সকাল ৮টার আগে এই ৬টি কাজ করলে আপনার জীবনই বদলে যাবে: “দি মিরাকেল মর্নিং” বুক রিভিউ


২০ বছর বয়সের এক সফল যুবক হ্যাল। এত কম বয়সেই সে তার কোম্পানীর সেরা সেলস ম্যান হয়ে গিয়েছিল। এমনকি তার সিনিয়দেরও সে প্রশিক্ষণ দিতো। সেই বয়সেই নিজের গাড়ি কিনে ফেলেছিল। সেই গাড়িতে করে একদিন বাড়ি ফেরার সময়ে ভয়াবহ এক এ্যাকসিডেন্ট ঘটে।

এক মাতাল লোকের বেপরোয়া গাড়ি হ্যালের গাড়িকে ভয়ঙ্কর ভাবে ধাক্কা দেয়। দুর্ঘটনার ফলে হ্যালের হাত এবং পা ভেঙে যায়। তার ফুসফুসে ছিদ্র হয়, এবং সারা শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। ৬ মিনিটের জন্য তার শরীর প্রাণহীন হয়ে গিয়েছিল। মানে, শ্বাস-প্রশ্বাস, হার্ট এবং পাল্‌স চলছিল না। সরকারি প্যারামেডিকরা অনেক চেষ্টা করে আবার তার হার্ট ও শ্বাস চালু করে তাকে হসপিটালে নিয়ে যায়।

হসপিটালে ৬ দিন কোমায় থাকার পর হ্যালের জ্ঞান ফেরে। এবং সে আবিষ্কার করে যে সে পুরোপুরি প্যারালাইজড হয়ে গেছে। ডাক্তাররা তাকে বলেন যে সে আর কোনওদিন হাঁটতে পারবে না, কারণ এ্যাক্সিডেন্টের শক এর কারণে তার মস্তিষ্ক তার শরীরে সিগন্যাল পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে।

এই কথা শুনে হ্যাল খুবই হতাশ হয়ে পড়ল। কিন্তু তারপরই তার এক শিক্ষকের বলা কথা তার মনে পড়ল। শিক্ষক বলেছিলেন, “যে খারাপ ঘটনা বা পরিস্থিতি বদলানোর ক্ষমতা তোমার নেই – তা নিয়ে মন খারাপ করতে পারো। কিন্তু সেটা মাত্র ৫ মিনিটের জন্য।” সেই শিক্ষক আরও বলেছিলেন, যত খারাপ কিছুই ঘটুক না কেন, ৫ মিনিটের বেশি সেটার রিএ্যাকশন দেখানো যাবে না। ঘড়ি ধরে ৫ মিনিট কান্না করো, অথবা রাগে চি‌ৎকার করো, পারলে জিনিসপত্র ভাঙো – কিন্তু ৫ মিনিট হয়ে গেলে সামনে চলা শুরু করো। সমস্যার ইতিবাচক সমাধান চিন্তা করা শুরু করো। ৫ মিনিটের বেশি কোনও জিনিস নিয়ে রিএ্যাকশন দেখালে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। কোনও খারাপ বিষয় নিয়ে ৫ মিনিটের বেশি নেগেটিভ থাকা মানে বোকামী করা।

শিক্ষকের পরামর্শ মনে করে হ্যাল ঠিক করল যে, যা হওয়ার হয়েছে – এখন এই অবস্থাতেই সে সুখী হওয়ার চেষ্টা করবে। যদি ডাক্তারদের কথামত সে কোনওদিন চলতে না পারে, তবে হুইলচেয়ারে বসা পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ হয়ে দেখাবে সে। আর এর মাঝে সে আবার চলার জন্য নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করে যাবে।

এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পর, সে নিজের অবস্থা নিয়ে কোনওরকম নেগেটিভ চিন্তা করা বাদ দিয়ে দিল। ওই অবস্থাতেই সে সব সময়ে হাসিখুশি থাকতে শুরু করল। সবার সাথে মজা করা শুরু করল।

হ্যাল এতই প্রফুল্ল হয়ে উঠল যে, ডাক্তাররা মনে করতে লাগলেন, প্রচন্ড্র দু:খে হ্যালের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কিন্তু আসল ব্যাপার ছিল সম্পূর্ণ অন্যরকম।

এই পজিটিভ আচরণের কারণে হ্যালের শারীরিক অবস্থা খুবই তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যেতে লাগলো। ডাক্তাররাও তার এই দ্রুত সেরে ওঠা দেখে অবাক হয়ে গেলেন। এবং মাত্র ৩ সপ্তাহের মধ্যেই বড় বড় ডাক্তারের ভবিষ্য‌ৎবানীকে ভুল প্রমাণিত করে হ্যাল উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটতে শুরু করলেন! আর মাত্র অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সে তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেল। এবং আগের চেয়েও তার আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেল।

চাকরিতে ফিরে সে বিক্রীর বেশ কয়েকটি রেকর্ড গড়ে ফেলল। অল্প দিনে অনেক টাকা জমে যাওয়ায় সে নিজেই নিজের ব্যবসা দাঁড় করালো; সেইসাথে বিয়েটাও সেরে ফেলল।

কিন্তু কথায় বলে, “এক মাঘে শীত যায় না”। ২০০৭ সালে শুরু হল অর্থনৈতিক মন্দা, হ্যালের ব্যবসা প্রায় শেষ হয়ে গেল। অবস্থা এতই খারাপ হয়ে গেল যে তাকে নিজের বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিল।

হ্যাল নিজেই স্বীকার করেছিল যে, তার জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময় ছিল এটি। এমনকি এ্যাকসিডেন্টের চেয়েও এই সময়ে অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। সে কোনও আশাই দেখতে পাচ্ছিল না।

প্রতিদিনই সে গরিব থেকে আরও গরিব হতে শুরু করল। সে এই বিপদ থেকে উদ্ধারের কোনও রাস্তাই দেখতে পাচ্ছিল না।
এমন অবস্থায় হ্যালের স্ত্রী তার এক মিলিওনেয়ার বন্ধুর কাছে গিয়ে পরামর্শ নিতে বলল। আর কোনও উপায় না দেখে হ্যাল সেই বন্ধুর কাছে গেল ব্যবসায়িক বুদ্ধির জন্য। তার সব কথা মন দিয়ে শোনার পর কোনও বিজনেস সলিউশন দেয়ার বদলে বন্ধুটি তাকে দু’টি পরামর্শ দিল। ০১. প্রতিদিন সকালে উঠে বেশ কিছুক্ষণ এক্সারসাইজ করা; ০২. এক্সারসাইজ করা শেষ করে ভালো কোনও সেলফ ইমপ্রুভমেন্ট বা আত্মউন্নয়নের বই থেকে কিছুটা পড়া।

এই পরামর্শ শুনে হ্যালের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। সে বন্ধুকে কোনওরকমে ধন্যবাদ দিয়ে বাড়ি ফিরল। যেহেতু তার আর কিছু করার ছিল না, সে জেদের বশে বন্ধুর কথামত সকালে উঠে এক্সারসাইজ এবং বই পড়া শুরু করলো।

কিছুদিন বন্ধুর পরামর্শ মত দু’টি কাজ করার ফলে দেখা গেল, হ্যালের কাজকর্ম ও পরিস্থিতি অনেকটাই ভালো হয়ে উঠছে। দিনের শুরুটা পজিটিভ ভাবে করার কারণে সারাদিনে যতই চাপ আসুক – সে মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করতে পারছে। ধীরে ধীরে তার খারাপ অবস্থা কেটে যেতে শুরু করলো।

এই পর্যায়ে হ্যাল চিন্তা করলো, এই ২টি কাজ ছাড়াও আর কি কি কাজ সফল মানুষেরা সকাল বেলা করেন – তা সে খুঁজে বের করবে এবং সেগুলোও প্রাকটিস করবে।

এরপর সে বেশ কিছুদিন ধরে পৃথিবীর বড় বড় সফল মানুষদের গবেষণা শুরু করলো। তাঁরা সকালে উঠে কী করেন? এই প্রশ্ন সব সময়েই তার মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। এবং অনেক গবেষণার পর সে মোট ৬টি বিষয় খুঁজে পেল যা প্রতিদিন সকালে করলে একজন চরম ব্যর্থ ও হতাশ মানুষও একটি সফল দিন কাটাতে পারবেন।

এই ৬টি কাজ হ্যাল প্রতিদিন সকালে করা শুরু করল। যখন সে এটি করা শুরু করল, তখন সে ৫০ হাজার ডলার ঋণে ছিল। কিন্তু প্রতি সকালে এই কাজগুলো শুরু করার ২ মাসের ভেতরে হ্যাল তার মাসিক আয় দুই গুণ করে ফেলল, সব ঋণ শোধ করে আবার দারুন একটি অবস্থায় ফিরে আসলো। এবং এর কৃতিত্বের অনেকটাই সে তার আবিষ্কার করা সকালের রুটিনকে দেয়।
হ্যাল আজ সারা বিশ্বে হ্যাল ইলরোড নামে পরিচিত। যার বেস্ট সেলার বই “মিরাকেল মর্নিং” বিশ্বের হাজার হাজার মানুষের জীবন বদলে দিয়েছে।

এতকিছুর পর আরেকটা কথা বলি, আর্থিক অবস্থা ভালো হওয়ার পর হ্যাল এর ক্যান্সার ধরা পড়েছিল। সেই এ্যাক্সিডেন্টের প্রভাবেই ক্যান্সার ধরা পড়ে।  কিন্তু তিনি তাঁর মর্নিং রুটিন বদলাননি।  এবং পরে তিনি ক্যান্সারকেও জয় করেছেন!

আপনি যতই বাজে অবস্থায় থাকুন না কেন, সকালটা যদি একটি পজিটিভ মনোভাব ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে শুরু করতে পারেন – তবে আপনার দিনটাও অনেক বেশি প্রোডাক্টিভ হবে। আর হ্যাল ইলরোড এর আবিষ্কার করা ৬টি সকালের অভ্যাস কিছুদিন প্রাকটিস করলেই দেখবেন আপনার দিনগুলো বদলাতে শুরু করেছে।

তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক, মিরাকেল মর্নিং বইয়ে দেয়া ৬টি সকালের অভ্যাস:

০১. প্রার্থণা অথবা ধ্যান

বর্তমান যুগে সকালে ওঠার সাথেসাথেই দুনিয়ার সব বিষয় নিয়ে আমাদের মাথায় চিন্তা শুরু হয়ে যায়। আর সকালে উঠে পেপার পড়ে, বা ফেসবুক চেক করে অদরকারী সব তথ্য আর মন খারাপ করা সংবাদ আমরা ইচ্ছা করে মাথায় ঢোকাই। এতে করে দিনের শুরুটাই হয় নেগেটিভ চিন্তা দিয়ে – যা সারাদিন মাথার ভেতরে থাকে। আপনি হয়তো ভাবছেন যে সকালে দেখার পর সারাদিনে তো এসব মনে পড়ে না – কিন্তু সেই নেগেটিভ অনুভূতিটা আপনার ভেতরে থেকেই যায়।

সফল মানুষরা সকালে উঠেই সাইলেন্ট মুডে চলে যান। কেউ প্রার্থণা করেন, কেউ ধ্যান করেন। ধ্যান বা প্রার্থণার ফলে দিনের শুরুটা হয় ঠান্ডা মাথায় এবং একটি পজিটিভ মনোভাব নিয়ে।

আগে ধারণা করা হতো যে, মেডিটেশন বা ধ্যান শুধুই একটি আধ্যাত্মিক বা spiritual বিষয়। কিন্তু আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, আধ্যাত্মিকতার বাইরেও যদি কেউ মেডিটেশন করে, তবে তার চিন্তাভাবনা, সিদ্ধান্ত ও আচরণ অন্যদের চেয়ে বেশি সঠিক হয়; সেইসাথে সে যে কোনও ব্যাপারে নিজেকে বেশি কন্ট্রোল করতে পারে।

আজকের পৃথিবীর প্রায় সব বড় বড় সিইও তাঁদের ঠান্ডা মাথা আর চতুরতার জন্য মেডিটেশনকেই ক্রেডিট দিয়ে থাকেন। স্টিভ জবস তো রীতিমত ভারতে গিয়ে মেডিটেশন শিখেছিলেন।

খুব সকালে উঠে ফজরের নামাজ পড়লে, বা প্রার্থণা করলে আপনার দিনটা অনেক বেশি ভালো যাবে। লেখক বলেন ধ্যান প্রার্থণার সময়ে চোখ বন্ধ করে নিজের জীবন, শরীর, আজকের দিনে সকাল দেখতে পারা – ইত্যাদির জন্য স্রষ্টার কাছে কৃতজ্ঞতা জানালে মনের ভেতরে দারুন একটা পজিটিভ অনুভূতি সৃষ্টি হয়, যা সারাদিন আপনাকে পজিটিভ আর আত্মবিশ্বাসী থাকতে সাহায্য করে।

০২. নিজেকে বার বার ভালো কথা বলা

লেখক এটার নাম দিয়েছেন “Affirmation” – এটি মূলত একটি নিয়মিত পজিটিভ ঘোষণা যা আপনি প্রতিদিন কিছুক্ষণের জন্য বার বার বলবেন। পৃথিবীর বহু সফল মানুষ নিয়মিত সকালবেলা এই কাজটি করেন।

ধরুন আপনি ঠিক করেছেন ১ বছরের মধ্যে আপনি মাসে ১ লক্ষ টাকা আয় করবেন। এখন যদি প্রতিদিন সকালে উঠে মেডিটেশন বা প্রার্থণা করার পর কয়েক মিনিটের জন্য বার বার বলতে থাকেন, “আমি আগামী এক বছরের মধ্যে মাসে ১ লক্ষ টাকা আয় করবো” – তাহলে এটা আপনার অবচেতন মনে স্থায়ী হয়ে যাবে। এবং আপনি নিজে থেকেই এই লক্ষ্য পূরণে যা করা দরকার তাই করতে শুরু করবেন। সেইসাথে লক্ষ্য যত বড়ই হোক, বার বার নিজেকে এই কথা শোনাতে শোনাতে তাকে সহজ মনে হওয়া শুরু হবে।

আবার যদি আপনার আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকে, তবে প্রতিদিন সকালে উঠে যদি নিজেকে ৫০-১০০ বার বলেন, “আমি একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষ” – তাহলে দেখবেন কিছুদিনের মধ্যেই আপনার মাঝে দারুন আত্মবিশ্বাস এসে গেছে।

০৩. মনছবি বা কল্পনা

যদি কোনও মানুষকে নিশ্চিত ভাবে বিশ্বাস করানো যায় যে সে আগামী এক বছরের মধ্যে রাজা হবে, তবে আজকের থেকেই তার আচার ব্যবহার রাজার মত হয়ে যাবে। এবং সত্যিকথা বলতে এই আচার ব্যবহারই তাকে রাজা বানাবে।

একজন মানুষ যদি প্রতিদিন একটি কথা বলার সাথে সাথে তাকে কল্পনায় দেখে – তবে কিছুদিনের মধ্যে সে নিজেই তা বিশ্বাস করতে শুরু করবে। লক্ষ্য যত কঠিনই হোক, যদি বার বার একজন মানুষ সেই লক্ষ্য সফল হওয়ার কথা নিজেকে বলে, আর কল্পনা করে যে সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে – তবে খুব তাড়াতাড়িই সেই লক্ষ্য সহজ মনে হওয়া শুরু হবে, এবং সে সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য কাজ করা শুরু করবে।

লেখক হ্যাল ইলরোড যখন তাঁর জীবনের সবচেয়ে বাজে অবস্থায় ছিলেন, তখন সুন্দর ভবিষ্যতের কথা বার বার বলা আর তাকে কল্পনার চোখে দেখা তাঁকে আত্মবিশ্বাস ধরে রেখে কাজ করতে উ‌ৎসাহ দিয়েছে।

নিজের ইচ্ছেমত লক্ষ্য পূরণ হওয়ার একটি মনছবি তৈরী করে তাকে প্রতিদিন সকালে কল্পনা করলে একটা সময়ে গিয়ে আপনার অবচেতন মন তাকে বাস্তব ভাবা শুরু করবে। আপনি নিজে থেকেই সেই লক্ষ্যকে বাস্তব করার জন্য যা প্রয়োজন – তার সবই করবেন।

মনোবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে মেন্টাল মডেলিং। যে কোনও বিপদে মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করার জন্যও এই টেকনিক ব্যবহার করা হয়।

বিশ্বাস আর পরিশ্রম যে কোনও লক্ষ্যকে পূরণ করতে পারে।

০৪. ব্যায়াম

এই ব্যাপারে সবারই মোটামুটি ধারণা আছে। সকাল বেলা এক্সারসাইজ করলে মন ও শরীর -দুটোই ভালো থাকে। সকালে মাত্র কিছুক্ষণ ব্যায়াম করলে সারা দিনের জন্য এনার্জি লেভেল হাই হয়ে যায়।

লেখক বলেন – প্রতিদিন সকালে যদি মাত্র ১ মিনিটের জন্যও কেউ শুধু জায়গায় দাঁড়িয়ে লাফায়, তাহলেও সাধারণ দিনের চেয়ে তার এনার্জি বেশি থাকবে। কারণ, সকাল বেলা এক্সারসাইজ করার ফলে আপনার হার্ট শরীর ও মস্তিষ্কে বেশি পরিমানে রক্তের যোগান দেবে, যা আপনাকে একটি ফ্রেশ স্টার্ট এনে দেবে। হ্যাল লিখেছেন যে, প্রতি সকালে মাত্র ১ মিনিট টানা লাফালে আপনার মস্তিষ্ক ও শরীর সাধারণের চেয়ে ১০ গুণ পারফেকশনের সাথে কাজ করবে।

০৫. পড়া

সকাল বেলা নিউজপেপার বা মানুষের ফেসবুক স্ট্যাটাস পড়ার চেয়ে যদি সকালে অনুপ্রেরণামূলক কিছু পড়া যায় – তাহলে দিনটা অনেক বেশি ভালো যায়।

লেখক বলেন, সবচেয়ে ভালো হয় সেলফ ডেভেলপমেন্ট টাইপের বই পড়লে। এসব বইতে সব সময়েই ভালো ভালো কথা লেখা থাকে, যা আসলেই বাস্তব জীবনে কাজে লাগে। ডেল কার্নেগীর “হাউ টু উইন ফ্রেন্ডস” বা রবার্ট কিওসাকির “রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড” – এই ধরনের বইগুলো আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর পাশাপাশি অনেক কার্যকর কৌশল শিখিয়ে থাকে।

এছাড়াও ধর্মগ্রন্থ বা মোটিভেশনাল উক্তি যেমন, ধৈর্য নিয়ে উক্তি,  অথবা হার না মানা উক্তি – এসব পড়তে পারেন। সেইসাথে মোটিভেশনাল অডিও শুনতে পারেন। এগুলো দিনের শুরুতে আপনাকে দারুন পজিটিভ মনোভাব এনে দেবে।

৬. লেখা

হ্যাল এখানে সবাইকে লেখক হতে বলেননি। তিনি শুধু বলেছেন কাগজ কলম নিয়ে নিজের উদ্দেশ্যে অল্প করে হলেও কিছু ভালো কথা লিখতে। এগুলো হতে পারে আপনার ভবিষ্য‌ৎ নিয়ে স্বপ্নের কথা, বা আজকের দিনে কি করবেন সেই পরিকল্পনা; অথবা মেডিটেশন বা বই থেকে আজকের উপলব্ধির কথাও লিখতে পারেন।

লেখক বলেন, সকালের এই লেখাটি কম্পিউটার বা ফোনে লেখার চেয়ে কাগজ-কলমে লেখার চেষ্টা করবেন। কাগজ-কলমের লেখায় অনেক বেশি যত্ন থাকে, আর চিন্তা ভাবনাও অনেক ক্লিয়ার হয়।

দিনের শুরুতে নিজের উদ্দেশ্যে ভালো কিছু লিখলে সারাদিন সেই কথাগুলো বার বার আপনার মনে পড়বে – এবং আপনি সব অবস্থাতেই অনেক ভালো বোধ করবেন।

৩০ দিনের চ্যালেঞ্জ:

যে কোনও নতুন অভ্যাস করতে গেলেই চর্চা করতে হয়। বিশেষ করে কোনও ভালো অভ্যাস করতে গেলে অল্প কিছুদিন চর্চা করার পরই একঘেয়ে বা বোরিং লাগা শুরু হয়। মিরাকেল মর্নিং এর ৬টি কাজ নিয়মিত করার অভ্যাস করার জন্য লেখক ৩০ দিনের একটি চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন।

৩০ দিন টানা যদি এই কাজগুলি প্রতিদিন সকালে করতে পারেন – তবে এরপর থেকে সকালে ওঠার সাথে সাথেই আপনি এই কাজ শুরু করে দেবেন। কিন্তু এই প্রথম ৩০ দিন যেভাবেই হোক, প্রতিদিন আপনাকে এই কাজগুলো করতে হবে। প্রতিটি কাজের জন্য যদি ১ মিনিটও দেন – তবুও করতে হবে। এই অভ্যাসটি রপ্ত হতে সাধারণত ২১ দিন লাগে – তবুও লেখক চ্যালেঞ্জটি ৩০ দিনের জন্য করেছেন।

তিনি পরামর্শ দেন, সবচেয়ে ভালো হয় যদি এই কাজে একজন পার্টনার রাখা যায়। এটা হতে পারে আপনার কাছের কোনও বন্ধু/ স্বামী বা স্ত্রী/ ভাই বা বোন – যে কেউ। দুইজন মিলে প্রাকটিস করলে মিস হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

একটি জরুরী কথা লেখক বলেন যে, প্রথমটায় দেরি হলেও, চেষ্টা করতে হবে এই কাজগুলো সকাল ৮টার আগে শেষ করার।

আপনার সুবিধার জন্য আমরা মিরাকেল মর্নিং রুটিনটিকে ইনফোগ্রাফিক আকারে সাজিয়েছি (নিচের ছবি)। ছবিটি ডাউনলোড করে নিজের কাছে রাখতে পারেন, যাতে চাইলেই এক নজরে পুরো রুটিন দেখে নিতে পারেন, তাতে প্রাকটিস করতে সুবিধা হবে। 

Image may contain: text

শেষ কথা:

মিরাকেল মর্নিং শুরু করার পেছনে অবশ্য হ্যালের এক শিক্ষক ইবেন প্যাগান এর পরামর্শও কাজ করেছিল। তিনি বলেছিলেন যে, সফল হতে গেলে প্রতিদিন সকালে কিছু নির্দিষ্ট ভালো কাজ করা, ও সেগুলোকে অভ্যাস বানিয়ে ফেলা খুবই জরুরী। কারণ, যে সকালকে জয় করলো, সে দিনটাকেই জয় করলো।

আর প্রতিটি দিনকে যদি জয় করতে পারেন, তবে তো জীবনকেই জয় করা হলো।

আমরা আশা করি এই বুক রিভিউটি আপনার জীবন জয়ের পথে কিছুটা হলেও কাজে লাগবে।

লেখাটি কেমন লাগলো তা আমাদের কমেন্ট করে জানান। যদি মনে হয় এই লেখা পড়ে অন্যরাও উপকৃত হবেন – তবে শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন।

এই ধরনের আরও লেখার জন্য নিয়মিত আমাদের সাথে থাকুন।
সাফল্যের পথে সব সময়ে লড়াকু আপনার সাথে আছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন !

4 thoughts on “সকাল ৮টার আগে এই ৬টি কাজ করলে আপনার জীবনই বদলে যাবে: “দি মিরাকেল মর্নিং” বুক রিভিউ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *