এক নজরে লেখাটির বিষয়ে :
তিনি রূপকথা লেখেন। বিশ্বের কোটি কোটি শিশুকিশোরের সাথে বড়রাও বুঁদ হয়ে থাকে তাঁর সৃষ্টি করা হ্যারি পটারের জাদুর জগতে। কিন্তু তাঁর নিজের জীবনটাও কি রূপকথার চেয়ে কোনও অংশে কম? হ্যারি পটারের গল্প যেমন কোটি কোটি মানুষের অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে, সব বাধা ডিঙিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনার অনুপ্রেরণা দেয়, এর স্রষ্টার জীবনও কিন্তু কম অনুপ্রেরণার নয়। এই বইটি বলতে গেলে সবগুলো প্রকাশকের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটানো রাওলিং তবুও হার মানেন নি। হ্যারিকে আলোর মুখ দেখিয়ে ছেড়েছেন। তাঁর জীবনীও আমাদের জন্য হতে পারে অন্ধকারের মুখ থেকে লড়াই করে আলো ছিনিয়ে আনার অনুপ্রেরণা। চলুন আজ আমরা অনুপ্রাণিত হই জে কে রাউলিং এর জীবনী থেকে।
যদি জিজ্ঞাসা করা হয় ৭৭০ কোটি মার্কিন ডলারের মালিক হতে আসলে কি করা উচিৎ? তাহলে হয়তো বেশিরভাগ মানুষেরই উত্তর হবে নতুন ধরনের আইডিয়া নিয়ে একটি ব্যবসা শুরু করা, যেমনটি বিল গেটস অথবা মার্ক জুকারবার্গের মত মানুষেরা করেছেন। আসলেই তো, ব্যবসা ছাড়া কিভাবে একজন বিলিওনেয়ার হতে পারে?
আপনার নিশ্চই মনে আছে ফেসবুক যখন ১০০ কোটি (এক বিলিয়ন) ডলার দিয়ে ইন্সটাগ্রামকে কিনে নিল, অথবা মাইক্রোসফট যখন ৭২০ কোটি ডলারের বিনিময়ে নোকিয়াকে কিনে নিল, তখন বিশ্বজুড়ে কি হৈচৈটাই না হল!
কিন্তু আপনাকে যদি বলা হয় শুধুমাত্র গল্পের বই লিখে একজন মানুষ নোকিয়ার পুরো কোম্পানী মূল্যের থেকেও ৫০ লক্ষ ডলার বেশি আয় করে ফেলেছেন – তখন আপনার কি মনে হবে?
জেকে রাউলিং এবং তাঁর হ্যারি পটার সিরিজের বিশ্বজোড়া ভয়াবহ জনপ্রিয়তার কথা হয়তো আপনার জানা আছে – কিন্তু আপনি কি জানতেন এই সিরিজের আয় বিশ্বের অনেক বড় বড় কোম্পানীর মোট সম্পদের থেকেও কয়েক গুন বেশি?
ধরে নিলাম জে.কে রাওলিংকে চিনতে আপনার একটু কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু হ্যারি পটারের নাম কখনও শোনেননি এটা বিশ্বাস করতে যে কারও কষ্ট হবে। পৃথিবীর ইতিহাসের সবথেকে জনপ্রিয় ও ব্যবসাসফল ফ্যান্টাসী সিরিজ হ্যারিপটারের স্রষ্টা লেখিকা জে.কে রাওলিং। এখন পর্যন্ত তাঁর লেখা বই ৪৫০ মিলিয়ন – অর্থাৎ ৪৫ কোটি কপি বিক্রি হয়েছে যার আনুমানিক মোট আয় ৭৭০ কোটি মার্কিন ডলার!
বইয়ের বাইরে হ্যারি পটার সিরিজের প্রতিটি সিনেমাই ব্লকবাস্টার হিট। সবকিছু মিলিয়ে কিছু সময়ের জন্য জেকে রাওলিং বিলিওনিয়ারও বনে গিয়েছিলেন। যদিও কিছু দানধ্যানের কারনে তিনি এখন আর বিলিওনিয়ার নেই, তবে তাঁর মোট সম্পদের পরিমান এখনও রানি ২য় এলিজাবেথের থেকে বেশি।
পৃথিবীর লেখকদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম বিলিওনিয়ার। আর এসবই সম্ভব হয়েছে তাঁর অসাধারণ কল্পনাশক্তি আর গল্প বলার অবাক করা ক্ষমতার কারনে। তাঁর মত এত চমৎকার করে চরিত্র সৃষ্টি করতে খুব কম লেখকই পারেন। তাঁর অসাধারন লেখনি দিয়ে তিনি কোটি কেটি শিশুকিশোরের মন তো জয় করেছেনই, সেইসাথে কোটিকোটি প্রাপ্তবয়স্ককেও রূপকথার জগতে দিনরাত বিচরণ করতে বাধ্য করেছেন। এমন কথাও বলা হয় যে মানুষের কল্পনাশক্তি কতদূর যেতে পারে তা বোঝার জন্য হ্যারি পটারের বইগুলো পড়া উচিৎ। কল্পনাশক্তি এবং অনুভব করার মত চরিত্র সৃষ্টির দিক দিয়ে তাঁকে সবাই একবাক্যে তাঁকে একজন জিনিয়াস হিসেবে স্বীকার করেন।
কিন্তু এত সফলতা যাঁর, তাঁর এই যাত্রাটি কিন্তু মোটেই সহজ ছিল না। জীবনের একটা পর্যায় পর্যন্ত তাঁকে অনেক কঠিন সময়ের মুখোমুখী হতে হয়েছে। একটি কন্যা সন্তান সহ তাঁকে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাতে হয়েছে। এই প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেই তিনি শুধুমাত্র অর্থ আয়ের উদ্দেশ্যে লেখালেখি শুরু করেন। পরপর ১২টি প্রকাশনা সংস্থার ফিরিয়ে দেয়ার পর অবশেষে ১৩ নম্বর সংস্থাটি বইটি প্রকাশ করতে সম্মত হয় – আর বাকিটা তো সাহিত্যের ইতিহাসের অমোচনীয় অধ্যায়। চলুন তাহলে জেনে নিই এই অসাধারন লেখিকার রূপকথার হাত ধরে সাফল্যগাথা রচনার গল্প।
সংগ্রাম ও সৌভাগ্যের শুরুর কথা:
এক্সিটার ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশুনা শেষ করার পর ইংরেজীর শিক্ষক হিসেবে কাজ করতে রাওলিং ১৯৯০ সালে পর্তুগালে পাড়ি জমান। সেখানে তাঁর পরিচয় হয় পর্তুগিজ সাংবাদিক জর্জ আর্নেটস এর সাথে। অল্পদিনের মধ্যেই তাঁরা বিয়ে করেন এবং ১৯৯৩ সালে জেসিকা নামে তাঁদের একটি মেয়ের জন্ম হয়। জেসিকার জন্মের অল্পকিছুদিনের মধ্যেই জর্জের সাথে রাওলিং এর সাংসারিক ঝামেলা শুরু হয় এবং এক পর্যায়ে তা বিবাহবিচ্ছেদে গড়ায়। জর্জ এর সাথে সম্পর্কের ইতি ঘটিয়ে রাওলিং জেসিকাকে নিয়ে স্কটল্যান্ডের এডিনবুরোতে ফিরে এসে তাঁর ছোটবোন দাই এর সাথে থাকতে শুরু করেন। স্কটল্যান্ডে ফিরে রাওলিং তাঁর মেয়েকে নিয়ে দারুন আর্থিক অনটনের শিকার হন। মেয়ে এবং নিজের জন্য কোনওভাবেই তিনি যথেষ্ঠ অর্থের যোগাড় করতে না পেরে অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যেই তিনি হ্যারি পটারের প্রথম বইটি লিখতে শুরু করেন। এরপরের কাহিনী তো রূপকথাকেও হার মানায়।
এক নজরে জে.কে রাওলিং:
বৃটিশ লেখিকা ও সিনেমার চিত্রনাট্যকার জোয়ান রাওলিং এর জেকে রাওলিং ছদ্মনাম নেয়ার পেছনে কিন্তু একটা ইতিহাস আছে । একজন মহিলার লেখা বই কম বিক্রি হতে পারে এই কারনে তিনি তাঁর মূল নামের বদলে শুধুমাত্র আদ্যক্ষর দিয়ে তাঁর ছদ্মনামটি তৈরী করেন। তাঁর মূল নামের সাথে কোনও মধ্যবর্তী নাম (middle name) না থাকলেও তিনি ছদ্ম নামের সাথে ‘K’ অক্ষরটি যোগ করেন তাঁর দাদী ক্যাথরিনের সম্মানে।
জোয়ান রাওলিং এর জন্ম ১৯৬৫ সালের ৩১ জুলাই। বাবা ছিলেন এয়ারক্রাফট ইঞ্জিনিয়ার পিটার জেমস রাওলিং, এবং তাঁর মায়ের নাম ছিল এ্যান রাওলিং।
১৯৯৭ সালে তাঁর প্রথম বই “হ্যারি পটার এ্যান্ড দি ফিলোসফারস্ স্টোন (Harry Potter and the Philosopher’s Stone)” প্রকাশিত হওয়ার আগে তিনি তাঁর এক সন্তানকে নিয়ে স্কটল্যান্ডের এডিনবুরোতে অর্থনৈতিক ভাবে খুবই বাজে অবস্থায় বসবাস করতেন। কিন্তু শিশুতোষ রূপকথার বইটি প্রকাশ হওয়ার পর রাতারাতি আন্তর্জাতিক বেস্টসেলারে পরিনত হয় এবং রাওলিং পরিনত হন আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত একজন বড় লেখক হিসেবে। ১৯৯৯ সালে যখন হ্যারি পটারের প্রথম তিনটি বই নিউইয়র্ক টাইমসের বেস্টসেলার তালিকার প্রথম তিনটি জায়গা একসাথে দখল করে নেয় তখন পৃথিবীর সাহিত্যজগত আরও একবার নড়েচড়ে বসে। এরপর একে একে হ্যারিপটার সিরিজের আরও চারটি বই বের হয় – এবং প্রতিটি বইই আগেরটির থেকে বেশি সাফল্য লাভ করে। হ্যারি পটার সিরিজের মোট সাতটি বই আজ পর্যন্ত সারা বিশ্বে ৪৫ কোটি কপিরও বেশি বিক্রি হয়েছে। হ্যারি পটারের বইগুলো থেকে বানানো প্রতিটি সিনেমাই ব্লকবাস্টার হিট। ছবিগুলোর সবগুলো মিলিয়ে আয় করেছিল ৭.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তাঁর প্রথম সিরিজের সফলতার পর রাওলিং এরপর একে একে আরও বেশ কয়েকটি বই বের করেন।
২০১২ সালে বের হওয়া তাঁর “ক্যাজুয়্যাল ভ্যাকেন্সি (Casual Vacancy)” বইটি দারুন প্রশংসা কুড়ায় – যার প্রধান কারন ছিল হ্যারি পটারের ছায়া থেকে সম্পূর্ণ ভাবে এই বইয়ের মাধ্যমে তিনি বের হয়ে আসতে পেরেছিলেন। বইটিতে ফ্যান্টাসির বদলে ছিল নির্মম বাস্তবতার এক অদ্ভূত প্রতিফলন। অনেক পাঠক অবশ্য হ্যারি পটারের মত কিছু একটা আশা করে বইটি পড়া শুরু করে হতাশও হয়েছিলেন। এরপর ২০১৩ সালে রবার্ট গ্যালব্রেইথ (Robert Galbraith) ছদ্মনাম নিয়ে “Cuckoo’s Calling” নামে আরও একটি বই বের করেন তাঁর বিখ্যাত নামের ছায়া থেকে বের হয়ে এসে। ২০১৬ সালে তিনি আরও একবার হ্যারি পটারের জগতে প্রবেশ করেন মঞ্চনাটক “হ্যারি পটার এ্যান্ড দি কার্সড চাইল্ড (Harry Potter and the Cursed Child)” এবং সিনেমা “ফ্যান্টাসটিক বিস্টস্ এ্যান্ড হয়্যার টু ফাইন্ড দেম (Fantastic Beasts and Where to Find Them)” এর মাধ্যমে। প্রথমটির গল্প গড়ে উঠেছে হ্যারি পটার সিরিজ শেষ হওয়ার উনিশ বছর পরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে, আর ফ্যান্টাস্টিক বিস্ট এর কাহিনী গড়ে উঠেছে হ্যারি পটার সিরিজের ঘটনা শুরুর বেশ কয়েক বছর আগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে।
মোট সম্পদের পরিমান:
আগেই বলা হয়েছে পৃথিবীর ইতিহাসে লেখকদের মধ্যে তিনিই প্রথম শতকোটি ডলারের মালিক হয়েছেন – অর্থাৎ বিলিওনেয়ার হয়েছেন।
বইয়ের আয়ের ১৫ শতাংশ রয়্যালিটি এবং সিনেমার পারিশ্রমিক ও লাভের অংশ মিলে তাঁর এই বিপূল অর্থ সমাগম। যদিও পরবর্তীতে কিছু দাতব্য সংস্থায় দান করার পর বিলিওনেয়ারের খাতা থেকে তাঁর নাম কাটা গেছে, তারপরও তিনি এখনও পৃথিবীর সবথেকে ধনী লেখক।
সানডে টাইমস ম্যাগাজিনের ২০১৭ সালের ধনীদের তালিকার হিসেব রাওলিং এর মোট সম্পদের পরিমান ৬৫০ মিলিয়ন (পঁয়ষট্টি কোটি) পাউন্ড অথবা ৮৫০ মিলিয়ন (পঁচাশি কোটি) মার্কিন ডলারের কাছাকাছি। এই পরিমান সম্পদ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথেরও নেই।
২০১৭ সালের প্রথম ভাগে মঞ্চনাটক “হ্যারি পটার এ্যান্ড দি কার্সড চাইল্ড” এবং ফ্যান্টাসটিক বিস্টস্ সিনেমার জন্য কমপক্ষে ৯৫ মিলিয়ন ডলার রাওলিং এর এ্যাকাউন্টে জমা হয়।
জে.কে রাওলিং এর প্রকাশিত বই সমূহ: (হ্যারি পটার সিরিজ)
০১ – হ্যারি পটার এ্যান্ড দি ফিলোসফারস স্টোন (Harry Potter and the Philosopher’s Stone; আমেরিকান সংস্করণ: “sorcerer’s stone”):
ম্যানচেস্টার থেকে লন্ডনে ফেরার সময়ে ট্রেনে বসে রাওলিং প্রথম হ্যারি পটারের আইডিয়া পান। কথিত আছে যে তিনি একটি ন্যাপকিনে গল্পের প্রাথমিক ধারনাটি লিখে রাখেন। হ্যারি পটারের সারাংশ ১২টি প্রকাশনা সংস্থার কাছ থেকে বাতিল হয়। “আনলাকি থারটিন” এর ধারনাকে ভুল প্রমাণিত করে ১৩ নম্বর প্রকাশনা সংস্থা “ব্লুমসবেরি (Bloomsbury Publishing)” হ্যারি পটার এর প্রথম বই “হ্যারি পটার এ্যান্ড দি ফিলোসফারস স্টোন” ছাপতে রাজি হয়। প্রথম বইটির জন্য রাওলিং মাত্র ৪০০০ মার্কিন ডলারের সমপরিমান পাউন্ড প্রাথমিক পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন। ১৯৯৭ সালের জুনে বইটি বাজারে আসে। বইটির বিষয়বস্তু ছিল এক অনাথ বালক হ্যারি পটার কে ঘিরে। খালা খালুর কাছে বসবাস করা হ্যারি তার এগারো বছর বয়সে জানতে পারে যে তার বাবা-মা গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যাননি, আমাদের জানা জগতের আড়ালে আরও একটি জগত রয়েছে: জাদুর জগত! সেখানে সবকিছুই জাদুতে চলে।
হ্যারির বাবা-মা আসলে সেই জগতের বাসিন্দা ছিলেন এবং এক ভয়ঙ্কর কালো জাদুকরের সাথে লড়াই করতে গিয়ে তাঁরা মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু লিলি এবং জেমস পটারকে মারার পর সেই জাদুকর যখন হ্যারির দিকে তার জাদুদন্ড ফিরিয়ে “কিলিং কার্স” নিক্ষেপ করে কার্সটি হ্যারিকে না মেরে সেই কালোজাদুকর লর্ড ভল্ডেমোর্টকে আঘাত করে, এবং লর্ড তার ক্ষমতা হারিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এরপর হ্যারি সমস্ত জাদুর জগতে বিখ্যাত হয়ে ওঠে। কিন্তু এসব সে তার এগারো বছর বয়সের আগ পর্যন্ত জানতে পারেনি। সে জাদুর জগতের সবথেকে বিখ্যাত বিদ্যালয় “হগওয়ার্টস স্কুল অব উইচক্রাফট্ এ্যান্ড উইজার্ডি (Hogwarts School of Witchcraft and Wizardry)” তে ভর্তি হয় এবং পরবর্তী ছয়টি বই জুড়ে এক টানটান উত্তেজনাপূর্ণ এ্যাডভেঞ্চারের কেন্দ্র হয়ে পড়ে হ্যারি।
০২- হ্যারি পটার এ্যান্ড দি চেম্বার অব সিক্রেস্টস (Harry Potter and the Chamber of Secrets):
হগওয়ার্টস এ হ্যারির দ্বিতীয় বর্ষের এ্যাডভেঞ্চার নিয়ে লেখা এই বইটির পুরোটায় ভৌতিক আবেশ পূর্ণ রহস্যে ঘেরা একটি টানটান উত্তেজনা পূর্ণ গল্প আছে। আগের বইটির মত ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত চেম্বার অব সিক্রেটস ও বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলে।
০৩- হ্যারি পটার এ্যান্ড দি প্রিজনার অব আজকাবান (Harry Potter and the Prisoner of Azkaban ):
১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে হ্যারি পটার সিরিজের তৃতীয় বই “হ্যারি পটার এ্যান্ড দি প্রিজনার অব আজকাবান” প্রকাশিত হয়। সেই বছরের শেষের দিকে দেখা যায় হ্যারি পটারের তখন পর্যন্ত প্রকাশিত তিনটি বইয়ের তিন বছরে মোট আয় প্রায় ৪৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। সেইসাথে সিরিজটি সেই সময় পর্যন্ত মোট সাড়ে সাড়ে তিন কোটি ৩৫টি ভাষায় অনুদিত হয়েছিল।
০৪- হ্যারি পটার এ্যান্ড দি গবলেট অব ফায়ার (Harry Potter and the Goblet of Fire):
২০০০ সালের জুলাইতে যখন সিরিজের চতুর্থ বই “হ্যারি পটার এ্যান্ড দি গবলেট অব ফায়ার” বের হয় তখন হ্যারি পটারের জনপ্রিয়তা রীতিমত উন্মাদনার পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রকাশ হওয়ার খুবই অল্প সময়ের মধ্যে বইটি ইতিহাসের সর্বকালের সবথেকে দ্রুত বিক্রি হওয়া বই হিসেবে শীর্ষস্থান দখল করে নেয়। প্রথম মুদ্রণেই বইটির পাঁচ কোটি ত্রিশ লাখ কপি ছাপানো হয় যার এক কোটি আশি লক্ষ কপিই ছিল প্রি-অর্ডার করা।
০৫- হ্যারি পটার এ্যান্ড দি অর্ডার অব দি ফিনিক্স (Harry Potter and the Order of the Phoenix):
প্রকাশনার প্রথম তারিখ পিছিয়ে বইটি ২০০৩ সালের জুন মাসে বাজারে আসে। এবং আগের গুলোর মতই বের হওয়ার সাথে সাথে হটকেকের মত দ্রুত বিক্রি হয়ে যায়। এই বইটির মাধ্যমে হ্যারি পটার শুধুমাত্র একটি কিশোর রূপকথার বদলে একটি অলৌকিক হরর থ্রিলারে রূপ নিতে থাকে।
০৬- হ্যারি পটার এ্যান্ড দি হাফ ব্লাড প্রিন্স (Harry Potter and the Half–Blood Prince):
পঞ্চম বইটি প্রকাশের পর দীর্ঘ দুই বছর ধরে ভক্তদের ঘুম হারাম করে অবশেষে ২০০৫ সালের জুলাই মাসে বাজারে আসে হ্যারি পটার সিরিজের ষষ্ঠ বই “হ্যারি পটার এ্যান্ড দি হাফ ব্লাড প্রিন্স।” – প্রকাশের প্রথম ২৪ ঘন্টার মধ্যেই বইটির প্রায় সাত মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়ে যায়। প্রকাশনার ইতিহাসে কোনও বই প্রকাশের প্রথম দিনে এতবেশি বিক্রি হয়নি।
০৭ – হ্যারি পটার এ্যান্ড দি ডেথলি হলোস (Harry Potter and the Deathly Hallows):
হ্যারি পটার সিরিজের সপ্তম ও শেষ বই “হ্যারি পটার এ্যান্ড দি ডেথলি হলোস” বইটি প্রকাশিত হয় ২০০৭ সালের জুলাই মাসে। কিন্তু প্রকাশ হওয়ার আগেই বইটি বার্নিস এ্যান্ড নোবেল, বর্ডারস বুকস্টোর এবং আমাজন ডট কম এর ইতিহাসে সবথেকে বেশি অগ্রিম অর্ডারকৃত বই হিসেবে জায়গা করে নেয়। রাওলিং যদিও বলেছিলেন যে আপাতত হ্যারি পটার নিয়ে আর কোনও কাজ করার পরিকল্পনা তাঁর নেই, কিন্তু একদমই যে করবেন না – সেটাও তিনি স্পষ্ট করে বলেননি। যার প্রতিফলন ২০১৬ সালে দেখা গেছে।
০৮- হ্যারি পটার এ্যান্ড দি কার্সড চাইল্ড (Harry Potter and the Cursed Child):
যদিও এটি প্রথমে একটি মঞ্চ নাটক হিসেবে লেখা হয়েছিল, এবং রাওলিং আসলে শুধু গল্পের কাঠামোটি দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন (মূল নাটকটির বেশিরভাগই লিখেছিলেন নাট্যকার জন টিফ্যানি এবং পরিচালনা করেছিলেন জ্যাক থর্ণ) – কিন্তু ২০১৬ সালে কার্স চাইল্ডের স্ক্রিপ্টটি বই আকারে বাজারে প্রকাশ হয় এবং রাতারাতি বেস্টসেলার তালিকায় উঠে আসে। সিরিজের মূল বইগুলোর মত এই নাটকের স্ক্রিপ্ট কেনার জন্যেও ভক্তরা বইয়ের দোকানের সামনে দীর্ঘ লাইন জমিয়ে দেয়। যদিও অনেক হ্যারি পটার ভক্তই বইটি পড়ে হতাশ হয়েছেন। বলাই বাহুল্য রাওলিং এর গল্প হলেও পুরোটাতে রাওলিং এর লেখনী ছিল না – হতাশ হওয়াটাই স্বাভাবিক।
০৯ – দি টেলস অব ব্রিডেল দি ব্র্যাড (The Tales of Beedle the Bard):
পাঁচ গল্পের এই বইটির কথা হ্যারি পটারের মূল বইয়ের সিরিজে বলা হয়েছিল। ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর এডিনবুরোয় অবস্থিত ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব স্কটল্যান্ডে ২০০ শিশুর জন্য আয়োজিত একটি চায়ের পার্টিতে এই বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
এই বইটি থেকে তাঁর আয়কৃত সমস্ত রয়্যালিটি রাওলিং তাঁর প্রতিষ্ঠা করা একটি দাতব্য সংস্থা “চেলড্রেনস’ হাই লেভেল গ্রুপ” এ দান করার ঘোষণা দেন।
এই সংস্থাটির নাম পরে পরিবর্তন করে “লুমস (Lumos)” রাখা হয়। লুমস আসলে হ্যারি পটার সিরিজে আলো জ্বালানোর জাদুমন্ত্র। সংস্থাটি পূর্ব ইউরোপের অনাথ শিশুদের কল্যানে কাজ করে থাকে।
বিশ্বের আর একজন অন্যতম জনপ্রিয় লেখক স্টিফেন কিং নিউ ইয়র্ক টাইমস এ লেখা তাঁর একটি কলামে লিখেছিলেন “আমি এই গ্রীষ্মে (১৯৯৯ সালের) রাওলিং এর মায়াবী গল্পের পরবর্তী কিস্তির জন্য তেমনই অস্থির হয়ে অপেক্ষা করছি যেমন ভাবে একটি পটার-পাগল বাচ্চা ছেলে অপেক্ষা করছে।”
জে.কে রাউলিং এর আজ পর্যন্ত প্রকাশিত বই সমূহ: (হ্যারি পটার বাদে)
দি ক্যাজুয়েল ভ্যাকেন্সি (The Casual Vacancy):
২০১২ সালের নভেম্বরে রাওলিং শিশুকিশোরদের বদলে বড়দের জন্য “দি ক্যাজুয়েল ভ্যাকেন্সি” নামে একটি উপন্যাস প্রকাশ করেন। ডার্ক কমেডি ধাঁচের এই উপন্যাসের কাহিনী গড়ে উঠেছে ইংল্যান্ডের একটি ছোট শহর প্যাগফোর্ড (Pagford) এর স্থানীয় মেয়র নির্বাচনকে ঘিরে। এই বইটি হ্যারি পটারের মত অতটা প্রশংসা পায়নি, যার প্রধান কারন হিসেবে ধরা হয় বইটির পাঠকেরা এই এই বইটি থেকেও হ্যারি পটার ঘরানার কিছু একটা আশা করেছিলেন। নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত একটি রিভিউতে উপন্যাসটিকে “হতাশাজনক” এবং “ম্যাড়মেড়ে” বলে আখ্যায়িত করা হয়। অবশ্য দি টেলিগ্রাফ রাওলিংকে এই উপন্যাসের জন্য পাঁচের মধ্যে তিন রেটিং দেয়। রিভিউতে বলা হয় – “বেরির মৃত্যুর সংবাদ পুরো প্যাগফোর্ডে ভাইরাসের মত ছড়িয়ে পড়াটা রাওলিং যেভাবে উপস্থাপন করেছেন, জেন অস্টিনও তার প্রশংসা করতেন।”
“কুক্কোস কলিং (Cuckoo’s Calling)”, “দি সিল্কওয়ার্ম (silkworm)”, “ক্যারিয়ার অব ইভেল (Career of Evil)”:
২০১৩ সালের এপ্রিলে “Cuckoo’s Calling” প্রকাশের মাধ্যমে রাওলিং নতুন একটি ঘরানায় কাজ শুরু করেন। ক্রাইম ফিকশন ঘরানার এই উপন্যাসটি রাওলিং নিজের নামে না ছাপিয়ে রবার্ট গ্যালব্রেইথ (Robert Galbraith) ছদ্মনামে প্রকাশ করেন। প্রকাশের প্রথম কয়েক মাসে এই বইটি মোটামুটি আকারে বিক্রি হয়, এবং বেশ ইতিবাচক সমালোচনা অর্জন করে। তবে সেই বছরের জুলাই মাসে যখন বইটির আসল লেখকের নাম প্রকাশ হয়ে পড়ে তখন বইটির বিক্রির মাত্রা হুহু করে বেড়ে যায়। ব্লুমবার্গ নিউজের তথ্য অনুযায়ী এই প্রসঙ্গে রাওলিং এর বক্তব্য ছিল – “আমি এই গোপন কথাটি আরও কিছুদিন গোপন রাখতে চেয়েছিলাম, তার কারন রবার্ট গালবারিথ খুবই স্বস্তিদায়ক একটি অভিজ্ঞতা ছিল। কোনও হৈচৈ এবং প্রতাশ্যার চাপ ছাড়া বই প্রকাশ করার ব্যাপারটা দারুন ছিল। আর অন্য একজনের নামে মানুষের প্রতিক্রিয়া পাওয়াটাও আমি উপভোগ করেছি।”
রবার্ট গালব্রেইথ এর নামে রাওলিং ২০১৪ সালের জুনে একই সাথে আরও দুইটি বই প্রকাশ করেন। বই দুটি হল “সিল্কওয়ার্ম” এবং “ক্যারিয়ার অব ইভেল।”
“ভেরি গুড লাইভস” (রাওলিং এর হার্ভার্ড সমাবর্তন ভাষণ):
জে.কে রাওলিং এর দেয়া ২০০৮ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে দেয়া বিখ্যাত ভাষণটি ২০১৫ সালে “(Very Good Lives: The Fringe Benefits of Failure and the Importance of Imagination)” – নামে বই হিসেবে প্রকাশ পায়। এই আত্মউন্নয়ন গাইডটি নিজের ব্যর্থতার সাথে কিভাবে খাপ খাওয়াতে হবে এবং নিজের কল্পনাকে কিভাবে সফলতা অর্জনের কাজে লাগানো যায় – এই বিষয়ে রাওলিং এর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ গুলোকে একটি বই হিসেবে ছাপিয়েছে। এই বইটির সমস্ত লাভের অর্থ রাওলিং এর প্রতিষ্ঠিত অলাভজনক শিশুকল্যান সংস্থা “লুমস (Lumos)” এর তহবিলে যোগ হয়।
সিনেমা
হ্যারি পটার সিরিজ (২০০১-২০১১)
২০০১ সালের নভেম্বরে জে.কে রাওলিং এর প্রথম বই হ্যারি পটার এ্যান্ড দি ফিলোসফারস স্টোন থেকে নির্মিত সিনেমা “হ্যারি পটার এ্যান্ড দি ফিলোসফারস স্টোন” (Harry Potter and The Philosopher’s Stone) মুক্তি পায়। ওয়ার্নার ব্রাদার্স এর প্রযোজনায় মুক্তি পাওয়া সিনেমাটির পরিচালনা করেছিলেন ক্রিস কলম্বাস। সিনেমার তিন শিশু অভিনেতা-অভিনেত্রী ড্যানিয়েল র্যাডক্লিফ, এমা ওয়াটসন এবং রুপার্ট গ্রিন্ট এর মহাতারকা হয়ে ওঠার প্রথম ধাপ এই সিনেমা। যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তির প্রথম সপ্তাহে সিনেমাটি ৮২০০টি থিয়েটারে মুক্তি পেয়ে নতুন রেকর্ড গড়ে। এবং প্রথম সপ্তাহে আয়ের আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়ে সিনেমাটি এক সপ্তাহে প্রায় ৯৩.৫ মিলিয়ন ডলার আয় করে।
এর আগের রেকর্ডধারী সিনেমা ১৯৯৯ এর “দি লস্ট ওয়ার্ল্ড : জুরাসিক পার্ক” এর চেয়ে হ্যারি পটারের প্রথম সিনেমাটির আয় ছিল ২০ মিলিয়ন (দুই কোটি) ডলার বেশি! বছর শেষে দেখা যায় সেই বছরে মুক্তি পাওয়া অন্য সিনেমাগুলিকে আয়ের হিসেবে যোজন যোজন পেছনে ফেলে হ্যারি পটার এ্যান্ড দি সরসেরাস স্টোন বছরের সবথেকে ব্যবসাসফল সিনেমার তকমা জিতে নিয়েছে। পরবর্তী দুটি সিনেমা “হ্যারি পটার এ্যান্ড দি চেম্বার অব সিক্রেটস (২০০২)” ক্রিস কলম্বাসের এবং “হ্যারি পটার এ্যান্ড দি প্রিজনার অব আজকাবান (২০০৪)” আলফোনসো কিউরোন এর পরিচালনায় মুক্তি পায়। দু’টি সিনেমাই প্রথমটির মতই বক্স অফিসে অসাধারন সাফল্যের মুখ দেখে। পরবর্তী সিনেমা “হ্যারি পটার এ্যান্ড দি গবলেট অব ফায়ার” মুক্তি পায় ২০০৫ সালে; এই সিনেমাটির পরিচালক ছিলেন মাইক নিউয়েল। পরিচালক পরিবর্তন হলেও সাফল্যের হিসেব একই রকম থাকে।
২০০৭ সালে মুক্তি পায় হ্যারি পটার সিরিজের পঞ্চম বইয়ের কাহিনী নিয়ে বানানো “হ্যারি পটার এ্যান্ড দি অর্ডার অব ফিনিক্স”। এই সিনেমাটিতে পরিচালক এবং চিত্রনাট্যকার দুই বিভাগেই পরিবর্তন আসে – কিন্তু বলাই বাহুল্য এতে সিনেমার ব্যবসায়িক সাফল্য এবং জনপ্রিয়তার হারে কোনও প্রকারের তারতম্য ঘটেনি। এই সিনেমাটি পরিচালনা করেন বাফটা ও এমি এ্যাওয়ার্ড বিজয়ী পরিচালক ডেভিট ইয়েটস। সিরিজের পরবর্তী তিনটি ছবি “হ্যারি পটার এ্যান্ড দি হাফ ব্লাড প্রিন্স (২০০৯)”, “হ্যারি পটার এ্যান্ড দি ডেথলি হলোজ পার্ট ১ (২০১০)”, এবং “হ্যারি পটার এ্যান্ড দি ডেথলি হলোজ পার্ট ২ (২০১১)” – এর সবগুলোই ডেভিডের পরিচালনায় মুক্তি পায়। প্রতিটি ছবিই বিশ্বজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করে এবং সর্বকালের সবথেকে জনপ্রিয় এবং ব্যবসা সফল মুভি সিরিজের তালিকার একদম ওপরের দিকে স্থান করে নেয়।
এক নজরে হ্যারি পটার সিনেমার আয় (মার্কিন ডলারে) :
০১. Harry Potter and The Sorcerer’s Stone
বাজেট : ১২ কোটি ২৫ লক্ষ
বক্স অফিস থেকে আয়: ৯৭ কোাটি ৪৬ লক্ষ
০২. Harry Potter and the Chamber of Secrets
বাজেট: ১০ কোটি
বক্স অফিস থেকে আয়: ৮৭ কোটি ৯০ লক্ষ
০৩. Harry Potter and the Prisoner of Azkaban
বাজেট: ১৩ কোটি
বক্স অফিস থেকে আয়: ৮৯ কোটি ৬৭ লক্ষ
০৪. Harry Potter and the Goblet of Fire
বাজেট: ১৫ কোটি
বক্স অফিস থেকে আয়: ৮৯ কোটি ৬১ লক্ষ
০৫. Harry Potter and the Order of the Phoenix
বাজেট: ১৫ কোটি
বক্স অফিস থেকে আয়: ৯৪ কোটি ২৯ লক্ষ
০৬. Harry Potter and the Half-Blood Prince
বাজেট: ২৫ কোটি
বক্স অফিস থেকে আয়: ৯৩ কোটি ৫০ লক্ষ
০৭. Harry Potter and the Deathly Hallows: Part I
বাজেট: ১২ কোটি ৫০ লক্ষ
বক্স অফিস থেকে আয়: ৮৩ কোটি ৫৩ লক্ষ
০৮. Harry Potter and the Deathly Hallows: Part II
বাজেট: ১২ কোটি ৫০ লক্ষ
বক্স অফিস থেকে আয়: ১৩০ কোটি
ফ্যান্টাসটিক বিস্টস এ্যান্ড হয়্যার টু ফাইন্ড দেম (Fantastic Beasts and Where to Find Them ):
হ্যারি পটার সিরিজ শেষ হওয়া পটার ভক্তদের জন্য ছিল দারুন এক হতাশার ব্যাপার। প্রায় সবাই ধরে নিয়েছিল যে বড় পর্দায় রাওলিং আর তাঁর সেই জাদুর জগত নিয়ে হাজির হবেন না। কিন্তু
২০১৩ সালে রাওলিং ঘোষণা দেন যে তিনি ওয়ার্নার ব্রাদার্সের সাথে নতুন একটি মুভি সিরিজের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। ইন্টারটেইনমেন্ট উইকলির তথ্য অনুযায়ী, সিরিজটির গল্প মূল হ্যারি পটার সিরিজে থাকা হগওয়ার্টস এর পাঠ্য বই “ফ্যান্টাসটিক বিস্টস এ্যান্ড হয়্যার টু ফাইন্ড দেম” এর ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে। রাওলিং এর কথায় – “(এই গল্পে) জাদুকরদের আন্তর্জাতিক কমিউনিটি দেখানো হবে। সতের বছর ধরে যে জগতে আমি সুখে বসবাস করে আসছি। তবে এটি হ্যারি পটারের সিক্যুয়েল বা প্রিক্যুয়েল – কোনওটাই নয়। এটি শুধুমাত্র জাদুকরদের জগতকে আরও একটু বড় করে দেখানো।”
এই সিনেমার মাধ্যমে চিত্রনাট্যকার হিসেবে রাওলিং এর অভিষেক ঘটে। ২০১৬ সালের নভেম্বরে মুক্তি পাওয়া সিনেমাটি রাওলিং এর গল্প নিয়ে তৈরী অন্য সিনেমা গুলোর মতই দারুন ভাবে সফল হয় এবং বিশ্বজুড়ে আশি কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি অর্থ আয় করে।
২০১৮ এর নভেম্বরে মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ফ্যান্টসটিক বিস্ট সিরিজের পরবর্তী সিনেমাটি অবশ্য বর্তমানে বেশ খানিকটা বিতর্কের মুখে পড়েছে। এই বিতর্কে অবশ্য রাওলিং এর কোনও প্রকার ইন্ধন বা অংশগ্রহণ নেই। বিতর্ক দানা বেঁধে উঠেছে সিনেমার অন্যতম প্রধান অভিনেতা জনি ডেপকে ঘিরে। গতবছর হলিউডের অনেক রথী মহারথীর কুকর্মের কথা গনমাধ্যমে প্রকাশ হয়ে পড়ার পর হলিউডের ভেতরের ও বাইরের মানুষের কাছে বেশ কয়েকজন তারকার ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। জনি ডেপও তাঁদের মধ্যে একজন। এই অভিনেতার সাথে অভিনেত্র এ্যাম্বার হার্ডের বিবাহবিচ্ছেদের কারন হিসেবে জানা যায় হার্ড আসলে জনি ডেপের হাতে নির্যাতনের শিকার। এত বড় একটি সিরিজে ডেপ এর থাকা নিয়ে অনেকেই সমালোচনা শুরু করেছেন – যে সমালোচনা এখনও চলছে। তবে ২০১৭ এর শেষের দিকে ওয়ার্নার ব্রাদার্স এবং রাওলিং উভয়েই জনি ডেপ এর পক্ষে বিবৃতি প্রকাশ করেন। নিজস্ব বিবৃতিতে রাওলিং বলেন- “সিনেমার নির্মাতাগণ এবং আমি আমাদের প্রথম ছবির অভিনয় শিল্পীদের নিয়ে কাজ করতেই স্বচ্ছন্দ, কিন্তু জনি যে আমাদের সিনেমার একটি প্রধান চরিত্র করছে এই বিষয়ে আমি বিশেষ ভাবে খুশি।”
ওয়েবসাইট
হ্যারি পটার সিরিজ শেষ হয়ে গেলেও এই ফ্যান্টাসি সিরিজ নিয়ে উন্মাদনায় ভাটা পড়ার আজ পর্যন্ত কোনও প্রকারের লক্ষণ দেখা যায়নি। বরং এই সিরিজ এবং এর চরিত্রদের নিয়ে ভক্তদের আগ্রহ দিন দিন বেড়েই চলেছে। হগওয়ার্টসের প্রতিটি হাউজের আলাদা আলাদা ফ্যানবেজ রয়েছে। স্বয়ং রাওলিং এর কাছেই প্রতিনিয়ত বিভিন্ন চরিত্র এবং ঘটনা নিয়ে নতুন আলোকপাত করার অনুরোধ আসে। এইসব উন্মাদনা এবং ভালবাসার প্রতিদানে ২০১৪ সালে রাওলিং তার নিজস্ব ওয়েবসাইট “পটারমোর ডট কম” খোলেন। ২০১৪ সালে তিনি বড় হয়ে যাওয়া হ্যারিকে নিয়ে হগওয়ার্টস এর পূনর্মিলনী বিষয়ে একটি ছোট গল্প লেখেন। সাইটটি চালু হওয়ার পর থেকে লক্ষ লক্ষ ভক্ত এই সাইটে হ্যারি পটার বিষয়ে রাওলিং এর আপডেট জানতে এবং বিভিন্ন রকম কুইজ ও গেমে অংশ নিতে প্রতিনিয়ত ঢুঁ মারেন। সাইট শুরু হওয়ার পর থেকে রাওলিং এখানে হ্যারি পটার বিষয়ে প্রচুর নতুন তথ্য এবং ছোট ছোট গল্প লিখেছেন। বর্তমানে এই ওয়েবসাইটে প্রতি মাসে প্রায় এক কোটি দশ লক্ষ পটার ভক্ত নিয়মিত সময় কাটান।
পারিবারিক জীবন
২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর রাওলিং ডা. নেইল মারী নামক একজন চিকিৎসককে বিয়ে করেন। নেইলের সাথে রাওলিং এর দু’টি পুত্র সন্তান রয়েছে। বড় ছেলে ডেভিডের জন্ম হয় ২০০৩ সালে এবং ছোট ছেলে ম্যাকেঞ্জির জন্ম হয় ২০০৫ সালে। এই দুই ছেলে ছাড়াও আগের স্বামীর সাথে জেসিকা নামে রাওলিং এর একটি মেয়ে আছে। জেসিকার জন্ম হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। পরিবার নিয়ে এই লেখিকা স্কটল্যান্ডের এডিনবুরোতে বসবাস করেন।
পরিশিষ্ট
এত এত সাফল্যের পরও রাউলিং খুবই সাধারন জীবনযাপনের চেষ্টা করেন। রাওলিং এর সবথেকে প্রশংসিত দিক গুলোর মধ্যে একটা হচ্ছে তিনি এত সাফল্যের পরও নিজের অতীত ভুলে যাননি। রাওলিং এর মতে মানুষের জীবনের দুঃখকষ্টগুলোই তার জীবনে সফল হওয়ার সবথেকে বড় অনুপ্রেরণা হতে পারে যদি সে সেগুলোকে মেনে নিয়ে নিজের উন্নতির উদ্দেশ্যে কাজ করে যেতে পারে। পৃথিবীতে অনেক লেখকই আছেন যাঁরা ‘মুড’ না থাকলে কাজ করতে পারেননা। খাওয়া থাকা, সবকিছু ঠিক মত না চললে তাঁদের কলম দিয়ে লেখা বের হয় না। রাওলিং কিন্তু তাঁর জীবনের সবথেকে কঠিন মূহুর্তে তাঁর সৃষ্টিশীলতার জাগরণ ঘটিয়ে তাঁর জীবনের সবথেকে সেরা কাজটি করে তাঁর নিজের কথাকেই সত্যিতে পরিনত করেছেন। তাঁর জীবন থেকে শুধু লেখক নন, আমাদের সবারই কিছু শেখার আছে।
জে কে রাউলিং এর জীবনী নিয়ে লেখাটি যদি আপনাদের এতটুকুও ভাল লেগে থাকে, তাহলেই আমাদের চেষ্টা স্বার্থক হয়েছে বলে ধরে নেব। লেখাটি কেমন লাগলো কমেন্ট করে আমাদের জানান। যদি মনেহয় সত্যির এর মাঝে ভাল কিছু আছে, তবে শেয়ার করে অন্যদের পড়ার সুযোগ করে দিন। আমাদের সাথে থাকুন, আমরা সব সময়েই আপনার সাথে আছি।