতামতই আমাদের কাছে অমূল্য।
আর যদি মনে হয় “No Excuses!: The Power of Self-Discipline” এর রিভিউ অন্যদের উপকারে আসবে, তবে শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন।
এই ধরনের আরও লেখা পেতে আমাদের সাথে থাকুন। সাফল্যের পথে লড়াকু সব সময়ে আপনার সাথে আছে।
আপনার জন্য:
# নেতিবাচক আবেগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায়: আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা
# সময়ের কাজ সময়ে করেনা কারা? – সময়ের কাজ সময়ে করার উপায়
# অসাধারন সাফল্যের গোপন সূত্র: “অনিচ্ছায় কাজ করুন!!”