জীবনকে সহজ করার উপায়: ৮টি বিষয় এখনই বাদ দিন !


জীবনকে সহজ করার উপায় জানতে হলে আমাদের জীবনের অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জানতে হবে।  আমাদের জীবনে অনেক বিষয়ই আছে যেগুলোর সত্যিকার কোনও গুরুত্ব নেই। কিন্তু আমরা সেগুলোকে অতি গুরুত্বপূর্ণ ভেবে নিয়ে তার পেছনে নিজেদের অনেক মূল্যবান সময় ও শক্তি নষ্ট করি। এই লেখায় এমন কতগুলি বিষয়ই তুলে ধরা হয়েছে যেগুলো  সাধারণ ভাবে জরুরী ও প্রয়োজনীয় মনে হলেও, সেগুলোর পেছনে সময় দিয়ে আপনি আপনার নিজেরই ক্ষতি করছেন, সেইসাথে আপনার কাজ ও কাছের মানুষগুলোর ক্ষতি হচ্ছে আপনার অজান্তেই।


আমাদের জীবন সৃষ্টিকর্তার দেয়া একটি অসাধারন সুন্দর উপহার।  কিন্তু অনেক মানুষ জীবনের সত্যিকার সৌন্দর্য খুঁজে পায় না। যা এখনও ঘটেনি তা নিয়ে দু:শ্চিন্তা করে জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট করার কোনও মানে হয় না।  অন্যের ইচ্ছায় জীবনের মূল্যবান একটি মূহুর্ত পার করা জীবনের মূল্যের প্রতি অসম্মান জানানোর সমান।

জীবন একান্তই আপনার চাওয়া ও সিদ্ধান্তের প্রতিফলন। আপনার প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি সিদ্ধান্ত জীবনকে আকার দান করে।  জীবনের পথ কোন দিকে বাঁক নেবে তা নির্ভর করে আপনার পথচলার ওপর।

একটি সুন্দর জীবনের জন্য আপনাকে অযথা ঝুঁকির বদলে হিসেব করা ঝুঁকি নিতে হবে।  আপনার নিজের মনের মত করে জীবনের লক্ষ্য ঠিক করতে হবে। আপনার জীবনের ওপর আপনার নিজের ও যারা সত্যিকারে আপনাকে ভালবাসে, তাদেরই অধিকার আছে।

নিজের সুখ-দু:খ, দর্শন, আর কাজ নিয়েই আপনার জীবন।  দিনশেষে নিজের জন্য, আপনার ভালবাসার মানুষদের জন্য এবং আপনার সৃষ্টিকর্তার জন্য আপনি কি করেছেন – সেটাই জীবনের আসল অর্থ। 

জীবনের শেষবেলায় গিয়ে প্রতিটি মানুষের কাছে এই বিষয়গুলিই শেষকথা।  কিন্তু আমরা আমাদের জীবনে আরও অনেক অপ্রয়োজনীয়, মূল্যহীন বিষয় ও বস্তুর জন্য সময়, মেধা ও চিন্তা খরচ করে জীবনের আসল সৌন্দর্যকেই ভুলতে বসি।

এরফলে সত্যিকার জীবন আর যাপন করা হয়না। পূরণ করা হয়না নিজের ঠিক করা লক্ষ্য, ভালবাসার মানুষগুলোর সাথে ঠিকমত সময় কাটানো হয় না।  সৃষ্টিকর্তার সামনে দাঁড়াতে হয় অপরাধীর মত।

কিন্তু একটু চেষ্টা করলেই কিন্তু আমরা সেইসব অপ্রয়োজনীয়, ক্ষতিকর, মূল্যহীন বিষয়বস্তুর থেকে বেঁচে থেকে জীবনটাকে সত্যিকার ভাবে উপভোগ করতে পারি।  আবেগের প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ আর সবকিছু নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা জীবনকে জটিল করে তোলে।

এই জটিলতা থেকে মুক্তি পেয়ে জীবনকে সত্যিকার উপভোগ্য করে তুলতে পারাটাই জীবনের স্বার্থকতা।

চলুন জেনে নিই এমন ৮টি জিনিসের কথা যেগুলো আমাদের জীবনকে জটিল করে তোলে, কিন্তু সত্যিকার অর্থে সেগুলোর কোনও মূল্য জীবনে নেই। জীবনকে সহজ করার উপায় হল, জীবনকে জটিল করছে যে জিনিসগুলো, সেগুলো বাদ দেয়া।

জীবনকে সহজ করার উপায়: নিজের জিনিসগুলো বাদ দিন

০১. ভয় আর শঙ্কা

জীবনকে সহজ করার উপায়

একজন মানুষ যখন ভয়ের মাঝে দিন কাটায়, তখন বুঝতে হবে সে আসলে সত্যিকার অর্থে বেঁচে নেই।  অন্যরা আপনাকে নিয়ে কি বলল বা কি ভাবল -এসব নিয়ে ভয় পাওয়া মানে জীবনকে ছোট করে দেখা।

আপনি যদি অন্যরা আপনাকে নিয়ে কি ভাববে – এই আশঙ্কা করে চলেন, তাহলে বলতে হবে আপনি নিজের ওপর অত্যাচার করছেন।  নিজের সুখ শান্তির প্রতি অবিচার করছেন। আপনার নিজের জন্য এবং কাছের মানুষদের জন্য আপনার সুখী হওয়া প্রয়োজন। শঙ্কার মাঝে জীবন কাটালে আপনি কখনওই পুরোপুরি সুখী হতে পারবেন না।

আপনি হয়তো দেখেছেন, ইঁদুর বা ঐজাতীয় দুর্বল প্রাণীরা দিনের বেলা গর্তে লুকিয়ে থাকে। তাদের এই অভ্যাস হয়েছে তাদের দুর্বলতার কারনে।

তারা জানে, প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালে যে কোনও সময়ে যে কারও সহজ শিকারে সে পরিনত হতে পারে। জগতের প্রতিটি প্রাণীর জীবনই প্রকৃতির নিয়মে বাঁধা। একমাত্র মানুষকেই সৃষ্টিকর্তা ক্ষমতা দিয়েছেন সেই নিয়মের বন্ধন থেকে বের হয়ে এসে নিজের ইচ্ছামত বাঁচার।

পরিপূর্ণ মানবজীবন একজন মানুষ তখনই ভোগ করতে পারে যখন সে সমস্ত ভীতি আর শঙ্কাকে পাশ কাটিয়ে নিজের মত বাঁচতে পারে। আপনাকে সৃষ্টিকর্তা ক্ষমতা দিয়েছেন নিজের মর্জিমত চলার। এই ক্ষমতাকে কাজে লাগান, নিজের জন্য নিজের কাছে যেটা ভাল মনেহয়, সেটা করুন, অন্যকেও তাই করতে দিন – দেখবেন, জীবনকে অনেক সহজ মনে হচ্ছে।

০২. সন্দেহ আর ক্ষোভ

self doubt

সন্দেহ আর ক্ষোভ যেভাবে মানুষের মনের শান্তি নষ্ট করে – তেমনটি আর কোনও জিনিসই করে না।  বিশেষ করে আমরা যখন কারও প্রতি শুধুমাত্র নিজের ধারনা আর সন্দেহের বশে ক্ষোভ ধরে রাখি – তখন মানসিক শান্তি একদমই নষ্ট হয়ে যায়।   

বেশিরভাগ সময়েই এই ধারনা গুলো হয় অমূলক। কিন্তু আমরা এই ধারনাগুলো পুষে রেখে নিজের জীবনকেই দুর্বিষহ করে তুলি।  সন্দেহের বশে ধরে রাখা ক্ষোভ আপনার জীবন থেকে আনন্দ আর শান্তি জোঁকের মত শুষে নেবে।

আপনার যদি মনে হয় যে আপনার কোনও পরিচিত মানুষ আপনার পেছনে কোনও খারাপ কাজ করছে, যা আপনার ওপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে, তবে মনে মনে একটা কিছু ধরে নিয়ে তার সাথে রাগ করে থাকার চেয়ে ভাল হবে সরাসরি কথা বলা।  এতে করে  মনের অমূলক ধারনা দূর হয়ে দিনের পর দিন অস্বস্তিতে কাটানো থেকে মুক্তি পাবেন।

৩. মন খারাপ থাকা

upset emoji, জীবন

যে কোনও বিষয়েই বেশিক্ষণ বা বেশিদিন মন খারাপ করে রাখাটা আপনার জীবনের প্রতি অবিচার।  আপনাকে মনে রাখতে হবে আমাদের প্রত্যেকেরই জীবন খুবই সীমিত একটি সময়ের। জীবনের প্রতিটি মূহুর্তকে অর্থপূর্ণ কাজে লাগাতে হবে।

কোনও বিষয়ে মন খারাপ থাকলে জেনে রাখুন, মনমরা হয়ে থাকলে সমস্যা সমাধান হয়না। এতে করে শুধুমাত্র আপনার জীবন থেকে মূল্যবান কিছু সময় নষ্ট করা হয়। তাই প্রতিটি মূহুর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করুন।  খারাপ ঘটনার পাশাপাশি আমাদের জীবনে ভাল ঘটনাও ঘটে।

আশা করুন খারাপ পরিস্থিতি যে কোনও সময়ে ভালোর দিকে মোড় নেবে। সব সময়ে প্রফুল্ল থাকার চেষ্টা করুন। যাদের সাথে থাকলে সময় ভালো কাটে, তাদের কাছাকাছি থাকুন। যেসব মানুষ আপনার মানসিক অশান্তির কারণ, তাদের থেকে দূরে থাকুন।  জীবন একটাই, এবং জীবন আপনার। এই এক জীবনের একটি মূহুর্তও যদি অযথা মন খারাপ করে কাটান, তবে দিন শেষে ক্ষতি আপনারই।

৪. অতীত নিয়ে আফসোস করা

মৃত্যুকে বাদ দিলে মানুষের সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতাটি হল মানুষ তার অতীত পরিবর্তন করতে পারে না।  এই ব্যাপারটি নিয়ে চিন্তা করে যেমন হতাশ লাগে, আবার আশাবাদীও হওয়া যায়।

আপনি হয়তো অতীতে এমন কোনও কাজ করেছেন, যার জন্য এখন আফসোস হয়, কিন্তু এই আফসোস কোনও সমাধান বয়ে আনে না।  এতে শুধু বর্তমান সময়েরই অপচয় হয়

আপনার মন ও কাজের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে, যা আপনার ভবিষ্য‌‌ৎ নষ্ট করে। এখন আপনিই চিন্তা করুন, আপনি কোনটিতে মনযোগ দেবেন? আপনার অতীত, যা আপনার পক্ষে কখনওই পরিবর্তন করা সম্ভব নয়; নাকি বর্তমান ও ভবিষ্য‌ৎ- যা আপনি চাইলে নিজের মত করে গড়ে নিতে পারেন? – অতীত ব্যর্থতা বা দু:খ ভুলে যদি বর্তমানকে ঠিকমত কাজে লাগাতে পারেন – তবে একটি সহজ জীবন ও সুন্দর ভবিষ্য‌ৎ গড়তে পারবেন।

৫. অভিযোগ করা

complain

সৃষ্টিকর্তার মানুষকে দেয়া সবচেয়ে অনন্য উপহারগুলোর মধ্যে একটি হল নিজের ইচ্ছায় চলার ক্ষমতা; ইংরেজীতে যাকে বলে “Free Will” – এর মানে হচ্ছে মানুষ তার জীবন কিভাবে চালাবে, তা সে নিজেই ঠিক করে নিতে পারে।  নিজের ইচ্ছায় সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

একটি বাঘ  মাংস ছাড়া অন্যকিছু খেতে পারবে না। গরু-ছাগল মাংস খেতে পারবে না। একটি মাছ চাইলেই ডাঙায় কিছুক্ষণ ঘুরে বেড়াতে পারবে না।

মানুষ শারীরীক দিক থেকে সীমাবদ্ধ হলেও, তার মস্তিষ্কের অসীম ক্ষমতাবলে আকাশকেও জয় করেছে।  আর এই ক্ষমতার কারনেই মানুষকে কোনও প্রাকৃতিক নিয়মের মাঝে বন্দী করে রাখা সম্ভব নয়।

কিন্তু আমরা সৃষ্টিকর্তার দেয়া এই অনন্য ক্ষমতার ব্যবহার না করে অনেক সময়েই নিজেদের পরিস্থিতি বা ব্যর্থতার দায় চাপিয়ে দিই অন্যের ঘাড়ে। কোনও খারাপ অবস্থায় পড়লে আমরা নিজেরা তার দায়িত্ব না নিয়ে অভিযোগ করি অন্য মানুষ বা পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপর।

এতেকরে আমরা নিজেদের সম্ভাবনাগুলোকে নষ্ট করে দিই। কিন্তু এর বদলে যদি আমরা নিজেদের দিকে তাকাই, এবং অন্যের প্রতি অভিযোগ করা বন্ধ করে নিজের কমতিগুলোকে জয় করার চেষ্টা করি, তাহলে আমরা আমাদের ইচ্ছাশক্তির বলেই অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারি।

কাজেই, জীবনকে যদি পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগাতে হয় তবে অযথা অভিযোগ করে সময় নষ্ট না করে, নিজের উন্নতিতে মনযোগ দেয়াই হবে সবচেয়ে ভাল উপায়। যখনই আপনার জীবনের দায়িত্ব নিজের হাতে নেবেন, তখনই শুরু হবে কাজের মাধ্যমে আপনার নিজের ও আশপাশের মানুষের জীবনকে সহজ করার প্রক্রিয়া।

৬. ঘৃণা পুষে রাখা

জীবনকে সহজ করার উপায়

প্রতিটি মানুষের মাঝেই আবেগ আর অনুভূতি আছে।  এগুলো না থাকলে আমরা হয়তো ‘মানুষ’ হয়ে উঠতে পারতাম না।  আরও একটি বিষয় যা আমাদের মানুষ করেছে, তা হল ভুল করার প্রবনতা।

আগেই বলা হয়েছে, মানুষ অনেক ক্ষেত্রেই প্রকৃতির নিয়মে বাঁধা নয়। সে তার নিজের মত সিদ্ধান্ত নিতে পারে, কাজ করতে পারে, জীবনের পথ বেছে নিতে পারে।  আর এই স্বাধীনতাগুলো অনেক সময়েই মানুষকে ভুল পথে নিয়ে যায়।

অনেক সময়েই এই ভুলগুলো আমাদের মনে অন্যদের প্রতি ঘৃণার সৃষ্টি করে। অনেক ঘৃণা আমরা সারাটা জীবন বয়ে বেড়াই।

ঘৃণা এমন একটি বিষ যা কামনা করে অপরের ধ্বংস, কিন্তু আমরা টেরও পাইনা, আমরা নিজেরাই নিজেরাই এর ফলে নি:শেষ হয়ে যেতে থাকি।

অনেক সময়ে কোনও মানুষ, কোনও গ্রোত্র বা জাতির প্রতি তীব্র ঘৃণা নিয়ে বেঁচে থাকি, যাদের সাথে আমাদের হয়তো জীবনে কোনওদিন সরাসরি দেখাই হবে না। তারা তাদের মত থাকে, কিন্তু মাঝথেকে ঘৃণার আগুনে জ্বলতে জ্বলতে আমরা নিজেরা নিজেদের কষ্ট দিই।

অনেক সময়ে একজন মানুষ তার নিজের ভুল বুঝতে পারলেও আমরা তাকে ঘৃণা করা বন্ধ করতে পারি না। এতেকরে আমরা আমাদের অপরিসীম ক্ষতি করে ফেলি।

গডফাদার সিনেমার একটি বিখ্যাত সংলাপ আছে: “Never hate your enemies, it affects your judgment” – তাহলে দেখা যাচ্ছে শত্রুকেও যদি আমরা ঘৃণা করি, তাহলে তা আমাদের স্বাভাবিক বুদ্ধি বিবেচনা কাজ করে না, এরফলে আমরা অনেক সময়েই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি না।  আমাদের জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ।

তাই কেউ যদি তার ভুল বুঝতে পারে, আমাদের উচি‌ৎ তাকে ক্ষমা করে দেয়া। এমন কারও প্রতি ঘৃণা পুষে রেখে দিন পার করা উচি‌ৎ না যার কাছে পৌঁছানো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তারথেকে বরং মনযোগ দেয়া উচি‌ৎ নিজের ও আশপাশের মানুষের উন্নতি ও শান্তির দিকে। আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে যত মহাপুরুষ এসেছেন, সবাই আমাদের বলেছেন শান্তির পথ বেছে নিতে। কারন এই মহান মানুষগুলো খুব ভালভাবেই বুঝতে পেরেছেন, ঘৃণা শুধু একজন মানুষ ও তার আশপাশকে ধ্বংসই করতে পারে।

ঘৃণার ফলাফল কখনও ভাল হয় না। ন্যায় বিচারের জন্য ঘৃণা পুষে রাখার কোনও প্রয়োজন নেই, অপরাধ যে করেছে, বিচার তার হবেই। আজ অথবা কাল।  কাজেই ঘৃণা পুষে রেখে নিজেকে কষ্ট দেয়ার থেকে নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত থাকাই পরিপূর্ণ জীবন যাপনের উপায়।

৭. নেতিবাচক ও নিরাশ থাকা

regret

জীবন একটি ‘ওয়ান টাইম অফার’ – এবং এই অফারটি আমাদের বিবেচনার সাথে ব্যবহার করা প্রয়োজন।  কারন, ভাল কাজে কোনও জিনিস ব্যবহার করলে তার ফল যেমন ভাল হয় – খারাপ কাজে ব্যবহার করলে তার ফলাফল সব সময়ে খারাপই হয়

তেমনি ভাল চিন্তার ফলাফল যেমন ভাল, খারাপ চিন্তার ফলাফলও খারাপ।

দার্শনিক বেন্জামিন ডিজরেইলি বলেছেন, “একজন মানুষের চিন্তাভাবনাই তার জীবন গড়ে”

পরীক্ষার আগে যদি আপনি ধরেই নেন যে আপনি ফেল করবেন, তাহলে আপনার পাশ করার যেটুকু সম্ভাবনা ছিল, সেটুকুও নষ্ট হয়ে যায়।  অন্যদিকে আপনি যদি আশা করেন যে আপনি পরীক্ষায় ভাল করবেন, তখন আপনার ভেতর থেকেই তাগিদ আসবে পড়াশুনা আর প্রাকটিস করার।

আমাদের চিন্তাগুলোই আমাদের কাজের গতি ও দিক নির্ধারন করে। জীবনের যে কোনও ব্যাপারে আমরা যদি চিন্তা করি যে আমরা সফল হব – এই চিন্তাটাই আমাদের অনেক দূর এগিয়ে দেয়।

নিজের ওপর বিশ্বাস ও ভবিষ্যতের প্রতি আশা রাখাটাই আসলে জীবনে এগিয়ে যাওয়ার মূল রহস্য। একজন পজিটিভ চিন্তা করা, বিশ্বাসী ও আশাবাদী মানুষের কাছে জীবনের প্রতিটি মূহুর্তই সুন্দর ও উপভোগ্য। প্রতি মূহুর্তেই সে নতুন কিছু শিখতে থাকে, একটি সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে সে এগিয়ে যেতে থাকে।  

অন্যদিকে একজন মানুষের মনে যদি সব সময়ে নেতিবাচক বা নেগেটিভ চিন্তা থাকে। সামনে তাকালে যে কোনও আশার আলো দেখতে পারেনা অথবা দেখতে চায় না, সে ধীরে ধীরে মুষড়ে পড়তে থাকে। জীবনটা তার কাছে একটি বোঝার মত হয়ে দাঁড়ায়। এই ধরনের মানুষ হয় জীবনকে অতিরিক্ত সিরিয়াস ভাবে নেয়, অথবা অতিরিক্ত সহজ ভাবে নেয়। জীবনে সত্যিকার সাফল্য ও শান্তি চাইলে এটা করা যাবে না।

প্রতিটি ব্যর্থতা বা খারাপ পরিস্থিতির মাঝে লুকিয়ে থাকে সাফল্যের সম্ভাবনা। তাই সব সময়ে আশাবাদী থাকুন, ইতিবাচক থাকুন। তাহলে আপনার জীবনও সেদিকেই পরিচালিত হবে।

৮. সবকিছুকে জটিল করে দেখা

complicated

আগেও একবার বলেছি, আমরা যে পরিস্থিতিকে যে দৃষ্টিতে দেখব – তার ফলও তেমন হবে।

গাছ থেকে ফল ঝরলে আপনি গাছের জন্য দু:খ পেয়ে কান্না করতে পারেন, আবার ফল খেতে পারবেন ভেবে খুশিও হতে পারেন।  গাছের কিন্তু কিছুই আসে যায় না। ফল পাকলে ঝরবেই। 

আমরা অনেক সময়েই অনেক সহজ সহজ বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করে সেগুলোকে জটিল করে ফেলি। ইংরেজীতে Closure বলতে একটি শব্দ আছে। সোজা বাংলায় যার অর্থ “সমাধান”। আপনি যদি কাউকে মিস করেন, তাকে কল করুন, অথবা অন্য কোনওভাবে তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করুন। সরাসরি বোঝার চেষ্টা করুন আপনার মিস করায় তার কিছু আসে যায় কিনা।

এটা না করে যদি আপনি বিভিন্ন আকারে ইঙ্গিতে একজনকে এসব বোঝাতে যান, তবে হিতে বিপরীত হতে পারে। আর এসব চিন্তায় সময় ব্যয় করলে তা সময় নষ্ট।

কারও কাছে কিছু বিক্রি করতে চাইলে সরাসারি সেই কথা বলুন।  হ্যাঁ-না কোনও একটা উত্তর আসবে। না – শুনলে হয়তো আপনার খারাপ লাগবে, কিন্তু বিষয়টি একটি Closure এ পৌঁছাবে।

এতেকরে আপনি না-কে হ্যাঁ বানানোর কৌশল ঠিক করার সময় পাবেন, অথবা সেটা করলে ভাল কি খারাপ হবে তা বুঝতে পারবেন।  কিন্ত এধরনের কোনও ব্যাপারে  জটিলতা সৃষ্টি করলে, তা সময় ও শান্তি নষ্ট করবে – এটাই স্বাভাবিক।

আরেকজন কি ধারনা করছে বা ভাবছে, তা ভেবে সময় নষ্ট করে এবং নিজেকে জটিলতার মাঝে না ফেলে, আপনার উচি‌ৎ হবে নিজের কথা বলা।  তারপর আপনি যা জানতে চান, সে প্রশ্নটি সরাসরি করা। এতে জীবন সহজ হবে।

পরিশিষ্ট:

ভেবে দেখুন তো, আপনার জীবনেও হয়তো এই আটটি বিষয়ের সব, বা কোনও একটির প্রভাব রয়েছে।  আমরা কিন্তু চাইলেই নিজের চিন্তাগুলোকে একটু গুছিয়ে জীবনকে সহজ করে নিতে পারি। আমাদের চিন্তা আর মানসিকতার মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারলে আমাদের জীবনের মোড়ও ঘুরে যাবে।


লেখাটির বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানান। ভাল লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। আপনার জীবনকে সহজ ও সফল করার জন্যেই আমাদের যাবতীয় প্রচেষ্টা। আপনার সুন্দর জীবন গড়ার প্রতিটি পদক্ষেপে লড়াকু আপনার সাথে আছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন !