আমরা মনে করি এক টানা অনেক্ষণ কাজ করলে কাজ অনেক ভালো হয়। কিন্তু এটা আসলে ভুল ধারণা। এক নাগাড়ে অনেক্ষণ বসে কাজ করলে শরীরের ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি কাজের কোয়ালিটিও খারাপ হয়।
অনেক্ষণ এক নাগাড়ে বসে থাকলে পিঠ ধরে যায়। হাত-পায়ের জয়েন্টগুলো আড়ষ্ট হয়ে পড়ে। এমনকি যদি খুব ভালো সেট আপে বসে কাজ করেন – তবুও অনেক্ষণ একটানা বসে থাকবেন না। এতে শরীরে জড়তা এসে যাবে, তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হয়ে যাবেন, এবং কাজ থেকে ফোকাস সরে যাবে। এগুলোর কারণে আপনার কাজই ভালো হবে না।
সবচেয়ে ভালো উপায় হল, প্রতি ২৫ মিনিট পরপর ৫ মিনিট একটু হাঁটাহাঁটি করা ও শরীর বাঁকিয়ে হাল্কা ব্যায়াম করা। এই পদ্ধতিকে বলে “পমোডরো টেকনিক”।
১৯৮০ এর দশকের শেষ দিকে ফ্যানসেসকো সিরিলো নামে এক ইটালিয়ান শিক্ষার্থী এই পদ্ধতিটি আবিষ্কার করেন। ইটালিয়ান শব্দ পমোডরো এর মানে হলো টমেটো। সিরিলো কাজে এনার্জি ও মনোযোগ ধরে রাখার জন্য টমেটো আকৃতির একটি কিচেন টাইমার ব্যবহার করতেন বলে এই পদ্ধতিটির নাম হয়েছে পমোডরো টেকনিক।
শরীরকে চাঙ্গা রাখার জন্য রক্তচলাচল গতিশীল রাখা খুব জরুরী। টানা বসে থাকলে রক্তচলাচল ধীর হয়ে পড়ে।ফলে শরীরে ক্লান্তি আসে, মনে হয় এনার্জি নেই। আর একটানা অনেক্ষণ কাজ করলে কাজের ওপর থেকে মনোযোগও চলে যায়।
![](https://steemitimages.com/0x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmf3KEafLuDUN9jiWr4yMMbRSmmBQT9ghCUYfzSi1REnt7/blob)
আমরা যদি কোনও সিনেমা দেখি, বা গল্পের বই পড়ি, তখন সেটার শুরু ও শেষটা আমাদের সবচেয়ে বেশি মনে থাকে। মাঝখানের ঘটনা এতটা মনে থাকে না। এর কারণ, আমাদের মস্তিষ্ক কোনও কিছুর শুরু এবং শেষে সবচেয়ে বেশি ফোকাস করে। এই থিওরি কাজে লাগিয়েই মূলত পমোডরো টেকনিকের সৃষ্টি হয়েছে। একটি দীর্ঘ কাজকে ছোট ছোট সেশনে ভাগ করে, বার বার শুরু করার ফলে ফোকাস নষ্ট হয় না। এবং নিয়মিত বিরতিতে ছোট ছোট রেস্ট নেয়ার ফলে, অনেক্ষণ কাজ করেও এনার্জি নষ্ট হয় না।
যেভাবে পমোডরোকে কাজে লাগাবেন:
এই টেকনিকে প্রতিটি ওয়ার্ক সেশনকে ৪টি ২৫ মিনিটের সাব সেশনে ভাগ করা হয়। সব মিলিয়ে, ৪x২৫, মোট ১০০ মিনিটের সেশন।
প্রথম ৩টি সাব সেশনে প্রতি ২৫ মিনিট পর পর ৫ মিনিটের একটি করে ব্রেক নিতে হয়।
এই ব্রেকের সময়ে আপনি অবশ্যই চেয়ার ছেড়ে উঠবেন এবং একটু হাঁটাহাঁটি করবেন। ৪ নম্বর সাব সেশন, অর্থাৎ শেষ ২৫ মিনিটের সেশন শেষ করে ১৫-২০ মিনিটের একটি বড় ব্রেক নিন। তারপর আবার ১০০ মিনিটের আরেকটি সেশন শুরু করুন।
এই পদ্ধতিতে কাজ করলে, কাজে যেমন ফোকাস থাকবে, তেমনি এনার্জিও থাকবে। এখানে মনে রাখতে হবে, প্রতিটি ২৫ মিনিটের সেশনে আপনার মনযোগ যেন শুধু একটি কাজের ওপরেই থাকে। ফোকাস শিফট হলে মস্তিষ্ক দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
![](https://steemitimages.com/0x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmYJQSYy4UgRCn3YWMuMhKR99ikNyehSuwmTfpH9PG6iye/blob)
এক্ষেত্রে প্রতিটি সেশনে কোন কাজটি করবেন, তা আগে থেকে ঠিক করে রাখুন। সেই কাজটি শেষ হওয়ার আগে অন্য কোনও কাজের জন্য টাইমার সেট করবেন না। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে কাজ করলে নিজের কাজের গতি ও কোয়ালিটি দেখে আপনি নিজেই অবাক হয়ে যাবেন।
আপনি যদি এ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করেন, তবে Google Play তে pomodoro timer লিখে সার্চ দিলেই পমোডরো এ্যাপ পেয়ে যাবেন। আর যদি কম্পিউটারে ব্যবহার করতে চান, তবে free pomodoro software লিখে গুগলে সার্চ দিলে বেশকিছু এ্যাপলিকেশন পেয়ে যাবেন। এগুলো ছাড়াও, নিজের ঘড়িতে বা মোবাইলে সময় দেখেও এই টাইম মেইনটেন করতে পারেন।
এই লেখাটি ভালো লাগলে “এনার্জি বৃদ্ধির ১১ উপায়: সারাদিন কাজ করেও এনার্জি ধরে রাখুন” লেখাটি পড়তে পারেন।
লেখাটি আপনার কেমন লাগলো – তা আমাদের কমেন্ট করে জানান। যে কোনও মতামত আর পরামর্শ কমেন্টে লিখুন। আপনার সব মতামতই আমাদের কাছে অমূল্য।
আর যদি মনে হয় লেখাটি অন্যদের উপকারে আসবে, তবে শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন।
এই ধরনের আরও লেখা পেতে আমাদের সাথে থাকুন। সাফল্যের পথে লড়াকু সব সময়ে আপনার সাথে আছে।