পজিটিভ চিন্তা করার উপায় বলার আগে আজ যে বই থেকে পজিটিভ চিন্তা করার উপায় আপনাদের বলব, সেই বই ও তার লেখক সম্পর্কে একটু জানিয়ে রাখি।
“থিংক এ্যান্ড গ্রো রিচ” – বইটির নাম হয়তো শুনে থাকবেন। কেউ কেউ হয়তো পড়েছেনও। সেলফ ডেভেলপমেন্ট বইয়ের জগতে এটি একটি ক্লাসিক। বইটির লেখক নেপোলিয়ন হিল। আজকাল যত সেলফ ডেভেলপমেন্ট এর বেস্ট সেলার বই বের হচ্ছে সেগুলো কোনও না কোনও দিক দিয়ে নেপোলিয়ন হিলের থিংক এ্যান্ড গ্রো রিচ, এবং ডেল কার্নেগীর “হাউ টু উইন ফ্রেন্ডস এ্যান্ড ইনফ্লুয়েন্স পিপল” – এই দুইটি বইয়ের প্রভাবে প্রভাবিত। এই দু’টি বই-ই মূলত এই ধারার সবচেয়ে বড় ক্লাসিক।
“থিংক এ্যান্ড গ্রো রিচ” এতই জনপ্রিয় যে, নেপোলিয়ন হিল যে আরও আত্ম উন্নয়ন মূলক ক্লাসিক লিখেছেন – তা অনেকে জানেনই না। তাঁর তেমনই একটি ক্লাসিক হল, “Success Through a Positive Mental Attitude” – এই বইটিতে তিনি লিখেছেন পজিটিভ থিংকিং বা পজিটিভ চিন্তা কিভাবে একজন মানুষকে সাফল্যের দিকে নিয়ে যায় – এবং সেইসাথে দেখিয়েছেন, পজিটিভ চিন্তা করার উপায়।
আজ আমরা “সাকসেস থ্রু এ পজিটিভ মেন্টাল এ্যাটিচুড” এর বুক রিভিউ থেকে জানবো পজিটিভ চিন্তা করার উপায়। তবে তার আগে চলুন সংক্ষেপে জেনে নেয়া যাক কেন পজিটিভ চিন্তা সাফল্য আনে।
পজিটিভ চিন্তা কেন সাফল্য আনে?
আপনি যদি কোনওকিছু অর্জন করতে চান, তবে আপনাকে প্রথমে বিশ্বাস করতে হবে যে আপনি তা অর্জন করতে পারবেন। যদি এই মূহুর্তে তা অর্জন করার দক্ষতা বা অবস্থা নাও থাকে – তবুও যদি বিশ্বাস করেন – তাহলে আপনার দ্বারা তা অর্জন করা সম্ভব। কারণ বিশ্বাস থেকে আসে চেষ্টা, এবং চেষ্টা থেকে আসে অর্জন। আপনি যদি বিশ্বাস করেন যে, আপনি পারবেন – বার বার ব্যর্থ হয়েও আপনি হাল ছাড়বেন না – ফলে ভুল ও ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিতে নিতে একটা সময়ে আপনি সফল হবেন। কারণ এক পর্যায়ে ভুল করতে করতে আর সেই ভুল হবে না।
শুধু বিশ্বাস হারানো যাবে না। সব সময়ে পজিটিভ থাকতে হবে যে আপনি পারবেন। হাল না ছেড়ে চেষ্টা করে যেতে হবে।
অন্য দিকে আপনি যদি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন – অন্য কথায় নেগেটিভ চিন্তা করতে শুরু করেন – তবে আপনি চেষ্টা করাও ছেড়ে দেবেন। এরফলে আপনি চূড়ান্ত ভাবে ব্যর্থ হবেন।
নেপোলিয়ন হিল লিখেছেন, সাফল্যের জন্য যদি মানুষের একটি মাত্র চারিত্রিক বৈশিষ্টকে ক্রেডিট দিতে হয়, তা হবে পজিটিভ চিন্তা করার ক্ষমতা। হেনরি ফোর্ড এর কথাই ধরা যাক, তাঁর ইঞ্জিনিয়াররা বলেছিলেন যে গাড়ির জন্য যে অত্যাধুনিক “V8” ইঞ্জিন তিনি তৈরী করতে চাচ্ছেন – তা করা সম্ভব নয়। এটা কেউ পারবে না। কিন্তু ফোর্ড বিশ্বাস করতেন যে, আইডিয়া যখন এসেছে – সেটা বাস্তবায়ন করা অসম্ভব হতে পারে না। এবং শেষ পর্যন্ত ঠিকই ফোর্ড সেই ইঞ্জিন তৈরী করে দেখিয়েছিলেন – যা আধুনিক মোটর গাড়িকে এক নতুন ক্ষমতা দিয়েছিল।
লেখকের ভাষায়, যাদের মাঝে পি.এম.এ (পজিটিভ মেন্টাল এ্যাটিচুড) আছে, তারা ব্যর্থতাকে ভয় পায় না। যতবারই ব্যর্থ হোক, তারা সফল হওয়ার আগ পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যায়। কারণ তারা বিশ্বাস করে, তারা যা করতে যাচ্ছে – তা অবশ্যই সম্ভব। তারা সব সময়ে শিখতে থাকে, প্রতিটি ভুল থেকে নিজেদের আরও শক্তিশালী করে আবার চেষ্টা করে। যার ফলে শেষ পর্যন্ত তারা সফল হয়েই ছাড়ে।
পজিটিভ চিন্তা করা মানুষরা সাময়িক ব্যর্থতাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখে
সাধারণ মানুষ যখন ব্যর্থতাকে শেষ হিসেবে দেখে, পজিটিভ চিন্তা করা (পি.এম.এ) মানুষরা প্রতিটি ব্যর্থতা ও কঠিন পরিস্থিতিকে অন্য ভাবে দেখেন। যে কোনও কঠিন পরিস্থিতিতে পড়লে তাঁরা হতাশ হওয়ার বদলে চ্যালেঞ্জ অনুভব করেন। এবং নিজেকে আরও একটু দক্ষ ও শক্তিশালী করার সুযোগ হিসেবে দেখেন।
ব্যর্থতা বা কঠিন সময়ে তাঁরা হাল ছেড়ে দেয়ার বদলে তাঁরা চেষ্টার পরিমান বাড়িয়ে দেন। নিজের দুর্বলতা খুঁজে বের করে সেগুলোকে কাটানোর চেষ্টা করেন। অন্যরা যেখানে কোনও আশা দেখতে না পেয়ে পিছিয়ে যায়, পজিটিভ চিন্তা করা মানুষরা এগিয়ে গিয়ে অন্যদের আশা করার সাহস যোগান। এই কারণেই অন্যরা এদের নেতা হিসেবে মেনে নেয়। এবং সাফল্যের বেশিরভাগ ক্রেডিট এদের ভাগেই পড়ে।
পজিটিভ চিন্তা ও সাবধানতা
অনেকেই ভাবে, শুধু পজিটিভ চিন্তা করলেই বোধহয় সাফল্য আসে। ব্যাপারটা আসলে সেরকম নয়। পজিটিভ চিন্তা করার সাথে সাথে আপনাকে সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা ও পরিশ্রমও করতে হবে। না হলে পজিটিভ চিন্তা আকাশ কুসুম কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়।
ধরুন আপনি ব্যবসা করে কোটিপতি হতে চান। সারাদিন সেই বিষয়ে চিন্তা করেন, কিন্তু আপনি যদি শুধু চিন্তাই করতে থাকেন, এবং সেই অনুযায়ী কাজ না করেন – তাহলে চিন্তা চিন্তার জায়গায় থেকে যাবে। পজিটিভ চিন্তা করার পাশাপাশি আপনাকে অবশ্যই সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে। না হলে একটা সময়ে যখন আপনার আশা পূরণ হবে না – তখন আপনার মাথায় নেগেটিভ চিন্তা ভর করবে – এবং অবশেষে হাল ছেড়ে দেবেন। এবং হাল ছাড়া মানেই ব্যর্থতা। একবারে সাফল্য পাওয়া যায় না, বেশিরভাগ সময়েই বড় সাফল্যের পথ হয় কঠিন। বার বার ব্যর্থ হতে হতে অবশেষে সাফল্য ধরা দেয়। আর সেই ব্যর্থতাগুলো পার হয়ে চূড়ান্ত সফলতা পেতে আপনার সবচেয়ে বড় শক্তি হতে পারে পজিটিভ চিন্তা বা পজিটিভ থিংকিং।
