আপনি হয়তো জানেন বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি আমাজন এর প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস। তাঁর আগে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ছিলেন বিল গেটস। কিন্তু আপনি কি জানেন বিল গেটসের আগে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী লোকটি কে ছিলেন? –তাঁর নাম স্যাম ওয়ালটন। ১৯৮২ থেকে ১৯৯২ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত স্যাম ওয়ালটন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ছিলেন। ১৯৯২ এ তাঁর মৃত্যুর পরই বিল গেটস ধনীর তালিকার ১ নম্বরে আসতে পেরেছিলেন।
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী হওয়ার পথে স্যাম ওয়ালটন এমন একটি কোম্পানী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যা খুচরা ব্যবসার চেহারাই পাল্টে দিয়েছিল। কোম্পানীর নাম ওয়ালমার্ট, এখনও যেটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় চেইনশপ বা সুপারস্টোর।
সবচেয়ে বড় চেইনশপ হওয়ার পাশাপাশি ওয়ালমার্ট এখনও বিশ্বের মধ্যে বিক্রি থেকে সবচেয়ে বেশি আয় (রেভিনিউ) করা কোম্পানী। ২০১৭ সালে ওয়ালমার্টের রেভিনিউ ছিলো ৪৮৬ বিলিয়ন ডলার। একই বছর স্টিভ জবস এর এ্যাপেলের আয় ছিল ২৫৫ বিলিয়ন ডলার।
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ওয়ালমার্টের ১১২৭৭ টি স্টোর রয়েছে। ওয়ালমার্ট এ সব মিলিয়ে ২৩ লক্ষ লোক কাজ করেন, পৃথিবীর আর কোনও প্রাইভেট কোম্পানীর এত কর্মী নেই।
প্রতিদিন গড়ে ওয়ালমার্টের স্টোরগুলোতে যত লোক পন্য কিনতে যায়, তা কানাডার মোট জনসংখ্যার (সাড়ে ৩ কোটি) চেয়ে বেশি।
আরও মজার ব্যাপার বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি জেফ বেজোস তাঁর অনেক ব্যবসায়িক জ্ঞান স্যাম ওয়ালটনের কাছ থেকে শিখেছেন। স্যাম ওয়ালটনের লেখা “made in America” বইটি জেফ বেজোসের সবচেয়ে প্রিয় ও বেশিবার পড়া বইগুলোর একটি। ধারণা করা হয়, ধনী হওয়ার মূল শিক্ষাগুলো বেজোস সেখান থেকেই পেয়েছেন।
আজকের লেখাটির ৫টি শিক্ষা মূলত স্যাম ওয়ালটন এর জীবন আর মেড ইন আমেরিকা বই থেকেই নেয়া হয়েছে।
চলুন তাহলে ওয়ালমার্টের ফাউন্ডার ও ১০ বছর বিশ্বের সেরা ধনী থাকা স্যাম ওয়ালটন নামের লোকটির থেকে জীবন ও ব্যবসার বিষয়ে কিছু শেখা যাক।
স্যাম ওয়ালটন এর ৫টি লিসন:
০১. টাকাকে সম্মান করতে হবে
প্রথমবার যখন ফোর্বস ম্যাগাজিন পৃথিবীর সেরা ধনী হিসেবে স্যম ওয়ালটনের নাম প্রকাশ করে, তখন ইন্টারনেট আবিষ্কার হয়নি, আধুনিক কম্পিউটারও তখন কেবল একটু একটু করে উন্নত হচ্ছে। হাত বাড়ালেই একজন মানুষের সম্পর্কে সব তথ্য পাওয়া যেত না।
বিশ্বের সেরা ধনী হওয়ার আগে কেউ তার নাম জানতো না, কারণ তার আগে কোনও পত্রিকাতেই তাকে নিয়ে কোনও খবর হয়নি, কোনও টিভিতেও তাকে দেখা যায়নি।
ফোর্বস যখন তাঁকে বিশ্বের সেরা ধনী ঘোষণা করল, তখন পত্রিকা আর টিভি রিপোর্টাররা পাগল হয়ে তাঁকে খুঁজতে শুরু করল। কিন্তু স্যাম ওয়ালটনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। রীতিমত একটা রহস্য সৃষ্টি হয়ে গেল এবং তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন গুজব চালু হতে শুরু করল।
যেমন, মাঝে মাঝে শোনা যেত, একজন নাকি তাঁকে সুইমিং পুলে পানির বদলে টাকা ভরে তার ওপরে শুয়ে থাককে দেখেছে। আবার শোনা গেল তাঁকে ১০০ ডলারের নোট দিয়ে সিগারেট জ্বালাতে দেখা গেছে। এইসব শুনে বেশ কয়েকজন রিপোর্টার মিলে বেনটনভিল এ চলে গেল, যেখানে স্যাম থাকতেন।
সেখানে গিয়ে তারা দেখতে পেল, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী লোকটি দামি স্পোর্টস কার চালানোর বদলে তখনও একটি পুরনো পিক–আপ চালান, যার পেছনে একটি খাঁচা বেঁধে রাখা হয়েছে, স্যামের কুকুরকে বহনের জন্য। তিনি আর দশটা সাধারণ মানুষের মত বাড়ির পাশের সেলুনে চুল কাটান। হাজার ডলারের ব্র্যান্ড পোশাক এর বদলে নিজের স্টোরের জন্য আনা শস্তা কাপড় আর ক্যাপ পরে ঘুরে বেড়ান। – কোনওদিক দিয়েই তাকে বিশ্বের এক নম্বর ধনী মনে হতো না। তাকে এক অতি সাধারণ মধ্যবিত্ত বলে মনে হতো।
কিন্তু তাঁকে কেউ কৃপণ বলতে পারবে না। প্রয়োজন হলে তাঁর পকেট থেকে প্রচুর টাকা বের হতো। কিন্তু কেন তিনি এমন সাধারণ ভাবে চলতেন?
কারণ তিনি টাকাকে সম্মান করতেন। টাকার মূল্য বুঝতেন। তাই প্রয়োজনের বাইরে একটা পয়সাও বাজে খরচ করতেন না।
স্যামের বাবা–মা মোটেও ধনী ছিলেন না। এবং তিনি যখন ছোট ছিলেন, তখন অর্থনৈতিক মন্দা চলছিল। সেই কারণে তাঁর বাবা–মা খুব হিসেব করে টাকা পয়সা খরচ করতেন। টাকা না থাকলে যে কত কষ্ট হয়, স্যাম তা খুব ভালো করে জানতেন, এবং জীবনে টাকার প্রয়োজনীয়তাও খুব ভালো করে বুঝতেন। তাই তিনি টাকাকে সম্মান করতেন, এবং টাকার মূল্য দিতেন।
আজকাল বাচ্চাদের টাকা পয়সা নিয়ে কথা বলাই পাপ ধরা হয়, আর ওয়ালটন ছোটবেলা থেকেই বাড়িতে টাকার যোগান দিতেন। তিনি কবুতর পালতেন, খরগোশ পালতেন – এগুলোর বাচ্চা বড় হলে বিক্রী করে টাকা আয় করতেন। হাতে আসা টাকা বাবা–মায়ের হাতে তুলে দিতেন। কিছু কিছু মানুষের জন্য টাকা আয় করা কত কষ্ট – তা তিনি ছোটবেলায়ই শিখেছিলেন – এবং সেই কারণে বাজে খরচ করে টাকার অপমান করতেন না।
টাকার প্রতি শ্রদ্ধার সাথে তাঁর ক্রেতাদের প্রতিও শ্রদ্ধা ছিলো। তাঁর মতে, ব্যবসা থেকে পাওয়া লাভের পুরোটা নিজে ভোগ করে ফেললে কাস্টোমারদের সাথে প্রতারণা করা হয়। আসলে ক্রেতারাই তো তাঁদের পকেটের টাকা দিয়ে ব্যবসাকে বাঁচিয়ে রাখছেন। স্যাম তাঁর লাভের বেশিরভাগই আবার ব্যবসায় বিনিয়োগ করতেন – যাতে তিনি কাস্টোমারদের আরও ভালো ও বেশি পরিমানে পন্য ও সেবা দিতে পারেন। আর তাঁর এই মানসিকতার কারণেই ওয়ালমার্টকে তিনি এত বড় করতে পেরেছিলেন।
এখানে সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো, স্যামের কাছে প্রথমে কোনও টাকাই ছিলো না, কিন্তু তিনি অপ্রয়োজনে খরচ না করে টাকা জমিয়ে জমিয়ে তাঁর ব্যবসা শুরু করেছিলেন। এবং পরে তিনি সেই অভ্যাস ধরে রেখে এত বড় একটি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আপনার কাছেও যদি টাকা না থাকে, এবং আপনি বড় ব্যবসায়ী হতে চান – তবে আপনিও স্যামের এই শিক্ষাকে কাজে লাগাতে পারেন।
০২. সব ব্যাপারে নিজের সেরাটা দিতে হবে
ছোটবেলায় স্যাম ওয়ালটনের মা তাঁকে প্রায়ই একটি কথা বলতেন, “বাবা, জীবনে যা–ই করবে, নিজের পুরোটা দিয়ে করবে। সব সময়ে নিজের সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করবে।”
ছোটবেলায় তিনি খরগোশ, কবুতর বিক্রী করার পাশাপাশি নিউজপেপার আর ম্যাগাজিন ডেলিভারির কাজও করতেন।
একবার নিউজপেপার কোম্পানী থেকে বলা হলো, যে বিক্রেতা এক দিনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ম্যাগাজিন সাবক্রিপশন করাতে পারবে – তাকে ১০ ডলার দেয়া হবে। এখানে বলে রাখা ভালো, ১৯২০–৩০ এর দিকে ১০ ডলার মানে আজকের ১০০ ডলারেরও বেশি। স্যাম সেই ১০ ডলার না জিতে ঘরে ফেরেননি।
খেলাধুলাতেও তিনি নিজের সেরাটা দিয়ে দিতেন। বেসবল, বাস্কেটবল, ফুটবল – সবকিছুতেই তিনি ছিলেন সেরা। তিনি তাঁর জীবনে কোনও খেলায় হারেননি। একটি অদ্ভূত ব্যাপার, তাঁর টিম যেসব ম্যাচে হেরেছে – তার কোনওটিতেই তিনি দলে ছিলেন না। হয়তো তিনি অসুস্থ ছিলেন, অথবা ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু তিনি টিমে থাকলে টিম কখনওই হারতো না।
তাঁর নীতি ছিল, “জীবন থাকতে হারবো না।” তাঁর এই মনোভাবের কারণেই তিনি কখনও আশাহত হতেন না। পরিস্থিতি যত খারাপই হোক না কেন, তিনি হার মানতেন না। তাঁর ধারণা ছিলো, হার না মানলে তাকে কেউ হারাতে পারে না।
স্কুলের বন্ধুদের সাথে একবার বাজি ধরেছিলেন যে তিনি সবার আগে বয়স্কাউটের ‘ঈগল ব্যাচ’ জিতবেন। এবং ১৩ বছর বয়সে ঈগল ব্যাচ জিতে তিনি সেই সময়ের হিসেবে সবচেয়ে কম বয়সে ঈগল ব্যাচ জেতা ছাত্র ছিলেন।
এখানে বোঝার বিষয় হলো, স্যাম ওয়ালটন কিন্তু দারুন মেধাবী বা শক্তিশালী ছিলেন না, তাঁর মন ছিলো মারাত্মক রকমের শক্ত আর প্রত্যয়ী। একবার কোনও লক্ষ্য ঠিক করলে পূরণ করার আগে থামতেন না। জেতার ইচ্ছা অন্য সবার চেয়ে বেশি পোষণ করতেন বলেই তিনি জিততেন। যেটাই করতেন, নিজের সেরাটা দিয়ে করতেন। যা–ই করতেন, তাতে সেরা হওয়ার চেষ্টা করতেন।
০৩. বিনয়ী হতে হবে আর অন্যকে সম্মান করতে হবে
ইগো বলতে স্যাম ওয়ালটনের মাঝে কিছু ছিলো না। ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় থেকে তিনি খুব সাধারণ কিন্তু দারুন কার্যকর একটি কাজ করতেন। তিনি সবার সাথে আগে কথা বলতেন। সবাইকে আগে শুভেচ্ছা জানাতেন। অন্য মানুষটির কথা বলার অপেক্ষা তো করতেনই না, সব সময়ে চেষ্টা করতে প্রথম হাসিটা, প্রথম গুড মর্নিংটা যেন তাঁর মুখ থেকে আগে বের হয়।
এটা তিনি সব সময়ে করতেন। যাকে তিনি চিনতেন, তাকে নাম ধরে শুভেচ্ছা জানাতেন, আর যাকে চিনতেন না, তাকেও “গুড মর্নিং” বা “হ্যালো” বলে হাসি মুখে শুভেচ্ছা জানাতেন। তিনি সব সময়ে অন্যের কাছে নিজেকে বিনয়ী মানুষ হিসেবে তুলে ধরতেন, এবং সবাই যাতে তাঁর কাছে এসে নিজেকে সম্মানিত মনে করে – তা নিশ্চিত করতেন।
এভাবে সবার সাথে কথা বলতে বলতে, অনেক মানুষের সাথে তাঁর খুব ভালো সম্পর্ক হয়ে গেল। তাঁর ব্যাপারে বলা হতো, সুইপার থেকে সিইও – সবার সাথেই তাঁর বন্ধুত্ব ছিল। সবাইকে তিনি নামে চিনতেন, এবং সবার সাথে খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো তাঁর। এর কারণ ছিল, তিনি সবাইকে সম্মান করতেন এবং সবার সাথে সমান বিনয়ী ছিলেন।
তাঁর এই স্বভাবের কারণেই তাঁর খুচরা দোকানে প্রথম থেকেই অনেক বেশি কাস্টোমার আসত। এবং যে একবার আসতো, তাকে আবার আসতে হতো – কারণ স্যামের সুন্দর ব্যবহার কেউ ভুলতে পারতো না। আর স্যামও সবার নাম মনে রাখতেন।
মানুষ যখন আপনার কাছে এসে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানিত মনে করবে, তখন সে বার বার আপনার কাছে আসতে চাইবে এবং আপনার কথা শুনবে।
ব্যবসায়ী হিসেবে অসাধারণ সাফল্যের জন্য অসাধারণ যোগাযোগ দক্ষতা থাকাটা খুবই জরুরী। আর সেই দক্ষতা অর্জন করতে স্যাম ওয়ালটনের পদ্ধতি কাজে লাগাতে পারেন।
০৪. সমস্যার বদলে সমাধানে ফোকাস করুন, এবং শিক্ষাকে কাজে লাগান
স্যামের প্রথম সত্যিকার চাকরি ছিল JCPenney নামের একটি দোকানের সেলসম্যান হিসেবে। স্যামের কাজ ছিলো জিনিসপত্র বিক্রি করা এবং হিসেব লিখে রাখা।
তাঁর হাতের লেখা এতই খারাপ ছিল যে ম্যানেজার বেশিরভাগ সময়েই তাঁর লেখা হিসেব পড়তে পারতেন না। কিন্তু তারপরও তাঁকে দোকানে রাখতে হচ্ছিল, কারণ স্যাম ছিলেন একজন অসাধারণ সেলস ম্যান।
চাকরিতে ভালো করলেও, স্যাম তাঁর সেরা হওয়ার অভ্যাসের কারণে কিছুদিনের মধ্যেই চাকরি ছেড়ে ২০ হাজার ডলার ধার করে তাঁর নিজের খুচরা দোকান খুলে বসলেন।
তিনি “বেন ফ্র্যাঙ্কলিন” নামের একটি চেইনশপের একটি দোকানের ফ্র্যাঞ্চাইজি কিনে ব্যবসা শুরু করলেন। কিন্তু শুরু করার পর দেখলেন এই দোকানের ভাড়া সাধারণ দোকানের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি, সেইসাথে তাঁর পুরো আয়ের ৫% ও বেন ফ্র্যাঙ্কলিনকে দিতে হবে! চুক্তি করার সময়ে তাঁর কাছ থেকে এই কথা লুকানো হয়েছিল। সেইসাথে, চুক্তিটি এমন ভাবে করা, তিনি চাইলেও সহজে সেই দোকান ছাড়তে পারবেন না। স্যাম বুঝতে পারলেন কিছু বাজে লোক তাঁকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে।
কিন্তু স্যাম ছিলেন অন্য রকমের মানুষ। তাঁকে যে ফাঁসানো হয়েছে, এই কথা তিনি ভুলেই গেলেন। নেগেটিভ ব্যাপারে ফোকাস না করে তিনি পজিটিভ ব্যাপারে ফোকাস করলেন। সমস্যা নিয়ে বেশি না ভেবে, তিনি সমাধান নিয়ে ভাবতে লাগলেন।
তিনি ঠিক করলেন, এই দোকানকেই তিনি শহরের সেরা ও সবচেয়ে লাভজনক দোকানে পরিনত করবেন।
তিনি খেয়াল করলেন, তিনি আসার আগে থেকেই তাঁর কিনে নেয়া দোকানে বছরে ৭২ হাজার ডলারের পন্য বিক্রী হত। আর পাশের দোকানে দেড় লাখ ডলারের পন্য বিক্রী হত।
তিনি আগে পাশের দোকানটিকে টার্গেট করলেন। তিনি ভাবতে লাগলেন কি করে নিজের দোকানের বিক্রী বাড়ানো যায়। তিনি বিক্রয়ের বিষয়ে যতগুলো বই পেলেন – সবগুলো পড়তে শুরু করলেন। সেইসাথে সেমিনারে গিয়ে সেলস এর ওপর লেকচার শুনতে লাগলেন।
এগুলোর পাশাপাশি পাশের দোকানের কার্যক্রমের ওপর কড়া নজর রাখতে শুরু করলেন তিনি। ওইসব জায়গা থেকে শিখে সেগুলো নিজের দোকানেও কাজে লাগাতেন। সেইসাথে তিনি এমন কিছু এক্সপেরিমেন্ট করতে শুরু করলেন – যা তাঁর আগে কেউ করেনি।
একবার তিনি তাঁর দোকানের সামনে একটি আইসক্রিমের মেশি, আর একটি পপকর্ণের মেশিন দাঁড় করিয়ে দিলেন। এর ফলে অনেক বেশি মানুষ তাঁর দোকানের লোকেশনের দিকে আসতে শুরু করল।
এরকম আরও অনেক এক্সপেরিমেন্ট তিনি করেছেন, যার ফলে তাঁর দোকানের ব্র্যান্ড এক সময়ে দারুন হিট হয়ে যায়।
স্যাম ওয়ালটন কখনও সমস্যায় ফোকাস করতেন না। অর্থাৎ সমস্যা নিয়ে পড়ে থাকতেন না। তিনি সমাধান নিয়ে চিন্তা করতেন, এবং কোনও সমাধান পেলে, বা কিছু শিখলে তাকে কাজে লাগিয়ে দেখতেন। আর এই কারণেই সাধারণ একটি দোকান থেকে ওয়ালমার্ট পৃথিবীর সেরা চেইন শপ হতে পেরেছিল।
আপনিও যদি সব পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রেখে সমাধান চিন্তা করতে পারেন, এবং সব সময়ে নিজে নিজে শিখে সেই শিক্ষাগুলোকে কাজে লাগাতে পারেন – তবে আপনিও একদিন অসাধারণ কিছু করতে পারবেন। কোনওখানেই আপনি থেমে থাকবেন না।
০৫. মানুষকে সুবিধা দিন, তারাই আপনাকে বড় হতে সাহায্য করবে
আগেই বলেছি, স্যাম বেন ফ্র্যাঙ্কলিন চেইনশপের একটি ফ্রাঞ্চাইজি নিয়ে দোকান শুরু করেছিলেন। চুক্তির একটি শর্ত ছিল স্যামকে তাঁর দোকানে বিক্রী করা পন্যের ৮০% বেন ফ্র্যাঙ্কলিন থেকে কিনতে হবে।
কিন্তু স্যাম তাঁর কাস্টোমারদের কম দামে পন্য দেয়ার জন্য অন্য জায়গা থেকে বেশি পন্য কিনতেন। এবং বেন ফ্র্যাঙ্কলিন থেকে ৭০% বা তারচেয়েও কম পন্য কিনতেন।
বেন ফ্র্যাঙ্কলিন যে মোজার ডজন আড়াই ডলারে দিত, সেই একই মোজা হ্যারি নামের এক সাপ্লায়ার ২ ডলারে দিত। স্যাম হ্যারির মত সাপ্লায়ারদের কাছ থেকেই পন্য নেয়া শুরু করলেন। এবং সেই সাথে অন্য দোকান গুলোর চেয়ে বেশ কমে পন্য বিক্রি করা শুরু করলেন।
অনেক পন্যেই অন্যরা যেখানে প্রতি ইউনিটে ১ ডলার লাভ করতো, স্যাম মাত্র ০.২৫ এ সেই একই পন্য ছেড়ে দিতেন।
এর ফলে তাঁর প্রতি পন্যে বা ইউনিটে লাভ কম হতো, কিন্তু তাঁর এই কম লাভে বিক্রির কারণে অনেক বেশি মানুষ তাঁর কাছ থেকে পন্য কেনা শুরু করল। এতে করে তাঁর অনেক বেশি লাভ হওয়া শুরু করল। যতটা লাভ স্যামের প্রতিযোগীরা বেশি দামে পন্য বিক্রী করেও চিন্তা করতে পারতো না।
বেন ফ্র্যাঙ্কলিন এক সময়ে ব্যাপারটা জানতে পারলেও স্যামকে কিছুই বলল না, কারণ অন্য সবার চেয়ে কম পন্য তাদের কাছ থেকে নিয়েও স্যাম সবার চেয়ে বেশি লাভ তাদের দিচ্ছিলেন।
এখান থেকে একটি বিষয় শেখার আছে, আপনি যদি রেজাল্ট দেখাতে পারেন, তবে আপনি নিয়ম ভাঙলেও কেউ আপনাকে কিছু বলবে না। কাজেই যা–ই করুন সেরা রেজাল্ট করার চেষ্টা করুন।
আর স্যামের এই কাজের মূল ব্যবসায়িক শিক্ষা হলো, মানুষকে যদি আপনি সুবিধা দেন, তারা যা চায় সেটা দিতে পারেন – তবে তারাই আপনার কাছে আসবে। তারাই আপনাকে সফল ব্যবসায়ী বানিয়ে দেবে। আপনি যে ব্যবসাই করেন না কেন, ক্রেতাদের সবার আগে স্থান দেবেন।
ব্যবসায়িক জগতের সেরা একটি বই, পে–পাল ফাউন্ডার পিটার থেইল এর লেখা জিরো টু ওয়ান ও একই কথা বলে। আজকের পৃথিবীর যত বড় বড় কোম্পানী আছে, তারা সবাই আসলে ক্রেতাদের সেরা সুবিধা দেয় বলেই নিজেরা সেরা কোম্পানী হতে পেরেছে।
শেষ কথা:
বেন ফ্র্যাঙ্কলিন এর ফ্রাঞ্চাইজিতে সাফল্যের পর কিন্তু স্যাম ওয়ালটন চরম ভাবে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তিনি ৫ বছর ধরে দোকানটিকে দেশের সেরা একটি স্টোরে পরিনত করার পর দেখলেন ৫ বছরের চুক্তি শেষে বেন ফ্র্যাঙ্কলিন আর তার সাথে চুক্তি নবায়ন করতে চাইছে না। কারণ এই অসম্ভব লাভজনক দোকানটির পুরো লাভ তারা তখন নিজেরাই চাইছিল।
এক মূহুর্তে তাঁর সব পরিশ্রম মাটি হয়ে গিয়েছিল। স্যামের তখন আর কিছুই করার ছিলো না। কিন্তু স্যাম দমে যাননি। তিনি আবারও জিদ করেন যে তিনি বেন ফ্র্যাঙ্কলিন এর চেয়েও বড় চেইনশপ এর মালিক হবেন। এবং তা তিনি করে দেখিয়েছিলেন। কি করেছেন তা তো আগেই বলেছি।
বেন ফ্র্যাঙ্কলিন অথবা ওয়ালমার্ট – দুই সাফল্যের ক্ষেত্রেই ওপরে বলা গুণগুলোকে স্যাম কাজে লাগিয়েছেন। এগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে আপনিও সাফল্যের পথে এগিয়ে যাবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
লেখাটির বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কমেন্ট করে জানান।
যদি মনে হয় এই লেখাটি পড়ে অন্যরাও উপকৃত হবেন – তাহলে শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন।
এই ধরনের আরও লেখার জন্য আমাদের সাথে থাকুন। সাফল্যের পথে, সব সময়ে, লড়াকু আপনার সাথে আছে।