সাহস বৃদ্ধি করার উপায় আমরা অনেকেই খুঁজি, কিন্তু অনেকেই সাহসের সঠিক মানেটাই বুঝি না। সাহস বৃদ্ধির উপায় খোঁজার আগে সাহস আসলে কি – এটা জানা জরুরী।
সাধারণ ভাবে অনেকেই মনে করেন, সাহস হল ভয় না পাওয়া। ভয়ের পরিস্থিতিতে ভয়ের অনুভূতি হলে অনেকেই নিজেকে ভিতু বলে মনে করেন। তাঁদের ধারণা, ‘সাহসী’ মানুষরা ভয় পায়না। – ব্যাপারটি কিন্তু মোটেই সেরকম নয়।
একজন মানুষের মধ্যে যদি ভয়ের অনুভূতি না থাকে – তবে বুঝতে হবে, তার মাথায় গোলমাল আছে। যে কোনও স্বাভাবিক মানুষ বিপদে বা ভয়ের পরিস্থিতিতে পড়লে ভয় পাবে।
তাহলে সাহসী কারা?
একজন মানুষের ভয়ের রি-এ্যাকশন বা প্রতিক্রিয়া কেমন হবে – সেটার ওপরই নির্ভর করে মানুষটি ভিতু না সাহসী। কেউ বিপদে পড়লে অস্থির হয়ে যায়, কি করবে বুঝতে পারে না। আর কিছু মানুষ বিপদে পড়লেও মাথা ঠান্ডা রেখে বিপদ থেকে বের হওয়ার কার্যকর উপায় খোঁজার চেষ্টা করে।
যারা বিপদে বা ভয়ের পরিস্থিতিতে পড়েও মাথা ঠান্ডা রেখে সঠিক কাজটি করার চেষ্টা করে – তারাই মূলত সাহসী।
ভয় আসলে একটি অনুভূতি। এই অনুভূতির বিপরীতে একজন মানুষের প্রতিক্রিয়া হতে পারে সাহস অথবা ভয়।
এটা ঠিক যে ভয় কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাজে আসে। সাপকে বা বাঘকে ভয় না পেয়ে তার সামনে গিয়ে হম্বিতম্বি করা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কিন্তু এগুলোকে যদি অতিরিক্ত ভয় পান – তবে কখনো এগুলোর সামনে পড়ে গেলে আপনার মাথা কাজ করবে না। – একজন সাহসী মানুষও যদি এগুলোর সামনে পড়ে – তবে তার মনেও ভয় জাগবে। কিন্তু সে মাথা ঠান্ডা রেখে বাঁচার উপায় ভাবতে পারবে, এবং সেই অনুযায়ী এ্যাকশন নিতে পারবে। – এটাই মূলত সাহস। আর সাহসী হওয়ার প্রধান উপায় হল, ভয়ের পরিস্থিতিতেও মাথা ঠান্ডা রাখতে পারা এবং সামনে এগিয়ে যাওয়া।
ভয় মানুষের সম্ভাবনাকে নষ্ট করে:
খুব সাধারণ ভাবে ব্যাপারটা বোঝাই। প্রতিটি সুস্থ মানুষের সাঁতার কাটার ক্ষমতা আছে। কিছু বিশেষ শারীরিক কসরৎ অল্প কিছুদিন নিয়মিত চর্চা করলেই সাঁতার শেখা যায়। – কিন্তু আমাদের আশপাশে অনেক মানুষ আছে – যারা ডুবে যাওয়ার ভয়ে কোনওদিন ঠিকমত সাঁতার শেখার চেষ্টাই করেনি।
আবার ধরুন, একজন মানুষ তার বসকে দারুন ভয় পায়। একটা বিশেষ কারণে ছুটি দরকার হলেও সে বসকে বলার সাহস করতে পারছে না। বলতে না পারার কারণে সেই বিশেষ দিনটা এসে আবার চলেও যায়। কিন্তু তার আর ছুটি চাওয়া হয় না। কিন্তু তার আসলে ছুটি পাওনা আছে – চাইলেই সে ছুটি পেত। – এটা তো খুব ছোট উদাহরণ দিলাম। নিজের উপরের লেভেলের মানুষের কাছে সঠিক সময়ে সঠিক কথাটি বলতে না পারার কারণে কত মানুষ যে ক্যারিয়ারে পিছিয়ে পড়ছে – তার কোনও ঠিক নেই।
ভেবে দেখুন তো, এমন কত কিছু একজন মানুষের পক্ষে অর্জন করা সম্ভব হত – যদি সে ভয়কে জয় করে শুধু চেষ্টা করতো।
এমন অনেক প্রতিভাবান মানুষ আছে, যারা তাদের প্রতিভা কাজে লাগিয়ে অনেক বড় ব্যবসায়ী হতে পারত – কিন্তু ‘ব্যবসায় ব্যর্থ হলে কি হবে’ – এই নিয়ে ভয় পেয়ে তারা চেষ্টাই করেনি।
আবার ধরুন, মানুষের সামনে কথা বলার সাহস না থাকা, অপরিচিত জায়গায় গিয়ে নার্ভাস হয়ে পড়া, বিশেষ বিশেষ মানুষের সামনে নার্ভাস হয়ে যাওয়া, বিশেষ জন্তু বা জিনিসের সামনে পড়লে ভয় পাওয়া – ইত্যাদি ভয়ও খুব কমন। আর তারচেয়ে বড় কথা – এই ভয়গুলো জয় করা সম্ভব এবং তা করতে পারলে একজন মানুষের জীবন অনেক বেশি সফল হবে।
সাহস বৃদ্ধি করার উপায়: ৫টি এক্সপার্ট পরামর্শ
আমেরিকান সোসাইটি অব জার্নালিস্ট এ্যান্ড অথোরস – এর সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং বিজনেস টেকনোলজি বিষয়ক লেখক ও বক্তা মিন্ডা জেটলিন একজন অসাধারণ সফল মানুষ। নতুন টেকনোলজি উদ্যোক্তা বিষয়ক জনপ্রিয় বই “দি গিক গ্যাপ” এর সহ লেখক তিনি। ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন সাংবাদিক হিসেবে। কিন্তু প্রথমটায় খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি।
পরে ধীরে ধীরে তিনি এই ভয়গুলোকে দূর করেন, এবং ক্যারিয়ার ও জীবনে বেশ ভালো সাফল্যের দেখা পান। ভয়গুলো দূর করার জন্য তিনি বেশ কিছু উপায় চর্চা করেছেন। এগুলো “INC” ম্যাগাজিনে তাঁর নিজের কলামে লিখেছেন – যাতে পাঠকরাও সাহস বৃদ্ধি করার এই উপায়গুলো সম্পর্কে জানতে ও সেগুলোকে কাজে লাগাতে পারে। তাঁর দেয়া পরামর্শ ও আরও কিছু শীর্ষ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক্সপার্ট পরামর্শ মিলিয়ে আমরা সবচেয়ে কার্যকর ৫টি সাহস বৃদ্ধির উপায় আপনার সামনে তুলে ধরছি।
০১. ভয় গুলোকে লিস্ট করুন ও বাছাই করুন
সত্যি কথা বলতে, নিরাপদ থাকার জন্য ভয়ের প্রয়োজন আছে। কিছু ভয় মানুষকে খারাপ কাজ এবং বিপদ থেকে দূরে রাখে। আইনে যদি গুরুতর অপরাধের জন্য শাস্তির বিধান না থাকতো, অথবা অন্যায় করার জন্য ধর্মে পরকালে শাস্তির কথা বলা না হত – তাহলে অপরাধের মাত্রা কোথায় গিয়ে দাঁড়াতো – তা চিন্তাও করা যায় না। একজন মানুষের যদি বাঘের ভয় না থাকে, তবে সে চিড়িয়াখানায় বাঘ দেখতে গিয়ে বাঘের খাঁচায় হাত ঢোকাতে ভয় পাবে না – ফলে তার হাত, এমনকি জীবনও চলে যেতে পারে।
আপনাকে তাই বুঝতে হবে – কোন কোন ভয়গুলো আপনার উপকার করছে, এবং কোন ভয়গুলো আপনার ক্ষতি করছে – বা আপনার উন্নতিকে থামিয়ে রাখছে।
এটা বোঝার সবচেয়ে ভালো উপায় হল ঠান্ডা মাথায় এক জায়গায় বসে নিজের ভয়গুলোকে লিস্ট করা। বিজ্ঞানের ভাষায় লেখালেখিকে বলা হয় “সাইকো নিউরো মোটর এ্যাক্টিভিটি”। সাধারণ ভাবনার চেয়ে লেখার সময়ে মানুষের মনযোগ অনেক বেশি থাকে, এবং যে কোনও বিষয়ের অনেক খুঁটিনাটি ব্যাপার মানুষের চোখে পড়ে।
এই ব্যাপারটিকে আপনি আপনার সাহস বৃদ্ধির একটি ধাপ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। ঠান্ডা মাথায় একা বসে একটি কাগজে আপনার ভয়গুলো লিখুন। ছোট বড় সব ভয় লিখে ফেলুন। আপনি যে যে জিনিসকে একটু হলেও ভয় পান – মনে আসা মাত্র লিখে ফেলুন। সময় নিয়ে লিখুন – তাড়াহুড়া করবেন না।
লিখতে লিখতে যখন আপনার মনে হবে আর কিছু বাকি নেই – তখন বাছাই করতে শুরু করুন। কোন ভয়গুলো আপনার জন্য ভালো?, আর কোনগুলো খারাপ?
এটা বোঝার জন্য কোন ভয়ে আপনার কি রিএ্যাকশন বা প্রতিক্রিয়া হয় – সেটাও লিখতে পারেন। তাহলেই বুঝতে পারবেন ভয়টি আপনার জন্য ভালো না খারাপ।
আপনি যদি সাপ ভয় পান, তবে সেটা ভালো। সাপের কামড় খাওয়া মোটেই ভালো কিছু নয়। কিন্তু সাপ দেখলে যদি আপনি মাথা ঘুরে পড়ে যান – তবে এই রিএ্যাকশনটি আপনার জন্য খারাপ।
আবার মানুষের সামনে কথা বলার সাহস না থাকাটা কোনও দিক দিয়েই ভালো নয়। এর জন্য আপনি হয়তো অনেক বড় বড় সুযোগ মিস করেছেন। এবং ভবিষ্যতেও করতে পারেন।
এভাবে এক একটি ভয় নিয়ে চিন্তা করুন, এবং সেটার রিএ্যাকশন, ও রিএ্যাকশনের ফলাফল সংক্ষেপে লিখুন।
০২. ভয়ের উৎস খুঁজে বের করুন
যে ভয়গুলো আপনার ক্ষতি করছে, বা যে ভয়গুলোর কারণে আপনি ক্ষতিকর রিএ্যাকশন দেখাচ্ছেন – সেগুলো আলাদা করার পর আরেকটি কাগজ নিন।
এবার প্রতিটি ক্ষতিকর ভয়ের উৎস নিয়ে চিন্তা করুন। কি কারণে আপনি এগুলো ভয় পান। এর পেছনে কি অতীতের কোনও ঘটনা আছে? –
আমরা অনেক সময়েই অতীতে কিছু করতে গিয়ে ব্যর্থ হলে সেটা আবার চেষ্টা করতে ভয় পাই। কিন্তু আপনি যদি এই ভয়টির দিকে একটু অন্য ভাবে তাকান – তাহলেই আর সেই ভয় কাজ করবে না। – একটু চিন্তা করে দেখুন – অতীত সময়ে ব্যর্থ হয়েছেন মানে ব্যর্থতার কারণগুলো আপনি নিজের চোখে দেখেছেন। একটু চিন্তা করলেই সেই কারণগুলো আপনি মনে করতে পারবেন। কি কি ভুল করেছিলেন – তা বুঝতে পারবেন। এবার আর সেই ভুলগুলো না করলেই হল।