কাজেই, পজিটিভ চিন্তা করার সঠিক উপায় ও পদ্ধতি আপনাকে জানতে হবে। আর নেপোলিয়ন সাহেব খুব সুন্দর করে সহজ ভাষায় সেই উপায় বর্ণনা করেছেন তাঁর “Success Through a Positive Mental Attitude” বইতে। চলুন সেই বইয়ের আলোকেই জেনে নেয়া যাক পজিটিভ চিন্তা করার সঠিক উপায় গুলো।
পজিটিভ চিন্তা করার উপায়:
০১. চোখ কান খোলা রাখতে হবে
আমরা অনেকেই সচেতন ভাবে চলি না। আমাদের সাথে প্রতিদিন ঘটা ঘটনা ও চারিপাশের পরিবেশ নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তা করি না। অথবা চিন্তা করলেও সেসবের নেগেটিভ বা নেতিবাচক বিষয়গুলোই বেশি চোখে পড়ে। বেশিরভাগ সময়ে আমরা শুধু সমস্যার দিকে তাকাই। কিন্তু যারা পজিটিভ চিন্তার মাধ্যমে সফল হন, তাঁরা সমস্যার ভেতর থেকে সুযোগ খুঁজে নেন।
আপনি যদি আপনার আশপাশে কোনও সমস্যা দেখেন, এবং অন্য সবার মত সেই সমস্যা নিয়ে অভিযোগ করেন – তবে আপনিও বেশিরভাগ মানুষের মত নেগেটিভ দিকেই বেশি ফোকাস করেন। কিন্তু মানব সভ্যতার প্রথম থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যাঁরা সফল হয়েছেন – তাঁরা এইসব সমস্যার দিকে অন্য ভাবে তাকিয়েছেন। তাঁরা সেইসব সমস্যাকে নিজের যোগ্যতা দেখানোর একটা সুযোগ হিসেবে দেখেছেন। তাঁরা চোখ কান খোলা রেখে একটি সমস্যার গভীরে যেতে চেয়েছেন, এবং সেই সমস্যার সমাধান করে সফল হয়েছেন।
জীবনে সবাই বড় কিছু করতে চায়। কেউই নিচে পড়ে থাকতে চায় না। কিন্তু বড় হওয়ার লক্ষ্য ঠিক করা আর পজিটিভ চিন্তা করা এক কথা নয়। আপনি যদি প্রতিটি জিনিসের নেতিবাচক ও ক্ষতিকর দিকগুলো দেখা ও শোনার পাশাপাশি তার পজিটিভ দিকগুলো দেখার চেষ্টা করেন, অথবা সমস্যার সমাধান নিয়ে ভাবেন – তবে আপনার সফল হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের চেয়ে বেড়ে যাবে।
অন্যরা যেখানে শুধুই নেতিবাচকতা দেখবে, আপনি সেখানে সুযোগ দেখতে পাবেন। তাই প্রতিটি ব্যাপারে সব সময়ে চোখ কান খোলা রাখুন এবং সবকিছু নিয়ে একপেশে চিন্তা না করে, বিভিন্ন দিক থেকে ভেবে দেখুন। তাহলেই দেখবেন, সবকিছুর মধ্যেই আপনি পজিটিভ কিছু করার সুযোগ দেখতে পাবেন। হয়তো আপনার আশপাশের সবচেয়ে বড় সমস্যার মধ্যেই আপনার লক্ষ্য পূরণের উপাদান রয়েছে।
০২. লক্ষ্যগুলো লিখে রাখুন, সময়সীমা ঠিক করুন এবং বড় লক্ষ্যকে ছোট ছোট লক্ষ্যে ভাগ করুন
শুধুমাত্র নেপোলিয়ন হিলই নন, প্রায় সব সেলফ ডেভেলপমেন্ট এক্সপার্টই এই পরামর্শগুলো দেন। লক্ষ্য লিখে রাখার ফলে আপনার সামনে লক্ষ্যের একটা পরিস্কার ছবি থাকবে। বিজ্ঞানের ভাষায় লেখালেখিকে “সাইকো-নিউরো-মোটর এ্যাক্টিভিটি” বলা হয় – সোজা কথায়, লিখতে গেলে আপনাকে অবশ্যই গভীর ভাবে চিন্তা করতে হবে, ও মনোযোগ দিতে হবে। এতে লক্ষ্যের বিষয়ে অনেক খুঁটিনাটি জিনিস মাথায় আসে, যা সাধারণ ভাবে আসে না।
মূল লক্ষ্যটি বিস্তারিত ভাবে লিখে রাখার পর আপনাকে সেই লক্ষ্যটিকে ছোট ছোট লক্ষ্যে ভাগ করতে হবে। এবং প্রতিটি ছোট লক্ষ্য কবে শেষ করবেন – তার জন্য একটি সময়সীমা বেঁধে দিতে হবে। এগুলোও লিখিত পরিকল্পনা আকারে সাজাতে হবে।
অনেক সময়ে আমরা খুব বড় লক্ষ্য ঠিক করার কিছুদিন পর নিজের ঠিক করা লক্ষ্য দেখেই ভয় পেয়ে যাই। প্রথমে ঠিক করার সময়ে উত্তেজনা কাজ করে বলে আমরা ততটা ভড়কাই না। কিন্তু কিছু সময় পরে বড় লক্ষ্যটি আমাদের ভয় দেখাতে শুরু করে। এর ফলে, একটা সময়ে গিয়ে আমাদের মনে হয় এত বড় লক্ষ্য আমাদের পক্ষে পূরণ করা সম্ভব নয়।
এই নেগেটিভ চিন্তা থেকে মুক্তি দিতে পারে লক্ষ্যকে ছোট ছোট ভাগ করার পদ্ধতি।
মনে করুন, আপনার লক্ষ্য হল সিঁড়ি বেয়ে দশ তলায় উঠবেন। এখন একবারে দশ তলায় তাকালে একটু ভয় লাগবেই। কিন্তু আপনি যদি দশ তলায় ওঠার চিন্তা পরে করে আগে এক তলায় কিভাবে উঠবেন – সেই পরিকল্পনা করে একটি একটি করে সিঁড়ি বাইতে থাকেন – তখন আর ব্যাপারটা অতটা কঠিন মনে হবে না।
দশ বছর পর ১০ কোটি টাকার মালিক হবেন – এটা সারাদিন চিন্তা করার বদলে, এটাকে এক জায়গায় লিখে রাখুন। তারপর সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রতিদিন কি করবেন – তার পরিকল্পনা করুন। সপ্তাহের ও মাসের লক্ষ্য ঠিক করে সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রতিদিন কাজ করুন। তাহলেই দেখবেন অনেক বেশি পজিটিভ থাকতে পারছেন। একটু একটু করে ছোট লক্ষ্য গুলো পূরণ করতে থাকলে আপনি সব সময়ে অনুপ্রাণিত থাকতে পারবেন। – একটা সময়ে বড় লক্ষ্য নিয়েও কোনও নেতিবাচক চিন্তা মাথায় আসবে না।
০৩. অবচেতন মনকে পজিটিভ চিন্তার মধ্যে নিয়ে আসুন
আমাদের বেশিরভাগ চিন্তা ভাবনা ও কাজ আসলে নিয়ন্ত্রিত হয় আমাদের অবচেতন মন বা subconscious mind এর মাধ্যমে। এই অবচেতন মনে যদি পজিটিভ চিন্তাকে গেঁথে দেয়া না যায় – তবে চেতন মনেও এর প্রভাব পড়ে। আপনি সচেতন ভাবে পজিটিভ চিন্তা করতে গেলে ঝামেলায় পড়বেন।
লেখক বলেন, আমরা নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে অবচেতন মনকে পজিটিভ মনোভাব ধারন করায় অভ্যস্ত করে তুলতে পারি। বইয়ে লেখক খুব সহজ একটি পদ্ধতির কথা বলেছেন। পদ্ধতিটির নাম “অটোসাজেশন”। মনোবিজ্ঞানীদের মতে একটি মিথ্যা কথাও যদি একজন মানুষ বার বার শুনতে বা বলতে থাকে – তবে সে এক সময়ে নিজেই সেই কথা বিশ্বাস করতে শুরু করে। আপনি যদি একটি নির্দিষ্ট পজিটিভ কথা (যেমন, ‘আমি একজন সুখী মানুষ, আমি জীবনে সফল হব’) সকালে উঠে এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময়ে বেশ কয়েকবার বলেন – তবে মাস খানেকের মধ্যেই সেটা আপনার অবচেতনে একটি ভালো প্রভাব ফেলতে শুরু করবে।
ইদানিং প্রায় সবার কাছেই স্মার্টফোন আছে, সেইসাথে হেডফোনও সহজলভ্য। আপনি দিনের যখনই সময় পাবেন – তখনই যদি আপনার পছন্দের কোনও পজিটিভ মোটিভেশনাল স্পিচ শোনেন – তাহলেও দেখবেন একটা সময়ে সেই ভালো কথাগুলো আপনার চিন্তাকে প্রভাবিত করছে। আপনি এমনিতেই সব ব্যাপারে পজিটিভ চিন্তা করতে শুরু করবেন।
০৪. খারাপ অভ্যাস বদলান, ভালো অভ্যাস রপ্ত করুন
জানলে হয়তো অবাক হবেন, প্রতিদিন সকালে উঠে প্রথমেই নিজের বিছানা নিজে গোছালে আপনার দিন অনেক বেশি ভালো যাবে। আপনার অভ্যাস যদি হয় সকালে উঠে বিছানা অগোছালো রাখা, অথবা অন্য কাউকে দিয়ে গোছানো – তবে এই অভ্যাসটি বদলে প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে নিজের বিছানা নিজে গুছালে দিনের শুরুতেই আপনার মাঝে একটি পজিটিভ ভাব তৈরী হবে। কারণ, যত ছোটই হোক, আপনি সকালে উঠেই একটি দরকারী কাজ করেছেন। গোছানো বিছানার দিকে তাকালেই আপনার মন ভালো হয়ে যাবে। বিশ্বাস না হলে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। আপনি নিজেরই বুঝবেন।
অভ্যাস পরিবর্তন করা আসলে খুব একটা কঠিন নয়। ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগালে যে কোনও বাজে অভ্যাস পরিবর্তন করা যায়। এভাবে প্রতিদিন খুব ভোরে উঠে একটু মেডিটেশন বা শরীরচর্চা করার অভ্যাস করুন – দেখবেন অন্যান্য দিনের চেয়ে আপনার মন অনেক বেশি ভালো থাকছে। একটি খারাপ বা ক্ষতিকর অভ্যাস বাদ দিয়ে তার জায়গায় নতুন একটি ভালো অভ্যাস করতে পারলে নিজের প্রতি বিশ্বাস অনেক বেড়ে যাবে। এই ছোট ছোট অর্জন গুলো করার সাথে সাথে আপনার মনের ভেতরে একটি ভালো লাগার অনুভূতি তৈরী হবে। আপনি সব বিষয়েই পজিটিভ চিন্তা করতে পারবেন।
বেশি খাওয়ার অভ্যাস, বেশি ঘুমানোর অভ্যাস শরীরকে দুর্বল করে দেয়। শরীর দুর্বল হলে মনও দুর্বল হয়ে যায়। যার ফলে মনে নেগেটিভ চিন্তা বেশি আসে। অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে যদি আপনার শরীরের উন্নতি হয়, তবে আপনার মনও শক্তিশালী হবে, এবং আপনি আগের চেয়ে অনেক বেশি পজিটিভ চিন্তা করতে পারবেন।
সম্পর্কিত হেল্পফুল পোস্ট : অভ্যাস কিভাবে কাজ করে, এবং যে কোনও বাজে অভ্যাস পরিবর্তনের উপায় : মিনি হ্যাবিটস
০৫. হাল না ছেড়ে ভুলগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন
পজিটিভ চিন্তা করার ক্ষমতা যাদের আছে, তারা আসলে সবকিছুকে অন্যভাবে দেখেন। ‘দৃষ্টিভঙ্গী বদলালে জীবন বদলে যাবে’ – এই কথাটি নিশ্চই একবার হলেও শুনেছেন। যারা সব সময়ে পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গীতে সবকিছু দেখেন – তাঁরা কখনও হাল ছাড়েন না। কোনওকিছুতে ব্যর্থ হলে তাঁরা অন্যের ঘাড়ে দোষ না চাপিয়ে, এবং কাজ করা না থামিয়ে সমস্যার আসল কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। লেখক এই প্রক্রিয়াকে “look out for missing pieces” বলেছেন। যে কোনও সমস্যায় এই মিসিং পিসটি খুঁজে বের করতে পারলেই সেই সমস্যার সমাধান করা অনেক সহজ হয়ে যায়। এটা পজিটিভ থিংকিং এর খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ।
আপনি যে সমস্যায় পড়েন না কেন, সেখানে কোনও একটা ভুল হয়েছে। আপনি যদি অন্যের ওপর বা পরিস্থিতির ওপর দোষ চাপাতে চেষ্টা করেন, অথবা হাল ছেড়ে দেন – তাহলেই আপনি ব্যর্থ হবেন। তার বদলে যদি পজিটিভ মনোভাব রাখেন, অর্থাৎ সমস্যাটিকে নিজের উন্নতির আরও একটি সুযোগ হিসেবে দেখেন – তাহলেই দেখবেন চেষ্টার মাধ্যমে আপনি সমস্যার সমাধান করে ফেলেছেন। সমস্যা যত কঠিনই হোক, হাল ছাড়বেন না। বিশ্বাস রাখুন যে, চেষ্টা করলে আপনি পারবেন। এটাই আসলে পজিটিভ চিন্তা করার সেরা উপায়।
পরিশিষ্ট:
পজিটিভ চিন্তা করার উপায় আসলে খুব সহজ। এই বইয়ের মূল কথা হল দৃষ্টিভঙ্গী আর অভ্যাসের পরিবর্তন। শুধুমাত্র চিন্তা ভাবনা পরিবর্তন করেই আপনার জীবন নিতে পারে এক নতুন মোড়। যেখানে আপনার কাঙ্খিত সাফল্যের দেখা পাবেন।
আপনার দৃষ্টিভঙ্গীকে পরিবর্তন করে পজিটিভ চিন্তা ধারার মানুষ হতে পজিটিভ চিন্তা করার উপায় নিয়ে এই লেখাটি যদি একটুও কাজে আসে – তাহলেই আমাদের চেষ্টা সফল হবে। আমাদের সেই চেষ্টা কতটা সফল হয়েছে – তা কমেন্ট করে আমাদের জানান। আপনার প্রতিটি মতামতই আমাদের কাছে অমূল্য।
যদি মনে হয় এই লেখাটি পড়ে অন্যরাও উপকৃত হবেন, তাহলে শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দেয়ার অনুরোধ রইল।
নেপোলিয়ন হিলের সবচেয়ে বিখ্যাত বই “থিংক এ্যান্ড গ্রো রিচ” এর রিভিউ আমরা শিঘ্রই প্রকাশ করব। যথাসময়ে লেখাটি পেতে, এবং এই ধরনের আরও লেখার জন্য নিয়মিত আমাদের সাথে থাকুন।
সাফল্যের পথে লড়াকু সব সময়ে আপনার সাথে আছে।
আরও বুক রিভিউ:
# জিনিয়াস হওয়ার উপায়: থিংক লাইক দ্য ভিঞ্চি
# সবকিছুকে ভুলে গিয়ে পূর্ণ মনযোগে কাজ করার উপায়: ডিপ ওয়ার্ক – (বুক রিভিউ)
# দি পাওয়ার অব সেল্ফ ডিসিপ্লিন – বুক রিভিউ
# সকাল ৮টার আগে এই ৬টি কাজ করলে আপনার জীবনই বদলে যাবে: “দি মিরাকেল মর্নিং” বুক রিভিউ
# রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড: বুক রিভিউ