সহকর্মীর সাথে সুসম্পর্ক মানে সুন্দর কাজের পরিবেশ এবং কর্মক্ষেত্রে সফল হওয়ার হার বেড়ে যাওয়া। আপনার সহকর্মীদের সাথে আচরণ কেমন হবে – তার ওপর কর্মক্ষেত্রে আপনার সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করে।
সহকর্মীদের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকলে কাজ করেও যেমন আনন্দ পাওয়া যায়, তেমনি কাজের মানও অনেক ভালো হয়। অন্যদিকে সহকর্মীর সাথে সুসম্পর্ক না থাকলে কর্মক্ষেত্রে সফল হওয়ার হার অনেকটাই কমে যায়।
নাম করা জরিপ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান “গ্যালুপ অর্গানাইজেশন” এর তথ্য মতে, কর্মক্ষেত্রে যাদের ভালো বন্ধু আছে, তারা অন্যদের চেয়ে ৭ গুণ ভালো পারফর্ম করে। গ্যালুপ এর গবেষণা অনুযায়ী, সহকর্মীদের সাথে যাদের আচরণ বন্ধুত্বপূর্ণ তারা কাজ করে অনেক বেশি আনন্দ পায় এবং বেশি সময় ধরে কাজ করে।
এই লেখায় আপনি জানবেন কিভাবে কর্মক্ষেত্রে কেমন আচরণের মাধ্যমে সহকর্মীর সাথে একটি ভালো ও সুস্থ সম্পর্ক গড়বেন – এবং কিভাবে এটা আপনাকে শক্তিশালী করবে। এছাড়া, যেসব সহকর্মীর সাথে আপনার খুব একটা জমে না – তাদের সাথে কি ধরনের আচরণ করবেন – সেটাও আপনি জানতে পারবেন।
তাহলে চলুন, শুরু করা যাক:
সহকর্মীর সাথে ভালো সম্পর্ক রাখা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ
এই ব্যাপারটি নিয়ে শুরুতেই আমরা সংক্ষিপ্ত আভাস দিয়েছি। এখন চলুন আরও একটু বিস্তারিত জানা যাক:
মানুষ সাধারণ ভাবেই সামাজিক জীব – খাবার এবং পানির মত আমাদের বন্ধুত্ব ও ইতিবাচক আচরণ এর প্রতি একটি প্রাকৃতিক টান আছে। তাই, কর্মক্ষেত্রে ভালো সম্পর্ক তৈরী হলে মানসিক প্রশান্তি ও কাজের আগ্রহ বাড়িয়ে তোলে।
এগুলোর বাইরেও সহকর্মীর সাথে সুসম্পর্ক আমাদের আরও কিছু সুবিধা দেয়: আপনার যদি সহকর্মী বা কলিগদের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকে, তবে আপনার আইডিয়া ও মতামতগুলো তারা সহজে গ্রহণ করবে। এর ফলে কর্মক্ষেত্রে সাফল্যের মাত্রা বেড়ে যাবে।
সহকর্মীদের সাথে সম্পর্ক ভালো না থাকলে, এগুলো সামলাতে গিয়ে আপনাকে অনেক সময়েই মানসিক শক্তি খরচ করতে হবে। অনেক সময়ে জোর করে মুখে হাসি ধরে রাখতে হবে – যা যথেষ্ঠ মানসিক চাপ তৈরী করে। এগুলো না থাকলে আপনি এই এনার্জি নিজের কাজের পেছনে ব্যয় করতে পারবেন – যা কর্মক্ষেত্রে আপনার উন্নতি ঘটাবে।
ক্যারিয়ারকে এগিয়ে নিতেও কর্মক্ষেত্রে সবার সাথে ভালো সম্পর্ক থাকা জরুরী। আপনি কাজে যতই দক্ষ হোন না কেন, আপনার বস যদি আপনাকে পছন্দ না করেন, তবে জরুরী দরকারে ছুটি, প্রমোশন, বেতন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আপনি অসুবিধায় পড়বেন। এর বাইরে অনেক ভালো ভালো সুযোগ সুবিধা আপনার হাতছাড়া হয়ে যাবে। বসের সাথে সম্পর্ক ভালো থাকলে আপনার অনেক ছোটখাট ভুল তাঁরা আমলে নেবেন না। বা সেইজন্য আপনার ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করবেন না।
সহকর্মীর সাথে সুসম্পর্ক থাকলে তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখা যায়। তাদের অভিজ্ঞতা তারা শেয়ার করেন। ফলে কর্মী হিসেবে আপনার উন্নতি হবে। এছাড়া সহকর্মীদের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকলে, অনেক বিপদ আপদ বা ঝামেলাতেও তাঁরা সাহায্য করবেন।
মোট কথা, কর্মক্ষেত্রে বা অফিসে যত গুলো সুবিধা পাওয়া সম্ভব – সব সুবিধাই পাবেন যদি সহকর্মীর সাথে আপনার সুসম্পর্ক থাকে।
সহকর্মীর সাথে সুসম্পর্ক এর উপাদান
সহকর্মীর সাথে সুসম্পর্কের উপাদান গুলো জানলে কর্ম ক্ষেত্রে ভালো আচরণ করা আপনার জন্য সুবিধাজনক হবে। সেইসাথে, কোন কোন বিষয়ের প্রতি নজর দিতে হবে – তারও একটি ভালো ধারণা হয়ে যাবে। চলুন উপাদান গুলো জেনে নেয়া যাক:
#১ বিশ্বাস:
যে কোনও ভালো সম্পর্কের মূল ভিত্তিই হল বিশ্বাস। আপনার প্রতি আপনার টিম বা সহকর্মীর বা তাদের প্রতি আপনার যখন পুরো মাত্রায় বিশ্বাস থাকবে – তখন যোগাযোগ ও কাজ অনেক বেশি ফলপ্রসূ হবে। আপনি যদি আপনার সহকর্মী ও বা অধীনস্থদের পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারেন – তবে আপনি অনেক বেশি খোলামেলা ভাবে আপনার প্ল্যান এবং কাজ শেয়ার করতে পারবেন। সেইসাথে ‘সাবধান’ থাকার পেছনে নিজের কাজের এনার্জিও অপচয় হবে না।
#২ সম্মান:
সহকর্মীরা যখন আপনাকে সম্মান করবে – তখন তারা আপনার মতামত, আইডিয়া ও কাজকে গুরুত্ব দেবে। টিম ওয়ার্ক বা একক কাজ – সব ক্ষেত্রেই আপনি তাদের সহযোগীতা ও সমর্থন পাবেন। আর সম্মান পাওয়ার উপায় হল, অন্যদের সম্মান করা, তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া, এবং কর্মক্ষেত্রে সব সময়ে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করা।
#৩ দায়িত্ববোধ:
মানুষ দায়িত্ববান মানুষকে পছন্দ ও সম্মান করে। আপনার প্রতিটি কাজ ও কথার মাঝে দায়িত্ববোধ থাকতে হবে। একদিন আপনার হয়তো মন ভালো লাগছে না, তাই বলে সহকর্মীদের সাথে খারাপ আচরণ করবেন না। অথবা কাজে ঢিল দেবেন না। নিজের পুরোটা দিয়েই কাজ করুন। এবং সহকর্মীর সাথে কড়া আচরণের বদলে ভদ্র ভাবে বলুন, আপনার আজ মুড কেন খারাপ। আপনি যখন কর্মক্ষেত্রে এমন আচরণ করবেন, তখন অন্যরাও আপনার প্রতি দায়িত্বশীল হয়ে উঠবে।
#৪ সবার মতামতকে গুরুত্ব দেয়া:
কর্মক্ষেত্রে যাঁরা ভালো সম্পর্ক গড়েন, তাঁরা যে অন্যের মতামতকে শুধু গুরুত্বই দেন – তা না, তাঁদের নিজের আইডিয়ার চেয়ে ভালো আইডিয়া পেলে নিজেরটার বদলে অন্যেরটা গ্রহণ করেন। এতেকরে একটি অংশগ্রহণমূলক পরিবেশ সৃষ্টি হয়, যেখানে সবাই সবার মতামত নিশ্চিন্তে জানাতে পারে। কর্মক্ষেত্রে এই ধরনের আচরণের ফলে আপনার মতামতকেও অন্যরা গুরুত্ব দেবে।
#৫ সঠিক তথ্য বিনিময়:
অফিসে বা কর্মক্ষেত্রে যে কাজটি বিরামহীন চলতে থাকে, তা হল তথ্য আদান প্রদান। মৌখিক, ইমেইল, কাজগপত্র, ফোন – বিভিন্ন মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠানে সারাদিন তথ্য বিনিময় হয়। এবং এই তথ্য বিনিময় অনেকটা শরীরে রক্ত চলাচলের মত – এটা বাধাগ্রস্থ হলে পুরো প্রতিষ্ঠানেরই ক্ষতি হয়। কর্মক্ষেত্রে সবার মাঝে ভালো সম্পর্ক থাকলে, প্রয়োজনীয় তথ্য জানানোর ক্ষেত্রে কেউ দ্বিধা করে না। আপনার সহকর্মী যদি আপনাকে ভয় পায়, অথবা অপছন্দ করে – তবে সময়মত প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। কাজেই, এটাই সম্ভবত কর্মক্ষেত্রে ভালো সম্পর্কের সবচেয়ে বড় উপাদান।
—–
ওপরে বলা এই ৫টি উপাদান যদি একটি প্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান থাকে, তাহলে বুঝতে হবে কর্মক্ষেত্রে সবার সাথে সবার একটি ভালো বোঝাপড়া আছে। আপনি একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক বা কর্মী যা-ই হোন না কেন – আপনার চারপাশে এই ৫টি উপাদান সৃষ্টি করা খুবই জরুরী। এগুলো থাকলে আপনার কর্মক্ষেত্র একটি পারফেক্ট কর্মক্ষেত্রে পরিনত হবে।
এখানে একটি কথা বলে রাখা ভালো, অফিসে কাজ করা কর্মী ছাড়াও, শেয়ার হোল্ডার, ইনভেস্টর, বিক্রেতা, ক্রেতা – এদের সাথেও এই ধরনের সম্পর্ক তৈরী করতে হবে। তাহলেই প্রতিষ্ঠানটি একটি সফল প্রতিষ্ঠানে পরিনত হবে।
কর্মক্ষেত্রে কেমন আচরণ করবেন, এবং কিভাবে সহকর্মীর সাথে সুসম্পর্ক গড়বেন:
কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীর সাথে সুসম্পর্কের ৫টি উপাদান সৃষ্টি করার জন্য নিচের ৭টি বিষয় চর্চা করলে ভালো ফলাফল পাবেন
#১ নিজের যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ান
সহকর্মীর সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ার জন্য আপনার যোগাযোগ দক্ষতা ভালো হওয়া খুব জরুরী। মানুষের সামনে কথা বলার সাহস ও আত্মবিশ্বাস, এবং সহজে বন্ধু বানানোর দক্ষতা আপনাকে অনেকখানি এগিয়ে দেবে। যে কোনও মানুষের সাথে কথা বলার সময়ে আন্তরিক থাকুন। মুখে হাসি রাখুন, এবং সাধ্যমত তাদের সাহায্য করুন ও পরামর্শ দিন। যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে ডেল কার্নেগীর “হাউ টু উইন ফ্রেন্ডস এ্যান্ড ইনফ্লুয়েন্স পিপল” বইটির পরামর্শগুলো ফলো করতে পারেন। লড়াকুতে বইটির বুক রিভিউ পড়লে একটি ভালো আইডিয়া পাবেন।
আরও একটি জরুরী বিষয়, যখনই আপনাকে কেউ কিছু বলবে – আন্তরিকতার সাথে তার কথা শুনুন ও বুঝতে চেষ্টা করুন। দায়সারা ভাবে শুনবেন না – তাহলে কিন্তু সামনের মানুষটি বুঝে যাবে – এবং তার সাথে আপনার আন্তরিকতা নষ্ট হবে।
#২ অন্যদের প্রয়োজন বোঝার চেষ্টা করুন
প্রতিটি মানুষই অন্য একটি মানুষের কাছে নির্দিষ্ট কিছু চায়। ভালো আচরণ ও আন্তরিকতা ছাড়াও – সহকর্মী আপনার কাছে কি চাইছে – তা বোঝার চেষ্টা করুন, এবং তার জন্য তা করার চেষ্টা করুন। এভাবে সে-ও আপনার জন্য কিছু করতে আগ্রহী হবে।
ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বা আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা কে কাজে লাগানো এখানে খুবই জরুরী। আপনার মুড যেমনই থাকুক না কেন, একজন সহকর্মী যদি কোনও কাজের জন্য আপনার কাছে আসে – আপনি তার প্রয়োজন পূরণ করুন। মুড খারাপ থাকলেও খারাপ আচরণ করবেন না, বা মুড দেখাবেন না। মুড বেশি খারাপ থাকলে তাকে আপনার অবস্থাটি শান্তভাবে বুঝিয়ে বলুন, এবং কথা দিন পরে তাকে সাহায্য করবেন।
আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে আমাদের নেতিবাচক আবেগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায়: আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা – লেখাটি পড়তে পারেন।
#৩ সম্পর্ক তৈরীর জন্য আলাদা করে সময় দিন ও ছোট ছোট সৌজন্যতা দেখান
কর্মক্ষেত্রে কাজের ব্যস্ততার মাঝে সহকর্মীর সাথে সম্পর্ক তৈরীর জন্য সময় রাখুন। কাজের খোঁজ নিন, পরিবারের খোঁজ নিন। চা/কফি ব্রেকের সময়ে নিজের জন্য এক কাপ বানানোর পাশাপাশি সহকর্মীর জন্যও এক কাপ বানান, বা জিজ্ঞাসা করুন। লাঞ্চের সময়ে একবার ডাকুন। সহকর্মীদের সাথে এইসব ছোট ছোট সৌজন্যমূলক আচরণ ভালো সম্পর্ক সৃষ্টির ক্ষেত্রে দারুন অবদান রাখে।
এর বাইরে বিশেষ বিশেষ দিনে শুভেচ্ছা জানানো, নিজের কোনও উপলক্ষে সহকর্মীদের খানওয়ানো – এইসব কাজ আপনাকে সহকর্মীদের অনেক কাছে নিয়ে আসবে।
#৪ অন্যদের অর্জনে আনন্দ প্রকাশ করুন, এবং উৎসাহ দিন
একজন কর্মীর প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানো, এবং কাজের প্রতি আন্তরিকতা সৃষ্টির জন্য তার ভালো অর্জন গুলোকে গুরুত্ব দেয়া ও তাকে অভিনন্দন জানানোর বিকল্প নেই। আপনার বস থেকে শুরু করে ক্লিনার বা দারোয়ান পর্যন্ত সবাই চায় তাদের ভালো কাজগুলো প্রশংসিত হোক। তাই – সহকর্মী যে পদেরই হোক না কেন, তাদের ভালো কাজ গুলোর আন্তরিক প্রশংসা করুন। ভুল করলে ভুল শোধরানোর উপায় বলে দিন – কিন্তু তার চেষ্টাটাকেও ছোট করে দেখবেন না।কর্মক্ষেত্রে কেউ আপনার কোনও উপকার করলে অবশ্যই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান। কর্মক্ষেত্রে এই আচরণ, আপনার প্রতি অন্যদের আন্তরিকতাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেবে।
#৫ ইতিবাচক ও হাসিখুশি থাকুন
একজন মানুষ যদি সব সময়ে মন খারাপ করে থাকে, বা গোমড়া মুখে থাকে, অন্য লোকজন তার আশপাশে ভিড়তে চায় না। আপনি হাসিখুশি ও ইতিবাচক থাকলে অন্যরা আপনার কাছে আসতে এবং তাদের কথাগুলো বলতে উৎসাহিত হবে। তথ্যের সঠিক আদান প্রদানের জন্য এটা অতি জরুরী। এটা না হলে হয়তো দরকারের সময়ে প্রয়োজনীয় তথ্য পাবেন না। সেইসাথে, সহকর্মীদের সাথেও আপনার আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে উঠবে না।
#৬ কেউ কাজের সময় নষ্ট করলে মনে মনে বিরক্ত না হয়ে পরিস্থিতি বুঝিয়ে দিন
কিছু কিছু সময়ে কর্মক্ষেত্রে ভালো সম্পর্ক বিরক্তির কারণ হয়। হাতে জরুরী কাজ থাকার সময়ে অন্য সহকর্মী ফ্রি থাকলে এসে গল্প জুড়ে দেয়। এখানে বেশিরভাগ যে ভুলটি করে, তা হল, সরাসরি কিছু না বলে গল্পে যোগ দেয় – ওদিক কাজ নষ্ট করার জন্য সহকর্মীর প্রতি বিরক্ত হয়। – এতে করে জটিলতা বাড়ে।
এক্ষেত্রে আপনি যদি চাঁছাছোলা ভাবে তাকে কথা বলতে মানা করেন – তাহলেও আন্তরিকতা নষ্ট হতে পারে। কিন্তু আপনি যদি হাসি মুখে ভদ্র ভাবে তাকে পরিস্থিতি বুঝিয়ে বলেন, তবে কিন্তু তিনি বুঝবেন। প্রয়োজনে তাকে বলুন যে হাতের কাজটা শেষ করে আপনি তার কথা শুনবেন। তিনি নিজেও একজন কর্মী, এবং কাজের গুরুত্ব তিনি বুঝবেন। তাই মনে মনে বিরক্ত না হয়ে, অথবা চাঁছাছোলা ভাবে না বলে, আপনার হাতের কাজের গুরুত্ব বোঝান। – এটাই সবচেয়ে ভালো উপায়।
#৭ অফিস পলিটিক্স ও বদনাম করা থেকে বিরত থাকুন
অফিস পলিটিক্স ও একজনের নামে অন্যের কাছে দুর্নাম করা একটি অফিসের কাজের পরিবেশ শেষ করে দিতে পারে। একবার যদি আপনি ও আপনার সহকর্মীদের মাঝে এই আচরণ শুরু হয় – তবে তা অফিসের পরিবেশ বিষাক্ত করে তুলবে।
যদি কারও সাথে আপনার মনোমালিন্য হয় – তবে সরাসরি তার সাথে এই বিষয়ে কথা বলুন, এবং বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করুন।
মাঝে মাঝে হয়তো আপনার কাছেও অন্যের নামে কেউ দুর্নাম করবে – আপনি অবশ্যই সেই গসিপে যোগ দেবেন না। মনে রাখবেন, আপনার কাছে যে অন্যের নামে দুর্নাম করছে – সে আপনার নামেও অন্যের কাছে দুর্নাম করে।
এমন হতেই পারে যে, বিশেষ কোনও সহকর্মীর সাথে আপনার সব সময়ে দ্বিমত হয়। তার সাথে আপনার মেলে না – এবং ভালো সম্পর্কও গড়ে উঠছে না।
এসব ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় সেই মানুষটিকে ভালোমত জানার চেষ্টা করা। তার দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করুন। এবং তার পছন্দ-অপছন্দ বোঝার চেষ্টা করুন। নিজেদের মধ্যে কোনও একটি মিলের জায়গা খুঁজে বের করুন – এবং সেটার ওপর ভিত্তি করে একটি ভালো সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করুন। #৩ এ বলা পরামর্শগুলো কাজে লাগিয়ে আন্তরিকতা বাড়ানোর চেষ্টা করুন।
আপনার হয়তো মনে হতে পারে, আপনি কেন এত কষ্ট করতে যাবেন? কারণ, আপনি মানুষ হিসেবে বেশি বুদ্ধিমত্তা ও পেশাদারিত্বের পরিচয় দিতে চান। এখানে এই ধরনের ইগো যদি বাধার সৃষ্টি করে – তবে তাকে পাত্তা দেবেন না।
যদি সবকিছু করার পরও দেখেন সেই মানুষটি মানসিক ভাবে অসুস্থ, অর্থাৎ আপনার সব চেষ্টার পরও সে নেগেটিভ আচরণই করছে – তবে তাকে সাধ্যমত এড়িয়ে চলুন। কিন্তু অফিস পলিটিক্সে জড়াবেন না।
পরিশিষ্ট:
সহকর্মীদের সাথে ভালো আচরণ ও তাদের সাথে সুসম্পর্ক রাখার উপকারিতা নিয়ে বলতে গেলে বলে শেষ করা যাবে না। আপনার ক্যারিয়ারের প্রতিটি পর্যায়ে, প্রতিটি ক্ষেত্রে সহকর্মীর সাথে ভালো সম্পর্ক দারুন সব সুবিধা দেবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপনার কর্মদক্ষার চেয়েও এটা বেশি ফলাফল দেবে। কাজেই যতটা সম্ভব সহকর্মীদের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করুন।
আর সেই পথে এই লেখাটি যদি আপনাকে একটু হলেও সাহায্য করে – তবেই আমাদের প্রচেষ্টা সার্থক হবে।
লেখাটির বিষয়ে আপনার যে কোনও মতামত আমাদের কমেন্ট করে জানান। আপনার প্রতিটি মতামতই আমাদের কাছে অমূল্য।
আর যদি মনে হয় এই লেখাটি পড়ে অন্যরাও উপকৃত হবেন – তবে শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন।
এই ধরনের আরও লেখার জন্য নিয়মিত আমাদের সাথে থাকুন। সাফল্যের পথে লড়াকু সব সময়ে আপনার সাথে আছে।