সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ৫ উপায়: সিদ্ধান্তহীনতা থেকে মুক্তি পেয়ে সব সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিন


সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার উপায় তাঁদের জন্য জানা বেশি প্রয়োজন, যাদের প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হয়। বড় বড় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়াতে কমবেশি সিদ্ধান্তহীনতা থাকেই।    সিদ্ধান্তহীনতা শব্দটির সাথে আমরা পরিচিত।  আমরা সবাই কোনও না কোনও সময়ে এই সমস্যায় পড়েছি।  কেউ হয়তো কম, কেউ হয়তো বেশি।  নিজের সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস না থাকা, এবং যে কোনও বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার মূল বিষয়গুলো না জানার কারণে অনেকে সিদ্ধান্ত হীনতায় ভোগেন অথবা প্রায়ই ভুল সিদ্ধান্ত নেন।

বিশেষ করে বড় বড় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়ে এই সমস্যাগুলো বেশি হয়।

আজ আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার মূল উপায় ও সিদ্ধান্তহীনা থেকে মুক্তির পদ্ধতিগুলো জানানো হবে।  তবে তার আগে চলুন জেনে নেয়া যাক, কোন ধরনের মানুষ বেশিরভাগ সময়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়।

hello-bcs-041223-1 (1)

৪৬ তম বিসিএস পরিপূর্ণ প্রস্তুতি

বর্তমানে অংশগ্রহণ করেছেন 620 জন

জয়েন করুন

ভুল সিদ্ধান্ত কারা নেয়?

মূলত দুই ধরনের মানুষ ভুল সিদ্ধান্ত নেয়।  এক নম্বর দলের মানুষ হলো যারা যে কোনও ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পায়।  খুব বেশি চিন্তা করে করে নিজের মাথা খারাপ করে ফেলে, কিন্তু এত চিন্তা করেও শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্তে আসতে ভয় পায়।  তারপর যখন সময় একদম কাছে চলে আসে, তখন কোনওরকমে কিছু একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করে- যেটা বেশিরভাগ সময়েই খারাপ হয়।

আর দুই নম্বর দলের মানুষেরা অতি সাহসী বা অতি অস্থির।  এরা কোনও ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার দরকার হলে বলতে গেলে কোনও চিন্তাই করে না।  অনেকটা ‘ধর তক্তা – মার পেরেক’ টাইপ।  ছোট বা বড় – যে কোনও কাজই তারা অতিরিক্ত তাড়াতাড়ি সেরে নিতে চায়।  এদের কথা হলো, “আগে তো কাজ করি, যা হয় পরে দেখা যাবে”।  এই মনোভাব যদিও কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজন – কিন্তু এটা অতিরিক্ত হয়ে গেলে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হয়।  আর যারা একেবারেই কম চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেয় – বেশিরভাগ সময়েই তাদের সিদ্ধান্ত ভুল হয়।

মূলত এই দুই ধরনের মানুষই বেশিরভাগ সময়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়।  খুব ভালো করে ভেবে দেখুন – আপনার মাঝে এই দু’টির কোনওটি আছে কি না।  আর সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার উপায় ও সীদ্ধান্তহীনতা থেকে মুক্তির পদ্ধতি পড়তে থাকুন।  জীবনে যে কোনও ক্ষেত্রে সফল হতে হলে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার উপায় অবশ্যই জানা থাকতে হবে।

সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ও সিদ্ধান্তহীনতা থেকে মুক্তির ৫ উপায়:

সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার উপায় খোঁজার গবেষণা করতে গিয়ে আমরা বিভিন্ন ওয়েবসাইট, জার্নাল ও ম্যাগাজিন ঘেঁটে মোট ৫টি এমন উপায় খুঁজে পেয়েছি – যা সবার কাজে লাগতে পারে।  চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক সেই ৫টি উপায়।

০১. লক্ষ্যকে সুস্পষ্ট বা ‘clearly defined’ করতে হবে:

অনেকেই ঠিক কোন লক্ষ্যটি পূরণ করতে চান – তা ভালোভাবে বিবেচনা না করেই সিদ্ধান্ত নিতে যান।  এরকম হলে সিদ্ধান্ত ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।  এখন হয়তো অনেকেই বলবেন যে, লক্ষ্য না জেনে কি কেউ সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা ভাবে?

একথা ঠিক যে, কোনও একটি সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়ে মানুষের মনে একটি উদ্দেশ্য থাকে।  কিন্তু অনেক সময়েই সেই উদ্দেশ্য পরিস্কার থাকে না। সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য যথেষ্ঠ পরিস্কার হওয়াটা জরুরী।

একটি উদাহরণ দেয়া যাক।  মনে করুন, আসাদ সবেমাত্র পড়াশুনা শেষ করে বের হয়েছে।  এখন তার উদ্দেশ্য হলো, একটি ‘ভালো চাকরি’ পাওয়া ও ‘ভালো অংকের টাকা’ রোজগার করা।  এটা অবশ্যই একটা উদ্দেশ্য – কিন্তু তা পরিস্কারভাবে বর্ণনা করা বা clearly defined’ নয়।

এখন মনে করুন, আসাদ ভালো একটি চাকরি পেল, এবং বেতনও ভালো পেল।  কিন্তু কিছুদিন পর দেখা গেল যে সে তার কাজ উপভোগ করছে না, এবং সেখান থেকে সে নতুন কিছু শিখতেও পারছে না – যাতে সে আরও উন্নতি করতে পারে।  দিনে দিনে তার চাহিদা বাড়তে লাগলো, বিয়ে করল, বাচ্চা হল – কিন্তু সেই অনুপাতে তার রোজগার বাড়লো না।  এতে করে প্রথম দিকে যে টাকাকে ভালো বেতন মনে হত, তা এখন খুবই কম মনে হতে লাগলো।  – এতদিন পর এসে আসাদ বুঝতে পারলো যে, সে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে।  আপনি যাতে ব্যাপারটা সহজে বুঝতে পারেন – তাই কমন একটি উদাহরণ বেছে নিয়েছি।  কিন্তু আমাদের প্রতিটি ভুল সিদ্ধান্তের পেছনে এই সুস্পষ্ট লক্ষ্য বা ‘clearly defined goal’ না থাকা অনেকটা দায়ী।

এখন আসি, স্পষ্ট লক্ষ্য কিভাবে স্থির করার ব্যাপারে।  মানে এই সমস্যার সমাধানে।  আসাদের কথাতেই ফিরে আসি।  তার লক্ষ্য ছিল একটি ভালো চাকরি ও ভালো বেতন।  কিন্তু সে যদি আরও নির্দিষ্ট করে লক্ষ্য ঠিক করতো, তাহলে আরও ভালোভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারতো।  যেমন, সে আসলে কি চাকরি করতে চায়, কোন ধরনের প্রতিষ্ঠানের কোন পদে কাজ করতে চায়, চাকরি থেকে সে আসলে কি শিখতে চায়, এবং সেখান থেকে ঠিক কত টাকা আয় করতে চায় – এগুলো যদি বিবেচনা করতো – তাহলে তাকে পরে গিয়ে বিপদে পড়তে হত না। 

হয়তো সে ইংরেজীতে পড়াশুনা করে বের হয়েছে – সেক্ষেত্রে তার শিক্ষাকে কাজে লাগাতে পারে – এমন একটা চাকরিই তার খোঁজা উচি‌ৎ ছিল, যাতে করে সে কাজটিকে উপভোগ করে।  আজকাল পরিবার নিয়ে স্বচ্ছল ভাবে থাকার জন্য এবং ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য ঠিক কত টাকা বেতন প্রয়োজন – সেটাও হিসেব করা দরকার ছিল।  হয়তো তার জন্য মাসে ৫০ হাজারের আশেপাশে আয় করা দরকার ছিল।  এই হিসেবটা না করার কারণে তার নতুন সংসার শুরু করার সিদ্ধান্তও ভুল হয়।  কাজেই আপনি যে বিষয়েই সিদ্ধান্ত নেন না কেন, সেটা কি উদ্দেশ্যে নিচ্ছেন – তা খুব ভালো ভাবে প্রতিটি খুঁটনাটি সহ ঠিক করুন।  তাহলে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া অনেক সহজ হয়ে যাবে।

০২. যে কোনও বড় সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে খুঁটিনাটি বিষয়গুলো লিখুন:

আমরা খেয়াল না করলেও, আমাদের পুরো দিনটা আসলে ছোট-বড় নানান সিদ্ধান্ত নিয়ে কাটে।  সকালে উঠে গরম পানি না ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করবেন, নাস্তায় কি খাবেন, কোন জামাটা পরে দিন কাটাবেন – এসব কিছুই ছোট ছোট সিদ্ধান্ত।  এইসব সিদ্ধান্তের পেছনে খুব বেশি সময় দেয়ার কোনও দরকার নেই।

কিন্তু যখন কোনও বড় সিদ্ধান্ত – যেমন, ব্যবসা শুরু করা, চাকরি বদল করা, ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়া, পড়াশুনার বিষয় বেছে নেয়া – এসব সিদ্ধান্ত নেবেন – তখন গভীর ও গোছানো চিন্তাভাবনার দরকার আছে।  আর গোছানো চিন্তাভাবনার জন্য সিদ্ধান্তটির সাথে জড়িত খুঁটিনাটি বিষয়গুলো লিখে রাখা প্রয়োজন।  আমরা অনেকেই এই কাজটি অপ্রয়োজনীয় ভেবে করি না।  কিন্তু যদি এই কাজটি আপনি করেন, তবে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার সম্ভাবনা অনেটাই বেড়ে যাবে।

সমস্যা ও সমাধানের সাথে জড়িত ফ্যাক্ট বা বিষয়গুলো লিখে ফেললে সিন্ধান্ত নেয়ার সময়ে কিছু বাদ পড়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।  রান্না করার সময়ে যদি আপনার সামনে একটি লেখা রেসিপি থাকে, তবে রান্নার সময়ে কোনও উপাদান বাদ পড়ার সম্ভাবনা থাকে না, তেমনি কোনও সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়ে তার সাথে জড়িত বিষয়গুলো সামনে লেখা থাকলেও কোনওকিছু বাদ পড়বে না।

কি কি লিখবেন?

# লক্ষ্য:

আগেই বলেছি, সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সেখান থেকে আপনি ঠিক কি চান – মানে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য খুব ভালো ভাবে জানা থাকতে হবে।  আপনি যদি একটি পৃষ্ঠায় সিদ্ধান্তের ফলে কি লক্ষ্য আপনি পূরণ করতে চান – সেগুলো লেখেন – তাহলে এমনিতেই ব্যাপারটা অনেক বিস্তারিত ও স্পষ্ট হয়ে উঠবে। 

# খারাপ ও ভালো দিক:

যে কোনও সিদ্ধান্ত থেকেই কিছু ভালো আর কিছু খারাপ ফলাফল বের হয়ে আসবে।  আপনি যদি আপনার বর্তমান চাকরি ছেড়ে নতুন একটি চাকরিতে যান – তবে নতুন চাকরি থেকে কিছু সুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি, বর্তমান চাকরির কিছু সুযোগ সুবিধা আপনি হারাবেন।  নতুন চাকরির অফার পাওয়ার পর আগেরটায় থাকা ভালো হবে, না নতুনটায় জয়েন করা ভালো হবে – এই সিদ্ধান্ত সঠিক ভাবে নিতে হলে অবশ্যই আপনাকে এই ধরনের একটা লিস্ট করতে হবে।  ইংরেজীতে একে ‘pros and cons list’ বলা হয়।

একটি কাগজের একপাশে নতুন চাকরিতে জয়েন করার ভালো দিক, আরেক পাশে খারাপ দিকগুলো লিখবেন।  এটা করার সময়ে নিরিবিলিতে বেশ কিছুটা সময় নিয়ে করা ভালো।  আপনার মাথায় যেটাই আসে সেটাই লিখে ফেলুন।  লেখা শেষ হলে ভালো আর খারাপ দিকগুলো বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিন।  এতে আপনার সিদ্ধান্ত ভুল হবার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে।

০৩. সিদ্ধান্তের সাথে জড়িত অন্যান্য বিষয়গুলো বিবেচনা করুন এবং দীর্ঘমেয়াদী ফলাফলের কথা মাথায় রাখুন:

একটি সিদ্ধান্ত অনেক কিছুকে প্রভাবিত করতে পারে।  সেইসাথে স্বল্প মেয়াদে যেটাকে ভালো মনে হচ্ছে, দীর্ঘ মেয়াদে তা না-ও হতে পারে। ১ নম্বর পয়েন্টে বলা আসাদের উদাহরণে ফিরে যাওয়া যাক।  সে যখন প্রথমে তার চাকরিটি নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন তার মাথায় জব স্যাটিসফ্যাকশন বা পেশাগত সন্তুষ্টির ব্যাপারটা ছিল না।  এই কারণে সে পরে গিয়ে বিপদে পড়েছিল।  সে চাকরিতে জয়েন করার সময়ে ভেবে দেখেনি যে এই কাজটি করতে তার ভালো লাগবে কি খারাপ লাগবে। অথবা এখান থেকে সে এমন কিছু শিখতে পারবে কিনা, যা তার ক্যারিয়ারকে সামনে এগিয়ে নেবে।  চাকরির সাথে সম্পর্কিত এই বিষয়গুলো সে বিবেচনা করেনি বলেই সে পরে গিয়ে ঝামেলায় পড়েছে।

আমরা অনেকেই ঝোঁকের বশে অনেক সিদ্ধান্ত নিয়ে পরে গিয়ে ঝামেলায় পড়ি।  সিন্ধান্ত নেয়ার সময়ে শুধু মূল ব্যাপারটি ছাড়াও অন্যান্য ব্যাপারও বিবেচনা করা প্রয়োজন।  দরকার হলে এগুলোও গুছিয়ে লিখে ফেলতে পারেন।  লিখে রাখার একটি বড় সুবিধা হল, লিখতে বসলে এমন অনেক কিছুই মনে আসে, যা এমনিতে চিন্তা করতে গেলে মাথায় আসে না।

মূল লক্ষ্যের সাথে জড়িত বিষয়গুলো ছাড়াও যে কোনও সিদ্ধান্তের দীর্ঘমেয়াদী ফলাফলও বিবেচনা করতে হবে।  আজ যেটা ভালো সিদ্ধান্ত, কাল সেটার ফলাফল খারাপ হতে পারে।  কাজেই সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তার সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়গুলো ছাড়াও সিদ্ধান্তটির দীর্ঘমেয়াদী ফলাফলও চিন্তা করে দেখতে হবে। 

আসাদ যদি চাকরিতে ঢোকার সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে কয়েক বছর পরে বিয়ে ও বাচ্চার কথা চিন্তা করতো, তাহলে হয়তো অন্য কোনও সম্ভাবনাময় চাকরি খুঁজত।  যেখানে ক্যারিয়ার ও আর্থিক অবস্থার দ্রুত উন্নতি হওয়ার সুযোগ ছিল।  এভাবে দীর্ঘমেয়াদী চিন্তা না করে সিদ্ধান্ত নেয়ার ফলে অনেকেই এভাবে বিপদে পড়ে আটকে গেছে।

কোনও বড় সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে এক বছর পর সেটার প্রভাব কোথায় গিয়ে পড়তে পারে – তা ভেবে বের করার চেষ্টা করুন।  দরকার হলে কাগজ-কলম নিয়ে বসুন।  মাঝখানে সিদ্ধান্তটি লিখুন।  তার চারপাশে লিখুন সিদ্ধান্তের সাথে জড়িত বিষয়গুলো।  এবার ভেবে বের করুন সিদ্ধান্তটি কোন কোন বিষয়কে কিভাবে প্রভাবিত করতে পারে এবং সেইসাথে কোন সময়ে গিয়ে প্রভাবিত করতে পারে।  ১ মাস পর এর প্রভাব কি হবে?, ১ বছর পর সেটি কোন বিষয়টিকে প্রভাবিত করবে?, ২ বছর পর কি হবে? – এভাবে চিন্তা করতে থাকুন।

ব্যপারটা পড়তে হয়তো একটু উদ্ভট লাগছে।  তবে এরপর বড় কোনও সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়ে একান্তে বসে যদি এভাবে কাগজে লিখে ব্যপারগুলো বিবেচনা করেন – তাহলে দেখবেন, অনেক কিছুই আপনার চোখে ধরা দিচ্ছে, যেগুলো এমনিতে ধরা দেয় না।  এই প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত নিলে দেখবেন আপনার সিদ্ধান্ত অনেক ভালো হচ্ছে।

০৪. আবেগকে বেশি প্রশ্রয় দেবেন না:

যারা আবেগী সিদ্ধান্ত বেশি নেন, তাঁরা আসলে বেশিরভাগ সময়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেন।  এখানে বলছি না যে আবেগ খারাপ জিনিস।  আবেগ আসলে অনেক বড় একটি অনুপ্রেরণা।  আনন্দ, ভালোবাসা, মায়া, উচ্চাকাঙ্খা, আত্মবিশ্বাস – এইসব আবেগ মানুষকে অনেক বড় করে।

কিন্তু আবেগকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়ে নেয়া সিদ্ধান্ত বেশিরভাগ সময়েই ভুল হয়।  আমরা অনেক সময়েই আবেগের বশে জীবনের অনেক বড় বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি – যার ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই আমাদের পস্তাতে হয়।

শুধুমাত্র রাগ করে আমরা অনেক সম্পর্ক শেষ করে ফেলি, যার ফলে সারা জীবন দু:খ পেতে হয়।  আবার অতি আবেগে অনেকেই কিছু না ভেবে পরিবারের অমতে বিয়ে করে বসেন – এবং বেশিরভাগ সময়েই সেই সিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণিত হয়।  কিন্তু তখন আর কিছু করার থাকে না।  পড়াশুনা, চাকরি, ব্যবসা – এইসব ক্ষেত্রে আবেগের চেয়ে যুক্তিকে বেশি প্রাধান্য দিলে সিদ্ধান্ত সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।

আবেগ দিয়ে চিন্তা করলে অনেক বিষয়ের শুধু খারাপ বা শুধু ভালো দিক চোখে পড়ে।  কিন্তু সত্যি বলতে প্রতিটি জিনিসেরই খারাপ এবং ভালো দিক আছে।  আবেগে অন্ধ হয়ে গেলে আপনি শুধু যে দিকটি দেখতে চাইছেন – সেটিই চোখে পড়ে।  অন্যদিকে যুক্তি দিয়ে চিন্তা করলে যে কোনও বিষয়ের ভালো এবং খারাপ দিক দেখতে পাবেন।  ফলে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হবে।

# টিপস ১:

কোনও সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে যদি দেখেন যে সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনে আবেগ বেশি কাজ করছে, তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া সেই সময়ের জন্য বন্ধ করুন।  একটু বিরতি দিলে আবেগের প্রভাব কমে যাবে এবং আপনি ঠান্ডা মাথায় ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

# টিপস ২:

আবেগ ভালো হোক আর খারাপ, কোনও আবেগকেই সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রধান উপাদান বানাবেন না।  ভালো আবেগ সিদ্ধান্তের খারাপ দিকগুলোকে আড়াল করে, আর খারাপ আবেগ ভালো দিকগুলোকে দেখতে দেয় না।  কাজেই ভালো আবেগ থেকে সিদ্ধান্ত নিতে গেলেও একটু সময় নিন।  আবেগের মাত্রা কমে গেলে তারপর ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিন।

০৫. সঠিক লোকের পরামর্শ নিন এবং অবশ্যই নিজে গবেষণা করুন:

সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞদের পরামর্শ নেয়া সব সময়েই একটি ভালো উপায়।  যে কোনও বড় সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়ে যদি এমন কাউকে পান – যে আগে সেই একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে – তাহলে অবশ্যই তার কাছে পরামর্শ চান।  তবে এক্ষেত্রে একটা বিষয় মাথায় রাখবেন, আপনি যার কাছে পরামর্শ চাচ্ছেন তিনি আপনার সত্যিকার ভালো চান, এবং তার সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার সত্যিকার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা আছে।  শুধুমাত্র বয়সে বড় হওয়ার কারণে কারও পরামর্শ নেবেন না।  আপনি হয়তো ট্যাক্সের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে এমন একজনের কাছে পরামর্শ চাইতে পারেন যে জীবনে ট্যাক্সের ফর্ম পূরণই করেনি।  এক্ষেত্রে সে যদি আপনাকে কোনও পরামর্শ দেয় – এবং আপনি সেই পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেন – তবে সেটা ভুল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।  কাজেই পরামর্শ নেয়ার জন্য সঠিক লোক বেছে নেয়াটা খুব জরুরী।  এক্ষেত্রে একটা বিষয় মনে রাখবেন, সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে অন্যের পরামর্শের ওপর অতিরিক্ত নির্ভর করবেন না।  তাহলে সিদ্ধান্তে ভুল হলে পরামর্শ দেয়া লোকটির ওপরে দোষ চাপবে এবং সম্পর্ক নষ্ট হবে।  কাজেই, যতই পরামর্শ নিন না কেন, সিদ্ধান্ত নিজ দায়িত্বে নিন।

অভিজ্ঞ ও ভালো চান এমন মানুষের কাছ থেকে পরামর্শ নেয়া ছাড়াও, যে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন, সেই বিষয়ে নিজেও কিছু গবেষণা করুন।  বইপত্র ঘাঁটুন, পত্রিকা ঘাঁটুন – অর্থা‌ৎ সিদ্ধান্ত সম্পর্কিত বিষয়ে যতটা পারেন জ্ঞান নিয়ে নিন – এতে করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে।

শেষ কথা:

আপনি যদি সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার পদ্ধতিগুলো জানেন এবং এগুলো ব্যবহার করে বেশিরভাগ সময়েই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তবে সিদ্ধান্তহীনতার অভিশাপ থেকে এমনিতেই মুক্ত হয়ে যাবেন।  আপনার নিজের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতার প্রতি একটা আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি হবে।  আসলে এই বিশ্বাসের অভাবই মানুষকে সিদ্ধান্তহীনতায় ফেলে।  আমরা বলছি না যে এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করলেই আপনি সব বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন।  কিন্তু চিন্তা না করে বা অতিরিক্ত চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার বদলে এই প্রক্রিয়ায় আপনার সিদ্ধান্ত সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে।  আপনি যে সিদ্ধান্তই নিন না কেন, একটি গোছানো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আপনি সিদ্ধান্তটি নিতে পারবেন।  এবং এর ফলাফল কি হবে – সেই সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা পাবেন।  প্রতিটি ধাপ কিভাবে পার করবেন, এবং কোনটি কাজটি করা প্রয়োজন আর কোনটি অপ্রয়োজনীয় – এসবই আপনি অনেক ভালো করে বুঝতে পারবেন।

জীবনে সফল হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো সঠিক হওয়া জরুরী।  আর সেই সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া যেন আপনার জন্য সহজ হয় – সেই উদ্দেশ্যেই এই লেখা।  সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে যদি এই লেখাটি আপনাকে সামান্য সাহায্যও করে – তাহলেই আমাদের উদ্দেশ্য সফল বলে মনে করব।

আমরা কতটা সফল ভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার উপায় তুলে ধরতে পেরেছি – তা আমাদের কমেন্ট করে জানান।  যদি মনে হয় এর সাথে আরও কিছু যোগ করা যায় – সেটাও আমাদের জানান।  তাতে এই লেখাটি আরও সমৃদ্ধ হবে। 

আর যদি মনে হয় এই লেখা পড়ে অন্যরাও উপকৃত হবেন, তবে শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন।  এই ধরনের আরও লেখার জন্য নিয়মিত আমাদের সাথে থাকুন।

পোস্টটি শেয়ার করুন !

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *