নতুন বিজনেস আইডিয়া নিয়ে নামলে যে ৫টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতেই হয়


নতুন বিজনেস আইডিয়া মানেই কিন্তু এমন কিছু নয় – যা আগে ছিল না। পুরাতন আইডিয়াকে নিজের মত করে সাজিয়ে ব্যবসা করতে নামাও নতুন বিজনেস আইডিয়ার মধ্যেই পড়ে। দোকান থেকে শুরু করে ওয়েবসাইট বা শিল্প কারখানা পর্যন্ত সব বিজনেস আইডিয়াই একসময়ে নতুন থাকে। উদ্যোক্তারা সেটিকে ধীরে ধীরে পরিনত ও লাভজনক ব্যবসায়ে পরিনত করেন।

নতুন একটি ব্যবসা বা বিজনেস আইডিয়াকে পরিনত ও লাভজনক করতে হলে অবশ্যই আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এটা ঠিক যে, এক একটি ব্যবসার ধরন এক এক রকম। কিন্তু সব ব্যবসার শুরুতেই কিছু কমন সিদ্ধান্ত উদ্যোক্তাদের নিতে হয়। এই সিদ্ধান্তগুলোর ওপর অনেক সময়েই ব্যবসার ভবিষ্য‌ৎ নির্ভর করে।

আমেরিকার একটি শীর্ষস্থানীয় ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সী, শিয়াটল-ভিত্তিক “audiencebloom” এর প্রতিষ্ঠাতা, ও জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেটিং বই “THE NEW DEFINITIVE GUIDE TO YOUR BUSINESS ONLINE MARKETING” এর লেখক জেসন ডিমার্স তাঁর নিজের অভিজ্ঞতা থেকে এমন ৫টি বিষয়ের কথা বলেছেন – যেগুলোর সব নতুন ব্যবসায়ীকেই সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

অডিয়েন্স ব্লুম এর ক্লায়েন্ট লিস্টে আছে, ফোর্বস, বিজনেস ইনসাইডার, এন্ট্রাপ্রেনার – এর মত বিশ্বসেরা পাবলিকেশন কোম্পানী। এই কোম্পানীগুলো যে প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্র্যান্ড প্রমোশনের পরামর্শ নেয়, সেই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতার কাছ থেকে নতুন ব্যবসা বিষয়ে পরামর্শ নেয়াই যায়।

তাই চলুন, আমরাও জেনে আসি জেসন ডিমার্স এর বলা সেই ৫টি বিষয় – যেগুলো নিয়ে প্রত্যেক নতুন উদ্যোক্তারই ভাবা উচি‌ৎ।

০১. নতুন বিজনেস আইডিয়া কি আসলেই বাস্তবায়ন যোগ্য?

বিজনেস আইডিয়া

আপনার নতুন বিজনেস আইডিয়া যেটাই হোক না কেন, আপনাকে প্রথমেই এই সিদ্ধান্তটি নিতে হবে। আইডিয়া ভাবতে বুদ্ধি, জ্ঞান, আর কল্পনাশক্তি ছাড়া আর কিছুই লাগে না। এগুলো খুবই মূল্যবান বস্তু হলেও এগুলোর জন্য আপনার কাউকে টাকা দিতে হবে না, বা কোনও জিনিস স্থাপন করতে হবে না।

ভাবার সময়ে যে কোনও আইডিয়াই দারুন মনে হয়। এটি একটি সৃষ্টিশীল কাজ, এবং সৃষ্টিশীলতা কাজে লাগানোর আনন্দ এই কাজে পুরোপুরি পাওয়া যায়। কিন্তু এই আনন্দের ছোট একটি খারাপ দিক হল, ভাবনার মূহুর্তে এর কমতি গুলো চোখে পড়বে না।

জেসন এর মতে, যে কোনও নতুন ব্যবসার আইডিয়া মাথায় আসলে প্রথমে ভেবে দেখুন, এর জন্য আপনাকে কি কি ছাড়তে হবে, কতটা মেধা, পরিশ্রম ও অর্থ খরচ করতে হবে – এবং এগুলো করার ক্ষমতা আপনার আছে কিনা। এবং এটার পেছনে এগুলো খরচ করলে সময়ে সেগুলো থেকে কিরকম লাভ হতে পারে। সেইসাথে এটাও চিন্তা করতে হবে – এই আইডিয়া থেকে একটি স্থায়ী ইনকামের ব্যবস্থা হবে কি হবে না।

এছাড়া, বাজারে আপনার আইডিয়ার সম্ভাব্য চাহিদাও যাচাই করতে হবে। প্রয়োজনে খুব অল্প পরিসরে আইডিয়াটি বাস্তবায়ন করে তার প্রভাব পরীক্ষা করতে পারেন। এই পরীক্ষার পর আপনাকে বুঝতে হবে যে আইডিয়াটিতে কি কি পরিবর্তন আনা দরকার, অথবা কোনও পরিবর্তন আনলেও কি সেটা শেষ পর্যন্ত মানুষ গ্রহণ করবে কিনা।

যাদের মাথায় আইডিয়া আসে, তাদের মাথায় একটার পর একটা আইডিয়া আসতেই থাকে। আপনার মস্তিষ্কও যদি এমন উন্নত মানের হয়, তবে তার সৃষ্টিশীল অংশের পাশাপাশি লজিক্যাল বা এ্যানালাইটিক্যাল অংশকেও কাজে লাগান। যে কোনও আইডিয়া মাথায় আসার পর সাথে সাথে কিছু না করে, কয়েকদিন অপেক্ষা করুন। উত্তেজনা কমে গেলে তারপর ঠান্ডা মাথায় ভাবুন – সেটি কি আসলেই বাস্তবায়ন যোগ্য কি না। যদি না হয়, তবে ঘাবড়াবার কিছু নেই। ভাবতে থাকুন; আরও নতুন বিজনেস আইডিয়া অবশ্যই আসবে।

 ০২. ব্যবসার আয়তন বাড়াবেন কি বাড়াবেন না

ধরুন নতুন ব্যবসার আইডিয়া আপনি কাজে লাগিয়েছেন। এই মূহুর্তে সেটি ভালোই সফলতার সাথে চলছে। এমন একটি সময়ে আপনাকে একটি বড় সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে। আর তা হল ব্যবসাকে যেমন আছে তেমন রাখবেন, নাকি এর আয়তন বাড়াবেন।

ব্যবসার আয়তন ছোট হলে এটি কম ঝুঁকিপূর্ণ ও সহজে পরিচালনা যায় – এমনটা মনে হওয়া স্বাভাবিক। এবং এটা সত্যিও। কিন্তু ব্যবসার আয়ের সাথে ব্যবসার ও আপনার নিজের ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়ানোর জন্য ব্যবসার আয়তন বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে। নতুন বিনিয়োগের সাথে নতুন কর্মী/ আউটলেট/কারখানা/শাখা/পন্য বা সেবা – ইত্যাদি যোগ করার সিদ্ধান্তও আপনাকে নিতে হবে।

ব্যবসার প্রাথমিক বিনিয়োগ উঠে যাওয়ার পর এবং মোটামুটি চালু হয়ে যাওয়ার পর প্রতিটি নতুন উদ্যোক্তাকেই এই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। এটা কখনও কখনও উত্তেজনাপূর্ণ, আবার কখনও কখনও ভীতিকর। অনেক উদ্যোক্তাই এই সময়ে নার্ভাস হয়ে যান। অনেকেরই মনে হয়, ব্যবসার আয়তন বাড়াতে গিয়ে আবার এখন যা আছে – তাই শেষ না হয়ে যায়। এবং এতে লজ্জা পাবার কিছু নেই, কষ্ট করে একটা কিছু দাঁড় করানোর পর সেটি নিয়ে আবার ঝুঁকি নিতে যে কারও ভয় লাগবে। – তবে সময়ের সাথে একটি বড় প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ডে পরিনত হতে গেলে এই ঝুঁকি নিতেই হবে।

আশার কথা হল, সঠিক ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারলে ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যবসা শুরুর আগে ও পরে আপনি অনেক কিছু শিখবেন – যা আপনাকে এই সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা না থাকলে আপনি আপনার নতুন বিজনেস আইডিয়া নিয়ে এই পর্যন্ত আসতে পারতেন না। কাজেই নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন।

জেসনের মতে, ব্যবসা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়ে কয়েকটি বিষয়ে নজর দেয়া উচি‌ৎ:

# বড় প্রতিষ্ঠান চালানোর মত যথেষ্ঠ দক্ষতা কি আপনার ও আপনার লোকদের আছে? – যদি না থাকে, তবে আগে সেগুলো বাড়ানোর দিকে নজর দিন।

# প্রতিষ্ঠান বড় করার পেছনে যে খরচ হবে, তা উঠিয়ে আনার জন্য কার্যকর পরিকল্পনা কি করেছেন? করে থাকলে তাকে স্বল্প পরিসরে পরীক্ষা করে তার কমতিগুলো বের করেছেন? – কমতিগুলো দূর করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছেন কি?

# প্রতিষ্ঠান বড় করার পর যাতে আপনার প্রোডাক্ট বা সেবার মান ঠিক থাকে – সেই ব্যাপারে যথেষ্ঠ পদক্ষেপ নিয়েছেন কি?

# নতুন পন্য বা সেবা ব্যবসায়ে অন্তর্ভূক্ত করতে চাইলে সেই পন্য বা সেবা দেয়ার জন্য নিজেদের যথেষ্ঠ দক্ষ করেছেন কি? – না করে থাকলে আগে সেটা নিশ্চিত করে তারপর পদক্ষেপ নিন।

# নতুন কর্মী নিয়োগ দেয়ার পরিকল্পনা করলে, তাদের বেতন ও ভাতার উ‌ৎস নিয়ে ভেবেছেন কি? – তাদের দক্ষতার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন কি?

# ব্যবসা বাড়ানোর আগে মার্কেট নিয়ে যথেষ্ঠ গবেষণা করেছেন কি? মার্কেটিং এর খরচ ও লাভের ব্যাপারটা ভালোমত এ্যানালাইসিস করেছেন কি?

# ব্যবসা বাড়ানোটা সার্বিক দিক দিয়ে কতটা লাভজনক হবে, বা কিভাবে লাভজনক করবেন – সেই ব্যাপারে সুনিশ্চিত পরিকল্পনা করেছেন কি?

– এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিলে আশা করা যায় আপনার সিদ্ধান্তটি লাভজনক হবে।

 ০৩. যদি ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তবে কেন ছাড়ছেন তা নিশ্চিত হোন

নতুন বিজনেস আইডিয়া

একটি নতুন বিজনেস আইডিয়া নিয়ে কাজ করা বা নতুন একটি ব্যবসা দাঁড় করানো দারুন পরিশ্রম আর মানসিক চাপের ব্যাপার। এবং এই চাপ নেয়া ও পরিশ্রম করার ফল পেতে সাধারণত অনেক সময় লাগে। আপনি চাকরিতে জয়েন করার পরের মাস থেকেই বেতন পেতে শুরু করবেন। এবং এর জন্য আপনার পকেটের টাকাও খরচ হবে না, এবং নির্দিষ্ট দায়িত্বের বাইরে কোনও দায়িত্বও নিতে হবে না।

কিন্তু ব্যবসা করতে গেলে আপনাকে পুরো দায়িত্ব নিতে হবে। নিজের কাজ ঠিকমত করার পাশাপাশি, অন্যদের কাজ যেন ঠিকমত হয় – সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। সেইসাথে, প্রতিনিয়ত নিজের পকেট থেকে টাকা ঢালতে হবে – যার বিনিময়ে বহুদিন আপনার পকেটে কোনও টাকা ঢুকবে না।

সবচেয়ে কম বয়সে বিলিওনেয়ার হওয়া ভারতীয় উদ্যোক্তা বিজয় শেখর শর্মা তাঁর প্রথম ব্যবসার সব আয় কর্মচারীদের বেতন আর অফিসের খরচ যোগাতে গিয়ে খরচ করে ফেলতেন। রাতের পর রাত তাঁকে না খেয়ে কাটাতে হয়েছে।

প্রায় সব উদ্যোক্তাকেই এই ধরনের পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়। চারিদিকে চাপ সামলাতে সামলাতে আর দীর্ঘদিন টাকার মুখ না দেখে অনেকেই একটা পর্যায়ে হার মেনে নিতে চান।

জেসন ডিমার্স বলেন, হার মেনে নেয়ার চিন্তা আসেনি – এমন উদ্যোক্তা মনেহয় একজনও পাওয়া যাবে না। কিন্তু বেশিরভাগ সময়েই এই ধাপটির পরই ব্যবসায়ে সাফল্য আসে। এমন অবস্থায় তিনি কিংবদন্তী সুইডিশ টেনিস খেলোয়াড় বিয়োন বর্গ এর একটি হার না মানা উক্তি স্মরণ করতে বলেছেন। বোর্গের উক্তিটি এরকম:

“আমার সবচেয়ে বড় শক্তি হল আমার জেদ। আমি কোনও ম্যাচেই হার মানি না। যত পিছিয়েই পড়ি না কেন, শেষ বল পর্যন্ত আমি লড়াই করি। আমার ম্যাচের রেকর্ড দেখুন, বেশিরভাগ ম্যাচেই আমি এমন অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছি, যে অবস্থায় পরাজয় নিশ্চিত ছিল”

ডিমার্স এর মতে, কখনও কখনও হাল ছেড়ে দেয়াটা জরুরী হয়ে দাঁড়ায়, আবার এটা শুধুই বেছে নেয়ার ওপর নির্ভর করে। যেটাই হোক, আপনি যদি নিজের সাহস আর ক্ষমতার পুরোটা ঢেলে দিয়ে এগিয়ে যান, তবে ঠিক ছেড়ে দিতে চাওয়ার পর মূহুর্তেই সাফল্য আসতে পারে। কাজেই, হাল ছাড়ার আগে আরও একবার ভালো করে সব সম্ভাবনা নিয়ে ভাবুন, এবং তারপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিন।

 ০৪. কনট্যাক্টে কাজ দেবেন, নাকি নতুন স্থায়ী কর্মী নেবেন

নতুন বিজনেস আইডিয়া

আপনার নতুন বিজনেস আইডিয়া যদি ভালো করে – তবে এক সময়ে না এক সময়ে লোকবল বাড়ানোর প্রয়োজন হবেই। নতুন দক্ষতার প্রয়োজন ও ব্যবসার পরিধি বাড়ার কারণে একটা সময়ে গিয়ে এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতেই হবে।

আজকাল যে কোনও ব্যবসার জন্যই সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং একটি বড় ব্যাপার। প্রথম দিকে হয়তো আপনি বা আপনার কোনও এক পার্টনার ব্যাপারটি দেখবেন। কিন্তু একটা পর্যায়ে গিয়ে নির্দিষ্ট ও স্পেশালিস্ট সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার দরকার হবে।

এরকম আরও অনেক ক্ষেত্রেই আপনি নিজে সময় দিতে পারবেন না, অথবা বেশি দক্ষ লোকের প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে স্থায়ী লোক নিয়োগ দেবেন, নাকি চুক্তি বা কনট্যাক্টের ভিত্তিতে আউটসোর্সার বা ফ্রিল্যান্সার নিয়োগ দেবেন – সেটা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

হয়তো আপনার কোম্পানীর ওয়েবসাইটের জন্য একজন ওয়েব ডিজাইনার প্রয়োজন। এখন ওয়েবসাইটটি বানানো ও নিয়মিত দেখভালের জন্য একজন পার্মানেন্ট ওয়েব ডিজাইনার নিয়োগ দিতে পারেন, অথবা চুক্তির ভিত্তিতে একজনকে নিয়োগ দিয়ে তাকে দিয়ে শুধু সাইটটি বানিয়ে নিজেই মেইনটেন করতে পারেন। এর পুরোটাই নির্ভর করে টাকার হিসেব ও কাজের সুবিধার ওপর। এছাড়া জেসন আরও কিছু বিষয় মাথায় রেখে এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন:

# স্থায়ী কর্মীর বেতন-ভাতা ও আউটসোর্সারের পেমেন্টের মধ্যে তুলনা করুন। স্থায়ী কর্মী নিলে হয়তো তার মাসিক বেতন ১০ হাজার দিলেই চলবে; আবার বাইরের আউটসোর্সার নিলে তাকে ঘন্টা হিসেবে টাকা দিতে হতে পারে। হিসাব করে হয়তো দেখা গেল তাতে মাসে ১৫ হাজার খরচ হচ্ছে। ভালোমত হিসাব করে নিয়োগ দিন।

কাজের ধরন বিবেচনা করুন। অফিসে বসে কাজ করতে হবে, নাকি অনলাইনে করলেও হবে? একজন অতিরিক্ত কর্মীর জন্য ডেস্ক ও জায়গার খরচও হিসাবে আনুন। সাধারণত আইটি সম্পর্কিত ছোটখাট প্রজেক্টে আউটসোর্সার হলেই চলে; কিন্তু বিক্রয়, পাবলিক রিলেশন, এ্যাকাউন্টস – ইত্যাদি ক্ষেত্রে নিয়মিত কর্মীর সাথে দেখা হওয়াটা জরুরী।

টিম ওয়ার্কের জন্য অফিস কর্মী নেয়া ভালো। এক অফিসের হলে কর্মীদের মধ্যে টিম স্পিরিট ভালো থাকবে। অনেক সময়ে কনট্যাক্টে নিয়ে আসা আউটসোর্সারদের সাথে মূল প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ইগো জনিত সমস্যা দেখা যায়।

কতটা প্রতিযোগীতা মূলক বাজারে কাজ করছেন – সেটাও দেখার বিষয়। যদি খুব বেশি প্রতিযোগীতাপূর্ণ বাজারে ব্যবসা করেন – তবে ফ্রিল্যান্সার না নেয়াই ভালো। তাহলে আপনার অনেক গোপন তথ্য অন্য কোম্পানীর হাতে চলে যেতে পারে। স্থায়ী কর্মীর ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি কম।

কত দিনের প্রজেক্ট করবেন – এটাও বিবেচনা করুন। স্বল্প মেয়াদী হলে আউটসোর্সার নেয়াই ভালো। চাকরির ক্ষেত্রে একজন কর্মী দীর্ঘ মেয়াদ আশা করে। এর ফলে প্রজেক্টের শেষে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

০৫. পন্য বা সেবার মূল্য নির্ধারণ ও পরিবর্তন

পন্য বা সেবার দাম নির্ধারণ করা ব্যবসার একটি দারুন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। আপনি যদি একদম নতুন বিজনেস আইডিয়া নিয়ে নামেন, অথবা প্রচলিত ব্যবসাই নতুন ভাবে করতে চান – পন্য বা সেবার দাম বা মূল্য হতে পারে আপনার সবচেয়ে বড় অস্ত্র। আবার এই মূল্য ঠিক করায় ভুল হলে নতুন বিজনেস এর বারোটা বেজে যেতে পারে।

মূল্যের সাথে আপনার পন্য ও সেবার মান অবশ্যই মিলতে হবে – অথবা দামের চেয়েও পন্যের মান ভালো হতে পারে। তবে ভুল করেও পন্য ও সেবার মানের চেয়ে মূল্য বেশি রাখা যাবে না। তাহলেই শেষ।

অনেক সময়ে প্রচলিত বাজার মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে ভালো পন্য দেয়া একটি নতুন বিজনেস আইডিয়াকে বাজারে জনপ্রিয় করে তোলে। অনেক সময়ে লস দিয়েও বাজার ধরার জন্য এই কাজটি করা হয়। কিন্তু অনেক সময়েই দেখা যায় মূল্য বাড়ানোর পর পন্যের বিক্রি কমে গেছে। ক্রেতারা যদি শুধু কম দাম দেখেই আপনার পন্য বা সেবা কেনে – তবে কোনওভাবেই আপনি দাম বাড়াতে পারবেন না। তা করতে হলে আপনার পন্য বা সেবার মাঝে এমন কিছু দিতে হবে – যা অন্যরা দিতে পারছে না, অথবা দিচ্ছে না।

পন্য বা সেবার দাম নির্ধারনের সময়ে অবশ্যই আপনার টার্গেট কাস্টোমারদের সামর্থ, সংস্কৃতি, অভ্যাস – ইত্যাদি ভালোভাবে বিবেচনা করতে হবে। তাদের অভ্যাস বা সংস্কৃতি যদি হয় কম দামে পন্য কেনা – তবে পন্য বা সেবা বাজারের সেরা হলেও তারা আপনার কাছ থেকে বেশি দামে কিনবে না।

অন্যদিকে, কিছু ক্রেতা দামের দিকে তাকায় না। তারা সবচেয়ে বেশি দামে সবচেয়ে ভালো জিনিসটা কিনতে চায়। এরা যদি আপনার টার্গেট কাস্টোমার হয়, তবে সবচেয়ে ভালো পন্য বা সেবাটি দিয়ে তাদের জন্য ভালো একটি মূল্য নির্ধারণ করতে পারেন।

আপনাকে ঠিক করতে হবে আপনি বাজারে কি হিসেবে পরিচিতি চান। সবচেয়ে কম দামে ভালো পন্য, বড় ব্র্যান্ড যারা বেশি দামে সবচেয়ে ভালোটি দেয়, নাকি অন্যকিছু?

এর বাইরে, সফল প্রতিযোগীদের দিকে নজর রাখুন – তারা কিভাবে দাম ঠিক করছে। তাদের পন্য ও সেবার সাথে নিজেরটা মিলিয়ে দেখুন।

এইসবকিছু বিবেচনা করে যদি পন্যের দাম ঠিক করতে পারেন, তবে আপনার বাজারে অনেক ভালো করার সম্ভাবনা থাকবে।

পরিশিষ্ট:

বর্তমান যুগের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল আমরা চাইলেই ভালো ও অভিজ্ঞ মানুষদের পরামর্শ একদম বিনামূল্যে পেতে পারি। বিশেষ করে যারা নতুন কিছু শিখতে চায়, বা করতে চায় – তাদের জন্য এরচেয়ে ভালো সময় বোধহয় আর আসেনি।

সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আমরা সফল ও দক্ষ মানুষদের আইডিয়াগুলো যতদূর সম্ভব শেখার চেষ্টা করছি, এবং সহজবোধ্য ভাবে পাঠকদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

উদ্যোক্তা ও লেখক জেসন ডিমার্স নতুন বিজনেস নিয়ে আইডিয়াগুলো যদি আপনাকে একটুও সাহায্য করে – তাহলে আমাদের চেষ্টা সফল হবে।

লেখাটি কেমন লাগলো, এবং এখান থেকে আপনি নতুন কিছু শিখলেন কিনা – তা আমাদের কমেন্ট করে জানান। আপনার প্রতিটি মতামতই আমাদের কাছে মহা মূল্যবান।

আর যদি মনে হয় নতুন বিজনেস আইডিয়া নিয়ে কাজ করা সম্পর্কে এই লেখাটি পড়ে অন্যরাও উপকৃত হবেন – তবে শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন।

এই ধরনের আরও লেখার জন্য নিয়মিত আমাদের সাথে থাকুন। সাফল্যের পথে লড়াকু সব সময়ে আপনার সাথে আছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন !