দীর্ঘসময় কথা বলার জন্য কিভাবে প্রশ্ন করতে হয়?


অনেক সময়েই এমনটা হয় যে আমরা কারও সাথে কথা বলার সময়ে অনেক সুন্দর সুন্দর প্রশ্ন করি এবং বেশ ভালো ভালো কথা বলি – কিন্তু ওপাশ থেকে ‘হ্যাঁ’, ‘না’, ‘ওয়াও – তাই নাকি!’, ‘ভালোতো’ – ইত্যাদি ছোট ছোট উত্তর আসতে থাকে।  এর ফলে এক সময়ে গিয়ে আপনার আর কথা বলার আগ্রহ থাকে না। আড্ডা বা কথপোকথন ওখানেই শেষ হয়ে যায়।

অনেকেই বোঝে না যে আসলে তার ভুলটা কোথায় হয়েছে,  এবং কিভাবে প্রশ্ন করতে হয়।

ভুলটা আসলে হয় প্রশ্ন করার ধরনে। এখানে যেগুলোকে ‘বন্ধ প্রশ্ন’ বলা হচ্ছে, সেগুলো আসলে এমন প্রশ্ন যার উত্তরে ছোট ছোট কথা বললেই চলে।  কিন্তু এমন কিছু প্রশ্ন আছে যেগুলোকে ‘খোলা প্রশ্ন’ বলা যায় – সেগুলোর উত্তর এক-দুই কথায় দেয়া সম্ভব নয়। এখানে একটি তথ্য আপনাকে জানিয়ে রাখি, মানুষ নিজের ব্যাপারে কথা বলতে খুব পছন্দ করে – কেউ হয়তো স্বীকার করে, আর কেউ করে না।  কিন্তু ব্যাপারটা এটাই। একটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা আপনার কাছে পরিস্কার হয়ে যাবে।

ধরুন আপনি আপনার এক নতুন পরিচিত বন্ধুর এক পার্টিতে গিয়েছেন। পার্টিতে আপনি শুধু তাকেই চেনেন।  তো আপনার বন্ধু (ধরা যাক তার নাম রাজিব) খাওয়াদাওয়া ও অন্যান্য আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, এবং আপনি ভবঘুরের মত পার্টির এখানে সেখানে ঘুরছেন।  খুবই বেদনাদায়ক একটি ব্যাপার। এখন ধরা যাক আপনি ঠিক করলেন কারও সাথে কথা বলে সময়টা পার করবেন। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতে পেলেন আপনার সমবয়সী একজনও একা একা এক কোনে দাঁড়িয়ে আছেন।  আপনি তার দিকে এগিয়ে গিয়ে কথা শুরু করলেন:

আপনি: হাই

সে: হাই

আপনি: পার্টিটা বেশ ভালোই না?

সে: হ্যাঁ, ভালোই…

আপনি: আপনি রাজিবের বন্ধু?

সে: হ্যাঁ…

আপনি: আমিও… আচ্ছা আপনি খেয়েছেন?

সে: না…

আপনি: আচ্ছা, আমিও না

সে: (বিব্রত হেসে) ও… ঠিক আছে… আচ্ছা আমি একটু ওদিকটায় যাই, কথা বলে ভালো লাগল

আপনি: (বিব্রত হাসি) ওকে

এই কথাবার্তার ভুলটা কোথায়, তা হয়তো অনেকেই ধরতে পারবে না।  কিন্তু এটা বুঝতে না পারার কারনেই আমরা অনেকে প্রথম দেখায় আলাপ জমাতে পারি না।

আবার আপনি যদি ভেবে থাকেন, শুধু প্রশ্ন করে যাওয়ার কারনে আলাপ জমেনি, তাহলেও ভুল করবেন।

আসলে শুধু মাত্র প্রশ্ন করেই একজন মানুষের সাথে অনেক্ষণ কথা বলা যায়। কিন্তু সেজন্য সঠিক ধরনের প্রশ্ন করতে হবে।

প্রশ্ন

আগেই বলা হয়েছে, প্রশ্ন আসলে দুই ধরনের: বন্ধ এবং খোলা প্রশ্ন।  এই নাম দেয়ার কারণ হল, ‘বন্ধ’ প্রশ্ন কথা এগিয়ে নেয়ার পরিবর্তে কথা বন্ধ হওয়ার দিকে নিয়ে যায়।  অন্যদিকে ‘খোলা’ টাইপের প্রশ্ন গুলো মানুষকে মন খুলে কথা বলায়।

চলুন একই দৃশ্যে এবার খোলা প্রশ্ন করার ফলে কি ঘটে দেখি:

আপনি: হাই, আমার নাম x… আপনি?

সে: হাই, আমি Y

আপনি: পার্টি তো ভালোই চলছে …

সে: হ্যাঁ, বেশ ভালো পার্টি

আপনি: আমার তো পার্টির ডেকোরেশন খুবই ভালো লেগেছে.. আপনার কোন জিনিসটা সবচেয়ে ভালো লেগেছে?

[এই ধরনের প্রশ্নে এক কথায় উত্তর দেয়া সম্ভব নয়।  কাজেই বড় উত্তর  আসবে। আর আগেই বলেছি, মানুষ সব সময়েই নিজেকে তুলে ধরতে পছন্দ করে।  – Y এর উত্তরটা কি হতে পারে তার একটা আইডিয়া নেয়া যাক-]

Y: আমার তো পার্টির সবকিছুই ভালো লেগেছে, গানগুলো বেশ ছিল

[এরপর আপনি গান নিয়ে তার সাথে কথা বলতে শুরু করতে পারেন।  কোনও ধরনের গান তার পছন্দ, তার প্রিয় শিল্পী কে – ইত্যাদি ইত্যাদি]

এরপর আসা যাক আপনার করা আগের বারের দ্বিতীয় প্রশ্নে।  প্রশ্নটি ছিল, Y রাজিবের বন্ধু কি-না? – প্রশ্নটি এভাবে না করে, যদি বলা হত রাজিবের সাথে তার কিভাবে পরিচয় হয়েছে – তাহলে কিন্তু “হ্যাঁ” এর চেয়ে আরও বড় একটি উত্তর পাওয়া যেত।

আবার খাবারের ব্যাপারেও কিন্তু আপনি কথা বাড়াতে পারতেন। আজকের মেন্যুতে তার প্রিয় খাবার কোনটি, এবং কেন সেটি প্রিয় – এই বিষয়ে আলোচনা শুরু করে।  – মোটের উপর প্রশ্নগুলো এমন হওয়া চাই যাতে করে সামনের মানুষটি নিজেকে বিস্তারিত ভাবে প্রকাশ করার সুযোগ পায়।


প্রশ্ন কিভাবে করতে হয়, এটা ছাড়াও মানুষের সাথে আলাপ জমানোর আরও টিপস পেতে “মাত্র ৯০ সেকেন্ডেই যে কাউকে বন্ধু বানানোর উপায়” লেখাটি পড়ুন।

সেই সাথে, এই লেখাটি সম্পর্কে আপনার মতামত আমাদের কমেন্ট করে জানান।

যদি মনে হয় এই লেখাটি অন্যদের কাজে লাগবে, তবে শেয়ার করে সবাইকে দেখার  সুযোগ করে দিন। 

আমাদের সাথে থাকুন; সাফল্যের পথে প্রতি পদক্ষেপে লড়াকু আপনার সাথে থাকতে চায়।

পোস্টটি শেয়ার করুন !