নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার উপায় জানাটা তাঁদের জন্য সবচেয়ে জরুরী যাঁরা সত্যিই জীবনে বড় কিছু করতে চান। মানুষের বড় হওয়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধা হল তার মন। আবার এই মনই তার সফল হওয়ার সবচেয়ে বড় অস্ত্র। যে মনের ইচ্ছাকে নিজের প্রয়োজন মত নিয়ন্ত্রণ করতে পারে – সেই সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করতে পারে।
আসলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে পারা একজন মানুষের সবচেয়ে বড় দক্ষতা। দুইজন ছাত্রের কথা ধরা যাক। কাল তাদের পরীক্ষা। আজ টিভিতে তাদের দু’জনের প্রিয় টিমের ক্রিকেট ম্যাচ সরাসরি দেখাবে। তবে পরীক্ষায় যদি ভালো করতে হয় তবে তাদের উচিৎ হবে খেলা দেখা বাদ দিয়ে সময়টা পড়ার কাজে লাগানো, যাতে পরদিন পরীক্ষাটা ভালো হয়।
এই দুইজন ছাত্রের একজন নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে খেলা দেখা বাদ দিয়ে পড়াশুনা করল।তার পরীক্ষা খুবই ভালো হল। আরেকজন নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না। ফলে তার পড়া ঠিকমত হল না, আর তাই তার পরীক্ষাও ভালো হল না। অথচ দু’জনেরই লক্ষ্য ছিল পরীক্ষায় ভালো করা। একজন নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে লক্ষ্য অর্জনের জন্য সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করেছে, আরেকজন করেনি।
শুধু পড়াশুনা নয়, যে কোনও বিষয়েই মানুষ যদি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করতে পারে – তবে সে জীবনে অনেক বেশি সফল হতে পারবে।
আসলে মানুষের লক্ষ্য পূরণ না হওয়ার সবচেয়ে বড় একটি কারণই হল সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করতে না পারা। এবং এই না পারার সবচেয়ে বড় কারণ হল নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ না থাকা। কাজের সময়ে খেলা দেখা বা অন্য কোনও মজা বিসর্জন দেয়ার মত আত্মনিয়ন্ত্রণের শক্তি আপনার থাকতেই হবে, না হলে পিছিয়ে পড়তে হবে।
সত্যি কথা বলতে, সব সময়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারা সহজ নয়। কারণ সব সময়েই আমাদের সামনে বিভিন্ন ধরনের বিনোদন ও মজার বিষয় আসতে থাকে, যেগুলো এড়িয়ে সত্যিকার কাজ করাটা অনেক সময়েই কঠিন হয়ে যায়।
আর এটা কঠিন বলেই পৃথিবীর মাত্র ২০% মানুষ বাকি ৮০% এর ওপর কতৃত্ব করে। এই ২০% মানুষ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে সফল হতে হতে এমন একটা জায়গায় চলে যায়, তারা তখন অন্যদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। বিখ্যাত সেলফ ডেভেলপমেন্ট ট্রেইনার ও বেস্ট সেলিং লেখক ব্রায়ান ট্রেসি তাঁর “দি পাওয়ার অব সেল্ফ ডিসিপ্লিন”বইয়ে লিখেছেন, পৃথিবীর ২০ ভাগ মানুষ বাকি ৮০% টাকার মালিক। পৃথিবীর ৮০% মানুষ বাকি ২০% এর জন্য কাজ করে। এর কারণ হিসেবে অনেকে পুঁজিবাদ, সামাজিক অবস্থা – ইত্যাদিকে দায়ী করেন। একথা সত্যি যে, এগুলোর কিছু দায় আছে। কিন্তু এই ৮০% মানুষের একটি বড় অংশ সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় ও পরিশ্রমে বড় হয়েছেন। তাঁদের জন্ম হয়েছিল খুব সাধারণ অবস্থায়। বলার মত কোনও পরিচয় অথবা কোনও সম্পদ নিয়ে তাঁরা শুরু করেননি। চীনের জ্যাক মা, বিখ্যাত বিজ্ঞানী ও উদ্যোক্তা টমাস আলভা এডিসন, ভারতীয় ধনকুবের ধীরুভাই আম্বানী, অথবা বাংলাদেশের আকিজ শেখ এর মত মানুষরা এমন অবস্থা থেকে এমন জায়গায় উঠে এসেছেন – যা দেখেও বিশ্বাস হতে চায় না।
তাঁদের এই অবাক করা সাফল্যের পেছনে মেধা ও পরিশ্রমের পাশাপাশি আত্ম নিয়ন্ত্রণের একটা বড় ভূমিকা ছিল। ক্লাসের সেরা ছাত্রটি থেকে শুরু করে যে কোনও ক্ষেত্রের সেরা মানুষগুলোর মধ্যে এই গুণটি দেখা যায়। একজন মানুষ যত মেধাবী আর সুযোগের অধিকারীই হোক না কেন – সে যদি সময়মত নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে সঠিক কাজটি করতে না পারে – তবে সে সফল হতে পারবে না। যে কোনও ক্ষেত্রে সাফল্য পাওয়ার অন্যতম একটি শর্তই হল নিজেকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে পারা।
এই গুণটি অর্জন করে আপনিও যেন আপনার মেধা ও সামর্থকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে অনেক বেশি সাফল্য পেতে পারেন – সেই কারণে আমরা আজ নিয়ে এসেছি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার ৫টি উপায়।
সত্যি কথা বলতে এই উপায়গুলো মেনে চলা খুব সহজ নয়। কিন্তু সবগুলো না হলেও, কিছু যদি মেনে চলতে পারেন, তবে খুব তাড়াতাড়িই আপনার সাফল্যের মাত্রা বাড়তে শুরু করবে। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক:
নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জনের ৫ উপায়:
০১. সত্যিকার লক্ষ্য ঠিক করতে হবে
এটা খুব সহজ বিষয় নয়। কারণ জীবনে সাফল্যের জন্য লক্ষ্য ঠিক করা খুব গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এই ধাপেই বেশিরভাগ মানুষ ভুল করে এবং অনেকটা সময় নষ্ট করে ফেলে। এটা অবশ্যই আপনার ভেতর থেকে আসতে হবে। এটাই আপনার জীবনকে সংজ্ঞায়িত করবে। অন্য মানুষের চোখে ভালো হওয়ার জন্য যদি তাদের পছন্দমত লক্ষ্য ঠিক করেন – তবে একটা সময়ে গিয়ে হয়তো আফসোস করবেন। অন্যের ঠিক করে দেয়া লক্ষ্য কখনওই একজন মানুষের সত্যিকার লক্ষ্য হতে পারে না।
অনেক মানুষ আছেন যাঁরা বেশিরভাগ মানুষ যা করছে – সেটাকেই নিজের লক্ষ্য বানিয়ে ফেলে। এরা যদি দেখেন আশপাশের সবাই বিসিএস দিচ্ছে, তাহলে তাঁরাও তাই করবেন। যদি দেখেন বন্ধুবান্ধবের বেশিরভাগ ডাক্তারী পড়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে – তবে তাঁরাও তাই করেন। এঁরা কখনওই নিজের ট্যালেন্ট ও সত্যিকার ইচ্ছা খুঁজে দেখতে যান না।
অন্যদের মত হওয়া বা অন্যের চোখে ভালো হওয়ার প্রবনতা মানুষের জন্মগত। এবং এই প্রবনতাকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ নয়। কিন্তু যদি অনন্য হতে হয় – তবে এই প্রবনতাকে জয় করতে হবে।
এর জন্য নিজের একান্ত ইচ্ছা আর ট্যালেন্টকে খুঁজে বের করতে হবে।শুধু টাকা আর পজিশন মানুষকে সুখী করতে পারে না। একজন মানুষ যদি তার প্রিয় কাজগুলো করতে না পারে, তবে যতই অর্থবিত্ত আসুক – সে সুখী হতে পারবে না।আর সত্যিকার সুখী হওয়াই তো জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য।
জীবনের লক্ষ্য ঠিক করার সময়ে নিজেকে প্রশ্ন করুন, “কোন জিনিসটা আমি সবচেয়ে ভালো পারি?”, “কোন কাজটা না করতে পারলে আমার জীবন অপূর্ণ থেকে যাবে?”, “আমার মৃত্যুর পর কি হিসেবে মানুষ আমাকে মনে রাখলে আমি সবচেয়ে খুশী হব?”, “আমি আমার আশপাশের মানুষের জন্য কি করতে চাই?”, “আমার অর্জিত অর্থ বিত্ত দিয়ে আমি কি করতে চাই?”
গভীর ভাবে এবং গুরুত্বের সাথে এইসব বিষয় নিয়ে চিন্তা করুন। এই ধরনের চিন্তা মানুষকে অন্যদের দিকে তাকিয়ে নিজের লক্ষ্য ঠিক করা থেকে বিরত রাখে, এবং তার সত্যিকার লক্ষ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করে।
০২. লক্ষ্যকে ছোট ছোট করে ভাঙুন
লক্ষ্য খুঁজে পাওয়ার পর এবার আপনার কাজ হল তাকে ছোট ছোট করে ভাঙা। এটা না করার জন্য অনেকে লক্ষ্যের সঠিক মাপটা বুঝতে পারে না। সত্যি কথা বলতে, এই কাজটা খুব কম মানুষই করে।
আপনি যদি লক্ষ্যকে ছোট ছোট কাজে ভাগ না করেন – তবে এটা আসলে লক্ষ্য নয়, এটা মনের একটা ইচ্ছা মাত্র।
লক্ষ্যকে ছোট ছোট কাজে ভাগ করাকে আপনি একটি ইঁটের ঘরের সাথে তুলনা করতে পারেন। শুধু একটি ঘর বানানোর ইচ্ছা থাকলে হয় না। ঘর বানাতে একটি পরিকল্পনা লাগে, কত ইঁট লাগবে, তার সাথে আর কি কি উপাদান কি পরিমানে লাগবে – সব আপনাকে আগে থেকে জানতে হবে। না হলে আপনি ঘর ঠিকমত বানাতে পারবেন না। এসব বিষয় যদি বিস্তারিত ভাবে মাথায় না রাখেন, তবে ঘর বানানোটা আপনার কাছে যথেষ্ঠ গুরুত্ব পাবে না। এবং আপনি অন্য কিছু দেখলে সেদিকে মনোযোগ সরিয়ে নেবেন।
আপনি যদি ইঁট যোগাড় করে ফেলেন, তবে সেগুলো গেঁথে ঘর বানানোর আগ্রহ অনেক বেশি থাকবে। আর যদি শুধু একটি ঘরের মডেল কল্পনায় থাকে, তবে আপনার মনে হবে – এটা না বানালেও তেমন কোনও ক্ষতি হবে না। অন্য কোনও বিষয় সামনে এসে পড়লে আপনি সেখান থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে সরিয়ে আনার প্রয়োজনই বোধ করবেন না। কারণ, আপনার আসলে হারানোর মত তেমন কিছু নেই।
সময় নিয়ে একটি লক্ষ্যকে ছোট ছোট কাজে ও রুটিনে ভাগ করা বেশ সময় সাপেক্ষ ও কষ্টকর বিষয়। কিন্তু এটা একবার করে ফেললে পুরো প্রক্রিয়াটি স্পষ্ট হয়ে আপনার সামনে ধরা দেবে। আর যখন একবার সময় ও শ্রম দিয়ে পরিকল্পনা বানিয়ে ফেলবেন, তখন কাজ করার জন্য এমনিতেই ভেতর থেকে তাগিদ আসবে। প্রতিদিনই কিছু না কিছু করার থাকবে, এবং আপনি তা করতে চাইবেন। লক্ষ্য পূরণের পথে যদি অন্য কোনও প্রলোভনও আসে – নিজেকে অনেক সহজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
০৩. কাজের সময়ে বাকি সবকিছু থেকে দূরে যান
আপনি যতই চান না কেন, আপনার মনের একটা অংশ সব সময়ে আশপাশের পরিবেশের দিকে নজর রাখে। বিনোদন বা কাজের মনোযোগ নষ্টকারী বিষয়ের দিকে একটু হলেও আগ্রহ থাকে। এই কারণে কাজের জন্য সঠিক পরিবেশ সৃষ্টি করা জরুরী। সঠিক ভাবে কাজ করার পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে কাজের মনোযোগ অনেক বেড়ে যায় – এবং নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য খুব বেশি কষ্ট করতে হয় না।
বিখ্যাত পারফর্মেন্স গাইড ডিপ ওয়ার্ক – এ লেখক অধ্যাপক কার্ল নিউপোর্ট বলেছেন, গভীর মনোযোগের সাথে কাজ করতে হলে কাজের জন্য সময় নির্দিষ্ট করার পাশাপাশি সঠিক পরিবেশও সৃষ্টি করতে হবে। এমন পরিবেশ, যেখানে আপনার মনোযোগ নষ্ট করার মত উপাদান থাকবে না।
আপনি যখন কাজ করবেন – তখন সোশ্যাল মিডিয়ার ধারেকাছে যাবেন না। গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ কাজের সময়ে যদি একটি নোটিফিকেশন চেক করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢোকে – তবে প্রতিবার গড়ে ২৩ মিনিট নষ্ট হয়।
কাজ করার সময়ে প্রতিজ্ঞা করুন, এই সময়টাতে কোনওভাবেই সোশ্যাল মিডিয়ায় লগ ইন করবেন না। এছাড়া খেলার স্কোর চেক করা, অপ্রয়োজনীয় ফোন কল করা থেকে বিরত থাকুন। প্রয়োজনে ফোন বন্ধ রাখুন। কাজের মাঝে ব্রেক নেয়ার সময়েও এমন কিছু করবেন না – যেটাতে গভীর মনোযোগের দরকার হয়। কাজের ব্রেকের সময়টা মস্তিষ্ককে পূর্ণ বিশ্রাম দিন। বই পড়া বা কারও সাথে কাজের বাইরের বিষয় নিয়ে গভীর আলোচনা করা বাদ দিন। এগুলো কাজের থেকে পূর্ণ মনোযোগ সরিয়ে নেয় এবং একবার এগুলোতে মনোযোগ চলে গেলে আবার কাজে মনোযোগ নিয়ে আসা কঠিন হয়ে যায়।
আরেকটা বিষয়, কাজ করার জন্য একটি নির্দিষ্ট রুম রাখুন। বিশেষ করে যদি বাসায় কাজ করেন। এবং যে সময়টা আপনি কাজ করার জন্য ঠিক করেছেন সেই সময়টা সেই রুম থেকে বের হবেন না। ওয়াশ রুম বা খাওয়া দাওয়ার জন্য বের হতে পারেন – এর বাইরে নয়। রুমটি এমন ভাবে সাজান – যেন সেখানে বাইরের শব্দ বা পরিবেশের প্রভাব কম থাকে। সেখানে এমন কিছু রাখবেন না – যাতে আপনার কাজের মনোযোগ নষ্ট হয়। জরুরী কথা বলার জন্য একটি সাধারণ ফোন কাছে রাখুন। স্মার্টফোনটি অন্য রুমে রাখুন। বই পড়ার অভ্যাস থাকলে বইয়ের কালেকশন এখানে রাখবেন না। তাহলে কাজের মাঝে সেদিকে চোখ গেলে একটু বই পড়ার শখও হতে পারে। এই ধরনের অন্য মনোযোগ নষ্টকারী বিষয়গুলো সরিয়ে রাখুন।
যদি একটিই রুমে আপনার সবকিছু থাকে, তবে কাজের সময়ে এই জিনিসগুলো একটি বাক্সে রাখতে পারেন। খুব অল্প টাকায় কাগজের বাক্স পাওয়া যায়। এগুলোও কাজে লাগাতে পারেন। মনোযোগ নষ্টকারী জিনিসগুলো সরাসরি চোখের সামনে না থাকলে নিজেকে সেগুলোর আহ্বান থেকে নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সহজ হয়ে যায়।
কাজ করতে করতে ক্লান্তি চলে আসতেই পারে। এই সময়টাতে অনেকেরই একটু বিশ্রাম নেয়ার প্রয়োজন হয়। বিশ্রাম নিতে পারেন – কিন্তু বিশ্রাম নেয়ার জন্য বেশি আরামদায়ক কিছু না থাকাই ভালো। কাজের জায়গার আশপাশে যদি বিছানা জাতীয় কিছু থাকে – তাহলে ইচ্ছা হবে একটু ঘুমিয়ে নেয়ার। এই ধরনের ব্যবস্থা থাকলে অতিরিক্ত বিশ্রাম নেয়ার প্রবনতা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। এরচেয়ে ভালো হয় একটি আরামদায়ক চেয়ারে বসে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকলে। অতি আরামদায়ক বস্তু কাজের জায়গা থেকে দূরে রাখুন।
এই উপায় গুলো অনুসরন করলে কাজের সময়ে মনোযোগ নষ্টকারী বিষয় গুলো থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সহজ হয়ে যাবে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।কিন্তু এমন পরিবেশ যদি সৃষ্টি করতে পারেন – যেখানে এটার জন্য খুব বেশি কষ্ট করতে হবে না – তাহলে কিন্তু বিষয়টা আর তত কঠিন থাকে না।
আপনি যদি সঠিক ভাবে জানেন, কোন জিনিসগুলো আপনার মনোযোগ নষ্ট করছে, এবং সেগুলো থেকে দূরে থাকার জন্য মনে মনে সংকল্প করেন – তবে সহজেই নিজেকে সেসব থেকে দূরে রাখতে পারবেন।
০৪. গুরুত্ব অনুযায়ী কাজ সাজান
আপনি নিজের জন্য যে লক্ষ্যই ঠিক করেন না কেন, যদি সঠিক ভাবে তাকে অর্জন করতে পারেন – তবে আপনি ভাবনার চেয়েও বেশি সাফল্য পাবেন। এই লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রতিদিন আপনাকে যা করতে হবে – সেই কাজগুলোকে সবার আগে গুরুত্ব দিন।
২ নম্বর পয়েন্টে বাড়ি ও ইঁটের উদাহরণ দিয়েছিলাম।যদি একটি বাড়ি বানানোর লক্ষ্য থাকে, তবে প্রতিটি ইঁট কিভাবে সাজাবেন তার পরিকল্পনা ছক করে রাখতে হবে। প্রতিদিন কয়টি ইঁট গাঁথবেন তা ঠিক করুন। এবং এই কাজটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিন। অন্য সবকিছুকে দ্বিতীয় পর্যায়ে রাখুন।
এখানে ইঁট গাঁথার মানে আপনার লক্ষ্য পূরণে কি কি কাজ করতে হবে তা খুব ভালো ভাবে ভাগ করুন। প্রতিদিনের কাজের ছক সাজান এবং যে কোনও মূল্যে সেই কাজ শেষ করুন।
সামনে যখন দিনের কাজের একটি নির্দিষ্ট ছক থাকবে – তখন আপনি অন্য কোনও বিষয় সামনে আসলেও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করবেন। অন্য দিকে মনোযোগ গেলেও আপনার মনে হবে যে একটা দিন পিছিয়ে যাচ্ছেন। এটা আপনাকে অন্য বিষয় থেকে মনোযোগ সরিয়ে সত্যিকার কাজে মনোযোগী হতে সাহায্য করবে।
০৫. মুড আসার অপেক্ষা করবেন না
স্টিভেন প্রেসফিল্ড এর লেখা বিখ্যাত প্রোডাক্টিভিটি গাইড “দি ওয়ার অব আর্ট” এ তিনি দেখিয়েছেন মানুষ, বিশেষ করে সৃষ্টিশীল পেশার সাথে জড়িতরা কিভাবে মুড আসার অপেক্ষা করে মূল্যবান সময় নষ্ট করে।
তাঁর মতে, এটা হয় কারণ মানুষ কাজের বদলে বিনোদনের দিকে বেশি মনোযোগ দেয়। কাজের সময়ে মজার কিছু পেলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ না করে তারা সেই জিনিসগুলো করতে শুরু করে। একই সাথে তাদের এর জন্য খারাপ লাগে। তারা ভাবে, মুড আসলে তারা কাজ করবে। কিন্তু সেই মুড অনেক সময়ে আসেই না। ফলে কাজও করা হয় না।
মুড আসার অপেক্ষায় তারা একটি কাজ বার বার পরে করার জন্য ফেলে রাখে। এবং এক সময়ে এত কাজ জমে যায় যে, কিছুই ভালো মত করা হয় না।
এই অবস্থার থেকে বাঁচতে হলে, মুডের জন্য অপেক্ষা করা বাদ দিতে হবে। কাজ শুরু করলে একটা সময়ে মুড চলেই আসে। কিন্তু শুরু না করলে মুড কখনওই আসে না।
কাজ করার সময় আসলে আপনার সামনে যে ধরনের মজাই থাকুক না কেন – সেগুলো থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে কাজ শুরু করে দিন। তাহলেই দেখবেন ধীরে ধীরে অন্য বিষয় থেকে মনোযোগ সরে গিয়ে কাজের প্রতি মনোযোগ আসছে। কাজের সময়ে মুড না থাকলেও কাজ শুরু করে দিলে ধীরে ধীরে নিজের ওপর আপনার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হবে। প্রথম প্রথম হয়তো কষ্ট হবে। কিন্তু এটা একবার অভ্যাস হয়ে গেলে আপনি নিজেই নিজের মুডের মাস্টার হয়ে যাবেন।
পরিশিষ্ট:
নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারা সফল মানুষদের সবচেয়ে বড় গুণ গুলোর একটি। সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করতে হলে আপনার নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা শিখতে হবে। এই একটি অভ্যাসই আপনার জীবনকে ইতিবাচক ভাবে বদলে দিতে পারে। বেশিরভাগ মানুষ যখন নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণে পিছিয়ে যাবে, আপনি তখন নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে সময়ের কাজ সময়ে করে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবেন।
আর সেই পথে এই লেখাটি যদি আপনাকে একটু সাহায্য করে – তাহলেই আমাদের উদ্দেশ্য সফল।
লেখাটির বিষয়ে আপনার যে কোনও মতামত আমাদের কমেন্ট করে জানান। আপনার প্রতিটি মতামতই আমাদের কাছে মহামূল্যবান।
আর যদি মনে হয় লেখাটি অন্যদেরও উপকার করবে – তবে শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন।
আমরা আমাদের পাঠকদের কাছ থেকেও অনুপ্রেরণামূলক লেখা আশা করছি। এই ধরনের লেখা যদি আপনিও লিখতে পারেন তবে write@test.edaning.com – এ ইমেইল করতে পারেন। আপনার লেখা যত্ন সহকারে আপনার নাম সহ আমরা প্রকাশ করব।
নিয়মিত অনুপ্রেরণামূলক ও আত্ম উন্নয়ন মূলক লেখা পাওয়ার জন্য আমাদের সাথে থাকুন। সাফল্যের পথে লড়াকু সব সময়ে আপনার সাথে আছে।