টাকার সঠিক ব্যবহার করতে বাধ্য করবে যে বই: “টোটাল মানি মেকওভার” (বুক রিভিউ)


টাকার সঠিক ব্যবহার যারা করতে পারে, তারাই আসলে ধনী আর অর্থনৈতিক ভাবে স্বাধীন হয়।  অনেকেই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি টাকা মাসে আয় করেও মাসের শেষে টানাটানিতে পড়েন, মাঝে মাঝে ধারও করতে হয়।  এবং যত টাকাই আয় করেন না কেন, আর্থিক ভাবে শান্তিতে থাকা হয়ে ওঠে না।

রবার্ট কিওসাকি তাঁর বেস্ট সেলিং বই “রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড” এ বলেছেন, ধনী হতে গেলে টাকার সঠিক ব্যবহার জানতে হবে।  হাতে টাকা আসলেই খরচ করে উড়িয়ে ফেলা যাবে না।  যতটা পারা যায় জমিয়ে রাখতে হবে, এবং সেগুলো বিনিয়োগ করে আরও টাকা বানাতে হবে।  একই রকম কথা পাওয়া যায় ওয়ারেন বাফেট এর বিখ্যাত উক্তি দেখলে: “খরচের পর না জমিয়ে, জমানোর পরে যা বাকি থাকে – তা খরচ করো”।  – অর্থা‌ৎ ধনী হওয়ার জন্য বা কমপক্ষে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য টাকার সঠিক ব্যবস্থাপনা ও টাকা জমানোর কোনও বিকল্প নেই।

এই বিষয়টা সবাই জানলেও, আসলে খুব কম মানুষই এই কাজটা করতে পারেন।  শুনতে সহজ মনে হলেও সঠিক ভাবে টাকার ব্যবহার করা আসলে বেশ কঠিন কাজ, এবং সেই কারণেই অল্প কিছু মানুষই ধনী অথবা অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেন।

বাংলাদেশী টাকায় ৪৫৬ কোটি টাকা মোট সম্পদের অধিকারী সফল ব্যবসায়ী এবং লেখক ডেভ র‍্যামসি তাঁর বেস্ট সেলিং বই “The Total Money Makeover: A Proven Plan for Financial Fitness” এ এমন কিছু উপায়ের কথা লিখেছেন, যেগুলো অবলম্বন করে আপনিও আপনার টাকার সঠিক ব্যবহার করতে পারবেন।  বাজে খরচ, ঋণ – এসব থেকে বাঁচতে আর ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে – এরচেয়ে ভালো ও সহজ টিউটোরিয়াল আর একটিও নেই। এই বইটির রিভিউ দিতে গিয়ে অনেকেই বলেছেন “যদি আপনি বুঝতে পারেন, তবে এটি আপনাকে সঠিক ভাবে টাকা ব্যবহার করতে বাধ্য করবে”।

টোটাল মানি মেকওভার বইতে লেখক টাকার সঠিক ব্যবহার করার মোট ৭টি উপায় বা ধাপ নিয়ে আলোচনা করেছেন।  এই ৭টি ধাপ যদি সত্যি সত্যি পূরণ করতে পারেন, তবে টাকা নিয়ে বোধহয় আর কোনওদিন ঝামেলায় পড়বেন না।

“টাকার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার ৭টি ধাপ”

১ম ধাপ: একটি বড় অংকের টাকা যত তাড়াতাড়ি পারেন জমিয়ে ফেলুন

লেখকের মতে, এই ধাপটি হলো সবচেয়ে কঠিন ধাপ।  কঠিন ধাপ এই জন্য নয় যে তিনি পাঠককে ১০০০ মার্কিন ডলার জমাতে বলছেন, কঠিন ধাপ এই জন্য যে, এই ধাপেই আপনি আপনার জীবনযাত্রার ধরন পুরোপুরি পাল্টে ফেলার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন ।  আপনি সক্রিয় ভাবে নিজের আয় আর খরচের হিসাব রাখা শুরু করছেন।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটা ৫০০০০ থেকে ১লক্ষ টাকা হতে পারে।  আপনার আয় অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিন, কিন্তু সেটা যেন খুব কম না হয়, নিজেকে চ্যালেঞ্জ করুন।  অবশ্য যদি খুব কম বেতনের কাজ করেন তবে ২০ হাজার হতে পারে।  চিন্তা করুন কত তাড়াতাড়ি আপনি টাকাটি জমাতে পারবেন, এবং প্রতিদিন/প্রতি সপ্তাহ/ প্রতি মাসে কত টাকা জমাতে হবে।  একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা ঠিক করে জমানো শুরু করে দিন।

U.s Dollar Bills Pin Down on the Ground

এই টাকাটিকে লেখক “startup emergency fund” বলেছেন। 

হয়তো এই টাকাটি বড় বড় বিপদ বা ইমার্জেন্সীতে আপনাকে সাহায্য করবে না, কিন্তু আপনার নিজেকে অনেক নিরাপদ মনে হবে।  সেইসাথে নিজের প্রতি একটা আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি হবে।  হয়তো প্রথমবারের মত মনে হবে, আপনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন, সেইসাথে এটাও বুঝবেন যে, আপনি চাইলে আপনার টাকাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। 

যদি টাকার অংকটা বেশি মনে হতে থাকে, তবে দরকার হলে ওভার টাইম কাজ করুন, দোকানে একটু বেশি সময় বসে থাকুন, সিনেমা দেখা বা রেস্টুরেন্টে খাওয়া বাদ দিন – যেভাবেই হোক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকাটি জমানোর চেষ্টা করুন।

লেখক বলেন, ১ মাসের মধ্যে এটা করতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়, তবে আপনি আপনার সামর্থ অনুযায়ী সবচেয়ে কম সময়সীমাটি ঠিক করে নিতে পারেন।

এখানে একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, টাকা এমন ভাবে জমাতে হবে, যেন পুরো এ্যামাউন্টটি জমার আগে সেখান থেকে একটি টাকাও খরচ না হয়।

আর সবশেষে লেখক যেটি করতে বলেন, টাকাটা যেন অবশ্যই নগদ জমানো হয়।  অর্থা‌ৎ বন্ড, মিউচুয়াল ফান্ড বা এই ধরনের কিছুতে জমানোর বদলে, টাকাটি যেন নগদ অর্থ হয়।  টাকাটি ব্যাংকে রাখতে পারেন, কিন্তু অবশ্যই সেটা আপনাকে নিজ হাতে জমা করতে হবে।

টাকা জমানো হয়ে যাওয়ার পর আপনি ২য় ধাপে যেতে পারবেন।

২য় ধাপ: ঋণ নিয়ে খেলুন (ডেব্‌ট স্নো-বল)

শিরোনামটি পড়ে ভুল বুঝবেন না।  এখানে আপনাকে নতুন করে ঋণ নিতে বলা হচ্ছে না।  আপনার ইতোমধ্যেই যে ঋণগুলো আছে, সেগুলো নিয়েই খেলতে বলা হচ্ছে।

খেলার নিয়ম হলো, প্রথমেই আপনার যতগুলো ঋণ আছে (হাউজ লোন বাদে) সবগুলোর একটি লিস্ট করুন।  সবার চেয়ে কম অংকেরটি আগে লিখুন, এরপর তারচেয়ে বেশি টাকার ঋণ গুলি একে একে ছোট থেকে বড় আকারে লিস্ট করুন। 

এবার আপনি এক নজরে আপনার লোন বা ঋণগুলো দেখতে পাবেন। 

সবচেয়ে কম টাকার যে লোনটি বা ধারটি আছে, সেটি বাদে বাকি সবগুলো কিছু কিছু করে শোধ করুন, এরপর সবচেয়ে ছোট লোনটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একবারে শোধ করে চেষ্টা করুন।  তারপর তারচেয়ে বড়টি শোধ করুন, তারপর তারচেয়ে বড়টি।  এভাবে যত ধার বা ঋণ আছে – শোধ করা শুরু করুন।

টাকার সঠিক ব্যবহার করুন

ঠিক যেভাবে ১ম ধাপের টাকাটি জমিয়েছিলেন, ঠিক সেরকম মনোযোগের সাথে ঋণ শোধের কাজটিও করতে থাকুন।  দরকার হলে  কিছু কিছু আপাতত অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে দিন।

এবারের শীতের ট্যুর বাদ দিন। ৩০০০ টাকার জায়গায় ১৫০০ টাকার জুতাটাই নাহয় এবার কিনলেন।  বন্ধুর খালাতো বোনের বিয়েতে নাহয় না গেলেন।  আইফোনের বদলে নাহয় শাওমি বা স্যামসাং ফোন কিনলেন। 

ডেভ বলেন, ঋণ পরিশোধ করার অভ্যাস করা শুরু করলে আপনার নিজের মাঝে একটা দারুন পরিবর্তন হবে।  আপনি নিজেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঋণের বোঝা থেকে মুক্ত হতে চাইবেন।  কারণ, ছোট ছোট ঋণগুলো পরিশোধ করতে করতে আপনি বুঝতে পারবেন – ঋণমুক্ত থাকাটা আসলে কতটা শান্তির।  তাই লেখক বলেন, বাজে খরচে টাকা নষ্ট না করে টাকার সঠিক ব্যবহার করে ঋণমুক্ত হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। 

তবে এখানে লেখক সাবধান করে দেন, ঋণ পরিশোধের জন্য যেন ১ম ধাপে জমানো টাকা ব্যবহার করা না হয়।  ঐ টাকাটা শুধুমাত্র ইমার্জেন্সীর জন্য।  যদি এমন কোনও পরিস্থিতি দেখা দেয়, যেখানে টাকার খুবই প্রয়োজন এবং ইমার্জেন্সী ব্যালেন্স ছাড়া কোথাও টাকা নেই – তখনই শুধু ওই টাকায় হাত দেয়া যাবে।

তবে ইমার্জেন্সী শেষ হলে আবারও সেই টাকা জমিয়ে ফেলতে হবে।  মানে, ওই টাকা কখনওই আপনার ঠিক করা এ্যামাউন্টের নিচে হতে পারবে না।  দরকার হলে ঋণ শোধ করা বাদ দিয়ে আগে সেই ইমার্জেন্সী ব্যালেন্স আবার আগের জায়গায় নিয়ে যেতে হবে।  তারপর আবার ঋণ শোধ করা শুরু করতে হবে।  এখানে ক্রেডিট কার্ডের ক্রেডিট ব্যালেন্সও জিরো করার প্রয়োজন আছে।  ক্রেডিড কার্ড আসলে সুবিধার রূপে একটি ঋণের ফাঁদ, যা আপনাকে সব সময়ে আটকে রাখতে চায়।

ঋণ শোধ করার পর (হাউজ লোন/বিজনেস লোন এর মত দীর্ঘমেয়াদী লোন বাদে) আপনি ৩য় ধাপে যেতে পারবেন।

৩য় ধাপ: ৩ থেকে ৬ মাস চলার মত একটি ফান্ড তৈরী করুন

বেশিরভাগ ঋণ পরিশোধ হয়ে যাবার পর আপনি যখন বেশ খানিকটা নিশ্চিন্ত হয়ে গেছেন – তখন আরও নিশ্চিন্ত হওয়ার জন্য আপনার ইমার্জেন্সী ফান্ডকে দারুন শক্তিশালী করা শুরু করতে হবে।

মূলত এই ধাপে আপনি ৩ মাস থেকে ৬ মাস খুব ভালোভাবে চলার মত টাকা জমিয়ে রাখবেন। 

এখানে পাঠকরা একটু কনফিউজড হয়ে যান।  অনেকেই বুঝতে পারেন না তাঁর জন্য ৩ মাসের প্ল্যান না ৬ মাসের সঞ্চয় করা ভালো হবে।

লেখক বলেন, এই ফান্ডটি করার কারণ হলো, একজন মানুষকে রিস্ক থেকে বাঁচানো।  ব্যবসায়ে লস হতে পারে, চাকরি চলে যেতে পারে, এ্যাকসিডেন্ট বা অসুস্থতা হতে পারে – এইসব ঝুঁকি বা রিস্ক মানুষের জীবনে সব সময়েই থাকবে।

আপনি যদি ইতোমধ্যেই ধনী না হন – তবে আপনিও এই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। 

টাকার ব্যবহার

এখন প্রশ্ন হলো ৩ মাসের ফান্ড গড়বেন, না ৬ মাসের?

এটা আসলে নির্ভর করে আপনি কি ধরনের কাজ করেন, এবং আপনার আয় কেমন – তার ওপর।

আপনি যদি নতুন কর্মজীবনে ঢুকেছেন, অথবা এমন কোনও চাকরি করেন, অথবা আপনার ক্যারিয়ার এখন এমন অবস্থায় আছে যে চাকরি চলে গেলে আবার চাকরি পেতে বা অন্যকিছু শুরু করতে আপনার ৩ মাসের বেশি লেগে যেতে পারে – তবে কমপক্ষে ছয় মাসের জন্য ফান্ড জমাতে শুরু করুন।

আর যদি মার্কেটে আপনার দারুন সুনাম থাকে, আপনাকে প্রায়ই বিভিন্ন জায়গা থেকে ডাকা হয় এবং আপনার ক্যারিয়ারও এখন দারুন অবস্থায় আছে – তবে ৩ মাসের ফান্ড জমালেই চলবে।

তবে যে মেয়াদের ফান্ডই আপনি জমান না কেন – এই কাজেও যেন অন্য দু’টি ধাপের মত আপনার পূর্ণ ফোকাস থাকে।  এখানেও দরকার হলে সব রকমের বাজে খরচের পাশাপাশি, আপাতত দরকারী নয় – এমন খরচও বাদ দেবেন।

