সম্মান পাওয়ার উপায় কি? – এই প্রশ্ন কি আপনার মনে জাগে? মানুষের কাছে সম্মানিত হওয়ার উপকারিতা তো আমাদের সবারই জানা। পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষ সম্মানিত হতে চায়। সম্মান মানুষের অমূল্য সম্পদ। অন্যরা যদি আপনাকে সত্যিকার সম্মান করে – তবে আপনার কিছু না থাকলেও আপনি একজন সার্থক মানুষ।
এমন বহু বিত্তবান এবং ক্ষমতাবান মানুষ আছেন – যারা এত ক্ষমতা বা অর্থ থাকার পরও সুখী নন, কারণ তারা জানেন – মানুষ তাদের সত্যিকার অর্থে সম্মান করে না। তাদের ক্ষমতা বা অর্থ চলে গেলেই কেউ তাদের দিকে ফিরেও তাকাবে না।
আবার এমন মানুষ আছেন, যাঁদের বলতে গেলে সাধারণ অর্থে কোনও ক্ষমতা নেই, অর্থবিত্তও নেই – কিন্তু সবাই তাঁদের সম্মান করে এবং ভালোবাসে।
সম্মানহীন বিত্তবান বা ক্ষমতাবানের চেয়ে তাঁরা মানুষ হিসেবে অনেক বেশি সার্থক ও সুখী।
একজন সত্যিকার সম্মানীত মানুষ পরিতৃপ্তির সাথে জীবন কাটান। অন্যরা তাঁদের মেনে চলে। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন বহু নেতা আছেন – যাঁরা শুধু নিজের অনুসারীদের সম্মানের কারণে এত বড় নেতা হতে পেরেছেন।
মানুষ যদি ব্যক্তি হিসেবে আপনাকে সম্মান না করে – তবে আপনি কোনও দিক দিয়েই সফল হতে পারবেন না। আপনি যদি একজন উদ্যোক্তা হতে চান, তবে আপনাকে প্রথমেই অন্যের সম্মান আদায় করতে হবে। আপনি যদি একজন ভালো বক্তা বা নেতা হতে চান, অথবা অন্য যে কোনও ক্ষেত্রেই টপ পজিশনে যেতে চান – আপনাকে সম্মানিত মানুষ হতে হবে।
সম্মান পাওয়ার উপায়:
‘টোস্টমাস্টার্স ইন্টারন্যাশনাল’ বিশ্বে লিডারশিপ ট্রেইনিং এর জগতের সবচেয়ে বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান গুলোর একটি।৯৫ বছর আগে, ১৯২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ট্রেইনিং প্রতিষ্ঠানটি ১৪৩টি দেশে লিডারশিপ ও পাবলিক স্পিকিং ট্রেইনিং দিয়ে থাকে।
ইন্সটিটিউটটির সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জিসিকা ল্যাবউড সম্মানিত হওয়ার উপায় বিষয়ে ১৫টি পরামর্শ দিয়েছেন।
এগুলোর বেশিরভাগই আমাদের জানা বিষয়। কিন্তু সম্মান পাওয়ার উপায় হিসেবে যে এগুলোর কোনও কোনওটা কাজে লাগতে পারে – তা হয়তো অনেকেই জানেন না।
![সম্মান](https://i0.wp.com/i.imgur.com/9lPe3UV.jpg?resize=298%2C312&ssl=1)
পরামর্শগুলো মেনে চলা বলতে গেলে খুবই সহজ। একটু সচেতন হলেই এগুলো কাজে লাগিয়ে আপনি মানুষের কাছ থেকে আরও অনেক বেশি সম্মান আদায় করে নিতে পারবেন।
তবে চলুন, জেনে নেয়া যাক সম্মানিত হওয়ার ১৫টি উপায়
০১. এমন কিছু করুন, যা সত্যিই মানুষের কাজে লাগে
ভেবে দেখুন, স্টিভ জবস, বিল গেটস বা জ্যাক মা কি শুধুই তাঁদের অর্থ আর প্রতিপত্তির জন্য সম্মানিত?
নিশ্চই না! তাঁরা এমন কিছু করেছেন – যার কারণে বহু মানুষ উপকৃত হয়েছে। মানুষের জীবনকে তাঁরা সহজ করেছেন; ইতিবাচক ভাবে পৃথিবীর চেহারা বদলে দিয়েছেন।
তাঁদের জীবন, ও কাজ মানুষকে অনুপ্রাণিত করে, সামনে এগিয়ে চলার উৎসাহ দেয়। তাঁরা অর্জনের পাশাপাশি বিলিয়েও দিয়েছেন। – যা তাঁদের সম্মানিত মানুষ বানিয়েছে।
![সম্মান পাওয়ার উপায়](https://scontent.fdac29-1.fna.fbcdn.net/v/t1.0-9/53559984_2169091876754123_5238422176134070272_n.png?_nc_cat=109&_nc_ht=scontent.fdac29-1.fna&oh=04aab9e8447f977d8045fda16b92e9c3&oe=5CDADB7A)
বিলিওনেয়ার তো পৃথিবীতে বহু আছে। ড্রাগ ডিলার, দুর্নীতিবাজ, চোরাচালানী – এরাও বহু টাকা আর ক্ষমতার মালিক – কিন্তু এদের কাছ থেকে টাকা আর ক্ষমতা চলে গেলে কি হবে – সেটা নিশ্চই আপনাকে বলে দিতে হবে না।
কাজেই, সত্যিকার সম্মান পেতে হলে মানুষের জন্য এমন কিছু করুন যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে তাদের সত্যিকার উপকারে লাগে।
একজন বস যদি শুধু কর্মীদের নির্দেশ দিতে থাকে, তবে তাকে কর্মীরা সত্যিকার সম্মান করবে না। কিন্তু সেই বস যদি কর্মীদের নতুন কিছু শেখান, বা নিজের উন্নতি করতে উৎসাহ দেন – তবে কর্মীরা অবশ্যই তাকে আন্তরিক ভাবে সম্মান করবে।
০২. কথা দিয়ে কথা রাখুন
সম্মানিত হওয়ার উপায় বা সম্মান পাওয়ার উপায় নিয়ে কথা বলতে গেলে এই বিষয়টি থাকবেই।
এটা বলে না দিলেও সবাই বোঝে যে, যার কথার দাম নেই, মানুষ হিসেবেও অন্যদের কাছে তার মূল্য নেই।
মানুষের কাছে সম্মানিত হওয়ার প্রথম শর্তই হল কথা দিয়ে কথা রাখা। আপনি কারও জন্য কিছু করার প্রতিশ্রুতি দিলে অবশ্যই আপনাকে তা করতে হবে। যদি একান্তই না পারেন, তবে বিকল্প ব্যবস্থা করে দিতে হবে এবং আন্তরিক ভাবে ক্ষমা চাইতে হবে।
![](https://i0.wp.com/i.imgur.com/NSFAc9Z.jpg?resize=640%2C464&ssl=1)
আপনি যদি একজন মানুষের সাথে একবারের বেশি – অথবা সবার সাথেই মাঝে মাঝে কথা দিয়ে কথা না রাখেন – তবে আপনার প্রতি মানুষের বিশ্বাস ও সম্মান নষ্ট হয়ে যাবে।
বিষয় যত ছোটই হোক, বা মানুষটি যে-ই হোক না কেন – যে কোনও মূল্যে প্রতিশ্রুতি পালন করার চেষ্টা করুন।
কথা দেয়ার আগে ভালো করে ভেবে নিন, তা পালন করা আপনার পক্ষে সম্ভব কি না। যদি সম্ভব না হয়, তবে ভুলেও প্রতিশ্রুতি দেবেন না। আপনি না বলার কারণে মানুষটি যতটা কষ্ট পাবে – হ্যাঁ বলে তারপর কাজটি না করলে আরও বেশি কষ্ট পাবে। আর সম্মান তো নষ্ট হবেই।
কাজেই, সবাইকে হ্যাঁ বলার প্রয়োজন নেই, নিজের ক্ষমতার প্রতি খেয়াল রেখে না – বলতে শিখুন।
০৩. দোষ না করলে দু:খিত বলবেন না
কিছু মানুষ আছেন, যারা ‘অতিরিক্ত ভালো’ – নিজে দোষ না করলেও ‘শান্তি রক্ষা’ করার খাতিরে নিজের ঘাড়ে দোষ নেন। এটা আসলে দুর্বল মানসিকতার পরিচয়। এরা হয়তো ভাবেন যে, এটা করে মহত্বের পরিচয় দেয়া হল। কিন্তু এর ফলে মানুষের চোখে দুর্বল হয়ে যেতে হয়। মানুষের চোখে সম্মান কমে যায়। কাজেই, যে দোষ আপনি করেননি – সেই দায় নিজের ঘাড়ে নেবেন না।
০৪. ভুল করলে স্বীকার করুন এবং সংশোধন করুন
কিছু মানুষ যেমন ভুল না করেও নিজের ঘাড়ে দায় নেয় – আবার কিছু মানুষ নিজের শত দোষ থাকলেও সেই দোষ স্বীকার করতে চায় না। পরিস্থিতি বা অন্য মানুষের ঘাড়ে দোষ চাপাতে চেষ্টা করে।
যদি এই স্বভাব একবার অন্যরা খেয়াল করে – তবে চিরদিনের জন্য তাদের কাছে সম্মান হারিয়ে যাবে।
ভুল না করে দোষ স্বীকার করাটা যেমন দুর্বলতা, ভুল করার পর তা স্বীকার না করা আরও বড় দুর্বলতার পরিচয়। – এই ধরনের মানুষকে কেউ বিশ্বাস করে না, এবং সম্মানও করে না।
কাজেই, যদি ভুল হয়ে যায় – তবে সাথে সাথে তা স্বীকার করুন, এবং দ্রুত ভুল সংশোধন করুন। – এতে মানুষের চোখে আপনি সাহসী ও সম্মানী হয়ে উঠবেন।
মানুষ মাত্রই ভুল হবে। আর এই সত্যিকে মেনে নিয়ে তার সামনে দাঁড়ানোর সাহস যার আছে, তাকে মানুষ অনেক বেশি সম্মান করবে।
০৫. অন্যের সময় নষ্ট করবেন না
আপনি যখন অন্যের সময়ের মূল্য দেবেন, তখন অন্যরাও আপনার সময়ের মূল্য দেবে।
কোনও এ্যাপয়েন্টমেন্ট থাকলে কখনওই দেরি করবেন না। প্রয়োজনে আগে আগে গিয়ে অপেক্ষা করুন। কারও সাথে কোনও কাজে গেলে ফালতু গল্পে সময় নষ্ট করবেন না, এবং কাউকে কাজে ব্যস্ত দেখলে তার সময় নষ্ট করবেন না। – এটা আপনার ব্যক্তিত্বকে শক্তিশালী করবে, এবং মানুষ আপনার কথা ও কাজকে বেশি মূল্য দেবে।
![সম্মানিত হওয়ার উপায়](https://i0.wp.com/i.imgur.com/zdqRBO3.jpg?resize=640%2C427&ssl=1)
ব্যক্তিত্ববান মানুষকে সবাই সম্মান করে। ব্যক্তিত্ববান হওয়া মানে সব সময়ে গম্ভীর হয়ে থাকা নয়। ব্যক্তিত্ববান মানে কথার সাথে কাজের মিল থাকা, এবং অন্যের ও নিজের সময় মূল্যহীন কাজে নষ্ট না করা।
ব্যক্তিত্বকে শানিত করুন, দেখবেন – মানুষ আপনাকে অনেক বেশি মূল্য দিচ্ছে।
০৬. না জেনে মন্তব্য করবেন না, প্রয়োজনে চুপ থাকুন
কোনও বিষয়ে যদি আপনি কম জানেন, বা না জানেন – এতে লজ্জার কিছু নেই। মানুষও এতে কিছু মনে করে না। অন্য দশজন মানুষ তাদের কাজ বা পড়াশুনার বিষয়ে যা জানে – আপনি আপনার বিষয়ে তাদের চেয়ে বেশি জানেন।
কোনও বিষয়ে না জেনে মন্তব্য করা মানে নিজের যোগ্যতার ওপর আপনার যথেষ্ঠ সম্মান নেই। আর মানুষ যখন বুঝে যাবে যে আপনি না জেনেই কোনও বিষয়ে মন্তব্য করছেন – তখন তাদের চোখে আপনি আরও ছোট হয়ে যাবেন।
অন্যদিকে চুপ থাকলে তারা আপনার ব্যক্তিত্বকে সম্মান করবে। – যে কোনও আলোচনায় সম্মান পাওয়ার সেরা উপায় হল, যা জানেন – তা নিয়ে কথা বলুন; আর যা জানেন না – সেই বিষয়ে চুপ থাকুন। না জানা বিষয়ে প্রশ্ন করলে, আপনার অজ্ঞানতার কথা অকপটে স্বীকার করুন। এটা আপনার সাহস আর আত্মবিশ্বাসকে প্রকাশ করবে। আপনি অন্যদের চোখে সম্মানিত হয়ে উঠবেন।
![সম্মান পাওয়ার উপায়](https://i0.wp.com/i.imgur.com/Lc48Pk3.jpg?resize=640%2C480&ssl=1)
এছাড়া, কোনও মানুষের সম্পর্কে ভালোমত না জেনেও মন্তব্য করবেন না। বিশেষ করে খারাপ কোনও কথা একদমই বলবেন না।এমনকি জেনেও কারও নামে খারাপ মন্তব্য করবেন না।
যারা জেনে বা না জেনে অন্য মানুষের নামে দুর্নাম করে বা নেতিবাচক মন্তব্য করে – প্রায় সবাই তাদের ছোট মনের মানুষ বলে মনে করে।
আর ছোট মনের মানুষকে কেউই সম্মান করে না।
০৭. অন্যের মতামতকে সম্মান দেখান
পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের চিন্তাধারা আলাদা। প্রতিটি বিষয়কে প্রতিটি মানুষ তার নিজস্ব নজরে দেখে। একজনের সাথে আপনার মতের মিল না হলেই তাকে ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করবেন না। মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনুন। যুক্তিগুলো বোঝার চেষ্টা করুন। – তারপর আপনার যুক্তি গুলো বলুন।
ভুলেও ব্যক্তিগত খোঁচা দেবেন না – বা মুখের ওপর তার জ্ঞানের স্বল্পতা নিয়ে তামাশা করবেন না। এটা মানুষকে দারুন ভাবে অপমান করে। বিশেষ করে অনেকে মিলে আলোচনা করার সময়ে ভুলেও কাউকে ছোট করার চেষ্টা করবেন না।
দ্বিমত হলেও তার মতামতকে সম্মান দেখান। – তাহলে সেই মানুষটিও আপনাকে সম্মান করবে।
০৮. অহঙ্কার করবেন না
আপনার অনেক কিছু থাকতে পারে। আপনি অনেক দক্ষ আর প্রতিভাবান মানুষ হতে পারেন। – কিন্তু তার জন্য যদি আপনি অন্যদের ছোট করে দেখেন এবং অহঙ্কার প্রকাশ করেন – তবে কোনওদিন অন্যের কাছে সত্যিকার সম্মান পাবেন না।
![সম্মান](https://i0.wp.com/i.imgur.com/SbTFVlr.jpg?resize=609%2C609&ssl=1)
নিজেকে যোগ্য মনে করা এবং নিজের যোগ্যতার ওপর বিশ্বাস থাকা দোষের কিছু নয়। কিন্তু সেটা নিয়ে বড়াই করা এবং অন্যদের ছোট করে দেখাটা অহঙ্কার। অহঙ্কার করা মানে আপনার ইগো আপনাকে শাসন করছে। ইগোকে কখনওই প্রশ্রয় দেবেন না।
সব সময়ে নিজের যোগ্যতা কাজে প্রমাণ করার চেষ্টা করুন। আপনার কাজ দেখেই মানুষ আপনার যোগ্যতার বিষয়ে সঠিক ধারণা পাবে – এবং সেই অনুযায়ী আপনাকে সম্মান করবে।
০৯. অতি বিনয় পরিহার করুন
যদি নিজের যোগ্যতার বিষয়ে অতিরিক্ত বিনয় দেখান, এবং নিজে যা – তারচেয়ে অনেক ছোট করে নিজেকে তুলে ধরেন – তাহলেও মানুষ আপনাকে প্রাপ্য মূল্য ও সম্মান দেবে না।
নিজের ব্যাপারে বড় বড় কথা যেমন বলবেন না, তেমনি নিজেকে খুব ছোটও করবেন না। অহঙ্কারের মত, অতি বিনয়ের কারণেও মানুষ আপনার সঠিক যোগ্যতা মাপতে পারে না। এর ফলে আপনি যোগ্যতা অনুযায়ী সম্মানও পাবেন না।
১০. সৎ থাকুন
একজন মানুষের সততা তার অন্যদের কাছ থেকে সম্মান পাওয়ার অন্যতম উপায়।
আপনার ওপর কোনও দায়িত্ব থাকলে পূর্ণ সততার সাথে সেই দায়িত্ব পালন করুন। পদ বা দায়িত্ব অনুযায়ী আপনার কাজ যেমন হওয়া উচিৎ, ঠিক সেভাবেই দায়িত্ব পালন করুন – তাহলেই আপনার পজিশন ও কাজে মিল থাকবে – এবং অন্যরা আপনাকে আন্তরিক ভাবে সম্মান করবে।
১১. কথা ও কাজে মিল রাখুন
প্রতিটি ব্যাপারে আপনার চিন্তা ভাবনা পরিস্কার থাকতে হবে, এবং প্রতিটি কাজে সেই চিন্তার প্রতিফলন ঘটাতে হবে।
যদি মুখে বলেন, আপনি অন্যায় ভাবে নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করা পছন্দ করেন না – তবে কাজেও যেন সেটা প্রকাশ পায়। কথা ও কাজে যদি মিল না থাকে, তবে মানুষ আপনার প্রতি সম্মান হারিয়ে ফেলবে। সততার সাথে নিজের কথা গুলোকে বাস্তবে পরিনত করুন।
যদি বলেন যে আপনি একদিন অনেক বড় ব্যবসায়ী হতে চান, তাহলে আপনার কাজও তেমন হতে হবে। আপনার কাজে যেন মনে হয় আপনি সত্যিই বড় ব্যবসায়ী হতে চান – না হলে একটা সময়ে মানুষ আপনার ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলবে।
![সততা সম্মান](https://i0.wp.com/i.imgur.com/6uSAG7y.jpg?resize=631%2C445&ssl=1)
যাদের কথা ও কাজে মিল নেই, তারা এক সময়ে হাসির পাত্রে পরিনত হয়। তাদের কোনও কথারই মানুষ মূল্য দেয় না – এবং সম্মানও করে না।
কাজেই, আপনি মুখে যেটাই বলবেন – আপনার কাজ দেখেও যেন মনে হয়, আপনি সেটা বিশ্বাস করেন ও বাস্তবে পরিনত করতে চান।
যদিও সব সময়েই আপনি সবকিছুতে সফল হবেন না, কিন্তু মানুষ যখন দেখবে আপনি আপনার কথাকে কাজে পরিনত করার জন্য নিজের পুরোটা দিয়ে চেষ্টা করছেন – তখন আপনার প্রতি তাদের সম্মান বেড়ে যাবে।
১২. সব সময়ে নিজের জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করুন
ক্যারিয়ার ও আর্থিক উন্নতির জন্য যেমন সব সময়ে নিজের জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়ানো প্রয়োজন, তেমনি অন্যের কাছ থেকে সম্মান আদায় করার জন্যও এটা জরুরী।
আপনি যখন নিয়মিত নিজের জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়াবেন, তখন বিভিন্ন আলোচনা ও কাজকে ইতিবাচক ভাবে অনেক বেশি প্রভাবিত করতে পারবেন।
নিজের কাজের ক্ষেত্রে এবং ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে যখন আপনি জ্ঞান ও দক্ষতার পরিচয় দেবেন, তখন এটা আপনার জন্য সম্মান পাওয়ার উপায় হিসেবে কাজ করবে। আপনার মতামত ও সিদ্ধান্তের ওপর মানুষের আস্থা বেড়ে যাবে, এবং তারা আপনাকে অনেক বেশি মূল্য দেবে।
![](https://i0.wp.com/i.imgur.com/x8dnUcY.png?resize=632%2C638&ssl=1)
কাজেই দিনের কিছুটা সময় নিজের জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বরাদ্দ রাখুন। বই পড়ুন, টিউটোরিয়াল দেখুন, আপনার চেয়ে অভিজ্ঞ ও সফল মানুষের সাথে সময় কাটান। মোটকথা, প্রতিদিন নতুন কিছু শিখে নিজেকে আরও একটু জ্ঞানী ও দক্ষ করে তোলার চেষ্টা করুন।
১৩. ইতিবাচক থাকুন ও অন্যদের অনুপ্রাণিত করুন
নেতিবাচক ও হতাশ লোকদের কাছে কেউই থাকতে চায় না, এবং এদের কেউ সম্মানও করে না।
জীবনে যত কঠিন সময়ই আসুক না কেন – সব সময়ে আশাবাদী ও ইতিবাচক থাকুন। এবং অন্য মানুষ যখন আপনার সামনে হতাশার কথা বলে – তাদের আশার বানী শোনান। নিরুৎসাহিত করার বদলে অনুপ্রেরণা দিন।
এটা করলে অন্যরা আপনার কাছে এসে তাদের নিজেদের ব্যাপারে ভালো বোধ করবে, এবং তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
![সম্মান পাওয়া](https://i0.wp.com/i.imgur.com/WDn4otJ.jpg?resize=640%2C392&ssl=1)
মানুষ যখন দেখবে আপনি খারাপ পরিস্থিতিতেও আশাবাদী ও ইতিবাচক থাকেন, এবং অন্যকেও অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করেন – তখন তারা আপনাকে একজন ’পাওয়ারফুল’ মানুষ হিসেবে দেখবে এবং শ্রদ্ধা করবে।
জ্যাক মা শুধু একজন বিলিওনেয়ার অথবা সফল উদ্যোক্তা হিসেবে এতটা সম্মান পান না। তাঁর কথা ও কাজ অন্যদের অনুপ্রাণিত ও আশাবাদী করে তোলে – যে কারণে সবাই তাঁর কথা শুনতে চায় এবং তাঁকে সম্মান করে।
১৪. আবেগের বদলে যুক্তি দিয়ে সিদ্ধান্ত নিন
যারা নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না – তারা আসলে মারাত্মক দুর্বল মনের মানুষ। নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ করতে পারা একজন মানুষের সাফল্য ও সম্মান পাওয়ার সবচেয়ে বড় গুণাবলীর একটি।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবেগীয় সিদ্ধান্ত ভালো হলেও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আবেগ দিয়ে নেয়া সিদ্ধান্ত খারাপ ফলই বয়ে আনে।
আপনজনের প্রতি ভালোবাসা একটি অতি শক্তিশালী আবেগ। এই আবেগ না থাকলে তাকে মানুষই বলা যাবে না।
কিন্তু আবেগকে প্রশ্রয় দিতে গিয়ে যদি নিজের সন্তানের বা স্নেহের পাত্রের অন্যায়গুলোকে প্রশ্রয় দেন – তবে একটা সময়ে গিয়ে তারাই আপনাকে অসম্মান করবে। – সমাজেও আপনি সম্মান হারাবেন।
![সম্মান ও আবেগ](https://i0.wp.com/i.imgur.com/uThuQBn.jpg?resize=640%2C359&ssl=1)
যে লোক আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তাকে সবাই দুর্বল ভাবে, এবং তাকে মন থেকে সম্মান করে না।
তার ওপর ভরসাও করে না। তার সাথে কাজ করাকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে, কারণ মুডের ওপর যাদের সততা ও পারফর্মেন্স নির্ভর করে – তারা কখনওই সত্যিকার ‘প্রফেশনাল’ হতে পারে না।
অনেক প্রতিভাবান ও দক্ষ মানুষ শুধু তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার কারণে সফল ও সম্মানীত হতে পারেননি।
কাজেই, আবেগের বশে কিছু করার আগে যুক্তি দিয়ে চিন্তা করুন – আপনার এই সিদ্ধান্ত আসলেই ভালো সিদ্ধান্ত কি না। এর ফলে ভুল যেমন কম হবে, তেমনি মানুষও আপনাকে সম্মান করবে।
এই ব্যাপারে আরও বিস্তারিত জানতে আমাদের “নেতিবাচক আবেগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায়: আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা” – লেখাটি পড়তে পারেন।
১৫. সব সময়ে সত্যি কথা বলুন এবং সাহস প্রকাশ করুন
নিজের ব্যাপারে বা অন্য অনেক ব্যাপারে মিথ্যা বলে হয়তো আপনি অন্যদের সম্মান পাবেন – তবে আপনিও জানেন, সেই সম্মান আসলে আপনার প্রাপ্য নয়। এবং সত্য এক সময়ে না এক সময়ে প্রকাশ হবেই। আজ পর্যন্ত কেউই সত্যকে গোপন করে রাখতে পারেনি।
মিথ্যা দিয়ে আদায় করা সম্মান সত্য প্রকাশের সাথে সাথে ঘৃণায় পরিনত হয়। মানুষ আপনার দিকে ফিরেও তাকাবে না। ‘চাপাবাজ’ মানুষকে কেউই সম্মান করে না।
![সম্মানিত হওয়ার উপায়](https://i0.wp.com/i.imgur.com/4vIgqil.jpg?resize=640%2C426&ssl=1)
কাজেই সব সময়ে সত্যি কথা বলুন। বানিয়ে বানিয়ে নিজের বা অন্যের ব্যাপারে কিছু বলবেন না।
এছাড়া সাধারণ ভাবেও সব সময়ে সত্যি কথা বলার চেষ্টা করুন। যে কোনও পরিস্থিতিতে সত্যি কথা বলার সাহস রাখুন। একজন সত্যিকার সাহসী মানুষ সব সময়েই সত্যি কথা বলেন। সাহসী ও সত্যবাদী মানুষ অন্যদের কাছে যতটা সম্মান পায় – ততটা আর কেউই পায় না। ইতিহাস অসংখ্য বার এটা প্রমাণ করেছে।
পরিশিষ্ট:
সম্মান মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ। একজন মানুষ যদি সম্মান ছাড়া তার সব হারিয়ে ফেলে, সেই সম্মানের ওপর ভর করেই সে আরও বড় কিছু গড়তে পারে। আকিজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আকিজ উদ্দিনের সবকিছু যখন আগুনে পুড়ে শেষ হয়ে গিয়েছিল, তিনি তাঁর সততার প্রতি মানুষের সম্মানের ওপর নির্ভর করে এই দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় একটি ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য গড়েছিলেন।
পৃথিবীর বহু মহান নেতা ও মনিষীর সম্পদ বলতে কিছুই ছিল না। এমনকি থাকার ঘরও ছিল না, পরনের কাপড় ছিল মাত্র একটি – কিন্তু বড় বড় বীর, সম্রাট তাঁদের শ্রদ্ধা করতেন – এর কারণ তাঁরা তাঁদের জ্ঞান, সাহস ও সততা দিয়ে মানুষের চোখে সম্মানীয় হয়ে উঠেছিলেন।
আমরা এই লেখায় সম্মানীত মানুষের গুণগুলো অর্জন করার কিছু উপায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
লেখাটির বিষয়ে আপনার যে কোনও মতামত আমাদের কমেন্ট করে জানান। আপনার প্রতিটি মতামতই আমাদের কাছে অমূল্য।
আর যদি মনে হয় এই লেখাটি পড়ে অন্যরাও উপকৃত হবেন – তবে শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন।
এই ধরনের আরও লেখার জন্য নিয়মিত আমাদের সাথে থাকুন। সাফল্যের পথে লড়াকু সব সময়ে আপনার সাথে আছে।