ওয়ারেন বাফেট এর জীবনী: বিনিয়োগের জিনিয়াস এর কাহিনী


কিছু মানুষের হাতে নাকি জাদু আছে। তাঁরা যাতেই হাত দেন, তা সোনা হয়ে যায়। ওয়ারেন বাফেট এর জীবনী আসলে সেই কথাকেই প্রমাণ করে।

পৃথিবীর সর্বকালের সেরা ইনভেস্টর ও উদ্যোক্তাদের একজন তিনি। জেদের বশে লোকসানের মুখে বন্ধ হতে যাওয়া বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে কিনে নিয়ে তাকে পৃথিবীর সেরা ১০টি কোম্পানীর একটি বানিয়েছেন।

বিশ্ব ইতিহাসে শেয়ার প্রতি সর্বোচ্চ মূল্য ওয়ারেন বাফেটের কোম্পানীর। প্রতিটি ক্লাস ‘এ’ শেয়ারের মূল্য ৩ লাখ ডলারের বেশি!

ডেইরি কুইন, ইউনাইটেড এয়ারলাইনস, ইউএস এয়ারলাইনস, কোকাকোলা (৯.৪% শেয়ার), ব্যাংক অব আমেরিকা (৬.৮% ), এ্যাপল (৫.২২%), আমেরিকান এক্সপ্রেস (১৭.৬%) আইবিএম (৮ কোটি ১০ লাখ শেয়ার) – সহ এমন বহু কোম্পানীর কলকাঠি নাড়ার মত অংশীদারিত্ব আছে তাঁর ও তাঁর কোম্পানীর।

২০১৩ সালে তাঁর দৈনিক আয় ছিল ৩৭ মিলিয়ন বা ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার।  বর্তমানে তাঁর মোট সম্পদ ৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।  জ্যাক মা, ইলন মাস্ক এর মত বিশ্বখ্যাত উদ্যোক্তাদের চেয়ে এই সম্পদ প্রায় দ্বিগুণ।

প্রশ্ন জাগতেই পারে, এত বিশাল সাফল্য একজন উদ্যোক্তা কিভাবে পেলেন? এই পথই বা কতটা কঠিন ছিল?

চলুন জেনে নিই ওয়ারেন বাফেট এর জীবন কাহিনী থেকে:

এক নজরে ওয়ারেন বাফেট:

পুরো নাম: ওয়ারেন এডওয়ার্ড বাফেট

বয়স: ৮৮ (২০১৮)

যে কারণে বিখ্যাত: বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে এর মালিক, সফল উদ্যোক্তা, মানবসেবী

উচ্চতা: ৫ফুট ৮ ইঞ্চি

পিতা ও মাতা: হাওয়ার্ড ও লেইলা বাফেট

বাড়ি: ওমাহা, নাব্রাসকা, যুক্তরাষ্ট্র

মোট সম্পদ: ৯০ বিলিয়ন বা ৯০০ কোটি মার্কিন ডলার

ওয়ারেন বাফেট এর পূর্ণাঙ্গ জীবনী:

ছেলেবেলা ও শিক্ষা:

১৯৩০ সালে আমেরিকার নাব্রাসকা প্রদেশের ওমাহায় স্টক ব্রোকার (পরবর্তীতে কংগ্রেস ম্যান) হাওয়ার্ড বাফেট ও লেইলা বাফেট এর ঘরে জন্ম নেন তাঁদের এক মাত্র পুত্র ওয়ারেন বাফেট। ৩ ভাইবোনের মাঝে ওয়ারেন ছিলেন দ্বিতীয়। 

ওয়ারেন বাফেট কাহিনী
[বালক ওয়ারেন বাফেট]

ওয়ারেন বাফেটের প্রথম স্কুল ছিল, ওমাহার ‘রোজ এলিমেন্টারি স্কুল’। যখন ওয়ারেন বাফেটের বয়স ১২ বছর, তখন তাঁর বাবা হাওয়ার্ড নাব্রাসকার কংগ্রেসম্যান নির্বাচিত হন।  কংগ্রেস ম্যান আমাদের দেশের সংসদ সদস্যের মত একটি পদ।  মূলত তাঁদের ভোটেই আইস পাশ হয়।  হাওয়ার্ড বাফেট পর পর ৪বার এই পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

প্রথমবার নির্বাচিত হয়ে হাওয়ার্ড তাঁর পরিবার সহ ওয়াশিংটন ডিসি তে চলে আসেন, এবং ওয়ারেন প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে সেখানেই এ্যালিস ডেল জুনিয়র হাইস্কুল এ ভর্তি হন।  পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে তিনি উডরো উইলসন হাইস্কুল থেকে স্কুল গ্রাজুয়েট হিসেবে বের হন।  স্কুল ইয়ার বুকে তাঁর ছবির নিচে লেখা ছিল “ছেলেটা অংক পছন্দ করে, ভবিষ্যতে একজন স্টক ব্রোকার হবে”

স্কুলে পড়ার সময়েই বাফেট ও তাঁর এক বন্ধু মিলে ২৫ ডলার দিয়ে একটি স্পিনবল মেশিন কিনে এক নাপিতের দোকানের পাশে স্থাপন করেন।  টাকার বিনিময়ে অনেকেই এই খেলা খেলে সময় কাটাতেন।  পরে সেই মেশিনের লাভ থেকে তাঁরা আরও দুইটি মেশিন কিনে ফেলেন।  ব্যবসা জমে উঠলে তাঁরা পুরো ব্যবসাটি ১২০০ ডলারে বিক্রী করে দেন।  মাত্র ৭৫ ডলার বিনিয়োগ করে ১২০০ ডলার – সাথে ব্যবসার লাভ তো ছিলই! বালক বয়স থেকেই এমন ব্যবসার মাথা ছিল ওয়ারেন বাফেটের।

স্পিনবল মেশিনের ব্যবসা ছাড়াও ওয়ারেন স্কুলে পড়ার সময়েই চুইং গাম বিক্রী, কোকাকোলার বোতল বিক্রী, বাসায় বাসায় পত্রিকা বিলি করা– ইত্যাদি অনেক কাজ করেই টাকা রোজগার করার চেষ্টা করতেন। নিজের দাদুর দোকান থেকে চিপস কিনে কিছুদূর হেঁট দিয়ে ৫ সেন্ট লাভে বিক্রী করার ঘটনাও তিনি ঘটিয়েছিলেন বাল্যকালে।

ওয়ারেন বাফেটের জীবনী
[হাইস্কুল পড়ুয়া ওয়ারেন বাফেট]

ছোটবেলা থেকে টাকা কামানোর প্রতি এই ঝোঁকের কারণ তিনি ৭ বছর বয়সে ওমাহা পাবলিক লাইব্রেরিতে একটি বই পড়েছিলেন।  বইটির নাম “One Thousand Ways to Make $1000” – এরপর থেকেই মূলত তাঁর মাথায় উদ্যোক্তা হওয়ার ঝোঁক চাপে।

স্কুলে তাঁকে অংকের জিনিয়াস বলা হত, কারণ তিনি বিশাল বিশাল সব অংকের হিসাব হাতেই করতে পারতেন – অন্যরা যা ক্যালকুলেটর ছাড়া চিন্তাও করতে পারত না।

১০ বছর বয়সে তিনি নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ পরিদর্শন করেন। ১১ বছর বয়সে নিজের জন্য ৩টি ও তাঁর বোন ডরিস এর জন্য ৩টি “সিটিজ সার্ভিস” এর শেয়ার কেনেন।  এবং কিছু লাভ করেন।

১৫ বছর বয়সেই ওয়ারেন বাফেট এর মাসিক আয় ছিল প্রায় ২০০ ডলার।  সময়টা তখন ১৯৪৫।  সেই সময়ে হাজারখানেক ডলার হলে বছর চলে যেত।  বাফেট হাইস্কুলে পড়ার সময়েই বাবার ব্যবসায় তাঁর নিজের জমানো ১২০০ ডলার বিনিয়োগ করে বাবার সাথে পার্টনারশিপে ৪০ একরের একটি কৃষি খামার কেনেন!

হাইস্কুল শেষ করেই বাফেট সিদ্ধান্ত নেন, তিনি আর পড়াশুনা করবেন না। পুরোপুরি ব্যবসায় মনযোগ দেবেন।

কিন্তু তাঁরা বাবা এতে বাধা দেন, ফলে ১৯৪৭ সালে বাফেট ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়ায় ভর্তি হন।  সেখানে দুই বছর পড়ে ইউনিভার্সিটি অব নাব্রাসকায় ট্রান্সফার হন, এবং ১৯ বছর বয়সে সেখান থেকে ব্যবসা প্রশাসনে বিএসসি শেষ করেন।

এরপর হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলে ঢোকার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে তিনি কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অধীন কলম্বিয়া বিজনেস স্কুল এ ভর্তি হন।  সেখান থেকে ১৯৫১ সালে অর্থনীতিতে মাস্টার্স করে বের হন।

কলেজ থেকে পাশ করে বের হওয়ার আগেই তাঁর হাতে ৯৮০০ ডলার জমা ছিল।  আজকের দিনের হিসাবে তা ১০১০০০ ডলার।  বাংলা টাকায় প্রায় ৮৫ লাখ টাকা!

ব্যবসা ও ক্যারিয়ার:

বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে এর আগে:

কলেজ থেকে বের হয়ে তিনি ১৯৫১ থেকে ১৯৫৪ পর্যন্ত Buffett-Falk & Co. এ একজন ইনভেস্টমেন্ট সেলস ম্যান হিসেবে কাজ করেন।  ১৯৫৪ থেকে ৫৬ পর্যন্ত Graham-Newman Corp. এ একজন সিকিউরিটি এ্যানালিস্ট হিসেবে কাজ করেন। ১৯৫৬ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত তিনি Buffett Partnership, Ltd. এর একজন জেনারেল পার্টনার হিসেবে কাজ করেন।  অবশেষে ১৯৭০ সাল থেকে বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে এর চেয়ারম্যান ও সিইও হন।

১৯৫২ সালের এপ্রিলে বাফেট জানতে পারেন তাঁর গুরু বেনজামিন গ্রাহাম GEICO ইন্সুরেন্স এর বোর্ড অব ডিরেক্টরদের একজন।  শোনা মাত্র তিনি এক শনিবারে ওয়াশিংটনের ট্রেন ধরে গেইকোর হেডকোয়ার্টারে গিয়ে দরজা না খোলা পর্যন্ত কড়া নাড়তে থাকেন।  তাঁর সাথে প্রথমেই সেখানকার এক পরিচ্ছন্নতা কর্মীর দেখা হয়, এবং তিনি কোম্পানীর ভাইস প্রেসিডেন্ট লোরমির ডেভিসন এর সাথে সাক্ষাতের সুযোগ পান।

[লোরমির ডেভিসন]

পরবর্তীতে এই ব্যক্তি বাফেটের অন্তরঙ্গ বন্ধু ও উ‌ৎসাহ দাতা হয়ে ওঠেন।  ডেভিসন পরে বলেছিলেন, বাফেটের সাথে ১৫ মিনিট কথা বলার পরই তিনি বুঝেছিলেন, এই ছেলে একজন ‘অন্যরকমের অসাধারণ’ ব্যক্তি।

বাফেট ওয়াল স্ট্রিটে কাজ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর বাবা হাওয়ার্ড, এবং তাঁর গুরু বেন গ্রাহাম – দু’জনেই তাঁকে একাজ করতে মানা করেন।  তিনি এমনকি গ্রাহামের জন্য বিনামূল্যে কাজ করারও প্রতিশ্রুতি দেন।  কিন্তু গ্রাহাম তারপরও তাঁকে না করে দেন।

এরপর বাফেট আবার তাঁর বাড়ি ওমাহাতে ফিরে আসেন, এবং স্টক ব্রোকার হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি ডেল কার্নেগী এর পাবলিক স্পিকিং কোর্স এ ভর্তি হন।

পাবলিক স্পিকিং কোর্স থেকে পাওয়া আত্মবিশ্বাস ও ব্যবসা থেকে পাওয়া জ্ঞান কাজে লাগিয়ে তিনি ইউনিভার্সিটি অব নাব্রাসকায় “Investment Principles” বিষয়ক একটি নৈশ ক্লাসে শিক্ষা দেয়া শুরু করেন।  মজার ব্যাপার, তাঁর বেশিরভাগ ছাত্রের বয়স তাঁর দ্বিগুণেরও বেশি ছিল!

ওয়ারেন বাফেট কাহিনী
[ক্লাসে লেকচার দিচ্ছেন তরুন ওয়ারেন]
এই সময়ে তিনি একটি গ্যাস স্টেশন কিনে ব্যবসার চেষ্টা করেন, তবে তাঁর সেই উদ্যোগ পুরোপুরি ব্যর্থ হয়।

১৯৫৪ সালে বাফেটের বিরাট এক স্বপ্ন পূরণ হয়। বেনজামিন গ্রাহাম নিজেই তাঁকে একটি ব্যবসায়ে কাজ করার প্রস্তাব দেন।  তাঁর বা‌ৎসরিক বেতন ধরা হয় ১২০০০ ডলার (বর্তমান হিসাবে প্রায় ১,০৯,০০০ ডলার)।  এই চাকরির ফলে গুরুর খুব কাছে থেকে কাজ করার ও শেখার সুযোগ হয় তাঁর।

বেনজামিন গ্রাহাম দারুন কড়া একজন বস ছিলেন, কিন্তু তাঁর কাছ থেকে বাফেট জীবনের সেরা লিসন গুলোর অনেকটাই পেয়েছিলেন। ১৯৫৬ সালে গ্রাহাম অবসর নেন।  সেই সাথে বাফেটও তাঁর পদ ছেড়ে দেন, এবং নিজের জমানো ১৭৪,০০০ ডলার (বর্তমানে প্রায় ১.৫৭ মিলিয়ন) দিয়ে নিজের ফার্ম বাফেট পার্টনারশিপ লিমিটেড শুরু করেন।

Image result for benjamin graham
[বেনজামিন গ্রাহাম: বাফেট সারাজীবন এঁকে গুরু মেনে এসেছেন]

১৯৫৭ সালের মধ্যেই বাফেট ৩টি ব্যবসার অংশীদার হয়ে যান।  ১৯৫৯ সালের মধ্যেই তাঁর কোম্পানী ৬টি পার্টনারশিপে রূপ নেয়, এবং পরের বছর তা ৭টি পার্টনারশিপে দাঁড়ায়। ১৯৬২ সালের মধ্যে তিনি একজন মিলিওনেয়ার হয়ে যান।

বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে অধ্যায়:

১৮৩৯ সালে অলিভার চেস একটি টেক্সটাইল প্রতিষ্ঠা করেন। নাম ছিল ‘ভ্যালি ফলস কোম্পানী’।  ১৯২৯ সালে ভ্যালি ফলস ১৮৩৯ সালে প্রতিষ্ঠিত বার্কশায়ার কটন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানীর সাথে এক হয়ে যায়।  দুই কোম্পানী মিলে নাম হয় “বার্কশায়ার ফাইন স্পিনিং এ্যাসোসিয়েটস”।

১৯৫৫ সালে বার্কশায়ার ফাইন স্পিনিং এ্যাসোসিয়েটস ১৮৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত “হ্যাথাওয়ে ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানী” নামের প্রতিষ্ঠানটির সাথে এক হয়ে যায়।

প্রথম দিকে হ্যাথাওয়ে ম্যানুফ্যাকচারিং বেশ লাভজনক একটি টেক্সটাইল কোম্পানী ছিল।  কিন্তু ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে পুরো টেক্সটাইল ইনডাস্ট্রির খারাপ অবস্থার প্রভাব এর ওপর পড়তে থাকে।  ফলে একটা সময়ে এটি বার্কশায়ার স্পিনিং এ্যাসোসিয়েটস এর সাথে এক হতে বাধ্য হয়।  নতুন কোম্পানীটির নাম হয় “বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে”।

বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে
[প্রথম যুগের বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে হেডকোয়ার্টার]

১৯৫৫ সালে বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে প্রতিষ্ঠার পর ১৫টি টেক্সটাইল ফ্যাক্টরিতে ১২০০০ কর্মী নিয়ে কাজ চলতে থাকে।  এবং বছরে প্রায় ১২০ মিলিয়ন ডলার লাভ হতে থাকে।

কিন্তু ৬০ এর দশক শুরু হতে হতে ১৫টির মাঝে ৭টি মিল বন্ধ হয়ে যায়।  সেই সাথে বিপুল পরিমান কর্মীও ছাঁটাই হয়।  – এই সময়েই ইনভেস্টিং জিনিয়াস ওয়ারেন বাফেট মঞ্চে প্রবেশ করেন।

১৯৬২ সালে বাফেট বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে এর স্টক কেনা শুরু করেন।  কারণ তিনি দেখেছিলেন, কোম্পানীটির একটি করে মিল বন্ধ হয়, শেয়ারের দাম পড়ে যায়।  তিনি লক্ষ্য করেন, আমেরিকার টেক্সটাইল ব্যবসা একদমই পড়ে যাচ্ছে, এবং এর সাথে জড়িত কোম্পানীগুলোর আর্থিক অবস্থা ক্রমেই খারাপ হতে থাকবে।  কিন্তু এমন পুরনো ঐতিহ্যবাহী কোম্পানীর নামও অনেক কিছু।

এভাবে কিনতে কিনতে কোম্পানীর উল্লেখযোগ্য পরিমান শেয়ার বাফেটের হাতে চলে যায়। এবং কোম্পানীর মালিক পক্ষ নড়েচড়ে বসে।  কারণ, এত শেয়ার একজনের হাতে থাকলে তা বিপদের কারণ হতে পারে।

১৯৬৪ সালে কোম্পানীর চেয়ারম্যান সিবারি স্ট্যানটন বাফেটকে কফি খাওয়ার দাওয়াত দেন, এবং শেয়ার প্রতি ১১​   ডলারে বাফেটের সব শেয়ার কিনে নেয়ার মৌখিক প্রস্তাব দেন। 

লাভজনক হওয়ায় বাফেট সেই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান।  কিন্তু কাগজ কলমে টেন্ডার সই হওয়ার সময়ে বাফেট দেখেন, চুক্তিমত শেয়ার প্রতি ১১​   ডলার মূল্যের জায়গায় ১১​ মূল্য ধরা হয়েছে।

পরে বাফেটের কাছে জানা যায়, এটিকে তাঁর প্রতারণা মনে হয়।  রেগে গিয়ে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেন যে তিনি শেয়ার তো বিক্রী করবেনই না, এর বদলে আরও শেয়ার কিনে বার্কশায়ার হ্যাথাওয়েকে নিয়ন্ত্রণ করবেন, এবং স্ট্যানটনকে তার নিজের কোম্পানী থেকেই বের করে দেবেন। 

তিনি নামে-বেনামে আরও শেয়ার কেনা শুরু করলেন, এবং একটা সময়ে গিয়ে তাঁর হাতে এত শেয়ার জমে গেল যে তিনি কোম্পানীর সবচেয়ে বড় শেয়ার হোল্ডার হয়ে বসলেন।  এবং প্রতিজ্ঞামত স্ট্যানটেনকে কোম্পানী থেকে বের করে দিয়ে নিজের মনোনীত একজনকে চেয়ারম্যান পদে বসান।

জেদের বশে কাজটি করার পর বাফেট তাঁর ভুল বুঝতে পারেন।  তিনি আসলে একটি ব্যর্থ কোম্পানী কিনেছেন।  যদিও কোম্পানীটিকে তিনি ইতিহাসের অন্যতম সফল একটি কোম্পানীতে পরিনত করেছেন, কিন্তু তাঁর ভাষ্যমতেই, এই ভুলটি না করে যদি তিনি সরাসরি ইন্সুরেন্স ও অন্যান্য ব্যবসায় বিনিয়োগ করতেন, তবে তিনি জীবনে আরও কয়েকশ গুণ বেশি সম্পদ অর্জন করতে পারতেন।  অর্থা‌ৎ তাঁর সর্বকালের সেরা ধনী হওয়ার একটা সম্ভাবনা ছিল!

বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে হোডকোয়ার্টার
[বর্তমানের বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে হোডকোয়ার্টার]

যাই হোক, প্রথম দিকে বাফেট বার্কশায়ারের মূল ব্যবসা টেক্সটাইল চালালেন।  কিন্তু কোনও উন্নতি না হওয়ায় ১৯৬৭ এর দিকে তিনি তাঁর আগ্রহের ব্যবসা ইন্সুরেন্স এ মনোযোগ দিতে শুরু করেন।  এছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রেও বিনিয়োগ করা শুরু করেন।

১৯৭৯ সালে বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে শেয়ার প্রতি ৭৭৫ ডলারে বছর শুরু করে, এবং ১৩১০ ডলারে শেষ করে।  এর ফলে বাফেটের মোট ব্যক্তিগত সম্পদ দাঁড়ায় ৬২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।

১৯৮৮ সালে বাফেট কোকাকোলা কোম্পানীর শেয়ার কিনতে শুরু করেন, এবং ধীরে ধীরে ১.০২ বিলিয়ন ডলারের শেয়ার কিনে ফেলেন, যা কোম্পানীটির প্রায় ৭% মালিকানা। 

এভাবেই ধীরে ধীরে ইন্সুরেন্স থেকে এয়ারলাইন, রেল, কয়লা, খাদ্য, পানীয় – সব দিকেই বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে, অর্থা‌ৎ ওয়ারেন বাফেট এর হাত প্রসারিত হতে থাকে।  এর মধ্যে আমেরিকা ও বিশ্বের বেশ কয়েকটি প্রথম শ্রেণীর কোম্পানীতে বিনিয়োগ করাও আছে।  ১৯৮৫ সালে বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে এর শেষ টেক্সটাইল মিলটি বন্ধ হয়ে যায়।

কোম্পানীটির বর্তমান ভ্যালু ৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি।   এছাড়া কোম্পানীর একাউন্টে জমা নগদ অর্থের পরিমান ১১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার!

১৯৬৫ সাল থেকে ওয়ারেন বাফেট প্রতি বছর শেয়ার হোল্ডারদের উদ্দেশ্যে একটি চিঠি প্রকাশ করেন।  গড়ে চিঠিগুলোর ব্যাপ্তি হয় ৩০ পৃষ্ঠার মত।  কথিত আছে, এই চিঠির মাধ্যমেই পরবর্তী বছর কোম্পানী কিভাবে কাজ করবে, এবং এর অবস্থা কি দাঁড়াবে – তার ইঙ্গিত থাকে।  ২০১৪ সালে বাফেটের বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের মালিকানা গ্রহণের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ৫০টি চিঠি নিয়ে একটি বই প্রকাশ হয়।  বইটি তরুণ উদ্যোক্তা, বিশেষ করে যারা ইনভেস্টর হতে চান, তাঁদের জন্য একটি অমূল্য জ্ঞানভান্ডার।

 

ব্যক্তিগত জীবন:

১৯৫২ সালে ওয়ারেন বাফেট সুসান থম্পসন নামে এক মহিলাকে বিয়ে করেন।  পরের বছর তাঁদের প্রথম সন্তান সুসান এলিস বাফেট এর জন্ম হয়। ১৯৫৪ সালে ২য় সন্তান হাওয়ার্ড গ্রাহাম বাফেট জন্মগ্রহণ করেন।  হাওয়ার্ড গ্রাহামের নাম রাখা হয়েছিল ওয়ারেনের বাবা হাওয়ার্ড ও গুরু বেনজামিন গ্রাহামের নামানুসারে।  এর ৪ বছর পর ১৯৫৮ সালে সুসান ও ওয়ারেন বাফেটের ৩য় সন্তান পিটার এ্যান্ড্রু বাফেটের জন্ম হয়।

ওয়ারেন বাফেট এর জীবনী
[ওয়ারেন বাফেট এর তিন সন্তান: (বাঁ থেকে) হাওয়ার্ড, সুসান এলিস, ও পিটার]

২০০৪ সালে সুসান বাফেট এর মৃত্যুর পর ২০০৬ সালে ওয়ারেন তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু এ্যাস্ট্রিড মিনক্‌সকে বিয়ে করেন।  বিয়ের সময়ে এ্যাস্ট্রিড এর বয়স ছিল ৬০ আর বাফেট বিয়ের উ‌ৎসবের পাশাপাশি তাঁর ৭৬তম জন্মদিনও উদযাপন করছিলেন।  এ্যাস্ট্রিড, ওয়ারেন আর সুসানের মাঝে এতই নিবিড় সম্পর্ক ছিল যে, দীর্ঘদিন ধরে ক্রিসমাসে তাঁরা তিনজন একসাথে সাইন করে বন্ধু ও আত্মীয়দের ক্রিসমাস কার্ড পাঠাতেন!

 

গাড়ি, বাড়ি, শখ:

বিশ্বের সর্বকালের সেরা ধনীদের একজন হলেও ওয়ারেন বাফেট বলতে গেলে দারুন সাধারণ জীবনযাপন করেন।  হলিউডের ধনাঢ্য মাল্টি মিলিয়নেয়ার তারকারা যখন তাদের চেহারার মত বাড়ির জৌলুস দেখাতে ব্যস্ত, তখন ওয়ারেন বাফেট তাঁর ১৯৫৮ সালে ৩১৫০০ ডলারে কেনা বাড়িতেই থাকেন।  বর্তমানেও এই বাড়ির মূল্য ১ মিলিয়ন ডলারের কম! বিশ্বের সেরা ইনভেস্টরের ভাষায়, “এটা আমার জীবনের ৩য় সেরা বিনিয়োগ(!)”

ওয়ারেন বাফেট বাড়ি
[ওয়ারেন বাফেট এর বাড়ি; ১৯৫৮ থেকে তিনি এখানেই বাস করেন]

নাব্রাসকার ওমাহায়, শান্ত প্রাকৃতিক পরিবেশের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা ৬৫৭০ স্কয়ার ফিটের বাড়িটিতে ৫টি বেডরুম আছে।  বিবিসির এক সাংবাদিক তাঁকে একবার জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “কেন আপনি আরও দামী কোনও বাড়িতে উঠছেন না?” প্রবীন বিলিওনেয়ারের জবাব ছিল, “আমি এখানে সুখে আছি। অন্য কোথাও যদি এর চেয়ে বেশি শান্তি পাই, তবে সেখানে চলে যাব”

গাড়ির ক্ষেত্রেও বাফেটকে ‘কৃপণ’ বলতে হবে।  যেখানে মিলিয়নেয়ার হলেই মানুষ লক্ষ ডলারের মার্সিডিজ, ল্যাম্বারগিনি – ইত্যাদি বিলাসবহুল গাড়ি হাঁকিয়ে নিজের জৌলুস দেখাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে – সেখানে বাফেট ৪৫০০০ ডলার বাজার মূল্যের একটি ক্যাডিলাক XTS চালিয়েই সন্তুষ্ট।  এই গাড়িটি তিনি ২০১৪ সালে মেয়ের জোরাজুরিতে কিনেছেন।  এর আগে তিনি ক্যাডিলাক DTS এ চড়তেন।  তাঁর মেয়ের এই গাড়ি পছন্দ না হওয়ায় তিনি মডেল বদলান।  কিন্তু গাড়ির দাম ৫০০০০ পার করেনি।  গাড়ি তিনি ব্যবহার করেন প্রয়োজনে, সম্পদের প্রদর্শনী করার জন্য নয়।  ফোর্বস ম্যাগাজিনকে দেয়া এক সাক্ষা‌ৎকারে বাফেট একবার বলেছিলেন “আমি বছরে ৩৫০০ মাইলের বেশি ড্রাইভ করি না।  তাই নতুন গাড়ি কিনতে আমার একটু সময় লাগে”

আসলে বড় বড় বিলিয়নেয়ার বা ব্যবসায়ীরা, টাকা দিয়ে সুখ কিনবেন বলে কাজ করেন না, তাঁরা কাজ করেন প্যাশন থেকে।  সুখটা তাঁরা খুঁজে পান কাজের মাঝে, টাকা একটা বাড়তি পাওয়া।  বাফেটের সাধারণ জীবনযাপনই তার প্রমাণ।  তাঁর জনহিতকর কাজের ফিরিস্তি শুনলে ব্যাপারটা আপনার কাছে আরও পরিস্কার হয়ে যাবে।

বাফেটের অন্যতম শখ মিউজিক।  ছোট গীটারের মত ইউকেলিলি বাদ্যযন্ত্রে তিনি বেশ পারদর্শী।  সেইসাথে গানও গেয়ে থাকেন।  তাঁর কোম্পানীর অথবা পারিবারিক ইভেন্টে মাঝেমাঝেই তিনি ইউকেলিলি বাজিয়ে গান করেন।  এই বাদ্যযন্ত্র শেখার পেছনে একটি মজার ইতিহাস আছে, যা আপনি এই লেখার পরের একটি অংশে জানবেন।

 

সেবা মূলক কাজ:

২০০৬ সালে ওয়ারেন বাফেট ঘোষণা দেন, তিনি তাঁর মোট সম্পদের ৮৩% জনহিতকর কাজে দান করে যাবেন।  তাঁর বর্তমান সম্পদের হিসাব অনুযায়ী যা ৮০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি!

ওয়ারেন বাফেট উক্তি ১

একই বছরের জুন মাসে তিনি তাঁর মালিকানাধীন বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে এর ১০ মিলিয়ন ‘ক্লাস- বি’ শেয়ার বিল গেটস ও তাঁর স্ত্রীর প্রতিষ্ঠিত দাতব্য প্রতিষ্ঠান ‘বিল এ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’ কে দান করেন।  ডলারের হিসেবে তা ছিল ৩০.৭ বিলিয়ন ডলার।  পৃথিবীর জানা ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দানের ঘটনা এটি!

এছাড়াও তিনি তাঁর মেয়ে সুসান এ্যালিসের দাতব্য সংস্থা, এবং ছেলে গ্রাহাম ও পিটারের দাতব্য সংস্থায়ও বড় অংকের অর্থ দান করেছেন।

ওয়ারেন বাফেট এর জীবন কাহিনী থেকে কিছু চমকপ্রদ তথ্য:

# ওয়ারেন বাফেট ও তাঁর স্ত্রী সুসান বাফেটের দাদা পরস্পরকে চিনতেন।  এমনকি সুসানের দাদা ওয়ারেনের দাদার জন্য একটি ইলেকশন ক্যাম্পেইন পরিচালনা করেছিলেন।  যদিও সেই ক্যাম্পেইন ব্যর্থ হয়েছিল।

# সুসানের সাথে পরিচয়ের আগে, ১৯৪৯ সালে বাফেট বেটি গ্যালাগার নামে এক তরুণীর প্রেমে পড়েন।  বেটি তখন একজন একজন ইউকেলিলি বাদকের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন।  এই দেখে, ওয়ারেনও ইউকেলিলি বাজানো শিখলেন।  কিন্তু বেটি তাঁকে এরপরও নিরাশ করেছিল।  তবে এরপর যখন তিনি সুসানের সাথে পরিচিত হলেন, তখন দেখা গেল সুসানও ইউকেলিলির ভক্ত।  সুসানের সাথে বিয়ের পেছনেও ইউকেলিলির যথেষ্ঠ ভুমিকা ছিল! বাফেট এখনও পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ইভেন্টগুলোয় মাঝেমাঝেই এই বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে গান করে থাকেন।

# ২০১২ সালের এপ্রিলে একটি রেগুলার চেকিং এর সময়ে ধরা পড়ে যে তাঁর মূত্রথলীতে ক্যান্সার হয়েছে।  তবে দুই মাসের মধ্যেই এর চিকি‌ৎসা করে সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি।

# এতবড় বিলিওনেয়ার হয়েও তিনি সকালের নাস্তার পেছনে কোনওভাবেই ৩.১৭ ডলারের বেশি খরচ করেন না

# বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের নাম বেশ কয়েকবার বদলাতে চেয়েও তিনি বদলাননি, কারণ এই নাম তাকে ভুল থেকে শিক্ষা নেয়ার কথা মনে করিয়ে দেয়।

# ১৯৬৭ সালে বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে একবারই মাত্র তাদের শেয়ার হোল্ডারদের লভ্যাংশ প্রদান করে।  এরপর আর কখনওই শেয়ার হোল্ডারদের লভ্যাংশ প্রদান করা হয়নি।

# প্রতি বছর বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের বা‌ৎসরিক শেয়ারহোল্ডার সম্মেলন বসে ওমাহার কান্ট্রি লিংক সেন্টারে। প্রায় ২০০০০ লোক সেই মিটিং এ জমা হয়! এটাকে ওমাহায় অনুষ্ঠিত সবচেয়ে বড় দু’টি বা‌ৎসরিক অনুষ্ঠানের একটি ধরা হয়।  অন্যটি হল ‘বেসবল কলেজ ওয়ার্ল্ড সিরিজ”।  এই সম্মেলন বা মিটিং এ যে কোনও শেয়ারহোল্ডার বাফেটকে সরাসরি প্রশ্ন করতে পারে।

# বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের শেয়ারহোল্ডারদের দেখানোর জন্য ২০০৪ সালে একটি সিনেমা নির্মিত হয়।  যেখানে টার্মিনেটর সিনেমার আদলে আর্নল্ড শোয়ার্জনিগার ভবিষ্য‌ৎ থেকে বর্তমানে আসেন ওয়ারেন বাফেটকে থামানোর জন্য। সিনেমায় আর্নল্ড এর সাথে স্বয়ং ওয়ারেন বাফেটকেও একটি দৃশ্যে অভিনয় করতে দেখা যায়। প্রতি বছর বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে এর বা‌ৎসরিক শেয়ার হোল্ডার সম্মেলন এর শুরুতে এই সিনেমাটি দেখানো হয়।

# সুসানকে বিয়ে করার আগে আগে বাফেটের শ্বশুর বাফেটকে আলাদা ডেকে নিয়ে বলেছিলেন, “তুমি ব্যর্থ হতে যাচ্ছ।  ডেমোক্রেটরা কখনওই তোমার পরিকল্পনা সফল হতে দেবে না।”  নিশ্চই ভাবছেন, এখন বেঁচে থাকলে শ্বশুর মশাই কি বলতেন!

buttet quote 2.png

# প্রায় প্রতি বছর দাতব্য কাজে তহবিল সংগ্রহের জন্য ওয়ারেন বাফেট ই-বের মাধ্যমে তাঁর সাথে দুপুরের খাবার খাওয়ার একটি নিলাম ডাকেন।  উঠতি ব্যবসায়ীরা তাঁর কাছ থেকে শেখার এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না।  এই নিলামে একবার প্রায় সাড়ে তিন মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত দর হাঁকা হয়েছিল!

# তিনি জীবনে কোনওদিন টুইট করেননি।  ওয়ারেন বাফেটের অফিসিয়াল টুইটার এ্যাকাউন্টে সাড়ে ১২ লাখ ফলোয়ার থাকলেও সেখানে মাত্র ৯টি পোস্ট করা হয়েছে।  তাঁর নিজের মালিকানাধীন মিডিয়া CNBC কে দেয়া এক সাক্ষা‌ৎকারে তিনি বলেছেন, সেই ৯টি টুইটও তাঁর নিজের করা নয়।  যেই বন্ধু তাঁর একাউন্ট খুলে দিয়েছিলেন, তিনিই এই টুইটগুলো করেছেন!

# ওয়ারেন বাফেট তাঁর জেগে থাকা সময়ের ৮০% কাটান পড়াশুনা করে! তাঁর সাফল্যের রহস্যের কথা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি তাঁর পাশে থাকা বইয়ের স্তুপের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, “আমি দিনে ৫০০ পৃষ্ঠা পড়ি!”

# বাফেটের মোট ২০টি স্যুট আছে।  এগুলোর একটিও তিনি নিজের টাকায় কেনেননি! একবার চীন সফরের সময়ে হোটেলের লবিতে দু’টি লোক হঠা‌ৎ কোত্থেকে এসে তাঁর মাপ নেয়া শুরু করে, এবং একটি ক্যাটালগ ধরিয়ে দিয়ে বলে “ম্যাডাম লী আপনাকে একটি স্যুট দিতে চান এখান থেকে পছন্দ করুন”।  বাফেট একটির বদলে দু’টি স্যুট পছন্দ করলেন।  পরবর্তীতে ডিজাইনার ম্যাডাম লী এর সাথে দেখা করে তাঁর সাথে একটি ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তোলেন।  লী এরপর আরও ১৮টি স্যুট বাফেটকে উপহার দেন।  এরপর বিল গেটসের মত আরও কিছু বড় ব্যবসায়ী লী এর থেকে স্যুট নেন!

# ২০১৩ সালেও বাফেট একটি নোকিয়ার ফোল্ডিং সেট ব্যবহার করতেন! সিএনএন কে দেয়া এক সাক্ষা‌ৎকারে এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, “আমি ২০-২৫ বছর ব্যবহার না করে কিছু ফেলে দিই না…‍”

সাফল্যের জন্য ওয়ারেন বাফেটের সেরা পরামর্শ:

ওয়ারেন বাফেটের মত সফল ব্যক্তিদের কাছে আমাদের অনেক কিছুই শেখার আছে।  সাফল্যের জন্য তাঁর সেরা পরামর্শ : “তুমি জীবনে সবকিছু অর্জন করতে পারবে না। সফল হওয়ার জন্য জীবনে যা কিছু অর্জন করতে চাও, তার থেকে ২৫টি প্রধান বিষয় বেছে নিয়ে একটি তালিকা তৈরী কর।  তারপর সেই তালিকা থেকে সবচেয়ে প্রধান ৫টি বিষয় বেছে নাও।  বাকি ২০টি বাদ দিয়ে দাও।  এরপর বেছে নেয়া ৫টি অর্জনের পেছনে মন প্রাণ দিয়ে কাজ করতে শুরু কর।  অন্য ২০টির চিন্তা মাথায় এলে, যেভাবেই হোক সেগুলো মাথা থেকে দূর করে দাও।  ওগুলোর দিকে নজর দিতে গেলে তুমি কিছুই অর্জন করতে পারবে না”।

buffet quote 1.png

অর্থা‌ৎ, বাফেট এর মতে, জীবনে সাফল্যের জন্য যত কম পারা যায় তত লক্ষ্য ঠিক করা ভালো।  এবং সেগুলোর ওপরই ফোকাস রাখা উচি‌ৎ।  বিভিন্ন সময়ে আমাদের অনেক কিছু করতে ইচ্ছে হয়।কিন্তু সবগুলো করতে গেলে আসলে কিছুই করা হয়ে ওঠে না।  কাজেই অল্প কয়েকটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করে সেগুলোর পেছনে ছুটলেই জীবনে সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

পেশাগত, আর্থিক, পারিবারিক, আধ্যাত্মিক, সেবা – এগুলো হতে পারে আপনার সাফল্যের মাপকাঠি।  আপনি হয়তো অনেক বড় একজন উদ্যোক্তা হতে পারেন, সেই সাথে একজন ভালো ও ধার্মিক মানুষ, সন্তানদের ভালো একজন অভিভাবক, একজন মানবসেবী হতে পারেন।

কিন্তু এগুলোর সাথে যদি আরও ১০টি স্বপ্ন জোড়া লাগান, তবে হয়তো কোনওটাই ভালোমত করা হবে না।  তাই খুব ভেবেচিন্তে নিজের লক্ষ্য ঠিক করুন, এবং সেগুলোর দিকে পূর্ণ ফোকাস নিয়ে এগিয়ে যান।

সেই পথ চলার সময়ে যদি আরও স্বপ্ন এসে কড়া নাড়ে, তবে সেগুলোকে আপাতত মাথা থেকে দূর করে দিন।  প্রধান লক্ষ্যগুলো পূরণ করার পর অন্যগুলো নিয়ে মাথা ঘামান।

প্রধান লক্ষ্যগুলোও একটা একটা করে পূরণ করুন।  একসাথে কয়েকটির পেছনে ছুটবেন না।  এক সময়ে শুধু একটি লক্ষ্যের দিকেই মনযোগ দিন  তাহলেই সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

শেষ কথা:

ওয়ারেন বাফেট মানে একটি ইতিহাস। শুধু যে অর্থ অর্জন করেই তিনি ইতিহাস গড়েছেন – তা নয়। অর্থ দান করেও তিনি ইতিহাস গড়েছেন। যারাই জীবনে বড় কিছু করতে চায়, তাদের সবারই ওয়ারেন বাফেটের জীবনী থেকে কিছু না কিছু শেখার আছে, অনুপ্রাণিত হওয়ার আছে। আমরা আশা করব আমাদের ক্ষূদ্র এই প্রচেষ্টা কিছুটা হলেও আপনার কাজে আসবে।

ওয়ারেন বাফেট উক্তি ৩

যদি ওয়ারেন বাফেট এর জীবন কাহিনী আপনার ভালো লেগে থাকে, তা আমাদের কমেন্ট করে জানান। আমরা কোনও তথ্য মিস করে গেলেও তা কমেন্টে লিখুন, যাতে লেখাটি আরও সমৃদ্ধ হয়, এবং তার পেছনে আপনার অবদান থাকে।

যদি মনে হয় লেখাটি পড়ে অন্যরাও উপকৃত হবেন, তাহলে শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন।

আমাদের সাথে থাকুন, সাফল্যের পথে, প্রতি পদক্ষেপে লড়াকু আপনার সাথে আছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন !