“গতকাল তো চলে গেছে; আগামী কাল আসতে দেরি আছে; আজকের দিনটাই আমাদের হাতে আছে। চলো, কাজ শুরু করি…” –
(অতীত নিয়ে মাদার তেরেসার উক্তি)
অতীত কখনো ফিরে আসে না। এটা সবাই জানে। তবুও মানুষ অতীত নিয়ে পড়ে থাকে। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে না পারলে জীবনে সাফল্য আসে না। শুধুমাত্র অতীত নিয়ে আফসোস করা বন্ধ করতে না পারার কারণে অনেকের জীবন ব্যর্থ হয়ে গেছে।
অতীতের ব্যর্থতা আর ভুল নিয়ে চিন্তা করে আপনি বর্তমান আর ভবিষ্যৎকে নষ্ট করছেন। আফসোস কখনো সমাধান হতে পারে না। আফসোস করার বদলে অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিন। তারপর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যান।
তবে কিছু অতীত ভুলে যাওয়া আসলেই কঠিন। অনেক ঘটনাই আছে, যেগুলো চাইলেও ভোলা যায় না। কিন্তু সেগুলো যদি আপনার ভবিষ্যতের ক্ষতি করে, তবে তার প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়া জরুরী। এটা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়।
নিচের ৯টি টিপস আপনাকে কষ্টকর অতীত ভুলে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে সাহায্য করবে:
০১. অতীতকে দু:স্বপ্ন ভাবুন:
ঘুমের মধ্যে দেখা স্বপ্নের বাস্তবে কোনও অস্তিত্ব নেই। স্বপ্নের ঘটনা স্বপ্নেই শেষ হয়ে যায়। হয়তো তা কিছুক্ষণ আমাদের মনকে প্রভাবিত করে, কিন্তু তা বাস্তবে ঘটে না। আপনি স্বপ্ন দেখলেন আপনার হাত ভেঙে গেছে, কিন্তু জেগে দেখলেন হাত ঠিকই আছে।
স্বপ্নের মত অতীতেরও বাস্তবে কোনও অস্তীত্ব নেই। এক সময়ে হয়তো ছিল, কিন্তু এখন অতীত মানে শুধুই কিছু স্মৃতি। তাহলে যার কোনও অস্তিত্ব নেই, তার কোনও ক্ষমতাও নেই। অতীত আপনার উপকার বা ক্ষতি – কোনওটাই করতে পারবে না। শুধু স্বপ্নের মত আপনার মনকে প্রভাবিত করতে পারবে।
তাহলে আপনি কেন এটা নিয়ে পড়ে থাকবেন? সত্যি বলতে অতীত স্বপ্নের চেয়েও ভালো। দু:স্বপ্ন দেখলে অনেক সময়েই ভয় হয়, এটা হয়তো ভবিষ্যতে ঘটবে। অন্যদিকে অতীত তো ঘটেই গেছে। তাই অতীতকে পাত্তা না দেয়া আরও সহজ!
কাজেই, যখনই অতীতের কোনও খারাপ ঘটনা মনে আসবে, তাকে স্বপ্নের সাথে তুলনা করবেন। স্বপ্নের যেমন বাস্তবে কোনও ক্ষমতা নেই, এই মূহুর্তে অতীতেরও কোনও ক্ষমতা নেই।
০২. যেসব বিষয় ঠিক করা সম্ভব, সেগুলোর একটা লিস্ট করুন:
প্রথমে দেখুন ঘড়িতে কয়টা বাজে। সময়টি লিখে রাখুন। তারপর ঠান্ডা মাথায় নিরিবিলি বসে একটা লিস্ট করুন। অতীতের যতগুলো ভুল আপনি মনে করতে পারেন, তার সবগুলো এই লিস্টে লিখুন।
লিস্ট করা শেষ হলে হাতে একটি কলম নিয়ে লিস্টটি খুব মন দিয়ে কয়েকবার পড়ুন। বোঝার চেষ্টা করুন কোন কাজগুলো আবার করে ভুল শোধরানো সম্ভব, আর কোন কাজগুলো করা একেবারেই অসম্ভব।
যেগুলো সম্ভব, সেগুলোর পাশে টিক (✓) চিহ্ন দিন। আর যেগুলো অসম্ভব, সেগুলোর পাশে ক্রস (✗) চিহ্ন দিন।
যেহেতু, টিক দেয়া কাজগুলো আবার করতে পারবেন, সেহেতু ওগুলো নিয়ে পরে ভাবলেও চলবে।
ঘড়িতে কয়টা বাজে দেখুন, সময়টি লিখে রাখুন।
এবার ক্রস দেয়া ভুলগুলো খুব মন দিয়ে কয়েকবার দেখুন। দরকার হলে নতুন একটি কাগজে শুধু ক্রস দেয়া ভুলগুলো আলাদা করে লিখুন।
এবার ভাবুন, কেন এই কাজগুলো করা সম্ভব নয়। কারণগুলো পাশে লিখুন। এবার ভাবতে থাকুন। অনেক্ষণ ধরে ভাবুন। জোর করে ভাবনা থামাবেন না। যতক্ষণ মন চায়, ভাবুন। ভাবতে ভাবতে বোর হয়ে গেলে ঘড়ির দিকে তাকান। সময়টা লিখে রাখুন।
এবার অসম্ভব কাজগুলো নিয়ে ভাবা শুরু করার ও শেষ করার সময় হিসাব করে দেখুন মোট কতক্ষণ ভেবেছেন। যতটা সময় ভেবেছেন – তার পুরোটাই নষ্ট করেছেন। এই সময়টা আপনি আর কোনওদিনই ফিরে পাবেন না। জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদের অনেকটা আপনি শুধু শুধু নষ্ট করলেন। এই সময়টা যদি সত্যিকার কোনও কাজে লাগাতেন, তাহলে আপনার লাভ হতো।
হিসাব রাখার কারণে বুঝতে পারলেন কতটা সময় নষ্ট হলো। কিন্তু ভেবে দেখুন, অতীত নিয়ে আফসোস করে এর আগে কত ঘন্টা আপনি নষ্ট করেছেন? এই সময়টা আপনি আর কোনওদিন ফিরে পাবেন না। কাজেই, যে অতীত বদলানো যাবে না, তার জন্য জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ, মানে সময় নষ্ট করবেন কেন?
যেগুলো আপনি ঠিক করতে পারবেন, সেগুলো ঠিক করার চেষ্টা করুন। আর যা পারবেন না, তার পেছনে এক সেকেন্ড সময় নষ্ট করাও বোকামী।
পরীক্ষাটি সত্যি সত্যি করার অনুরোধ থাকলো। যাতে আপনি ব্যাপারটির গুরুত্ব বুঝতে পারেন। যখনই অতীতের ভুল ও ব্যর্থতা নিয়ে চিন্তা আসবে, এই পরীক্ষাটির কথা মনে করলেই দেখবেন – আর চিন্তা করতে ইচ্ছা করছে না।
০৩. নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন:
অতীতের ভুল আর ব্যর্থতার কারণে মানুষ নতুন করে কাজ শুরু করতে পারে না। কারণ, অতিতের ব্যর্থতা আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে ফেলে। বিশেষ করে কোনও বড় কাজে ব্যর্থ হলে কারো কারো মনে হয়, তাকে দিয়ে আর কিছুই হবে না।
কিন্তু এটা পুরোপুরি ভুল ধারণা। একটি কাজে ব্যর্থ হওয়া মানে সব কাজে ব্যর্থতা নয়। স্টিভ জবস পড়াশুনায় চরম ভাবে ব্যর্থ। কিন্তু কেউ তাঁকে ব্যর্থ মানুষ বলবে না।
আলিবাবা ডট কম এর প্রতিষ্ঠাতা, ও চীনের সবচেয়ে ধনী মানুষ জ্যাক মা জীবনে বিভিন্ন কাজে ৩০ বার ব্যর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু এতবার ব্যর্থ হয়েও তিনি আত্মবিশ্বাস হারাননি।
বিভিন্ন চাকরিতে বহুবার ব্যর্থ হবার পর তাঁর মনে হয়েছিল, চাকরির চেয়ে ব্যবসায় তিনি ভালো করবেন।
কিন্তু তাঁর প্রথম ব্যবসাটিও ব্যর্থ হয়েছিল। তিনি বিশ্বাস না হারিয়ে নতুন আইডিয়া নিয়ে আবার কাজ শুরু করেন। অবশেষে আলিবাবা শুরু করার পর তিনি সফল হন। বর্তমানে তাঁর মোট সম্পদের পরিমান ৪০ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
জ্যাক মা যদি তাঁর অতীতের ব্যর্থতার কথা ভেবে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলতেন, তবে তিনি সফল হতে পারতেন না।
কাজেই, অতীতের ব্যর্থতার কথা ভেবে আত্মবিশ্বাস হারাবেন না। একভাবে সফল না হলে, অন্যভাবে চেষ্টা করুন। কিন্তু চেষ্টা করা বন্ধ করবেন না। এক সময়ে গিয়ে নিজের আসল শক্তি ও প্রতিভা কোথায়, তা ঠিকই বুঝতে পারবেন। – এসব কথা মাথায় রেখে কাজ করে যান, দেখবেন অতীতের চিন্তা আপনাকে থামাতে পারবে না।
০৪. ধ্যান করুন:
ধ্যান করা মানে গভীর মনযোগের সাথে শুধুমাত্র একটি বিষয় নিয়ে চিন্তা করা।
আমাদের সচেতন মনের চেয়ে অবচেতন মন অনেক বেশি শক্তিশালী। আমাদের কথাবার্তা, চলাফেরা, অভ্যাস – এসব আসলে আমাদের subconscious mind বা অবচেতন মন নিয়ন্ত্রণ করে।
অবচেতন মনে কোনও আইডিয়া ঢুকে গেলে তা আমাদের সচেতন চিন্তাকে প্রভাবিত করে।
আমরা অনেক সময় চাইলেও মন থেকে নেগেটিভ চিন্তা দূর করতে পারি না, কারণ চিন্তাগুলো অবচেতনে ঢুকে গেছে। নেগেটিভ বা নেতিবাচক চিন্তার একটি প্রধান উৎস হলো অতীতের ভুল ও ব্যর্থতা। এই নেগেটিভ চিন্তাকে মন থেকে দূর করার সবচেয়ে ভালো একটি উপায় হলো ধ্যান করা। চলুন জেনে নিই, ধ্যান করার একটি সহজ উপায়:
ধরুন এর আগে আপনি একটি পরীক্ষায় ফেল করেছিলেন। ফেলের কারণে আপনার অবচেতন মনে ভয় ঢুকে গেছে। পড়তে বসলেই মনে হয় আপনি পাশ করতে পারবেন না। এই কারণে আপনি ঠিকমত পড়তে পারছেন না।
ধ্যানের মাধ্যমে এই ভয় দূর করতে হলে, নিজের রুমে বা অন্য কোনও নির্জন জায়গায় চোখ বন্ধ করে বসুন। ৮ থেকে ১০ বার বুক ভরে জোরে দম দিন। প্রতিবার দম নিয়ে মুখ দিয়ে আস্তে আস্তে দম ছাড়ুন। এই কাজ করলে আপনার শরীর ও মন relax হয়ে যাবে।
এরপর কল্পনা করুন আপনি দারুন পরীক্ষা দিচ্ছেন। সব প্রশ্নের উত্তর ঠিকঠাক দিতে পারছেন। তারপর কল্পনা করুন আপনার রেজাল্ট খুব ভালো হয়েছে। আপনার দারুন আনন্দ হচ্ছে। – এগুলো কল্পনা করার সময়ে মনে মনে বার বার এই কথাটি বলুন : “আমি অবশ্যই ভালো রেজাল্ট করবো”।
প্রথম দিকে কিছুই হবে না। কিন্তু কিছুদিন এটা করলে আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকবে। কারণ, অবচেতনে থাকা ভয় দূর হয়ে সেখানে সাফল্যের আশা সৃষ্টি হবে।
যে কোনো ব্যর্থতার ভয় কাটানোর জন্য এই উপায় দারুন কার্যকর।
ব্যর্থতার ভয় কাটানোর জন্য এক মনে ভবিষ্যতে সফল হওয়ার দৃশ্য কল্পনা করুন, আর মনে মনে পজিটিভ কথা বলুন। এটাই ধ্যান।
অতীত নিয়ে লেখক চাক্ পালানিউক এর এই উক্তি মনে রাখবেন: “যদি ভবিষ্যৎকে বিশ্বাস না করতে পারো, তবে অতীত তোমার পিছু ছাড়বে না”
দোয়া বা প্রার্থনাও কিন্তু এক ধরনের ধ্যান। নিরিবিলি বসে আন্তরিক ভাবে সৃষ্টিকর্তার সাহায্য চান। কিছুদিন নিয়মিত প্রার্থনা করতে পারলে, তার ফলাফল দেখে আপনি নিজেও অবাক হয়ে যাবেন। নিজের মধ্যে একটি অন্যরকম শক্তি টের পাবেন।
০৫. বর্তমানকে সবচেয়ে বেশি মূল্য দিন:
বর্তমানকে ঠিকমত ব্যবহার করতে না পারলে ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে। সফল মানুষেরা বর্তমানের প্রতিটি সেকেন্ড সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার কাজে লাগান।
অতীত নিয়ে দু:খ করে সময় নষ্ট করলে বর্তমানের পাশাপাশি ভবিষ্যৎও নষ্ট হবে।
এই কথা সত্যি যে, বর্তমানে কোনও কাজ ভালো করে করতে গেলে অতীতের শিক্ষা কাজে লাগাতে হয়। কিন্তু তার মানে এই নয়, যে আপনি অতীত নিয়ে আফসোস করবেন।
অতীতের প্রতিটি ব্যর্থতার কারণগুলো আলাদা করে লিখে রাখুন। বর্তমানে একই রকম পরিস্থিতিতে পড়লে, অতীতের ভুলগুলো দেখে নিন, যাতে সেগুলো এবার না হয়। কিন্তু অকারণে সেই ঘটনার কথা ভেবে সময় নষ্ট করবেন না। নিজের বুদ্ধি আর শক্তির সবটুকু খাটিয়ে বর্তমানকে সফল করুন। বর্তমান সফল মানে ভবিষ্যৎ সফল।
অতীত নিয়ে বিখ্যাত লেখক বিল কেন এর একটি উক্তি সব সময়ে মনে রাখবেন : “অতীত একটি ইতিহাস, ভবিষ্যৎ একটি রহস্য, বর্তমান হলো ইশ্বরের দেয়া উপহার”
০৬. ভয়কে সাহস বানান:
আগেও বলেছি, অতীতের ব্যর্থতার কারণে মনে ভয় সৃষ্টি হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ভয় শুধুই একটি অনুভূতি।
আগে ব্যর্থ হয়েছেন বলে ভয় পেয়ে পিছিয়ে না গিয়ে, বিষয়টিকে একটু অন্য ভাবে দেখুন। আগে ব্যর্থ হয়েছেন মানে ব্যর্থ হবার কারণগুলো আপনার জানা হয়ে গেছে। এই তথ্যগুলো আপনাকে ভবিষ্যতে ভুল করা থেকে বাঁচাবে।
এভাবে চিন্তা করলেই দেখবেন অতীতের ব্যর্থতা বা ভুল আপনাকে ভয়ের বদলে সাহস যোগাচ্ছে।
০৭. ন্যায়-নীতি ভুলে যাবেন না:
অন্যায়ের পথে দ্রুত সফল হওয়া যায় – এই আইডিয়াটা ইদানিং অনেকের মাথায় ঢুকে গেছে।
দ্রুত সফল হওয়ার জন্য অনেকেই অন্যায় করছে। হয়তো তারা সাফল্যও পাচ্ছে। কিন্তু এই সাফল্য স্থায়ী নয়। এক সময়ে না এক সময়ে অন্যায়ের শাস্তি পেতেই হয়।
অতীতে হয়তো আপনিও অন্যায়ের শিকার হয়েছিলেন। হয়তো আপনি একটি চাকরির জন্য চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু অন্যায় করতে চাননি বলে সফল হতে পারেননি। অন্যদিকে আপনার চেয়ে অনেক কম যোগ্যতা নিয়ে আপনার পরিচিত কেউ সফল হয়েছে, কারণ সে অন্যায় পথে কাজ করেছে। তাই এখন আপনার মনে হচ্ছে, সফল হতে হলে, হয় অন্যায় করতে হবে, না হয় চেষ্টা করা বন্ধ করে দিতে হবে।
মাথার মধ্যে এরকম চিন্তা ঢুকে গেলে জীবনে কিছু করা কঠিন হয়ে যাবে। এধরনের চিন্তা মাথায় আসার কারণে অনেক ভালো মানুষও খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু, সত্যি কথা হলো, অন্যায় ভাবে সফল হওয়া মানে সাফল্য নয়। এটা অনেক বড় ব্যর্থতা। অন্যায় তারাই করে যাদের সঠিক পথে কিছু করার যোগ্যতা নেই।
অতীতে ব্যর্থ হয়ে নিজে অন্যায় করবেন না, অথবা সফল হওয়ার চেষ্টা থামিয়ে দেবেন না। নীতিতে অটল থেকে চেষ্টা চালিয়ে যান। অতীতে কষ্ট হয়েছে, বর্তমানেও কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে – কিন্তু আপনি ভবিষ্যতে সফল হবেন।
তখন দেখবেন, অন্যায় করে যারা সফল হয়েছিল, তারা হয় হারিয়ে গেছে, নয়তো মানুষ তাদের ঘৃণা করছে। বিজয়ী হয়েছেন আপনি। আপনি যতই টাকা আর উঁচু পদের মালিক হন, মানুষ আপনাকে সম্মান না করলে আপনি আসলে একজন পরাজিত ও ব্যর্থ মানুষ। কাজেই অতীতের ব্যর্থতার কারণে হার না মেনে, ভবিষ্যতের সাফল্যের দিকে এগিয়ে যান।
০৮. নিজেকে ক্ষমা করুন:
মানুষ মাত্রই ভুল করে। আপনিও হয়তো অতীতে ভুল করেছেন। সেই ভুলকে যতটা সম্ভব ঠিক করার চেষ্টা করুন।
তবে, কিছু ভুল আছে, যা চাইলেও ঠিক করা যায় না। এগুলোই আমাদের মনকে দুর্বল করে দেয়। আর এই দুর্বলতা না কাটলে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ, দুটোই নষ্ট হয়।
কাজেই, এই ভুলগুলোর জন্য নিজেকে ক্ষমা করে দিন। অতীতে যদি কারো সাথে অন্যায় করে থাকেন, তার কাছে আন্তরিক ভাবে ক্ষমা চান। সেই সাথে সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা চান।
শপথ করুন, ওই ভুল আর কোনোদিন করবেন না। নিজেকে ক্ষমা করলে, আর অন্যের কাছে ক্ষমা চাইলে দেখবেন আগের চেয়ে অনেক ভালো লাগছে।
০৯. রাগ, ক্ষোভ আর ঘৃণা ভুলে যান:
অতীতে হয়তো আপনার সাথে কেউ খুব অন্যায় করেছে। সেই কারণে আপনার মাঝে রাগ, ক্ষোভ অথবা ঘৃণার সৃষ্টি হয়েছে।
সেই ব্যক্তি বা সেই ঘটনার কথা মনে পড়লে আপনার খারাপ লাগে। – কিন্তু ভেবে দেখুন, আপনার এই নেতিবাচক অনুভূতির কারণে সেই ব্যক্তির কিছু হচ্ছে না। শুধুশুধুই আপনার সময় আর মুড নষ্ট হচ্ছে।
রাগ, ক্ষোভ, ঘৃণা – এগুলো আসলে বিষের মত। অন্যের ক্ষতি চাইলেও এগুলো আসলে আপনার নিজের ক্ষতি করে।
এগুলো পুষে রাখার বদলে নিজের কাজে মন দেয়ার চেষ্টা করুন। এতে যেমন সময় বাঁচবে, সেই সাথে মানসিক ভাবেও ভালো থাকবেন।
প্রতিশোধ নিতে চাইলে, যার ওপর প্রতিশোধ নিতে চান, তারচেয়ে বড় হয়ে দেখান। এমন কিছু হয়ে যান, যাতে সেই ব্যক্তি আপনাকে সমীহ করতে বাধ্য হয়। – আর এটা করতে হলে, প্রথমেই আপনাকে সেই ব্যক্তির কথা ভুলে যেতে হবে। তারপর নিজের উন্নতির জন্য কাজ করতে হবে।
আমেরিকান বিলিওনেয়ার এ্যান্ড্রু কার্নেগীকে একবার পার্ক থেকে বের করে দেয়া হয়েছিলো। কারণ, তাঁর পোশাক ছিলো গরীবের মত। কার্নেগীর বয়স তখন ১২ বছর। যে গার্ড তাঁকে বের করে দিয়েছিল, সেই গার্ডের ক্ষতি করে প্রতিশোধ নেয়ার বদলে, কার্নেগী প্রতিজ্ঞা করলেন, একদিন তিনি ওই পার্কটি কিনে ফেলবেন।
৩০ বছর পর তিনি সত্যিই পার্কটি কিনে ফেলেছিলেন। যে পার্ক থেকে তাঁকে অপমান করে বের করে দেয়া হয়েছিল, সেই পার্কের মালিক হয়ে গেলেন তিনি। কিন্তু সেই গার্ডকে তিনি চাকরি থেকে বের করে দেননি। মারা যাওয়ার সময়ে কার্নেগীর মোট সম্পদ ছিল, বর্তমান যুগের ৩০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি! পৃথিবীর ইতিহাসে এরচেয়ে ভালো প্রতিশোধ আর কেউ বোধহয় নিতে পারেনি। ক্ষতিকর প্রতিশোধের বদলে গঠনমূলক প্রতিশোধ নিলেই বেশি লাভ।
শেষ কথা:
প্রতিটি বিষয়কেই নেগেটিভ আর পজিটিভ – দুই ভাবে দেখা যায়। যারা সবকিছু নেগেটিভ ভাবে দেখে, তারা ব্যর্থ হয়। আর যারা পজিটিভ ভাবে দেখে – তারা সফল।হয়। এটাই জগতের নিয়ম।
অতীতের ব্যর্থতাকে যদি পজিটিভ দৃষ্টিতে দেখতে পারেন, তবে তার থেকে শিক্ষা নিয়ে একটি সফল ভবিষ্যৎ গড়তে পারবেন।
আর যদি অতীতের ভুল ও ব্যর্থতা নিয়ে শুধু আফসোসই করেন – তবে বর্তমান আর ভবিষ্যতে যন্ত্রণা ছাড়া আর কিছুই পাবেন না।
কাজেই এই পরামর্শগুলো কাজে লাগিয়ে অতীতের ব্যর্থতা কাটিয়ে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ুন। নিজের মাঝে সব সময়ে একটি ইতিবাচক ও লড়াকু মনোভাব ধরে রাখুন।
অতীত নিয়ে লেখক এ্যাল্যান মুর এর একটি উক্তি দিয়ে শেষ করি:
“তুমি নিজে সুযোগ না দিলে, অতীত তোমার কোনও ক্ষতি করতে পারবে না”
আপনার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সুন্দর ও সফল হোক।
এই লেখাটি সম্পর্কে আপনার মতামত আমাদের কমেন্ট করে জানান।
যদি মনে হয় এই লেখাটি অন্যদের কাজে লাগবে, তবে শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন।
আমাদের সাথে থাকুন; সাফল্যের পথে প্রতি পদক্ষেপে লড়াকু আপনার সাথে থাকতে চায়।