প্রোডাক্টিভিটি ১০ গুণ বাড়ানোর ৪টি উপায়: মুড খারাপ থাকলেও কাজ করবেন যেভাবে


প্রোডাক্টিভিটি বা কার্যকারিতা বা উ‌ৎপাদনশীলতা – যেটাই বলুন, একজন মানুষকে সফল করার জন্য এটাই তার সবচেয়ে বড় গুণ। প্রোডাক্টিভিটি মানে একটি নির্দিষ্ট সময়ে একজন মানুষ বা একটি যন্ত্রের কাজ করার ক্ষমতা। আমরা আজ ব্যক্তির প্রোডাক্টিভিটি নিয়ে কথা বলব।

যার প্রোডাক্টিভিটি যত বেশি, সে তত বেশি সফল।  সবার হাতেই ২৪ ঘন্টা সময় থাকে, কিন্তু সবাই এক রকম সফল হয় না।  একই অফিসে, একই পদে, একই সময় কাজ করে কেউ অনেক বেশি আউটপুট দিয়ে কেউ অনেক দূর এগিয়ে যায়, আবার কেউ যেখানে ছিল, সেখানেই পড়ে থাকে।  এর কারণ একজনের প্রোডাক্টিভিটি আরেকজনের চেয়ে বেশি।

বেশিরভাগ মানুষের কাজের মান ও পরিমান তার মুডের ওপর নির্ভর করে।  সাধারণ মানুষদের মুড ভালো থাকলে কাজ ভালো হয়, মুড খারাপ থাকলে কাজও খারাপ হয়।  কিন্তু কিছু অসাধারণ সফল ও প্রোডাক্টিভ মানুষ আছেন, যাদের মুড তাদের কাজে কোনও প্রভাব ফেলে না।  একজন যখন মন খারাপ থাকার কারণে ১০০ টাকার আউটপুট দিচ্ছে, তখন আরও বেশি মন খারাপ নিয়ে আরেকজন ৫০০ টাকার আউটপুট দিতে পারছে।

আসলে দ্বিতীয় জনের মুড খারাপ থাকলেও কাজ করার ক্ষমতা তার প্রোডাক্টিভিটি বাড়িয়ে দিয়েছে।  স্টিফেন কিং পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে সফল লেখকদের একজন।  তাঁর সাফল্যের একটি বড় কারণ হল, তিনি মুডকে পাত্তা দেন না।  মুড যেমনই থাকুক না কেন, তিনি প্রতিদিন ২০০০ শব্দ অবশ্যই লিখবেন।  পরিস্থিতির কারণে মানুষের মুড খারাপ বা ভালো হতেই পারে।  এর ওপর চাইলেও নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।  কিন্তু আপনি চাইলে মুডের বিপরীতে আপনার কাজ বা এ্যাকশনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।

খরগোশ আর কচ্ছপের গল্পটা কি আপনি জানেন? খরগোশ আর কচ্ছপের মাঝে দৌড় প্রতিযোগীতা হল।  খরগোশ অনেক দ্রুত মাঝামাঝি এসে দেখল, একটি সুন্দর ছায়া দেয়া গাছের নিচে কচি ঘাস জন্মেছে।  পেছনে তাকিয়ে যখন দেখল, কচ্ছপ অনেক দূরে, সে ঘাস খেয়ে একটা ঘুম দিল।  ঘুম থেকে উঠে দেখতে পেল, কচ্ছপ তার ঘুমানোর সুযোগে প্রতিযোগীতা জিতে গেছে।  এখানে খরগোশের দৌড়ানোর ক্ষমতা অনেক বেশি হলেও, সে মুডকে পাত্তা দেয়ার কারণে রেস জিততে পারেনি।  কচ্ছপ দুর্বল হলেও প্রোডাক্টিভিটি বেশি দেখিয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা মুডকে তাঁদের কাজের ওপর প্রভাব ফেলতে দেন না – তাঁরা অন্যদের চেয়ে অন্তত ১০ গুণ বেশি প্রোডাক্টিভ থাকেন। 

এখন, এই রকম হাই প্রোডাক্টিভিটি আপনিও অর্জন করতে পারেন। আজ আপনাকে মুড নিয়ন্ত্রণ করে কিভাবে হাই প্রোডাক্টিভিটি অর্জন করা যায়, তার ৪টি উপায় বলব।  

প্রোডাক্টিভিটি ১০ গুণ করার ৪টি উপায়:

০১. কাজ শুরুর আগে ঠিক করুন, কতটা কাজ করা প্রয়োজন

যে কোনও কাজ শুরু করার আগে প্রথমেই ঠিক করে নিন, কতটা কাজ করা আসলেই প্রয়োজন, এবং সেটা কতক্ষণ ধরে করবেন।  এবং এটা একটি কাগজে লিখুন।  আপনি যখন কোনও লক্ষ্য কাগজে লিখে রাখবেন – তখন আপনার মস্তিষ্ক সেটাকে সাধারণের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব দেবে।  আপনার মুড এসে বাধা দিলেও অবচেতন মন থেকে কাজ শেষ করার জন্য তাগাদা আসবে।

এক্ষেত্রে আপনি পরের দিন কি কি কাজ করবেন –তা আগের দিন লিখে রাখতে পারেন।  এবং লিস্টটি সারাদিনে কয়েকবার দেখতে পারেন।  কাজগুলো লেখা অবস্থায় সামনে থাকলে কাজের মুড অনেক বেশি বেড়ে যাবে।

 

০২. কাজের শিডিউলে কিছুটা বিশ্রাম ও বিনোদনের সময় রাখুন

অসাধারণ সফল ও প্রোডাক্টিভ মানুষদের কাজ যেমন শিডিউল করা থাকে, তেমনি সেই শিডিউলের মাঝে বিনোদন ও বিশ্রামের সময়ও নির্দিষ্ট করা থাকে।  আপনি সফল হওয়ার জন্য কাজ করছেন, মানে এই নয় যে, আপনি বিশ্রাম করা ছেড়ে দেবেন, অথবা মাঝে মাঝে একটু সিনেমা দেখবেন না।  কঠোর পরিশ্রম করার জন্য রিফ্রেশ হওয়ারও দরকার আছে।  কিন্তু সেটা যেন হয় নির্দিষ্ট সময়ে।

আমাদের অনেক সময়েই কাজের মাঝে একটু সিনেমা/ইউটিউব দেখতে ইচ্ছা করে, অথবা একটু ঘুমাতে মন চায়।  এর প্রধাণ কারণ, এইসব কাজের জন্য অনেকেই সময় নির্দিষ্ট করে রাখেন না।  কিন্তু আপনি যদি সপ্তাহের কোন দিনটিতে কয়টা থেকে কয়টা পর্যন্ত সিনেমা বা নিজের প্রিয় সিরিজ দেখবেন – এটা ঠিক করে রাখেন।  অথবা দিনের কোন সময়টাতে একটু ইউটিউব দেখবেন, বা একটু ঘুমিয়ে নেবেন – তা শিডিউলে লিখে রাখেন – তবে কাজ করার সময়ে এগুলোর মুড আপনার আসবে না।  অথবা আসলেও এগুলোর জন্য নির্দিষ্ট করা সময়ের কথা মনে পড়ে যাবে, এবং আপনি কাজ নষ্ট করে এগুলো করবেন না।  অর্থা‌ৎ বিশ্রাম বা বিনোদনের মুড আসলেও আপনি আপনার কাজ করে যেতে পারবেন।

 

০৩. অল্প করে শুরু করুন

যে কোনও দক্ষতাই আসলে অভ্যাস।  এবং কোনও অভ্যাসই একবারে গড়ে তোলা যায় না।  দিনের পর দিন একটু একটু করে নতুন অভ্যাস গড়ে তুলতে হয়, অথবা বাজে অভ্যাস দূর করতে হয়।  তাই, প্রথমেই মুডকে পাত্তা না দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা কাজ করার বদলে, ১০-১৫ মিনিট করে শুরু করুন। তারপর একটু একটু করে সময় বাড়ান।

মনে করুন, এখন থেকে যখনই কাজ করতে ইচ্ছে করবে না, তখনই নিজেকে বলুন যে, আর ১০ মিনিট কাজ করবেন।  এক সপ্তাহ এভাবে করার পর মুড না থাকলেও কাজ চালিয়ে যাওয়াটা মোটামুটি আপনার অভ্যাস হয়ে যাবে।  এর পরের সপ্তাহে আর ৫ মিনিট যোগ করুন।  এভাবে একটু একটু করে বাড়াতে বাড়াতে – আপনি সব সময়েই যে কোনও মুডে কাজ করতে পারবেন।  ফলে আপনার প্রডাক্টিভিটিও বাড়তে থাকবে।

 

০৪. কাজ কেমন হল, এই নিয়ে বেশি ভয় পাবেন না

আগেই বলেছি, যে কোনও অভ্যাস ভালোভাবে রপ্ত হতে সময় লাগে।  তাই, প্রথম দিকে যখন আপনি মুড না থাকলেও কাজ করবেন, তখন তা খুব একটা ভালো হওয়ার সম্ভাবনা নেই।  কিন্তু এটা নিয়ে ভয় পাবেন না বা দু:শ্চিন্তা করবেন না।

আপনার প্রথম উদ্দেশ্য হবে, মুড না থাকলেও কাজ চালিয়ে যাওয়ার অভ্যাসটা রপ্ত করা। মাস খানেক এভাবে চালাতে পারলে, ধীরে ধীরে কাজের মানও ভালো হতে শুরু করবে।  এটা নিয়ে খুব বেশি টেনশন করার দরকার নেই।  যখন থেকে আপনি এই অভ্যাস প্রাকটিস করা শুরু করবেন, সেই মূহুর্ত থেকেই আপনার প্রোডাক্টিভিটি একটু হলেও বেড়ে যাবে।

এই পর্যায়ে ফেসবুকের চিফ অপারেশন অফিসার শেরিল স্যান্ডবার্গ এর একটি বিখ্যাত উক্তি সব সময়ে মনে রাখবেন, “done is better than perfect” – মানে, পারফেক্ট হওয়ার চেয়ে শেষ হওয়া ভালো।  শুধু চেষ্টা করে যান, কাজের মান একটা সময়ে নিজে নিজেই পারফেক্ট হয়ে যাবে।

পরিশিষ্ট:

যে কোনও বিষয়েই সফল হতে গেলে হাল ধরে রাখতে পারার কোনও বিকল্প নেই।  আছাড় না খেলে যেমন হাঁটা শেখা যায় না, তেমনি কোনও ভালো অভ্যাস করতে গেলে প্রথম কয়েকবার ব্যর্থতা আসতেই পারে।  আপনি যদি প্রথমবার বা ৫ম বার চেষ্টা করতে গিয়ে দেখেন, কাজের সময়ে আপনার মুড আপনাকে বিরক্ত করছে – তবে হতাশ হবেন না।  চেষ্টা চালিয়ে যান।  একটা সময়ে গিয়ে আপনি অবশ্যই হাই প্রোডাক্টিভিটি অর্জন করতে পারবেন।

একবার যদি মুডকে পাত্তা না দিয়ে কাজ করার অভ্যাস করে ফেলতে পারেন, তবে এখনকার চেয়ে অন্তত ১০ গুণ বেশি কাজ করতে পারবেন, আপনার পজিশন, ইনকাম – সবকিছুই ঠিক ম্যাজিকের মত এক লাফে অনেক ওপরে চলে যাবে।  অল্প কিছুদিন এটা প্রাকটিস করলেই নিজের ও নিজের আশপাশের পরিবেশে পরিবর্তন টের পাবেন।  আর সেইসাথে আপনার নিজের প্রতি বিশ্বাসও অনেক বেশি বেড়ে যাবে।  প্রতিদিন একটু একটু করে প্রাকটিস করতে থাকুন, আপনার মুড নিয়ন্ত্রণের শক্তি আপনার ভেতরেই রয়েছে, প্রয়োজন শুধু শক্তিটিকে কাজে লাগানো।

আর সেই শক্তিকে কাজে লাগাতে এই লেখাটি যদি একটুও উপকারে আসে, তাহলেই আমাদের প্রচেষ্টা সফল বলে ধরে নেব।

এই লেখাটির ব্যাপারে আপনার যে কোনও মতামত আমাদের কমেন্ট করে জানান।  যদি মনে হয় এই লেখা পড়ে অন্যরাও উপকৃত হবেন – তবে শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন।

প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানো বা আত্ম উন্নয়নের বিষয়ে লিখতে চাইলে write@test.edaning.com এ ই-মেইল করতে পারেন।  আমরা যত্ন সহকারে আপনার নাম সহ লেখা প্রকাশ করব।  আর এই ধরনের আরও লেখার জন্য নিয়মিত আমাদের সাথে থাকুন।  সাফল্যের পথে লড়াকু সব সময়ে আপনার সাথে আছে। 

পোস্টটি শেয়ার করুন !

2 thoughts on “প্রোডাক্টিভিটি ১০ গুণ বাড়ানোর ৪টি উপায়: মুড খারাপ থাকলেও কাজ করবেন যেভাবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *