শেখ আকিজ উদ্দিনের জীবনী: জিরো থেকে হিরো হওয়ার সেরা উদাহরণ


  • By
  • February 21st, 2019
  •    
  • পড়তে সময় লাগবে: 5 minutes
  • 12,424 views
শেখ আকিজ উদ্দিনের জীবনী
5 mins read

শেখ আকিজ উদ্দিনের জীবনী হতে পারে তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য জিরো থেকে হিরো হওয়ার সেরা অনুপ্রেরণা ও শিক্ষার একটি দারুন সোর্স। একজন কমলা লেবুর ফেরিওয়ালা, যিনি মাত্র ১৬ টাকা সম্বল পকেটে নিয়ে ভাগ্য গড়তে বেরিয়েছিলেন – কিভাবে তিনি হাজার হাজার কোটি টাকা ও ২৯টি শিল্প কারখানার মালিক হলেন – সেই কাহিনীই আমরা আজ জানবো শেখ আকিজ উদ্দিন এর জীবনী থেকে।

জ্যাক মা, ধিরুভাই আম্বানী – এইসব জিরো থেকে হিরো হওয়া মানুষদের কাতারে বাংলাদেশের শেখ আকিজ উদ্দিনকেও চোখ বন্ধ করে স্থান দেয়া যায়। একদম শূণ্য থেকে শুধু চেষ্টা, পরিশ্রম আর আইডিয়াকে কাজে লাগানোর জোরে তিনি বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা একজন উদ্যোক্তায় পরিনত হয়েছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত আকিজ গ্রুপ এর কর্মীর সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি। গ্রুপের মোট সম্পদের পরিমান হাজার কোটি টাকার বেশি।

আপনার যদি কিছুই না থাকে, এবং আপনি যদি তারপরও জীবনে ধনী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন, অথবা বিশাল কিছু করতে চান – শেখ আকিজ উদ্দিন হতে পারেন আপনার সেরা অনুপ্রেরণা।

সেই অনুপ্রেরণার খোঁজে চলুন ঘুরে আসি সত্যি সত্যি জিরো থেকে হিরো হওয়া আকিজ উদ্দিন এর জীবনী থেকে:

শেখ আকিজ উদ্দিনের জীবনী:

বিদেশে উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ীদের অনেক আগে থেকেই যে চোখে দেখা হয়, আমাদের দেশে একটা সময় পর্যন্ত সেভাবে দেখা হত না। ইউরোপ-আমেরিকায় তাঁদের গুণীজনের কাতারে রাখা হলেও, আমাদের উপমহাদেশে ব্যবসা করাকে ‘গুণীজনরা’ অনেক সময়েই দ্বিতীয় শ্রেণীর পেশা হিসেবে দেখতেন।

কাজেই শিল্পী, সাহিত্যিক, অধ্যাপক, রাজনীতিবিদ – বা এই ধরনের মানুষদের মত ব্যবসায়ীদের জীবন নিয়ে তত ভালো ডকুমেন্টেশন করা হতো না।এখনও যে খুব একটা হয় – তাও বলা যাবে না। এই কারণে, বাইরের ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যতটা সহজ – দেশের ব্যবসায়ীদের নিয়ে তথ্য পাওয়া ততটা সহজ নয়। বিশেষ করে যিনি মৃত্যুবরণ করেছেন – তাঁর সম্পর্কে তথ্য পাওয়া আসলেই কষ্টকর।

তবে আমাদের সৌভাগ্য শেখ আকিজ উদ্দিন কে নিয়ে বেশ কিছু লেখা, ও তাঁর সাক্ষা‌ৎকার বেশ কিছু পুরাতন পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। দৈনিক ইত্তেফাক, বণিক বার্তা, দৈনিক সংবাদ – ইত্যাদি পত্রিকায় তাঁকে নিয়ে লেখা পাওয়া যায়। এছাড়া তাঁর নিজের দেয়া সাক্ষা‌ৎকারও বণিকবার্তায় এসেছিল। এর ফলে আমরা মোটামুটি ভালো ভাবেই শেখ আকিজ উদ্দিনের জীবনী ও জিরো থেকে হিরো হওয়ার কাহিনীটি এক জায়গায় করতে পেরেছি।

 শেখ আকিজ উদ্দিনের জন্ম ও ছেলেবেলা

শেখ আকিজ উদ্দিন এর জন্ম শেখ খুলনার ফুলতলা থানার মধ্যডাঙ্গা গ্রামের মফিজ উদ্দিন ও মতিনা বেগমের দরিদ্র ঘরে ১৯২৯ সালে। তিনি ছিলেন বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান।

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ছবির মত সবুজ সুন্দর একটি গ্রামে তাঁর শৈশব কাটালেও অভাব ছিল তাঁর নিত্য সঙ্গী। বাবা ছিলেন মৌসুমী ফসল কেনাবেচার সাথে জড়িত ছোট ব্যবসায়ী।

বাবার আয় এতই কম ছিল যে, আকিজ স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পাননি। তবে বাবার সাথে থেকে থেকে তিনি ব্যবসার বিষয়ে বেশকিছু প্রাথমিক জ্ঞান লাভ করেন – সেইসাথে দারিদ্রের সাথে লড়তে লড়তে অল্প বয়সেই পরিনত হয়ে ওঠেন।

১৯৪২ সালে, ১৩ বছর বয়সে আকিজ ভাগ্য ফেরাতে বাড়ি ছাড়েন।

স্বপ্ন আর টিঁকে থাকার লড়াই

এখন যেমন মানুষ গ্রাম থেকে ভাগ্যের সন্ধানে ঢাকার মত মহানগরীতে পাড়ি জমায়, সেই সময়ে বাঙালীদের কাছে এমন শহর ছিল কলকাতা।

আকিজ উদ্দীনও সেই কলকাতার উদ্দেশ্যে বাড়ি ছেড়েছিলেন। সম্বল ছিল মাত্র ১৬ টাকা। ১৯৪২ সালেও ১৬ টাকা খুব বেশি টাকা ছিল না। কলকাতায় তাঁর পরিচিত কোনও মানুষ ছিল না, শুধু আশা, স্বপ্ন আর সাহসে ভর করে তিনি বাড়ি ছেড়েছিলেন।

আকিজ উদ্দিন জীবনী
[১৯৪০ এর দশকের কোলকাতা]
তাঁর জীবনের সেই সময়টি নিয়ে তিনি দৈনিক ইত্তেফাককে বলেছিলেন:

“ বাবার কাছ থেকে মাত্র ১৬ টাকা নিয়ে বাড়ি ছাড়ি। গন্তব্য কাছাকাছি মহানগর কলকাতা। সেখানে গিয়ে আশ্রয় নিলাম শিয়ালদহ রেলস্টেশনে। সারাদিন ঘুরিফিরি, কাজের সন্ধান করি আর রাত হলে স্টেশনের এক কোণে কাগজ বিছিয়ে শুয়ে পড়ি। সারাদিনের খাবার ছয় পয়সার ছাতু। এর বেশি খরচ করার সুযোগও ছিল না। কারণ টাকা দ্রুত ফুরিয়ে আসছিল, কিন্তু উপযুক্ত কাজ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ”

– এভাবে বেশ কিছুদিন ভিক্ষুকের মত স্টেশনে কাটানোর পর তাঁর পরিচয় হয় সেখানকার জাকারিয়া হোটেলের মালিকের সাথে। তিনি দয়া করে আকিজ শেখকে তাঁর হোটেলের এক কোণায় থাকার জায়গা দেন। কোনওভাবেই কাজ জোটাতে না পেরে তিনি ব্যবসার চিন্তা করতে থাকেন। কিন্তু হাতে এতই অল্প টাকা ছিল যে তিনি ব্যবসাও শুরু করতে পারছিলেন না।

এরপর একসময়ে জানতে পারলেন কমলা লেবুর ব্যবসায় পুঁজি খুব কম লাগে, এবং এতে লাভও বেশ ভালো হয়। এরপর তিনি শুরু করলেন পাইকারী দরে কমলা কিনে ফেরি করে বেচা। কলকাতার হাওড়া ব্রিজের আশপাশের এলাকায় তিনি কমলা লেবু ফেরি করতেন। এই ব্যবসা করার জন্য দিনে ২টাকা চাঁদাও দিতে হত কলকাতার পুলিশকে।

এই ব্যবসা করতে করতে তাঁর হাতে কিছু টাকা জমে গেল। এরপর তিনি ভ্যান গাড়ির ওপর ভ্রাম্যমান মুদির দোকানের আইডিয়া পেলেন। সেই সময়ে ভ্রাম্যমান মুদির দোকানগুলো বেশ জনপ্রিয় ছিল। তিনিও একটি মুদির দোকান চালু করলেন। তবে একটি সমস্যা ছিল যে, তিনি হিন্দী একদমই জানতেন না। অন্যদিকে, অন্য ব্যবসায়ীরা হিন্দী ভাষায় ছোট ছোট ছড়া বানিয়ে সেগুলো বলে বলে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতেন।

আকিজ ধীরে ধীরে হিন্দীও শিখতে শুরু করলেন, এবং এক সময়ে শিখেও ফেললেন। তারপর ভ্যান গাড়ির ওপর মুদিমালের দোকানটি বেশ জমে উঠল। তাঁর দোকানের সব পন্যের দামই ছিল ছয় আনা। তাই তিনি এর নামও দিয়েছিলেন “নিলামওয়ালা ছে’আনা”।

দোকান ভালই চলছিল। কিন্তু সেই দোকানও তিনি বেশিদিন চালাতে পারেননি। অবৈধ দোকান চালানোর অভিযোগে একদিন পুলিশ তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। পাঁচ টাকা জরিমানার সাথে তিন দিনের জেল হয় তাঁর।

জেল খাটায় তাঁর এতই রাগ আর অভিমান হয় যে, তিনি তাঁর লাভজন ব্যবসাটি বিক্রীই করে দেন। তারপর কিছুদিন তিনি কিছুই করেননি। কলকাতার এখানে ওখানে অনিশ্চিত ঘুরে বেড়িয়েছেন।

এভাবে কিছুদিন কাটার পর তাঁর পরিচয় হয় এক পেশোয়ারী ব্যবসায়ীর সাথে। ব্যবসায়ীর সাথে তিনি পাকিস্তানের পেশোয়ারে পাড়ি জমান। সেখানকার প্রচলিত পশতু ভাষা শিখে নেন অল্প দিনেই। তারপর দোকান বিক্রীর টাকা বিনিয়োগ করে শুরু করেন ফলের ব্যবসা।

ঘরে ফেরা

দুই বছর ফলের ব্যবসা করে তিনি ১০ হাজার টাকার মত মুনাফা করেন। – এই সময়েই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেধে যায়। যুদ্ধের বিপদ, বাবা মায়ের জন্য টান, আর হাতে বেশকিছু টাকা জমে যাওয়া – এই সব মিলিয়ে তিনি বাড়ি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এবং কিছুদিনের মধ্যেই মধ্যডাঙ্গা গ্রামে বাবা মায়ের কাছে ফিরে আসেন। তবে বাবা-মায়ের সাথে বেশিদিন তাঁর থাকা হয়নি। অল্প দিনের ব্যবধানে বাবা মফিজ উদ্দিন ও মা মতিনা বেগম মারা যান। আকিজের বয়স তখন ১৯ বছর।

নি:সঙ্গ আকিজ উদ্দিন এরপর সেই গ্রামেরই সখিনা খাতুনকে বিয়ে করেন।

আকিজ বিড়ির শুরু

ব্যবসা আর বড় হওয়ার স্বপ্ন যার ভেতরে একবার জেগেছে – সে সহজে থেমে থাকতে পারে না। আকিজও পারেননি। বাবা-মায়ের মৃত্যুশোক কাটানো ও বিয়ে করার পর তাঁর মাঝের উদ্যোক্তা সত্তাটি আবার জেগে ওঠে। তিনি ভাবতে থাকেন কি করা যায়। তিনি নিজের এলাকায় থেকেই কিছু একটা করতে চাচ্ছিলেন।

সেই সময়ে তাঁর অঞ্চলে বিধু বিড়ি খুব নামকরা ছিল। বিধু বিড়ির মালিক ছিলেন বিধুভূষণ। বিধুভূষণের ছেলে ছিলেন আকিজের কাছের বন্ধু। বিধুভূষণের পরামর্শ ও সহায়তায়ই ১৯৫২ সালে তিনি তাঁর নিজের বিড়ির ব্যবসা শুরু করেন।

আকিজ বিড়ি

বিড়ি তৈরী ও বিক্রী করে বেশ লাভ হতে থাকে। বেজেরডাঙ্গা রেল স্টেশনের কাছে তিনি দোকান নেন।

১৯৫৫ সালের দিকে তাঁর মূলধন গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৬০ হাজার টাকায়। কিন্তু এবারও তাঁর ওপর দুর্ভাগ্য নেমে আসে। দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত সাক্ষা‌ৎকারে তিনি বলেছিলেন:

 হঠাৎ এক রাতে আগুন লেগে পুরো দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সারা জীবনের সঞ্চয় হারিয়ে আমি আবার পথের ফকির হয়ে গেলাম!

ইত্তেফাকের তথ্য অনুযায়ী, পুড়ে যাওয়া দোকানে ৩০ হাজার টাকার মালপত্র, ও নগদ ৪ হাজার টাকা ছিল। সেইসাথে দোকানের অবকাঠামোও পুরো ছাই হয়ে গিয়েছিল। সেই আমলে প্রায় ৬০ হাজার টাকা মানে অনেক টাকা। তাঁর এক কর্মচারী আহত হয়েছিল, এবং তিনিও অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান।

তবে সব হারিয়েও তিনি ভেঙে পড়েননি। তাঁর বিশ্বাস ছিল চেষ্টা করলে সৃষ্টিকর্তা নিশ্চই সদয় হবেন। এই প্রসঙ্গে তাঁর ভাষ্য ছিল:

সারা জীবনের সঞ্চয় হারিয়ে আমি আবার পথের ফকির হয়ে গেলাম! কিন্তু এক মুহূর্তের জন্যও মনোবল হারাইনি। আমার দৃঢ়বিশ্বাস ছিল, আবার শূন্য থেকে শুরু করবো, উপরওয়ালা নিশ্চয় সদয় হবেন।

জিরো থেকে হিরো (আবারও)

বাজারে আকিজের নামে যেই কথাটি সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ছিল – তাহ হল, তিনি স‌ৎ এবং পরিশ্রমী। এই সততা আর পরিশ্রমী স্বভাবের সুনামের কারণে তিনি স্থানীয় মহাজন ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দারুন সাহায্য পেলেন।

ধারকর্জ করে তিনি আবার শুরু করলেন। মহাজনদের সাহায্যে আবারও দোকান নির্মান করেন। আর এবার বিড়ির পাশাপাশি ধান, চাল, পাট, গুড়, ও ডালের ব্যবসাও শুরু করেন। এবং ঘুরে দাঁড়াতেও তাঁর বেশি সময় লাগেনি। পত্রিকার সাক্ষা‌ৎকারে তিনি বলেন:

“ সততা, নিষ্ঠা আর একাগ্রতার ফলে আমার ঘুরে দাঁড়াতেও সময় লাগেনি। কিছুদিনের মধ্যেই আমি লাখখানেক টাকার মালিক হয়ে গেলাম।

এবারে শুরু করলাম ধান, পাট, চাল, গুড় আর ডালের ব্যবসা। সবক্ষেত্রেই আমার মূলধন ছিল বিশ্বস্ততা। সবাই নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করতো আমাকে ।ষাট-এর দশকে আমি যশোরের সীমান্তবর্তী নাভারন পুরাতন বাজারে চলে আসি।

এ সময় স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোজাহার বিশ্বাস আমাকে বেশ সহযোগিতা করেন। এখানে এসে নতুন করে বিড়ির ব্যবসা শুরু করি; গড়ে ওঠে আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরি। আস্তে আস্তে অন্যান্য ব্যবসাতেও মনোনিবেশ করি।

যশোরের নাভারুন বাজারে এসে ব্যবসা শুরু করার পর তাঁকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। নাভারুন বাজারেই  সালে তিনি বিখ্যাত আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠা করেন। (সম্প্রতি এই কোম্পানীকে জাপান টোবাকো ১.৫ বিলিয়ন ডলারে কিনে নিয়েছে!)

এর পরের বছর গুলোতে একে একে তিনি আকিজ গ্রুপের ব্যানারে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বেশ কয়েকটি কোম্পানী প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৬০ সালে অভয়নগরে প্রতিষ্ঠা করেন এসএএফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, অত্যাধুনিক একটি চামড়ার কারখানা। তারপর ২০০৬ সালে ৭৭ বছর বয়সে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একে একে প্রায় ২০টি কোম্পানী প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। কোম্পানীগুলোর প্রতিটিই বাংলাদেশ ও দেশের বাইরের বাজারে সুপ্রতিষ্ঠিত।

তাঁর নিজ হাতে প্রতিষ্ঠা করা কোম্পানীগুলোর লিস্টটি দেখলেই ব্যাপারটি বুঝতে পারবেন:

১. ঢাকা টোবাকো ইন্ডাষ্ট্রিজ (৯৬৬)

২. আকিজ প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিমিটেড (১৯৭৪)

৩. আকিজ ট্রান্সপোর্টিং এজেন্সি লিমিটেড (১৯৮০)

৪. জেস ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড (১৯৮৬)

৫. আকিজ ম্যাচ ফ্যাক্টরি লিমিটেড (১৯৯২)

৬. আকিজ জুট মিল লিমিটেড (১৯৯৪)

৭. আকিজ সিমেন্ট কেম্পানী লিমিটেড, একই বছর আকিজ টেক্সটাইল মিলস্ লিমিটেড (১৯৯৫)

৮. আকিজ পার্টিকল বোর্ড মিলস লিমিটেড (১৯৯৬)

৯. আকিজ হাউজিং লিমিটেড (১৯৯৭)

১০. সাভার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (১৯৯৮)

১১. আকিজ ফুড এন্ড বেভারেজ লিমিটেড (২০০০)

১২. আকিজ অনলাইন লিমিটেড (২০০০)

১৩. নেবুলা লিমিটেড (২০০০)

১৪. আকিজ কর্পোরেশন লিমিটেড (২০০১)

১৫. আকিজ ইন্সটিটিউট এন্ড টেকনলজি লিমিটেড (২০০১)

১৬. আকিজ অ্যাগ্রো লিমিটেড (২০০৪)

১৭. আকিজ পেপার মিলস্ (২০০৫)

তাঁর অবর্তমানেও তাঁর দেখানো পথে এগিয়ে যাচ্ছে আকিজ গ্রুপ। তাঁর মৃত্যুর পর আকিজ গ্রুপ আরও বেশ কয়েকটি কোম্পানী খুলেছে এবং ব্যবসা বড় থেকে বড় হয়ে চলেছে।

ব্যক্তি শেখ আকিজ উদ্দিন

শেখ আকিজ উদ্দিনের সবচেয়ে বড় গুণ ছিল তাঁর সততা, আত্মবিশ্বাস, ও মানুষকে আপন করে নেয়ার ক্ষমতা। সেইসাথে গভীর ভাবে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার গুণ। প্রতিটি সিদ্ধান্ত তিনি ভেবে চিন্তে নিতেন। আর যে কোনও পরিস্থিতিতেই সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহের ওপর ভরসা রাখতেন। সময় যত খারাপই আসুক, তিনি মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করতেন।

একটা মানুষের মধ্যে সততা আর মানুষকে আপন করে নেয়ার গুণ না থাকলে একদম সব হারা একজন মানুষকে উঠে দাঁড়ানোর জন্য সবাই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় না।

কথা প্রচলিত আছে যে, তিনি বিপক্ষের লোককেও নিজের ব্যবহার আর বুদ্ধি দিয়ে পক্ষে টেনে আনতেন।

দেশের সবচেয়ে বড় একজন ধনী ব্যক্তি হয়েও তাঁর মাঝে কোনওদিন অহঙ্কারের প্রকাশ দেখা গেছে বলে শোনা যায়নি। পোশাক আশাক এবং চাল চলনে অত্যান্ত সাধাসিধা ভাবে চলতেন তিনি।

বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ডোনেশনগুলোর একটি তাঁর করা। ২০০০ সালে তাঁর উত্থানের এলাকা জশোরে ভয়াবহ বন্যার সময়ে তিনি একাই প্রায় ১ কোটি টাকার ত্রাণ বিতরণ করেন।

ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি তিনি খুলনা, জশোর, কুষ্টিয়া ও ঢাকায় বেশ কয়েকটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছেন।

ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি তিনি ১৯৮০ সালে আদ্ব-দীন ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানটি মানব সেবায় উদাহরণ সৃষ্টি করে চলেছে। এই ট্রাস্টের অধীনে, আদ্ব-দীন শিশু কিশোর নিকেতন, আদ্ব-দীন নার্সিং ইন্সটিটিউট, আদ্ব-দীন ফোরকানিয়া প্রজেক্ট, এর মত মানবসেবামূলক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলো শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা ও অসহায় মানুষকে সাহায্য করে চলেছে।

আদ্ব-দীন ফাউন্ডেশন ও ট্রাস্ট ছাড়াও তিনি আকিজ কলেজিয়েট স্কুল ও সখিনা স্কুল ফর গার্লস প্রতিষ্ঠা করেন। নিজে শিক্ষিত হতে না পারলেও শিক্ষার প্রতি তাঁর সব সময়েই দারুন অনুরাগ ছিল।

তাঁর ১০ ছেলে ও ৫ মেয়ের সবাই উচ্চ শিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত। তাঁর বড় ছেলে ডা. শেখ মহিউদ্দিন আদ্ব-দীন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক।

অনেক লোকই ভালো অবস্থায় এসে নিজের অতীত ভুলে যেতে চায়, কিন্তু শেখ আকিজ উদ্দিন গর্বের সাথে তাঁর দারিদ্রময় অতীত, দরিদ্র বাবা মা, ও সংগ্রামের কথা বলতেন। তিনি কখনোই ভাবতেন না যে, এসব তাঁকে ছোট করবে। সাহসী ও বড় মনের মানুষ না হলে এটা করা যায় না। এটা না হলে জিরো থেকে হিরো হওয়াও অসম্ভব।

পরিশিষ্ট

শেখ আকিজ উদ্দিনের জীবনী সত্যিকার অর্থেই জিরো থেকে হিরো হওয়ার এক দারুন উদাহরণ। বার বার সব হারিয়ে নি:স্ব হয়ে আবার উঠে দাঁড়ানো এই মানুষটির জীবন কাহিনী যে কারও জন্য অনুপ্রেরণা ও সাহসের উ‌ৎস হতে পারে।

শেখ আকিজ উদ্দিনের জীবনী নিয়ে লেখাটি যদি আপনাকেও অনুপ্রাণিত করতে পারে, তবেই আমাদের প্রচেষ্টা সফল।

এই লেখাটির বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কমেন্ট করে জানান। আপনার সব মতামতই আমাদের কাছে অমূল্য।

আর যদি মনে হয় এই লেখাটি পড়ে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হবেন – তবে শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন।

এই ধরনের আরও লেখার জন্য আমাদের সাথে থাকুন। সাফল্যের পথে লড়াকু সব সময়ে আপনার সাথে আছে।

আরও পড়ুন:

 ধীরুভাই আম্বানি এর জীবনী: দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়া ছাত্রের ধনকুবের হওয়ার অবিশ্বাস্য কাহিনী

♦ জ্যাক মা এর জীবনী: আলিবাবা গ্রুপ ও সাফল্যের ইতিহাস

♦ রতন টাটার জীবনী: ব্যবসার জীবন্ত লিজেন্ড

♦ সফল মানুষের ব্যর্থতার গল্প: তাঁরা ১১ জন

♦ স্যাম ওয়ালটন (ওয়ালমার্ট প্রতিষ্ঠাতা) এর ৫টি বিজনেস লিসন

♦ স্টিভ জবস এর জীবনী: পৃথিবী বদলে দেয়া এক জিনিয়াস

♦ অপরাহ উইনফ্রে এর জীবনী : শুধুমাত্র মেধা দিয়ে বিনা পুঁজিতে বিলিওনেয়ার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *