সমস্যার সমাধান পদ্ধতি সমস্যা ও সমাধান অনুযায়ী আলাদা হলেও, বেসিক কিছু জায়গায় সব সমস্যা সমাধানের ধাপ মোটামুটি একই রকম।
নিজেকে কি কখনও problem solver হিসেবে ভেবেছেন? যদি না-ও ভাবেন, তবুও আপনি একজন সমস্যা সমাধানকারী। আমরা সব সময়েই নানান সমস্যা সমাধান করছি।
আজকে কি বাজার করবেন, কোন পোশাকটা পরবেন, ফেসবুকে কি স্ট্যাটাস দেবেন – এসবই আসলে ছোট ছোট সমস্যা। এগুলোর সমাধান আমরা প্রতিদিনই করি। এসবের বাইরে মাঝে মধ্যে আমাদের বড় কিছু সমস্যাও সমাধান করতে হয়।
ছোট সমস্যাগুলো সহজেই সমাধান হয়ে যায়, তাই এগুলোর বেশিরভাগই সমস্যা মনে হয় না। তবে পারিবারিক, সামাজিক, ও পেশাগত কিছু বড় সমস্যা মাঝে মাঝেই আমাদের ঝামেলায় ফেলে।
তবে, কিছু সমস্যা সমাধানের পদ্ধতি চর্চা করলে বড় সমস্যাও সহজে সমাধান করা যায়।
সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়ানোর পদ্ধতি জানা জরুরী কেন?
পৃথিবীতে যত সফল নেতা, উদ্যোক্তা বা এই ধরনের মানুষ আছেন – তাঁরা সবাই আসলে অসাধারণ problem solver; যখন কেউ কোনও সমাধান দেখে না, তাঁরা ঠিকই সমাধান করে ফেলেন। সবার কাছে যা কঠিন মনে হয়, তাঁরা অনায়াসেই তা করে দেখান।
সমস্যা সমাধানের দক্ষতার কারণেই অন্যরা তাঁদের সম্মান করে; নেতা হিসেবে মেনে নেয়।
এছাড়া, সমস্যার দ্রুত ও কার্যকর সমাধান করতে পারলে আপনি নিজেও জীবনে অনেক এগিয়ে যেতে পারবেন।
কাজেই, আপনি যদি একজন যোগ্য নেতা হতে চান, অথবা দ্রুত নিজের অবস্থার পরিবর্তন করতে চান – তবে সমস্যা সমাধান করার দক্ষতা বাড়ানোটা জরুরী।
সমস্যার সমাধান দক্ষতা বাড়ানোর ৬টি পদ্ধতি:
একজন ভালো প্রবলেম সলভার হতে আপনার জিনিয়াস হওয়ার প্রয়োজন নেই। আপনাকে শুধু ধৈর্য ধরে নিচের বিষয়গুলো অনুশীলন করতে হবে:
০১. সমস্যার বদলে সমাধান নিয়ে ভাবুন:
মনোবিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন, মস্তিষ্ক যদি সমস্যা নিয়ে ভাবে, তবে সমাধান বের করতে তার অসুবিধা হয়। কারণ, সমস্যায় ফোকাস করা মানে মস্তিষ্কে নেতিবাচক চিন্তা ঢোকা। ফলে ভয়, দু:শ্চিন্তা – ইত্যাদি নেতিবাচক আবেগ মস্তিষ্কের কাজকে ব্যহত করে।
এখানে সমস্যাকে ভুলে যেতে বলা হচ্ছে না। যে কোনও সমস্যায় শান্ত থাকার চেষ্টা করতে বলা হচ্ছে। সমস্যা নিয়ে চিন্তা করার মানে, সমস্যার ফলে কি হবে – তা নিয়ে পড়ে থাকা। “হায় হায়, এখন কি হবে?”, “সর্বনাশ হয়ে গেল”, “এটা সমাধান না করতে পারলে তো বিরাট বিপদ” এগুলো সমস্যা নিয়ে চিন্তা করার নমুনা। এছাড়া, সমাধান না ভেবে “কার দোষে এটা হলো” – টাইপের চিন্তাও কোনও উপকারে আসে না।
এগুলোর বদলে সমস্যা দূর করার উপায় কি হতে পারে, কার কাছে পরামর্শ নেয়া যায়, কোন বইয়ে এই সমস্যার সমাধান থাকতে পারে – এগুলো নিয়ে চিন্তা করুন। এই ধরনের গঠনমূলক চিন্তা আপনাকে সমাধানের কাছে নিয়ে যাবে। নাহলে, সমস্যা নিয়ে পড়ে থেকে নিজের দুর্ভোগ বাড়বে।
০২. সমস্যার গোড়ায় যাওয়ার চেষ্টা করুন:
ধরুন, আপনি প্রতিদিন দেরি করে অফিসে যান। শত চেষ্টার পরও দেরি হয়েই যায়। নিজেও বুঝতে পারছেন না, এর সমাধান কি।
এই কনফিউশনের কারণ হতে পারে, আপনি যেটাকে সমস্যা ভাবছেন, তা মূল সমস্যা নয়।
হয়তো ভাবলেন, আপনার নিয়মিত রুটে জ্যাম বেশি পড়ে। কিন্তু রুট বদলেও আপনি দেরিতেই অফিসে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে সকালে ওঠার পর কি কি করেন – তার একটা লিস্ট করুন। এরপর একে একে ভাবুন – কোন কাজে আপনি কত সময় ব্যয় করেন।
হতে পারে, আপনি সকালের নাস্তায় বেশি সময় কাটান। অথবা ঘুম থেকে উঠতে দেরি করেন। এইসব কারণে বাসে উঠতে উঠতে জ্যামের সময় চলে আসে। হয়তো সমস্যা জ্যামে নয়, বাসে ওঠার সময়ে।
এর সমাধান হতে পারে, ঘুম থেকে পনেরো মিনিট আগে ওঠা, অথবা অফিসে পৌঁছে নাস্তা করা। এতে করে আপনি জ্যাম শুরু হওয়ার আগেই বাস ধরতে পারবেন।
একটি সমস্যার উৎস প্রথমে যা মনে হয়, তা না-ও হতে পারে। তাই যে কোনও সমস্যার গোড়ায় যাওয়ার চেষ্টা করুন। এরপর সমাধান শুধু সময়ের ব্যাপার।
০৩. প্রথমে সবকিছু সহজ ভাবে দেখুন:
একটি বিষয় যতটা কঠিন, তাকে তারচেয়ে কঠিন করে দেখা মানুষের একটা সাধারণ অভ্যাস। সমস্যা যত কঠিনই হোক, তাকে সহজ করে দেখার চেষ্টা করুন। অনেক সময়, সমস্যাকে বেশি জটিল করে দেখার কারণে সহজ সমাধানটি চোখে পড়ে না। অথবা মনে হয় “এতবড় সমস্যার সমাধান এটা হতে পারে না”। পরে দেখা যায়, ওটাই আসল সমাধান।
কাজেই যে কোনও সমস্যা প্রথমে সহজ ভাবে দেখার চেষ্টা করুন। এরপর যদি সহজ সমাধান না পান – তবে জটিল উপায়ের কথা ভাবুন।
০৪. সম্ভাব্য সব সমাধানকেই গুরুত্ব দিন:
কোনও সমস্যায় পড়লে, প্রথমেই তার সম্ভাব্য সবগুলো সমাধান লিস্ট করুন। হাস্যকর বা অবাস্তব মনে হলেও বাদ দেবেন না।
লিস্ট করার ফলে আপনি প্রতিটি সমাধান নিয়ে আলাদা আলাদা করে ভাবতে পারবেন। তা না হলে, চিন্তা করার সময়ে একটির সাথে আরেকটি তালগোল পাকিয়ে যেতে পারে।
ইদানিং কর্পোরেট জগতে একটি কথা খুব জনপ্রিয়: “No idea is a bad idea” – অর্থাৎ কোনও আইডিয়াই খারাপ নয়।
হয়তো যে সমাধানটি প্রথমে হাস্যকর মনে হয়েছিল এবং আপনি বাতিল করতে চাইছিলেন – সেটাই দেখা গেল আসল সমাধান।
কাজেই, সম্ভাব্য সব সমাধানকে গুরুত্ব দিন। বলা তো যায় না, “কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরুতেই পারে”।
০৫. বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করুন:
আগের পয়েন্টে সম্ভাব্য সব সমাধান লিস্ট করার কথা বলেছি। লিস্ট করার পর সেগুলো নিয়ে শুধু ভাবলেই চলবে না। অনেক সময়ে কাজে না নামলে আইডিয়ার কার্যকারিতা বোঝা যায় না।
একটি আইডিয়া কাজ না করলে, অন্য আইডিয়া নিয়ে কাজ করতে থাকুন। এক ভাবে না এক ভাবে সমাধান হবেই।
০৬. নতুন কিছু করার সাহস করুন:
অনেক সময়ে এমন সমস্যা দেখা দেয় – যার সমাধান আগে আপনি করেননি। এমনও হতে পারে কেউই করেনি।
এই অবস্থায় বসে না থেকে নিজেই সমাধান সৃষ্টির চেষ্টা করুন। হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে সমস্যা দূর হবে না। তাই ইউনিক কিছু করার সাহস করুন। নিজের ক্রিয়েটিভিটিকে কাজে লাগান। এমনও হতে পারে, সমস্যা সমাধানের সাথে সাথে জ্যাক মা, বা স্টিভ জবস এর মত ইতিহাস গড়ে ফেললেন!
০৭. ইতিবাচক শব্দ ব্যবহার করুন:
কথার শক্তির বিষয়ে এখনও অনেকেই জানে না। শব্দ দিয়ে মানুষের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া যায়। এমনকি ইতিহাসও বদলে দেয়া যায়।
একা, অথবা টিম হিসেবে সমস্যা সমাধান করার সময়ে, যত বেশি পারেন পজিটিভ বা ইতিবাচক শব্দ ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।
“অসম্ভব”, “হবে না” – ইত্যাদির বদলে “আর একটু চেষ্টা করতে হবে”, “এভাবে না হলে অন্যভাবে হবে” – টাইপের কথা বলুন। এভাবে কথা বললে মস্তিষ্কে পজিটিভ মেসেজ যায়। এর ফলে আপনার ও অন্যদের মাঝে আত্মবিশ্বাস আর আশা জাগবে।
শেষ কথা:
সমস্যাকে যত ভয় পাবেন, সমাধান ততই কঠিন হবে। ধৈর্য আর বিশ্বাসই সমস্যা সমাধানের আসল দক্ষতা। এই লেখায় বলা বিষয়গুলো চর্চা করলে এই দু’টি গুণই আপনার মাঝে চলে আসবে। তখন আর কোনও সমস্যাই কঠিন মনে হবে না।
হয়তো ভাবছেন, উপায়গুলো অনেক বেশি সহজ। আপনার ভাবনার উত্তর এই লেখার ৩নং পয়েন্টে দেয়া আছে। চাইলে আবার দেখে নিতে পারেন।
এই লেখা সম্পর্কে আপনার মতামত আমাদের কমেন্ট করে জানান।
যদি মনে হয় এই লেখাটি অন্যদের কাজে লাগবে, তবে শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন।
আমাদের সাথে থাকুন; সাফল্যের পথে প্রতি পদক্ষেপে লড়াকু আপনার সাথে থাকতে চায়।