মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় হিসেবে শরীরচর্চা বা এক্সাারসাইজ কতটা কার্যকর – এটা কি কখনও ভেবে দেখেছেন?
শরীরচর্চা বা এক্সারসাইজ করার প্রচলিত ভালো দিকগুলো আমরা সবাই জানি। শরীরচর্চা আমাদের সুস্থ ও ফিট রাখার পাশাপাশি হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়বেটিসের মত রোগ থেকে মুক্ত রাখে। সেইসাথে পরিশ্রম করার ক্ষমতা বাড়ায়, মন প্রফুল্ল রাখে, ওজন ঠিক রাখে – ইত্যাদি। শরীরচর্চার মূল উপকারিতা হিসেবে এতদিন এগুলোই বেশি গ্রহণযোগ্য ছিল। এবং এগুলোর কোনওটিই মিথ্যে নয়। কিন্তু হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধির একটি বড় উপায় এটি!
আপনি হয়তো ওজন কমানো, ব্লাড প্রেশার ঠিক রাখা বা সুন্দর দৈহিক গঠন পাওয়ার জন্য এক্সারসাইজ করার কথা ভাবছেন। অথবা শরীরের শেপ ঠিক থাকার কারণে ভাবছেন – আপনার এক্সারসাইজ করার দরকার নেই। কিন্তু মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ানো যে কারও জন্যই একটি ভালো আইডিয়া হতে পারে।
বিশেষ করে যারা কোনওকিছুতে টানা মনোযোগ দিতে পারেন না। অথবা চট করে কিছু মনে করতে পারেন না – তাদের জন্য নিয়মিত ব্যায়াম বা শরীরচর্চা হতে পারে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি করার সবচেয়ে ভালো উপায়। হার্ভার্ডের গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চা করলে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক দ্রুত চিন্তা করা যায়।
ইউনিভার্সিটি অব বৃটিশ কলম্বিয়ার একদল গবেষক গবেষণা করে দেখেছেন, যেসব এক্সারসাইজ করলে ঘাম হয় ও হার্টবিট দ্রুত হয়, সেগুলো নিয়মিত করলে ব্রেনের হিপোক্যামপাস অংশে ইতিবাচক বা পজিটিভ পরিবর্তন ঘটায়। এই অংশের কোষের আকার বেড়ে যায়। এই অংশটি মূলত শর্ট টার্ম মেমোরি ধারণ করার পাশাপাশি নতুন বিষয় শিখতে সাহায্য করে। আবার যেসব এক্সারসাইজ করলে ঘাম হয়না ও হার্টবিট বাড়ে না, অর্থাৎ কম কষ্টকর এক্সারসাইজ করলে ব্রেনে এই পরিবর্তন হয় না।
অন্য যে কোনও সময়ের চেয়ে এই যুগে মানুষের ভুলে যাওয়ার প্রবনতা বেশি দেখা যাচ্ছে। স্ক্রীণের সামনে অতিরিক্ত সময় থাকা, অতিরিক্ত তথ্য মাথায় ঢোকা (সোশ্যাল মিডিয়া, ইন্টারনেট – ইত্যাদি মাধ্যমে) – যার ফলে ব্রেনকে অযথা ওভার টাইম কাজ করতে হয়; এর ফলে তার স্বাভাবিক কাজে অসুবিধা হচ্ছে। এছাড়া বর্তমান যুগে রাত জেগে থাকার কারণেও ব্রেন সেল ড্যামেজ হওয়ার ঘটনা বাড়ছে। আর এগুলো থেকে যে ক্ষতি হচ্ছে, তার অনেকটাই পূরণ করা সম্ভব নিয়মিত এক্সারসাইজের মাধ্যমে।
কিভাবে এটা কাজ করে:?
হার্ভার্ড হেলথ ব্লগ এর তথ্য অনুযায়ী, গবেষকরা দেখেছেন যে এটা বেশ কয়েক দিক দিয়ে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:
♠ ভারী শরীরচর্চা শরীরে ইনসুলিন হরমোনের কার্যকারিতা বাড়ায়, সেইসাথে কোষের জড়তা কাটায়। গবেষকরা দেখেছেন – এর ফলে এমন কিছু কেমিকেল এর নি:সরণ বাড়ে, যেগুলো মস্তিষ্কের কোষের শক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি মস্তিষ্কের রক্তনালীগুলোকে উজ্জিবিত করে। সেইসাথে মস্তিষ্কে নতুন কোষের জন্ম দিতেও এই রাসায়নিক উপাদানগুলো সাহায্য করে।
♠ নিয়মিত শরীরচর্চা করলে ঘুমের গভীরতা বাড়ে। যাদের নিয়মিত ঘুম হয়না – এবং এই কারণে তাদের স্মৃতিশক্তি ও চিন্তা করার ক্ষমতায় খারাপ প্রভাব পড়ছে – তারা নিয়মিত শরীরচর্চা করলে এই সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্ত হতে পারবেন।
♠ দৈনন্দিন কাজ গুলো ঠিকমত করা, এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য মস্তিষ্কের ‘প্রি ফ্রন্টাল করটেক্স’ অংশটি অনেক বড় ভূমিকা রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত মাঝারী ও ভারী শরীরচর্চা করেন – তাদের প্রি ফ্রন্টাল করটেক্স অন্যদের চেয়ে বড় হয়। ড. স্কট মেগিনিস নামে এক নিউরোলজিস্ট বলেন, ৬ মাস থেকে এক বছর টানা শরীরচর্চা করলে মস্তিষ্কের বিশেষ কিছু জায়গায় চোখে পড়ার মত পরিবর্তন ধরা পড়ে।
মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় হিসেবে শরীরচর্চাকে কিভাবে কাজে লাগাবেন?
গবেষক ও নিউরোলজিস্ট ড. স্কট বলেন, মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য যদি শরীরচর্চা করতে চান, তবে আপনাকে এমন কিছু শরীরচর্চা বেছে নিতে হবে যেগুলোতে ঘাম ঝরে এবং হার্টবিট বাড়ে।
তবে মজার ব্যাপার হলো আপনাকে সপ্তাহে ৭দিনই এই এক্সারসাইজ করতে হবে না।
সপ্তাহে কয়দিন, এবং কতক্ষণ?
গবেষণায় অংশ নেয়া ভলান্টিয়াররা সপ্তাহে ২ দিন ১ ঘন্টা করে শরীরচর্চা করেছিলেন। মানে প্রতি ৭ দিনে ১২০ মিনিট করা যাবে।
তবে সবচেয়ে ভালো ফল পেতে হলে সপ্তাহে ৫ দিন ৩০ মিনিট করে মোট ১৫০ মিনিট ঘাম ঝরানো এক্সারসাইজ করা ভালো।
যদি একবারে প্রথমে এতটা করতে না পারেন, তবে ১০ মিনিট করে শুরু করুন। এবং প্রতি সপ্তাহে ১০ মিনিট করে বাড়ান – যতক্ষণ না আপনি গবেষকদের রিকমেন্ড করা সময়ে যেতে পারছেন।
কি ধরনের এক্সারসাইজ করা যায়?
দৌড়ানো হল সবচেয়ে সহজে ঘাম ঝরানো ও হার্টবিট বাড়ানোর উপায়। ৩০ মিনিট আস্তে আস্তে টানা দৌড়ালে এমনিতেই হার্টবিট বাড়ে ও ঘাম ঝরে।
দৌড়ানোর সুযোগ না থাকলে সিঁড়ি বাইতে পারেন। অথবা ঘরে লাফাতে পারেন। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ লাফালেও প্রচুর ঘাম ঝরে ও হার্টবিট অনেকটা দ্রুততর হয়।
লাফানোর মাঝে বা দৌড়ানোর মাঝে ক্লান্ত হলে কিছুটা বিরতি নিন, তারপর আবার শুরু করুন।
এগুলো হল ঘরে বসে সহজে করার মত এক্সারসাইজ। আপনি চাইলে কোনও জিমেও ভর্তি হতে পারেন।
পরিশিষ্ট:
মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় খুঁজতে গেলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চলে আসে কঠিন ডায়েট, অথবা এমন কিছু চর্চা করা যা শিখতে ও করতে অনেকটা সময় লাগতে পারে। কিন্তু খুব সাধারণ কিছু শরীরচর্চা করেই আপনি এখন থেকে আপনার মস্তিষ্কের কাজ করার ক্ষমতা ও তার মোমোরি পাওয়ার অনেক বাড়িয়ে নিতে পারবেন।
আমরা আশা করব, আপনি বিষয়টি নিজে চর্চা করবেন, এবং অন্যদেরও এই ব্যপারে জানাবেন।
এই ধরনের কোনও বিষয় আপনার জানা থাকলে আপনিও এমন আর্টিকেল লিখে write@test.edaning.com – এ ইমেইল করতে পারেন। আপনার নাম সহকারে লেখাটি লড়াকুতে প্রকাশ করা হবে।
আর যদি মনে হয় এই লেখাটি পড়ে অন্যরাও উপকৃত হবেন, তবে শোয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন।
সাফল্যের পথে লড়াকু সব সময়ে পাঠকদের সাথে থাকতে চায়।