আবার আপনি হয়তো শিক্ষক বা বসের সামনে কথা বলতে ভয় পান। এর কারণ হতে পারে আগে কোনও শিক্ষক বা উর্ধ্বতন কেউ আপনার সাথে খারাপ আচরণ করেছিলেন – সেই কারণে এই ভয়। আপনাকে মনে রাখতে হবে সব মানুষ এক রকম নয়। এবং আপনিও আগের মত নেই – আগের চেয়ে আপনার জ্ঞান ও দক্ষতা বেড়েছে। সেইসাথে বয়স ও গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। কাজেই, এখন আর আগের কথা মনে করে ভয় পাওয়ার দরকার নেই। যদি মনে হয় কোনও বিষয়ে আপনি কম জানেন – তবে সেই বিষয় শেখার চেষ্টা করুন। জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়ানো সাহস বৃদ্ধির সবচেয়ে ভালো উপায় গুলোর একটি।
এভাবে যে জিনিসকেই আপনি অতিরিক্ত ভয় পান – সেগুলোর কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন – এবং সেই কারণগুলো দূর করার জন্য কি করতে হবে – সেটাও বের করে নোট করুন। দরকার হলে বিশ্বস্ত কারও সাথে পরামর্শ করুন।
০৩. ভয়ের ফলে আপনি কি হারাচ্ছেন তা বোঝার চেষ্টা করুন
আগেই বলেছি, মানুষের ভয় তার অনেক সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দেয়। এখন যখন আপনি আপনার সবচেয়ে বড় ভয়গুলো লিখে ফেলেছেন, সেই ভয়গুলোর ফলে আপনি কি কি হারিয়েছেন – বা এখন কি হারাচ্ছেন – তা বের করা আপনার জন্য সহজ হয়ে যাবে।
ধরুন, আপনি আপনার কাজে দারুন এক্সপার্ট। কিন্তু মানুষের সামনে কথা বলার সাহস আপনার কম। এই সাহস না থাকার কারণে আপনি কাজগুলো ঠিকমত উপস্থাপন করতে পারেন না। হয়তো এই কারণে আপনার ব্যবসার বড় কোনও ডিল পাননি, অথবা চাকরির প্রমোশন মিস হয়ে গেছে।
ভয়ের কারণে এই ধরনের যে কোনও ক্ষতি লিস্ট করে ফেলুন। এতে আপনার সাহস ও মনোবল বৃদ্ধি করার অনুপ্রেরণা বাড়বে। ভয় পাওয়া সত্বেও সঠিক কাজটি করতে উৎসাহ পাবেন।
০৪. মেন্টাল মডেলিং
মেন্টাল মডেলিং হলো নিজের কল্পনা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ভয় ও দুর্বলতা দূর করা। এটি একটি দারুন সাহস বৃদ্ধি করার উপায়।
আগের উপায়গুলো মেনে আপনি যখন নিজের ভয়গুলো স্পষ্ট ভাবে জানবেন, এবং এই ভয়ের কারণ বের করবেন, এবং সেই ভয়গুলো থেকে মুক্তি পাবার জন্য নিজেকে অনুপ্রাণিত করবেন – তখন থেকে আপনি এটা শুরু করতে পারেন।
এটি এক ধরনের ধ্যান বা মেডিটেশন বলতে পারেন। কল্পনার সাহায্যে আপনি আপনার ভয়গুলোর সামনা সামনি হওয়ার অভ্যাস করবেন। ভয়ের জিনিসের সামনে বার বার যেতে যেতে মানুষের মধ্যে একটা অভ্যস্ততা তৈরী হয়। এই অভ্যস্ততা সাহস ও মনোবল বৃদ্ধির উপায় হিসেবে অসাধারণ। বেশিরভাগ মানুষ মৃত ব্যক্তির কাছে একা থাকতে ভয় পায়, কিন্তু যারা নিয়মিত মৃত মানুষ নিয়ে কারবার করে – মর্গের, কবরখানার বা শ্নশানের প্রহরীরা রাতের পর রাত এইসব জায়গায় একা কাটিয়ে দেয়। আবার দীর্ঘদিন যুদ্ধের মধ্যে থাকলে, গুলি বা বোমার শব্দে অনেক কম ভয় লাগে। কারণ, অভ্যস্ততা।
আপনি জানেন, কল্পনা বাস্তবে কোনও ক্ষতি করতে পারে না। কিন্তু আমাদের মস্তিষ্ক কল্পনা ও বাস্তবে একই রকম প্রতিক্রিয়া দেখায়। কল্পনাতে যখন আপনি অভ্যস্ত হয়ে উঠবেন – তখন বাস্তবেও আর তত ভয় লাগবে না। কাজেই, এটাকে আপনি অভ্যস্ত হওয়ার জন্য ব্যবহার করতে পারেন।
তবে মেন্টাল মডেলিং শুধু ভয়কে কল্পনা করা নয়। বিপদকে কিভাবে কাটাবেন, অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটলে কিভাবে সামাল দেবেন – তারও পরিকল্পনা এই সময়ে করতে পারেন।
কোনও কাজ করতে গেলে কি কি বিপত্তি ঘটতে পারে – তা আগে থেকে কল্পনা করলে, এবং তা সামাল দিতে আপনি কি করবেন – তা আগে থেকে কল্পনা করা থাকলে বাস্তবে সেই পরিস্থিতিতে আপনি আর ততটা বিচলিত হবেন না।
প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে নিরিবিলি চোখ বন্ধ করে বসুন। নাক দিয়ে কয়েকবার গভীর দম নিন। পেটের বদলে বাতাস বুকে ধরে রাখুন। প্রতিবার দম নিয়ে আস্তে আস্তে মুখ দিয়ে দম ছাড়ুন। এভাবে ৬-১০ বার করলে আপনার শরীর ও মন রিল্যাক্সড হবে। মনে মনে কয়েকবার বলুন “চোখ খোলার সাথে সাথে আমি বাস্তবে ফিরে আসব, কল্পনার কিছুই আমার ওপর প্রভাব ফেলবে না”
এরপর যে ঘটনা বা বস্তুকে আপনি ভয় পান, সেটিকে সামনে কল্পনা করুন। সেই বস্তু বা ঘটনা সামাল দিতে আপনি কি করতে পারেন – তা ভাবুন। ভয় দূর করার জন্য অলৌকিক কিছুও ভাবতে পারেন। – কল্পনা করুন আপনি সেই ঘটনা বা বস্তুকে দারুন ভাবে সামাল দিয়েছেন। আপনার কিছুই হয়নি। আপনি যদি মানুষের সামনে কথা বলতে নার্ভাস হন, তাহলে কল্পনা করুন অনেক মানুষের সামনে আপনি দারুন আত্মবিশ্বাসের সাথে ভাষণ দিচ্ছেন, এবং সবাই খুব আগ্রহ ও মনোযোগ দিয়ে আপনার কথা শুনছে।
আপনি যদি গরু ভয় পান, তবে কল্পনা করুন একটি বিশাল ষাড় এসে আপনার সামনে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আপনি তার গায়ে হাত বুলিয়ে দিতেই সে শান্ত হয়ে গেছে। একান্ত পোষা প্রাণীর মত আচরণ করছে।
প্রথম প্রথম ব্যাপারটা অতটা স্পষ্ট না হলেও, ধীরে ধীরে বিষয়টি আপনার সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠতে থাকবে। এবং বার বার এই জিনিস কল্পনা করতে করতে আপনার একটি অভ্যস্ততা তৈরী হবে; সেইসাথে কল্পনায় সমাধান করতে করতে – বাস্তবেও সেই সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার আত্মবিশ্বাস আপনার মাঝে জন্ম নেবে। কিছুদিন এই অভ্যাস করার পর আপনি সাহস বৃদ্ধির ৫ নম্বর উপায় চর্চা করবেন।
মেন্টাল মডেলিং সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে আমাদের – বিপদে বা বড় ঝামেলায় কিভাবে মাথা ঠান্ডা রাখতে হয়: “মেন্টাল মডেলিং” – লেখাটি পড়ুন।
০৫. বাস্তবে ভয়ের বিষয়ের সামনে যান
ভয়ের বিষয়গুলোর সামনে কল্পনায় বার বার যাওয়া, ও সেগুলো সমাধান করা ভালোমত প্রাকটিস করলে আপনার মানসিক ভয় অনেকটাই কমে আসবে।
এরপর আপনি বাস্তবে সেগুলোর মুখোমুখী হওয়ার চেষ্টা করবেন। আপনি যদি পানি ভয় পান, এবং সাঁতার না জানেন – তবে একটি সাঁতারের কোর্সে ভর্তি হোন।
অনেক মানুষের সামনে কথা বলতে নার্ভাস লাগলেও এগিয়ে গিয়ে মানুষের সাথে কথা বলুন। শিক্ষক বা উর্ধ্বতনদের সাথে এগিয়ে গিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন ও আলোচনা করুন।
একা একা থাকতে ভয় করলে, দিনে কিছুটা সময়ের জন্য হলেও একা হয়ে যান। আস্তে আস্তে দেখবেন একা থাকতে ভালোই লাগছে।
পরিশিষ্ট:
সত্যি কথা বলতে, আমাদের বেশিরভাগ ভয়ই অমূলক। আমরা হয় অতীতকে ভয় পাই, না হয় ভবিষ্যতে কিছু ঘটার ভয় পাই। যা ঘটে গেছে, তাতো ঘটেই গেছে। আর যা এখনও ঘটেনি – তাকে সামাল দেয়ার প্রস্তুতি নেয়ার ক্ষমতা আপনার আছে।
একটি বিষয় মাথায় রাখুন – আপনার আসলে হারানোর কিছু নেই। ব্যর্থ হলেও আত্মবিশ্বাস ধরে রেখে চেষ্টা করে যান। সবকিছুই আসলে অনুশীলনের ব্যাপার।
এই ৫টি সাহস বৃদ্ধি করার উপায় এর মূল কথা হল, কি চাননা – তার ওপর ফোকাস না করে, যেটা চান সেটার ওপর ফোকাস করুন, এবং তা পাওয়ার জন্য যা করা দরকার করুন। ভয় লাগলেও নিজেকে বোঝান যে, আপনার এটা দরকার, আপনি এটা চাচ্ছেন। – তারপর যা বলা প্রয়োজন, তা বলে ফেলুন; যা করা প্রয়োজন করে ফেলুন। – এভাবেই আপনার সাহস বৃদ্ধি পাবে এবং ভয় দূর হবে। পৃথিবীর বড় বড় অর্জন সাহসীদের দিয়েই হয়েছে। যারা ভয় পাওয়ার পরও সামনে এগিয়ে গেছে। সাহস বৃদ্ধির এই উপায় গুলো অনুশীলন করে আপনিও তাদের একজন হতে পারেন।
আপনার সাহস বৃদ্ধি করার পথে এই লেখাটি যদি একটুও কাজে আসে – তাহলেই আমাদের চেষ্টা সফল। লেখাটির বিষয়ে আপনার যে কোনও মতামত আমাদের কমেন্ট করে জানান।
আর যদি মনে হয় এই লেখাটি পড়ে অন্যরাও উপকৃত হবেন – তবে শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন।
এই ধরনের আরও লেখার জন্য নিয়মিত আমাদের সাথে থাকুন। সাফল্যের পথে লড়াকু সব সময়ে আপনার সাথে আছে।