এই ফান্ডটি করা হয়ে গেলে আপনি ৪র্থ ধাপে যেতে পারবেন। 

৪র্থ ধাপ: আপনার আয়ের ১৫% আলাদা করে জমাতে থাকুন

আপনি যখন আপনার ঋণ শোধ করে ফেলবেন, এবং বড় অংকের একটি ইমার্জেন্সী ফান্ড করে ফেলবেন – তখন আপনি আরও নিশ্চিন্ত ভাবে কাজ করতে পারবেন।  বলতে গেলে আপনার মাথায় কোনও চাপই থাকবে না।  আপনি চাইলে আরও বেশি পরিমানে কাজ করতে পারেন এবং বেশি আয় করতে পারেন।

তবে, লেখকের মতে, আপনি যতই আয় করেন না কেন, সেই আয়ের ১৫% অবশ্যই জমিয়ে রাখবেন।  আপনি যতদিন আয় করবেন – ততদিন এই টাকা জমাতে থাকবেন।  এই ফান্ডটি হবে অনেক বেশি দীর্ঘ মেয়াদের – ধরুন ১০ বছর।  এভাবে জমাতে থাকলে আপনি বুঝতেও পারবেন না যে আপনি কখন সত্যি সত্যি ধনী হয়ে গেছেন।

মনে করুন আপনি মাসে ৫০ হাজার টাকা আয় করেন।  এর ১৫% মানে ৭৫০০; বছরে ৯০০০০; ৫ বছরে সাড়ে ৪ লাখ। 

এই টাকাটি পরে আপনি চাইলে এমন কোনও ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে পারেন, যেখান থেকে আপনার আরও বেশি আয় হয়।

Banknotes and Coins Beside Gray Safety Box

তবে এই ধাপ শুরুর আগে আপনাকে অবশ্যই আগের ধাপগুলো পূরণ করে আসতে হবে – না হলে আপনি শান্তিমত টাকা জমাতে পারবেন না।   কখনও ঋণ, আবার কখনও কোনও ইমার্জেন্সীর ফলে ফলে আপনি টাকা জমাতে পারবেন না।  কাজেই আগে আগের ধাপগুলো পূরণ করে আসুন।

এই ধাপের মূল কথা মোটামুটি এটাই।  বইয়ে অনেক জটিল অংকের হিসাব করে ব্যাপারটি প্রমাণ করা হয়েছে।  আপনাকে আর সেইসব অংকের হিসাব দিয়ে বিরক্ত না করে ৫ম ধাপে যাওয়া যাক।

৫ম ধাপ: সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার জন্য আলাদা করে টাকা জমান

সাধারণ মানুষের বেশিরভাগ অর্থই চলে যায় সন্তানের পেছনে।  আর সন্তানের পেছনে যাওয়া টাকার একটি বড় অংশই হয় তার লেখাপড়ার খরচ। 

আপনি যদি সন্তান হওয়ার আগে থেকেই তার লেখাপড়ার জন্য অল্প অল্প করে টাকা জমাতে শুরু করেন – তাহলে সে বড় হতে হতে দেখবেন তার উচ্চশিক্ষার প্রায় পুরো টাকাটিই আপনার হাতে রয়ে গেছে।

একটি সন্তান জন্মের পর থেকে যদি আপনি প্রতি মাসে তার জন্য ৫০০ টাকা করেও আলাদা করে রাখতে পারেন – তবে ১৭-১৮ বছর পর দেখবেন অনেকগুলো টাকা হয়ে গেছে – যা তার উচ্চ শিক্ষার খরচের অনেকটাই পূরণ করছে।

Close-up of Woman Working

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এটা অনেকটাই অবাস্তব মনে হলেও, বাইরে কিন্তু অনেকেই এই কাজটা করে থাকেন।  এমনকি ব্যাংকগুলোর আলাদা সার্ভিসও আছে এই ব্যাপারে।  যখন সময় চলে আসে, তখন অন্য খাত থেকে অনেকগুলো টাকা বের করার চেয়ে এই খাতের জন্য জমানো টাকা খরচ করলে বিষয়টি অনেক সহজ হয়ে যাবে।

৬ষ্ঠ ধাপ: বড় লোন দ্রুত শোধ করে দিন

দ্বিতীয় ধাপে আপনাকে সব ঋণ শোধ করার পরামর্শ দিলেও লেখক আপনাকে তখন বড় লোন একবারে শোধ করতে নিষেধ করেছিলেন।  কারণ, সেই সময়ে বড় লোন একবারে শোধ করতে গেলে আপনার অন্য কাজগুলো করা হতো না।

Ballpoint Pen on Top of White Printer Paper Beside 100 U.s. Dollar Bill

অনেকেই লোন নিয়ে ফ্ল্যাট/বাড়ি কেনেন, এবং অনেক সময় ধরে সেই লোনের কিস্তি শোধ করেন।  কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ বোঝে না যে, লোন পরিশোধের সময় যত বাড়াবেন, আপনাকে তত বেশি সুদ দিতে হবে। কোম্পানী/ব্যাংকগুলো চায়ই আপনি দেরিতে লোন শোধ করুন।

কিন্তু এর বদলে যদি আপনি বেশি বেশি করে কিস্তি দিয়ে লোন শোধ করে দিতে পারেন, তবে দীর্ঘ মেয়াদে আপনার অনেকগুলো টাকা বেঁচে যাবে।  এবং সেই টাকা আপনি অন্য কাজে লাগাতে অথবা জমাতে পারবেন। 

৭ম ধাপ: নিজের মত করে বাঁচুন

আপনি যদি আগের সবগুলো ধাপ ঠিকমত পূরণ করতে পারেন, তবে এই ধাপে এসে আপনি একজন সত্যিকার স্বচ্ছল ও আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী মানুষ হয়ে যাবেন।  টাকার জন্য আপনার কারও দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না। 

Person Wearing Pair of Brown Leather Loafers

আপনার হাতে অনেক জমানো টাকা থাকবে – এবং আপনি ইচ্ছেমত সেগুলো কাজে লাগাতে পারবেন।

লেখক পরামর্শ দেন, আপনার জমানো টাকার একটা অংশ যেন অবশ্যই বিনিয়োগে লাগে।  চাইলে নিজের একটা ছোটখাট ব্যবসাও শুরু করতে পারেন।  এই সময়ে আপনার আর চাকরির প্রয়োজন হবে না।  আপনি যেভাবে চান সেভাবেই টেনশন ফ্রি সময় কাটাতে পারবেন।

শেষ কথা:

টোটাল মানি মেকওভার বইটি আসলে কোনও ধনী হওয়ার বিষয়ের বই নয়।  কিন্তু এই বইয়ের শিক্ষাগুলো কাজে লাগিয়ে যে কেউ তার টাকার সঠিক ব্যবহার করতে পারবে – এবং টাকাকে নষ্ট হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে পারবে।

যে টাকাটি হয়তো আপনি বাজে খরচ করে উড়িয়ে দিতেন – সেই টাকাটিই ঋণ শোধে করা, সন্তানের পড়াশুনা,  বা বিনিয়োগের কাজে লাগবে। 

টাকা চাইলে যে কেউ তা রোজগার করতে পারে, কিন্তু সেই টাকার সঠিক ব্যবহার করে নিজের ও পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ও সেই সাথে ধনী হতে পারা মানুষের সংখ্যা খুবই কম।   এই বইটিতে আসলে সেই মানসিকতা তৈরীর কিছু উপায় বলা হয়েছে।

ব্যাপারটা এমন নয় যে এই বইয়ের বিষয়গুলো কাউকে পুরোপুরি ফলো করতে হবে – পুরো বিষয়টি আসলে টাকাকে সঠিক ভাবে ব্যবহার করার একটি দারুন অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য কিছু চর্চা বা প্রাকটিস।

বইয়ের লেখকের উদ্দেশ্য হলো পাঠকরা যেন বইটি পড়ে নিজের টাকাকে সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে পারার প্রেরণা পায়, এবং অর্থের সঠিক ব্যবহার করার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারে।  বইটির জনপ্রিয়তা ও বিক্রির হার দেখে বোঝা যায়, লেখক তাঁর কাজে সফল।

আমরা বইটির মূল বিষয়গুলোকে সংক্ষেপে আপনার সামনে তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি। যদি এই বুক রিভিউ থেকে আপনি টাকার সঠিক ব্যবহার বিষয়ে একটু হলেও ধারণা পান, এবং নিজের টাকাকে নষ্ট না হতে দিয়ে সত্যিকার কাজে লাগানোর প্রেরণা পান – তবেই আমাদের চেষ্টা সফল বলে ধরে নেব।

আমাদের চেষ্টা কতটা সফল হয়েছে, তা অবশ্যই কমেন্ট করে আমাদের জানাবেন।  আর যদি মনে হয় এই বুক রিভিউ পড়ে অন্যরাও উপকার পাবে – তবে শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন।

আমাদের সাথে থাকুন। সাফল্যের পথে, সব সময়ে, লড়াকু আপনার সাথে আছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন !