আলস্য দূর করার উপায় জানাটা সবার জন্যই জরুরী, কারণ জীবন চলার পথে আমাদের ছোট-বড় বাধার মুখে পড়তেই হয়। কিছু বাধা আসে বাইরে থেকে, আর কিছু আসে ভেতর থেকে। আমাদের ভেতর থেকে যে বাধাগুলো আসে, তার মধ্যে সবচেয়ে আলস্য নি:সন্দেহে সবচেয়ে ক্ষতিকর একটি বাধা।
এই বাধা দূর করতে হলে আলস্য এর উৎস জানা, ও আলস্য দূর করার কৌশল জানা প্রয়োজন। এগুলোই তুলে ধরা হয়েছে GTD মেথড বইয়ে।
পুরো বই থেকে কাজে লাগার মত অংশগুলো নিয়ে সাজানো হয়েছে এই রিভিউ। আশাকরি সারাজীবনের জন্য আলস্য দূর করার উপায় হিসেবে এটি আপনার উপকারে আসবে।
আলস্যের আসল উৎস মস্তিষ্ক:
আলস্যের কারণে অনেক সময়েই আমরা সময়ের কাজ সময়ে করতে পারিনা; কিছু কাজ তো শেষ পর্যন্ত করাই হয় না। আপনার হয়তো ধারনা আলস্য পুরোটাই শারীরিক ব্যাপার। শরীরে একটু মেদ বেশি থাকলেই আমরা সেই মানুষটিকে অলস ভাবি।
কিন্তু খেয়াল করলেই দেখতে দেখবেন প্রচুর ভারী শরীরের মানুষ অক্লান্ত ভাবে কাজ করে । আবার অনেক চিকনচাকন মানুষ শুয়ে বসে দিন কাটায়।
এর কারণ, আলস্য শুধুই একটি শারীরিক ব্যাপার নয়। আমাদের মন ও মস্তিষ্কও এর জন্য দায়ী। তবে এই ব্যাপারে বিস্তারিত বলার আগে চলুন এমন একটি অভিজ্ঞতার কথা বলা যাক, যা আমাদের প্রায় সবার সাথেই হয়েছে।
আমরা সবাই বাজার সদাই করি। এমন ঘটনা আপনার সাথে নিশ্চই হয়েছে যে আপনি ৫-৬টি সদাই কিনতে দোকানে অথবা বাজারে গিয়েছেন, খুব খেয়াল করে সব আইটেম কিনে এনেছেন, কিন্তু বাসায় এসে ব্যাগ খুলে দেখলেন কিছু দরকারী জিনিস কেনা হয়নি – যার ফলে আপনাকে আবারও বাজারে যেতে হয়।
এরকম ঘটনা দুই একবার ঘটার পর আপনি হয়তো এখন বাজারে যাওয়ার সময়ে একটা লিস্ট নিয়ে যান, যাতে কিছু আনতে ভুল না হয়।
কিন্তু এই ভুল কেন হয়?
আমাদের মস্তিষ্ক পৃথিবীর যে কোনও সুপার কম্পিউটারের চেয়ে শক্তিশালী। তবুও এর কিছু দুর্বলতা আছে।
অনেকগুলো কাজ একসাথে করতে গেলে আমাদের মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে পড়ে। কম্পিউটারে যদি একটার পর একটা প্রোগ্রাম চালু করতে থাকেন, একটা সময়ে তার পারফর্মেন্স দুর্বল হতে থাকে। এরপরও যদি একের পর এক প্রোগ্রাম ওপেন করতে থাকেন, তাহলে কম্পিউটার কাজ করাই বন্ধ করে দেবে।
তেমনি, আলাদা আলাদা কাজ ও ভাবনা যখন মস্তিষ্কে আসতে থাকে এবং আমরা যদি সেগুলোর ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত না নিয়ে কাজ শেষ না করি, তাহলে সেগুলো মস্তিষ্কের বিশেষ অংশে জমা হয়।
আমাদের মনে হয় আমরা অনেক কিছুই সময়ের সাথে ভুলে যাই। কিন্তু আমাদের অবচেতন মন বা subconscious mind এ সবকিছুই জমা থাকে। আমাদের চেতন মন বা conscious mind এ সেসব ধরা না দিলেও, ভুলে যাওয়া কাজ বা ভাবনার প্রক্রিয়া অবচেতনে চলতেই থাকে।
তাই কোনও বিশেষ বস্তু বা ঘটনা সামনে এলে, অনেক সময়েই আমাদের ভুলে যাওয়া স্মৃতি মনে পড়ে যায়।
এটা আমাদের মস্তিষ্কের একটি খুবই ভালো দিক; কিন্তু এর একটা খারাপ দিকও আছে। যখন অনেক স্মৃতি বা ভাবনা মস্তিষ্কে জমা হয়, একটা সময়ে গিয়ে এগুলো আমাদের দেহ ও মনের ওপর চাপ ফেলে। ফলে ক্লান্ত লাগে।
কম্পিউটারের মত আমাদের পারফর্মেন্সও দুর্বল হতে শুরু করে– এবং এর ফলে আলস্যের সৃষ্টি হয়। আমাদের কাজের গতি ও মান কমে যেতে থাকে।
অনেক সময়েই বিনা কারণেই আমাদের মনের ভেতরে একটা অস্বস্তি লেগে থাকে, কিছুই করতে ভালো লাগে না। শুধু ঘুম আসে। মনেহয় আজ কোনও কাজই করতে পারবেন না।
এর একটা বড় কারণ, অনেক সমাধান না হওয়া ভাবনা, কাজ এবং আইডিয়া অবচেতন মনে রয়ে যায়। এগুলো চেতন মনে একটা অস্বস্তি সৃষ্টি করে। যার প্রভাব পড়ে আমাদের স্বাভাবিক কাজে।
আলস্য দূর করার উপায় কি?
লেখক ও গবেষক ড. ডেভিড এ্যালেন একজন নামকরা পারফর্মেন্স কোচ এবং productivity trainer । ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি ভালোভাবে কাজ করা, ও কাজের গতি বাড়ানোর ব্যাপারে পেশাজীবিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন।
তিনি তাঁর বেস্ট সেলার “Getting Things Done: The Art of Stress-Free Productivity” – বইয়ে লিখেছেন আমাদের মস্তিষ্ককে সেই ধীরগতির কম্পিউটার বানানো যাবে না।
একটি বড় শান্ত পানির পুকুরে যদি একটি ছোট পাথর ফেলা হয় তাহলে অল্প একটু ঢেউ তুলে পানি আবার স্থির হয়ে যাবে। যদি একটা বড় পাথর ফেলা হয় তবে বড় একটা ঢেউ উঠবে – কিন্তু একটু পরেই আবার শান্ত হয়ে যাবে। অর্থাৎ, ইনপুট অনুযায়ী আউটপুট।
লেখক বলেন, পানির এই অসাধারন ক্ষমতা আমাদের মনকেও শেখানো সম্ভব।
কিভাবে? – সারাটা দিনই আমাদের মাথায় আলাদা আলাদা আইডিয়া, ও ভাবনা আসে। এগুলোর কিছু বড়, কিছু ছোট। ভালোভাবে কাজ করতে গেলে, প্রতিটি ভাবনা ও কাজের পেছনে যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকুই মানসিক শক্তি ব্যবহার করা উচিৎ।
শুনতে সহজ মনে হলেও এটা অতটা সহজ কাজ নয় – যদি না আপনি সঠিক উপায়টি জানেন।
কোন কাজে কতটা শক্তি খাটাবেন, তার পরিমাপ করা এবং প্রতিটি কাজ সঠিক ভাবে করার জন্য লেখক “GTD” নামে ৫ ধাপের একটি মেথড তৈরী করেছেন যা আসলে “Getting Things Done” এর সংক্ষিপ্ত রূপ।
এই লেখায় আপনি এই পাঁচটি ধাপের নাম এবং কিভাবে আলস্য দূর করার উপায় হিসেবে এগুলো কাজে লাগাবেন তা জানবেন। চলুন তাহলে, শুরু করা যাক।
GTD এর ৫টি ধাপ:
ড. এ্যালেন এর মেথড এর ৫টি ধাপ হল:
১. ধারণ করা (capture)
২. বাছাই করা (process/clarify)
৩. সাজানো (organize)
৪. পর্যালোচনা (review)
৫. কাজে নামা (engage)
নাম জানা হলো, এখন চলুন এই পাঁচটি ধাপ আমরা বিস্তারিত ভাবে জেনে নিই।
০১. ধারণ করা (capture)
এই ধাপে সারাদিন মাথায় যেসব ভাবনা ও কাজের কথা আসে, তা দ্রুত লিখে ফেলুন। এভাবে যখন আপনার ভাবনা বা আইডিয়াগুলোকে একটি external memory তে রাখবেন, তা আপনার মনের ওপর থেকে চাপ কমিয়ে দেবে।
এই external memory, একটি ছোট নোটবুক, মোবাইল ফোন, নোটপ্যাড, ডায়েরী – যে কোনও কিছু হতে পারে।
অর্থাৎ এটি এমন একটি জায়গা, যেখানে চাইলেই আপনার ভাবনা বা আইডিয়াগুলো দেখে নিতে পারেন।
এই মেমোরিকে আপনি বাস্কেট, ইনবক্স – এই ধরনের কোনও একটি নাম দিতে পারেন।
আপনাকে শুধু একটি জিনিস মনে রাখতে হবে যে, যাতেই আপনি লিখবেন তা যেন যে কোনও সময়ে চাইলেই হাতের কাছে পাওয়া যায়।
কাজ, ভাবনা বা আইডিয়া ছোট বড় যেটাই হোক , মাথায় আসলেই এখানে লিখে ফেলুন।
এই লিস্ট বানানোর প্রধান কারণ হল এগুলো একবার লিখে ফেললে মস্তিষ্ক এসব মনে রাখা জরুরী মনে করবে না, যার ফলে মাথা চাপমুক্ত হবে। সেই সাথে, মাথার বেশ কিছুটা জায়গা খালি পাবেন।
০২. বাছাই করা (process/ clarify)
অনেকেই নিজের কাজগুলোকে লিস্ট করে তারপর কাজে নামেন। তবুও সেগুলো ঠিকমত করতে পারেন না কারণ এই লিস্ট করার পরে কি করতে হবে – তারা তা জানেন না।
লিস্ট করা কাজগুলোর কোনটা কতটা জরুরী এবং কোনটা করা সম্ভব, কোনটা এই মূহুর্তে করা যায় – এসব বিবেচনা করে আলাদা আলাদা ভাগে কাজগুলোকে বাছাই করতে হবে।
অর্থাৎ কোনটা আগে করতে হবে, কোনটা পরে করতে হবে – এটা সঠিক ভাবে বুঝতে হবে। এটাই GTD এর দ্বিতীয় ধাপ।
যতক্ষণ না আপনি কাজ ও ভাবনাগুলোর ব্যাপারে সঠিক ধারণা পাচ্ছেন, ততক্ষণ লিখে রাখলেও এই চিন্তাগুলো আপনার মাথায় ঘুরপাক খাবে – এতে আপনি লিস্ট বানানোর পুরো সুবিধা পাবেন না।
লেখকের মতে, এই কাজটি করতে আপনাকে Flow diagram এর মত একটি ছক সাজিয়ে নিতে হবে।
প্রথমে এক একটি আইডিয়া নিয়ে চিন্তা করে বুঝতে হবে সেটি আসলে কি ধরনের, এবং তার থেকে আপনি কি ফলাফল চাচ্ছেন।
এরপর চিন্তা করে দেখুন আইডিয়ার বাস্তবায়ন আসলেই এখন করা সম্ভব কিনা (actionable) বা করা জরুরী কিনা।
যদি তা না হয় তাহলে সেই কাজ বা ভাবনাটি নিচের তিনটির একটি ঘরের একটিতে ফেলে দিন –
ক/ বাতিল
খ/ অন্য সময়ের জন্য
গ/ রেফারেন্স
এই তিনটি ঘরের ব্যাখ্যা একটু পরে দিচ্ছি, তার আগে চলুন দেখে নিই কাজটি যদি এখন করা সম্ভব হলে কি করবেন।
প্রথমেই দেখুন কাজটি ২ মিনিটে করা সম্ভব কিনা। যদি সম্ভব হয়, তাহলে কাজটি সেই মূহুর্তেই করে ফেলুন। আর যদি না হয়, তাহলে সেটিকে হয় delegate list এ রাখুন। এই লিস্টের কাজগুলো অন্য কাউকে দিয়ে করাবেন।
আর যদি অন্য কাউকে দিয়ে করানো না যায়, তাহলে সেটিকে আপনি differ list এ রাখুন। – এই লিস্ট গুলোর ব্যাপারে পরবর্তী ধাপে আরও বিস্তারিত ভাবে বলা হবে।
কাজগুলো বাছাই করে আলাদা আলাদা বিভাগে ফেলার ফলে কাজ ও ভাবনাগুলোর ব্যাপারে আপনি একটা পরিস্কার ধারনা পাবেন। যার ফলে আপনার মনের ওপর চাপ আরও কমে যাবে।
০৩. সাজানো (organize)
আগের ধাপে সবগুলো কাজ সম্পর্কে একটি পরিস্কার ধারনা পাওয়ার পর পরের ধাপে সেগুলো আরও ভালো করে সাজাতে হবে।
আরও ভালো করে সাজাতে আগের ছকটিই আপনাকে সহায়তা করবে। চলুন দেখে নিই কিভাবে তা করবেন।
আগেই বলেছি, যে কাজগুলো এই মূহুর্তে করতে পারছেন না, সেগুলোকে ৩টি বিভাগে ফেলতে পারেন।
ক/ বাতিল :
যে কাজগুলো করা সম্ভব নয়, অথবা জরুরী নয়, সেগুলো সোজা বাতিলের ঘরে ফেলে দিন। ওগুলো নিয়ে আর চিন্তা করবেন না। চিন্তা করা মানেই সময় ও এনার্জির অপচয়।
খ/ অন্য সময়ের জন্য:
যদি কোনও একটি কাজ আপনাকে করতেই হবে, কিন্তু এই মূহুর্তে না করে পরে করলেও চলবে সেটিকে “অন্য সময়ের জন্য” (someday/maybe) নামে একটি লিস্ট বানিয়ে সেখানে রাখুন। পরবর্তীতে সময় পেলে কাজটি করে ফেলুন।
গ/ রেফারেন্স (reference list):
যদি মাথায় আসা নতুন আইডিয়াটা এমন হয় যে, আপনি সেটি পরবর্তীতে অন্য কোনও কাজে লাগাতে পারবেন, তাহলে সেটিকে reference list এ রেখে দিন যেটি পরে অন্য কোনও কাজে লাগাতে পারবেন। ধরুন আপনি একজন লেখক, এইমাত্র একটি নতুন চরিত্রের আইডিয়া পেয়েছেন, কিন্তু এই মূহুর্তে কোনও গল্পে রাখতে পারছেন না, সেটি এই লিস্টে রেখে দিতে পারেন। পরে কোনও লেখায় একে কাজে লাগাতে পারবেন।
এটা গেল এই মূহুর্তে না করতে পারা (non actionable) কাজ। এখন নজর দেয়া যাক যেগুলো এখন করা জরুরী বা সম্ভব (actionable) – সেইসব কাজের দিকে।
ডায়াগ্রামটির দিকে আরও একবার তাকান। Non Actionable কাজগুলো নিয়ে কি করবেন বোঝার পর, এবার জেনে নিন, যে কাজগুলো এখন শুরু করা সম্ভব বা এখন করা জরুরী, সেগুলো কিভাবে গোছাবেন।
এই কাজগুলো আপনি ৪টি বিভাগে ফেলতে পারেন। যার প্রথমটি হচ্ছে Project List; এই লিস্টে এমন সব কাজ রাখবেন যেগুলো দুই বা দুইয়ের বেশি ধাপে শেষ করতে হবে।
যেমন ধরুন এই লেখাটি লিখতে প্রথমে বইটি নিয়ে ভালোভাবে গবেষণা করতে হয়েছে। তারপর কোন কোন বিষয়ের ওপর জোর দিলে লেখাটি আপনার কাজে লাগবে, তা ভেবে বের করতে হয়েছে। তারপর কোন ঢংয়ে লিখতে হবে তা বের করতে হয়েছে, এবং এই লেখার সাথে কোন কোন ছবি দিলে বুঝতে সুবিধা হবে – সেগুলোও বের করে সাজাতে হয়েছে। অনেকগুলো ধাপে এই কাজটি শেষ করতে হবে, তাই এটি Project List এর জন্য বরাদ্দ।
আপনার হাতেও যদি এমন কোনও কাজ থাকে যা দুটি বা দুটির বেশি ধাপ পার করে শেষ করতে হবে, সেগুলোকে এই লিস্টে রাখুন।
আরেকটু সহজ করে বলতে গেলে, যে কাজটি শেষ করতে দুইটির বেশি ভিন্ন ভিন্ন কাজ করতে হয়, সেগুলোই প্রজেক্ট। যেমন ধরুন আপনি মাংস রান্না করবেন – তাহলে প্রথমে বাজারে গিয়ে মাংস কিনতে হবে, এবং তারপর মাংসটি রান্না করতে হবে।
এরপর আসুন Delegate List এ; এমন কিছু কাজ আছে যা আপনি অন্যদের দিয়েও করাতে পারেন। ধরুন একজন ডাক্তারের এ্যাপয়েন্টমেন্ট নেয়া প্রয়োজন, এবং আপনি জানেন যে ঐ ডাক্তারের ক্লিনিকের কাছাকাছি আপনার একজন বন্ধুর বাসা। একটি ফোন করে বন্ধুকে দিয়ে কাজটি করাতে পারবেন। – এই ধরনের কাজ এই Delegate List-এ রাখুন।
এর পরে যে কাজগুলা আপনাকে করতে হবে তা Differ List এ দুই ভাগে ভাগ করুন।
এই লিস্ট এর দুইটি ভাগ হলো: ১. Calendar List এবং ২. Next Action List
Calendar List এ এমন সব কাজ রাখুন যেগুলো আপনি নিয়মিত করেন। যেমন হতে পারে আপনি প্রতি শুক্রবার কারও সাথে দেখা করেন। সেটি ক্যালেন্ডার লিস্ট এ রেখে দিলে সারা সপ্তাহের জন্য এই নিয়ে আর কোনও চিন্তা করা লাগবে না।
লিস্ট করার মাধ্যমে আপনার মস্তিষ্কে একটি স্বস্তির অনুভূতি হবে যার ফলে মানসিক চাপ অনেকটাই কমে যাবে এবং আপনি ক্লান্ত হবেন না। কাজটিও সঠিক ভাবে করতে পারবেন।
ক্যালেন্ডার লিস্ট বানানোর পর আপনাকে শেষ যে ছকটি করতে হবে তা হচ্ছে Next Action List. এই লিস্টে সেইসব কাজ রাখুন যেগুলো খুব তাড়াতাড়ি শেষ করতে হবে। এই লিস্টে Project List এ থাকা অতি জরুরী কাজগুলোও নিয়ে আসুন।
০৪. পর্যালোচনা (review)
ধরে নিলাম আপনি কাজগুলোকে লিস্ট করেছেন, তারপর সেগুলো সাজিয়ে একটি চমৎকার কাজের প্ল্যান বানিয়েছেন।
ওগুলো নিয়ে আর সারাদিন চিন্তা করা লাগছে না, ফলে, আপনি আগের চেয়ে অনেক সতেজ আছেন, এবং কাজগুলোও ঠিকমত হচ্ছে।
কিন্তু এখানে একটা সমস্যা হলো, এই মেথডের শুরুতে প্রথম কয়েকদিন সবাই খুব ভালো ফলাফল পায়, কিন্তু কয়েক দিন পর আবার সব আগের মত অগোছালো হয়ে যায়।
এর কারণ, বেশিরভাগ মানুষ৪ নম্বর ধাপটি ঠিকভাবে অনুসরন করতে পারেন না।
৪ নম্বর ধাপটি হল পর্যালোচনা বা Review;- আপনি হয়তো একবার লিস্টটি বানিয়ে সেই অনুযায়ী কাজ করে চলেছেন। কিন্তু দেখা গেল বেশ কয়েকদিন ধরে লিস্টের দিকে তাকাচ্ছেন না। ফলে সমস্যা গুলো আবার ফিরে আসতে শুরু করে।
লেখকের মতে, সপ্তাহে অন্তত একবার কাজের ছকটির ওপরে চোখ বুলানো উচিৎ। এই ধাপটি অনেকেই ভুলে যায়, কারণ এটিকে সাধারনত লিস্টের কোথাও লেখা হয় না।
Calendar List এ এই কাজটি রাখতে পারেন। সপ্তাহের যে কোনও একদিন লিস্টটির ওপরে চোখ বুলানোর জন্য।একটু সময় রাখুন।
০৫. কাজে নামা (Engage)
GTD মেথড এর শেষ ধাপটি হলো কাজে নামা। আগের সবগুলো ধাপ আসলে কাজের প্রস্তুতি।
আগের লিস্টগুলো করার ফলে আপনার কাজ ও ভাবনাগুলোকে এক নজরে দেখে নিতে পারবেন। এতে মাথার ওপর চাপ কমবে। ফলে আলস্য দূর হবে। লিস্ট করা শেষ হলে আপনি সেই অনুযায়ী এবার কাজে নেমে পড়ুন।
মনে রাখবেন, দিনের কাজের শুরুতে যেসব কাজ দুই মিনিটে করা সম্ভব সেগুলো করবেন, এরপর দেখুন ক্যালেন্ডার লিস্টে আজকের জন্য কি কি কাজ রয়েছে, তারপর মনযোগ দিন Next Action List এ।
** আপনার সুবিধার জন্য লড়াকুর পক্ষ থেকে বাংলায় GTD Flow Diagram এর একটি মডেল আমরা তৈরী করেছি, ডায়াগ্রামটি প্রিন্ট করে কাছে রাখতে পারেন, অথবা সেভ করে রাখতে পারেন। পদ্ধতিটি ফলো করার ক্ষেত্রে মডেলটি আপনার কাজে আসবে আশা করি:
পরিশিষ্ট:
ড. এ্যালেনের আলস্য দূর করার উপায় অনুসরন করে অনেকেই আলস্য থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তাদের কাজের মান ও গতি বেড়ে গেছে দারুন ভাবে। আপনি কেন তাদের একজন হতে পারবেন না? আলস্য রোগের চিকিৎসা কাজে লাগিয়ে আপনিও হয়ে উঠুন সফলদের একজন। আপনার সাফল্যেই আমাদের স্বার্থকতা।
লেখাটি আপনার ভালো লাগলে লাইক ও কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানান।
আর যদি মনে হয়, এ লেখাটি পড়ে অন্যরাও উপকৃত হবেন, তবে শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন।
সাফল্যের পথে লড়াকু সব সময়ে আপনার সাথে আছে।