সব সময়ে সেরা পারফরমেন্স করতে চান? – প্রতি মূহুর্তে ‘সচেতন’ থাকুন!


ধরুন একজনের সাথে আপনি একটা কাজের ব্যাপারে খুব জরুরী কিছু আলোচনা করছেন। তিনি আপনাকে কিছু একটা বোঝাচ্ছেন। আপনিও বুঝতে পারছেন। কিন্তু মাঝেমাঝেই লোকটির ফোনে মেসেজ আসছে, আর তিনি ‘excuse me’ বলে মেসেজ চেক করছেন। কয়েকবার এরকম হওয়ার পর অবশ্যই আপনার তার কথা শোনার আগ্রহ নষ্ট হয়ে যাবে। অর্থাৎ লোকটি ভালো পারফরমেন্স করতে পারলো না। করতে না পারার কারণ, আপনার সাথে কথা বলার সময়ে তাঁর পুরো মনযোগ কথা বলার দিকে ছিল না।

প্রতিদিন যে রাস্তা দিয়ে আপনি কাজে বা কলেজ-ভার্সিটি যান, সেই রাস্তায় অনেক কিছুই আছে যা কোনওদিন আপনার চোখে পড়েনি। কিন্তু সেগুলো সব সময়ে চোখের সামনেই থাকে। কাল কাজে অথবা পড়তে যাবার সময়ে খুব মন দিয়ে রাস্তার আশপাশে দেখার চেষ্টা করুন। – দেখবেন এমন অনেক দোকান, গাছ, অফিস, দালান চোখে পড়েবে – যা আপনি আগে দেখেননি। কিন্তু সেগুলো সব সময়ে সেখানেই ছিল। বহুদিন ধরে সেই রাস্তায় চলার পরও সেগুলো আপনার চোখে পড়েনি। ব্যাপারটা যখন আপনি বুঝতে পারবেন – তখন আপনি নিজেই অবাক হবেন।

এই অসচেতনতার একটি বড় কারণ, প্রতিদিনের যান্ত্রিক একঘেয়ে জীবন আমাদের অনেকটা রোবটের মত বানিয়ে ফেলে। সব সময়ে একই ঘটনার মধ্য দিয়ে যেতে যেতে, একই কাজ প্রতিদিন করতে করতে একটা পর্যায়ে মন অন্য কোথাও হারিয়ে যেতে চায়।

আর এই কারণে, আমরা বেশিরভাগ সময়টাই অসচেতন ভাবে পার করি। আমাদের চোখ খোলা থাকে, কিন্তু আমাদের মন থাকে অন্য কোথাও। আপনি হয়তো রাস্তা দিয়ে চলছেন, কিন্তু আপনার মন অফিসের কাজে, বা বাসার ঝামেলায় পড়ে আছে ।

যেসব কাজ আমরা নিয়মিত করি, সেগুলো এক সময়ে আমাদের অভ্যাস হয়ে যায়। সচেতন ভাবে না করলেও, সেগুলো আপনা আপনিই হতে থাকে। আপনার শরীর একখানে থাকে তো মন পড়ে থাকে অন্য কোথাও। ঘরে থাকলে মন অফিসের চিন্তায় হারিয়ে যায়; অফিসে থাকলে মন ঘরের চিন্তায় হারিয়ে যায়। অভ্যাসের ফলে কাজ গুলো হয়তো হয়ে যায়, কিন্তু সচেতন ভাবে করা হয় না। আর তাই, কাজের মানও ভালো হয় না।

আপনি বুঝতেও পারেন না যে, এই কারণে আপনার পারফরমেন্স দিন দিন খারাপ হচ্ছে। ফলে আত্মবিশ্বাসে ফাটল ধরে।

সমাধান:

ইংরেজীতে একটা কথা আছে: “make every moment your best moment” -মানে প্রতিটি মূহুর্তকে সেরা মূহুর্ত বানান। এটা করতে হলে প্রথমেই আপনাকে সচেতন হতে হবে। যখনই দেখবেন আপনার মন বর্তমান কাজের চিন্তা বাদ দিয়ে অন্য কোনও চিন্তা করা শুরু করেছে – সেই মূহুর্তে নিজেকে আবার বাস্তবে ফিরিয়ে আনুন। রাস্তায় চলার সময়ে অন্যকিছু না ভেবে, রাস্তার জিনিসগুলো খেয়াল করুন। পাশ দিয়ে যাওয়া গাড়িগুলোর রং কি, রাস্তার পাশে লাগানো গাছ গুলোয় কি কি রং এর ফুল ফুটেছে – এসব মন দিয়ে দেখুন। আপাতত এটা কাজের মনে না হলেও, প্রতিদিন এটা প্রাকটিস করলে অন্য জায়গাতেও আপনি সচেতন থাকতে পারবেন। অফিসের কাজের সময়েও মনযোগ বেড়ে যাবে। ইংরেজীতে যাকে বলে “Live at the moment”.

এই মূহুর্তে যে কাজটি করা সবচেয়ে জরুরী, সেটা বাদে বাকি সবকিছু ভুলে যান। যদি অন্য কোনও আইডিয়া বা চিন্তা মাথায় আসে, যেটা আসলেই গুরুত্বপূর্ণ – তাহলে হাতের কাছে ছোট একটি খাতা বা প্যাড রাখুন। সংক্ষেপে সেটি লিখে রাখুন, যাতে তা নিয়ে পরে চিন্তা করা যায়।

ধরুন আপনি একটি কোম্পানীতে কাজ করেন, যেটা ঘড়ি আর মোবাইল বানায়। এই মূহুর্তে আপনি মোবাইলের একটি প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছেন। এখন যদি ঘড়ি নিয়ে দারুন একটি আইডিয়া মাথায় চলে আসে, সেটা নিয়ে চিন্তায় ডুবে যাবেন না।

ঘড়ির চিন্তায় ডুবে গেলে, মোবাইল নিয়ে এখন যে কাজটি করছেন – সেই কাজটির পারফরমেন্স খারাপ হয়ে যাবে। হাতের কাছে রাখা ছোট খাতায় ঘড়ির বিষয়ে মাথায় আসা নতুন আইডিয়াটি লিখে রাখুন। লেখা শেষ হলে আগের কাজে ফিরে যান। আইডিয়া না লিখলে কিন্তু হবে না। সারাক্ষণ ওটা মাথার ভেতর ঝামেলা করবে।  লিখে রাখার ফলে আইডিয়া ভুলে যাবার টেনশন থাকবে না, মনে টেনশন না থাকায় অস্বস্তিও হবে না। আপনি টেনশন-ফ্রি হয়ে, পূর্ণ সচেতনতার সাথে এই মূহুর্তে যেটা করা জরুরী, সেটা করতে পারবেন।

কোনও কাজের মধ্যে থাকার সময়ে মোবাইল ফোনে আসা মেসেজ, কম্পিউটারে আসা নোটিফিকেশন – এসব চেক করবেন না। এগুলোও মনোযোগ নষ্ট করে। আপনার অফিস টাইম যদি হয় ৮ ঘন্টা, তবে এই ৮ ঘন্টা শুধু অফিসের কাজই করুন। যদি অন্য কোনও কাজের চিন্তা মাথায় আসে, তবে সেই ছোট খাতাটিতে লিখে রাখুন, এবং সেটা নিয়ে অফিসের পরে চিন্তা করুন। অফিস টাইমে ওসব নিয়ে ভাবতে গেলে, অফিসের পারফরমেন্স খারাপ হতে বাধ্য।

আপনি যখন অন্য সবকিছুর চিন্তা বাদ দিয়ে, এই মূহুর্তে যেটা করা সবচেয়ে জরুরী, সেটাতে মন দিতে পারবেন – তখন দেখবেন, আপনার সব কাজ এমনিতেই ভালো হচ্ছে। আর পারফরমেন্স ভালো হবার সাথে সাথে আপনার সাফল্যও বাড়ছে।

 

এই লেখাটি ভালো লাগলে “হাই পারফর্মারদের ৬টি অভ্যাস” লেখাটি পড়ুন। পারফর্মেন্স বিষয়ে আরও অনেক কিছু জানতে পারবেন।

যদি মনে হয় এই লেখাটি পড়ে অন্যরাও উপকৃত হবেন, তাহলে শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন। আর এই ধরনের আরও লেখা নিয়মিত পাওয়ার জন্য আমাদের সাথে থাকুন। সাফল্যের পথে লড়াকু সব সময়ে আপনার সাথে আছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন !