সব দিক বিবেচনা করার দক্ষতা বাড়ান: সিক্স হ্যাট থিংকিং মেথড – বুক রিভিউ


সব দিক বিবেচনা করে কাজ করা উচিৎ – এই কথাটা আমরা প্রায়ই শুনি। যাঁরা এই কাজটা করতে পারেন, তাঁদের ভুল কম হয়। বেশিরভাগ কাজেই তাঁরা সফল হন। কিন্তু সবার এই গুণ থাকে না। কিছু মানুষ জন্ম থেকেই যে কোনও কাজ সব দিক বিবেচনা করে করতে পারে, কেউ শিক্ষা ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে নিজের অজান্তেই শিখে যায়। – কিন্তু অনেকেই এটা পারে না।

কিন্তু তাই বলে এটা শেখা যাবে না – এমন কোনও কথা নেই। আমরা অনেক কিছুই নিজে নিজে পারি না, কিন্তু ভালো করে বোঝার মত উপাদান পেলে মানুষ সবকিছুই শিখতে পারে। সব দিক বিবেচনা করে চিন্তা করার ক্ষমতাও শেখা সম্ভব।

১৯৮৬ সালে প্রকাশিত “Six Thinking Hats (An essential approach to business management from the creator of Lateral Thinking)” বইটি প্রকাশের পর থেকেই পাঠকদের পরিস্কার ভাবে সব দিক বিবেচনা করে চিন্তা করতে সাহায্য করছে। এডওয়ার্ড ডি বোনো এর লেখা আমাজন বেস্ট সেলার বইটির মূল্য ৭৫ ডলারের আশপাশে বাংলা টাকায় ৬০০০ টাকার বেশি! পৃষ্ঠা সংখ্যা ২০৭;

হয়তো বইটি আপনি কিনতে ও পড়তে পারবেন – হয়তো পারবেন না। যেটাই করেন, বইটি ভালোমত বুঝতে আপনাকে সাহায্য করার জন্য, বইটির মূল আইডিয়া গুলো নিয়ে এই বুক রিভিউটি সাজিয়েছি।

সব দিক বিবেচনা করে চিন্তা ও কাজ করা কেন প্রয়োজন?

বেশিরভাগ মানুষের একটা নির্দিষ্ট চিন্তাধারা বা থিংকিং প্যাটার্ণ থাকে। পারিবারিক অবস্থা, বেড়ে ওঠা, শিক্ষা – ইত্যাদি কারণে এক একজনের চিন্তাধারা এক এক রকম।

কেউ হয়তো বেশি আশাবাদী, কেউ হয়তো বেশি সাবধানী, কেউ হয়তো কিছু ব্যাপারে বেশি আক্রমণাত্মক, কেউ আবার বেশি রক্ষণাত্মক বা ডিফেন্সিভ। সবগুলো থিংকিং প্যাটার্ণের কিছু সুবিধা এবং কিছু অসুবিধা রয়েছে।

যেমন ধরুন, আপনি যদি খুব বেশি আশাবাদী হন, তবে কোনও বিষয়ের সম্ভাব্য খারাপ দিকগুলো নজর এড়িয়ে যেতে পারে। আবার অতিরিক্ত সাবধানী হলে অনেক ভালো ভালো সুযোগও আপনি এড়িয়ে যেতে পারেন।

কাজেই, সফল ভাবে কাজ করা ও সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য যে কোনও বিষয়েই ভালো, খারাপ, মধ্যম – সব দিক বিবেচনা করে চিন্তা করা দরকার। অনেক সময়েই ভিন্ন প্যাটার্ণে চিন্তা করলে বহু জটিল সমস্যার সমাধান বেরিয়ে আসে। একটি সমস্যাকে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করতে পারলে সঠিক সমাধান বের হয়ে আসার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে।

যাঁরা এটা করতে পারেন, তাঁরাই আসলে সাফল্যের দিক দিয়ে অন্য সবাইকে ছাড়িয়ে যান। এই ধরনের মানুষেরাই সফল ভাবে নেতৃত্ব দিতে পারেন, এবং সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

বিবেচনা

সিক্স থিংকিং হ্যাটস্ বইটি আপনাকে যে কোনও সমস্যা ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করতে শেখাবে। একজন মানুষ হয়েও আপনি ৬ জন মানুষের একটি টিমের মত চিন্তা করতে পারবেন। এবং এটি এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে আপনার চিন্তাগুলো জট পাকিয়ে যাবে না। এটি জরুরী কারণ, অনেক সময়েই একটি বিষয় ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করতে গিয়ে আমরা দ্বিধায় পড়ে যাই। এই বইয়ের পদ্ধতি আপনাকে এই জটিলতা থেকে বাঁচাবে।

টিম ওয়ার্কের বেলায়ও এটা খুব কাজে দেয়। আপনি টিমের বিভিন্ন সদস্যের মতামত আগের চেয়ে অনেক ভালোমত বুঝতে পারবেন। বিতর্ক ও কনফিউশন সহজেই এড়াতে পারবেন। আপনি বুঝতে পারবেন, কেন অন্যরা আপনার মতামতকে বুঝতে পারছে না, বা তাদের মতামতকে আপনার মতামতের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে – এবং আপনিও কেন নিজের মতামতকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। আর এগুলো বোঝার পাশাপাশি শুধুমাত্র নিজের দিক থেকে চিন্তা করার বদলে অন্যের দিক থেকেও প্রতিটি বিষয় চিন্তা করতে পারবেন। সেইসাথে এটাও বুঝতে পারবেন, কোন চিন্তাটি আসলেই কার্যকর হবে।

একরোখা বা সরল চিন্তার বদলে আপনি প্রতিটি বিষয় চারদিক থেকে দেখতে পারবেন। যে কোনও বিষয়ের পজিটিভ দিক, নেগেটিভ দিক, ইমোশনাল দিক, যৌক্তিক দিক, সৃষ্টিশীল দিক – ইত্যাদি সবকিছুই বিবেচনা করতে পারবেন।

তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক সিক্স হ্যাট থিংকিং টেকনিক গুলো আসলে কি, এবং কিভাবে এগুলো কাজে লাগাবেন।

সিক্স হ্যাট টেকনিক:

লেখক এডওয়ার্ড ডি বোনো মানুষের চিন্তাধারাকে মোট ৬টি ভাগে ভাগ করেছেন। এবং প্রতিটি প্যাটার্ণকে আলাদা আলাদা হ্যাট বা টুপির সাহায্যে চিহ্নিত করেছেন। আলাদা আলাদা রঙের টুপি আলাদা আলাদা থিংকিং প্যাটার্ণের চিহ্ন। 

#১. হোয়াইট হ্যাট

হোয়াইট হ্যাট বা সাদা টুপি টেকনিকে চিন্তা করার সময়ে শুধুই তথ্য আর পরিসংখ্যানে ফোকাস করতে হবে, এবং সবকিছুকে 2+2=4 লজিকে ফেলে চিন্তা করতে হবে। যুক্তি বা তথ্যের বাইরে কোনও চিন্তা করা যাবে না। statistics বা পরিসংখ্যান যেটা বলবে – সেটাকে ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গত দুই বছর ধরে যদি একটি পন্যের বিক্রী ২% হারে বাড়ে, তবে এই বছরও তেমনটা হবে ধরে নিয়ে পরিকল্পনা করার চিন্তা করতে হবে। হাতে থাকা তথ্যকে ভিত্তি করে চিন্তা করা ছাড়া আর কিছু করা যাবে না।

#২. রেড হ্যাট

রেড হ্যাট বা লাল টুপি পর্যায়ে ডাটার বদলে ইমোশন বা আবেগ দিয়ে চিন্তা করতে হবে। মন কি বলছে, ভাবতে গিয়ে কেমন অনুভূতি হচ্ছে – এটার ওপর জোর দিতে হবে। খারাপ লাগা, ভালো লাগা, আনন্দ, রাগ – সব ধরনের অনুভূতিকেই গুরুত্ব দিতে হবে।

যে কোনও বিষয়ে চিন্তার ক্ষেত্রে তথ্য ও পরিসংখ্যান যেমন গুরুত্বপূর্ণ, সেই বিষয়ে মানুষের অনুভূতিও তেমই গুরুত্বপূর্ণ। এই পর্যায়ে অনুভূতির কারণ বোঝার চেষ্টা করবেন না। শুধু অনুভূতি কেমন হচ্ছে তা মনে রাখুন।

#৩. ইয়োলো হ্যাট

ইয়োলো হ্যাট বা হলুদ টুপি হল পজিটিভ চিন্তা করার ধাপ। যে কোনও বিষয়ের দিকে আপনি আশাবাদী হয়ে তাকাবেন, এবং সেটির সব ভালো দিকগুলো খুঁজে বের করবেন। যদি নেগেটিভ দিক ধরা পড়েও, তা আপাতত এড়িয়ে যান। শুধু পজিটিভ দিক গুলোতে ফোকাস করুন। কোনও নতুন আইডিয়া নিয়ে চিন্তা করতে গেলে, কি কি কারণে আইডিয়াটি সফল হতে পারে – শুধু সেটা নিয়েই চিন্তা করুন। বাকি সব ভুলে যান। যখন হতাশ বা নিরাশ থাকবেন, তখন ইয়োলো হ্যাট টেকনিক আপনাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। এছাড়া ইয়োলো হ্যাট থিংকিং এর মাধ্যমে একটি আইডিয়া বা প্রজেক্ট এর সম্ভাবনাগুলো সামনে আসবে।

#৪. ব্ল্যাক হ্যাট

ব্ল্যাক হ্যাট বা কালো টুপি হল ইয়োলো হ্যাটের ঠিক উল্টো। ব্ল্যাক হ্যাড মুডে শুধু নেগেটিভ বা নেতিবাচক দিকগুলোতে ফোকাস করবেন। কোনও আইডিয়া কেন সফল হবে না, এবং কোনও কাজ করলে কি কি ক্ষতি হতে পারে, ক্ষতির পরিমান কেমন হতে পারে – এসব বিষয়ে ফোকাস করুন। এই সময়ে কোনও পজিটিভ চিন্তা মাথায় আসলে সেটা নিয়ে ভাবতে যাবেন না। শুধু খারাপ দিকগুলোতে ফোকাস করুন। ব্ল্যাক হ্যাট চিন্তার সময়ে যে কোনও আইডিয়া বা প্রজেক্ট এর ঝুঁকিগুলো সামনে চলে আসবে।

#৫ গ্রিণ হ্যাট

গ্রিণ হ্যাট বা সবুজ টুপি সৃষ্টিশীলতা ও পরীক্ষামূলক চিন্তার চিহ্ন। যে কোনও সমস্যা বা বিষয় নিয়ে নতুন ধরনের সমাধান ও নতুন আইডিয়ার প্রয়োগ কিভাবে করা যায় – তা নিয়ে কাজ করে গ্রিণ হ্যাট মেথড। এই ধাপে আপনি যে কোনও বিষয় নিয়ে নতুন কিছু চিন্তা করার চেষ্টা করবেন। যা আগে করা হয়নি, বা যে বিষয় নিয়ে ভাবছেন – সেই বিষয়ে যেসব আইডিয়া আগে প্রয়োগ করা হয়নি – তা নিয়ে চিন্তা করবেন। ভাবনার বিষয়টি নিয়ে মনে মনে এক্সপেরিমেন্ট করার চেষ্টা করবেন।

ধরুন, হোয়াইট হ্যাট এর পরিসংখ্যান বলছে গত দুই বছর ধরে নীল এর সাথে কমলা রংএর কম্বিনেশনের পোশাক ১৮ থেকে ২৫ বছরের ক্রেতারা বেশি কিনছে। এখন ”গ্রিণ হ্যাট পরে“ চিন্তা করার সময়ে আপনি হয়তো নীলের সাথে বেগুণী কম্বিনেশন করলে কি হতে পারে – তা নিয়ে চিন্তা করতে পারেন।

এরকম আরও নতুন নতুন আইডিয়া মাথায় আনার উদ্দেশ্যেই এই ধাপে চিন্তা করবেন। আউট অব দ্য বক্স বা গতানুগতিক ধারণার বাইরে নতুন কিছু ভাবার চেষ্টা করবেন। এই ধাপ থেকে অনেক ইউনিক আইডিয়া বের হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

#৬ ব্লু হ্যাট:

ব্লু হ্যাট বা নীল টুপি হল শেষ ধাপ। এখানে অন্য সব পদ্ধতি থেকে পাওয়া ফলাফল বিশ্লেষণ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ডাটা কি বলছে, প্রজেক্ট বা আইডিয়ার ব্যাপারে বেশিরভাগের অনুভূতি কি, সম্ভাবনা ও ঝুঁকির মাত্রা কেমন – এর মধ্যে কোনটি বেশি, আইডিয়াতে নতুন কি যোগ করা যায় – এইসব বিষয় এক করে সিদ্ধান্ত নিতে হয় এই ধাপে। মানে সবগুলো মিলিয়ে একটি চিন্তা। আগের পদ্ধতি ঠিক ভাবে আলাদা আলাদা ভাবে চিন্তা করার ফলে প্রতিটি দিক নিয়ে একটি স্পষ্ট ধারণা হয়ে যাওয়ার কথা – যা ব্লু হ্যাট ধাপে এসে সিদ্ধান্ত নেয়াকে সহজ করবে। প্রয়োজনে আগের পদ্ধতি গুলোর ফলাফল ফাইল আকারে নিয়ে বসতে হবে।

সম্ভাবনার পাশাপাশি ঝুঁকি, ডাটা ও লজিকের পাশাপাশি সৃষ্টিশীল চিন্তা এবং অনুভূতি এক করে সিদ্ধান্ত নিতে পারলে – সেই কাজ সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

সিক্স হ্যাট থিংকিং আরও একটু স্পষ্ট করে বোঝার জন্য নিচের উদাহরণটি দেখুন:

একটি রিয়েল স্টেট বিল্ডার কোম্পানীর কথা ধরুন। তারা নতুন একটি অফিস বিল্ডিং তৈরী করার চিন্তা করছে। মার্কেটের অবস্থা ভালো, অর্থনীতি চাঙ্গা, নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে – এই অবস্থায় নতুন অফিস টাওয়ার বানালে লাভজনক হওয়ার কথা। তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া হিসেবে তারা সিক্স হ্যাট থিংকিং কে বেছে নিল।

প্রথমেই তারা হোয়াইট হ্যাট ধাপে চিন্তা করতে শুরু করল। তাদের হাতে যে ডাটা বা তথ্য আছে, সেগুলো এ্যানালাইসিস বা বিশ্লেষণ করা শুরু করল। তারা দেখতে পেল শহরের ফাঁকা অফিস স্পেস দিনে দিনে কমছে। তারা হিসাব করে বের করল, তাদের নতুন অফিস টাওয়ার এর কাজ শেষ হতে হতে শহরের অফিস স্পেসের অভাব আরও বেড়ে যাবে। এরসাথে তারা মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতির ডাটাও সংগ্রহ করল, এবং দেখল দিনে দিনে মানুষের নতুন অফিস নেয়ার আর্থিক ক্ষমতা ও প্রয়োজন বেড়ে যাবে। তাই তারা এই মেথড অনুযায়ী প্রজেক্ট চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল।

হোয়াইট হ্যাট এর পর তারা রেড হ্যাট পদ্ধতিতে চিন্তা করতে শুরু করল। নতুন বিল্ডিং এর ডিজাইন দেখে বেশিরভাগের মনে হল বিল্ডিংটা দেখতে ভালো হবে না, এবং এর ভেতরে ঢুকলে মানুষের মন খারাপ হবে।

এরপর তারা ইয়োলো হ্যাট, অর্থাৎ ভালো দিকগুলোতে মনোযোগ দিল। এখানে কয়েকটি পয়েন্ট আসলো:

– অর্থনীতি যদি এই অবস্থায় থাকে, বা আরও ভালো হয় – তবে তারা বিপুল লাভ করতে পারবে।

– অর্থনীতি ভালো থাকতে থাকতেই যদি বিল্ডিং এর কাজ শেষ হয় – তবে ভাড়া এবং ফ্ল্যাট বিক্রীর মাধ্যমে দীর্ঘ মেয়াদে অনেক টাকা আয় করতে পারবে।

– পর্যাপ্ত সংখ্যক ভাড়াটিয়া পেয়ে গেলে অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হলেও তারা টাকা আয় করতে পারবে। এবং এক সময়ে না এক সময়ে অবস্থা আবার ভালো হবে, তখন তারা বিক্রীর মাধ্যমেও লাভ করতে পারবে।

সব দিক বিবেচনা করে চিন্তা

এরপর তারা ব্ল্যাক হ্যাট পদ্ধতিতে চিন্তা করল। এবং প্রজেক্ট এর যাবতীয় খারাপ দিক গুলো নিয়ে মাথা ঘামাল। তারা কয়েকটি পয়েন্ট খুঁজে বের করল:

– বর্তমানে যে অর্থনৈতিক ভালো অবস্থা চলছে, তা হয়তো সামনে না-ও থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে এটা লস প্রজেক্ট হয়ে যেতে পারে।

– তারা যত ভাড়াটিয়া আশা করছে, তত ভাড়াটিয়া নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে না-ও আসতে পারে। তাহলে তাদের বিনিয়োগ উঠে আসতে এবং লাভ করতে সমস্যা হবে।

– যে ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়েছে, সেই ডিজাইন কি আসলেই এতটা ভালো? না হলে ক্রেতাদের কাছে এটা আকর্ষণীয় হবে না।

গ্রিণ হ্যাট, অর্থাৎ সৃষ্টিশীল দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাপারটি বিচার করতে গিয়ে তারা নতুন কয়েকটি আইডিয়া পেলেন। যেমন, যদি ঝুঁকি বেশি হয়, তবে তাঁরা পরবর্তী অর্থনৈতিক মন্দার জন্য অপেক্ষা করতে পারেন, এবং সেই সময়ে নতুন বিল্ডিং কিনতে পারেন, যা পরে বেশি দামে বিক্রী করতে পারবেন। এছাড়া বিল্ডিং এর ডিজাইন পরিবর্তন, এখন যে ধরনের প্রতিষ্ঠান বেশি গড়ে উঠছে – সেই ধরনের প্রতিষ্ঠানের উপযোগী অফিস বানানো – এমন বেশ কয়েকটি বিকল্প তারা খুঁজে পেলেন।

সব শেষে ব্লু হ্যাট পদ্ধতিতে তাঁরা বাকি সব সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করতে বসলেন। আগের চিন্তা গুলো থেকে যেসব প্রশ্ন বের হয়ে এসেছে, আরও ভালো করে সেগুলোর উত্তর খুঁজলেন। যেমন, বের করার চেষ্টা করলেন – ঠিক কবে পরবর্তী অর্থনৈতিক মন্দা আসতে পারে। এবং দেখা গেল, বিল্ডিং বানানো শেষ করে আরও বেশকিছুদিন পর এটা হওয়ার সম্ভাবনা। ততদিনে তাঁদের পুঁজি উঠে যাবে। এরপর বাকি সবটাই লাভ। তাই তাঁরা বিল্ডিং বানানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞ মতামত নিয়ে বুঝলেন, আগের ডিজাইনে আসলেই কিছু সমস্যা আছে – তাই তাঁরা ডিজাইন পরিবর্তন করার সিদ্ধান্তও নিলেন। এইভাবে, সব দিক বিবেচনা করে তাঁরা একটি কার্যকর ও সম্ভাবনাময় সিদ্ধান্তে আসতে পারলেন।

পরিশিষ্ট:

বোনোর সিক্স হ্যাট থিংকিং একটি শক্তিশালী টেকনিক। পৃথিবীর বহু প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি এটা ফলো করেন। ভার্জিন গ্রুপের উদ্যোক্তা ও বিখ্যাত বিলিওনেয়ার স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন পর্যন্ত এই বইয়ের প্রশংসা করেছেন (লেখার প্রথম দিকে বইয়ের প্রচ্ছদ দেখুন, যদিও ভাষাটি ফ্রেঞ্চ)।  শুধুমাত্র একটি দৃষ্টিভঙ্গীর ওপর নির্ভর না করে, এটি একজন মানুষ বা একটি টিমকে যে কোনও বিষয় সম্ভাব্য সব মৌলিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করার দক্ষতা দান করে।

আমরা আশা করব, এই টেকনিক আপনাকেও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। তাহলেই আমাদের প্রচেষ্টা সফল হবে।

লেখাটির বিষয়ে আপনার যে কোনও মতামত আমাদের কমেন্ট করে জানান। আপনার প্রতিটি মতামতই আমাদের কাছে মহামূল্যবান। 

আর যদি মনে হয় লেখাটি অন্যদেরও উপকার করবে – তবে শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন। 

আমরা আমাদের পাঠকদের কাছ থেকেও অনুপ্রেরণামূলক লেখা আশা করছি।  এই ধরনের লেখা যদি আপনিও লিখতে পারেন তবে write@test.edaning.com – এ ইমেইল করতে পারেন।  আপনার লেখা যত্ন সহকারে আপনার নাম সহ আমরা প্রকাশ করব। 

নিয়মিত অনুপ্রেরণামূলক ও আত্ম উন্নয়ন মূলক লেখা পাওয়ার জন্য আমাদের সাথে থাকুন।  সাফল্যের পথে লড়াকু সব সময়ে আপনার সাথে আছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন !

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *