সফল হওয়ার পথ খুলতে প্রথমেই এই ৩টি মানসিক ফাঁদ থেকে মুক্ত হোন – (টনি রবিন্স এর পরামর্শ)


বর্তমান বিশ্বের সেরা ও সফলতম ৫জন Business Strategist এবং পারফরর্মেন্স এ্যান্ড লিডারশিপ কোচের কথা বলতে গেলে টনি রবিন্স এর নাম আসবেই।

তিনি একাধারে লেখক, বিজনেস এক্সপার্ট এবং লিডারশিপ কনসালটেন্ট। বিল ক্লিনটনের আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পেছনে তাঁর কৌশলকে যথেষ্ঠ ক্রেডিট দেয়া হয়।

ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকায় অর্থ ও ক্ষমতা মিলিয়ে পৃথিবীর টপ ১০০ মানুষের মধ্যে তিনি ৬২ তম। বর্তমানে তাঁর মোট সম্পদের পরিমান প্রায় ৫০০ মিলিয়ন বা অর্ধ বিলিয়ন ডলার!

বিশ্বের প্রায় সবগুলো প্রথম সারির কোম্পানী পরামর্শের জন্য তাঁর কাছে ছোটে। বাজারে তাঁর ব্যবসায়িক ও সেলফ ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কিত বইয়ের চাহিদা কোটি কোটি কপি।

– এমন একজন পরামর্শকের পরামর্শ যদি আমরা ফ্রি-তে পাই – তাহলে অবশ্যই সেটা সৌভাগ্যের ব্যাপার।

হ্যাঁ – আমরা সেটা পেয়েছি, এবং এখন আপনিও পাবেন।

ওয়ারেন বাফেট এর মালিকানাধীন CNBC নেটওয়ার্ক কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি ৩টি মানসিক ফাঁদ এর কথা বলেছেন, যেগুলো থেকে বের হতে না পারলে সাফল্য বা লক্ষ্য পূরনের পথে পা বাড়ানো যায় না।

চলুন দেখি, তিনি কি বলেন:

 সিএনবিসি কে টনি বলেন, মানুষ যা ভাবে, তার মন তারচেয়েও শক্তিশালী। মাইন্ডসেট ঠিক থাকলে, আপনার লক্ষ্য ৮০% পূরণ হয়ে গেছে।

সত্যি কথা বলতে, যে কোনও সাফল্যের ৮০% নির্ভর করে সেই মানুষটির মানসিকতার ওপর এবং ২০% নির্ভর করে কাজের ওপর।

আপনি যদি কোনও বিষয়ে নিজের পুরো মন প্রাণ উৎসর্গ করতে না পারেন – তবে সেই বিষয়ে কখনওই সর্বোচ্চ সাফল্য পাবেন না।

টনি বলেন,

“সাফল্যের জন্য আমাদের প্রধানত যা করতে হবে, তা হল যে কোনও উপায়ে চেষ্টা করে যাওয়া। যা-ই ঘটুক না কেন, লক্ষ্য থেকে ফোকাস না সরানো। বেশিরভাগ মানুষ সেভাবে চেষ্টা করতে পারেনা, কারণ, তারা মানসিক ভাবে পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। – মানসিকতা কিভাবে পরিবর্তন করবেন? – বুদ্ধিমানের মত চিন্তা করে!”

বুদ্ধিমানেরা সাধারণ মানুষের চেয়ে বেশি পরিমানে নিজের ভুল ধরতে পারে।  নিজের কাজের ভুল ধরার পাশাপাশি তারা নিজেদের চিন্তার ভুলও ধরতে পারে।

রবিন্স তাঁর বেস্ট সেলিং বই, “Unshakeable” – এ বলেন, তাঁর ক্লায়েন্টদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে ৩টি সমস্যা দেখা যায় – সেগুলো মূলত ৩টি মানসিক বাধা। যেগুলো তাদের সামনে এগুতে বাধা দেয়।

এই ৩টি বাধা কি, এবং এগুলো থেকে বের হতে হলে কি করতে হবে – তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা তিনি দিয়েছেন – যেগুলো আপনার জন্য নিচে দেয়া হল:

#১ নিজের চিন্তার বাইরে না যাওয়া

জীবনের প্রতিটি বিষয় নিয়েই প্রতিটি মানুষের নিজস্ব চিন্তা আছে। এটা থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু কিছু মানুষ আছে যারা নিজের চিন্তার মাঝে বন্দী হয়ে থাকে।

নিজের চিন্তা ও মতের বাইরে কিছু শুনলে বা দেখলে – সেখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। শুধু তারা যেটা জানে, বা মানে – সেটার সাথে মিললেই তারা সেই বিষয় নিয়ে কথা বলে এবং কাজ করে।

এটা মানুষকে সামনে এগুতে বাধা দেয়। নতুন কিছু শিখতে বাধা দেয়। এবং, নতুন কিছু করতে বাধা দেয়। এই ধরনের মানুষ চ্যালেঞ্জ দেখলে পিছিয়ে যায়।

রবিন্স বলেন – এই মানসিক ফাঁদে আটকে থাকলে, জীবনেও একটা লেভেলে আসার পর থেমে থাকতে হবে। লক্ষ্য বড় হলেও – নতুন নতুন বিষয় নিয়ে কাজ না করার স্বভাব তাকে সামনে এগুতে দেবে না।

এই ফাঁদ থেকে বেরুতে হলে একই বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের মতামত পোষণ করেন – এমন মানুষদের সাথে মিশতে হবে। এবং নিজের ভালো না লাগলেও আলোচনায় অংশ নিতে হবে। সোজা কথায়, নিজের কমফোর্ট জোন থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

#২ ট্রেন্ড কে অতিরিক্ত ফলো করা

কিছু মানুষ আছেন যারা বর্তমান ট্রেন্ডকে অন্ধের মত ফলো করেন। চুলের কাটিং থেকে শুরু করে খাবারের আইটেম পর্যন্ত অন্যদের অনুকরণে করেন।

এই মানসিক ফাঁদে আটকে থাকলে, কখনওই নতুন কিছু নিয়ে কাজ করা সম্ভব নয়।

অন্যরা যা করছে, তাই করে গেলে একজন মানুষ কখনওই তার নিজের লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে না।

কারও যদি লক্ষ্য থাকে পদার্থ বিজ্ঞানী হওয়া, কিন্তু অন্য সবাই বিসিএস দিয়ে প্রশাসনে ঢুকছে বলে – সেও তাদের পেছন পেছন বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দেয় – তবে তার পক্ষে কি পদার্থ বিজ্ঞানী হওয়া সম্ভব?

১৯৭০ দশকের সেলফ ডেভেলপমেন্ট গুরু, আর্ল নাইটেঙ্গেল বলেছিলেন,

“আমাদের সমাজে সাহসের বিপরীত শব্দ কাপুরুষতা না বলে, অনুকরণ প্রিয়তা বলা উচিৎ। মানুষ কিছু না ভেবেই অন্যদের মত আচরণ করছে – এরা দিন শেষে ব্যর্থই হবে”

সফল হওয়ার সর্ব প্রথম ধাপগুলোর একটি হল, নিজের লক্ষ্যকে শ্রদ্ধা করা। অন্যরা কি করছে – সেদিকে না তাকিয়ে নিজের কাজে মন দেয়া।

টনি রবিন্স বলেন: “আপনার লক্ষ্য পূরণ করতে হলে আপনাকে কি কি করতে হবে, তার একটা লিস্ট করুন। তারপর সেই লিস্ট ধরে কাজ করে যান। দুনিয়ার সবাই গোল্লায় যাক – যা ইচ্ছা তাই করুক – আপনি এই লিস্ট থেকে এক পা-ও বাইরে যাবেন না”

#৩ অতীত ব্যর্থতার কারণে সামনে এগুতে ভয় পাওয়া

১০০ জন মানুষ যদি লক্ষ্য পূরণের কাজ  করতে ভয় পায় – তার মধ্যে ৮০ জনের ভয়ের কারণই হল অতীত ব্যর্থতা

অতীত ব্যর্থতার বেদনাদায়ক স্মৃতি বর্তমানে কিছু শুরু করতে বাধা দেয়। – জীবনে এগিয়ে যাওয়ার পথে এটা বিরাট একটা মানসিক বাধা।

তবে, টনি রবিন্সের মতে এই ফাঁদ থেকে বের হওয়া সম্ভব।

আপনার বর্তমান লক্ষ্যটিকে অতি ছোট ছোট লক্ষ্যে ভাগ করুন। প্রতি দিনের বা প্রতি ঘন্টার জন্য লক্ষ্য ঠিক করুন। – সেইসাথে কোনও সমস্যা হলে কিভাবে সমাধান করবেন – সেটাও আগে থেকে প্লান করে রাখুন।

ছোট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করার সময়ে মূল বড় লক্ষ্যের কথা মাথায় আনার দরকার নেই। – অবশ্য যদি যথেষ্ঠ ছোট করে ভাগ করতে – তবে বড় লক্ষ্যের কথা মাথায় আসার কথাও নয়।

ধরুন, আপনি দশ তলা সিঁড়ি বেয়ে উঠবেন। একবারে দশ তলার দিকে তাকালে ভয় করতেই পারে। কিন্তু এক একটি সিঁড়িকে যদি এক একটি লক্ষ্য বানিয়ে ফেলেন – এবং একটি সিঁড়িতে ওঠার সময়ে শুধু সেটাতেই ফোকাস করেন – তবে নিশ্চই অতটা ভয় লাগবে না।

এক একটি ছোট ছোট লক্ষ্য পূরণ করার সাথে সাথে আপনার মাঝে নতুন করে আত্মবিশ্বাস জন্মাবে এবং আপনি পরবর্তী ছোট লক্ষ্য পূরণের জন্য কাজ করতে পারবেন। – এভাবে ছোট লক্ষ্যগুলো পূরণ করতে করতে কখন যে মূল বড় লক্ষ্যটি পূরণ হয়ে যাবে – আপনি হয়তো বুঝতেও পারবেন না।

পরিশিষ্ট:

খুব সাধারণ কিছু মানসিক বাধা আমাদের বড় অর্জন থেকে দূরে রাখে। আর আমাদের মন যে কতটা শক্তিশালী – সেটাও আমরা অনেক সময়ে বুঝতে পারি না।

মন শতভাগ নিবেদিত ও আত্মবিশ্বাসী থাকলে এমনিতেই মানুষ পূর্ণ শক্তিতে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। তাই, আপনার লক্ষ্য যেটাই হোক না কেন – লক্ষ্যের দিকে পুরোপুরি ফোকাস করুন। অন্য সবকিছু ভুলে যান। যদি কোনও কারণে তা না পারেন – তবে ভেবে দেখুন রবিন্স সাহেবের বলা কোনও মানসিক ফাঁদে আটকে আছেন কিনা।

পূর্ণ মাত্রায় লক্ষ্য পূরনের জন্য কাজ শুরু করার পথে যদি এই লেখাটি আপনাকে একটুও সাহায্য করে – তবেই আমাদের চেষ্টা সফল হবে।

লেখাটির বিষয়ে আপনার যে কোনও মতামত আমাদের কমেন্ট করে জানান। আপনার প্রতিটি মতামতই আমাদের কাছে অমূল্য।

আর যদি মনে হয় এই লেখাটি পড়ে অন্যরাও উপকৃত হবেন – তবে শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন।

এই ধরনের আরও লেখার জন্য নিয়মিত আমাদের সাথে থাকুন। সাফল্যের পথে লড়াকু সব সময়ে আপনার সাথে আছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন !