”নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি” : – ৫টি উপায়ে আবার নিজেকে ফিরে পাবেন


নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি, এই কথাটা প্রায়ই বিভিন্ন জনের মুখে শোনা যায়। নিজেকে হারিয়ে ফেলা মানে আসলে নিজের উদ্দেশ্য হারিয়ে ফেলা। অনেক সময়েই মনে হয়, আমরা যা করছি, তার আসলে কোনও অর্থ নেই। মনে হয়, কি লাভ এসব করে?

এটা সাধারণত হয় কোনও আশা করে নিরাশ হওয়ার পর, অথবা কিছু করতে গিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর। অথবা কখনও কখনও এমনিতেই মনে হয়। এই নিজেকে হারিয়ে ফেলাটা আসলে এক ধরনের হতাশা আর নিরাশার প্রকাশ।

কিন্তু মানুষ কি সত্যিই কখনও নিজেকে হারিয়ে ফেলে ? – আসলে প্রতিটি মানুষের জীবনেরই একটা উদ্দেশ্য থাকে। প্রতিটি মানুষেরই যোগ্যতা আছে নিজের ও অন্যের জন্য কিছু করার। কিন্তু মাঝে মাঝে সঠিক জ্ঞানের অভাব অথবা বিরূপ পরিস্থিতির কারণে মানুষের মনে হয় তার জীবনের কোনও উদ্দেশ্য নেই, তার মনে হয় সে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে। অনেক ভেবেও নিজের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।

সত্যি কথা বলতে পৃথিবীর সফলতম মানুষদেরও জীবনে একবার হলেও এমনটা মনে হয়েছে। পৃথিবীতে এমন কোনও মানুষ নেই যে সব সময়ে ১০০% পজিটিভ থাকতে পারে। এমন একজন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না যে ১০০% সময় সুখে থাকে। সবার জীবনেই হতাশা আর ব্যর্থতা আসে।

কিন্তু যারা সত্যিকার অর্থে কিছু করে দেখাতে পারে, যারা অর্থপূর্ণ জীবন যাপন করে – তারা নিজেকে হারিয়ে ফেলার পর আবারও নিজেকে খুঁজে নিতে পারে। মানুষ ভুল করবে, পথ হারাবে – এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যারা পথ হারিয়ে ফেলার পরও পথ খুঁজতে থাকে, যারা নিজেকে হারিয়ে ফেলে আবারও নিজেকে খুঁজে পাওয়ার সংকল্প করে – তারা বার বার পড়ে গিয়েও আবার উঠে দাঁড়াতে পারে। দিন শেষে তারাই জীবনে বিজয়ী হয়। আর যারা একবার নিজেকে হারিয়ে ফেলে আর ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করে না, নতুন করে নিজের জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করে না, তারা সারাজীবনের জন্য হারিয়ে যায়।

আপনি নিশ্চই তাদের একজন হতে চান না। আর তাই নিজেকে হারিয়ে ফেলা অবস্থা থেকে আবার ফিরে পাওয়ার এই ৫টি পরামর্শ আপনার জন্য:

০১. নিজের জীবনের সম্ভাবনাগুলো লিখুন

নিজেকে হারিয়ে

পৃথিবীর প্রায় সব বড় বড় সফল মানুষ ও সেলফ ডেভেলপমেন্ট কোচ নিজেকে নিয়ে লেখার ব্যাপারে খুব বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।

কাগজ কলম হাতে নিয়ে বসে চিন্তা করলে সেই চিন্তা সাধারণ চিন্তার চেয়ে অনেক বেশি গোছানো হয়। লেখার উদ্দেশ্যে মানুষ যখন চিন্তা করতে বসে – তখন সেই চিন্তা অনেক বেশি পরিস্কার হয়। বিজ্ঞানের ভাষায় একে “সাইকো-নিউরো-মোটর-এ্যাক্টিভিটি” বলা হয়।

যখনই আপনি হতাশ বোধ করবেন, বা মনে হবে, “নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি” তখনই নিজেকে নিয়ে চিন্তা করার আদর্শ সময়।

কাগজ কলম নিয়ে বসুন, তারপর একপাশে লিখুন – কেন আপনি হতাশ। পয়েন্ট আকারে লিখুন। কি কি কারণে আপনার মনে হচ্ছে যে আপনি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন।

– কোনও কাজ করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন?

– কোনও কাছের মানুষ অপ্রত্যাশিত ব্যবহার করেছে?

– আপনার আশা অনুযায়ী পরিশ্রমের ফল পাননি?

– নাকি অন্যকিছু?

কারণ যেটাই হোক স্পষ্ট করে সময় নিয়ে চিন্তা করে লিখুন। লেখার পর হয়তো প্রথম বারের মত বুঝতে পারবেন – ঠিক কি কারণে আপনার এমনটা মনে হচ্ছে। অনেক সময়ে মনের ভেতরে খারাপ লাগার সঠিক কারণটা আমরা ধরতে পারি না। কিন্তু ব্যাপারটা নিয়ে গুছিয়ে চিন্তা করলে বেশিরভাগ সময়েই আসল কারণ ধরা যায়।

এরপর অন্য পাশে নিজের গুণ ও সম্ভাবনার কথা গুলো লিস্ট করুন। যত ছোট যোগ্যতাই হোক, যত ক্ষুদ্র গুণই হোক – সব লিখে ফেলুন। এরপর চিন্তা করুন এগুলো দিয়ে আপনি কি অর্জন করতে পারবেন?

সময় নিয়ে গুছিয়ে চিন্তা করলে আপনার এমন অনেক গুণ বা সম্ভাবনার কথা মাথায় আসবে – যা হয়তো আগে চিন্তাও করেননি। একজন মানুষ যদি নিজের গুণ আর সম্ভাবনাগুলোকে সঠিক ভাবে বুঝতে পারে – তবে তার চোখের সামনে অনেক নতুন অর্জনের দরজা খুলে যায়। অনেকেই এভাবে নিজের জীবনের সঠিক ও সবচেয়ে কার্যকর লক্ষ্য খুঁজে পেয়েছে।

বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সফল উদ্যোক্তা ও পাবলিক স্পিকার গ্যারি ভেইনারচাক এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন,

“তুমি যদি বেসবল ভালো না খেল, এবং সারাদিন খেতে পছন্দ করো – তাতে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। তোমাকে সবার মত হওয়ার দরকার নেই। হাইস্কুলে অন্যরা যত ভালো খেলোয়াড় হতে পারবে – তুমি হয়তো তাদের সবার চেয়ে বড় একজন শেফ বা খাবার ব্যবসায়ী হতে পারবে”

আসলে মানুষ অনেক সময়ে সমাজের সাথে মিশতে গিয়ে, বা অন্যদের মত হতে গিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলে। অন্যদের উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায় তার নিজের উদ্দেশ্য। ক্রিকেট খেলা বা বিসিএস ট্রেন্ড হলেই আপনাকে তা হতে হবে – এমন কোনও কথা নেই। প্রতিটি মানুষের নিজস্ব যোগ্যতা আছে। রবীন্দ্রনাথ যদি পড়াশুনায় মন বসেনা বলে হতাশ হয়ে যেতেন, তাহলে তিনি অন্যের লেখা পড়ার বদলে নিজের লেখার গুণকে বিকশিত করতে পারতেন না। ’মেধাহীন’ টমাস আলভা এডিসন বা ‘গর্ধভ’ আলবার্ট আইনস্টাইনকে যারা এসব নামে ডাকতো – তাদের কথা কে মনে রেখেছে?

এই মানুষগুলো কোনও পরিস্থিতিতে হতাশ না হয়ে নিজের সত্যিকার যোগ্যতা খুঁজে বের করেছেন – এবং সেই যোগ্যতার বিকাশকে নিজের জীবনের উদ্দেশ্য বানিয়েছেন।

একজন মানুষ যদি ঠান্ডা মাথায় নিজের সত্যিকার যোগ্যতা আর সম্ভাবনাগুলো খুঁজে বের করতে পারে – তবে সে কখনওই নিজেকে হারাবে না। আর গুছিয়ে চিন্তা করলে মানুষ তার নিজের সম্ভাবনা খুঁজে পাবেই।

০২. জীবন একটাই – এই কথা সব সময়ে মনে করুন

নিজেকে হারিয়ে ফেলবেন না

মানুষ একবারই পৃথিবীতে আসে। জন্ম নেয়া এবং বেঁচে থাকাটাই একজন মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় সুযোগ। সময় ও জীবনকে একবার হারিয়ে ফেললে কোনওকিছুর বিনিময়েই আর ফিরে পাওয়া যায়না।

এই কথাটা যদি ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারেন – তবে নিজেকে হারিয়ে ফেলার প্রবণতা অনেকটাই কমে আসবে। জীবনে যা-ই ঘটুক না কেন – আপনি যদি থেমে থাকেন – তবে তা আপনার ক্ষতি।

তাই কিছু না করে বসে থাকার চেয়ে সব সময়ে কিছু একটা করার চেষ্টা করুন। এবং সব সময়ে প্রশ্ন করুন – ”আমি যে কাজটি করছি, জীবনের শেষে কি এটা আমাকে প্রশান্তি দেবে?” , অথবা নিজের জীবনের শেষ মূহুর্ত কল্পনা করুন, এবং সেই অবস্থান থেকে বোঝার চেষ্টা করুন, কি হিসেবে আপনি পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে চান? – কেমন মানুষ হিসেবে অন্যরা মৃত্যুর পর আপনাকে মনে রাখলে আপনি সবচেয়ে সুখী হবেন?

হয়তো একদিনে এই প্রশ্নের উত্তর পাবেন না। তাই যতক্ষণ না পাচ্ছেন, উত্তর খোঁজার চেষ্টা করুন। এবং একবার এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়ার পর আর থেমে থাকবেন না। দিনের প্রতিটি মূহুর্ত সেই মানুষটি হয়ে ওঠার পেছনে কাজে লাগান।

এটা যদি করতে পারেন – তবে আর কোনওদিন নিজেকে হারিয়ে ফেলবেন না।

০৩. কোনও একজন মানুষকে নিজের জীবনের উদ্দেশ্য বানাবেন না

শুধু একজন মানুষ কষ্ট দিয়েছে, অথবা নিরাশ করেছে বলে নিজের জীবনকে যে অর্থহীন ভাবে – সে আসলে নিজেকে চরম ভাবে অপমান করছে।

একজন মানুষের জীবন শুধু অন্য একজন মানুষের জন্য সৃষ্টি হয়নি। প্রতিটি মানুষের যোগ্যতা আছে তার নিজের ও আশপাশের মানুষের জীবনকে সুন্দর করার। এমনকি চাইলে একজন মানুষের পক্ষে পুরো পৃথিবীর ইতিহাস বদলে দেয়া সম্ভব। এমন যোগ্যতা নিয়ে যদি কেউ শুধু অন্য একজন মানুষের জন্য নিজেকে ছোট করে, তবে সে সৃষ্টিকর্তার শ্রেষ্ঠতম একটি উপহারের অমর্যাদা করছে।

একজন মানুষের জন্ম নেয়া থেকে শুরু করে বেড়ে ওঠার প্রতিটি পর্যায়ে বহু মানুষের অবদান আছে। সেইসাথে আছে প্রত্যাশা।

ভেবে দেখুন তো, আপনার বাবা-মা, ভাই-বোন, শিক্ষক, বন্ধুবান্ধব, শুভাকাঙ্খী – সবার প্রতি কি আপনার দায়িত্ব নেই?

যে সৃষ্টিকর্তা আপনাকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, তাঁর প্রতি আপনার দায়িত্ব নেই? – তাহলে শুধুমাত্র একজন মানুষ, সে যে-ই হোক – তার জন্য নিজেকে হারিয়ে ফেলা কি দায়িত্বহীনতা নয়?

অন্য একজন মানুষের কারণে নিজেকে হারিয়ে ফেলা আসলে সহজে পার পাবার একটা অজুহাত। শক্তিশালী মানসিকতার মানুষেরা কখনওই অজুহাত খোঁজেন না। তাঁরা অজুহাত দেয়ার বদলে নিজেকে আরও শক্তিশালী করার জন্য কাজ করেন। তাঁরা আবেগের কাছে পরাজিত না হয়ে সঠিক কাজটি করেন। যে বিষয় নিয়ে চিন্তা করে লাভ নেই – সেই বিষয়ে চিন্তা করেন না। তার বদলে তাঁরা নতুন ভাবে শুরু করেন। আবেগের বদলে নিজের দায়িত্ব নিয়ে ভাবেন, এবং সেই অনুযায়ী কাজ করেন, যা তাঁর নিজের ও আশপাশের মানুষের জীবনে সত্যিকার অবদান রাখবে।

আপনিও যদি নিজের জীবনকে বড় করে দেখেন, এবং এই সত্যিটা উপলব্ধি করেন যে, আপনার যোগ্যতা দিয়ে আপনি শুধুমাত্র একজন মানুষের বদলে বহু মানুষের জীবনে ইতিবাচক অবদান রাখতে পারবেন – এবং সেইসাথে নিজের সঠিক দায়িত্ব বুঝে নিয়ে কাজ করেন – তাহলেই দেখবেন নিজেকে আর হারিয়ে ফেলছেন না।

০৪. নিজেকে মোটিভেট করুন

নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি – এটা আসলে শুধুমাত্র একটা নেতিবাচক চিন্তা। এই চিন্তাকে ঝেড়ে ফেলতে প্রয়োজন সত্যিকার পজিটিভ চিন্তা করার উপায়

আপনি যদি সব সময়ে পজিটিভ থাকতে পারেন – তবে হতাশা আর নিজেকে হারিয়ে ফেলা অবস্থা বেশিক্ষণ আপনার ওপর প্রভাব ফেলতে পারবে না। মানুষের মস্তিষ্কে একই তথ্য বারবার যেতে থাকলে সেখানে নতুন নিউরাল পাথ বা সংযোগ পথ তৈরী হয় – এবং কোনও তথ্য যাওয়া বন্ধ হলে নিউরাল পাথ দুর্বল হয়ে আসে।

আরও একটি ব্যাপার, চিন্তা বন্ধ করা যায় না – একটি চিন্তাকে অন্য চিন্তা দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। কিভাবে?

মনে করুন, আপনার হতাশ লাগছে। মনে হচ্ছে আপনার জীবনটা অর্থহীন। ঠিক সেই মূহুর্তে যদি ভালো কোনও মোটিভেশনাল স্পিচ শোনেন, বই পড়েন, ধর্মীয় বানী শোনেন বা পড়েন, বিখ্যাত মনিষীদের অনুপ্রেরণামূলক উক্তি পড়েন – তাহলে ধীরে ধীরে আপনার মাঝ থেকে হতাশা দূর হয়ে আশার সৃষ্টি হবে।

এর ফলে সব সময়ে আপনি কাজ করার এবং এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা পাবেন।

এছাড়া সব সময়ে মনে মনে নিজেকে নিয়ে ভালো কথা বলুন। আপনার জীবনের ভালো বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করুন এবং এরজন্য সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দিন। জীবনে ভালো এবং খারাপ একই সাথে থাকে – আমরা যেটার দিকে ফোকাস করি – সেটাই বড় হয়, বাস্তবতাকে প্রভাবিত করে।

কাজেই, সব সময়ে ভালো ভালো কথা শুনুন এবং নিজেকে বলুন। সেইসাথে, ইতিবাচক ও সফল মানুষদের সাথে সময় কাটানোর চেষ্টা করুন। নেতিবাচক ও হতাশ মানুষদের থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন।

আপনি যদি ৫জন মানুষের সাথে চলেন, তবে অন্তত ৩জন যেন আশাবাদী মানুষ হয়। আশাবাদী মানুষরা সব পরিস্থিতির মাঝেই ভালো কিছু খুঁজে পান। এই ধরনের মানুষের সাথে বেশি সময় কাটালে তাদের মানসিকতার প্রভাব আপনার ওপরেও পড়বে। আপনিও আশাবাদী ও পজিটিভ হয়ে উঠবেন।

আশাবাদী মানুষ কখনও দীর্ঘ সময়ের জন্য নিজেকে হারিয়ে ফেলে না।

০৫. সব সময়ে কাজে ও শেখায় ব্যস্ত থাকুন

নিজেকে ব্যস্ত রাখুন

মানুষ তখনই নিজের উদ্দেশ্য হারিয়ে ফেলে যখন যে অকর্মা হয়ে বেশি সময় কাটায়। যারা বেশিরভাগ সময় বিনোদন করে, বা কিছুই না করে বসে থাকে – তারাই মূলত বেশিরভাগ সময়ে হতাশায় ভোগে। নিজেকে হারিয়ে ফেলা মানুষের মধ্যে এদের সংখ্যাই বেশি।

আর সবচেয়ে বিপদের কথা, এরা অনেক সময়ে নিজেও টের পায় না যে, কি কারণে এরা হতাশ হয়ে পড়েছে। মনে হয় শুধু শুধুই হতাশ লাগছে। আসলে কাজ না করতে করতে অথবা বিনোদন করতে করতে – নিজের জীবনের উদ্দেশ্যই এরা হারিয়ে ফেলেছে।

মানুষ প্রকৃতিগত ভাবেই কাজ না করলে দুর্বল ও হতাশ হয়ে পড়ে। মানুষের মস্তিষ্কে কার্যকর তথ্য প্রবাহ না থাকলে তাতে আজেবাজে চিন্তা ভর করে। এইজন্যেই কথায় বলে “অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা”।

এই অবস্থা থেকে বাঁচার সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর উপায় হল নিজেকে সব সময়ে প্রোডাক্টিভ কাজে ব্যস্ত রাখা, এবং সুযোগ পেলেই কাজে লাগার মত জ্ঞান অর্জন করা।

যে বিষয়টি শিখতে আপনার সবচেয়ে বেশি আগ্রহ – সেই বিষয় নিয়ে টিউটোরিয়াল বা বই সব সময়ে হাতের কাছে রাখুন। ফাঁকা টাইমে সোশ্যাল মিডিয়া না ঘেঁটে সেগুলোতে চোখ বুলাতে চেষ্টা করুন। আর সেই জ্ঞানকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন।

সময় ও অর্থ থাকলে বিভিন্ন কোর্সে ভর্তি হোন। জ্ঞান কখনও বৃথা যায় না। আর যদি তা না থাকে, ইন্টারনেট তো আছেই। আপনি যেটাই শিখতে চান, একটি গুগল সার্চ এর মাধ্যমেই তা শেখা সম্ভব।

আপনি যত শিখবেন, তত আপনার দক্ষতা বাড়বে। সেইসাথে বাড়বে আত্মবিশ্বাস। আপনার কাজ ভালো হবে, এবং আপনি কাজ করে আনন্দ পাবেন। নিজের লক্ষ্যের দিকে আরও সুন্দর ভাবে ও দ্রুত এগিয়ে যেতে পারবেন। মানুষের চোখেও আপনার প্রতি সম্মান বাড়বে। আপনি সব সময়ে ভালো বোধ করবেন – সোজা কথায়, আপনি সত্যিকার অর্থে সুখী হবেন।

জীবনে যে পরিস্থিতিই আসুক, কাজ করা ও শেখা বন্ধ করবেন না। দেখবেন এগুলোই আপনার মানসিক ও জাগতিক ঝামেলাকে দূর করে দিচ্ছে।

পরিশিষ্ট:

কোনও ব্যর্থতা আর হতাশাই মানুষের সম্ভাবনা থেকে বড় নয়। বহু অন্ধ, অক্ষম, বিকলাঙ্গ মানুষ কোটি কোটি সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে বহুগুণে সফল জীবন কাটিয়েছে – এখনও কাটাচ্ছে।

আর নিজেকে হারিয়ে ফেলা ১০০% খারাপ কোনও বিষয় নয়। সত্যি কথা বলতে, এটা আসলে খুব ভালো একটি অবস্থা। যদি সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে পারেন, তাহলে এটা আপনার জীবনের আসল উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়ার একটা দারুন সুযোগ। যে সুযোগ অনেক মানুষের জীবনেই আসে না। নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি মনে হওয়ার মানে হল পেছনে যা করেছেন – সামনে তারচেয়ে ভালো কিছু খুঁজে বের করতে পারবেন। জীবনকে আরও অর্থপূর্ণ করে তুলতে পারবেন। আর সেই পথে এই লেখাটি যদি আপনার একটুও কাজে আসে – তাহলেই আমাদের প্রচেষ্টা সফল।

লেখাটির বিষয়ে আপনার যে কোনও মতামত আমাদের কমেন্ট করে জানান। আপনার প্রতিটি মতামতই আমাদের কাছে মহামূল্যবান। 

আর যদি মনে হয় লেখাটি অন্যদেরও উপকার করবে – তবে শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন। 

আমরা আমাদের পাঠকদের কাছ থেকেও অনুপ্রেরণামূলক লেখা আশা করছি।  এই ধরনের লেখা যদি আপনিও লিখতে পারেন তবে write@test.edaning.com – এ ইমেইল করতে পারেন।  আপনার লেখা যত্ন সহকারে আপনার নাম সহ আমরা প্রকাশ করব। 

নিয়মিত অনুপ্রেরণামূলক ও আত্ম উন্নয়ন মূলক লেখা পাওয়ার জন্য আমাদের সাথে থাকুন।  সাফল্যের পথে লড়াকু সব সময়ে আপনার সাথে আছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন !